৬.৮ ইমাম মাহমুদ ও সাহেবে কিরানের আত্মপ্রকাশ

 ৪র্থ ও ৫ম অধ্যায় দুটিতে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাদের পরিচয় ও আত্মপ্রকাশের স্থান, সময়কাল ইত্যাদি বিস্তারিত সেখানে দেওয়া হয়েছে। এখানে শুধু ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।

ইমাম মাহদীর আগমনের পূর্বে হিন্দুস্তানে ইমাম মাহমুদ হাবীবুল্লাহ এবং শামীর বারাহ (সাহেবে কিরান) এর আত্মপ্রকাশ ঘটবে। তাদের আত্মপ্রকাশ ঘটবে হিন্দের যুদ্ধের আগে এবং তারা মুসলিমদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে মুশরিকদের সাথে চূড়ান্তভাবে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। মুশরিকরা যখন হিন্দুস্তানের মুসলিমদের প্রতি নির্যাতন বাড়াতে বাড়াতে চরম মাত্রায় পৌঁছুবে এবং তাদের পার্শ্বভূমি বা দেশে জোর-জবরদস্তি করে দখল করার জন্য গণহত্যা চালাবে, তখন তারা এই সকল মুশরিকদের মুকাবিলা করার জন্য এগিয়ে যাবে এবং মুশরিকদের পরাজিত করে বিজয় করবে। তখন ন্যায়নিষ্ঠ মুসলিমরা তাদের নেতৃত্বে জমায়েত হবে।

হযরত আলী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল বলেছেন, অচিরেই হিন্দুস্তানের মুশরিকরা মুসলমিদের প্রতি নির্যাতন বৃদ্ধি করবে। সে সময়ে হিন্দুস্তানের পূর্ব অঞ্চল থেকে একজন নেতার প্রকাশ ঘটবে। যার নাম হবে মাহমুদ। পিতার নাম আব্দুল ক্বদির। সে দেখতে খুবই দুর্বল হবে। তার মাধ্যমে আল্লাহ হিন্দুস্তানের মুসলিমদের বিজয় দান করবেন।
-       (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ, অধ্যায়ঃ গাজওয়াতুল হিন্দ, ২৩০; ক্বাশ্ফুল কুফা ২৬১)

হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা:) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রসূল বলেছেন, শেষ জামানায় ইমাম মাহমুদ ও তার বন্ধু (সাহেবে কিরান) শামীম বারাহর প্রকাশ ঘটবে। আর তাদের মাধ্যমে মুশরিকদের উপর মুসলমানদের বড় বিজয় আসবে। আর তা যেন মাহদীর আগমনের (পূর্বে) সময়।
-       (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮৭২; আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ, অধ্যায়ঃ শেষ জামানায় আত্মপ্রকাশকারী নেতা)

সাহল ইবনু সা'দ (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল বলেছেন, অচিরেই পূর্ব দিকে এক ফিতনার সৃষ্টি হবে (দ্বিতীয় কারবালা)। আর তা হবে মুশরিকদের দ্বারা। তখন মুমিনদের একটি দল তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয় আনবে। আর তাদের সেনাপতি হবে ঐ সময়ের সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি সাহেবে কিরান! আর তাদের পরিচালনা করবে একজন ইমাম। যার নাম হবে মাহমুদ। অবশ্যই তারা মাহদীর আগমন বার্তা নিয়ে আসবে।
-       (তারিখুল বাগদাদ ১২২৯)

বুরায়দা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি, খুব শীঘ্রই মুশরিকরা তাদের বন্ধু অঞ্চলের মুসলমানদের উপর অত্যাচার বৃদ্ধি করে দেবে আর নির্বিচারে হত্যা করবে। তখন সেখানকার দূর্গম নামক অঞ্চল তথা বালাদি লিল উছরো থেকে একজন দুর্বল বালক তাদের মুকাবিলা করবে। আর তার নেতৃত্বেই মুমিনদের বিজয় আসবে (গাজওয়াতুল হিন্দ বিজয়)। রাবি বলেন, তিনি আরো বলেছেন, তার একজন বন্ধু থাকবে যার উপাধী হবে সৌভাগ্যবান।
-       (আস সুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান ১৭৯১; আসারুস সুনান ৮০৩; আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮৮১)

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি অবশ্যই অবশ্যই পৃথিবী ততদিন ধ্বংস হবে না যতদিন না মানুষ পাঁচজন শাসকের দেখা পাবে। যারা আল্লাহর দ্বীনকে যুক্তি করে ধ্বংস করতে চাইবে। আর তারা পাঁচ শাসকই এক সাথে পৃথিবীতে উপস্থিত থাকবে। আমি (আবু হুরায়রা) বললামঃ হে আল্লাহর রসূল ! সে পাঁচজনের পরিচয় কী? তিনি বললেনঃ তাদের একজন এই পবিত্র ভূমিতে আসবে। যার নাম হবে আমার নামের মতো (মুহাম্মাদ)। সে আরবের দ্বীনকে হাস্যকর বানাবে। আর অভিশপ্ত (ইহুদী-খ্রিষ্টান) জাতিকে বন্ধু বানাবে। দ্বিতীয় সে বিশ্ব শাসক হবে। আর মুসলমানদের নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকবে। তৃতীয় জন হিন্দুস্তানের বাদশা, সে বন্ধু অঞ্চলের মুসলমানদের নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করবে। চতুর্থ জন, হিন্দুস্তানের দ্বিতীয় বাদশা। যে মুসলমানদের হত্যার শপথ নিয়ে শাসন ক্ষমতায় যাবে। আর মুসলিম হত্যায় সে উন্মাদ হয়ে পড়বে। পঞ্চম হলো একজন নারী শাসক, সে শাসন ক্ষমতা হাতে পেয়ে বা'আল দেবতার ইবাদত (অর্থাৎ পূর্বপুরুষদের পূজা) বৃদ্ধি করবে। আর মুশরিকদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে। আর মুসলমানদের হত্যা করবে। অথচ সে হবে মুসলমান। তখন দেখবে সেখানকার দুর্গম নামক অঞ্চলের এক দুর্বল বালক তাদের ষড়যন্ত্রের সমাপ্তি ঘটাবে এবং মুমিনদের বড় বিজয় আনবে।
-       (কিতাবুল আক্বিব ১৭২; আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ১৭৫)

এরপর লোকেরা এমন এক ব্যক্তির নেতৃত্বের উপর একমত হবে, যে দুর্বল চিত্ত ও লেংড়া হবে। (তার শাসনকাল দীর্ঘ হবে না।)
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪২৪৩ [ইঃ ফাঃ ৪১৯৫]; মিশকাত হাঃ একাঃ ৫২৯৩; সিলসিলাতুস সহীহাহ ৯৭২; মুসনাদে আহমাদ ৬১৬৮)

হযরত কাতাদাহ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূল বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে মুশরিকদের সাথে মুমিনদের একটি জিহাদ হবে, আর সেই যুদ্ধের শহীদরা কতইনা উত্তম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল ! সেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিবেন কে? তিনি বললেন, উমর (রা:) এর বংশের এক দুর্বল বালক।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৮৭)

আবু বাসির (রঃ) বলেন, জাফর সাদিক (রঃ) বলেছেন, মাহদীর আগমনের পূর্বে এমন একজন খলীফার আবির্ভাব ঘটবে যিনি হবেন মাতার দিক থেকে কাহতানী এবং পিতার দিক থেকে কুরাঈশী। তার নাম মাহদীর নামের সাথে কিছুটা সাদৃশ্যমান হবে এবং তার পিতার নামও কিছুটা মাহদীর পিতার নামের সাদৃশ্যমান হবে। *
-       (ইলমে তাছাউফ ১২৮ পৃঃ; তারিখে দিমাশাক ২৩২ পৃঃ)
-       * ইমাম মাহদীর আসল নাম হবে মুহাম্মাদ। আর মুহাম্মাদ এর সাথে মাহমুদ নামটি সাদৃশ্যপূর্ণ। তার পিতার নাম আব্দুল্লাহ এর সাথে আব্দুল কাদীর নামটি সাদৃশ্যপূর্ণ। অর্থাৎ ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ এবং ইমাম মাহমুদ ইবনে আব্দুল কাদীর।


৬.৮.১ ইমাম মাহমুদ এই শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হবেন

আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার জানামতে রসূলুল্লাহ্‌ বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ্‌ এ উম্মতের জন্য প্রতি শতাব্দীতে এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন, যিনি দ্বীনের তাজ্‌দীদ বা সংস্কার সাধন করবেন।
-       (সহীহ, সূনান আবূ দাউদ (ইঃ ফাঃ) ৪২৪১ [আলবানী একাঃ ৪২৯১]; হাকেম ৮৫৯২; মিশকাতুল মাসাবিহ ২৪৭; আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৭০, ইবনে দাইলামী)

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, রসূল বলেছেন, শেষ জামানায় পথভ্রষ্ট আলেম বৃদ্ধি পাবে। আর তাঁরা দ্বীনকে মৃত্যুর অবস্থায় নিয়ে যাবে। ঠিক তখন আল্লাহ তা'আলা হযরত উমর (রা:) এর বংশ থেকে একজন বালককে পাঠাবেন। যার মাধ্যমে দ্বীন জীবিত (সংস্কারসাধন) হবে।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮০৬)

 

এ বিষয়ে আরো আলোচনা দেখুন- ৩.৬ হাদিস অনুযায়ী শতবর্ষী মুজাদ্দিদ কবে আসবেন তাহলে?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ