৬.৫১ দাজ্জাল এর আত্মপ্রকাশ

 ৬.৫১.১ দাজ্জালের আত্মপ্রকাশের আগের অবস্থা

আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ আমার গৃহে ছিলেন এবং দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে বললেন, দাজ্জালের আগমনের পূর্বের তিন বছর এরূপ হবে যে, এটার প্রথম বছর আসমান তার এক-তৃতীয়াংশ বর্ষণ এবং জমিন তার এক-তৃতীয়াংশ ফলন বন্ধ রাখবে। দ্বিতীয় বছর আসমান তার দুই-তৃতীয়াংশ বর্ষণ তার জমিন তার দুই-তৃতীয়াংশ ফলন বন্ধ রাখবে। আর শেষ তৃতীয় বছর আসমান তার সমস্ত বর্ষণ এবং জমিন তার সমুদয় ফলন বন্ধ রাখবে, ফলে ক্ষুরবিশিষ্ট প্রাণী (যেমন- গরু, ছাগল প্রভৃতি) এবং শিকারী দাঁতবিশিষ্ট জন্তু (যেমন- হিংস্র জানোয়ার) নিঃশেষ হয়ে যাবে। দাজ্জালের সর্বাধিক মারাত্মক ফিতনাহ এটা হবে যে, সে কোন বেদুঈনের কাছে এসে বলবে, বল তো, যদি আমি তোমার মৃত উটগুলো জীবিত করে দেই, তাহলে তুমি কি বিশ্বাস করবে যে, আমি তোমাদের প্রভু? সে বলবে, হ্যাঁ, তখন শয়তান তার উটের আকৃতিতে উত্তম স্তন এবং মোটাতাজা কুঁজবিশিষ্ট অবস্থায় সামনে উপস্থিত হবে। তিনি বলেন, অতঃপর দাজ্জাল এমন এক ব্যক্তির কাছে আসবে যার ভাই এবং পিতা মারা গেছে। তাকে বলবে, তুমি বল তো, যদি আমি তোমার পিতা ও ভাইদের জীবিত করে দেই তবে কি তুমি আমাকে তোমার প্রভু বলে বিশ্বাস করবে না? সে বলবে, হ্যাঁ, নিশ্চয় বিশ্বাস করব। তখন শায়তান তার পিতা ও ভাইয়ের হুবহু আকৃতি ধারণ করে আসবে। আসমা (রা:) বলেন, এ পর্যন্ত আলোচনা করে তিনি স্বীয় কোন প্রয়োজনে বাইরে গেলেন, এবং পরে ফিরে আসলেন।

এদিকে দাজ্জালের এ সমস্ত তাণ্ডবের কথা শুনে উপস্থিত লোকেরা ভীষণ দুশ্চিন্তায় পতিত হলো। আসমা (রা:) বলেন, রসূলুল্লাহ তখন দরজায় উভয় বাজুতে হাত রেখে বললেন, হে আসমা! কি হয়েছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনায় আপনি তো আমাদের কলিজা বের করে ফেলেছেন। তখন তিনি বললেন, (দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই) সে যদি বের হয় আর আমি জীবিত থাকি, আমিই তখন দলীল-প্রমাণের দ্বারা তাকে প্রতিহত করব। আর যদি আমি জীবিত না থাকি তখন প্রত্যেক মুমিনের সাহায্যকারী হিসেবে আল্লাহই হবে আমার স্থলাভিষিক্ত। আসমা (রা:) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর শপথ, আমাদের অবস্থা হলো আমরা আটার খামির তৈরি করি এবং রুটি তৈরি করে অবসর হতে না হতেই পুনরায় ক্ষুধায় অস্থির হয়ে পড়ি। অতএব সেই দুর্ভিক্ষের সময় মুমিনের অবস্থা কেমন হবে? জবাবে তিনি বললেন, সেই বস্তুই তাদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য যথেষ্ট হবে যা আকাশবাসীদের জন্য যথেষ্ট হয়ে থাকে। আর তা হলো তাসবীহ ও তাক্বদীস (অর্থাৎ আল্লাহর যিকর ও পবিত্রতা বর্ণনা করা)।
-       (যঈফ, মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৯১; মুসনাদে আহমাদ ২৭৬২০; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২০৮২১; কারণ শাহর ইবনু হাওশাব য'ঈফ; সহীহুল জামে আস্-সাগীর ৭৭৫২)

হযরত আসমা বিনতে যায়েদ আনসারীয়া (রা:) হতে বর্ণিত যে তিনি বলেন, একবার রসূল আমার ঘরে ছিলেন। তখন তিনি দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন। অতঃপর বললেন দাজ্জালের সম্মুখে (পূর্বে) তিনটি বছর এমন হবে যে, তার প্রথম বছর আকাশ তার এক তৃতীয়অংশ বর্ষণ এবং যমীন তার এক তৃতীয়াংশ উৎপাদন বন্ধ রাখবে। দ্বিতীয় বছর আকাশ দুই তৃতীয়াংশ বর্ষণ এবং যমীন দুই তৃতীয়াংশ উৎপাদন বন্ধ রাখবে। আর শেষ তৃতীয় বছর আকাশ তার সমস্ত বর্ষন এবং যমীন তার সমুদয়ে উৎপাদন বন্ধ রাখবে। ফলে প্রাণী সমূহের মধ্য থেকে ক্ষুর বিশিষ্ট কোন প্রাণী এবং দংশনকারী কোন প্রাণী জীবিত থাকবে না। সকল প্রানীই ধ্বংস হয়ে যাবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৪৮১; আল মুজামুল কাবীর ৪০৬; মুসনাদে আহমাদ)

হযরত তাবে' (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন যে, দাজ্জালের সম্মুখে তিনটি আলামত থাকবে। আর তা হলো তিন বছর এমন হবে তাতে দুর্ভিক্ষ থাকবে, আর নদী শুকিয়ে যাবে, বাগান হলুদবর্ণ ধারণ করবে, ঝর্ণা পানিশূন্য হয়ে যাবে এবং মাযহাজ ও হামাদান হতে ইরাক পর্যন্ত এমন যুদ্ধ হবে যাতে তারা কিনসীরিন ও হালাবে নেমে আসবে। অতঃপর তোমাদের দরজায় প্রভাতে অথবা সন্ধ্যায় দাজ্জাল উপস্থিত হবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৪৭৩ [পথিক প্রকা: ১৪৭১; তাহকীক: যঈফ])

হিশাম ইব্‌ন আম্মার (রহঃ) .... আবূ দারদা (রা:) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ্‌ বলেছেনঃ দাজ্জালের আবির্ভাবকালে ভয়াবহ যুদ্ধের সময় মুসলিমদের দুর্গ শহরের এক পাশে অবস্থিত গুতা নামক স্থানে হবে, যা শামের (সিরিয়ার) একটি উত্তম শহর।

ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেনঃ ইব্‌ন ওয়াহাব (রহঃ) .... ইব্‌ন উমার (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ বলেছেনঃ অদূর ভবিষ্যতে মদীনার মুসলিমদের ঘিরে ফেলা হবে, এমনকি তাদের দূরবর্তী সীমানা হবে সালাহ্‌ নামক স্থান। *
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪২৯৮-৪৩০০ [ইঃ ফাঃ ৪২৪৮]; মুসনাদে আহমাদ)
-       দাজ্জালের আবির্ভাবের কিছু আগে সর্বত্রই মুসলিমরা যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে। একদিকে রোমীয়দের সাথে যুদ্ধ এবং তাতে বিজয় হবে অন্যদিকে হিন্দুস্তানে ইহুদীদের সাথে আবার যুদ্ধ এবং সেখানেও বিজয় অর্জন করবে এবং সেখানকার পরাজিত ইহুদী রাজা-বাদশাহদের শিকলে বেঁধে টেনে বাইতুল মুকাদ্দাসে (তখন খিলাফত সেখান থেকে পরিচালিত হবে) নিয়ে আসা হবে। এরপর দুই জায়গাতেই দাজ্জাল বের হয়েছে মর্মে গুজব তথ্য ছড়ানো হবে এবং তার পরোক্ষনেই সত্যি সত্যি দাজ্জাল আত্মপ্রকাশ করবে। এই আত্মপ্রকাশের কারণ থাকবে তার রাগ এই যে মুসলিমরা ইহুদী-খ্রিষ্টানদের সব জায়গায় আবারো পরাজিত করেছে।

যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ..... আবূ হুরায়রাহ্ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেন: ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না রূমকগণ (রোমানগন) (মুসলিমদের বিরুদ্ধে) আমাক অথবা দাবিক নামক স্থানে অবতরণ করবে এবং মদীনার তৎকালীন উত্তম লোকদের একটি সেনাদল তাদের মোকাবিলায় বের হবে। যুদ্ধের জন্য যখন মুসলিমগণ সারিবদ্ধ হবে, তখন রূমকগণ বলবে, তোমাদের যারা আমাদের সাথে যুদ্ধ করে আমাদের কিছু সংখ্যক লোকজনকে বন্দি করে নিয়ে এসেছ। তাদের সাথে আমরা যুদ্ধ করব। মুসলিমগণ বলবেন, আল্লাহর শপথ! এটা কখনো হতে পারে না। আমরা আমাদের সেই সকল মুসলিম ভাইদেরকে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য ছেড়ে দিতে পারি না। এরপর মুসলিমগণ রূমক কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে, কিন্তু মুসলিমদের এক-তৃতীয়াংশ রূমকদের মোকাবিলা থেকে পলায়ন করবে। আল্লাহ তাআলা এই পলায়নকারীদের তাওবাহ্ কখনো গ্রহণ করবেন না। আর এক তৃতীয়াংশ নিহত হবে, তারা আল্লাহ তাআলার নিকট উত্তম শহীদ হিসেবে গণ্য হবে। আর এক-তৃতীয়াংশ রূমকদের ওপর বিজয়ী হবে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে কখনো ফিতনায় ফেলবেন না। অবশেষে তারাই কনস্টান্টিনোপল জয় করবে। অতঃপর যখন তারা গনীমতের মাল-সম্পদ ভাগ করণে ব্যস্ত হবে এবং তাদের তরবারিসমূহ যায়তুন গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখবে, ঠিক এ সময় হঠাৎ শয়তান এ ঘোষণা দেবে যে, তোমাদের অনুপস্থিতিতে মাসীহে দাজ্জাল তোমাদের বাড়িঘরে ঢুকে পড়েছে। এতদশ্রবণে মদীনার সেই সেনাদল সেদিকে বের হয়ে পড়বে। অথচ সেই ঘোষণাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। যখন মুসলিমগণ কনস্টান্টিনোপল ছেড়ে সিরিয়ায় প্রবেশ করবে তখনই দাজ্জালের আগমন ঘটবে। এ সময় মুসলিমগণ দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্রস্তুতি নিতে থাকবে এবং সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যাবে, তৎক্ষণাৎ সালাতের উদ্দেশে (মুয়াযযিন কর্তৃক) ইকামত দেয়া হবে এবং এ মূহুর্তে ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ) আকাশ থেকে (দামিশকের জামে মসজিদের মিনারায়) অবতরণ করবেন এবং মুসলিমদের ইমামতি করে সলাত আদায় করাবেন। অতঃপর যখন আল্লাহর শত্রু (দাজ্জাল) তাঁকে দেখতে পাবে, তখন সে এমনিভাবে গলে যেতে থাকবে যেমনিভাবে লবণ পানিতে গলে যায়। আর যদি ঈসা (আঃ) তাকে এমনিতেই ছেড়ে দিতেন, তবুও সে এমনিতেই গলে ধ্বংস হয়ে যেত, কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাকে ঈসা (আঃ) যে বর্শা দিয়ে তাকে হত্যা করবেন, রক্তমাখা সে বর্শাটি তিনি লোকেদের সকলকেই দেখাবেন। *
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭১৭০-(৩৪/২৮৯৭) [ইঃ ফাঃ ৭০১৪, ইঃ সেঃ ৭০৭১]; মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪২১; সহীহুল জামি' ৭৪৩৩; আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৮৪৮৬)
-       * এখানে একটি বিষয়ে ভুল রয়েছে এবং যতদূর বুঝা যায় এটি মূলত অনুবাদেরই ভুল। অন্যান্য সহীহ হাদিস থেকে এটি প্রমানিত যে, ঈসা ইবনে মাইয়াম (আঃ) নামাজের সময় আসবেন আর তখন একামত হয়ে যাবে এবং তিনি ইমাম জাহজাহ এর পিছনে মুছল্লি হিসেবে ছলাত আদায় করবেন। তাই এখানে সে নিজেই নামাজ পড়াবেন বিষয়টি বিপরীত। ভালো করে আরবি ইবারত ও অনুবাদ দেখলে বুঝা যায়, নামাজের সময় তিনি আসবেন এবং এরপর নামাজ পড়বেন এতটুকু বাদ দিয়ে সরাসরি এসেছে অতঃপর তিনি নেতৃত্ব গ্রহণ করবেন, যেটি আসলে সহীহ। এখানে এটাকেই ছলাতের ইমামতি করবেন বলে ভুল অনুবাদিত হয়েছে। আরো একটি পয়েন্ট- তৎক্ষণাৎ সালাতের উদ্দেশে (মুয়াযযিন কর্তৃক) ইকামত দেয়া হবে এবং এ মূহুর্তে ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ) আকাশ থেকে (দামিশকের জামে মসজিদের মিনারায়) অবতরণ করবেন -সেই যদি ইমামতি করবে তাহলে তার আগমনের আগেই কিভাবে মুয়াজ্জিন ইকামত দিবে? ইমাম না দাঁড়ানো পর্যন্ত কি ইকামত দেয়? আর তাহলে কি আগে থেকেই সেই মুসলিম জামাত জানতো যে ঈসা ইবনে মারিয়াম (আঃ) এখনি অবতরণ করবেন? তার আগমনের আগেই ইকামত হয়ে গেছে মর্মে এখানে বর্ণিত হয়েছে। তাই সুস্পষ্টই বলা যাচ্ছে যে এখানে মূলত বাংলা অনুবাদের ভুল। আরবীতে إِذْ أُقِيمَتِ الصَّلَاة فَينزل عِيسَى بن مَرْيَمَ فَأَمَّهُمْ শেষে বলা অতঃপর নেতৃত্ব দিবেন যা স্বাভাবিক ভাবেই মনে হবে নামাজে নেতৃত্ব বা ইমামতি করবেন কিন্তু তা সঠিক নয় এবং অসংখ্য সহীহ হাদিসের বিপরীত হয়ে যায়। ইমাম জাহজাহ এর পিছনে ছলাত পড়ার পর তিনি ক্ষমতা তার কাছে নিবেন এবং তখন থেকে সেই হবে সর্বোচ্চ খলীফা বা আমীর বা শাসক বা ইমাম। এক কথায় তারপর থেকে সে মুসলিমদের নেতৃত্ব দিবেন এবং দাজ্জাল ও বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন।

দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ

হযরত ওহহাব ইবনে মুনাব্বিহ হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, কিয়ামাতের নিদর্শনের মধ্যে প্রথম হলো রোম (রোমদের সাথে যুদ্ধ ও বিজয়)। দ্বিতীয় হলো দাজ্জাল। তৃতীয় হলো ইয়াজুজ-(মাজুজ)। চতুর্থ হলো ঈসা ইবনে মারিয়াম আ.।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৪৫৩, ১৪৫৮)

উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয আনবারী (রহঃ) ... আবূ সারীহা হুযায়ফা ইবনু আসীদ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী একটি কামরার ভেতর ছিলেন। তখন আমরা তাঁর থেকে একটু নীচু স্থানে ছিলাম। তখন তিনি আমাদের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললেন, তোমরা কি আলোচনা করছিলে। আমরা বললাম, কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। এ কথা শুনে তিনি বললেনঃ কিয়ামত কায়িম হবে না যতক্ষন না দশটি নিদর্শন প্রকাশিত হবে। পূর্ব দিগন্তে ভূমিধ্বস, পশ্চিম অঞ্চলে ভূমিধ্বস, আরব উপদ্বীপে ভূমিধ্বস, ধুম্র, দাজ্জাল, দাব্বাতুল আরদ, ইয়াযুয-মা-জুজ, পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদিত হওয়া এবং সর্বশেষ আদন এর গর্ত হতে অগ্নি প্রকাশিত হওয়া যা লোকদেরকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে। শুবা (রহঃ) বলেন, ... আবু সারীহা থেকে ... অনুরূপ। তবে এতে নবী উল্লেখ করেন, দশম নিদর্শন হিসাবে একজন ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর অবতরণের কথা বলেছেন, অন্যজন বলেছেন যে, এমন ঝঞ্ঝা বায়ু (প্রবাহিত হবে), যা লোকদেরকে সমুদ্রের মধ্যে নিক্ষেপ করবে।
-       (গ্রন্থ: সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) | অধ্যায়ঃ ৫৫/ ফিতনা সমূহ ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী (كتاب الفتن وأشراط الساعة) | হাদিস নাম্বার: ৭০২২)

উমায়্যা ইবনু বিসতাম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ বলেনঃ ছয়টি ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পূর্বে তোমরা নেক আমল করতে আরম্ভ কর। তা হল দাজ্জাল, ধোঁয়া, দাব্বাতুল আরদ, পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদিত হওয়া, ব্যাপক বিষয় (জাতিগত ধ্বংস) এবং খাস বিষয় (ব্যক্তির মৃত্যু)।
-       (গ্রন্থ: সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) | অধ্যায়ঃ ৫৫/ ফিতনা সমূহ ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী (كتاب الفتن وأشراط الساعة) | হাদিস নাম্বার: ৭১৩১/প্রায় একই রকম বর্ণনা ৭১৩০)

উবাইদুল্লাহ ইবনু মুআয আল আম্বারী (রহঃ) ..... ইয়াকুব ইবনু আসিম ইবনু উরওয়াহ ইবনু মাসউদ আস্ সাকাফী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রা:) কে আমি এ কথা বলতে শুনেছি যে, একদা জনৈক লোক তার কাছে এসে বললেন, এ কেমন হাদীস আপনি বর্ণনা করছেন যে, এতো এতো দিনের মধ্যে কিয়ামত সংঘটিত হবে। এ কথা শুনে তিনি বললেন, "সুবহানাল্লাহ অথবা লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ অথবা অবিকল কোন শব্দ। তারপর তিনি বললেন, আমি তো শুধু এ কথাই বলেছিলাম যে, অচিরেই তোমরা এমন ভয়াবহ ঘটনা প্রত্যক্ষ করবে যা ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দিবে। এ ঘটনা কায়িম হবেই হবে।

এরপর রসূলুল্লাহ বললেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যেই দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং সে চল্লিশ পর্যন্ত অবস্থান করবে। আমি জানি না চল্লিশ দিন, না চল্লিশ মাস, না চল্লিশ বছর। এ সময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মারইয়াম তনয় ঈসা (আঃ) কে প্রেরণ করবেন। তাঁর আকৃতি উরওয়াহ ইবনু মাসউদ এর অবিকল হবে। তিনি দাজ্জালকে সন্ধান করে তাকে ধ্বংস করে দিবেন। তারপর সাতটি বছর লোকেরা এমনভাবে অতিবাহিত করবে যে, দু ব্যক্তির মধ্যে কোন শত্রুতা থাকবে না। তখন আল্লাহ তাআলা সিরিয়ার দিক হতে শীতল বাতাস প্রবাহিত করবেন। ফলে যার হৃদয়ে কল্যাণ বা ঈমান থাকবে, এ ধরনের কোন লোকই এ দুনিয়াতে আর বেঁচে থাকবে না। বরং এ ধরনের প্রত্যেকের জান আল্লাহ তাআলা কবয করে নিবেন। এমনকি তোমাদের কোন লোক যদি পর্বতের গভীরে গিয়ে আত্মগোপন করে তবে সেখানেও বাতাস তার কাছে পৌছে তার জান কবয করে নিবে। * (প্রয়োজনীয় অংশ)
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২৭১-(১১৬/২৯৪০) [ইঃ ফাঃ ৭১১৪, ইঃ সেঃ ৭১৬৮]; মুসনাদে আহমাদ ৬৫১৯; রিয়াযুস স্বা-লিহীন তাঃ পাঃ ৩/১৮১৯ [আন্তঃ ১৮১০])
-       * আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) থেকে অনেকগুলি ফিতনা সংক্রান্ত হাদিসই সহীহ রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু তাতে তথ্য বিভ্রান্তি তথা ভুল পরিলক্ষিত হয়। এটি হয়তো স্মরণশক্তি দুর্বলের কারণে হয়ে থাকতে পারে। যেমন এখানের কিছু বর্ণনা অন্য সহীহ হাদিসের বিপরীত এবং অনেকগুলো বর্ণনার বিপরীত। যেমন ঈসা (আঃ) সাত বছর শাসন করবনে। মূলত আরো দুইটি সহীহ হাদিসে রয়েছে ৪০ বছর এবং ৩৩ বছর। ৩৩ বছরের টিই বেশি সহীহ। হয়তো ইমাম মাহদীর খিলাফত সময়কালকে তিনি গুলিয়ে ফেলেছেন এবং এটা স্বাভাবিক। তার কথা থেকেই তা বুঝা যায় যেমন, দাজ্জাল ৪০ দিন পৃথিবীতে অবস্থান করবে কিন্তু সেই চল্লিশ দিন না মাস না বছর তা তিনি সঠিকভাবে জানেন না বা ভুলে গেছেন। কিন্তু অন্য সহীহ হাদিসে ৪০ দিন হবে এবং তা কেমন হবে তাও উল্লেখ রয়েছে। সেই তথ্যই বেশি সঠিক। এই রাবি থেকে বর্ণিত ফিতনার হাদিসগুলো যেহেতু ভুল তথ্য দিয়ে বর্ণিত তাই তার হাদিসগুলোকে কট্টরভাবে নেওয়া ও তা দিয়ে ব্যাখ্যা করা ঠিক হবে না।

আমি আরো জিজ্ঞাসা করিঃ এরপর কি হবে? তিনি বলেনঃ এরপর দাজ্জাল বের হবে, যার সাথে নহর ও আগুন থাকবে। যে তার আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে, সে অবশ্যই ছওয়াব পাবে এবং তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। আর যে তার নহরে নিক্ষিপ্ত হবে, সে অবশ্যই গুনাহ্‌গার হবে এবং তার নেকী বরবাদ হবে। রাবী বলেনঃ আমি বললামঃ এরপর কি হবে? তিনি বললেনঃ এরপর কিয়ামত হবে।
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪২৪৪ [ইঃ ফাঃ ৪১৯৬]; আহমাদ)

আব্বাস আম্বারী (রহঃ) .... মুআয ইব্‌ন জাবাল (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্‌ বলেছেনঃ বায়তুল মুকাদ্দিসের প্রতিষ্ঠা মদীনার অমঙ্গলের কারণ হবে। আর মদীনার খারাবী ফিতনা সৃষ্টির কারণ হবে। বস্তুত ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি কুস্‌তুন্‌তুনিয়া বিজয়ের কারণ হবে এবং কুস্‌তুনতুনিয়ার বিজয় দাজ্জাল বের হওয়ার কারণ হবে। এরপর রসূলুল্লাহ্‌ তাঁর হাত মুআয রাঃ-এর কাঁধে বা হাঁটুতে মেরে বলেনঃ এ সবই সত্য, যেমন তুমি এখানে আছো-তা সত্য; যেমন তুমি বসে আছো-তা সত্য। অর্থাৎ তিনি মুআয ইবনু জাবাল রাঃ-কে লক্ষ করে বলেন।
-       (হাসান, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪২৯৪ [ইঃ ফাঃ ৪২৪৪]; মুসনাদে আহমাদ)

হযরত আতা (রা:) হতে বর্ণিত যে, রসূল বলেন, দাজ্জাল কোন বিষয়ে ক্রোধান্বিত হয়ে রাগান্বিত অবস্থায় বের হবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৪৫১ [পথিক প্রকা: ১৪৪৯; মারফু, মুরসাল])

হযরত কা'ব (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, দাজ্জাল বের হবে তখন, যখন কুস্তুনতুনিয়া বিজিত হবে (তার পরেই)।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৪৬৩ [পথিক প্রকা: ১৪৬১; তাহকীক: যঈফ])

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন কুস্তুনতুনিয়া বিজয়ের পর এবং ঈসা আ. এর বাইতুল মুকাদ্দাসে অবতরণের পূর্বে দাজ্জাল বের হবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৪৬৮ [পথিক প্রকা: ১৪৬৬; তাহকীক: সহীহ])

হযরত কাব (রা:) হতে বর্ণিত যে, রসুল বলেন তাদের নিকট এ খবর পৌছেছে যে, তাদের কুস্তুনতুনিয়া বিজয়ের পর দাজ্জালের অবির্ভাব ঘটবে। অতঃপর তারা ফিরে যাবে এবং কিছু পাবে না। অতঃপর কিছুদিন অবস্থান করবে এরই মধ্যে দাজ্জাল বের হবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৪৬৯ [পথিক প্রকা: ১৪৬৭; তাহকীক: যঈফ])

হযরত সুলাইমান ইবনে ঈসা হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন আমার নিকট এ খবর পৌছেছে যে, কস্তুনতুনিয়ার বিজয়ের পর দাজ্জারের অবির্ভাব হবে। (শুধু তাই নয়) মুসলমানদের কুস্তুনতুনিয়ায় তিন বছর চার মাস দশ দিন অবস্থানের পর দাজ্জালের অবির্ভাব হবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৪৮৬ [পথিক প্রকা: ১৪৮৪; তাহকীক: যঈফ])

হযরত কাব (রা:) হতে বর্ণিত যে, একবার এক গ্রাম্য ব্যক্তি হযরত আবু দারদা (রা:) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো। অতঃপর সে এক পরিপূর্ণ মজলিসের নিকট আসলো। আর সেখানে আবু দারদা (রা:) ও কাব (রা:) বসা ছিলেন। আর তাদের দুজনের নিকট লোকজন ছিল। অতঃপর লোকটি বলল তোমাদের মধ্যে আবু দারদা কে? তারা বলল, ইনি। অতঃপর লোকটি বলল দাজ্জাল কখন বের হবে। তিনি বললেন আল্লাহ মাফ করুন, তোমার থেকে আমাদের পৃথক করুন। অতঃপর তিনি এটা তার উপর দুইবার আবৃতি করলেন। যখন লোকটি তার প্রশ্ন সম্পর্কে হযরত আবু দারদা (রা:) এর অপছন্দ দেখল। সে বলল, হে আবু দারদা! আল্লাহর কসম আমি আপনার নিকট আপনার মাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে আসি নাই। বরং আপনার জ্ঞান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে এসেছি। তিনি বলেন হযরত কাব (রা:) তার দুই কাঁধে মারলেন। অতঃপর বললেন হে দাজ্জাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসাকারী। যখন আকাশকে তুমি দেখবে কঠিন হয়ে যেতে যে আকাশ একটুও বৃষ্টি বর্ষণ করে না। যখন তুমি যমীনকে দেখবে শুকিয়ে যেতে যে, যমীন কিছুই উৎপন্ন করে না। এবং নদী ও ঝর্ণা ফিরে যাবে তার মূলের দিকে। আর বাগান হলুদবর্ণ ধারণ করবে। তখণ তুমি দাজ্জালের অপেক্ষা কর। তখন দাজ্জাল তোমার সকাল বেলায় বা সন্ধ্যা বেলায় উপস্থিত হবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৪৮৭ [পথিক প্রকা: ১৪৮৫; তাহকীক: যঈফ])

হযরত কাব (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন তারা কুস্তুনতুনিয়া বিজয় করবে। অতঃপর তাদের নিকট দাজ্জালের সংবাদ আসবে। ফলে তারা সিরিয়ারর দিকে বের হবে। অতঃপর যারা বের হয় নাই তারা তাকে পাবে। অতঃপর, সে বিলম্ব করবে না এমনকি সে বাহির হবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৪৯০ [পথিক প্রকা: ১৪৮৮; তাহকীক: যঈফ])

হযরত হুযাইফা ইবনে ইয়ামান (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন আমি রসূল কে বলতে শুনেছি যে, দাজ্জাল বাহির হবে। অতঃপর ঈসা ইবনে মারিয়াম আ.।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৫১২ [পথিক প্রকা: ১৫১০; তাহকীক: যঈফ])

হযরত আবু যারআ হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন একবার আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) এর নিকট দাজ্জালের আলোচনা করা হল। তখন আব্দুল্লাহ (রা:) বললেন হে মানুষ সকল, তোমরা বিভেদ করছ? (জেনে রাখ) দাজ্জালের বাহির হওয়ার সময় মানুষ তিন দলে ভাগ হবে। একদল দাজ্জালকে অনূসরণ করবে। একদল তাদের পূর্বপুরুষদের জমি আকড়ে বসে থাকবে। সুগন্ধিযুক্ত গাছের জন্মানোর স্থানের মত। আরেক দল ফুরাত নদীর তীরে অবস্থান নিবে। তারা যুদ্ধ করবে। তারা দাজ্জালের সাথে যুদ্ধ করবে। এমনকি সকল মুমিনগণ সিরিয়ার পশ্চিমে একত্র হবে। অতঃপর তার অগ্রভাগকে তার দিকে পাঠাবে। তাদের মধ্যে একজন সুদর্শন বা সাদা কালো দাগ বিশিষ্ট ঘোড়সওয়ার থাকবে। অতঃপর তাঁরা যুদ্ধ করবে। এবং তাদের থেকে একজন মানুষও ফিরে আসবে না। সালামা বলেন রবীয়া ইবনে নাজেদ থেকে আবু সাদেক আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) বলেন সুদর্শনধারী ঘোড়া। অতঃপর আব্দুল্লাহ বলেন, আহলে কিতাবগণ ধারণা করে যে, মাসীহ ঈসা ইবনে মারিয়াম (আ.) অবতরণ করবেন এবং তাকে হত্যা করবেন। আবু যারআ বলেন, আমি আব্দুল্লাহ (রা:) কে আহলে কিতাবদের বিষয়ে কথা বলতে শুনি নাই। তবে একথা ব্যতীত যে, তিনি বলেন অতঃপর ইয়াজুয মাজুজ বাহির হবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৫১৫ [পথিক প্রকা: ১৫১৩; তাহকীক: যঈফ])

হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুসর (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ এরশাদ করেন, দাজ্জাল বের হবে না, যাবত না (অধিকাংশ) মানুষজন তার কথা উল্লেখ করা থেকে অন্যমনষ্ক হয়ে যায় এবং যাবত না ইমামগণ মিম্বরগুলোতে তার কথা উল্লেখ করা ছেড়ে দেয়।
-       (মুসনাদে আহমদ ১৬২৩১; মুসনাদে শামেইন, ত্বাবরাণী ৯৬৭; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী ৩/৩৪৫)

হুযাইফা রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বর্ণনা করেন, সে(ই খবীস দাজ্জাল) বের হবে (পৃথিবীতে) মানুষের স্বল্পতা, খ্যাদের সংকট, (উম্মতের) নিজেদের মাঝে মন্দ সম্পর্ক এবং দ্বীনের খলৎমলৎ অবস্থায়।
-       (আল-মুসান্নাফ, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক ১১/৩৯৪ হাঃ ২০৮৬৭)

 

৬.৫১.২ দাজ্জাল কোথা থেকে বের হবে

বুন্দার ও আহমাদ ইবন মানী(রহঃ) ....... আবূ বকর সিদ্দীক (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ আমাদের বলেছেনঃ দাজ্জাল পূর্বাঞ্চলীয় কোন স্থান থেকে বের হবে। স্থানটির নাম হল খুরাসান। কিছু কওম তার অনুসরণ করবে (অন্যত্র অনুবাদে এসেছে- তার সঙ্গে অনেক দল মানুষ থাকবে)। তাদের চেহারা হবে স্তর বিশিষ্ট ঢালের মত (মুখাবয়ব হবে ঢালের মত চ্যাপ্টা ও মাংসল)।
-       (সহীহ, সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২৩৭ [ইঃ ফাঃ ২২৪০]; সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ৪০৭২; রাওদুন নাদীর ১১৮৪; তাখরীজুল মুখতার ৩৩-৩৭; সহীহাহ ১৫৯১; মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠাঃ ৭; মুসনাদে আবু ইয়া'লা, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৭; সহীহুল জামে আস্-সাগীর ৩৩৯৮)

আমর ইবনু হুরায়স (রহিমাহুল্লাহ) আবূ বকর সিদ্দীক (রা:) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেন: দাজ্জাল পূর্বাঞ্চলের খুরাসান এলাকা থেকে বের হবে, এমন এক গোত্র তার আনুগত্য গ্রহণ করবে যাদের চেহারা হবে ঢালের মতো চ্যাপ্টা।
-       (সহীহ, মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৮৭; সহীহুল জামি' ৩৪০৪; সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৫৯১; মুসনাদে আবদ ইবনু হুমায়দ ৪; মুসনাদে বাযযার ৪৭; মুসনাদে আহমাদ ৩৩; আবূ ইয়া'লা ৩৩; আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৮৬০৮)

হযরত আবু হুরাইরা (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন ইরাকে হাই নামক গ্রাম থেকে দাজ্জাল বাহির হবে। তখন দাজ্জালের বাহির হওয়ার সময় মানুষ বিভক্ত হয়ে যাবে। তখন একদল বলবে সিরিয়ার দিকে চলে যাও। অপর দল বলবে, তোমাদের ভাইদের দিকে চলে যাও।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৪৯৪ [পথিক প্রকা: ১৪৯২; তাহকীক: যঈফ])

হযরত আবু বকর (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন দাজ্জাল তার ইহুদিয়্যাতের চকমকি নিয়ে বাহির হবে। অন্য অনুবাদে- (ইয়াহুদিয়া অঞ্চলের মারওয়া থেকে বের হবে)
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৪৯৫ [পথিক প্রকা: ১৪৯৩; মানা সহীহ])

হযরত আবু বকর (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, দাজ্জাল খোরাসান হতে বাহির হবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৪৯৬ [পথিক প্রকা: ১৪৯৪; তাহকীক: সহীহ])

হযরত কাব (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন দাজ্জালের জন্ম হবে মিসরের একটি গ্রামে। যাকে কওস বলা হয়। আর সেটা হলো বাছারী।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৪৯৭ [পথিক প্রকা: ১৪৯৫; তাহকীক: সহীহ])

হযরত হাসান থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন খোরাসান হতে একদল সৈন্য বাহির হবে। তাদের পিছনেই দাজ্জাল বাহির হবে। *
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৫০১ [পথিক প্রকা: ১৪৯৯; তাহকীক: হাসান])
-       * এটি খুরাসানী বাহিনী নয়। কারণ দাজ্জালের আগমনের আগে হিন্দের কিছু অঞ্চলে ইহুদীরা বসবাস করবে, হতেই পারে তাদের কিছু খুরাসানে বসবাস করবে এবং তখনকার জনপদ থেকে সৈন্য বাহির হবে। তারা কারা তা জানা নেই।

হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) হতে, আবু বকর (রা:) বলেন, দাজ্জাল পূর্বদিকের এলাকা হতে বাহির হবে। যাকে খোরাসান বলা হয়।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৫০৮ [পথিক প্রকা: ১৫০৬; তাহকীক: সহীহ]; সুনান ইবনে মাজাহ; মুসনাদে আবু বাকর ৫৬, পৃষ্ঠাঃ ১০০; আল মুসতাদরাক ৮৬৭৩, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠাঃ ৭০০)

হযরত সুলাইমান ইবনে ঈসা বলেন যে, আমার নিকট এ খবর পৌছেছে যে, দাজ্জাল সমুদ্রের উপদ্বীপ আসবাহান থেকে বাহির হবে। যাকে মাতূলাহু বলা হয়।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৫০৯ [পথিক প্রকা: ১৫০৭; তাহকীক: যঈফ])

হযরত ইবনে তাউস তার পিতা থেকে বর্ণনা করে বলেন যে, দাজ্জাল ইরাক থেকে বাহির হবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৫১০ [পথিক প্রকা: ১৫০৮; তাহকীক: সহীহ])

হযরত হাইসাম ইবনে আসওয়াদ বলেন যে, আমাকে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) বলেছেন আর তিনি হযরত মুয়াবিয়া (রা:) এর নিকটে ছিলেন। তোমদের পূর্বের স্থান তোমরা চিন? যাকে কূসা বলা হয় যার অধিকাংশ জায়গা অনাবাদি। আমি বললাম হ্যাঁ। তিনি বললেন সেখান থেকে দাজ্জাল বাহির হবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৫১১ [পথিক প্রকা: ১৫০৯; তাহকীক: সহীহ])

আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত,  রসূলুল্লাহ এরশাদ করেন, নিশ্চই পথভ্রষ্ঠ কানা মাসিহ দাজ্জাল পূর্বদিক থেকে বের হবে এমন এক জামানায় যখন মানুষজনের মাঝে বিরোধ-দ্বন্দ্ব ও দলাদলি (প্রকট মাত্রায়) থাকবে। এরপর (আল্লাহ যেমনটা চান) সে পৃথিবীতে থাকবে চল্লিশ দিন। (আর) আল্লাহই ভাল জানেন যে, তার (চল্লিশ দিনের) পরিমাণটা কত! আল্লাহই ভাল জানেন যে, তার (চল্লিশ দিনের) পরিমাণটা কত! (একথা দুবার বললেন)।
-       (সহিহ ইবনে হিব্বান ১৫/২২৩ হাঃ ৬৮১২; মুসনাদে বাযযার ৫/২২১; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী ৭/৩৪৯)

হাদিসে বিভিন্ন জায়গা থেকে দাজ্জাল বের হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এতে বিভ্রান্তির কিছু নেই। দাজ্জাল বাহির হওয়ার বিষয়ে একটি জিনিস মাথায় রাখা জরুরী যে, সে ইহুদী গোত্র থেকে জন্মলাভ করবে। তাই বর্তমানে ইহুদীরা কোথায় বসবাস করছে এবং দাজ্জাল বাহির হওয়ার আগে কোথায় বসবাস করবে সেটা মাথায় রাখা উচিত। আর তার জন্ম এক জায়গায় ও আত্মপ্রকাশের সময় বের হওয়ার জায়গা আলাদা হওয়াটি খুবই স্বাভাবিক। আর হাদিস মতে আত্মপ্রকাশ যে পূর্ব দিকে হবে সেটাই সবচেয়ে সঠিক মত। আল্লাহু আলীম।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ