৩.১৪ ইমাম মাহদী এর পরে যারা খলীফা হবেন

 আমরা জানি ইমাম মাহদী খিলাফত প্রতিষ্ঠা করে সাত থেকে নয় বছর খলীফা থাকবেন এবং পুরো বিশ্ব শাসন করবেন। হাদিস থেকে পাওয়া যায়, তার পরে ঈসা (আঃ) এর আগমন পর্যন্ত আরো ৩ জন খলীফা পর্যায়ক্রমে দায়িত্বে থাকবেন। তাদের নাম যথাক্রমে ইমাম মাহমুদ, ইমাম মানসূর এবং ইমাম জাহজাহ। ইমাম মাহদী এর মৃত্যুর পর ইমাম মাহমুদ দুই (০২) বছরের জন্য খলীফা থাকবেন। তারও স্বাভাবিক মৃত্যুর হবে আর তার মৃত্যুর পরই আবারো বিভিন্ন রকম ফিতনা দেখা দিবে। এবং তারপর ইমাম মানসূর খলীফা হবেন এবং বিশ (২০) বছর শাসন করবেন। তার জামানায় ফিতনা-যুদ্ধ বিগ্রহ বিকট আকার ধারণ করবে। তিনি অস্ত্রের দ্বারা নিহত হবেন অর্থাৎ শহীদ হবেন। তার মৃত্যুর পর ইমাম জাহজাহ খলীফা বা শাসক হবেন এবং ঈসা (আঃ) এর আবির্ভাব ও খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যাবেন। তার জামানায় আবার বিজয় শুরু হবে এবং আবারো হিন্দুস্তানের যুদ্ধ হবে ও বিজয় হবে এবং তার পিছনেই ঈসা (আঃ) ছলাত আদায় করবেন। আর সেই খলীফা ঈসা (আঃ) কে খিলাফতের দায়িত্ব অর্পণ করবেন। ঈসা (আঃ) এর মৃত্যুর মাধ্যমে খিলাফতের তথা মুসলিমদের শাসনের এই ধারা শেষ হবে। হাদিসে এসেছে-

 

ইমাম মাহমুদ এর খিলাফতঃ

ইয়াহ্‌ইয়া ইব্‌ন উছমান (রহঃ) .... আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন উমার (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদিন আমরা রসূলুল্লাহ্‌ এর কাছে বসে ছিলাম। এ সময় তিনি ফিত্‌না সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করেন; এমন কি তিনি ইহ্‌লাসের ফিত্‌নার কথাও উল্লেখ করেন। এ সময় জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! ইহ্‌লাসের ফিত্‌নাটা কিরূপ? তিনি বলেনঃ তা হলো-পলায়ন ও ধ্বংস। এরপর তিনি সাররা ফিত্‌নার কথা উল্লেখ করে বলেনঃ তা এমন এক ব্যক্তির দ্বারা সংঘটিত হবে, যাকে লোকেরা আমার বংশের লোক বলে মনে করবে, কিন্তু আসলে সে আমার বংশের লোক হবে না। কেননা, আমার বন্ধু-বান্ধব তো মুত্তাকী লোকেরাই। এরপর লোকেরা এমন এক ব্যক্তির নেতৃত্বের উপর একমত হবে, যে দুর্বল চিত্ত ও লেংড়া হবে। (তার শাসনকাল দীর্ঘ হবে না) ...(প্রয়োজনীয় অংশ)
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪২৪৩ [ইঃ ফাঃ ৪১৯৫]; মিশকাত হাঃ একাঃ ৫২৯৩; সিলসিলাতুস সহীহাহ ৯৭২; মুসনাদে আহমাদ ৬১৬৮)

হযরত আরতাত (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইমাম মাহদীর শাসনের পর দুই বছর মাহমুদ শাসন করবে। যে হবে খুব কঠোর, আর দুর্বলদের জন্য কোমল অন্তরের।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস, অধ্যায়ঃ যুদ্ধ-বিগ্রহ, হাঃ ৭৭১)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, রসূলে পাক বলেছেন, আমার জামানায় আমি মুনাফিকদের ঘৃণা করি কিন্তু হত্যা করি না। আর আমার জামানায় শেষের দিকে আমার বংশের ইমাম মাহদীর পর একজন ইমাম দুবছরের খেলাফত পাবে, যার খেলাফতের সময় মুনাফিকদের প্রকাশ্যে হত্যা করা হবে।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১২১০)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাহদীর (ইমাম মুহাম্মাদ বা আল মাহদী) ইন্তেকালের পর এমন একলোক (ইমাম মাহমুদ) শাসনভার গ্রহণ করবেন যিনি ইয়ামানবাসীদেরকে তাদের এলাকা থেকে বিতাড়িত করবেন। অতঃপর খলীফা মানসূর ক্ষমতার মালিক হবে, এরপর মাহদী নামক আরেকজন (ইমাম জাহজাহ) শাসনভার গ্রহণ করবেন, যার হাতে রোমানদের শহর বিজয় হবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১১৮৬ (আন্তঃ ১১৬৬); [পথিক প্রকা: ১১৮৩; তাহকীক: যঈফ])

ইমাম মানসূর এর খিলাফতঃ

হযরত আরতাত (রা:) বলেন, রসূল বলেছেন, ইমাম মাহদীর মৃত্যুর পর কাহতান গোত্রের মানসূর নামক লাঠি ওয়ালা ব্যক্তি বিশ বছর শাসন না করা ব্যতীত কেয়ামত সংঘটিত হবে না।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮১৪)

আবু হুরাইরাহ্ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত কাহতান গোত্র হতে এমন এক ব্যক্তির আগমন না হবে যে মানুষ জাতিকে তার লাঠির সাহায্যে পরিচালিত করবে।
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী, পর্ব ৬১, অধ্যায় ৭, হাঃ ৩৫১৭; সহীহুল মুসলিম, পর্ব ৫২, অধ্যায় ১৮, হাঃ ২৯১০ [হাঃ একাঃ ৭২০০-(৬০/২৯১০); ইঃ ফাঃ ৭০৪৪; ইঃ সেঃ ৭১০০]; আল-লুলু ওয়াল মারজান ১৮৪৪; মুসনাদে আহমাদ ৯৩৯৫; মুসনাদে বাযযার ৮১৬১; সহীহুল জামি' ৭৪২৫)

হযরত আরতাত (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, মাহদীর মৃত্যুবরণ করার পর কাহতান গোত্রের উভয় কান ছিদ্রবিশিষ্ট একজন লোক (মানসূর) শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করবে। তার চরিত্র হবে হুবহু মাহদীর মত। তিনি দীর্ঘ ২০ বৎসর পর্যন্ত শাসক হিসেবে থাকার পর, তাকে অস্ত্রের দ্বারা হত্যা করা হবে। এরপর রসূলুল্লাহ এর বংশধর থেকে জনৈক লোকের (জাহজাহ) আত্মপ্রকাশ হবে। যিনি উত্তম চরিত্রের অধিকারী হবেন। তার হাতে কায়সার সম্রাটের শহর (ইউরোপ) বিজয় হবে। তিনিই হবেন, রসূলুল্লাহ এর উম্মতের মধ্যে সর্বশেষ খলীফা বা বাদশাহ। তার যুগে দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং সায়্যিদুনা হযরত ঈসা (আঃ) আসমান থেকে অবতরণ করবেন।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২৩৪ [পথিক প্রকা: ১২৩০, তাহকীক: সহীহ])

ইমাম জাহজাহ এর খিলাফতঃ

মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার আল আবদী (রহঃ) ..... আবু হুরাইরাহ (রা:) এর সূত্রে নাবী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাত দিন শেষ হবে না (কেয়ামত হবে না), যতক্ষণ পর্যন্ত না জাহজাহ নামে জনৈক আযাদকৃত দাস শাসনকর্তা হবে।
-       (সহীহ, সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী) ৭২০১ [ইসঃ ফাঃ ৭০৪৫; ইসঃ সেঃ ৭১০১])
-       (সহীহ, সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২২৮ [ইঃ ফাঃ ২২৩১]; সহিহাহ ২৪৪১; আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৭২)

হযরত কা'ব (রা:) বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি, অচিরেই মুসলমানরা এক দুর্বল বালকের নেতৃত্বে হিন্দুস্তান দখল করবে। আর এ যুদ্ধের ব্যপারেই তোমাদের প্রতিশ্রুতি নেয়া হয়েছে। আর আল্লাহও এই যুদ্ধে বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর সেখান থেকেই আল্লাহ মুশরিকদের পতন করে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। একথা বলে তিনি সূরা ইবরাহীম এর ৪৭ নং আয়াত পাঠ করলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলঃ হে আল্লাহর রসূল ! তাহলে মানুষ দাজ্জালকে দেখবে কখন? তিনি বললেন, যখন জাহজাহ পৃথিবী শাসন করবে তখন হিন্দুস্তান আবারও ইহুদীদের দখলে যাবে। আর তখন বায়তুল মুকাদ্দিস মুসলমানরা শাসন করবে। আর সেখান থেকে জাহজাহ কালোপতাকা নিয়ে এক দল সৈন্য হিন্দুস্তানে পাঠাবেন এবং হিন্দুস্তান দখল করবে। তারা সেখানে ঈসা ইবনে মারিয়াম (আ.) এর আগমন পর্যন্ত অবস্থান করবে। আর আল্লাহর নবী ঈসা (আ.) ৩৩ বছর পৃথিবী শাসন করবে।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৫০৭; কিতাবুল আক্বিব ১০০; আখীরুজ্জামানা আলমাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ২৩৫)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাহদীর (ইমাম মুহাম্মাদ বা আল মাহদী) ইন্তেকালের পর এমন একলোক (ইমাম মাহমুদ) শাসনভার গ্রহণ করবেন যিনি ইয়ামানবাসীদেরকে তাদের এলাকা থেকে বিতাড়িত করবেন। অতঃপর খলীফা মানসূর ক্ষমতার মালিক হবে, এরপর মাহদী নামক আরেকজন (ইমাম জাহজাহ) শাসনভার গ্রহণ করবেন, যার হাতে রোমানদের শহর বিজয় হবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১১৮৬ [পথিক প্রকা: ১১৮৩; তাহকীক: যঈফ])

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ (রা:) থেকে বর্ণিত, একদা তার নিকট বারোজন খলীফা এবং আমীরের আলোচনা করা হলে তিনি এরশাদ করেন, আল্লাহর কসম! উক্ত রক্তপাতের পর (দুই কান ছিদ্রবিশিষ্ট কাহতানী ইমাম মানসূরকে অস্ত্র দ্বারা হত্যা) মাহদী (ইমাম জাহজাহ) সিংহাসনে বসবে। এক পর্যায়ে তারা হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) এর সাথে মিলিত হবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২৮২ [পথিক প্রকা: ১২৮০; তাহকীক: সহীহ])

ঈসা (আঃ) এর আবির্ভাব ও তার খিলাফতঃ

......আর সেখান থেকে (শাসক বা খলীফা) জাহজাহ কালো পতাকা নিয়ে এক দল সৈন্য হিন্দুস্তানে পাঠাবেন এবং হিন্দুস্তান দখল করবে। তারা সেখানে ইসা ইবনে মরিয়ম (আ.) এর আগমন পর্যন্ত অবস্থান করবে। আর আল্লাহর নবী ইসা (আ.) ৩৩ বছর পৃথিবী শাসন করবে। (প্রয়োজনীয় অংশ)
-       (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৫০৭; কিতাবুল আক্বিব ১০০; আখীরুজ্জামানা আলমাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ২৩৫)

হযরত আবু মুসা আসআরী (রা:) আমি রসূল কে বলতে শুনেছি, যখন তিনি পৃথিবী ধ্বংসের আলামত গুলো বলছিলেন। তিনি বললেন, মরিয়াম পুত্র ঈসা (আঃ) ৩৩ বছর পৃথিবী শাসন করবেন। (প্রয়োজনীয় অংশ)
-       (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ২৯১)

বিঃ দ্রঃ ইমাম জাহজাহকে বিভিন্ন হাদিসে মাহদী নামে পরিচিত করা হয়েছে। তাই শুধু নাম মাহদী আর খলীফা ইমাম মাহদী একই ব্যক্তি নন। এ ব্যাপারে আগেই আলোচনা শেষ হয়েছে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ