৫.৩ শামীম বারাহ (সাহেবে কিরান) এর পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য

 ৫.৩.১ ইলহামী কবিতা কাসিদায় কি বলে

কাসীদায়ে শাহ্ নিয়ামাতুল্লাহ (রহঃ) তে হিন্দুস্তানের ফিতনা নিয়ে বলার সময়ে সেই ফিতনার অবসান করবেন যারা তাদের ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছেন।

৪৪) সাহেবে কিরানহাবীবুল্লাহ হাতে নিয়ে শমসের।
খোদায়ী মদদে ঝাঁপিয়ে পড়িবে ময়দানে যুদ্ধের।

এই প্যারাতে বলা দুইজন ব্যক্তি যারা হিন্দুস্তানে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে তাদের মধ্যে একজন যাকে সাহেবে কিরাণ নামে উল্লেখ করা হয়েছে তিনিই হচ্ছেন শামীম বারাহ। যিনি হিন্দুস্তান বিজয়ের জন্য জিহাদের ময়দানে অবতরণ করবেন। কাসিদাতে সাহেবে কিরাণ নাম ছাড়া আর কোনই পরিচয় উল্লেখ আসেনি। তার পরিচয় হাদিসেই বেশি উল্লেখ এসেছে।

 

৫.৩.২ ইলহামী কবিতা আগামী কথন কি বলে

প্যারাঃ (৫)

প্রস্তুত নিবে ক্ষুদ্র সেনারা,
"শীন"-"মীম" এর নীড়ে।
দিয়ে জয় গান -"আল্লাহ মহান",
আঘাত হানিবে শত্রুর ঘাড়ে।

প্যারাঃ (১৯)

আহাজারী আর কান্নায় ভারী,
সে ভূমি হইবে ঘোর কারবালা।
খোদার মদদে "শীন" "মীম" সেক্ষণে,
আগাইবে করিতে শত্রুর মুকাবিলা।

প্যারাঃ (২০)

"শীন" সে তো "সাহেবে কিরান",
"মীম"-এ "হাবীবুল্লাহ"!
জালিমের ভূমিতে ঘটাইবে মহালয়,
সাথে আছে "মহান আল্লাহ"!

প্যারাঃ (২১)

"হাবীবুল্লাহ" প্রেরিত আমীর,
সহচর তার "সাহেবে কিরান"।
কিরানের হাতে থাকিবে জিহাদের,
কুদরতি অস্ত্র "উসমান"!

প্যারাঃ (৩৬)

মহা সমরের পূর্বে দেখিবে,
প্রকাশ পাইবেন "মাহমুদ"।
পাশে থাকিবেন "শীন" ও "জ্যোতি",

সে প্রকৃতই রবের দূত।

আগামী কথন এর এই সকল প্যারায় যাদের ব্যাপারে উল্লেখ এসেছে, তার মধ্যে শীন দিয়ে নাম যাকে সাহেবে কিরান বলা হয়েছে তিনিই হচ্ছেন শামীম বারাহ। আরো বলা হয়েছে এই সাহেবে কিরান সেই আমীরের সহচর হবেন। এখানে সেই আমীরের নাম ও উপাধি উল্লেখ পাওয়া গেলেও সাহেবে কিরান যার উপাধি হবে, আর তার নাম শীন দিয়ে হবে, কিন্তু শীন অক্ষর দিয়ে কি নাম তা আগামী কথনের কোথাও প্রকাশ করা হয়নি। শুধু মাত্র হাদিস থেকেই তার প্রকৃত নামের বিষয়ে জানা যায়।

 

৫.৩.৩ হাদিস কি বলে

হযরত আনাস (রা:) বলেন, একদা রসূল এর এক মজলিসে আমি আর বিলাল (রা:) বসা ছিলাম। সে সময়ে আল্লাহর রসূল বিলাল (রা:) এর কাঁধে তার ডান হাত রেখে বললেন, হে বিলাল! তুমি কি জানো? তোমার বংশে আল্লাহ এক উজ্জল তারকার জন্ম দিবেন, যে হবে সে সময়ের সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি (সাহেবে কিরান)। অবশ্যেই সে একজন ইমামের সহচর হবে। রাবি বলেন, সম্ভবত রসূল বলেছেন, সেই ইমামের আগমন ইমাম মাহদীর পূর্বেই ঘটবে।
-       (আসারুস সুনান ৩২৪৮; আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ, অধ্যায়ঃ শেষ জামানায় আত্মপ্রকাশকারী নেতা, পৃষ্ঠাঃ ৩০ যাতে রাবি বলেন... এই উক্তিটি নেই।)

সাহল ইবনু সা'দ (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল বলেছেন, অচিরেই পূর্ব দিকে এক ফিতনার সৃষ্টি হবে (দ্বিতীয় কারবালা)। আর তা হবে মুশরিকদের দ্বারা। মুমিনদের একটি দল তাদের বিরুদ্বে যুদ্ধ করে বিজয় আনবে। আর তাদের সেনাপতি হবে ঐ সময়ের সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি সাহেবে কিরান! আর তাদের পরিচালনা করবে একজন ইমাম। যার নাম হবে মাহমুদ। অবশ্যেই তারা মাহদীর আগমন বার্তা নিয়ে আসবে।
-       (তারিখুল বাগদাদ ১২২৯)

হযরত জাবির (রা:) বলেন, রসূল বলেছেন, অভিশপ্ত জাতির নিকট থেকে হিন্দুস্তান বিজয়ের সৈনিকরা অর্থাৎ গাজওয়াতুল হিন্দের বিজয়ী সৈনিকরা জেরুজালেম তথা বাইতুল মুকাদ্দাস দখলে নেবে। আর তাদের সেনাপতি হবে শামীম বারাহ, যার উপাধী হবে সাহেবে কিরান।
-       (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ১০০)

হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রা:) বলেন, রসূল বলেছেন, অবশ্যই আমার বংশের মাহদীর আগমনের পূর্বে কিয়ামত সংঘটিত হবে না। আর সে নিরাপদে জেরুজালেম তথা বাইতুল মুকাদ্দাস ভ্রমণ করবে। আর ততক্ষন মাহদী জেরুজালেম ভ্রমন করবে না, যতক্ষন না অভিশপ্ত জাতি থেকে তা শামীম বারাহর দখলে না আসে। আর অবশ্যই তা দিনের আলোর মত সত্য।
-       (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ৯৬)

হযরত হাম্মাম (রহিঃ) বলেন, আমি আবু হুরাইরা রাঃ, কে বলতে শুনেছি কেয়ামত সংঘটিত হবেই। অবশ্যই অবশ্যই তার পূর্বে খলীফা মাহাদীর প্রকাশ ঘটবে। তবে তারও পূর্বে এক সৌভাগ্যবান ব্যক্তির প্রকাশ হবে। যার নাম হবে শামীম ইবন্ মূখলিস। সে হবে পিতার দিক থেকে বিলাল ইবনে বারাহ এর বংশধর (হাবশী)। আর মায়ের দিক হতে খলীফা আবু বকরের বংশধর (কুরাঈশী)। অবশ্যই সে একজন ইমামের সহচর হবে।
-       (ইলা উম্মাতি মুহাম্মাদিন জামানুন ফিতানা ১০৩; জামানুন আখিরা আল খুলাফা, ইমাম হাজিম রহি, ৭৮ এবং কিতাবুল আকিবেও এই হাদিস টি রয়েছে)


হযরত আবু যার (রা:) বলেন, আমি রসূল ﷺ কে বলতে শুনেছি ইহুদী-খ্রিষ্টানদের সাথে মুসলমানদের দুটি বড় যুদ্ধ হবে। প্রথম যুদ্ধে পূর্ব ও পশ্চিম থেকে দুটি বালক নেতৃত্ব দিবে, যাদের নাম হবে শুয়াইব আর শামীম বারাহ। এবং দ্বিতীয় যুদ্ধে নেতৃত্ব দিবে মরিয়ম পুত্র ঈসা (আ.), আর দুটি যুদ্ধেই আল্লাহ তাদের পাথর ও গাছ দিয়ে সাহায্য করবে।
-   (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ১৪১)

হযরত আনাস (রা:) বলেন, রসূল বলেছেনঃ হিন্দুস্তান মুশরিকদের থেকে মুমিনরা বিজয় করবে। আর তাদের নেতা হবে মাহমুদ। হিন্দুস্তানে সে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে। আর তার স্বাভাবিক মৃত্যু হবে। তখন শামীম বারাহ আল্লাহর হুকুমত অটল রাখবে এবং তার মৃত্যুর পর সুশৃঙ্খল ভাবে চলতে থাকবে। (প্রয়োজনীয় অংশ)
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৭০৯; কিতাবুল আক্বিব ১৪০)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, আল্লাহর রসূল বলেছেন, হে ইবনূ খত্তাব! কুফা থেকে এক ব্যাক্তি হাজ্জ পালনে আসবে। যার পিঠে তুমি একটি সাদা গোলাকার (চিহ্ন) দেখবে। সে আল্লাহর প্রিয় বান্দা, কারণ সে তার মায়ের অনুগত। সে হবে ক্বরন গোত্রীয়। তার বংশের এক কন্যার পুত্র হতে এক নেককার বান্দার জন্ম হবে। যে হবে সেই সময়কার সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ব্যাক্তি (সাহেবে ক্বিরণ)। আর তার দ্বারা এক বিশ্বশাসক হত্যা হবে। যেই শাসক হবে অভিশপ্ত জাতির সন্তান।
-       (জামানুন আখীরা আল খুলাফা, ইমাম হজিম রঃ, পৃষ্ঠাঃ ৫৫)

মুহাম্মাদ (রহিঃ) বলেন, আমি আলি ইবনু আবু তালিব (রা:) কে বলতে শুনেছি, এই কুফায় আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের পদচিহ্ন রয়েছে, যাদের মধ্য একজন "ক্বরন" গোত্রীয়। সে মায়ের অনুগত, আর সাদা গোলাকার চিহ্ন বিশিষ্ট পিঠের অধিকারী।

আর অদূর ভবিষ্যতে তার বংশের এক কন্যার পুত্র হতে এক নেককার ব্যাক্তির জন্ম হবে। যে এক শাসককে হত্যা করবে। আর সেই শাসকটি হবে অভিশপ্ত জাতির সন্তান। *
-       (জামানুন আখীরা আল খুলাফা, ইমাম হাজিম (রহ:), পৃষ্ঠাঃ ৫৬)

-       * ১। এইখানে যে ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে তাকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ তাবেয়ীও বলা হয়। তার নাম উয়াইস আল-করনী। তিনি রসূল এর যুগ পেয়েছিলেন কিন্তু তার সাথে দেখা করতে পারেন নি তার মায়ের খেদমতের কারণে। তিনি অনেক নেককার ব্যক্তি ছিলেন। স্বয়ং উমার (রা:) তার কাছে দোয়া চেয়েছিলেন যার ব্যাপারে সহীহ সূত্রে হাদিস এসেছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ