৬.২৪ সুফিয়ানীর বিভিন্ন বিজয় ও ধ্বংসযজ্ঞ

 বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হোযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি মিশর বাসীদেরকে বলেন, যখন মাশরিক বাসীদের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে কোনো পয়গাম আসে, যার মধ্যে আব্দুল্লাহ আমীরুল মুমিনীনের পক্ষ হতে বক্তব্য থাকবে, তখন তোমরা অন্য আরেকটি পয়গামের অপেক্ষা করতে থাকো। সেটা আসবে মুলতঃ আমীরুল মুমিনীন আব্দুল্লাহ আব্দুর রহমান কর্তৃক প্রেরিত হয়ে মাগরিব বাসীদের পক্ষ থেকে আসবে। শপথ সেই সত্ত্বার যার হাতে হোজাইফার জীবন রয়েছ, তোমরা এবং তাদের মধ্যে ব্রিজের নিকটে তুমুল যুদ্ধ হবে। তারা তোমাদেরকে কাফের আখ্যায়িত করে মিশর এবং শাম দেশ থেকে বের করে দিবে। এহেন পরিস্থিতিতে পঁচিশটি দেরহাম নিয়ে জনৈকা আরবী নারী দিমাশকের গেইটে তোমাদের অনুসরণ করবে।

-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৭৩৯)

হযরত মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়্যাহ (রহ:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন মাগরিব বাসিদের প্রাথমিক দল দিমাশকের মসজিদে প্রবেশ করবে। তারা সেখানে প্রবেশ করে মসজিদের সৌন্দর্য্য ও কারুকার্য গুলো দেখে আশ্চর্য্য প্রকাশ করতে থাকবে। হঠাৎ করে ভূমিকম্প আরম্ভ হবে, যার ফলে দিমাশকের মসজিদের পশ্চিম পার্শ্বে গভীর গর্ত হয়ে যাবে এবং হারাস্তা নামক গ্রাম নিচের দিকে ধ্বসে পড়বে। এহেন পরেস্থিতিতে সুফিয়ানীরা প্রকাশ পাবে এবং তাদের সাথে যুদ্ধ করবে আর তাদেরকে মিশরের দিকে ধাওয়া করবে। কিছুদিন পর আবারো সে আসবে এবং মাশরিক বাসিদের সাথে যুদ্ধ করে তাদেরকে ইরাকের দিকে পাঠিয়ে দিবে।
-       (যঈফ জিদ্দান, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৭৭০)

আবু কাবীল (রহ:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনু হাশেমের একজন লোক রাজত্বের মালিক হওয়ার সাথে সাথে বনু উমাইয়ার এক লোককে হত্যা করবে। এভাবে চলতে চলতে সামান্য সংখ্যক লোক বাকি থাকবে। যাদেরকে হত্যা করা হবেনা। ঠিক তখনই বনু উমাইয়ার এক লোকের আবির্ভাব ঘটবে এবং সে প্রতি জনের বিপরীত দুইজন করে হত্যা করবে। ফলে নারী ব্যতীত কোনো পুরুষই আর বাকি থাকবেনা। অতঃপর মাহদী এর আগমন হবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮২১)

আবু কাবীল (রহ:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সুফিয়ানী হচ্ছে নিকৃষ্ঠতম বাদশাহদের অন্যতম। যে অনেক ওলামায়ে কেরাম এবং বুদ্ধি জীবিদের হত্যা করবে। অথচ তাদের মাধ্যমে সে সাহায্য প্রার্থনা করতো। যে লোকই তার বিরোধীতা করতো তাকেই হত্যা করতো।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮২৫)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিছু দিনের মধ্যে জনৈক লোক তার নিতম্ব হেলিয়ে নাচতে থাকবে (অন্য অনুবাদে- ইলিয়াতে এক কানা-কে নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হবে)। সে লোক কানা চোখের অধিকারী। তার যুগে যুদ্ধ, হত্যা, বন্দী ইত্যাদি ব্যাপক আকার ধারন করবে। তিনি হচ্ছেন, সেই লোক যে মদীনাতে আক্রমন করার জন্য সৈন্য প্রেরণ করবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮২৬)

মুহাম্মদ ইবনে জাফর (রহ:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা:) এরশাদ করেন, খালেক ইবনে ইয়াযীদ ইবনে মোয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানের সন্তানদের থেকে একজন লোক তার সাতজন সাথী সহ প্রকাশ পাবে। তাদের একজনের হাতে থাকবে চিহ্নিত একটি ঝান্ডা, যেটা দেখে সকলে বুঝতে পারবে যে, সাহায্য চাওয়া হচ্ছে। তার সাথে লোকজন প্রায় ত্রিশ মাইল পর্যন্ত ভ্রমন করবে। যারাই উক্ত ঝান্ডা দেখবে তারাই পরাজয় বরন করবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮২৭)

হযরত কাব (রহ:) থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, বিশাল একটি জামাআতকে সুফিয়ানী দুই দুইবার পরাজিত করে তাদের উপর কর আরোপ করবে এবং তাদের জনগণকে বন্দি করবে। কুরাইশের জনৈকা নারীকে যবেহ করার মাধ্যমে হত্যা করে তার পেট চিড়ে বাচ্চা বের করে আনবে। সিই হবে বনু হাশেমের পেট চিড়ে যাদের বাচ্চা বের করা হয়েছে তাদের অন্যতম। এরপর সুফিয়ানী মারা গেলে তার পরিবারের সদস্যদের থেকে কতিপয় লোক ব্যাপক ভাবে হামলে পড়বে। কয়েক বছর পর নিকৃষ্টতম এক লোক, অভিশপ্ত জাতির অন্তর্ভুক্ত লোকজনকে তার প্রতি আহবান জানাবে। তার নাম হবে আব্দুল্লাহ। সে নিজে যেমন অভিশপ্ত হবে, তার অনুসারীরাও অভিশপ্ত হবে। তাদের প্রতি আসমান-জমিনের অধিবাসি সকলে অভিশাপ দিবে। সে হবে মানুষের কলিজা ভক্ষনকারী। সে দিমাশকে এসে তার মিম্বরে আরোহন করবে। তার যাবতীয় নির্দেশ হিমস নগরী পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। এবং সে দিমাশকে আগুন জ্বালিয়ে দিবে। এবং সেটা হবে, বনুল আব্বাছ থেকে দুইজন লোক যারা একই বংশের হবে যখন সিংহাসনের দাবীদার হবে। প্রথমজন দ্বিতীয় জনের সাথে মতবিরোধে লিপ্ত হলে সুফিয়ানীর আত্নপ্রকাশ ঘটবে। সে হবে অল্প বয়স্ক, কোকড়ানো চুল বিশিষ্ট। সাদা রংয়ের অধিকারী এবং লম্বা প্রকৃতির। তাদের মাঝে শাম দেশে অনেক গুলো যুদ্ধ সংঘটিত হবে এবং বনুল আব্বাছের অনেক নারীকে বন্দি করে দিমাশকে ফেরত পাঠানো হবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৬৬)

হযরত আরতাত ইবনে মুনযির থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সুফিয়ানী তার নিজের বিরোধীতা কারীদেরকে হত্যা করে তাদেরকে পেরেক দ্বারা আটকিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হবে। তাদের গোশত বড় এক পাতিলে পাকানো হবে। এভাবে দীর্ঘ ছয় মাস পর্যন্ত চলতে থাকবে। এক পর্যায়ে মাশরিক-মাগরিব বাহিনী পরস্পরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৬৭)

হযরত আবান ইবনে ওলীদ ইবনে উকবা ইবনে আবু মুঈত হতে বর্ণিত যে, তিনি হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) কে বলতে শুনেছেন যে, সুফিয়ানী বের হবে অতঃপর যুদ্ধ করবে। এমনকি মহিলাদের পেট চিড়বে। এবং ছোট শিশুদেরকে কড়াই এর মধ্যে টগবগে গরমের মধ্যে জ্বাল দিবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৮৯)

হযরত আরতাত থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন যখন ফুরাতের উপর শহর স্থাপন করা হবে। আর সেটা হল নুফুক আর নিক্বাফ। আর যখন দামেস্কের ছয় মাইল দূরে শহর স্থাপণ করা হবে তখন তোমরা যুদ্ধের জন্য সংকল্প কর। (মনে করো) সুফিয়ানী ও তার সাথীগণ কূফায় প্রবেশ (করেছে)।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৯১)

হযরত কাব (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন মিসরে ধ্বংসযজ্ঞ হওয়া পর্যন্ত কূফা ধ্বংসযজ্ঞ হতে নিরাপদ থাকবে। হযরত হেকাম সফওয়ান থেকে বর্ণনা করে তার হাদীসে বলেন যে, আমার নিকট ঐ ব্যক্তি বর্ণনা করেছে, যে হযরত কাব (রা:) কে একথা বলতে শুনেছে যে, কূফাতে চামড়ার মত মিলিয়ে দেওয়া হবে। অতঃপর কূফার পর বড় যুদ্ধ সংগঠিত হবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৯২)

হযরত আরতাত (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন সুফিয়ানী কূফায় প্রবেশ করবে। অতঃপর কূফাকে তিন দিন ঘেরাও করে রাখবে। আর সেখানের ষাট হাজার অধিবাসীকে হত্যা করবে। অতঃপর সেখানে আঠারো রাত অবস্থান করবে। সেখানে কূফার মাল সম্পদ ভাগাভাগি করে নিবে। আর মক্কায় তার প্রবেশ ঘটবে তূর্ক, রোম, ও কিরকিসিয়ায় যুদ্ধের পর। অতঃপর তাদের পরবর্তীদের প্রভাত তাদের উপর উদিত হবে। অতঃপর তাদের থেকে এক দল খোরাসানে ফিরে যাবে। অতঃপর সুফিয়ানীর সৈন্য যুদ্ধ করবে। এবং দুর্গ সমূহ ধ্বংস করে দিবে। এমনকি তারা কূফায় প্রবেশ করবে। আর খোরাসান বাসীদের খুঁজবে। আর খোরাসানে এমন এক দলের অবির্ভাব ঘটবে যারা মাহদীর দিকে আহবান করবে। অতঃপর সুফিয়ানী মদীনার দিকে প্রেরণ করবে। অতঃপর মহাম্মাদ এর বংশধরের থেকে এক গোষ্ঠিকে পাকড়াও করবে। এবং তাদের কূফায় ফেরত পাঠাবে। অতঃপর মাহদী ও মানসূর কূফা থেকে পালায়ন করে বের হবে। আর সুফিয়ানী তাদের দুই জনকে অনুসন্ধানের জন্য সৈন্য প্রেরণ করবে। অতঃপর যখন মাহদী ও মানসূর মক্কায় পৌছবেন তখন সুফিয়ানীর দলটি একটি খোলা প্রান্তরে অবস্থান নিবে। অতঃপর উক্ত প্রান্তর সুফিয়ানীর সৈন্য সহকারে ধসে যাবে। অতঃপর মাহদী বের হবেন এবং মদীনা দিয়ে অতিক্রম করবেন। আর মদীনায় অবস্থানরত বনু হাশেমের লোকদেরকে রক্ষা করবেন। এবং কালো ঝান্ডাবাহী সৈন্যদল সামনে অগ্রসর হবে। এমনকি দলটি মাঝে অবস্থান করবে। অতঃপর যারা সুফিয়ানীর সৈন্যদের থেকে কূফায় থাকবে তাদের নিকট তাদের অবস্থানের খবর পৌছবে। ফলে তারা ভেগে যাবে। অতঃপর তারা কূফায় অবস্থান নিবেন। এবং কূফায় বনূ হাশেমের যারা থাকবে তাদেরকে রক্ষা করবেন। এদিকে কূফার অনেক সংখ্যকের মধ্য থেকে একটি দল বের হবে যাদেরকে আসআব বলা হবে। তাদের নিকট বেশী অস্ত্র বা হাতিয়ার থাকবে না। আর তাদের মাঝে বসরার অধিবাসীদের ছোট একটি দল থাকবে। অতঃপর তারা সুফিয়ানীর সাথীদেরকে পাবে। অতঃপর তাদের হাত থেকে কূফা থেকে বন্দিকৃত কয়েদি দের রক্ষা করবে। অতঃপর কালো ঝান্ডাবাহী দলটি বাইয়াত নিয়ে মাহদীর দিকে প্রেরণ করবে।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৯৩)

হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসীর (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন যখন সুফিয়ানী কূফায় পৌছবে এবং মুহাম্মাদের পরিবারের সাহায্যকারীদের হত্যা করবে। তখন মাহদী তার ব্রিগেড (সাহায্যকারী দলনেতা) শুয়াইব বিন সালেহকে নিয়ে বেরিয়ে আসবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯০৮)

ইবনে শিহাব হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন যখন তারা (সুফিয়ানী বাহিনী) মদীনায় আসবে তখন তারা তিন দিন মদীনার অধিবাসীদের হত্যা করবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯২৮)

হযরত আবু জাফর (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন যখন মদীনাবাসীদের নিকট এ খবর পৌঁছাবে যে, তাদের দিকে সৈন্য আসছে। তখন মদীনায় হযরত মুহাম্মাদ এর পরিবার বর্গের যারা অবস্থান করবে তারা মদীনা হতে ভেগে মক্কায় চলে যাবে। আর সে সময় সমর্থবান ব্যক্তি দুর্বল ব্যক্তিকে, বড়রা ছোটদেরকে বহন করবে। অতঃপর তারা হযরত মুহাম্মাদ এর পরিবারের থেকে এক ব্যক্তিকে পাবে। তাকে তারা আহযারুয যাইত নামক স্থানে (যবাহ করে) হত্যা করে দিবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯২৯)

হযরত যু কিরবাত হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন যখন সুফিয়ানী মিসরবাসীদের নিকট পৌছবে তখন সে মক্কাবাসীদের নিকট সৈন্যদল প্রেরণ করবে। উষ্ণতার থেকে বেশী পরিমানে তারা মদীনাকে ধ্বংস করে দিবে। এমনকি যখন তারা খোলা প্রান্তরে পৌছবে তখন উক্ত প্রান্তর তাদের নিয়ে ধ্বসে যাবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৩৮)

সুফিয়ানীর সৈন্যরা বাগদাদ সহ বেশ কিছু স্থানে বিজয় হবে। এরপর ইয়েমেন থেকে মানসুর নামক এক আল্লাহ প্রদত্ত নেতা ও শুয়াইব ইবনে ছালেহ (যিনি ইমাম মাহদীর প্রিয় বন্ধু) তারা দুজন তাদের সৈন্যদের নিয়ে সুফিয়ানীর সৈন্যদের সাথে যুদ্ধ করবে। বেশ কয়েক বার। কিছু কিছু জায়গায় বিজয়ী হলেও, মানসুর ও শুয়াইব ঐ যুদ্ধে সুফিয়ানীর কাছে পরাজিত হবে।

আর এ ঘটনা মাহদীর প্রকাশের আগের বছরে হবে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ