৬.৯ আল্লাহর আযাব, হিন্দে দ্বিতীয় কারবালা!

 এই বিষয়ে ৪.৯ দ্বিতীয় কারবালা; ভারতের বাংলাদেশ দখল ও গণহত্যা এবং ৩.১১ গাজওয়াতুল হিন্দ খুবই নিকটে পরিচ্ছেদটি আশা করি পড়েছেন। তার সাথে এখানে আরো কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো।

দেখছে পাচ্ছি, মুশরিক কর্তৃক মুসলিমদের উপর হিন্দুস্তানে যে জুলুম নির্যাতন হচ্ছে তা দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধি পাবে এবং চূড়ান্ত রূপ ধারণ করবে। এমন অবস্থা হবে যা মুশরিকদের সাথে মুসলিমদের যুদ্ধের ময়দানে অবতরণ করাবে। আজ ভারতের মুশরিকরা বিশাল পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। তাঁরা প্রকাশ্যেই বলছে মুসলিমবিহীন অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার কথা। আরো বলে, পাকিস্তানের সাথে আমাদের যুদ্ধ করা লাগলে লাগতেও পারে, কিন্তু বাংলাদেশের সাথে আমাদের যুদ্ধ করা দরকার হবে না, কারণ সেখানে আমাদের আগে থেকেই লোক সেট করা আছে। -এটি ছিল এক বিজেপি নেতার বক্তব্য। সব হাদিস ও সেগুলোর বিশ্লেষণ দেখলে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশেই সেই গণহত্যার ঘটনাটি ঘটবে। কাশ্মীর যখন ভারতীয় মুশরিকদের হাত ছাড়া হবে, তখন তারা এই দেশের উপর দখলদারি প্রতিষ্ঠার জন্য আগাবে আর তাতেই সেখানে শুরু হবে সেই দ্বিতীয় কারবালা অর্থাৎ গণহত্যা। হিন্দুস্তানে মুশরিকদের কর্ম নিয়ে হাদিসে এসেছে-

বুরায়দা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি, খুব শীঘ্রই মুশরিকরা তাদের বন্ধু অঞ্চলের মুসলমানদের উপর অত্যাচার বৃদ্ধি করে দেবে আর নির্বিচারে হত্যা করবে। (প্রয়োজনীয় অংশ)
-       (আস সুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান ১৭৯১; আসারুস সুনান ৮০৩; আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮৮১)

হযরত হুযাইফা (রা:) বলেন, আমি আল্লাহর রসূল কে বলতে শুনেছি, মানুষের জীবনে এমন একটি সময় আসবে, যখন তারা বছরে দু এক বার বিপর্যস্ত হবে! যার একটি শুরু হবে বায়ু দ্বারা যা মুশরিকদের দূর্গ ক্ষতিগ্রস্তের মাধ্যমে! আর শেষ হবে দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে। আর এই দুর্ভিক্ষ শেষ হতেই মুশরিকরা একটি ফিতনা সৃষ্টি করবে! যার মুকাবিলা করার জন্য হিন্দুস্তানের পূর্ব অঞ্চল থেকে একদল মুসলিম ধাবিত হবে। কিন্তু মুশরিকরা তাদের এমন ভাবে হত্যা করবে যেমন ভাবে তোমরা এক নির্দিষ্ট দিনে (কুরবানীর দিন) পশুগুলোর উপর আল্লাহর নাম স্মরণ করো! ফলে তারা পরাজিত হবে। অনুরূপ আরেকটি মুসলিম দল মুশরিকদের দিকে ধাবিত হবে (মুকাবিলা করতে)। তাদের সাথে আল্লাহর সাহায্য থাকবে। তারাই বিজয়ী। * (প্রয়োজনীয় অংশ)
-       (আখীরুজ্জামানা আল মাহাদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ১১৯)
-       * যার শুরু হওয়ার কথা ছিল মুশরিকদের দুর্গ বায়ু দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনাটি সম্প্রতি ঘটে গেছে। যা পরের ভবিষ্যৎবাণীগুলোকেও সত্য হিসেবে প্রমাণ করে।

৬.৯.১ কেন এই আযাব আসবে?

আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন-

এমন কোন জনপদ বা জাতি বা উম্মাত নেই, যাকে আমি কিয়ামত দিবসের পূর্বে ধ্বংস করব না অথবা যাকে কঠোর শাস্তি দেব না। এটা তো গ্রন্থে লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে।
-       সূরা বানী-ইসরাঈল (الإسرا), আয়াত: ৫৮

হিন্দের মুশরিকদের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে আমাদের কৃতকর্মের সাজা দিবেন, যেমন সাজা দেওয়ার কথা রসূল এর হাদিস থেকে জানতে পারি যে, আমাদের উপর বিজাতীয় শত্রু চাপিয়ে দিবেন, তাদেরকে প্রবল করে দিবেন, জালিম শাসক চাপিয়ে দিবেন, লাঞ্ছিত-অপদস্ত করবেন, আমাদের সাথে তারা যুদ্ধ করে গণহত্যা চালাবে ইত্যাদি। কারণ? আমরা ইসলাম থেকে অনেক দূরে চলে গেছি এবং ইসলামের বদলে অন্যকিছু গ্রহণ করে আছি। বর্তমানে অনেক অবুঝ মুসলমানই এরকম বলে ফেলে যে, দেশ যেই চালাক চললেই হলো। ইসলামী দেশ তৈরির পরিকল্পনা বা খিলাফত প্রতিষ্ঠার কথা বলে দেশে অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা করার কি দরকার। এখন তো দেশ ভালোই চলছে। অর্থাৎ, হিন্দের বেশির ভাগ মুসলিমই এখন এটা মনে করে যে, যেভাবে চলছে সেভাবেই চলুক, আমরা একটু শান্তিতে থাকতে পারলেই হয়। ইসলামী আইন ছাড়া মানুষের বানানো আইন ও তন্ত্র-মন্ত্র দিয়ে দেশ চলছে, বিচার কাজ চলছে আর দেখা যাচ্ছে নাদান মুসলমানেরা এর উপর সন্তুষ্ট আছে। যেই আইন দিয়ে মাদক, যিনা-ব্যভীচার, সুদ-ঘুষ হালাল বানানো হয়েছে তার উপর সন্তুষ্ট আছে। বিধর্মী মুশরিকদের বন্ধু বানিয়েছে, তাদের রীতি-নীতি অনুসরণ করছে আর এর উপর তারা সন্তুষ্ট আছে। ইসলামের ফরজ বিধানসমূহ তরক করছে আর এর উপর তারা সন্তুষ্ট আছে। যারা দ্বীন প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে, কাজ করেছে তাদের জঙ্গী বলে গ্রেফতার করেছে, নাদান নামে-মুসলমানরা উল্টো তাদের জালিম বাহিনীর কাছে ধরিয়ে দিতে সাহায্য করেছে। এরকম দীর্ঘকাল ধরে তারা জীবন-যাপন করে আসছে। চাকচিক্য আর প্রাচুর্যের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছে। অতএব, তারা যে সকল কাজ করেছে এর জন্য তাদের দুনিয়া ও আখিরাতে কি কোনই শাস্তি কাম্য নয়? আমরা না চাইলেও আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতেই তাদের এহেন কাজের দরুন শাস্তি দিবেন, আর আখিরাতের কথা নাই বা বললাম। কেন এমন হবে তা কিছু পয়েন্টে আলোচনা করা হলো-

১। শিরকী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়াঃ হিন্দের মুসলিমরা বর্তমানে মুশরিকদেরকে তাদের অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে। স্লোগান বের করেছে ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। তাদের সাথে বিভিন্ন পূজায়ও অংশ নিচ্ছে। দেশের মুসলিম শাসকরা স্লোগান দিচ্ছে দুর্গার আগমনে দেশে শান্তি ফিরে আসবে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে মুসলিমরা মুশরিকদের সাথে মিলে শিরকে, পূজায় লিপ্ত হয়েছে। হাদিসে এসেছে-

কুতায়বা (রহঃ) ...... ছাওবান (রা:) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ আমার উম্মতের কিছু গোত্র মুশরিকদের সাথে শামিল না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না। এমনকি এরা মূর্তিপূজা পর্যন্তও করবে। (প্রয়োজনীয় অংশ)
-       (সহীহ, সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২১৯ [ইঃ ফাঃ ২২২২]; মিশকাত ৫৪০৬; সহিহাহ ১৬৮৩)

আর এটা সবারই জানা যে, আল্লাহর কাছে শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় অপরাধ।

২। ব্যাপক আকারে পাপাচারের সয়লাব হওয়াঃ হিন্দের মুসলিমরা বর্তমানে মারাত্মক আকারে পাপাচারে লিপ্ত। যেন পশ্চিমা ইহুদী-খ্রিষ্টানদের হুবহু রীতিনীতি শহরে শহরে পালিত হচ্ছে। বেশির ভাগ লোকই বিভিন্ন পাপাচারে-কবীরা গুনাহে লিপ্ত। যিনা-ব্যভিচার, মাদক, গান-বাজনা, নর্তকী দিয়ে সর্বত্র সয়লাব। আর এদের কারণে সকলের উপরই আযাব গ্রাস করবে। হাদিসে এসেছে-

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেন, "যখন কোন জাতির উপর মহান আল্লাহ আযাব অবতীর্ণ করেন, তখন তাদের মধ্যে বিদ্যমান সমস্ত লোককে তা গ্রাস করে ফেলে। তারপর [বিচারের দিনে] তাদেরকে সব কৃতকর্মের ভিত্তিতে পুনরুত্থিত করা হবে।"
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী ৭১০৮; সহীহুল মুসলিম ২৮৭৯; মুসনাদে আহমাদ ৪৯৬৫, ৫৮৫৬, ৬১৭২; রিয়াযুস স্বা-লিহীন তাঃ পাঃ ২৩/১৮৩৯ [আন্তঃ ১৮৩০])

ওয়াহাব ইব্‌ন বাকীয়্যা (রহঃ) .... আবূ বকর (রা:) থেকে বর্ণিত। একদা তিনি আল্লাহ্‌ ও রসূলের প্রশংসার পর বলেনঃ হে লোক সকল! তোমরা এ আয়াত তিলাওয়াত কর, কিন্তু তোমরা একে অন্যস্থানে প্রয়োগ কর। তোমাদের চিন্তা করা উচিত যে, তোমাদের মাঝে যারা গুমরাহ হবে, তারা তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তবে শর্ত হলো-যদি তোমরা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক। আল্লাহর বাণীঃ তোমরা যদি সৎ পথে পরিচালিত হও তবে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না (সূরা আল-মায়িদাহঃ ১০৫)।

রাবী খালিদ (রা:) বলেনঃ আমি নবী -কে বলতে শুনেছি যে, যখন লোকেরা জালিমের হাত ধরে তাকে জুলুম করা থেকে বিরত না রাখবে, তখন মহান আল্লাহ্‌ তাদের উপর ব্যাপকভাবে আযাব নাযিল করবেন।

রাবী আমর ইবন হুশাযম (রা:) থেকে বর্ণিত, আমি রসূলুল্লাহ্‌ -কে বলতে শুনেছিঃ যে কাওম এরূপ হবে যে, তারা যখন গুনাহে লিপ্ত হবে, তখন তা প্রতিরোধ করার মত কিছু লোক থাকা সত্ত্বেও যদি তারা প্রতিকার না করে তখন আল্লাহ্‌ তাআলা সকলকে আযাবে গ্রেফতার করবেন।

রাবী শুবা (রহঃ) বলেনঃ যে সম্প্রদায়ের অধিকাংশ লোক গুনাহে লিপ্ত হবে, আল্লাহ্‌ তাদের সকলকে আযাবে নিপতিত করবেন।
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (আলবানী একাঃ) ৪৩৩৮ [ইঃ ফাঃ ৪২৮৭]; তিরমিযী; ইবনু মাজাহ; মুসনাদে আহমাদ)

সুলায়মান ইব্‌ন হার্‌ব (রহঃ) .... আবুল বাখ্‌তারী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার কাছে ঐ ব্যক্তি বর্ণনা করেছেন, যিনি নবী থেকে শুনেছেন।

রাবী সুলায়মান (রহঃ) বলেনঃ আমার নিকট নবী এর জনৈক সাহাবী বর্ণনা করেছেন যে, মানুষেরা ততক্ষণ পর্যন্ত ধ্বংস হবে না, যতক্ষণ না তাদের গুনাহ্‌ এত অধিক হবে যে, যার জন্য ওযর পেশের কোন সুযোগ থাকবে না।
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (আলবানী একাঃ) ৪৩৪৭ [ইঃ ফাঃ ৪২৯৬]; মুসনাদে আহমাদ)

যয়নব বিনতে জাহাশ (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূল কে বললাম, হে আল্লাহর রসূল ! আমাদের মধ্যে সৎকর্মকারীগণ থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো? উত্তরে রসূল বললেন, হ্যাঁ। যখন মন্দ (পাপকাজ) অধিকমাত্রায় হবে।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৭৩৪; সহীহুল বুখারী ৬৬৫০)

উমর ইবনু আব্দুল আযিয রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিশেষ কারো কর্মের কারণে আল্লাহ তায়ালা সকলকে পাকড়াও করবেন না৷ অতঃপর যখন অপরাধ প্রকাশ পাবে। আর তা নিষেধ করা হবে না। তখন বিশেষ ব্যক্তিবর্গ ও সাধারণ সকলকেই পাকড়াও করবেন।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৭৩৫)

৩। আল্লাহর নির্ধারিত আইন বাদ দিয়ে বিচারকার্য করাঃ আল্লাহর দেওয়া বিধান-আইন বাদ দিয়ে হিন্দের মুসলিমরা এখন মানব রচিত আইন দিয়ে রাষ্ট্র থেকে শুরু করে সমাজ, পরিবার, ব্যক্তি জীবন ও বিচারকাজ পরিচালনা করছে। এ ব্যাপারে হাদিসে এসেছে-

তোমাদের উপর শাসকগণ নিযুক্ত হবে। তোমরা তাদের কাছে গমন করবে আর তারা আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য কিছু দ্বারা ফয়সালা করবে। অতঃপর, তাদের সকলের উপর লানত।
-       গণতন্ত্র অধ্যায়, ইসলামী জীবনব্যবস্থা, মুফতি তারেকুজ্জামান; আল ফিরদাউস (বিমা সূরিল খত্তব), ইমাম আবু শুজা আদ-দায়লামী)

একই, গণতন্ত্র অধ্যায়ে আরো বলা হয়েছে- তোমাদের উপর কিছু লোক বিচারকার্য পরিচালনা করবে। তোমরা যদি তাদের মানো তাহলে তারা তোমাকে পথভ্রষ্ট করে দিবে, আর যদি না মানো তাহলে তারা তোমাকে হত্যা করে ফেলবে। (আর হত্যা হয়ে যাওয়াই উত্তম। সাথে এসেছে, জালিমের সামনে হক কথা বলা সর্বোত্তম জিহাদ, আর এর কারণে নিহত হলে সে মর্যাদাবান শহীদ হবে।)

 

 

৪। আল্লাহর ফরজ বিধান সম্পর্কে গাফেল হওয়াঃ বর্তমানে দেখা যাচ্ছে হিন্দের মুসলিমরা ইসলামের মূল বিষয়সমূহ, ফরজ বিধান সম্পর্কেই একদম গাফেল। তারা ইসলাম ছেড়ে পশ্চিমাদের রীতিনীতি ও কালচার গ্রহণ করেছে। আর এর কারণে আল্লাহ দুনিয়াতেই তাদের বিভিন্ন আযাবে পাকড়াও করবেন যার ব্যাপারে বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

৫। জিহাদকে ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও দুনিয়া প্রীতি হওয়াঃ বর্তমান সময়ে যেখানে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা হয়, জিহাদের কথা হয় তাকেই মুসলিমরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও জঙ্গী আখ্যা দিয়ে গুম, খুন, গ্রেফতার করছে। আর এটি করছে খোদ মুসলিমরাই। আজকে যত প্রশাসনিক বাহিনী রয়েছে যারা নিজেদের মুসলিম দাবি করে, তারা পশ্চিমা খ্রিষ্টান দেশগুলো থেকে ট্রেনিং নিয়ে দেশে এসে তাদেরই মুসলিম ভাইদেরকে আটক, গুম, খুন করছে। আর শুধু এই কারণে করেছে যে, তারা ইসলামী আইন চায়, ইসলামী শাসন চায়। অ্যামেরিকা-ইংল্যান্ড এর মতো পশ্চিমা দেশের খ্রিষ্টানরাও তাদের এমন লোভ দিয়ে রেখেছে যে, তারা যদি বলে নিজেদের মুসলিম ভাইদেরকেই মারো তাহলে তারা তাই করে যাচ্ছে। আর এর জন্য খ্রিষ্টানদের থেকে টাকা পাচ্ছে আর প্রশাসনের লোকেরা আয়েশি জীবন পার করছে আর গণতান্ত্রিক সরকারও সুবিধা ভোগ করছে। প্রশাসনের এই সকল নামধারী মুসলিমরা তারা নিজেরা যে জিহাদকে ছেড়ে দিয়ে, ইসলামকে প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ না করে উল্টো সেই লোকদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে যারা ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, ইসলামী শাসন-আইন চায়। তাদের উপর অগাধ পরিমাণে, নির্বিচারভাবে জুলুম-নির্যাতন করেছে, গুম-খুন-গ্রেফতার করেছে। সেই সকল লোকদের পরিবারকে দুঃখ-কষ্ট দিয়েছে, পরিবারকে হয়রানী করেছে, তাদের আর্থিক-সামাজিক ক্ষতি করেছে। এগুলোর জন্য কি তাদের কিঞ্চিৎ শাস্তিও প্রাপ্য না? অবশ্যই তাদের জন্য সেই নির্ধারিত শাস্তি আসবে। আল্লাহ কখনো হকের পথে থাকা মুসলিমদের নিরাশ করবেন না।

অতএব যারা জিহাদ ছেড়ে দিয়ে, তাকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আখ্যা দিয়ে নিজেরা দুনিয়া নিয়ে, ব্যবসা-বাণিজ্য-কৃষিকাজ নিয়ে পড়ে রয়েছেন তাদের জন্য একটি কথাই যথেষ্ট, আর অল্পদিনই বাকি আছে যা আরাম-আয়েশ করার করে যান।

 

৬.৯.২ হিন্দের মুসলিমরা বা’আল দেবতার পূজা করবে

একটি হাদিসে এসেছে মুসলিমরা বাআল দেবতার পূজা শুরু করবে। এই বাআল দেবতা কি এবং এর পূজাই বা কিভাবে করছে সেটি নিয়েই আলোচনা করা হবে।

হজরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, রাসূলে পাক () বলেছেন, কিয়ামত ততক্ষণ হবে না, যতক্ষণ না ইলিয়াস (আঃ) নবীর সময়ের মতো মানুষ বাআল দেবতার পূজা করে।
-       (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস: ইবনে দায়লামী ৮০৮)

হযরত আবু হুরায়রা ؓ  বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি, অবশ্যই অবশ্যই পৃথিবী ততদিন ধ্বংস হবে না যতদিন না মানুষ পাঁচজন শাসকের দেখা পাবে। যারা আল্লাহর দ্বীনকে যুক্তি করে ধ্বংস করতে চাইবে। আর তারা পাঁচ শাসকই এক সাথে পৃথিবীতে উপস্থিত থাকবে। আমি (আবু হুরায়রা) বললামঃ হে আল্লাহর রসূল ! সে পাঁচজনের পরিচয় কী? তিনি বললেনঃ তাদের একজন এই পবিত্র ভূমিতে আসবে। যার নাম হবে আমার নামের মতো (মুহাম্মাদ)। সে আরবের দ্বীনকে হাস্যকর বানাবে। আর অভিশপ্ত (ইহুদী-খ্রিষ্টান) জাতিকে বন্ধু বানাবে। দ্বিতীয় সে বিশ্ব শাসক হবে। আর মুসলমানদের নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকবে। তৃতীয় জন হিন্দুস্তানের বাদশা, সে বন্ধু অঞ্চলের মুসলমানদের নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করবে। চতুর্থ জন, হিন্দুস্তানের দ্বিতীয় বাদশা। যে মুসলমানদের হত্যার শপথ নিয়ে শাসন ক্ষমতায় যাবে। আর মুসলিম হত্যায় সে উন্মাদ হয়ে পড়বে। পঞ্চম হলো একজন নারী শাসক, সে শাসন ক্ষমতা হাতে পেয়ে বা'আল দেবতার ইবাদত (অর্থাৎ পূর্বপুরুষদের পূজা) বৃদ্ধি করবে। আর মুশরিকদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে। আর মুসলমানদের হত্যা করবে। অথচ সে হবে মুসলমান। তখন দেখবে সেখানকার দুর্গম নামক অঞ্চলের এক দুর্বল বালক তাদের ষড়যন্ত্রের সমাপ্তি ঘটাবে এবং মুমিনদের বড় বিজয় আনবে।
-       (কিতাবুল আক্বিব ১৭২; আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ১৭৫)

হযরত আবু হুরাইরা (রা:) বলেন, রসূল () বলেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না পাঁচটি নেতার আত্মপ্রকাশ ঘটবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল (), তাদের চিনার উপায় কী? তিনি () বললেন, তাদের একজন তোমাদের এ ভূমিতেই জন্ম নিবে। যার নাম আমার নামের অনুরূপ। সে ক্ষমতায় থেকে ইসলামকে গলা চেপে হত্যা করবে। আর তাদের একজন হবে অভিশপ্ত জাতির সন্তান। সে বিশ্ব শাসন করবে। আর তাদের তিনজন হবে হিন্দুস্তানের নেতা। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল () তারা তিনজন কি মুশরিক হবে? তিনি () বললেন, না, বরং তাদের একজন হবে নামে মুসলিম নারী শাসক। সে ক্ষমতায় এসে বাআল মূর্তির পূজা বৃদ্ধি করবে। আর তাদের একজন ক্ষমতায় থেকে ইসলাম ধ্বংসের সূচনা করবে। আর একজন ইসলাম ধ্বংসের প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষমতায় আসবে।
-       (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ; কিতাবুল আকিব)

হযরত আবু হুরাইরা (রা:) বলেন, রসূল () বলেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না পাঁচ নেতার আত্মপ্রকাশ ঘটবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল (), তাদের চেনার উপায় কী? তিনি বললেন, তাদের একজন তোমাদের এ ভূমিতে জন্ম নিবে। যার নাম আমার নামের অনুরূপ। সে ক্ষমতায় থেকে ইসলামকে গলা চেপে হত্যা করবে তথা ইসলাম ধ্বংসের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করবে। আর একজন অভিশপ্ত জাতির সন্তান। সে বিশ্ব শাসন করবে। আর তিনজন হবে হিন্দুস্তানের নেতা। যাদের একজন ক্ষমতায় থেকে ইসলাম ধ্বংসের সূচনা করবে। আর একজন ইসলাম ধ্বংসের প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষমতায় আসবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল () তারা তিনজন কী মুশরিক হবে? তিনি () বললেন, বরং তাদের একজন হবে নামে মুসলিম নারী শাসক। সে ক্ষমতায় এসে তার পূর্ব পুরুষের মূর্তি পূজা বৃদ্ধি করবে। অবশ্যই সেখানকার দূর্গম নামক অঞ্চল থেকে একজন দুর্বল বালকের প্রকাশ হবে। যার নেতৃত্বে হিন্দুস্তানের যুদ্ধে মুসলিমদের বিজয় আসবে।
-       (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ; কিতাবুল আকিব)

হযরত আবু হুরাইরা (রা:) হতে বর্ণিত, রসূল () বলেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না পাঁচটি শাসকের আত্মপ্রকাশ হয়। যারা সর্বক্ষণে ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকবে। আমি বললাম, তারা কি মুশরিক হবে? তিনি () বললেন, না, তাদের দুইজন মুসলিম যাদের একজন তোমাদের এ ভূমিতেই জন্ম নিবে। যার নাম আমার নামের অনুরূপ। আর একজন নারী শাসক হবে। হিন্দুস্তানের পূর্ব অঞ্চলে সে ক্ষমতায় এসে পূর্ব পুরুষের মূর্তি পূজা বৃদ্ধি করবে।
-       (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ; কিতাবুল আকিব)

বা’আল দেবতা কি?

কুরআনে এসেছে-

أَتَدْعُونَ بَعْلًا وَتَذَرُونَ أَحْسَنَ الْخٰلِقِينَ ০اللَّهَ رَبَّكُمْ وَرَبَّ ءَابَآئِكُمُ الْأَوَّلِينَ০

তোমরা কি বাআল দেবতার এবাদত করবে এবং সর্বোত্তম স্রষ্টাকে পরিত্যাগ করবে। যিনি আল্লাহ, তোমাদের পালনকর্তা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদের পালনকর্তা?
-       (সূরা ছফফাত, আঃ ৩৭:১২৫-১২৬)

কুরআনের এই আয়াতটি দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে, এই বাআল দেবতাটা কি। উল্লিখিত আয়াতের শেষের আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, তোমাদের ও তোমাদের পূর্বপুরুষদের পালনকর্তা। শুধু তোমাদের পালনকর্তা না বলে তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও পালনকর্তা উল্লেখ করেছে। আর আল্লাহ নিরর্থক এটি উল্লেখ করেন নি। এই বাআল দেবতাই ছিল একজনের পূর্বপুরুষ এবং তাকে সম্মান জানাতে জানাতে এক সময় তাকে শিরক এর পর্যায়ে নিয়ে যায়। এজন্যই তোমাদের ও তোমাদের পূর্বপুরুষদের পালনকর্তা উল্লেখ করে বলেছেন, তোমরা যার ইবাদত করো তাদের পালনকর্তাও আমিই।

বা’আল দেবতার ইতিহাস

কুরআনে এর ঘটনা এসেছেঃ আর নিশ্চয় ইলইয়াস ছিলেন রসূলদের একজন। স্মরণ কর, যখন সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমরা কি ভয় করবে না? তোমরা কি বাআলকে ডাকবে এবং পরিত্যাগ করবে শ্রেষ্ঠ স্রষ্টা। আল্লাহকে, যিনি প্রতিপালক তোমাদের এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদের? কিন্তু ওরা তাকে মিথ্যাবাদী বলেছিল, কাজেই ওদেরকে (শাস্তির জন্য) অবশ্যই উপস্থিত করা হবে। তবে আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দাদের কথা স্বতন্ত্র। আমি এ পরবর্তীদের জন্য স্মরণীয় করে রাখলাম। ইল্‌য়্যাসের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। নিশ্চয় আমি এইভাবে সৎকর্মপরায়ণদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। তিনি তো ছিলেন আমাদের মুমিন বান্দাদের অন্যতম।
-       (সূরা আছ-ছফফাত, আঃ ১২৩-২৩২)

ইলিয়াস (আঃ) হারূন (আঃ)-এর বংশোদ্ভূত বনী ইস্রাঈলের প্রতি প্রেরিত একজন নবী ছিলেন। অনেকে সে জায়গার নাম সামেরা বলেছেন, যা ফিলিস্তীনের মধ্য পশ্চিমে অবস্থিত। সেখানের মানুষ বাআল নামক এক মূর্তির উপাসনা করত।

তারা বাল নামীয় এক মূর্তির পূজা করত। তিনি তাদেরকে তা থেকে নিষেধ করেন। কিন্তু তারা তা থেকে বিরত হয় না। [ইবনে কাসীর]

তখনকার ইস্রাঈল-এর শাসনকর্তার নাম ছিল আখিয়াব বা আখীব। তার স্ত্রী ছিল ইযবীল। যে বাআল (بعل) দেবতা তথা তার প্রিয় পিতা বা ঊর্ধ্বতন পূর্বপুরুষের পূজা করত। আরবী ভাষায় এর অর্থ স্বামী বা মালিক। সে বাআল মূর্তির নামে এক বিশাল উপাসনালয় তৈরী করে এবং সেখানে সকল বনু ইস্রাঈলকে মূর্তিপূজায় আহবান করে। দলে দলে লোক সেদিকে আকৃষ্ট হচ্ছিল। মূসা-হারূণ, দাঊদ ও সুলায়মান নবীর উম্মতেরা বিনা দ্বিধায় শিরকের মহাপাতকে আত্মহুতি দিচ্ছিল। এমন এক মর্মান্তিক অবস্থায় আল্লাহ পাক তাদের নিকটে তাওহীদের বাণী প্রচারের জন্য ইলিয়াস (আ:)-কে নবী হিসাবে প্রেরণ করেন।

তাওহীদের দাওয়াতের কারণে আখিয়াবের স্ত্রী ইযবীল হযরত ইলিয়াস (আঃ)-কে হত্যার চক্রান্ত শুরু করে। ফলে তিনি রাজধানী সামেরাহ (নাবলুস) ছেড়ে চলে গেলেন এবং কিছুদিন পর বনু ইস্রাঈলের অপর রাজ্য পার্শ্ববর্তী ইয়াহূদিয়াহতে উপস্থিত হলেন। ঐসময় বাআল পূজার ঢেউ এখানেও লেগেছিল। হযরত ইলিয়াস (আঃ) সেখানে পৌঁছে তাওহীদের দাওয়াত শুরু করলেন। সেখানকার সম্রাট ইহুরাম-এর কাছেও তিনি দাওয়াত দিলেন। কিন্তু নিরাশ হলেন। অবশেষে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হল।

কয়েক বছর পর ইলিয়াস (আঃ) পুনরায় ইস্রাঈলে ফিরে এলেন এবং আখিয়াব ও তার পুত্র আখযিয়া-কে সত্য পথে আনার চেষ্টা করলেন। কিন্তু তারা তাদের শিরকী ধ্যান-ধারণায় অটল রইল। অবশেষে তাদের উপরে বৈদেশিক আক্রমণ ও মারাত্মক রোগ-ব্যাধির গযব নাযিল হল।

শিরকের প্রবর্তন রাষ্ট্র ও সমাজনেতাদের মাধ্যমে হলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং স্থায়িত্ব লাভ করে। যেমন ইস্রাঈলের রাণী ইযবীলের মাধ্যমে বাআল (بعل) নামক মূর্তির পূজা শুরু হয়েছিল। পরে সারা দেশে তা চালু হয়ে যায়।

অন্য এক বর্ণনা মতে (ঈসা আঃ এর সিরাহ সিরিজে বর্ণিত)- বালবাগ শহরে একজন বাদশা ছিলেন, যিনি তার পিতাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। তার পিতার নাম ছিল বাআল। যখন তার পিতা মারা গেলেন তার পুত্র আদেশ দিল তার পিতার একটি মূর্তি তৈরি করার জন্য এবং সেই মূর্তি যেন শহরের ময়দানে প্রতিস্থাপন করা হয়। আদেশ দিলেন শহরের সবাই যেন সেই মূর্তিকে পূজা করেন। বলা হলো যখনই ঐ মূর্তির নিকট যাবে অন্তত পাঁচ হাত দূরে থাকবে। এবং সতর্ক করা হলো কেউ যেন ঐ মূর্তির কোন ক্ষতিসাধন না করে। কেউ কেউ এই সুযোগে বাআলের মূর্তিকে ফুল দিয়ে সাজালো। ধীরে ধীরে একে খাবার ও অর্থ উৎসর্গ করল। তাকে খোদা হিসেবে সম্বোধন করল। আর এই প্রথা ধীরে ধীরে শরীয়তে প্রবেশ করল। বাআলের মূর্তি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পরল। কেউ কেউ তাকে নবী হিসেবে সম্বোধন করল। নিষেধ সত্ত্বেও এরা খোদার নবীর (ইলিয়াস আঃ) কথা অমান্য করল।

অনেক আলেমরা বলে থাকেন মক্কার হোবাল মূর্তির নামও এই বাআল নাম থেকে এসেছে।

বর্তমানে কিভাবে এর পূজা হচ্ছে?

হয়তো এই ইতিহাস দেখে এবং হাদিসে উল্লিখিত বর্ণনা দেখে বর্তমানে হিন্দে এই বাআল দেবতার পূজা কিভাবে হচ্ছে তা ব্যাখ্যা করার দরকার পরে না।

বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, যারা বিগত হয়ে গেছে এমন লোকদের বা রাজনৈতিক লোকদের বা বীরদের এমন ভাবে সম্মান দেখানো হচ্ছে, এমন আইন-কানুন তৈরি করেছে সেই সম্মান ও শ্রদ্ধা দেখানোর জন্য এটি বনি ইসরাইলের সেই বাআল দেবতার অর্থাৎ পূর্বপুরুষের পূজার মতোই। বর্তমানে প্রত্যেকটি শহরে শহরে বড় বড় মূর্তি বানানো হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। সম্মান ও শ্রদ্ধা দেখানোর জন্যই কি এতকিছু নাকি এগুলো বাআল পূজা? এত সম্মান তো কোন নবী-রসূল, সাহাবা বা কোন নেক ব্যক্তিকেও দেওয়া হচ্ছে না। হিন্দু-মুসলিম মিলে একসাথে সম্মান ও শ্রদ্ধা করে। এটা কেমন করে সম্ভব? জুতা খুলে যাওয়া, ফুল দেওয়া, নীরবতা পালন করা এগুলো কি পূজা ছাড়া অন্যকিছু? কই রসূল এর জন্য তো এরকম কিছু করতে দেখা যায় না তাদের? তাদের কথায় কথায়, পোশাক পরিচ্ছদে, আচার-আচারনে সেই পূর্বপুরুষের আদর্শ বহন করে ও সারাদিন তাদের আদর্শ ও চেতনা নিয়ে কার্যকলাপ করে যায়। আর গর্ব করে বলতে থাকে- সেই নেতার আদর্শ নিয়ে বাঁচতে চাই ও মরতে চাই। এই হচ্ছে বর্তমান অবস্থা। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। সেই সময়ে এই কারণে একজন নবীকেই পাঠানো হয়েছিল আর তার কথা না মানায় তাদের উপর আযাব এসেছিল। তাহলে এই উম্মতের জন্য কি এ কারণে আযাব আসবে না? এখন তো আর নবী এসে সতর্ক করবে না। আসলে আসতে পারেন কোন মুজাদ্দিদ বা ইমাম-নেতা বা আল্লাহর মনোনীত কোন খলীফা। তিনি এসে হয়তো সতর্ক করতে পারেন যেমন হাদিসে এসেছে- এক দুর্বল বালকের বা যুবকের আবির্ভাব হবে যিনি এগুলো মিটিয়ে ফেলবেন ও দ্বীন প্রতিষ্ঠা করবেন।

 

 

 

 

৬.৯.৩ এই আযাব থেকে বাঁচতে হলে করণীয়?

বলুন, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি জুলুম-অবিচার করেছ; আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা যুমার, আঃ ৩৯:৫৩)

অতএব, সব অপরাধ থেকে তাওবা করতে হবে এবং মুসলিমদের হক জামায়াতের সাথে জামায়াতবদ্ধ হতে হবে এবং সেই জামাতের আমীরের আনুগত্য করতে হবে। যেহেতু আমরা আগামীতে সংঘটিতব্য ফিতনা সম্পর্কে আলোচনা করছি, তাই বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী আমাদের করণীয় কি হবে সেটা নিয়েই এই বইতে পুরো আলোচনা সাজানো হয়েছে। তাই এই আযাব থেকে বাঁচতে কি করণীয় তা এই বইটি পুরো পড়লেই বুঝতে পারবেন। আর সেটি এক কথায়- অবশ্যই আমাদেরকে মুসলিমদের হক জামাত ও তার আমীরকে আঁকড়ে ধরতে হবে।

একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, আমাদের মধ্যে ধ্বংসপ্রাপ্ত উম্মাতসমূহের ধ্বংস হবার সমস্ত কারণ বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও আমাদেরকে আল্লাহ সমূলে ধ্বংস করবেন না, এটাই আমাদের নবীর রহমত। সে বিষয়ে হাদিসে এসেছে-

আবু রাবী আল আতাকী ও কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ..... সাওবান (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা গোটা পৃথিবীকে সংকুচিত করে আমার সম্মুখে রেখে দিলেন। অতঃপর আমি এর পূর্বপ্রান্ত থেকে পশ্চিমপ্রান্ত পর্যন্ত প্রত্যক্ষ করেছি। পৃথিবীর যে অংশটুকু গুটিয়ে আমার সম্মুখে রাখা হয়েছিল সে পর্যন্ত আমার উম্মাতের কর্তৃত্ব পৌছবে। আমাকে লাল (স্বর্ণ) ও সাদা (রৌপ্য) দু প্রকারের গুপ্তধন দেয়া হয়েছে। আমি আমার উম্মাতের জন্য আমার রবের কাছে এ দুআ করেছি, যেন তিনি তাদেরকে সাধারণ দুর্ভিক্ষের দ্বারা ধ্বংস না করেন এবং যেন তিনি তাদের উপর নিজেদের ছাড়া এমন কোন শত্রুকে চাপিয়ে না দেন যারা তাদের দলকে ভেঙ্গে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিবে। এ কথা শুনে আমার পালনকর্তা বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমি যা সিদ্ধান্ত করি তা কখনো পরিবর্তন হয় না, আমি তোমার দুআ কবুল করেছি। আমি তোমার উম্মাতকে সাধারণ দুর্ভিক্ষের দ্বারা ধ্বংস করব না এবং তাদের উপর তাদের নিজেদের ছাড়া অন্য এমন কোন শত্রুকে চাপিয়ে দেব না, যারা তাদের সমষ্টিকে বিক্ষিপ্ত ও ধ্বংস করতে সক্ষম হবে। যদিও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত হতে লোক একত্রিত হয়ে প্রচেষ্টা করে না কেন। তবে মুসলিমগণ নিজেদের মধ্যে পরস্পর একে অপরকে হত্যা করবে এবং একে অপরকে বন্দী করবে। *
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭১৫০-(১৯/২৮৮৯) [ইঃ ফাঃ ৬৯৯৪, ইঃ সেঃ ৭০৫১])
-       * উম্মাতে মুহাম্মাদের মধ্যে পূর্বের ধ্বংসপ্রাপ্ত উম্মাতসমূহের ধ্বংস হবার সমস্ত কারণ বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও এ উম্মাতকে পুরোপুরি ধ্বংস বা আকাশ থেকে গজব বা আজাব না দেওয়ার কারণ নাবী এর উক্ত দুআ এবং মহান আল্লাহ কর্তৃক সেই দুআ কবুলের ঘোষণা।

আবু বুরদা এর পিতা রসূল থেকে বর্ণনা করে বলেন, এই উম্মত হলো অনুগ্রহপ্রাপ্ত উম্মত। তাদের শাস্তি তাদের হাতেই। তাদের জাতিগোষ্ঠি হতে লোক ধরা হবে। অতঃপর তাদের থেকেই একজন লোক দেওয়া হবে। আর বলা হবে, এটা তোমার জাহান্নাম হতে বাঁচার ফিদইয়া।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৭২২; সুনান আবু দাউদ ৪৬৭৮; মুসনাদে আহমাদ ১৯১৭৯; মুসনাদে বাযযার ৩০৯০; মুসতাররাকে হাকিম ৭৭২৫)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ