৬.৪৫ ইমাম মানসূর এর খিলাফত গ্রহণ

 হযরত আব্দুর রহমান ইবনে কাইস ইবনে জাবের সাদাফী (রা:) কর্তৃক বর্ণিত, রসূলুল্লাহ এরশাদ করেছেন, কাহতানী এবং পরবর্তীতে আরো যারা খলীফা ও আমীর নিযুক্ত হবেন, তারা প্রত্যেকে মাহদীর পর হবেন (ক্ষমতায় যাবেন)।

-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২০৯ [পথিক প্রকা: ১২০৬; তাহকীক: যঈফ])

আবু হুরাইরাহ্ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত কাহতান গোত্র হতে এমন এক ব্যক্তির আগমন না হবে যে মানুষ জাতিকে তার লাঠির সাহায্যে পরিচালিত করবে।
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী, পর্ব ৬১, অধ্যায় ৭, হাঃ ৩৫১৭; সহীহুল মুসলিম, পর্ব ৫২, অধ্যায় ১৮, হাঃ ২৯১০ [হাঃ একাঃ ৭২০০-(৬০/২৯১০); ইঃ ফাঃ ৭০৪৪; ইঃ সেঃ ৭১০০]; আল-লুলু ওয়াল মারজান ১৮৪৪; মুসনাদে আহমাদ ৯৩৯৫; মুসনাদে বাযযার ৮১৬১; সহীহুল জামি' ৭৪২৫; আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৭১)

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, রসূলে পাক বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না। যে পর্যন্ত না কাহতান গোত্র থেকে একজন ইমাম বের হবে। যে তাঁর হাতের লাঠি দিয়ে মানুষকে পরিচালনা করবে।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮১০)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাহদীর (ইমাম মুহাম্মাদ বা আল মাহদী) ইন্তেকালের পর এমন একলোক (ইমাম মাহমুদ) শাসনভার গ্রহণ করবেন যিনি ইয়ামানবাসীদেরকে তাদের এলাকা থেকে বিতাড়িত করবেন। অতঃপর খলীফা মানসূর ক্ষমতার মালিক হবে, এরপর মাহদী নামক আরেকজন (ইমাম জাহজাহ) শাসনভার গ্রহণ করবেন, যার হাতে রোমানদের শহর বিজয় হবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১১৮৬ [পথিক প্রকা: ১১৮৩; তাহকীক: যঈফ])

৬.৪৫.১ ইমাম মানসূর এর পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য

ইমাম মানসূর কবে আত্মপ্রকাশ করবেন এবং তার কার্যক্রম কি হবে এই নিয়ে আগের পরিচ্ছেদগুলোতে আলোচনা করা হয়েছে। ইমাম মানসূর ইমাম মাহদীর আগে আত্মপ্রকাশ করে মাহদীর খিলাফত প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাবে এবং মাহদীর খিলাফতের পর মাহমুদ ক্ষমতায় আসবেন এবং তার পরেই ইমাম মানসূর আমীরুল মুমিনীন হিসেবে ক্ষমতায় যাবেন। এখানে আরো বিস্তারিত পরিচয় দেওয়া হলো।

ইমাম মানসূরের ব্যাপারে ছহীহ-জঈফ অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। মানসূরকে হাদিসে বিভিন্ন নামে সম্বোধন করেছে যার মধ্যে রয়েছে- মানসূর, মানসূর ইয়ামেনী, ইয়ামেনী, হাশেমী, কাহতানী ইত্যাদি। মাহদীর আগমনের আগে মানসূর কি কি করেছে এবং তার উত্থান কখন এই বিষয়ে এখানে কোন আলোচনা করা হবে না, কারণ তা আগেই হয়ে গেছে। শুধু তার খিলাফতকালীন বিষয়গুলো এখানে নিয়ে আসা হয়েছে।

আবু হুরাইরাহ্ রা: হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত কাহতান গোত্র হতে এমন এক ব্যক্তির আগমন না হবে যে মানুষ জাতিকে তার লাঠির সাহায্যে (শক্তি দ্বারা সুশৃংখলভাবে) পরিচালিত করবে। [একই ৩২৬৯; ইসঃ ফাঃ ৩২৬৯]
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী, পর্ব ৬১, অধ্যায় ৭, হাঃ ৩৫১৭ [আঃ প্রঃ ৩২৫৫; ইসঃ ফাঃ ৩২৬৬]; সহীহুল মুসলিম, পর্ব ৫২, অধ্যায় ১৮, হাঃ ২৯১০ [হাঃ একাঃ ৭২০০-(৬০/২৯১০); ইঃ ফাঃ ৭০৪৪; ইঃ সেঃ ৭১০০]; আল-লুলু ওয়াল মারজান ১৮৪৪; মুসনাদে আহমাদ ৯৩৯৫; মুসনাদে বাযযার ৮১৬১; সহীহুল জামি' ৭৪২৫; আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৭১)

লাঠির মাধ্যমে জনগণকে পরিচালিত করার অর্থ হলো আখেরী যামানায় তার রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। মানুষ তার আনুগত্য করবে। তিনি হবেন একজন সৎ লোক। হাদীছের ভাষ্য থেকে বুঝা যায় তিনি কঠোর হবেন। তবে সকলের বিরুদ্ধে কঠোরতা করবেন না। অপরাধীদের বিরুদ্ধেই কেবল তিনি কঠিন হবেন।
-       (আশরাতুস সাআতি: ইউসুফ আব্দুল্লাহ আল ওয়াবিল ২১৯)

হযরত কাব (রা:) বর্ণনা করেন, খলীফা মানসূর বনু হাশেমের একজন।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২০৭ [পথিক প্রকা: ১২০৪; তাহকীক: যঈফ])

হযরত আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, কাহতানের (বংশের) এক লোক লোকজনকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবেনা।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ২৮৪)

হযরত আব্দুর রহমান ইবনে কাইস সাদাফি স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ এরশাদ করেন, কাহ্তানী মূলতঃ হযরত মাহদীর পরে ক্ষমতাসীন হবে। কসম সে সত্তার যিনি আমাকে সত্য ধর্ম সহকারে প্রেরণ করেছেন, তিনি তার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১১৯৩ [পথিক প্রকা: ১১৯০; তাহকীক: যঈফ])

আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... মুহাম্মাদ ইবনু জুবায়ের ইবনু মুত্ঈম (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুআবিয়া রাঃ-এর নিকট কুরাইশ প্রতিনিধিদের সাথে তার উপস্থিতিতে সংবাদ পৌঁছলো যে, আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রা:) বর্ণনা করেন, শীঘ্রই কাহতান বংশীয় জনৈক বাদশাহর আগমন ঘটবে। এতদশ্রবণে মুআবিয়াহ (রা:) ক্রুদ্ধ হয়ে খুৎবা দেয়ার উদ্দেশে দাঁড়িয়ে আল্লাহর যথাযোগ্য হামদ ও সানার পর তিনি বললেন, আমি জানতে পেরেছি, তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোক এমন সব কথাবার্তা বলতে শুরু করেছে যা আল্লাহর কিতাবে নেই এবং আল্লাহর রসূল হতেও বর্ণিত হয়নি। এরাই মূর্খ, এদের হতে সাবধান থাক এবং এমন কাল্পনিক ধারণা হতে সতর্ক থাক যা ধারণাকারীকে বিপথগামী করে। আল্লাহর রসূল -কে আমি বলতে শুনেছি যে, যত দিন তারা দ্বীন কায়েমে লেগে থাকবে তত দিন খিলাফত ও শাসন ক্ষমতা কুরাইশদের হাতেই থাকবে। এ বিষয়ে যে-ই তাদের সাথে শত্রুতা করবে আল্লাহ্ তাকে অধোঃমুখে নিক্ষেপ করবেন। *
-       (সহীহ বুখারী ইসঃ ফাঃ ৩২৫১; একই বর্ণনা বুখারী (তাওহীদ) হাদিস নম্বরঃ ৩৫০০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩২৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২৪৮)
-       * এখানে শেষের কথাগুলো নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে। মূলত অসংখ্য সহীহ হাদিসেই ইমাম মাহদীর পরে কাহতানী আরো কিছু খলীফা হবে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। কাহতানীরা মুলত ইয়ামানী। ইমাম মাহমুদ, ইমাম মানসূর এই দুজনই কাহতানী। মূলত এটি মায়ের দিকে হওয়ার বিষয়। পিতার দিকে তারা ঠিকই কুরাইশি। যে সকল খলীফাগণ আসবেন ও ক্ষমতায় যাবেন তারা সকলেই কুরাইশি হবেন। যেমন ইমাম মাহমুদ পিতার দিক দিয়ে উমার (রা:) এর বংশধর অর্থাৎ কুরাইশি। এবং ইমাম মানসূর, তার ব্যাপারেও বলা হয়েছে কিছু জায়গায় যে তিনি বনু হাশেম গোত্রের অর্থাৎ কুরাইশি। আর ইমাম মাহদী এবং ইমাম জাহজাহ এর ব্যাপারে বলাই আছে তারা কুরাইশি। (হয়তো এই বিষয়ে সেই সাহাবীর কাছে কোন সংবাদ পৌঁছে নি। উপরে উল্লিখিত বর্ণনাটি আসার হলেও মারফু সূত্রে একাধিক হাদিসও বর্ণিত রয়েছে এ বিষয়ে।)

আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষন না কাহতান গোত্র থেকে এমন এক ব্যক্তি আবির্ভূত হবে, যে মানুষকে লাঠি দিয়ে তাড়িয়ে নেবে (শাসন চালাবে)।
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৭১১৭ [আঃ প্রঃ ৬৬১৮; ইসঃ ফাঃ ৬৬৩২])

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে ইয়ামান জাতিরা! তোমরা বলে থাক যে, নিঃসন্দেহে মানসুর তোমাদের দলভুক্ত। কসম সে সত্ত্বার যার হাতে আমার প্রাণ! মানসূরের পিতা কুরাইশী। ইচ্ছা করলে আমি তার ও তার বংশের লোকজনের নাম বলে দিতে পারব।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১১৪৫ [পথিক প্রকা: ১২৪২; তাহকীক: সহীহ])

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে ইয়ামান বাসী তোমাদের দাবি হচ্ছে, খলীফা মানসূর তোমাদের গোত্রের। না, কখনো নয় কসম সে সত্ত্বার যার হাতে আমার প্রান রয়েছে, নিঃসন্দেহে খলীফা মানসূর এর পিতা কুরাইশ বংশের হবে। যদি আমি ইচ্ছা করি তার আখেরী দাদার প্রতি তাকে নিসবত করতে তাহলে অবশ্যই আমি সেটা করতে পারব।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ২৮০)

৬.৪৫.২ ইমাম মানসূর এর শাসনকাল

ইমাম মানসূর যিনি হবেন নেককার ও সৎ খলীফাদের অন্যতম। কিন্তু তার সময়ে ফিতনা চরমে পৌঁছে যাবে। এরপর তাকে গোপনে হত্যা করে ফেলা হবে। এই ঘটনা যেন একদম উসমান (রা:) এর সময়কার ফিতনা এবং উসমান (রা:) কে হত্যারই আরেক পুনরাবৃত্তি। এই বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে একটি হাদিসও রয়েছে আল ফিতানে। আর তাতে বলা হয়েছে উসমান (রা:) এর শহীদ করার মতো একটি ঘটনা ঘটবে।

হযরত আরতাত (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে, মাহদী দীর্ঘ চল্লিশ বৎসর জীবিত/ক্ষমতায় থাকবেন, এরপর নিজের বিছানায় মৃত্যুবরণ করবে, অতঃপর কাহতান গোত্রের আরেকজন লোক (মানসূর) যার উভয় কান ছিদ্র বিশিষ্ট হবে খলীফা নিযুক্ত হবেন এবং খলীফা মাহদীকে অনুসরণ করবেন। তিনি বিশ বছর পর মারা যাবে। মূলতঃ তাকে হত্যা করা হবে। অতঃপর রসূলুল্লাহ এর বংশধর থেকে একজন লোক খলীফা হবেন, যার নাম মাহদী হবে, তিনি হবেন উত্তম চরিত্রের অধিকারী। তার হাতে কায়সারের শহর জয় হবে। তিনি উম্মতে মুহাম্মদিয়ার সর্বশেষ আমীর। তার যুগেই দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) পৃথিবীর বুকে পূনরায় আগমন করবেন। *
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২১৪ [পথিক প্রকা: ১২১১, তাহকীক: যঈফ])

-       * ১। মাহদী ৪০ বছর জীবিত বা ক্ষমতায় থাকবেন এ বিষয়টি বিভ্রান্তিমূলক, সঠিক নয়। তবে মাহদী যে ৪০ বছরে আত্মপ্রকাশ করবেন ও এরপর বায়াত নিয়ে খলীফা হবেন সেটি বাস্তবসম্মত। ২। পরের মাহদী দ্বারা জাহজাহকে বুঝানো হয়েছে। তাকে অনেক হাদিসেই এরকম মাহদী নাম হবে বলে উল্লেখ করেছে।

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিয়ামত সংগঠিত হবেনা যতক্ষণ না কাহতান বংশের এক লোক মানুষকে তার অধীন করবেন না।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১১৩৯ [পথিক প্রকা: ১২৩৬; তাহকীক: সহীহ])

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ এরশাদ করেছেন, কিয়ামতের পূর্বে কাহতান এলাকার জনৈক লোক তার শাসনের লাঠি দ্বারা মানুষকে তার অধীন করে নিবেন।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১১৪০ [পথিক প্রকা: ১২৩৭; তাহকীক: সহীহ]; সহীহুল বুখারী ৬৭৩৫; সহীহুল মুসলিম ৫৩১৪; মুসনাদে আহমাদ ৯২৪২)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ