৮.১ আল-কুরআনের হিকমত ও আগামীর ভবিষ্যৎবাণীর মিল

 মহানবী হযরত মুহাম্মাদ প্রায়ই হাদিস বা কোন কথা বলে কুরআনের আয়াত বলেছেন। তার মধ্যে রয়েছে এক নিগুঢ় রহস্য। অনেক সময় সাহাবীরা তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন আবার অনেক সময় দেওয়া হয়নি। এই কুরআনের মোজেজা যুগে যুগে মানুষ দেখতে পাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এটি থেকে এখনো বৈজ্ঞানিক রিসার্চ করে যাচ্ছে।

ভবিষ্যতে ঘটিতব্য বিষয় নিয়েও কুরআনে রয়েছে অনেক নিগুঢ় রহস্য ও হিকমত। এছাড়া এটি আগেই প্রমাণিত যে, আয়াত দিয়ে গানিতিকভাবে কিভাবে অনেক কিছু সমাধান করা যায়। তার একটি এখানে উল্লেখ করছি। আগামীতে ঘটিতব্য বিষয়গুলো নিয়ে কুরআনে এরকম একটি হিকমতপূর্ণ ইঙ্গিত দেওয়া রয়েছে। এর হিকমত দেখতে হলে আপনি শুধু কুরআনের আয়াত পড়ে বুঝবেন না, তাফসিরও দেখতে হবে। আর কুরআনের এই হিকমত অন্যভাবে মিলালে মিলবে না। শুধুমাত্র এতটুকুই মিলবে যা উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও আগেই যথেষ্ট দলিল দেওয়া হয়েছে, তবে এটি জানার ফলে কুরআনে গোপনভাবে এব্যাপারে বর্ণিত বিষয়কেও জানতে পারবে।

 

সূরা ইবরাহীম (Sura Ibrahim) ।। আয়াত ৪১-৫০

আয়াতগুলিঃ (অনুবাদঃ ইবনে কাসির দিয়ে)
_________________________________

14:41

رَبَّنَا اغْفِرْ لِى وَلِوٰلِدَىَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ

হে আমাদের প্রতিপালক! হিসাব গ্রহণের দিন আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে আর মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিও,
_________________________________

14:42

وَلَا تَحْسَبَنَّ اللَّهَ غٰفِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظّٰلِمُونَ ۚ إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيهِ الْأَبْصٰرُ

যালিমরা যা করছে সে ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে কক্ষনো উদাসীন মনে কর না। তিনি তাদেরকে সেদিন পর্যন্ত ঢিল দিচ্ছেন যেদিন ভয়ে আতঙ্কে চক্ষু স্থির হয়ে যাবে।
_________________________________

14:43

مُهْطِعِينَ مُقْنِعِى رُءُوسِهِمْ لَا يَرْتَدُّ إِلَيْهِمْ طَرْفُهُمْ ۖ وَأَفْـِٔدَتُهُمْ هَوَآءٌ

আতঙ্কিত হয়ে মাথা তুলে পালাতে থাকবে, দৃষ্টি তাদের নিজেদের পানে ফিরে আসবে না, আর তাদের দিল উড়ে যাবে।
_________________________________

14:44

وَأَنذِرِ النَّاسَ يَوْمَ يَأْتِيهِمُ الْعَذَابُ فَيَقُولُ الَّذِينَ ظَلَمُوا رَبَّنَآ أَخِّرْنَآ إِلٰىٓ أَجَلٍ قَرِيبٍ نُّجِبْ دَعْوَتَكَ وَنَتَّبِعِ الرُّسُلَ ۗ أَوَلَمْ تَكُونُوٓا أَقْسَمْتُم مِّن قَبْلُ مَا لَكُم مِّن زَوَالٍ

কাজেই মানুষকে সতর্ক কর সেদিনের ব্যাপারে যেদিন তাদের উপর আযাব আসবে। যারা যুলম করেছিল তারা তখন বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে অল্পদিনের জন্য সময় দাও, আমরা তোমার আহবানে সাড়া দিব আর রসূলদের কথা মেনে চলব। (তখন তাদেরকে বলা হবে) তোমরা কি পূর্বে শপথ করে বলনি যে, তোমাদের কক্ষনো পতন ঘটবে না?
_________________________________

14:45

وَسَكَنتُمْ فِى مَسٰكِنِ الَّذِينَ ظَلَمُوٓا أَنفُسَهُمْ وَتَبَيَّنَ لَكُمْ كَيْفَ فَعَلْنَا بِهِمْ وَضَرَبْنَا لَكُمُ الْأَمْثَالَ

অথচ তোমরা সেই লোকগুলোর বাসভূমিতে বসবাস করছিলে যারা নিজেদের প্রতি যুলম করেছিল আর তোমাদেরকে স্পষ্ট করে দেখিয়ে দেয়া হয়েছিল আমি তাদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছিলাম। আর আমি বহু উদাহরণ টেনে তোমাদেরকে বুঝিয়েও দিয়েছিলাম।
_________________________________

14:46

وَقَدْ مَكَرُوا مَكْرَهُمْ وَعِندَ اللَّهِ مَكْرُهُمْ وَإِن كَانَ مَكْرُهُمْ لِتَزُولَ مِنْهُ الْجِبَالُ

তারা যে চক্রান্ত করেছিল তা ছিল সত্যিই ভয়ানক, কিন্তু তাদের চক্রান্ত আল্লাহর দৃষ্টির ভিতরেই ছিল, যদিও তাদের চক্রান্তগুলো এমন ছিল না যে, তাতে পর্বতও টলে যেত।
_________________________________

14:47

فَلَا تَحْسَبَنَّ اللَّهَ مُخْلِفَ وَعْدِهِۦ رُسُلَهُۥٓ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ ذُو انتِقَامٍ

(অবস্থা যতই প্রতিকূল হোক না কেন) তুমি কক্ষনো মনে কর না যে, আল্লাহ তাঁর রসূলগণকে দেয়া ওয়াদা খেলাপ করবেন, আল্লাহ মহা প্রতাপশালী, প্রবল প্রতিশোধ গ্রহণকারী।
_________________________________

14:48

يَوْمَ تُبَدَّلُ الْأَرْضُ غَيْرَ الْأَرْضِ وَالسَّمٰوٰتُ ۖ وَبَرَزُوا لِلَّهِ الْوٰحِدِ الْقَهَّارِ

যেদিন এ পৃথিবী বদলে গিয়ে অন্য এক পৃথিবীতে রূপান্তরিত হবে আর আসমানসমূহও (বদলে যাবে), আর মানুষ সমুস্থাপিত হবে এক ও অপ্রতিরোধ্য আল্লাহর সম্মুখে।
_________________________________

14:49

وَتَرَى الْمُجْرِمِينَ يَوْمَئِذٍ مُّقَرَّنِينَ فِى الْأَصْفَادِ

সেদিন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে শৃঙ্খলে তাদের হাত পা শক্ত করে বাঁধা।
_________________________________

14:50

سَرَابِيلُهُم مِّن قَطِرَانٍ وَتَغْشٰى وُجُوهَهُمُ النَّارُ

তাদের পোশাক হবে আলকাতরার আর আগুন তাদের মুখমন্ডল আচ্ছন্ন করবে।

তো এই আয়াত দ্বারা কি কোন ইঙ্গিত পেলেন? হয়তো এর তাফসীর পড়েও নাও বুঝতে পারেন। মূল কথা সংক্ষেপে বলি। এটি ১৪৪১ হিজরি চলতেছে। ২, ৩ মাসের মত হয়েছে মাত্র। এখানে যা করা হয়েছে তা হলো-

সূরা ইবরাহীম যেটি ১৪ নং সূরা কুরআনের। আর ৪১ আয়াত থেকে এনেছি পরের সব আয়াতগুলো।

মানে ১৪৪১ (২০১৯-২০২০ মাঝামাঝি পরে তবে সাল আমরা ২০১৯ই ধরলাম। কারণ এটি মাঝামাঝি পরে ঈসায়ী সালের হিসাব) হিজরি যেটি চলতেছে তার-

 

সূরা ইবরাহীম ১৪+৪১ আয়াত=১৪৪১ (২০১৯) এভাবে, আয়াতগুলো সাজিয়েছি শুধু।

১৪+৪২= ১৪৪২ হিজরি (২০২০ ঈসায়ী সাল)

১৪+৪৩= ১৪৪৩ হিজরি (২০২১ ঈসায়ী সাল)

১৪+৪৪= ১৪৪৪ হিজরি (২০২২ ঈসায়ী সাল)

১৪+৪৫= ১৪৪৫ হিজরি (২০২৩ ঈসায়ী সাল)

১৪+৪৬= ১৪৪৬ হিজরি (২০২৪ ঈসায়ী সাল)

১৪+৪৭= ১৪৪৭ হিজরি (২০২৫ ঈসায়ী সাল)

১৪+৪৮= ১৪৪৮ হিজরি (২০২৬ ঈসায়ী সাল)

১৪+৪৯= ১৪৪৯ হিজরি (২০২৭ ঈসায়ী সাল)

১৪+৫০= ১৪৫০ হিজরি (২০২৮ ঈসায়ী সাল)

 

আপনি এটা জেনে চমকে উঠবেন জানি, সেটা হলো, এই আয়াতগুলোতে বলা সূক্ষ্ম ইঙ্গিতগুলো বাস্তবায়ন হবে এই এই সালেই। যেমন ১৪নং সুরার ৪২ নং আয়াতে যা বলা হয়েছে তা ১৪+৪২=২০২০ সালে আমরা দেখতে পারবো।

তো কিভাবে? ব্যাখ্যা তো দেওয়া দরকার। একটু তাফসীর এর সাহায্য ও হাদিস এর সাহায্যও নিবো এটি বুঝার জন্য। ২০১৯ সালেরটি আগে শুরু করি।

১৪+৪১=১৪৪১ হিজরি (২০১৯ সাল) এর ব্যাখ্যাঃ
----------------------------------------------------

সূরা ইবরাহীম এর ৪১ নং আয়াতে বলা আছে, অনুবাদঃ

হে আমাদের প্রতিপালক! হিসাব গ্রহণের দিন আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে আর মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিও।

 

সংক্ষিপ্ত তাফসিরঃ

[১] সবশেষে একটি ব্যাপক অর্থবোধক দোআ করলেন,

হে আমার রব! আমাকে আমার পিতা-মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন ঐদিন, যেদিন হাশরের ময়দানে সারাজীবনের কাজকর্মের হিসাব নেয়া হবে। এতে তিনি মাতা-পিতার জন্যও মাগফেরাতের দো'আ করেছেন। অথচ পিতা অর্থাৎ আযর যে কাফের ছিল, তা কুরআনুল কারীমেই উল্লেখিত রয়েছে। সম্ভবতঃ এ দোআটি তখন করেছেন, যখন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-কে কাফেরদের জন্য দোআ করতে নিষেধ করা হয়নি। [ইবন কাসীর]

আরেকটু তাফসীর থেকেঃ

তিনি আরো দুআ করলেন তাঁর জন্য এবং তাঁর সন্তানদের জন্য যেন তাদেরকে আল্লাহ তাআলা মূর্তি পূজা থেকে বাঁচিয়ে রাখেন। এখানে তৎকালীন মক্কার মুশরিকদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হয়েছে। তারা দাবী করত আমরা ইবরাহীমের মিল্লাতের অনুসারী, ইবরাহীম (عليه السلام) তো প্রতিমা পূজারী ছিলেন না, তিনি কাবা নির্মাণ করলেন তাওহীদের ওপর ভিত্তি করে। ভবিষ্যতে কখনো যাতে শির্ক না হয় সে জন্য তিনি আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করলেন যেন তিনি তাঁকে ও তাঁর সন্তানদেরকে শির্ক থেকে রক্ষা করেন। অথচ তোমরা কাবা ঘরে মূর্তি রেখে পূজা করছ আর বলছ, আমরা ইবরাহীম (عليه السلام) এর অনুসারী।

ব্যাখ্যাঃ

তো, ইবরাহীম (আঃ) এর পিতা অর্থাৎ আযর যে কাফের ছিল, তার জন্য শেষ পর্যন্ত দুয়া করা ছাড়া উপায় ছিল না। কারণ আল্লাহ যাকে চায় তাকে হিদায়েত দেন। সে চাইলেও হিদায়ত দিতে পারবেন না। আর এখন কার সময়ে কাফিরদের জন্য দোয়া করতে কুরআনে নিষেধ করেছে। তো এর সাথে আমাদের চারপাশের একটা মিল আছে। মুসলিম নামধারি কাফির, মুশরিক, মুনাফিক, নাস্তিকরা রয়েছে। এরাও তো পরিবারের, সমাজেরই লোকজন। তো এদের জন্য দোয়া করে, গভীর সম্পর্ক রেখে কোন লাভ নেই। তারা শেষ মুহূর্তেও হেদায়েতের পথে চলতে পারছে না। তাই আমরা ইবরাহীম (আঃ) এর মত যেটি পারি তা হলো তাগুত, কুফর, শিরক বর্জন করে চলা। এজন্য আমাদের এ থেকে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে ইসলামের মূল পথে, তাওহীদের পথে চলতে হবে।

তো এই থেকে কি বুঝা যায়? এইটাই সেই সময় অর্থাৎ সাল যখন থেকে আপনাকে বিচ্ছিন্ন হতে হবে শিরক থেকে, কুফুরি থেকে। আর যদি লক্ষ্য করেন অসংখ্য মানুষ বিশেষ করে সমাজের যুবক-যুবতীরা আজ শিরক-কুফর ছেড়ে ইসলামের পথে, হেদায়েতের পথে আসছে। এই সময়টা থেকেই তা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের উপর যাচ্ছে এক কঠিন পরীক্ষা। বাসায় আজ নামাজ পড়লে কথা বলবে, দাঁড়ি রাখলে তা নিয়ে ঠাট্টা করবে। সমাজে ইসলাম নিয়ে চলা যায় না, হেয় করে দেখে সবাই। বাহিরে গেলেই দেখতে পাওয়া যায় চারিদিকেই শুধু পূজা আর পূজা হচ্ছে। মানুষের পূজা না হয় মূর্তির। যেমন বিভিন্ন দিবসে ফুল দেওয়া, না করলে সরকারীভাবে বাধ্য করা। আর মানুষের পূজাই হচ্ছে আল্লাহর অবাধ্য হয়ে মানুষের আনুগত্য করা। ইসলামের সম্পর্ককে সব সম্পর্কের উপরে স্থান দেওয়ার সময় এটি। এর জন্য আপনাকে এরকম সময়েই সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে হতে পারে। কারণ পরিবার আত্মীয়র চেয়ে ইসলামের প্রতি, আল্লাহর প্রতি, তার বিধানের প্রতি বেশি ভালবাসা দরকার।

ইসলামের কোন বিষয় নিয়ে বাসায় মানাতে পারেন না, সমাজকে মানাতে পারেন না। আপনি বরং দোষী হয়ে যান। জিহাদ নিয়ে বললে জঙ্গি হয়ে যান। আপনার মা বাবা আজ বাধা দেয়। তাদের সাথে আল্লাহ ও তার রসুলের জন্য সম্পর্ক ছিন্ন করার সময় এই সাল, হিজরি।

মুসলিম উম্মাহ এক প্রাণ, এর কথা বললে আপনার স্ত্রী বলে তাতে তোমার কি? তার সাথেও আল্লাহ ও রসুলের জন্য সম্পর্ক ছিন্ন করার সময় এই সাল, হিজরি। আপনি মেয়ে আর আপনার বর, স্বামী ইসলাম থেকে দূরে যেয়ে নিজেকে মুশরিক ও কাফির বানিয়ে ফেলেছে। তার সামনে এসব বিষয় নিয়ে বললে দুনিয়াবি জিনিসে লেগে যায়। আপনাকেও তার সাথে আল্লাহ ও রসুলের জন্য সম্পর্ক ছিন্ন করার সময় এই সাল, হিজরি। বিধর্মী অনেক যুবক-যুবতীও আজকে ইসলাম গ্রহণ করছে। তারাও ইসলামের জন্য তাদের সবকিছু ত্যাগ করছে ও সম্পর্ক ছিন্ন করছে। দেখা যাচ্ছে, পরিবর্তনটা খুবই অস্বাভাবিক ভাবে হচ্ছে।

কারণ কি জানেন? কিছু মানুষ জানে সামনে কি হতে চলেছে। জামানার পরিবর্তনকে ও তার ফিতনা সমূহকে চিনতে পেরেছে। আর হিজরি সালগুলোর ব্যাখ্যা আয়াত দিয়ে করলেই বুঝা যাবে সামনে কি হতে চলেছে। তাই পরের গুলো পড়ুন।

(বিঃ দ্রঃ সম্পর্ক ছিন্ন করা বলতে শুধু তাদেরকে ত্যাগ করা নয়, তাদেরকে বুঝানো এবং না বুঝলে তাদের এমন সব আদেশ-নিষেধ ও কার্যকলাপ গুলো এড়িয়ে যাওয়া যা আল্লাহ ও তার রসূলের বিরুদ্ধে যায়। তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা বলতে তাদের কথা অনুযায়ী না চলে ইসলামের বিধান অনুযায়ী চলা। তারা হয়তো আপনাকে বাধা দিবে বিভিন্ন ভাবে, যেমন দাঁড়ি না রাখা, বোরকা অর্থাৎ পর্দা করতে না দেওয়া ইত্যাদি থেকে তাদের অবাধ্য হওয়ায় কোন দোষ নেই। বরং এটাই উত্তম হবে। এটাই এই জামানায় আপনার উপর পরীক্ষা। ধৈর্য ধরুন!)

 

হাদিসঃ

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, প্রতিটা যুগেই ইসলাম নিভিয়ে যায়। আর আমার পরেও নিভিয়ে যাবে, আর প্রত্যেক যুগেই একটি দল থাকবে। যারা আমার সুন্নতকে আঁকড়ে ধরবে, আর আল্লাহর দ্বীনের আলো পূর্ণ বিকাশিত করবেন।

-   (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৬৪)

হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী রাখার জন্য প্রতিটি যুগের একটি দল বের হবেন। যারা আল্লাহর নির্দেশে সংগ্রাম করবে। আর তারা কোন নিন্দুকের নিন্দাকে পরোয়া করবে না। তারাই আল্লাহর জান্নাতের অধিকারী।

-   (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৬৫)

হযরত আবু মুসা আশআরী (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, যখনই আল্লাহর এই দিন নিভে যাওয়ার অবস্থায় আসবে, তখনই আল্লাহ তাআলা এই দ্বীনকে বিজয়ী রাখার জন্য, আল্লাহ তাআলা একটি করে দল তৈরি করে দেন। যারা আল্লাহর দ্বীনকে মজবুত ভাবে ধরেন।

-   (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৬৬)

হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, হে জাবির! তুমি কি জানো? আল্লাহ তাঁর দ্বীনকে কিভাবে প্রতিষ্ঠা করেন? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রসূল ﷺ অধিক জানেন। তিনি বললেন, যখন তা নিভে যায় তখন একটি দল তৈরি করে দেন। যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে এবং আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করেন।
-       (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৬৯)

হয়তো এই হাদিসগুলো জেনে বুঝতে পেরেছেন আপনার হেদায়েত পাওয়ার কারণটা কি। এই দ্বীনকে আপনার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই আপনাকে হেদায়েত দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার হক পালনের জন্যই আপনাকে হেদায়েত দেওয়া হয়েছে।

 

১৪+৪২=১৪৪২ হিজরি (২০২০ সাল) এর ব্যাখ্যাঃ
-----------------------------------------------------

সূরা ইবরাহীম এর ৪২ নং আয়াতে বলা আছে, অনুবাদঃ

যালিমরা যা করছে সে ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে কক্ষনো উদাসীন মনে কর না। তিনি তাদেরকে সেদিন পর্যন্ত ঢিল দিচ্ছেন যেদিন ভয়ে আতঙ্কে চক্ষু স্থির হয়ে যাবে।

 

সংক্ষিপ্ত তাফসিরঃ ৪২-৪৩ নং আয়াতের তাফসীরকে মিলিয়ে পাওয়া:

অনেকে মনে করতে পারে দুনিয়াতে কাফির, মুশরিক ও জালিমরা মানুষের ওপর এত অত্যাচার, অবিচার করছে তারপরেও তারা সুখে-সাচ্ছন্দে আছে, তারাই দুনিয়াতে ক্ষমতাসীন ইত্যাদি। নাবী কে সম্বোধন করে আল্লাহ তাআলা সকল মানুষকে অবগত করছেন যে, তিনি জালিম কাফিরদের সকল কাজ সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন। তারা কী করছে, না করছে সব তাঁর জ্ঞানায়ত্ত্বে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে অবকাশ দিয়েছেন সেদিন পর্যন্ত যেদিন তাদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। অর্থাৎ কিয়ামতের ভয়াবহতা দেখে তাদের চোখের পলক পড়বে না, এত কঠিন অবস্থা হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:

যখন সত্য প্রতিশ্রুতির সময় ঘনিয়ে আসবে তখন অকস্মাৎ কাফিরদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। (সূরা আম্বিয়া ২১:৯৭)

(مُهْطِعِيْنَ) অর্থ ছোটাছুটি করা, দৌড়াদৌড়ি করা। অর্থাৎ এ সকল জালিমরা কবর থেকে উঠে আল্লাহ তাআলার ডাকে সাড়া দিয়ে হাশরের ময়দানের দিকে দ্রুত দৌড়াবে। তাদের দৃষ্টি থাকবে উপরের দিকে। ভয়ে তাদের চোখ নিচের দিকে নামবে না এবং অন্তর জ্ঞানশূন্য হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:

مُّهْطِعِيْنَ إِلَي الدَّاعِ

তারা আহ্বানকারীর দিকে ছুটে আসবে। (সূরা ক্বমার ৫৪:৮)

জালিম কাফিরদের অবস্থা খুবই ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। সেদিন তাদের অন্তর ভয়ে জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়বে। ভয় ও আতঙ্ক ছাড়া আর কিছুই থাকবে না।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. মানুষকে অপরাধের কারণে তাৎক্ষণিক শাস্তি না দেয়ার অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ তাআলা তার সম্পর্কে জানেন না, বরং এটা তাদের জন্য অবকাশ দেয়া মাত্র।

২. মানুষ দ্রুতগতিতে কবর থেকে বের হয়ে সামনের দিকে ছুটে যাবে এবং তারা হবে অত্যন্ত ভীত-বিহ্বল।

 

ব্যাখ্যাঃ আসলে ভাই আপনি সচেতন হলে এটা অবশ্যই জানেন যে জালিমরা মূলত কাদের উপর জুলুম করে। তারা ইসলামের আর মুসলিমদের শত্রু। আর সব কাফির, ধর্ম এক জাতের ভাই ভাই। যাই সে হোক হিন্দু, ইয়াহুদি, খ্রিস্টান।

তো ১৪৪২ হিজরি বলতে ২০২০ সালকে বুঝায়। আপনারা এই ১৪৪১ হিজরি বছরের শুরুতেই দেখতে পাচ্ছেন যে পাশের ভারতে কি হচ্ছে। যদি হিসেব করা দেখা যায় সিরিয়া, ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, ইরাক, কাশ্মীর হয়ে যেন এই ফিতনা ভারত উপমহাদেশেই এগোচ্ছে। আপনার পর্যন্তও এই জুলুম আসবে। কিন্তু জালিমদেরকে আল্লাহ সুযোগ দিচ্ছেন এবং তাদের উপর এমন হুজ্জত বা দলিল প্রতিষ্ঠিত করছেন যে তাদের ধ্বংস হওয়ার কারণ হিসেবে কোন অজুহাত যেন না থাকে। আর এটা আরো বাড়বে তার পরের বছরগুলোতে। এমনকি বিশ্বব্যাপী জালিমরা তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে মুসলিম নিধনে লেগে যাবে, শেষ মাত্রায় পৌঁছাবে। কিন্তু আল্লাহ সেই বছরটিতেও হয়তো সাহায্য করবেন না মুসলিমদের। কারণ এটি তাদের কৃতকর্মের ফল।

আর এরপর মানুষ মনে করবে আল্লাহ কেন এত পাপাচার করতে দিচ্ছেন জালিমদের। কিন্তু আল্লাহ এইখানে স্পষ্ট বলেছেন যে তিনি ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। তারাও তাদের কৃতকর্মের ফল পাবেই।

তো বুঝলেন যে আপনার কাছেও এই জালিমের জুলুম সামনেই এসে হাজির হবে। আপনি এখনই তা টের পাচ্ছেন জানি তবে সামনে আরো ভয়াবহ হবে। পরেরটির ব্যাখ্যা দেখি চলুন।

  

১৪+৪৩=১৪৪৩ হিজরি (২০২১ সাল) এর ব্যাখ্যাঃ
------------------------------------------------------

সূরা ইবরাহীম এর ৪৩ নং আয়াতে বলা আছে, অনুবাদঃ

আতঙ্কিত হয়ে মাথা তুলে পালাতে থাকবে, দৃষ্টি তাদের নিজেদের পানে ফিরে আসবে না, আর তাদের দিল উড়ে যাবে।

 সংক্ষিপ্ত তাফসিরঃ ৪২-৪৩ নং আয়াতের তাফসীরকে মিলিয়ে পাওয়া:

ব্যাখ্যাঃ এটির তাফসীর আগেই দেওয়া হয়েছে। তো আয়াতে বলেছে, জালিমরা সেদিন আতঙ্কিত হয়ে মাথা তুলে পালাতে থাকবে, দৃষ্টি তাদের নিজেদের পানে ফিরে আসবে না, আর তাদের দিল উড়ে যাবে। এইখানে জালিম তারা ও সাথে আমরাও। আমরাই নিজেদের উপর জুলুম করতেছি। কিভাবে? আমরা মুসলিমরা এখনো রয়েছি দুনিয়াবী চিন্তায় বিভোর, ধর্মকে পুজি করে বিভিন্ন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। মূর্খ আলেম তৈরি হচ্ছে সমাজে ও বিভিন্ন দলাদলি ও মতবিরোধের কারণে মুসলিম উম্মাহ একও হতে পারছে না। মুসলিম উম্মাহের বেশির ভাগ আজকে পাপাচারে লিপ্ত, বেনামাজী ও পশ্চিমা কালচারের অনুগত। আমাদের উপর বিভিন্ন বিপদ-আপদ সামনে আসতেই থাকবে, মুসলিমরা আর শান্তিতে বেশিদিন থাকতে পারবে না, দুনিয়া তাদের ধোঁকা দিবে ও মুসলিম হয়ে বিধর্মীদের অনুসরণের ফল পাবে। আর বড় জালিমরা সেই হিজরিতেও জুলুম চালিয়ে যেতে থাকবে। এটি থামবে আবার শুরু হবে আগের থেকেও ভয়াবহ হয়ে। আপনি যদি তাগুত বর্জন না করেন সেদিন আপনিও ধরা খাবেন। যারা জিহাদকে অস্বীকার করে থাকি সেদিন তারাও নিজেদের বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করবে, তবে পারবে না।

 

১৪+৪৪=১৪৪৪ হিজরি (২০২২ সাল) এর ব্যাখ্যাঃ
-----------------------------------------------------

সূরা ইবরাহীম এর ৪৪ নং আয়াতে বলা আছে, অনুবাদঃ

আর যেদিন তাদের শাস্তি আসবে সেদিন সম্পর্কে আপনি মানুষকে সতর্ক করুন, তখন যারা যুলুম করেছে তারা বলবে, হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে কিছু কালের জন্য অবকাশ দিন, আমরা আপনার ডাকে সাড়া দেব এবং রসূলগণের অনুসরণ করব। তোমরা কি আগে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের পতন নেই?

 সংক্ষিপ্ত তাফসিরঃ

এসব অবস্থা বর্ণনা করার পর রসূলুল্লাহ -কে বলা হয়েছে যে, আপনি আপনার জাতিকে ঐ দিনের শাস্তির ভয় প্রদর্শন করুন, যেদিন যালিম ও অপরাধীরা অপারগ হয়ে বলবেঃ হে আমাদের রব! আমাদেরকে আরো কিছুদিন সময় দিন। অর্থাৎ দুনিয়াতে কয়েকদিনের জন্য পাঠিয়ে দিন, যাতে আমরা আপনার দাওয়াত কবুল করতে পারি এবং আপনার প্রেরিত নবীগণের অনুসরণ করে এ আযাব থেকে মুক্তি পেতে পারি। অন্য আয়াতেও আল্লাহ তাআলা কাফেরদের এ অবস্থা বর্ণনা করে বলছেন,

আর আপনি যদি দেখতেন! যখন অপরাধীরা তাদের রবের নিকট অবনত মস্তকে বলবে, হে আমাদের রব! আমরা দেখলাম ও শুনলাম, সুতরাং আপনি আমাদেরকে ফেরত পাঠান, আমরা সৎকাজ করব, নিশ্চয় আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী। [সূরা আস-সাজদাহ ১২]

আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তাদের আবেদনের জবাবে বলা হবেঃ এখন তোমরা একথা বলছ কেন? তোমরা কি ইতিপূর্বে কসম খেয়ে বলনি যে, তোমাদের ধন-সম্পদ ও শান-শওকতের পতন হবে না এবং তোমরা সর্বদাই দুনিয়াতে এমনিভাবে বিলাস-ব্যসনে মত্ত থাকবে? তোমরা পুনর্জীবন ও আখেরাত অস্বীকার করে আসছিলে। অন্য আয়াতেও কাফেরদের এ আবদার ও তার জবাব বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে,

অবশেষে যখন তাদের কারো মৃত্যু আসে, সে বলে, 'হে আমার রব! আমাকে আবার ফেরত পাঠান, যাতে আমি সৎকাজ করতে পারি যা আমি আগে করিনি। না, এটা হবার নয়। এটা তো তার একটি বাক্য মাত্র যা সে বলবেই" [সূরা আল-মুমিনূন: ৯৯-১০০]

ব্যাখ্যাঃ

যালিম ও অপরাধীরা, দুইদিকের কথাই বলা হয়েছে। বড় জালিমদের সাথে আমরাও জালিম ও অপরাধী। আমরা নিজেদের উপর জুলুম করছি। ইসলামেকে বর্জন করে শিরক আর কুফুরিতে লিপ্ত। আমাদেরকে মারার পর যে আমরা জান্নাতে চলে যাবো তা না। আমাদের জন্য দুনিয়ার আজাব যথেষ্ট ছিল না। আমাদের পাপের ফলাফল জাহান্নামই হবে। আর যারা আমাদের নিধন করবে তাদেরও একই পরিনতি হবে।

যদি মনে করেন যে তারা মারল, আমি তো মুসলিম শহিদ হলাম। তাহলে ভুল ছাড়া কিছুই না। এ থেকে বোঝা যায় ১৪৪৪ হিজরি (২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে ২৩ এর মাঝামাঝি পর্যন্ত) ও সেই করুণ অবস্থা চলতে থাকবে বিশ্বব্যাপী। আর তার সাথে কি ঘটবে জানেন? সত্যের সৈনিকরাও সেদিন প্রতিবাদের জন্য থাকবে, তারাও প্রস্তুতি নিবে। যালিমরাও পূর্ণদমে জুলুম শুরু করবে। সেই কাঙ্ক্ষিত হিন্দের যুদ্ধের দামামা বেজে উঠবে ভয়াবহ আকারে। যেমন কাশ্মীরের অবস্থা, যাতে মুশরিকদের সাথে মুসলিমদের প্রতিনয়তই সংঘর্ষ হচ্ছে। আর এই জুলুম এই দেশেই এসে সব চেয়ে মারাত্মক আকার ধারন করবে এমনটাই বুঝা যায়, কারণ মুশরিকরা মুসলিমবিহীন অখণ্ড ভারত তৈরির জন্য প্রস্তুত। ঘোর কারবালা সেদিন হবে এই ভুমি। কিন্তু সত্যের সৈনিকরা সেদিন বেঁচে যাবে। যারা আগে থেকেই বেরিয়ে পড়েছে। আর যারা বের হয়নি তাদের অবস্থা দেখতে হলে ভারতের দিকে তাকান। আর যদি তখনও তাগুত, শিরক বর্জন না করতে পারেন তাহলে ইহকালেই আজাবে পতিত হতে হবে। আর পরকালের চিন্তা যারা করেনই না তারা অন্তত ইহকালে বাঁচার চেষ্টা করবে। কিন্তু তাও পারবে না। তারাই জাহান্নামী হবে।

১৪+৪৫=১৪৪৫ হিজরি (২০২৩ সাল) এর ব্যাখ্যাঃ
------------------------------------------------------

সূরা ইবরাহীম এর ৪৫ নং আয়াতে বলা আছে, অনুবাদঃ

অথচ তোমরা সেই লোকগুলোর বাসভূমিতে বসবাস করছিলে যারা নিজেদের প্রতি যুলম করেছিল আর তোমাদেরকে স্পষ্ট করে দেখিয়ে দেয়া হয়েছিল আমি তাদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছিলাম। আর আমি বহু উদাহরণ টেনে তোমাদেরকে বুঝিয়েও দিয়েছিলাম।

 তাফসিরঃ

[১] এতে তাদেরকে হুশিয়ার করা হয়েছে যে, অতীত জাতিসমূহের অবস্থা ও উত্থান-পতন তোমাদের জন্য সর্বোত্তম উপদেশ। আশ্চর্যের বিষয়, তোমরা এগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর না। অথচ তোমরা এসব ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির আবাসস্থলেই বসবাস ও চলাফেরা কর। কিছু অবস্থা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এবং কিছু সংবাদ পরস্পরের মাধ্যমে তোমরা একথাও জান যে, আল্লাহ তা'আলা অবাধ্যতার কারণে ওদেরকে কিরূপ কঠোর শাস্তি দিয়েছেন। এছাড়া আল্লাহ তাদেরকে সৎপথে আনার জন্য অনেক দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন কিন্তু এরপরও তাদের চৈতন্যোদয় হয়নি। আল্লাহ বলেন, এটা পরিপূর্ণ হিকমত, কিন্তু ভীতিপ্রদর্শন তাদের কোন কাজে লাগেনি। [সূরা আল-কামার:৫][ইবন কাসীর]

আহসানুল বয়ান থেকেঃ

[১] অর্থাৎ, উপদেশ গ্রহণ করার জন্য আমি তো পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের ঘটনা বর্ণনা করে দিয়েছি, যাদের বাড়ি-ঘরে এখন তোমরা বসবাস করছ এবং তাদের জীর্ণ বাড়ি-ঘরও তোমাদেরকে চিন্তা-ভাবনা করতে উদ্বুদ্ধ করছে। যদি তোমরা এ থেকে উপদেশ গ্রহণ না কর এবং তাদের পরিণাম থেকে বাঁচার জন্য চিন্তা-ভাবনা না কর, তাহলে তোমাদের মর্জি। সুতরাং তোমরাও অনুরূপ পরিণামের জন্য প্রস্তুত থাকো।

 ব্যাখ্যাঃ

এই ২০২৩ সালেই অর্থাৎ ১৪৪৫ হিজরিতে কিছু বড় বড় নিদর্শন মানুষ দেখতে পারবে। বিভিন্ন ভাবে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শুরু করবে। এই সেই বছর যেই বছর ফুরাত নদীতে স্বর্ণের পাহাড় ভেসে উঠবে। কারণ সিরিয়া যুদ্ধের ১২ বছর পর হলে ২০১১ থেকে ১২ বছর পর ২০২৩ সাল হয়। যা হাদিসে এসেছে। এরপর বিশ্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে, হিন্দের যুদ্ধের দামামা বেজে উঠবে, হিন্দ থেকে এক দুর্বল নেতার আবির্ভাব হবে। আরো বলেছে- "এতে তাদেরকে হুশিয়ার করা হয়েছে যে"। নবী আগেই এ ব্যাপারে আগেই হুশিয়ার করেছে যে, সেখানে যেন কেউ না যায়, কারণ সেখানে নয় জনের সাত জনই মারা পরবে। আর এই মহাভারতেও চলতে থাকবে সত্য মিথ্যার লড়াই। সেই জুলুম-হত্যা থেমে নেই। আর অতীতের মতো এইগুলোও পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হয়ে থাকবে। এছাড়াও সকল ষড়যন্ত্রগুলোও আস্তে আস্তে প্রকাশ হওয়া শুরু হবে। এই সকল নিদর্শন হবে ভবিষ্যতে আরো ভয়াবহ কিছু হওয়ার ইঙ্গিত এবং তাই এটাই একদম শেষ সময় যে আপনারা সৎ পথে ফিরে আসবেন হয়তো নাহয় পূর্ববর্তী জাতিদের ন্যায় পরিণাম ভোগ করতে হবে। এর পর তাফসীরে আরো বলেছে, "আল্লাহ তাদেরকে সৎপথে আনার জন্য অনেক দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন কিন্তু এরপরও তাদের চৈতন্যোদয় হয়নি।" অন্যত্র বলেছে, যদি তোমরা এ থেকে উপদেশ গ্রহণ না কর এবং তাদের পরিণাম থেকে বাঁচার জন্য চিন্তা-ভাবনা না কর, তাহলে তোমাদের মর্জি। সুতরাং তোমরাও অনুরূপ পরিণামের জন্য প্রস্তুত থাকো। এ থেকে কি বুঝবেন তা আপনারাই ভালো জানেন। তাফসীর ইবনে কাসীর থেকে পাওয়া।

 হাদিসঃ

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, চতূর্থ ফিতনা হচ্ছে, অন্ধকার অন্ধত্বপূর্ন ফিতনা, যা সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায় উত্তাল হয়ে আসবে, আরব অনারবের কোনো ঘর বাকি থাকবেনা, প্রত্যেক ঘরেই উক্ত ফিতনা প্রবেশ করবে। যদ্বারা তারা লাঞ্ছিত অপদস্ত হয়ে যাবে। যে ফিতনাটি শাম দেশে চক্কর দিতে থাকলেও রাত্রিযাপন করবে ইরাকে। তার হাত পা দ্বারা আরব ভুখন্ডের ভিতরে বিচরণ করতে থাকবে। উক্ত ফিতনা এ উম্মতের সাথে চামড়ার সাথে চামড়া মিশ্রিত হওয়ার ন্যায় মিশ্রিত হয়ে যাবে। তখন বালা মুসিবত এত ব্যাপক ও মারাত্নক আকার ধারন করবে যদ্বারা মানুষ ভালো খারাপ নির্ণয় করতে সক্ষম হবেনা। ঐ মুহুর্তে কেউ উক্ত ফিতনা থামানোরও সাহস রাখবেনা। একদিকে একটু শান্তির সুবাতাস বইলেও অন্যদিকে তীব্র আকার ধারন করবে। সকালে কেউ মুসলমান থাকলেও সন্ধা হতে হতে সে কাফের হয়ে যাবে। উক্ত ফিতনা থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না, কিন্তু শুধু ঐ লোক বাঁচতে পারে, যে সমুদ্রে ডুবন্ত ব্যক্তির ন্যায়। করুন সুরে আকুতি জানাতে থাকে। সেটা প্রায় বারো বছর পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে। এক পর্যায়ে সকলের কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যে ফুরাত নদীতে স্বর্নের একটি ব্রিজ (খনি বা পাহাড়) প্রকাশ পাবে। যা দখল করার জন্য সকলে যুদ্ধে জড়িয়ে যাবে এবং প্রতি নয় জনের সাতজন মারা পড়বে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৭৬)

হযরত আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন চতূর্থ ফিতনা বা যুদ্ধ ১২ বছর স্থায়ী হবে। যখন অবসান হওয়ার তখন অবসান হবে। (অর্থাৎ ১২ বছর সময় শেষ হবে তারপর) স্বর্ণের পাহাড় থেকে ফুরাতকে খুলে দেওয়া হবে (প্রকাশ পাবে)। অতঃপর তার উপর (অর্থাৎ তাতে) প্রত্যেক নয় জনের সাত জনকে হত্যা করা হবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৭০)

আবূ মাসউদ সাহল ইবনু উসমান (রহঃ) ..... আবু হুরাইরাহ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ শীঘ্রই ফুরাত তার গর্ভস্থত স্বর্ণভাণ্ডার বের করে দিবে। সুতরাং এ সময় যারা উপস্থিত থাকবে তারা যেন এ থেকে কিছুই গ্রহণ না করে।
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭১৬৬ [ইঃ ফাঃ ৭০১০, ইঃ সেঃ ৭০৬৭]; সহিহ বুখারি, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৬০৫)

কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ..... আবু হুরাইরাহ (রা:) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ বলেনঃ কিয়ামত সংঘটিত হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ না ফুরাত তার মধ্যস্থিত [তার গর্ভস্থ] স্বর্ণের পাহাড় বের করে দেয়। লোকেরা এ নিয়ে যুদ্ধ করবে এবং একশতের মধ্যে নিরানব্বই জন নিহত হবে। তাদের সকলেই বলবে, আমার মনে হয় আমি জীবন্ত থাকব (বেঁচে যাব, একাই সম্পদ ভোগ করব)।
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭১৬৪-(২৯/২৮৯৪) [ইঃ ফাঃ ৭০০৮, ইঃ সেঃ ৭০৬৫]; সুনান তিরমিযী ২৫৬৯; রিয়াযুস স্বা-লিহীন তাঃ পাঃ ১৫/১৮৩১ [আন্তঃ ১৮২২]; মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৪৩; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২০৮০৪; সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৬৯১; হিলইয়াতুল আওলিয়া ১/২৫৫; আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ৫৩৮; মুসনাদে আহমাদ ৭৫০১, ৮০০১, ৮১৮৮, ৮৩৫৪, ৮৩৭০, ৯১০৩)

 

১৪+৪৬=১৪৪৬ হিজরি (২০২৪ সাল) এর ব্যাখ্যাঃ
-----------------------------------------------------

সূরা ইবরাহীম এর ৪৬ নং আয়াতে বলা আছে, অনুবাদঃ

তারা যে চক্রান্ত করেছিল তা ছিল সত্যিই ভয়ানক, কিন্তু তাদের চক্রান্ত আল্লাহর দৃষ্টির ভিতরেই ছিল, যদিও তাদের চক্রান্তগুলো এমন ছিল না যে, তাতে পর্বতও টলে যেত।

তাফসীরঃ

[১] এটা অবস্থা বর্ণনামূলক বাক্য। অর্থাৎ, আমি তাদের সাথে যা করলাম তা করলাম, অথচ অবস্থা এই যে, তারা বাতিলকে সাব্যস্ত এবং সত্যকে খন্ডন করার জন্য সর্বশক্তি ব্যয় পূর্বক কৌশল ও চক্রান্ত করল। আর আল্লাহর কাছে এসব চক্রান্তের জ্ঞান আছে; অর্থাৎ তাঁর কাছে লিপিবদ্ধ আছে যার শাস্তি তিনি তাদেরকে দেবেন।

[২] কেননা যদি পাহাড় টলে যেত, তাহলে তা স্বস্থানে থাকতো না, অথচ সমস্ত পাহাড় স্ব স্ব স্থানে অটল রয়েছে। এ হল إنْ নেতিবাচক مَا এর অর্থ। দ্বিতীয় অর্থ إنْ মূলতঃ إنَّ ছিল। অর্থাৎ নিশ্চয় তাদের চক্রান্ত এত বড় ছিল যে, তার ফলে পাহাড়ও স্বস্থান থেকে সরে যেত! তিনি তো মহান আল্লাহই যিনি তাদের চক্রান্তকে সফল হতে দেননি। যেমন মহান আল্লাহ কাফেরদের সম্বন্ধে বলেছেন, ﴿تَكَادُ السَّمَاوَاتُ يَتَفَطَّرْنَ مِنْهُ وَتَنشَقُّ الْأَرْضُ وَتَخِرُّ الْجِبَالُ هَدًّا. أَن دَعَوْا  لِلرَّحْمَنِ وَلَدًا﴾  অর্থাৎ, এতে যেন আকাশ সমূহ বিদীর্ণ হয়ে যাবে, পৃথিবী খন্ড-বিখন্ড হবে ও পর্বতসমূহ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়বে। যেহেতু তারা পরম দয়াময়ের উপর সন্তান আরোপ করে। (সূরা মারয়্যাম ১৯:৯০-৯১) (আহসানুল বায়ান)

 
তাফসীরে জাকারিয়া থেকে

[১] অর্থাৎ তিনি তাদের যাবতীয় চক্রান্ত বেষ্টন করে আছেন। তিনি সেগুলোকে পুনরায় তাদের দিকে তাক করে দিয়েছেন। আবার তিনি সেগুলোর বিনিময়ে তাদের শাস্তি দিবেন।

[২] অধিকাংশ তাফসীরবিদ (وَاِنْ كَانَ مَكْرُهُمْ) বাক্যের (اِنْ) শব্দটি নেতিবাচক অব্যয় সাব্যস্ত করে অর্থ করেছেন যে, তারা যদিও অনেক কূটকৌশল ও চালবাজি করেছে, কিন্তু তাতে পাহাড়ের স্বস্থান থেকে হটে যাওয়া সম্ভবপর ছিল না। [ইবন কাসীর] অর্থাৎ তারা সত্যদ্বীনকে বিলুপ্ত করার লক্ষ্যে এবং সত্যের দাওয়াত কবুলকারী মুসলিমদের নিপীড়নের উদ্দেশ্যে সাধ্যমত কূটকৌশল করেছে। আল্লাহ্ তা'আলার কাছে তাদের সব গুপ্ত ও প্রকাশ্য কূটকৌশল বিদ্যমান রয়েছে। তিনি এগুলো সম্পর্কে ওয়াকিফহাল এবং এগুলোকে ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম। তাদের কুটকৌশল এমন বড় কিছু নয় যে, পাহাড় টলে যাবে। সে অনুসারে তাদের যাবতীয় কুটকৌশলের হীনতা ও দুর্বলতা বর্ণনা করাই এখানে উদ্দেশ্য। অন্য আয়াতে এ অর্থে বলা হয়েছে, "ভূপৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ করবেন না; আপনি তো কখনই পদভরে ভূপৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবেন না এবং উচ্চতায় আপনি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবেন না।"[সূরা আল-ইসরাঃ ৩৭] [ইবন কাসীর]

আয়াতের দ্বিতীয় আরেকটি অর্থ হলো, যদিও তাদের কূটকৌশল এমন মারাত্মক ও গুরুতর ছিল যে, এর মোকাবেলায় পাহাড়ও স্বস্থান থেকে অপসৃত হবে।" [কুরতুবী] কিন্তু আল্লাহর অপার শক্তির সামনে এসব কূটকৌশল ব্যর্থ হয়ে গেছে। আয়াতে বর্ণিত শত্রুতামূলক কূটকৌশলের অর্থ অতীতে ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিসমূহের কূটকৌশলও হতে পারে। উদাহরণতঃ নমরূদ, ফিরআওন, কওমে-আদ, কওমে সামূদ ইত্যাদি। এটাও সম্ভব যে, এতে আরবের বর্তমান মুশরিকদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে যে, তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মোকাবেলায় অত্যন্ত গভীর ও সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত ও কূটকৌশল করেছে। কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা সব ব্যর্থ করে দিয়েছেন।

আয়াতে উল্লেখিত (مكر) শব্দের অর্থ কোন কোন মুফাসসিরের মতে, শির্ক ও রসূলদের উপর মিথ্যারোপ। [কুরতুবী] অর্থাৎ তাদের শির্ক ও রাসূলের উপর মিথ্যারোপ মারাত্মক আকার ধারণ করলেও আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিফহাল। অন্য আয়াত থেকেও এ অর্থের সমর্থন পাওয়া যায়, অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, শির্ক করার কারণে আকাশ ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়। [সূরা মারইয়ামঃ ৯০][ইবন কাসীর]

 
ব্যাখ্যাঃ

২০২৪ সাল ১৪৪৬ হিজরি। কি হবে সেই বছর? আমি যা বলবো তা গল্প এর মত মনে হবে। তাই তৎক্ষণাৎ আমার গল্পটি পরে তাফসীর এ চোখ বুলাবেন বোঝার জন্য। হিন্দের যুদ্ধের চূড়ান্ত সময় যখন জালিমরা তাদের চূড়ান্ত চক্রান্ত করবে যা পাহাড় কেও নাড়িয়ে দিতে পারত যদি আল্লাহ না সহায় করতো। তার কিছু আগে এই সময়টাতেই (হাবীবুল্লাহ) মাহমুদ নামের এক লোক জিহাদের ডাক দিবে। তাকেও মিথ্যারোপ করা হবে। এর ফলও এই দেশের মানুষরা ভোগ করবে। নাহলে যে সেই ইমাম মাহদি আসার আসার আগে তিন ভাগের দুই ভাগ মানুষ মারা যাবে, সেই হাদিসের বাস্তবায়নই বা কিভাবে হবে? (বিহারুল আনোয়ার, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ১১৯;  বিশারাতুল ইসলাম, পৃষ্ঠা ১৫০;  মুন্তাখাবুল আসার, পৃষ্ঠা ৪২৫;  মুজ'আম আল হাদিস আল ইমাম আল মাহদী, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪৭২)

হিন্দের মুশরিকরা বিরাট ষড়যন্ত্র করবে ও হিন্দের মুসলিমদের উপর গণহত্যা চালাবে। মুসলিম-মুশরিক যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। তাদের এই সকল ষড়যন্ত্রের বাস্তবায়ন আমরা এখন থেকেই দেখতে পাচ্ছি। কিভাবে রাষ্ট্রের, সমাজের প্রতিটা সেক্টর তারা দখল করে রেখেছে ও তা দিয়ে চক্রান্ত করে যাচ্ছে। এগুলো দিন দিন আরো বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আর সে সময় (১৪৪৬) তা চূড়ান্ত রূপ নিবে।

আস্তে আস্তে সেটি বাস্তবায়ন হবেই আর এই মাহমুদ আসা মানেই মাহদির আসার সময় হয়ে গেছে বুঝতে হবে। সেই বছরে যা হবে তা কল্পনায় আনা কঠিন। আমি আর সেই ইলহামি কবিতা কাসিদা আর আগামি কথনের হুমকির কথা বলছিনা। তার ইঙ্গিত তাফসিরেই পেয়ে যাবেন। আর সেই সময় হবে ঘোরতর যুদ্ধ। এমন যুদ্ধ যার কথা হাদিসে এসেছে। যাতে মুমিনদের বিজয়ে কথা বলা হয়েছে। যেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ কারীদের ফজিলত বর্ণনা এসেছে। সেটির সাল ২০২৪।

 

হাদিসঃ

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি অবশ্যই অবশ্যই পৃথিবী ততদিন ধ্বংস হবে না যতদিন না মানুষ পাঁচজন শাসকের দেখা পাবে। যারা আল্লাহর দ্বীনকে যুক্তি করে ধ্বংস করতে চাইবে। আর তারা পাঁচ শাসকই এক সাথে পৃথিবীতে উপস্থিত থাকবে। আমি (আবু হুরায়রা) বললামঃ হে আল্লাহর রসূল ! সে পাঁচজনের পরিচয় কী? তিনি বললেনঃ তাদের একজন এই পবিত্র ভূমিতে আসবে। যার নাম হবে আমার নামের মতো (মুহাম্মাদ)। সে আরবের দ্বীনকে হাস্যকর বানাবে। আর অভিশপ্ত (ইহুদী-খ্রিষ্টান) জাতিকে বন্ধু বানাবে। দ্বিতীয় সে বিশ্ব শাসক হবে। আর মুসলমানদের নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকবে। তৃতীয় জন হিন্দুস্তানের বাদশা, সে বন্ধু অঞ্চলের মুসলমানদের নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করবে। চতুর্থ জন, হিন্দুস্তানের দ্বিতীয় বাদশা। যে মুসলমানদের হত্যার শপথ নিয়ে শাসন ক্ষমতায় যাবে। আর মুসলিম হত্যায় সে উন্মাদ হয়ে পড়বে। পঞ্চম হলো একজন নারী শাসক, সে শাসন ক্ষমতা হাতে পেয়ে বা'আল দেবতার ইবাদত (অর্থাৎ পূর্বপুরুষদের পূজা) বৃদ্ধি করবে। আর মুশরিকদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে। আর মুসলমানদের হত্যা করবে। অথচ সে হবে মুসলমান। তখন দেখবে সেখানকার দুর্গম নামক অঞ্চলের এক দুর্বল বালক তাদের ষড়যন্ত্রের সমাপ্তি ঘটাবে এবং মুমিনদের বড় বিজয় আনবে।
-       (কিতাবুল আক্বিব ১৭২; আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ১৭৫)

আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি, অদূর ভবিষ্যতে হিন্দুস্তানের মুশরিকরা মুসলিমদের উপরে খুবই অত্যাচার করবে। সে সময়ে হিন্দুস্তানের পূর্ব অঞ্চল হতে একটি মুসলিম জামাতের প্রকাশ ঘটবে। যাদের পরিচালনা করবে একজন দুর্বল বালক। যার নাম হবে মাহমুদ, উপাধি নাম হবে হাবীবুল্লাহ। তিনি হিন্দুস্তান বিজয়ের পর কাবার দিকে ধাবিত হবে।...... (প্রয়োজনীয় অংশ)

-   (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ, অধ্যায়ঃ গাজওয়াতুল হিন্দ, ২৩১; কিতাবুল আক্বিব ১২৫৬; ক্বাশ্ফুল কুফা ৭৩২; আল আরিফুল ফিল ফিতান ১৭০৩)

হযরত আবু বাছির (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু আব্দুল্লাহ আস সাদিক (হযরত জাফর সাদিক (রহ:)) কে জিজ্ঞেস করলাম? কখন ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে? তিনি বললেন আহলে বাইতের (রসূলুল্লাহ এর বংশধর) জন্য কোন নির্দিষ্ট সময় (উল্লেখ) নেই। তবে ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের পূর্বে ৫টি বিষয় ঘটবে। যেমনঃ ১. আকাশ থেকে আহ্বান। ২. সুফিয়ানীর উত্থান। ৩. খোরাসানের বাহিনীর আত্নপ্রকাশ। ৪. নিরপরাধ মানুষকে ব্যাপক হারে হত্যা করা। ৫. (বাইদার প্রান্তে) মরুভূমিতে একটি বিশাল বাহিনী ধ্বসে যাবে।

ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের পূর্বে দুই ধরনের মৃত্যু দেখা যাবে। ১. শ্বেত মৃত্যু। ২. লাল মৃত্যু। শ্বেত মৃত্যু দুর্ভিক্ষের কারনে মৃত্যু। আর লাল মৃত্যু হল তরবারি (যুদ্ধের) কারনে মৃত্যু। আর আকাশ থেকে তিনি (হযরত জিব্রাইল (আঃ) তার (ইমাম মাহদীর) নাম ধরে আহ্বান করবে ২৩ ই রমজান শুক্রবার রাতে। (হাদিস বড় হওয়ায় সম্পূর্ণ হাদিস উল্লেখ করা হয়নি)
-       (বিহারুল আনোয়ার, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ১১৯; বিশারাতুল ইসলাম, পৃষ্ঠা ১৫০, মুন্তাখাবুল আসার, পৃষ্ঠা ৪২৫; মুজ'আম আল হাদিস আল ইমাম আল মাহদী, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪৭২)

হযরত ফিরোজ দায়লামী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আখেরী জামানায় ইমাম মাহদীর পূর্বে ইমাম মাহমুদ এর প্রকাশ ঘটবে। সে বড় যুদ্ধের শক্তির যোগান দিবে। তার জামানায় মহাযুদ্ধের (৩য় বিশ্বযুদ্ধে) বজ্রাঘাতে (আনবিক অস্ত্রে) বিশ্বের অধ্বঃপতন হবে এবং বিশ্ব এই সময়ে ফিরে আসবে (অর্থাৎ আধুনিকতা ধ্বংস হয়ে প্রাচীন যুগে ফিরবে)। সে তার সহচর বন্ধু সাহেবে কিরান শামীম বারাহকে সাথে নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করবে, যে বেলাল ইবনে বারাহ-এর বংশোদ্ভুত হবে। তোমরা তাদের পেলে জানবে ইমাম মাহদীর প্রকাশের সময় হয়েছে।
-       (আসরে যুহরি ১৮৭ পৃঃ; তারিখে দিমাশাক ২৩৩ পৃঃ; ইলমে তাছাউফ ১৩০ পৃঃ; ইলমে রাজেন ৩১৩ পৃঃ; বিহারুল আনোয়ার ১১৭ পৃঃ)

সাহল ইবনু সা'দ (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল বলেছেন, অচিরেই পূর্ব দিকে এক ফিতনার সৃষ্টি হবে (দ্বিতীয় কারবালা)। আর তা হবে মুশরিকদের দ্বারা। তখন মুমিনদের একটি দল তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয় আনবে। আর তাদের সেনাপতি হবে ঐ সময়ের সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি সাহেবে কিরান! আর তাদের পরিচালনা করবে একজন ইমাম। যার নাম হবে মাহমুদ। অবশ্যই তারা মাহদীর আগমন বার্তা নিয়ে আসবে।
-       (তারিখুল বাগদাদ ১২২৯)

বুরায়দা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি, খুব শীঘ্রই মুশরিকরা তাদের বন্ধু অঞ্চলের মুসলমানদের উপর অত্যাচার বৃদ্ধি করে দেবে আর নির্বিচারে হত্যা করবে। তখন সেখানকার দূর্গম নামক অঞ্চল তথা বালাদি লিল উছরো থেকে একজন দুর্বল বালক তাদের মুকাবিলা করবে। আর তার নেতৃত্বেই মুমিনদের বিজয় আসবে (গাজওয়াতুল হিন্দ বিজয়)। রাবি বলেন, তিনি আরো বলেছেন, তার একজন বন্ধু থাকবে যার উপাধী হবে সৌভাগ্যবান।
-       (আস সুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান ১৭৯১; আসারুস সুনান ৮০৩; আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮৮১)

১৪+৪৭=১৪৪৭ হিজরি (২০২৫ সাল) এর ব্যাখ্যাঃ
-----------------------------------------------------

সূরা ইবরাহীম এর ৪৭ নং আয়াতে বলা আছে, অনুবাদঃ

(অবস্থা যতই প্রতিকূল হোক না কেন) তুমি কক্ষনো মনে কর না যে, আল্লাহ তাঁর রসূলগণকে দেয়া ওয়াদা খেলাপ করবেন, আল্লাহ মহা প্রতাপশালী, প্রবল প্রতিশোধ গ্রহণকারী।

তাফসিরঃ

[১] এরপর উম্মতকে শোনানোর জন্য রসূলুল্লাহ কে অথবা প্রত্যেক সম্বোধনযোগ্য ব্যক্তিকে হুশিয়ার করে বলা হয়েছেঃ কেউ যেন এরূপ মনে না করে যে, আল্লাহ্ তা'আলা রসূলগণের সাথে বিজয় ও সাফল্যের যে ওয়াদা করেছেন, তিনি তার খেলাফ করবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তাআলা মহাপরাক্রান্ত এবং প্রতিশোধ গ্রহণকারী।" তিনি নবীগণের শক্রদের কাছ থেকে অবশ্যই প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন এবং ওয়াদা পূর্ণ করবেন। [বাগভী; কুরতুবী]। তিনি তাদেরকে দুনিয়াতেও সাহায্য করবেন, আখেরাতেও যেদিন সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে দাঁড়াবে সেদিনও তিনি তাদের সাহায্য করবেন। তিনি পরাক্রমশালী কোন কিছুই তার ক্ষমতার বাইরে নেই। তিনি যা ইচ্ছা করেন তা পূরণে কেউ বাধা সৃষ্টি করতে পারে না। [ইবন কাসীর]

ফাতহুল মাজিদ থেকে তাফসিরঃ

আল্লাহ তাআলা নিজের প্রতিশ্রুতিকে সুদৃঢ় ও মজবুত করে বলছেন: দুনিয়া ও আখেরাতে রসূলদের সাহায্য করার যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছেন তার বরখেলাফ হবে না। তাঁর ওপর কেউ জয়যুক্ত নয়, তিনি সবার ওপর জয়যুক্ত। তাঁর ইচ্ছা পূর্ণ হয়, তিনি যা চান তাই হয়। তিনি অবশ্যই কাফিরদেরকে শাস্তি দেবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:

 “নিশ্চয় আল্লাহ তার ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। (সূরা আলি-ইমরান-৩:৩৯)

আহসানুল বায়ান থেকে তাফসীরঃ

[১] অর্থাৎ, মহান আল্লাহ স্বীয় রসূলদের সাথে পৃথিবীতে সাহায্য করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা অবশ্যই সত্য, তাঁর তরফ থেকে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হওয়া অসম্ভব।

[২] অর্থাৎ স্বীয় বন্ধুদের জন্য স্বীয় শত্রুদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী।

ব্যাখ্যাঃ

২০২৫ সালে, ১৪৪৭ হিজরিতে আল্লাহ তার ওয়াদা পূর্ণ করবে আর প্রতিশোধ গ্রহণ করবে। আর আল্লাহ যখন প্রতিশোধ গ্রহণকারী তখন কি হতে পারে তা কি আপনার জানা আছে? আল্লাহ এই আয়াতে বলেছেন যে তিনি তার রসূলদের সাথে করা ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। অর্থাৎ বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই হিজরিতে ইসলামকে আবার বিজয়ী করবেন আল্লাহ তায়ালা।

এই সেই সাল যে সময় মানুষ একে অপরের উপর অগ্নি (পারমাণবিক অস্ত্র) নিক্ষেপ করবে। (তাজকিরাহ, লেখকঃ ইমাম কুরতুবী; আন নিহায়া ফিল ফিতান, লেখকঃ ইবনে কাসীর; আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৮৮৫)

 

হযরত কা'ব (রা:) বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি, অচিরেই মুসলমানরা এক দুর্বল বালকের নেতৃত্বে হিন্দুস্তান দখল করবে। আর এ যুদ্ধের ব্যপারেই তোমাদের প্রতিশ্রুতি নেয়া হয়েছে। আর আল্লাহও এই যুদ্ধে বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর সেখান থেকেই আল্লাহ মুশরিকদের পতন করে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। একথা বলে তিনি সূরা ইবরাহীম এর ৪৭ নং আয়াত পাঠ করলেন। (প্রয়োজনীয় অংশ)
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৫০৭; কিতাবুল আক্বিব ১০০; আখীরুজ্জামানা আলমাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ২৩৫)

দুই তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যাবে, আর এ বছরেও এর সংখ্যা ভালই হবে। এ বছর বেশির ভাগ মারা যাবে যুদ্ধ বিগ্রহে। (বিহারুল আনোয়ার, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ১১৩;  আসরে জুহুরী, পৃষ্ঠা ১৯০)

এই বছরে হবে সেই গাজওয়াতুল হিন্দের বিজয়। এর মাধ্যমে আল্লাহ মুশরিকদেরকে সমূলে ধ্বংস করবেন। থাকবে না এর পর আর কোনো পথভ্রষ্ট আলেম, না থাকবে নর্তকী। আল্লাহ ইসলামকে বিজয়ী করবেন। তিনি জালিমদেরকে ধ্বংস করবেন। এই মহাভারত হবে মুসলিমদের।

তাফসীরে আরো বলা হয়েছে- "স্বীয় বন্ধুদের জন্য স্বীয় শত্রুদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী"।

যেহেতু এই যুদ্ধ এর আরো কিছুপর মাহ্দী আসবেন। তাহলে, তার বন্ধু কারা হবে সেদিন? আমি তো জানি। বললে আপনারা মতবিরোধ শুরু করে দিবেন। তাই তা আপনাদের জানাচ্ছি না।

কারা বাঁচবে তখন জানেন? যারা জিহাদ করেছিল আর প্রস্তুতি ছিল সেই আগের সালগুলো থেকেই যেগুলো আমি ব্যাখ্যা করেছি। তারাই বেঁচে যাওয়া এক ভাগের মধ্যে থাকবে। (বিহারুল আনোয়ার, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ১১৩; আসরে জুহুরী, পৃষ্ঠা ১৯০; হাদিসের মান: সহিহ, সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৩১৭৫)

 হাদিসগুলিঃ

হযরত হুযাইফা (রা:) বলেন, রসূলে পাক ﷺ বলেছেন, বিশ্বব্যাপী অধঃপতন শুরু হবে। এমনকি মিশরও অধঃপতনের সম্মুখীন হবে। তুরস্কের অধঃপতন হবে দায়লামীর পক্ষ থেকে বিস্ফোরণের মাধ্যমে। দায়লামীর অধঃপতন হবে, আর্মেনিয়ার পক্ষ থেকে। আর্মেনিয়ার অধঃপতন হবে, খাজার পক্ষ থেকে, খাজার অধঃপতন হবে, তুরস্কের পক্ষ থেকে। সিন্দের অধঃপতন হবে, হিন্দুস্তানের পক্ষ থেকে। হিন্দুস্তানের অধঃপতন হবে, তিব্বতের পক্ষ থেকে। তিব্বতের অধঃপতন হবে নাসারার পক্ষ থেকে। *

-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৬৮; তাজকিরাহ, ইমাম কুরতুবী; আন নিহায়া ফিল ফিতান ওয়াল মালাহিম, ইবনে কাসীর; আস সুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, আবু আমর আদ-দানী)

-   * বিভিন্ন দেশ বা অঞ্চলকে রসূলের জামানায় এই সকল নামেই অভিহিত করা হতো এবং বর্তমানে এই সকল দেশ বা অঞ্চলগুলো ভেঙ্গে নতুন নতুন দেশ বা রাষ্ট্রতে পরিণত হয়েছে। তাই বর্তমানে অঞ্চল ঠিক করা একটু কঠিন হয়। দায়লামী নামে ইরানের একটি প্রদেশও আছে। তবে এখানে দায়লামী বলতে কুর্দিকে বুঝিয়েছে। খাজার অর্থ রাশিয়া, সিন্দ হচ্ছে পাকিস্তান, হিন্দ হছে ভারত, তিব্বত হচ্ছে চীন।

হযরত জাফর সাদিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ মানুষ ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত ইমাম মাহদীর আবির্ভাব ঘটবে না। তখন আমি আবু বাসির জিজ্ঞাসা করলাম, তখন কোন ব্যক্তি অক্ষত থাকবে? এ উত্তরে জাফর সাদিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, তোমরা (মুসলমানেরা) কি অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ এর মধ্যে থাকতে চাও না?
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৬০; বিহারুল আনোয়ার, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ১১৩; আসরে জুহুরী, পৃষ্ঠা ১৯০)

রসূলুল্লাহ এর গোলাম ছাওবান (রা:) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ বলেছেন: আমার উম্মতের দুটি দল, আল্লাহ্ তাআলা তাদেরকে জাহান্নাম হতে পরিত্রাণ দান করবেন। একদল যারা হিন্দুস্তানের জিহাদ করবে, আর একদল যারা ঈসা ইবনে মারিয়াম (আঃ) এর সঙ্গে থাকবে।
-       (সহীহ, সূনান নাসাঈ ৩১৭৫ (ইঃ ফাঃ ৩১৭৮); সহীহাহ ১৯৩৪; সহীহ জামে' আস-সগীর ৪০১২; আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮৬৫)

হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা:) বলেছেন, শেষ জামানায় ইমাম মাহমুদ ও তাঁর বন্ধু সাহেবে কিরানের প্রকাশ ঘটবে। আর তাদের মাধ্যমে মুশরিকদের উপর মুসলমানদের বড় বিজয় আসবে। আর তা হবে মাহদীর আগমনের পূর্বে।
-       (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮৭২; আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ, অধ্যায়ঃ শেষ জামানায় আত্মপ্রকাশকারী নেতা)

বুরায়দা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি, খুব শীঘ্রই মুশরিকরা তাদের বন্ধু অঞ্চলের মুসলমানদের উপর অত্যাচার বৃদ্ধি করে দেবে আর নির্বিচারে হত্যা করবে। তখন সেখানকার দূর্গম নামক অঞ্চল তথা বালাদি লিল উছরো থেকে একজন দুর্বল বালক তাদের মুকাবিলা করবে। আর তার নেতৃত্বেই মুমিনদের বিজয় আসবে। (গাজওয়াতুল হিন্দ বিজয়)। রাবি বলেন, তিনি আরো বলেছেন, তার একজন বন্ধু থাকবে যার উপাধী হবে সৌভাগ্যবান।
-       (আস সুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান ১৭৯১; আসারুস সুনান ৮০৩; আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮৮১)

হযরত মুস্তাওয়ীদ আল কুরাইশী (রা:) বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি। কিয়ামতের পূর্বে ইহুদী-খৃষ্টান বৃদ্ধি পাবে। আর বজ্রঘাতের মৃত্যুতে তাদের সংখ্যা কমে যাবে।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮০৭)

হযরত আবু বাছির (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু আব্দুল্লাহ আস সাদিক (হযরত জাফর সাদিক (রহ:)) কে জিজ্ঞেস করলাম? কখন ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে? তিনি বললেন আহলে বাইতের (রসূলুল্লাহ এর বংশধর) জন্য কোন নির্দিষ্ট সময় (উল্লেখ) নেই। তবে ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের পূর্বে ৫টি বিষয় ঘটবে। যেমনঃ ১. আকাশ থেকে আহ্বান। ২. সুফিয়ানীর উত্থান। ৩. খোরাসানের বাহিনীর আত্নপ্রকাশ। ৪. নিরপরাধ মানুষকে ব্যাপক হারে হত্যা করা। ৫. (বাইদার প্রান্তে) মরুভূমিতে একটি বিশাল বাহিনী ধ্বসে যাবে।

ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের পূর্বে দুই ধরনের মৃত্যু দেখা যাবে। ১. শ্বেত মৃত্যু। ২. লাল মৃত্যু। শ্বেত মৃত্যু দুর্ভিক্ষের কারনে মৃত্যু। আর লাল মৃত্যু হল তরবারি (যুদ্ধের) কারনে মৃত্যু। আর আকাশ থেকে তিনি (হযরত জিব্রাইল (আঃ) তার (ইমাম মাহদীর) নাম ধরে আহ্বান করবে ২৩ ই রমজান শুক্রবার রাতে। (হাদিস বড় হওয়ায় সম্পূর্ণ হাদিস উল্লেখ করা হয়নি)
-       (বিহারুল আনোয়ার, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ১১৯; বিশারাতুল ইসলাম, পৃষ্ঠা ১৫০, মুন্তাখাবুল আসার, পৃষ্ঠা ৪২৫; মুজ'আম আল হাদিস আল ইমাম আল মাহদী, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪৭২)

 

১৪+৪৮=১৪৪৮ হিজরি (২০২৬ সাল) এর ব্যাখ্যাঃ
-----------------------------------------------------

সূরা ইবরাহীম এর ৪৮ নং আয়াতে বলা আছে, অনুবাদঃ

যেদিন এ পৃথিবী বদলে গিয়ে অন্য এক পৃথিবীতে রূপান্তরিত হবে আর আসমানসমূহও (বদলে যাবে), আর মানুষ সমুস্থাপিত হবে এক ও অপ্রতিরোধ্য আল্লাহর সম্মুখে।

 তাফসীরঃ

[১] ইমাম শওকানী বলেন, আয়াতে দুটো সম্ভাবনাই রয়েছে যে, এই পরিবর্তন গুণগত দিক থেকেও হতে পারে এবং পদার্থগত দিক থেকেও হতে পারে। অর্থাৎ এই আকাশ ও পৃথিবী নিজ নিজ গুণগত দিক দিয়ে পরিবর্তিত হবে অথবা অনুরূপ পদার্থগত দিক থেকে তার পরিবর্তন আসবে, না এই পৃথিবী থাকবে আর না এ আকাশ। পৃথিবীও অন্য হবে এবং আকাশও অন্য। রসূল বলেছেন, "কিয়ামতের দিন মানুষ সাদা ও লালচে সাদা রঙের ভূমিতে একত্রিত হবে, যা ময়দার রুটির মত হবে, তাতে কারো কোন (মালিকানার) চিহ্ন থাকবে না। (মুসলিম, সিফাতুল কিয়ামাহ) একদা আয়েশা (রা:) জিজ্ঞাসা করলেন, যখন এই আকাশ ও পৃথিবী পরিবর্তন হবে, তখন সেই দিন লোকেরা কোথায় অবস্থান করবে? উত্তরে নবী বললেন, পুল সিরাতের উপর। (সাবেক উদ্ধৃতি) এক ইহুদীর প্রশ্নের উত্তরে নবী বলেছিলেন, "সেই দিন লোকেরা পুলের নিকট অন্ধকারে অবস্থান করবে। (মুসলিম, কিতাবুল হায়য) (আহসানুল বায়ান)
তাফসীরঃ (ফাতহুল মাজিদ)

কিয়ামতের দিন জমিন পরিবর্তন হয়ে অন্য জমিন হয়ে যাবে, এ আকাশ থাকবে না, পরিবর্তন হয়ে যাবে। ইমাম শাওক্বানী (রহঃ) বলেন: পরিবর্তন দুভাবে হতে পারে (১) গুণগত দিক দিয়ে, (২) পদার্থগত দিক দিয়ে।

উক্ত আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি হাদীসে বলেন: কিয়ামতের দিন মানুষ সাদা ও লালচে রঙের ভূমিতে একত্রিত হবে, যা ময়দার রুটির মত হবে, তাতে কারো কোন চিহ্ন থাকবেনা। (সহীহ মুসলিম হা: ২৭৯০)

আয়িশাহ (রা:) হতে বর্ণিত তিনিই সর্বপ্রথম এ আয়াত সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করেন। তিনি বলেন: যেদিন আকাশ-জমিন পরিবর্তন হয়ে যাবে সেদিন মানুষ কোথায় থাকবে? তিনি বললেন: পুলসিরাতের ওপর। (সহীহ মুসলিম হা: ২৭৯০) এ সম্পর্কে আরো কয়েকটি হাদীস ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) তাঁর তাফসীরে নিয়ে এসেছেন।

৪৭-৪৮ আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তাআলা তাঁর ওয়াদা বাস্তবায়ন করবেনই, তা ভঙ্গ করবেন না।

২. কিয়ামতের দিন আকাশ ও পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে যাবে।

৩. সেদিন আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কারো কোন মালিকানা থাকবে না।

 

ব্যাখ্যাঃ

আয়াতটি কিয়ামতের দিনের কথা বলেছেন। সেটাও বাস্তব। তবে দুনিয়াতেও এরকম একটি অবস্থা কেয়ামতের আগেই হবে। ২০২৫ সালে ৩য় বিশ্বযুদ্ধ হলো। পারমাণবিক অস্ত্রের কারণে পৃথিবী প্রায় ধ্বংস-বিধ্বস্ত হয়ে গেলো। এরপর কি হবে? ২০২৬ সাল আসবে তারপর।

৩ ভাগের ১ ভাগ তো যুদ্ধ বিগ্রহে মারা গেলো। আরেক ভাগ মারা যাবে শ্বেত মৃত্যুতে। মানে অনাহারে, দুর্ভিক্ষে। ফসল ফলাদি হবে না এরপর (যুদ্ধের পর)। কারণ? কারণ বেশির ভাগই ধ্বংস-ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর কি হবে যে আজাব দেখতে পারবে?

কেয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে ধোঁয়া। সে সময় সূরা দুখানের ১০ নং আয়াতের বাস্তবায়ন হবে। বলা আছে-

আল্লাহ বলেন, "অতএব আপনি সেই দিনের অপেক্ষা করুন, যখন আকাশ ধোঁয়ায় ছেয়ে যাবে। যা মানুষকে ঘিরে ফেলবে। এটা যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের উপর থেকে শাস্তি প্রত্যাহার করুন, আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। তারা কি করে বুঝবে, অথচ তাদের কাছে এসেছিলেন স্পষ্ট বর্ণনাকারী রসূল"। সুরা দোখান-১০-১৩।

মাছরূক বলেন, আমরা আব্দুল্লাহ বিন মাসউদের কাছে বসা ছিলাম। এক লোক এসে বলতে লাগল, হে আবু আব্দুর রহমান! এক লোক বলে বেড়াচ্ছে যে, অচিরেই ধোঁয়ায় নিদর্শনটি আবর্তিত হবে। যন্ত্রনায় কাফেরদের দম বন্ধ হয়ে যাবে, মুমিনদের সর্দি জাতীয় অনুভব হবে। (সহীহ ইবনে হিব্বান ৪৭৬৪)

আর আয়াতে আর বলেছে যে আকাশ পরিবর্তন হয়ে যাবে। সেটাও হবে কিভাবে? সেটাই এই যুদ্ধের পর জমা ধোঁয়ায় হবে। সূর্য দেখা যাবে না, পৃথিবী অন্ধকার হয়ে থাকবে। এর ফলে কোন ফসল ফলাদি হবে না। আর অনাহারে মানুষ আবারো মারা যাবে। এই ১০ নং আয়াতের তাফসীর দিলে আর হাদিস দিতে হবে না।

তাফসিরঃ (সূরা দুখানের ১০ নং আয়াত এর- আহসানুল বায়ান)

অতএব তুমি অপেক্ষা কর সে দিনের, যেদিন আকাশ স্পষ্ট ধূমাচ্ছন্ন হবে। [১]

[১] এতে কাফেরদেরকে ধমক দিয়ে বলা হচ্ছে যে, ঠিক আছে (হে নবী) তুমি ঐ দিনের অপেক্ষা কর, যখন আকাশে ধোঁয়ার আবির্ভাব ঘটবে। এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলা হয় যে, মক্কাবাসীদের বিদ্বেষমূলক আচরণে বিরক্ত হয়ে নবী করীম তাদের উপর অনাবৃষ্টির বদদোআ করলেন। যার ফলে তাদের উপর অনাবৃষ্টির শাস্তি নেমে এল। এমন কি খাদ্যাভাবে তারা হাড়, চামড়া এবং মৃত ইত্যাদি খেতে বাধ্য হয়ে পড়ল। আকাশের দিকে তাকালে কঠিন ক্ষুধা ও দুর্বলতার কারণে তারা কেবল ধোঁয়া দেখত। পরিশেষে অতিষ্ঠ হয়ে তারা নবী করীম -এর নিকট উপস্থিত হয়ে আযাব দূরীভূত হলে ঈমান আনার অঙ্গীকার করে। কিন্তু এই অবস্থা দূর হয়ে গেলে তারা পুনরায় কুফরী ও অবাধ্যতায় ফিরে আসে। তাই তো বদর যুদ্ধে তাদেরকে আবার কঠোরভাবে পাকড়াও করা হয়। (বুখারীঃ তাফসীর অধ্যায়) কেউ কেউ বলেন, কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার দশটি বড় বড় নিদর্শনাবলীর একটি নিদর্শন ধোঁয়াও। চল্লিশ দিন যাবত এ ধোঁয়া বিদ্যমান থেকে কাফেরদের শ্বাসরোধ করবে। আর মু'মিনদের অবস্থা সর্দি লাগার মত হবে। আয়াতে এই ধোঁয়ার কথাই বলা হয়েছে। এই ব্যাখ্যার ভিত্তিতে এই নিদর্শন কিয়ামতের নিকটতম পূর্ব সময়ে প্রকাশ হবে। আর প্রথম ব্যাখার ভিত্তিতে এটা প্রকাশ হয়ে গেছে। ইমাম শাওকানী বলেন, উভয় ব্যাখ্যাই স্ব-স্ব স্থানে সঠিক। আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ হিসাবে এ ঘটনা ঘটে গেছে, যা সঠিক সূত্রে প্রমাণিত। এ দিকে কিয়ামতের নিদর্শনসমূহের যে তালিকা বহু সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, তাতেও এই ধোঁয়ার কথা উল্লেখ আছে। কাজেই ওটাও এর পরিপন্থী নয়, বরং তখনও তার আবির্ভাব ঘটবে।

তাফসীরে আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়াঃ

অতএব আপনি অপেক্ষা করুন সে দিনের যেদিন স্পষ্ট ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হবে আকাশ [১],

[১] আলোচ্য আয়াতসমূহে উল্লেখিত ধোঁয়া সম্পর্কে সাহাবী ও তাবেয়ীগণের তিন প্রকার উক্তি বর্ণিত আছে। প্রথম উক্তি এই যে, এটা কেয়ামতের অন্যতম আলামত বা কেয়ামতের সন্নিকটবতী সময়ে সংঘটিত হবে। এই উক্তি আলী, ইবন আব্বাস, ইবন ওমর, আবু হুরায়রা, রাদিয়াল্লাহু আনহুম ও হাসান বসরী রাহেমাহুল্লাহ প্রমুখ থেকে বর্ণিত আছে। দ্বিতীয় উক্তি এই যে, এ ভবিষ্যদ্বানী অতীতে পূর্ণ হয়ে গেছে এবং এতে মক্কার সে দুর্ভিক্ষ বোঝানো হয়েছে, যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দো'আর ফলে মক্কাবাসীদের উপর অর্পিত হয়েছিল। তারা ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিল এবং মৃত জন্তু পর্যন্ত খেতে বাধ্য হয়েছিল। আকাশে বৃষ্টি ও মেঘের পরিবর্তে ধুম্র দৃষ্টিগোচর হত। এ উক্তি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) প্রমুখের। তৃতীয় উক্তি এই যে, এখানে মক্কা বিজয়ের দিন মক্কার আকাশে উত্থিত ধূলিকণাকে ধুম্র বলা হয়েছে। এ উক্তি আবদুর রহমান আ'রাজ প্রমুখের। প্রথমোক্ত উক্তিদ্বয়ই সমধিক প্রসিদ্ধ। তৃতীয় উক্তি ইবনে-কাসীরের মতে অগ্রাহ্য। সহীহ হাদীসসমূহে দ্বিতীয় উক্তিই অবলম্বিত হয়েছ। প্রথমোক্ত উক্তিদ্বয়ের বর্ণনাসমূহ নিম্নরূপঃ

হুযায়ফা ইবনে আসীদ বলেন, একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন। আমারা তখন পরস্পর কেয়ামতের সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেন, যত দিন তোমারা তোমরা দশটি আলামত না দেখ, ততদিন কেয়ামত হবে না [১] পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়, [২] দুখান তথা ধুম্র, [৩] দাব্বা (বা বিচিত্র ধরণের প্রাণী), [৪] ইয়াজুজ-মাজুজের আবির্ভাব, [৫] ঈসা আলাইহিস্‌সালাম-এর অবতরণ, [৬] দাজ্জালের আবির্ভাব, (৭) পূর্বে ভূমিধ্বস, (৮) পশ্চিমে ভূমিধ্বস, (৯) আরব উপদ্বীপে ভূমিধ্বস, (১০) আদন থেকে এক অগ্নি বের হবে এবং মানুষকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে। মানুষ যেখানে রাত্রিযাপন করতে আসবে, অগ্নিও থেমে যাবে, যেখানে দুপুরে বিশ্রামের জন্যে আসবে, সেখানে অগ্নিও থেমে যাবে। [মুসলিম; ২৯০১] এছাড়া কিছু সহীহ ও হাসান হাদীসও একথা প্রমাণ করে যে, দুখান ধুম্র কেয়ামতের ভবিষ্যত আলামতসমূহের অন্যতম। কুরআনের বাহ্যিক ভাষাও এর সাক্ষ্য দেয়।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) বলেন, কাফেররা যখন রসূলুল্লাহ -এর দাওয়াত কবুল করতে অস্বীকার করল এবং কুফৱীকেই আঁকড়ে রইল, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের উপর দোআ করলেন যে, হে আল্লাহ এদের উপর ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর আমলের দুর্ভিক্ষের ন্যায় দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দিন। ফলে কাফেররা ভয়ংকর দুর্ভিক্ষে পতিত হল। এমনকি, তারা অস্থি এবং মৃত জন্তুও ভক্ষণ করতে লাগল। তারা আকাশের দিকে তাকালে ধুম্র ব্যতীত কিছুই দৃষ্টিগোচর হত না। এক বর্ণনায় আছে, তাদের কেউ আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার তীব্রতায় সে কেবল ধুম্রের মত দেখত। অতঃপর আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ তার বক্তব্যের প্রমাণ স্বরূপ এ আয়াতখানি তেলাওয়াত করলেন। দুর্ভিক্ষ পীড়িত জনগণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে আবেদন করল, আপনি আপনার মুদার গোত্রের জন্য আল্লাহর কাছে বৃষ্টির দো'আ করুন। নতুবা আমরা সবাই ধ্বংস হয়ে যাব। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম দো'আ করলে, বৃষ্টি হল। তখন আয়াত নাযিল হল। আমরা কিছু দিনের জন্যে তোমাদের থেকে আযাব প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। কিন্তু তোমরা বিপদমুক্ত হয়ে গেলে আবার কুফরের দিকে ফিরে যাবে। বাস্তবে তাই হল, তারা তাদের পূর্বাবস্থায় ফিরে গেল। তখন আল্লাহ তা'আলা আয়াত নাযিল করলেন। অর্থাৎ যেদিন আমরা প্রবলভাবে পাকড়াও করব, সেদিনের ভয় কর।

আয়াত টা আবার একটু দেখি। "যেদিন এ পৃথিবী বদলে গিয়ে অন্য এক পৃথিবীতে রূপান্তরিত হবে আর আসমানসমূহও (বদলে যাবে), আর মানুষ সমুস্থাপিত হবে এক ও অপ্রতিরোধ্য আল্লাহর সম্মুখে।"

 

বলেছে, "এ পৃথিবী বদলে গিয়ে অন্য এক পৃথিবীতে রূপান্তরিত হবে আর আসমানসমূহও (বদলে যাবে)"

কিয়ামতের দিন তো তা হবেই। কিন্তু হাদিসে বলা আছে যে, শেষ জামানায় বজ্রাঘাতে পৃথিবীতে ধ্বংস ছড়িয়ে পরবে আর আধুনিকতার ধ্বংস হবে, আর যুগ এই যুগে ফিরে আসবে।

মানে এই ৩য় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীতে আর কোন আধুনিকতা থাকবে না। সব ধ্বংস হয়ে যাবে হাদিসের মতে। আর পৃথিবী তখন ঘোড়া তরবারির যুগে পরিণত হবে।

হাদিসঃ

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, সাবধান! মুশরিকরা নিজেদের অবাধ্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পৃথিবীতে কেয়ামত আনয়ন করবে (৩য় বিশ্বযুদ্ধ ঘটাবে)। আর তখন পৃথিবীতে অগ্নি (পারমাণবিক অস্ত্র) প্রকাশ পাবে, যা পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ মানুষকে ধ্বংস করবে। তাঁর পরেই আল্লাহ তায়ালা একটি শান্তিময় পৃথিবী দেখাবেন, যেখানে কোনো বিশৃঙ্খলা থাকবে না। এ কথা বলে তিনি সূরা ইবরাহীমের ৪৮ নম্বর আয়াত পাঠ করলেন। *

-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৭৮)

-   * দেখা যাচ্ছে এই হাদিসগুলো খুব দ্রুতই বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। আজ যদি হিসাব করা হয় তাহলে দেখা যাবে মুসলিমদের চেয়ে আধুনিক অস্ত্রে মুশরিক তথা ইহুদী-খ্রিষ্টানরাই এগিয়ে। মুশরিক দেশগুলোতেই বেশির ভাগ পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ। সব জায়গাতেই এখন যুদ্ধের দামামা বেজে চলেছে। ইহুদী-খ্রিষ্টানদের মধ্যেই এখন পারস্পারিক শত্রুতা বিরাজ করছে। তারা নিজেরা নিজেরাই যুদ্ধ করে ধ্বংস হয়ে যাবে আর এটি মুসলিমদের জন্যই আল্লাহর একটি অশেষ নিদর্শন হবে। এরপর এই পৃথিবী শান্তিময় হবে।

তো এইগুলো হবে ১৪৪৮ হিজরিতে (২০২৬ সাল), তাফসীর থেকে আরো ইঙ্গিত পাবেন।

 

 

 

 

১৪+৪৯=১৪৪৯ হিজরি (২০২৭ সাল) এর ব্যাখ্যাঃ
-----------------------------------------------------

সূরা ইবরাহীম এর ৪৯ নং আয়াতে বলা আছে, অনুবাদঃ

সেদিন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে শৃঙ্খলে তাদের হাত পা শক্ত করে বাঁধা। (ইবনে কাছীর)

সেদিন তুমি অপরাধীদেরকে (হাত পা) দেখবে শৃঙ্খলিত অবস্থায়। (ফাতহুল মাজীদ)

 

তাফসিরঃ

[১] অর্থাৎ যেদিন সমস্ত মানুষ মহান বিচারপতি আল্লাহর সামনে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হবে। তখন যদি আপনি অপরাধীদের দিকে দেখতেন যারা কুফরি ও ফাসাদ সৃষ্টি করে অপরাধ করে বেড়িয়েছে, তারা সেদিন শৃঙ্খলিত অবস্থায় থাকবে। [ইবন কাসীর] এখানে কয়েকটি অর্থ হতে পারে, একঃ কাফেরগণকে তাদের সমমনা সাথীদের সাথে একসাথে শৃংখলিত অবস্থায় রাখা হবে। [ইবন কাসীর] যেমন অন্য আয়াতে এসেছে, (ফেরেশতাদেরকে বলা হবে,) একত্র কর যালিম ও তাদের সহচরদেরকে এবং তাদেরকে যাদের ইবাদাত করত তারা---" [সূরা আস-সাফফাত: ২২]

আরও এসেছে, আর যখন দেহে আত্মাসমূহ সংযোজিত হবে [সূরা আত-তাকওয়ীর: ৭]

যাতে করে শাস্তি বেশী ভোগ করতে পারে। কেউ কারো থেকে পৃথক হবে না। পরস্পরকে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। দুইঃ তারা নিজেদের হাত ও পা শৃংখলিত অবস্থায় জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। [কুরতুবী] তিন, কাফের ও তাদের সাথে যে শয়তানগুলো আছে সেগুলোকে একসাথে শৃংখলিত করে রাখা হবে। [বাগভী; কুরতুবী] এমনও হতে পারে যে, সব কয়টি অর্থই এখানে উদ্দেশ্য।

 

ব্যাখ্যাঃ

এর পরই সব কাফিররা আর ফাসাদ সৃষ্টি করতে পারবে না। এই আজাব দিয়েই তাদের এক শাস্তি দিয়েছে। ২০২৭ সাল, যা হবে কাফিরদের পরাজয়ের সময়। এই সময়ও ঘোড়া তলোয়ারের মাধ্যমে যুদ্ধ চলবেই। কাফিরদের ধরে হত্যা করা হবে ও বন্দী করা হবে। এই কালো পতাকা ধারীরা এমন ভাবে যুদ্ধ করবে যে তাদের সামনে পাহাড় থাকলে তাও টলে যাবে। তারা তারপর মক্কার দিকে রওনা দিবে। আর রাস্তায় যুদ্ধ চালিয়েই যাবে। (সুনানে ইবনে মাজা; খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩৬৭; মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫১০)

এরাই সেই পূর্ব দিকের (খোরাসানের) সৈনিক যারা সেই ১৪৪১ সালেই প্রস্তুতি নিয়েছিল। আর এরাই সেই দল যারা হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করেছে। সুফিয়ানির সাথে যুদ্ধ করেছে। খারেজী গোষ্ঠীর সাথে যুদ্ধ করছে। আর এই বিজয়ী দলে আছেন আল্লাহর মনোনীত দুই ইমাম, একজন মাহমুদ ও আরেকজন মানসূর! আর আরো থাকবেন শামীম বারাহ, শুয়াইব ইবনে সালেহ ও হারিস ইবনু হাররাস! (তারিখুল বাগদাদ, ১২২৯)

আর এরাই সেই দল যার শেষ অংশটুকু বাকি থাকবে এবং বায়াত নিবে ইমাম মাহদীর হাতে!

হাদিসঃ

হযরত ছওবান (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ বলেছেন, তোমাদের ধনভাণ্ডারের নিকট তিনজন বাদশাহের সন্তান যুদ্ধ করতে থাকবে। কিন্তু ধনভাণ্ডার তাদের একজনেরও হস্তগত হবে না। তারপর পূর্ব দিক (খোরাসান) থেকে কতগুলো কালো পতাকাবাকী দল আত্মপ্রকাশ করবে। তারা তোমাদের সাথে এমন ঘোরতর লড়াই লড়বে, যেমনটি কোন সম্প্রদায় তাদের সঙ্গে লড়েনি। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর নবীজি আরও একটি বিষয় উল্লেখ করে বললেন, তারপর আল্লাহর খলীফা মাহদির আবির্ভাব ঘটবে। তোমরা যখনই তাঁকে দেখবে, তাঁর হাতে বাইয়াত নেবে। যদি এজন্য তোমাদেরকে বরফের উপর দিয়ে হামাগুড়ি খেয়ে যেতে হয়, তবুও যাবে। সে হবে আল্লাহর খলীফা মাহদী
-       (যঈফ, সুনানে ইবনে মাজা; খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩৬৭; মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫১০; ইমাম আলবানী বলেনঃ আল্লাহর খলীফা কথাটি ব্যতীত হাদীছের বাকী অংশ সহীহ)

হযরত হাসান (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আর্যদের পিতল বর্নের চাঁর ব্যাক্তি বনি তামিম গোত্রের অভিমুখে বের হবেন। তাদের মধ্যে একজন হবেন হাঙর মাছের মত (তামাটে বর্ণের মত), যার নাম হবে শুয়াইব ইবনে সালেহ। তার সাথে ৪০০০ সৈন্য থাকবে। তাদের পোশাক হবে সাদা, আর তাদের পতাকা হবে কালো। তারা ইমাম মাহদীর অগ্রগামী অনুগত সৈন্য হবে এমনকি তারা তাদের শত্রুদের পরাজিত না করে মাহদীর সাথে সাথে সাক্ষাৎ করবে না।
-   (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৯৭)

হযরত আমর ইবনে শুআইব এর দাদা বর্ণনা করেন, আল্লাহর রসূল বলেছেন, জুলকাদা মাসে বিভিন্ন গোত্রের মাঝে দ্বন্দ ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ঘটনা ঘটবে। ফলে হজ্জ পালনকারীরা লুণ্ঠিত হবে এবং মিনায় যুদ্ধ সংগঠিত হবে। সেখানে ব্যাপক প্রানহানির ঘটনা ঘটবে এবং রক্তের স্রোত বয়ে যাবে। অবশেষে তাদের নেতা (হযরত মাহদি) পালিয়ে রোকন ও মাকামে ইব্রাহিমের মধ্যখানে চলে আসবে। তাঁর অনীহা সত্ত্বেও মানুষ তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে। তাঁকে বলা হবে, আপনি যদি আমাদের থেকে বাইয়াত নিতে অস্বীকার করেন, তাহলে আমরা আপনার ঘাড় উড়িয়ে দিব। বদর যুদ্ধের সংখ্যার সমসংখ্যক মানুষ তাঁর হাতে বায়আত গ্রহণ করবে। সেদিন যারা তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে, আকাশ ও পৃথিবীর অধিবাসীরা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হবে। (মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৪৯)

তাবরানির অপর এক বর্ণনায় আছে, বাইয়াত গ্রহণকারী মুসলমানের সংখ্যা হবে বদরী মুজাহিদগণের সংখ্যার সমান। অর্থাৎ তিনশ তের জন। (আল মুজামুল আসওসাত, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ১৭৬)

 

 ১৪+৫০=১৪৫০ হিজরি (২০২৮ সাল) এর ব্যাখ্যাঃ
-----------------------------------------------------

সূরা ইবরাহীম এর ৫০ নং আয়াতে বলা আছে, অনুবাদঃ

তাদের পোশাক হবে আলকাতরার আর আগুন তাদের মুখমন্ডল আচ্ছন্ন করবে।

 

ব্যাখ্যাঃ আগের টার সাথে এর তাফসীরও একই রকম। একই লোকদের ব্যাপারে বলা হয়েছে অর্থাৎ অপরাধীরা, শত্রুরা চরমভাবে পরাজিত হবে। তাদেরকে ধ্বংস করা হবে এবং তারা মৃত্যুর পরও ভোগ করবে চরম শাস্তি তারই ভবিষ্যৎবাণী এটি। ২০২৮ সাল বা ১৪৫০ হিজরিতে অনেক ঘটনা ঘটবে যা হাদিস থেকে পাওয়া যায়। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনা ইমাম মাহদীর আত্মপ্রকাশ ও বায়াত নেওয়ার ঘটনা। খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে বিশ্বব্যাপী। মুসলিমদের হারানো মান, গৌরব আবারো ফিরে আসবে। পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসবে। সকল জালিম ও অপরাধীরা লাঞ্ছিত হবে ও ধ্বংস হবে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ