৬.৬৫ ঈসা (আঃ) এর মৃত্যুর মাধ্যমে শাসনামল শেষ

 ঈসা (আঃ) ৩৩ বছর শাসন করার পর মৃত্যুবরণ করবেন। এরপর আর কোন কল্যাণ থাকবে না। এরপর মুসলিমদের আর কোন খলীফা বা আমীর হবে না, আর শয়তানের পক্ষ থেকেও কোন শক্তি-প্রতিনিধি আসবে না যেমন যুগে যুগে এসেছে। এরপর সরাসরি শয়তান ইবলিসই প্রকাশ্যে মানুষের মাঝে ফিতনা করবে। হাদিসে এসেছে এরপর আর কোন যুদ্ধও নেই। কারণ এরপর কোন খলীফা বা আমীর হবে না (বা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসবে না), যার ফলে জামায়াতও হবে না এবং সেকারণে আর কোন যুদ্ধও হবে না।

মুসাদ্দাদ (রহঃ) .... হুযায়ফা (রা:) থেকে বর্ণিত যে, নবী বলেছেনঃ যদি তুমি সে ফিতনার যুগে কোন খলীফা (শাসক) না পাও, তবে সেখান থেকে পালিয়ে যাবে। যতক্ষণ না তুমি মারা যাবে, ততক্ষণ জঙ্গলে গিয়ে ফল-মূল খেয়ে জীবন-ধারণ করবে।

রাবী হুযায়ফা (রা:) বলেনঃ এরপর আমি জিজ্ঞাসা করিঃ (ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌!) তারপর কি হবে? তিনি বলেনঃ এ সময় যদি কেউ তার ঘোড়ার-বাচ্চা প্রসব করাতে চায়, তবে সে ব্যক্তি সে সময়ও পাবে বা, বরং এর মধ্যেই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে।
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪২৪৭ [ইঃ ফাঃ ৪১৯৯]; আহমাদ)

উছমান ইব্‌ন আবূ শায়বা (রহঃ) .... মুসলিম (রহঃ) তার পিতা আবূ বকর (রা:) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্‌ বলেছেনঃ অদূর ভবিষ্যতে এমন একটি ফিতনা প্রকাশ পাবে, যখন শায়িত ব্যক্তি উপবেশনকারীর চাইতে, উপবেশনকারী দণ্ডায়মান ব্যক্তির চাইতে এবং দণ্ডায়মান ব্যক্তি পথচারীর চাইতে উত্তম হবে।

তিনি জিজ্ঞাসা করেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আপনি সে সময়ে আমাদের কি করার নির্দেশ দেন? তিনি বলেনঃ সে সময় যার কাছে উট থাকবে, সে যেন তার উটের সাথে গিয়ে মিশে; যার কাছে বকরী থাকবে, সে যেন তার বকরীর সাথে গিয়ে মিশে এবং যার কোন ক্ষেত থাকবে, সে যেন সেদিকে মনোসংযোগ করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। তিনি বলেনঃ যার এ সবের কিছুই থাকবে না, তার উচিত হবে, তার তরবারির ধার পাথরের উপর আঘাত করে নষ্ট করে ফেলা এবং যথাসম্ভব সে ফিতনা থেকে বেঁচে থাকা। * -       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪২৫৬ [ইঃ ফাঃ ৪২০৭]; মুসলিম; আহমাদ)

-       * অনেকে এই হাদিস ব্যবহার করে বলে যে, এখন ফিতনার সময়; এখন আমাদের যুদ্ধ থেকে এড়িয়ে থাকতে হবে। তরবারি ভেঙ্গে ফেলতে বলেছে, পালাতে বলেছে। কিন্তু তারা এই হাদিসের প্রেক্ষাপটগুলো দেখে নাই। এর আগে পরের হাদিসগুলোও দেখে নাই। এটি হচ্ছে সেই সময় যখন আর কোন আমীর, খলীফা বা শাসক আসবেন না। এবং হাদিসে সরাসরি বলা হয়েছে মুসলিমদের সর্বশেষ যুদ্ধ দাজ্জাল ও তার বাহিনীদের সাথে। এরপর আর কোন যুদ্ধ-বিগ্রহ নেই। উপরে সেই হাদিস আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। ঈসা (আঃ) এর যুগ ও তার মৃত্যুর পরের যুগ যদি কেউ পায় তাহলে তার কাজ হবে সেটি যা এই হাদিসে বলা হয়েছে। এক কথায় দাজ্জাল ও দাজ্জালের বাহিনীর সাথে যুদ্ধ না করা পর্যন্ত অস্ত্র ত্যাগ করা যাবে না। সেটি শেষ হলে হাদিসে যেরকম বলেছে সেরকম করতে হবে। এরপর আর কোন জিহাদ নেই আর তা করে আর কখনো দ্বীনও কায়েম হবে না। এটিই এই সকল হাদিসের ব্যাখ্যা। তাই যারা বর্তমান ফিতনার কথা বলে এই হাদিস খাটিয়ে জিহাদ থেকে পলায়ন করতে চায় তাদের উচিৎ জিহাদ বন্ধ কবে হবে সেই হাদিস পড়া। যেহেতু আমরা জানতে পেরেছি দাজ্জালের সাথে যুদ্ধের পর আর কোন যুদ্ধ নেই, জিহাদ নেই তাই সে পর্যন্ত অস্ত্র ত্যাগ করা যাবে না। বর্তমানে যারা জিহাদ-কিতালের পথে রয়েছে তারাই সঠিক কাজ করেছে এবং এই সকল ফিতনার হাদিসের সঠিক জ্ঞানকে কাজে লাগিয়েছে।

হুযায়ফাহ্ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রসূল ! এখন আমরা যে ভালো যুগে (ইসলামে) অবস্থান করছি, এর পরে কি কোন খারাপ যুগ আসবে যেমন। এটার (ইসলামের) পূর্বে (জাহিলিয়্যাত) ছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আসবে। আমি প্রশ্ন করলাম, তা হতে বেঁচে থাকার উপায় কি? তিনি বললেন, তলোয়ার (বাতিলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে অস্ত্র ধারণ করতে হবে)।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা সেই তলোয়ারী যুগের পরে কি মুসলিমের অস্তিত্ব থাকবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, থাকবে। তবে তখন প্রতিষ্ঠিত হবে রাজতন্ত্র। তার উৎপত্তি হবে মানুষের ঘৃণার উপর এবং সন্ধি-চুক্তি হবে ধোঁকার উপর। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কি হবে? তিনি বললেন, অতঃপর গোমরাহীর দিকে আহ্বানকারী লোকের আগমন ঘটবে। তখন যদি আল্লাহর এই জমিনে কোন শাসক থাকে এবং সে তোমার পৃষ্ঠে অন্যায়ভাবে চাবুক মারে এবং (জোরপূর্বক) তোমার মাল-সম্পদ ছিনিয়েও নেয়, তবুও তুমি তার আনুগত্য কর।

যদি কোন শাসক না থাকে তবে তোমার মৃত্যু যেন এই অবস্থায় হয় যে, তুমি (সকল সম্পর্ক ত্যাগ করে) কোন গাছের গোড়ায় আশ্রয় গ্রহণকারী হবে। (নির্জনে থাকবে) আমি প্রশ্ন করলাম, তারপর কি হবে? তিনি বললেন, অতঃপর দাজ্জালের আগমন ঘটবে। তার সঙ্গে থাকবে নদী ও আগুন। যে ব্যক্তি উক্ত অগ্নিকুণ্ডে পড়বে, (আল্লাহর নিকট) তার প্রতিদান সাব্যস্ত হয়ে যাবে এবং তার পূর্বের গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি তার নহরে প্রবেশ করবে তার পাপ অবধারিত হয়ে যাবে এবং তার (নেক আমলের) প্রতিদান বাতিল হয়ে যাবে। হুযায়ফাহ্ (রা:) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কি হবে? তিনি বললেন, ঘোড়ার বাচ্চা লাভ করা হবে, কিন্তু তা আরোহণের উপযুক্ত হওয়ার পূর্বেই কিয়ামত কায়িম হয়ে যাবে। অপর এক বর্ণনায় আছে, সেই ফিতনার সন্ধি চুক্তি হবে ধোঁকার উপর এবং জামাআতবন্দি হবে ঘৃণার উপর। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল ! প্রতারণার চুক্তির অর্থ কী? তিনি বলেলেন, লোকজনের অন্তর আগের অবস্থায় ফিরে আসবে না। আমি প্রশ্ন করলাম, সেই ভালোর পরেও কি কোন খারাপ আসবে? তিনি বললেন, হ্যা, এরপরে এসে পড়বে অন্ধ ও বধির ফিতনাহ্ (তখন আর তা হতে বের হওয়ার কোন পথও থাকবে না)। সে সময় এক দল লোক জাহান্নামের দরজায় দাঁড়িয়ে ফিতনার দিকে আহ্বানকারী হবে। হে হুযায়ফাহ! সেই সময় এ সকল আহ্বানকারীর কারো অনুসরণ করা অপেক্ষা যদি তুমি গাছের শিকড় অবলম্বন করে মৃত্যুবরণ কর, তা হবে তোমার পক্ষে উত্তম।
-       (হাসান, আবূ দাউদ ৪২৪৪; সিলসিলাতুস সহীহাহ ১৭৯১; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২০৭১১; মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৩৭১১৩; মুসনাদে বাযযার ২৯৬০; মুসনাদে আহমাদ ২৩৪৭৩; আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৮৩৩২; মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৩৯৬-[১৮])



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ