৬.৬৩ ইয়াজুজ-মাজুজ এর আবির্ভাব

 ইয়াজুজ ও মাজুজ এর প্রকাশ কিয়ামত নিকটে হওয়ার আরেকটি বড় আলামত। এ সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে বিভিন্ন বর্ণনা এসেছে।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেন, অবশ্যই অবশ্যই কিয়ামতের পূর্বে ইয়াজুজ মাজুজ ও দাব্বাতুল আরদ এর প্রকাশ ঘটবে।

-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮১৯)

দাব্বতুল আরদ ধ্বংসের পরের বছরই ইয়াজুজ-মা’জুজের প্রকাশ ঘটবে

হযরত আবু মুসা আসআরী (রা:) বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি, যখন তিনি পৃথিবী ধ্বংসের আলামত গুলো বলছিলেন। তিনি বললেন, মরিয়াম পুত্র ঈসা (আঃ) ৩৩ বছর পৃথিবী শাসন করবেন। সে সময়েই জমিন থেকে এক ধরনের প্রাণী বের হবে (দাব্বাতুল আরদ), যাদের সংখ্যা হবে আকাশের তারকার ন্যায়। আর তাদের উত্থানে মানুষ ক্ষতি গ্রস্থ হবে। সে সময় মানুষ আল্লাহর নবী ঈসা (আঃ) এর নিকট সেই প্রাণীর ব্যাপারে নালিস জানাবে। তখন ঈসা (আঃ) সেই প্রাণীদের নেতার সাথে কথা বলবেন। আর তা মানুষ প্রকাশ্যে শুনতে পাবে।

রাবী বলেন, তিনি আরও বলেছেন, এই প্রাণীর পতনের পরের বছরই, ইয়াজুজ-মাজুজ বের হয়ে আসবে।
-       (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ২৯১)

কিয়ামতের বড় আলামতের অন্যতম ইয়াজুজ-মাজুজ এর প্রকাশ

উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয আনবারী (রহঃ) ... আবূ সারীহা হুযায়ফা ইবনু আসীদ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী একটি কামরার ভেতর ছিলেন। তখন আমরা তাঁর থেকে একটু নীচু স্থানে ছিলাম। তখন তিনি আমাদের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললেন, তোমরা কি আলোচনা করছিলে। আমরা বললাম, কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। এ কথা শুনে তিনি বললেনঃ কিয়ামত কায়িম হবে না যতক্ষন না দশটি নিদর্শন প্রকাশিত হবে। পূর্ব দিগন্তে ভূমি ধস, পশ্চিম অঞ্চলে ভূমি ধস, আরব উপদ্বীপে ভূমি ধস, ধুম্র, দাজ্জাল, দাব্বাতুল আরদ, ইয়াজুজ-মাজুজ, পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদিত হওয়া এবং সর্বশেষ আদন এর গর্ত হতে অগ্নি প্রকাশিত হওয়া যা লোকদেরকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে। শুবা (রহঃ) বলেন, ... আবু সারীহা থেকে ... অনুরূপ। তবে এতে নবী উল্লেখ করেন, দশম নিদর্শন হিসাবে একজন ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর অবতরণের কথা বলেছেন, অন্যজন বলেছেন যে, এমন ঝঞ্ঝা বায়ু (প্রবাহিত হবে), যা লোকদেরকে সমুদ্রের মধ্যে নিক্ষেপ করবে।
-       (সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) | অধ্যায়ঃ ৫৫/ ফিতনা সমূহ ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী (كتاب الفتن وأشراط الساعة) | হাদিস নাম্বার: ৭০২২)

 

একই রকম বর্ণনা পাওয়া যায়ঃ
-       (সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) | অধ্যায়ঃ ৩২/ যুদ্ধ-বিগ্রহ (كتاب الملاحم) | হাদিস নাম্বার: ৪২৬০)
-       (সহীহ মুসলিম ২৯০১/২৯৪১; সুনান আত-তিরমিযী ২১৮৩; সুনানে ইবনে মাজাহ ৪০৫৫/৪০৬৯; সুনান আবূ দাউদ ৪৩১১; মুসনাদে আহমাদ ১৫৭৮, ১৭১০; তাহকীক আলবানীঃ সহীহ)

...আমার উম্মাতের একটি দল আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করতে থাকবে এবং যারা তাদের বিরোধিতা করতে চাইবে তারা তাদের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না বরং আল্লাহ মানুষের মাধ্য হতে কারো কারো হৃদয়কে বক্র করে দিবেন যাতে সেই দল তাদের বিরদ্ধে লড়াই করতে পারে। এবং তারা লড়াই করতে থাকবে যতক্ষণ না কিয়ামাত অবতীর্ণ হয়। ঘোড়ার কপালে কিয়ামাত পর্যন্ত রহমত এবং কিতাল ততক্ষণ পর্যন্ত বন্ধ হবে না যতক্ষন না ইয়াজুজ মাজুজ বের হয়ে আসে। *
-       (আল মুজাম আল কাবির (তাবারানি); নাসাঈ কর্তৃক অনুরুপ বর্ণনা পাওয়া যায়, হাদিসটি হাসান)
-       * দাজ্জালের সাথে যুদ্ধই মুসলিমদের সর্বশেষ যুদ্ধ হবে এবং ইয়াজুজ মাজুজ এর বের হওয়ার সময় মানুষ তাদের সাথে যুদ্ধ করবে না। এতে কোন বৈপরীত্য নেই।

ভ্রান্তি নিরসন

ইয়াজুজ-মাজুজ নিয়ে বিভিন্ন এমন তথ্য এই জামানায় পাওয়া যায় যা কুরআন ও হাদিসের বিপরীত বাণী। মূলত এর কারণ মানুষ অলৌকিক-অজানাকে জানা বিষয়ের সাথে মিলিয়ে তার ব্যাখ্যা করে। কিছু এমন বর্ণনা পাওয়া যায় যাতে বলা হয়ে থাকে এই জাতি বা ওই জাতিই ইয়াজুজ-মাজুজ। তারা অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে, তারা আরো আগেই বেরিয়ে পড়েছে ইত্যাদি বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু এইসকল বর্ণনা একদমই ভুল। কোন ঘটনার পর কোন ঘটনা ঘটবে তা সরাসরি হাদিসেই স্পষ্ট করে দেওয়া আছে। তা থেকে এটি সহজেই বুঝা যায় যে দাজ্জাল বের হওয়া ও তারপর দাব্বাতুল আরদ বের হওয়ার আগে এই ইয়াজুজ-মাজুজ জাতির আবির্ভাব ঘটবে না। তাই বানোয়াট কোন মত গ্রহণযোগ্য নয়। হাদিসে বর্ণিত আছে-

নাওয়াস ইবনু সামআন বলেন, কোন এক সকালে রসূলুল্লাহ দাজ্জালের উল্লেখ করলেন, তাতে তিনি আওয়াজ নিচু ও উঁচু করছিলেন, এমনকি আমরা তাকে (দাজ্জালকে) প্রতিবেশীর খেজুর বাগানে ধারণা করেছিলাম। অতঃপর তিনি বললেন: আমি তোমাদের ওপর দাজ্জাল ব্যতীত অন্য কিছুর আশঙ্কা করছি, যদি সে বের হয় আর আমি তোমাদের মাঝে থাকি, তাহলে আমিই তাকে মোকাবিলা করব তোমাদের পরিবর্তে। যদি সে বের হয় আর আমি তোমাদের মাঝে না থাকি, তাহলে প্রত্যেকে তার নিজের জিম্মাদার, আর আমার অবর্তমানে আল্লাহ প্রত্যেক মুসলিমের জিম্মাদার। দাজ্জাল কোঁকড়ানো চুল বিশিষ্ট যুবক, তার চোখ ওপরে উঠানো, আমি তার উদাহরণ পেশ করছি আব্দুল উজ্জা ইবনু কুতনকে। তোমাদের থেকে যে তাকে পাবে সে যেন তার ওপর সূরা কাহাফের প্রথম আয়াতগুলো পড়ে, নিশ্চয় সে বের হবে শাম ও ইরাকের মধ্যবর্তী স্থান থেকে, সে ডানে ও বামে ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে, হে আল্লাহর বান্দাগণ তোমরা দৃঢ় থাক। আমরা বললাম: হে আল্লাহর রসূল, যমীনে তার অবস্থান কি পরিমাণ হবে? তিনি বললেন: চল্লিশ দিন, একদিন এক বছর সমান, অতঃপর একদিন এক মাসের সমান, অতঃপর একদিন এক জুমার সমান, অতঃপর তার অন্যান্য দিনগুলো তোমাদের দিনের ন্যায়। আমরা বললাম: হে আল্লাহর রসূল, যে দিনটি এক বছরের ন্যায় সেখানে কি একদিনের সালাত যথেষ্ট?

তিনি বললেন: না, তোমরা তার পরিমাণ করবে। আমরা বললাম: হে আল্লাহর রসূল যমীনে তার গতি কিরূপ হবে? তিনি বললেন: মেঘের মত, যাকে বাতাস হাঁকিয়ে নিয়ে যায়, সে এক কওমের নিকট আসবে তাদেরকে আহ্বান করবে, ফলে তারা তার ওপর ঈমান আনবে ও তার ডাকে সাড়া দিবে, অতঃপর সে আসমানকে নির্দেশ করবে আসমান বৃষ্টিপাত করবে, যমীনকে নির্দেশ করবে যমীন শস্য জন্মাবে, এবং তাদের জন্তুগুলো সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরবে উঁচু চুটি, দুধে পরিপূর্ণ ও দীর্ঘ দেহ নিয়ে। অতঃপর এক কওমের নিকট আসবে তাদেরকে দাওয়াত দিবে, কিন্তু তারা তার দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করবে, সে তাদের থেকে চলে যাবে ফলে তারা দুর্ভিক্ষে পতিত হবে তাদের হাতে তাদের সম্পদের কিছুই থাকবে না। সে ধ্বংস স্তূপের পাশ দিয়ে যাবে অতঃপর তাকে বলবে: তোমার সম্পদ তুমি বের কর, ফলে তার সম্পদ তার অনুগামী হবে মক্ষী রাণীর ন্যায়, অতঃপর সে পূর্ণ এক যুবককে ডাকবে ও তলোয়ারের আঘাতে দুটুকরো করে ঢিলার দূরত্ব পরিমাণ দুই ধারে নিক্ষেপ করবে, অতঃপর তাকে ডাকবে সে এগিয়ে আসবে ও হাসিতে তার চেহারা উজ্জ্বল থাকবে। দাজ্জাল এরূপ করতে থাকবে, এমতাবস্থায় আল্লাহ মাসিহ ইবনু মারইয়ামকে প্রেরণ করবেন, তিনি দামেস্কের পূর্ব দিকে সাদা মিনারের কাছে অবতরণ করবেন দুটি কাপড় পরিহিত অবস্থায় ফেরেশতাদের ডানার ওপর তার দুহাত রেখে। যখন তিনি মাথা নিচু করবেন (বৃষ্টির ন্যায়) পানি টপকাবে, যখন তিনি মাথা উঁচু করবেন মুক্তোর ন্যায় শ্বেত পাথর পড়বে, (অর্থাৎ পরিষ্কার পানি)। কোন কাফের এর পক্ষে সম্ভব হবে না তার শ্বাসের গন্ধ পাবে আর বেঁচে থাকবে, তার শ্বাস সেখানে যাবে যেখানে তার দৃষ্টি পৌঁছবে। তিনি তাকে সন্ধান করবেন অবশেষে লুদ্দ নামক দরজার নিকট তাকে পাবেন, অতঃপর তাকে হত্যা করবেন।

অতঃপর ঈসা আলাইহিস সালাম এক কওমের নিকট আসবেন, যাদেরকে আল্লাহ দাজ্জাল থেকে নিরাপদ রেখেছেন, তিনি তাদের চেহারায় হাত বুলিয়ে দিবেন এবং জান্নাতে তাদের মর্তবা সম্পর্কে তাদেরকে বলবেন। এমতাবস্থায় আল্লাহ তার নিকট ওহী করবেন, আমি আমার এমন বান্দাদের বের করেছি যাদের সাথে যুদ্ধ করার সাধ্য কারো নেই, অতএব তুমি আমার বান্দাদের নিয়ে তুরে আশ্রয় গ্রহণ কর, আল্লাহ ইয়াজুজ ও মাজুজকে প্রেরণ করবেন, তারা প্রত্যেক উঁচু স্থান থেকে ছুটে আসবে। তাদের প্রথমাংশ পানিতে পূর্ণ (ভরা) নদীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে, তারা তার পানি পান করে ফেলবে। তাদের শেষাংশ অতিক্রম করবে ও বলবে: এখানে কখনো পানি ছিল। আল্লাহর নবী ঈসা ও তার সাথীগণ তুরে আটকা পড়বেন, অবশেষে গরুর একটি মাথা তাদের নিকট বর্তমানে তোমাদের একশো দিনার থেকে উত্তম হবে। অতঃপর আল্লাহর নবী ঈসা ও তার সাথীগণ আল্লাহর নিকট মনোনিবেশ করবেন, ফলে আল্লাহ তাদের (ইয়াজুজ-মাজুজের) গ্রীবায় গুটির রোগ সৃষ্টি করবেন, ফলে তারা সবাই এক ব্যক্তির মৃতের ন্যায় মৃত পড়ে থাকবে। অতঃপর আল্লাহর নবী ঈসা ও তার সাথীগণ যমীনে অবতরণ করবেন, তারা যমীনে এক বিঘত জায়গা পাবে না যেখানে তাদের মৃত দেহ ও লাশ নাই। অতঃপর আল্লাহর নবী ঈসা ও তার সাথীগণ আল্লাহর নিকট দোআ করবেন, ফলে তিনি উটের গর্দানের ন্যায় পাখি প্রেরণ করবেন, তারা এদেরকে বহন করে আল্লাহর যেখানে ইচ্ছা নিক্ষেপ করবে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, কাঁচা-পাকা কোন ঘর অবশিষ্ট থাকবে না যেখানে সে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করবে না, জমিন ধৌত করে অবশেষে আয়নার মত করে দিবে। অতঃপর জমিনকে বলা হবে: তোমার ফল তুমি জন্মাও, তোমার বরকত তুমি ফেরত দাও, ফলে সেদিন এক দল লোক একটি আনার ভক্ষণ করবে এবং তার ছিলকা দ্বারা ছায়া গ্রহণ করবে, দুধে বরকত দেয়া হবে ফলে এক উটের দুধ কয়েক গ্রুপ মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে। এক গরুর দুগ্ধ এক গ্রামের জন্য যথেষ্ট হবে। এক বকরির দুগ্ধ এক পরিবারের জন্য যথেষ্ট হবে। তারা এভাবেই জীবন যাপন করবে, এমতাবস্থায় আল্লাহ পবিত্র বাতাস প্রবাহিত করবেন, যা তাদের বগলের নিচ স্পর্শ করবে, ফলে সে প্রত্যেক মুমিন ও মুসলিমের রূহ কব্জা করবে, তখন কেবল সবচেয়ে খারাপ লোকগুলো অবশিষ্ট থাকবে, তারা গাধার ন্যায় (সবার সামনে) যৌনাচারে লিপ্ত হবে, অতঃপর তাদের ওপরই কিয়ামত কায়েম হবে
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম; সহীহ হাদিসে কুদসি ১৬২)
-       (সহীহ, সহিহাহ ৪৮১; তাখরিজ ফাযায়েলুশ শাম ২৫; সূনানে তিরমিজী ইসঃ ফাঃ ২২৪৩ [আল মাদানী প্রকাঃ ২২৪০])

৬.৬৩.১ ইয়াজুজ-মাজুজ এর পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য

কুরআনে ইয়াজুজ-মাজুজ এর বর্ণনা

إِنَّ يَأْجُوْجَ وَمَأْجُوْجَ مُفْسِدُوْنَ فِي الأَرْضِ (الكهف)

আল্লাহর বাণীঃ নিশ্চয়ই ইয়াজূজ মাজূজ পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টিকারী। (সূরা কাহফ, আঃ ৯৪)

কুরআনে আরো বলা হয়েছে, তারা আপনাকে যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, আমি তোমাদের কাছে তাঁর কিছু অবস্থা বর্ণনা করব। আমি তাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের কার্যোপকরণ দান করেছিলাম। অতঃপর তিনি এক কার্যোপকরণ অবলম্বন করলেন। অবশেষে তিনি যখন সূর্যের অস্তাচলে পৌঁছলেন; তখন তিনি সূর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি বললাম, হে যুলকারনাইন! আপনি তাদের শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদের সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারেন। তিনি বললেন, যে কেউ সীমা লঙ্ঘনকারী হবে আমি তাকে শাস্তি দেবো। অতঃপর তিনি তাঁর পালনকর্তার কাছে ফিরে যাবেন। তিনি তাকে কঠোর শাস্তি দেবেন। এবং যে বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে তার জন্য প্রতিদান রয়েছে কল্যাণ এবং আমার কাজে তাকে সহজ নির্দেশ দেবো। অতঃপর তিনি এক উপায় অবলম্বন করলেন।

অবশেষে তিনি যখন সূর্যের উদয়াচলে পৌঁছলেন, তখন তিনি তাকে এমন এক সম্প্রদায়ের ওপর উদয় হতে দেখলেন, যাদের জন্য সূর্যতাপ থেকে আত্মরক্ষার কোনো আড়াল আমি সৃষ্টি করিনি। প্রকৃত ঘটনা এমনিই। তার বৃত্তান্ত আমি সম্যক অবগত আছি। আবার তিনি এক পথ ধরলেন। অবশেষে যখন তিনি দুই পর্বত প্রাচীরের মধ্যস্থলে পৌঁছলেন, তখন তিনি সেখানে এক জাতিকে পেলেন, যারা তাঁর কথা একেবারেই বুঝতে পারছিল না। তারা বলল, হে যুলকারনাইন, ইয়াজুজ ও মাজুজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। আপনি বললে আমরা আপনার জন্য কিছু কর ধার্য করব এই শর্তে যে, আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন। তিনি বললেন, আমার পালনকর্তা আমাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন, তাই যথেষ্ট। অতএব, তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য করো। আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যে একটি সুদৃঢ় প্রাচীর নির্মাণ করে দেবো। তোমরা আমাকে লোহার পাত এনে দাও। অবশেষে যখন পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান পূর্ণ হয়ে গেল, তখন তিনি বললেন, তোমরা হাঁপরে দম দিতে থাক। অবশেষে যখন তা আগুনে পরিণত হলো, তখন তিনি বললেন, তোমরা গলিত তামা নিয়ে এসো, আমি তা এর ওপর ঢেলে দেই।

অতঃপর ইয়াজুজ ও মাজুজ তার ওপর আরোহণ করতে পারল না এবং তা ভেদ করতেও সক্ষম হলো না। যুলকারনাইন বললেন, এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ। আমার পরওয়ারদিগারের ওয়াদা পূর্ণ হলে তিনি তা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন। আমার পরওয়ারদিগারের ওয়াদা সত্য। (সূরা কাহাফ, আয়াতঃ ৮৪-৯৮)

অন্যত্র এসেছে, এবং সম্ভব নয় আমার ইচ্ছায় বিনাশকৃত জনপদবাসীরা ফিরে আসবে। যতদিন না ইয়াজুজ মাজুজ উন্মুক্ত ও প্রত্যেক উচ্চ ভূমি হতে বহির্গত হবে। খাঁটি শাস্তির ওয়াদা আসন্ন হলেই কাফেরদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে, বলতে থাকবে- হায় দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা এ হতে গাফিল ছিলাম, বরং আমরা ছিলাম জালেম ও সীমালংঘনকারী। (সূরা আম্বিয়া, আয়াতঃ ৯৫-৯৭)

তবে স্বভাবতই মনের কোণে এই জিজ্ঞাসার উদয় হয় যে, এই ইয়াজুজ মাজুজ কারা? এতদ প্রসঙ্গে বিভিন্ন সহীফা এবং প্রামান্য ঐতিহাসিক গ্রন্থে যা কিছু উল্লেখ করা হয়েছে, তার সারকথা এই: (ক) হযরত নূহ (আ:)-এর সময়কার মহাপ্লাবনের পর তার বংশধর তিন ব্যক্তি হতে বিশ্বময় বিস্তৃত হয়েছে। (১) হাম (২) শাম এবং (৩) ইয়াফিস। আরব, আজম ও রোমের পূর্বপুরুষরা ছিলেন শাম-এর বংশধর। ইথিওপিয়া বা হাবশা এবং নাওবা অঞ্চলের পূর্ব পুরুষরা ছিলেন হাম-এর বংশধর। তুর্কি, সাকালিপ এবং ইয়াজুজ-মাজুজের পূর্বপুরুষরা ছিলেন ইয়াফিস-এর বংশধর। (শরহে আকাদায়ে সিফারনিয়্যাহ ২/১ ১৪)।

 

বিক্ষিপ্ত বর্ণনা থেকে সরাসরি পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা

ইয়াজুজ ও মাজুজ বনী আদমের অন্তর্ভুক্ত দুটি জাতি। তারা বর্তমানে বিদ্যমান রয়েছে। ইয়াজুজ-মাজুজ কোনো আজব প্রাণী নয়। বরং তারাও আদম সন্তান। হযরত নুহ (আ.)-এর পুত্র ইয়াফেসের বংশধর। (মুসনাদে আহমাদ ৫/১১)

ইয়াজুজ ও মাজুজ হলো দুইটি গোত্রের নাম। যারা উপজাতির মতই। ঐ যুগে মানুষ যতটা উন্নত ও সভ্য জগতে অগ্রসর হচ্ছিল, অন্যদিকে ইয়াজুজ-মাজুজ সম্প্রদায় ততটাই মূর্খ ও আদিম স্বভাবের ছিলো।

তারা তীর ধনুকে অত্যান্ত পারদর্শী ছিলো। যা তাদের সম্প্রদায়ের নাম-ডাক বৃদ্ধি করতো এবং বাকিরা ভয়ও করতো তাদের। তারা আল্লাহর দ্বীনকে প্রকাশ্য প্রত্যাখ্যান করে কুসংস্কারাচ্ছন্ন শয়তান পুজারী ছিলো এবং নগরীসমুহে আক্রমণ করে তাদের সবকিছু লুন্ঠন করতো ও সবাইকে হত্যা করতো। তারা এমন একটি অঞ্চলে (জঙ্গলে) বসবাস করতো যে, সেখান থেকে নগরীর দিকে প্রবেশের জন্য দুইটি বৃহৎ পর্বতের গিরিপথ দিয়েই কেবল মাত্র আসা সম্ভব ছিলো।

যখন জুলকারনাইন বিশ্ব শাসন করতেন তখন তিনি বিশ্ব ভ্রমনে বের হন। ঘটনাক্রমে তিনি ঐ সম্প্রদায়ের সামনে উপস্থিত হয়। এবং উক্ত অঞ্চলের যে সকল রাজা ছিলো এবং জনগণ ছিলো তারা বাদশা জুলকারনাইনকে ইয়াজুজ-মাজুজদের সকল কথা বললো এবং সাহায্যের জন্য বললো। আল্লাহ তাআলা জুলকারনাইনের ঘটনায় বলেন,

﴿حَتَّىٰٓ إِذَا بَلَغَ بَيۡنَ ٱلسَّدَّيۡنِ وَجَدَ مِن دُونِهِمَا قَوۡمٗا لَّا يَكَادُونَ يَفۡقَهُونَ قَوۡلٗا ٩٣ قَالُواْ يَٰذَا ٱلۡقَرۡنَيۡنِ إِنَّ يَأۡجُوجَ وَمَأۡجُوجَ مُفۡسِدُونَ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَهَلۡ نَجۡعَلُ لَكَ خَرۡجًا عَلَىٰٓ أَن تَجۡعَلَ بَيۡنَنَا وَبَيۡنَهُمۡ سَدّٗا ٩٤ قَالَ مَا مَكَّنِّي فِيهِ رَبِّي خَيۡرٞ فَأَعِينُونِي بِقُوَّةٍ أَجۡعَلۡ بَيۡنَكُمۡ وَبَيۡنَهُمۡ رَدۡمًا ٩٥ ءَاتُونِي زُبَرَ ٱلۡحَدِيدِۖ حَتَّىٰٓ إِذَا سَاوَىٰ بَيۡنَ ٱلصَّدَفَيۡنِ قَالَ ٱنفُخُواْۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَعَلَهُۥ نَارٗا قَالَ ءَاتُونِيٓ أُفۡرِغۡ عَلَيۡهِ قِطۡرٗا ٩٦ فَمَا ٱسۡطَٰعُوٓاْ أَن يَظۡهَرُوهُ وَمَا ٱسۡتَطَٰعُواْ لَهُۥ نَقۡبٗا ٩٧ قَالَ هَٰذَا رَحۡمَةٞ مِّن رَّبِّيۖ فَإِذَا جَآءَ وَعۡدُ رَبِّي جَعَلَهُۥ دَكَّآءَۖ وَكَانَ وَعۡدُ رَبِّي حَقّٗا ٩٨﴾ [الكهف: ٩٣- ٩٨]

অবশেষে যখন তিনি দুই পর্বত প্রাচীরের মধ্যস্থলে পৌঁছলেন, তখন তিনি সেখানে এক জাতিকে পেলেন, যারা তাঁর কথা একেবারেই বুঝতে পারছিল না। তারা বলল, হে জুলকারনাইন, ইয়াজুজ ও মাজুজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে। আপনি বললে আমরা আপনার জন্য কিছু কর ধার্য করব এ শর্তে যে, আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে একটি প্রচীর নির্মাণ করে দিবেন। তিনি বললেন, আমার রব আমাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন, তাই যথেষ্ট। অতএব, তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য কর। আমি তোমাদের ও তাদের মাঝে একটি সুদৃঢ় প্রাচীর নির্মাণ করে দিব। তোমরা আমাকে লোহার পাত এনে দাও। অবশেষে যখন পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান পূর্ণ হয়ে গেল, তখন তিনি বললেন, তোমরা হাঁপরে ফুঁক দিতে থাক। অবশেষে যখন তা আগুনে পরিণত হলো, তখন তিনি বললেন, তোমরা গলিত তামা নিয়ে আস। আমি তা এর উপর ঢেলে দেই। অতঃপর ইয়াজুজ ও মাজুজের দল তার উপরে আরোহণ করতে পারল না এবং তা ভেদ করতেও সক্ষম হলো না। জুলকারনাইন বললেন, এটা আমার রবের অনুগ্রহ। যখন আমার রবের প্রতিশ্রুত সময় আসবে, তখন তিনি একে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন এবং আমার রবের প্রতিশ্রুতি সত্য। [সূরা কাহাফ, আয়াত: ৯৩-৯৮]

এর ফলে ইয়াজুজ-মাজুজ আর নগরী বা বহির্বিশ্বে আসতে পারলো না এবং ঐ জঙ্গলেই উপজাতি হিসেবে রয়ে গেলো। এরপর রসূল এর জামানায় কিছুটা দেওয়াল ছিদ্র করে এবং এরপর তারা কি করেছে জানা নেই।

তবে হযরত ঈসা (আঃ) এর জামানায় তাদের সংখ্যা হবে সর্বাধিক। এবং আল্লাহ হযরত দাউদের (আঃ) সময় শনিবারের আইন না মানার জন্য যেমন একদলকে বানর বানিয়ে দিয়েছিলো, তদরুপ ইয়াজুজ-মাজুজদের আকৃতি বিকৃতি করে দিবেন। ফলে তারা কেউ লেজ, ক্যাঙ্গারুর মত পা, বৃহৎ পা, বৃহৎ কান, এ জাতীয় রুপ পাবে।

নবী বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ হে আদম, সে বলবেঃ সদা উপস্থিত এবং তোমার সন্তুষ্টির জন্য প্রচেষ্টার পর প্রচেষ্টা, কল্যাণ কেবল তোমার হাতেই। তিনি বলবেনঃ জাহান্নামী দল বের কর। তিনি বলবেনঃ জাহান্নামী দল কোনটি? তিনি বলবেনঃ প্রত্যেক হাজার থেকে নয়শত নিরানব্বই জন, তখনই ছোটরা বার্ধক্যে উপনীত হবে। সকল গর্ভবতী তার গর্ভ পাত করবে, তুমি দেখবে মানুষরা মাতাল, অথচ তাদের সাথে মাতলামি নেই, কিন্তু আল্লাহর শাস্তি খুব কঠিন। তারা বললঃ হে আল্লাহর রসূল আমাদের থেকে সে একজন কে? তিনি বললেনঃ সুসংবাদ গ্রহণ কর, তোমাদের থেকে একজন ও ইয়াজুজ-মাজুজ থেকে এক হাজার। অতঃপর তিনি বলেনঃ যার হাতে আমার নফস তার কসম করে বলছিঃ আমি আশা করি তোমরা জান্নাতিদের এক চতুর্থাংশ হবে। আমরা তাকবীর বলে উঠলাম। তিনি বললেনঃ আমি আশা করছি তোমরা জান্নাতের এক তৃতীয়াংশ হবে। আমরা তাকবীর বললাম। তিনি বললেনঃ আমি আশা করছি তোমরা জান্নাতের অর্ধেক হবে। আমরা তাকবীর বললাম। তিনি বললেনঃ মানুষের ভিতরে তোমরা সাদা ষাঁড়ের গায়ে একটি কালো চুলের ন্যায়, অথবা কালো ষাঁড়ের গায়ের একটি সাদা চুলের ন্যায়। [বুখারী, মুসলিম ও নাসাঈ]
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) | অধ্যায়ঃ ৫০ | হাদিস নাম্বার: ৩১১১; সহীহ হাদিসে কুদসিঃ ৭০)

যায়নাব বিনতে জাহাশ (রা:) থেকে বর্ণিতঃ একবার নাবী ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় তাঁর নিকট আসলেন এবং বলতে লাগলেন, লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আরবের লোকেদের জন্য সেই অনিষ্টের কারণে ধ্বংস অনিবার্য বা নিকটবর্তী হয়েছে। আজ ইয়াজুজ ও মাজুজের প্রাচীর এ পরিমাণ খুলে গেছে। এ কথার বলার সময় তিনি তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলির অগ্রভাগকে তার সঙ্গের শাহাদাত আঙ্গুলির অগ্রভাগের সঙ্গে মিলিয়ে গোলাকার করে ছিদ্রের পরিমাণ দেখান। যায়নাব বিনতে জাহশ (রা:) বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল ! আমাদের মধ্যে পুণ্যবান লোকজন থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাব? তিনি বললেন, হাঁ যখন পাপকাজ অতি মাত্রায় বেড়ে যাবে।
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী ৩৩৪৬, ৩৫৯৮, ৭০৫৯, ৭১৩৫ [আঃ প্রঃ ৩০৯৮; ইসঃ ফাঃ ৩১০৬]; সহীহুল মুসলিম ২৮৮০ [হাদিস একাডেমি ৭১২৭]; মুসনাদে আহমাদ ২৬৮৬৭, ২৬৮৭০; সহীহাহ ৯৮৭; আল লু'লু ওয়াল মারজান ১৮২৯)
-       (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত/আল মাদানী প্রকাঃ) ২১৮৭ [ইঃ ফাঃ ২১৯০]; ইবনু মাজাহ সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ৩/৩৯৫৩; আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৬৪২)

মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, নাবী বলেন, ইয়াজুজ ও মাজুজের প্রাচীরে আল্লাহ এ পরিমাণ ছিদ্র করে দিয়েছেন। এই বলে, তিনি তাঁর হাতে নব্বই সংখ্যার আকৃতি ধারণ করে দেখালেন। (অর্থাৎ তিনি নিজ শাহাদাত আঙ্গুলীর মাথা বৃদ্ধাংগুলের গোড়ায় লাগিয়ে ছিদ্রের পরিমাণ দেখালেন।)
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী ৩৩৪৭, ৭১৩৬ [আঃ প্রঃ ৩০৯৯; ইসঃ ফাঃ ৩১০৭]; সহীহুল মুসলিম ৫২/১ হাঃ ২৮৮১; আহমাদ ৮৫০৯; আল লু'লু ওয়াল মারজান ১৮৩০)

কাব (রহ:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন ইয়াজুজ মাজুজের বের হওয়ার সময় হবে, তখন তারা এতটুকু পরিমাণ খনন করবে যে, তারা তাদের নিকটবর্তী লোকদের কুঠারের আঘাতের আওয়াজ শুনতে পাবে। অতঃপর যখন রাত আসে, তখন তারা বলে, আমরা আগামীকাল খুলবো এবং বাহির হবো। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেন। অতঃপর তারা (পুনরায়) এতটুকু পরিমাণ খনন করবে যে, তারা তাদের নিকটবর্তী লোকদের কুঠারের আঘাতের আওয়াজ শুনতে পাবে। অতঃপর যখন রাত আসে, তখন তারা বলে, আমরা আগামীকাল খুলবো এবং বাহির হবো। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা ওটা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেন। তারা (পুনরায়) এতটুকু পরিমাণ খনন করবে যে, তারা তাদের নিকটবর্তী লোকদের কুঠারের আঘাতের আওয়াজ শুনতে পাবে। অতঃপর যখন রাত আসে, তখন তৃতীয়বারে তাদের একজনের যবানে আল্লাহ তায়ালা দান করবেন, যার ফলে সে বলবে, যদি আল্লাহ তায়ালা চান, তাহলে আগামীকাল আমরা বের হবো। পরবর্তী দিন তারা খনন করবে, তখন তারা হয়ে আসবে। অতঃপর তাদের প্রথম দল তাবরিয়ার জলাশয়ের পাশ দিয়ে অতিক্রম আগের দিন যেমন রেখেছিল তেমনি পাবে। অতঃপর তারা খনন করবে এবং বের করবে এবং তার পানি পান করে ফেলবে। তাদের দ্বিতীয়দল তার মাটি চাটবে। অতঃপর তাদের তৃতীয়দল বলবে, এখানে একবার পানি ছিল। মানুষ তাদের থেকে পলায়ন করবে। তাদের জন্য কেউ দাঁড়াবে না। তিনি বলেন, অতঃপর তারা তাদের তীরন্দাজ দিয়ে আকাশে তীর নিক্ষেপ করবে। অতঃপর উক্ত তীরগুলো রক্তমাখা অবস্থায় ফিরে আসবে। তখন তারা বলবে, আমরা দুনিয়াবাসী ও আকাশবাসীদের হত্যা করেছি। অতঃপর ঈসা ইবনু মারিয়াম আলাইহিস সালাম তাদের জন্য বদদুআ করে বলবেন, হে আল্লাহ! তাদের সঙ্গে (যুদ্ধ করার) শক্তি ও সামর্থ আমাদের নেই। আপনি যেভাবে চান, তাদের ব্যাপারে আমাদের জন্য যথেষ্ঠ হোন। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর পোকা চাপিয়ে দিবেন। যাকে নাগাফ বলা হয়। তা তাদের ঘাড় ছিঁড়ে খাবে। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা পাখি প্রেরণ করবেন, যা তাদেরকে তাদের ঠোঁট দিয়ে ধরে নিয়ে সমুদ্রে নিক্ষেপ করবে। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা ঝর্ণা (প্রচুর বৃষ্টি) প্রেরণ করবেন, যা পৃথিবী ও পৃথিবীর উদ্ভিদকে পবিত্র করবে। অবশেষে একটি আনার হতে 'সাকান' পরিতৃপ্ত হবে। কাব রাহিমাহুল্লাহ বলেন, সাকান হল- ঘরওয়ালারা।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৬৩৯)

আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়াজুজ মাজুজের পুরুষরা এক হাজার বা তার থেকে বেশি সন্তান-সন্ততি রেখে মারা যায়। ওয়াকি এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি তার সনদে আমর ইবনু মাইমুনের কথা উল্লেখ করেননি।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৬৪১)

হাসসান ইবনু আতিয়া (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি ইয়াজুজ মাজুজ দুটি জাতি হবে। প্রত্যেক জাতিতে একলাখ জাতি। যা অন্য জাতির সঙ্গে সাদৃশ্য নয়। সন্তান-সন্ততির একশত চোখ না দেখা পর্যন্ত কোন লোক মারা যায় না। অর্থাৎ একশত সন্তান।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৬৪৭)

ইবনু মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়াজুজ মাজুজ হতে প্রত্যেক ব্যক্তি একহাজার সন্তান-সন্ততি বা তার থেকে বেশি রেখে মারা যাবে।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৬৪৯)

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়াজুজ মাজুজের প্রথমজনেরা দজলা নদীর মতো নদীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে। অতঃপর তাদের শেষদলও সেখান দিয়ে অতিক্রম করবে আর বলবে, এখানে একসময় পানি ছিল। তাদের কোন পুরুষ একহাজার বা তার থেকে বেশি সন্তান-সন্ততি রাখা ব্যতীত মৃত্যুবরণ করে না। তাদের পরে তিনটি জাতি। তাদের সংখ্যা আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত আর কেউ জানে না। (তিনটি জাতি হল)- তাওয়িল, তারিস এবং নাসিক অথবা নাসাক। সনদে শুবা হতে সন্দেহ রয়েছে।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৬৫৪)

 

তারা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে ও মুসলিমরা তুর পর্বতে আশ্রয় নিবে

মুহাম্মাদ ইবন বাশশার প্রমুখ (রহঃ) ...... আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। (যুলকারনায়ন নির্মিত) প্রাচীর সম্পর্কে নাবী বলেছেনঃ এটিকে এরা (ইয়াজুজ মাজুজেরা) প্রতি দিনই খোঁড়ে। শেষে যখন বিদীর্ণ করে ফেলার উপক্রম হয় তখন তাদের উপর দায়িত্বশীল ব্যক্তিটি বলেঃ তোমরা ফিরে চল। আগামীকাল এসে আমরা এটা বিদীর্ণ করব। রসূলুল্লাহ্ বলেন, এর মধ্যে এই প্রাচীরটিকে আল্লাহ্ তাআলা আগে যা ছিল তার চেয়েও উত্তমরূপে পুনর্নির্মিত করে দেন। অবশেষে যখন নির্ধারিত দিন এসে পৌঁছবে এবং আল্লাহ্ তাআলা এদের মানুষের বিরুদ্ধে পাঠানোর ইচ্ছা করবেন; সে সময় তাদের দায়িত্বে নিযুক্ত নেতাটি বলবে, তোমরা ফিরে চল, তোমরা আগামীকাল ইনশাআল্লাহ্ এটি বিদীর্ণ করবে। সেই ইনশাআল্লাহর সঙ্গে তারা কথা বলবে। পরে তারা যখন ফিরে আসবে তখন গতদিন যেভাবে ছেড়ে রেখে গিয়েছিল সেই অবস্থায়ই তারা এটি পাবে। তখন তারা এটি বিদীর্ণ করে ফেলবে এবং মানুষের বিরুদ্ধে বেরিয়ে পড়বে। তারা সব পানি পান করে ফেলবে। আর লোকজন তাদের থেকে পালিয়ে যাবে। এরপর তারা তাদের তীরগুলো আসমানের দিকে ছুঁড়বে। এগুলো রক্ত রঞ্জিত হয়ে ফিরে আসবে। তারা নিজেরা বর্বরতা ও অহংকারে মদমত্ত হয়ে বলবে, পৃথিবীতে যা আছে তাদের পরাজিত করলাম এবং আকাশবাসীদের উপরও জয়লাভ করলাম। তখন আল্লাহ্ তাআলা তাদের পিঠে একদল (জীবাণু) প্রেরণ করবেন। এতে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে।

কসম সেই সত্তার যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, এদের গোশত ভক্ষণ করে পৃথিবীর জীবজন্তুগুলো মোটা, সতেজ ও চর্বিময় হয়ে উঠবে।
-       (সহীহ, সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ৪০৮০; সুনান তিরমিজী ইঃ ফাঃ ৩১৫৩ [আল মাদানী প্রকাঃ ৩১৫৩]; সহীহাহ ১৭৩৫৮)

হজরত ঈসা (আঃ) দাজ্জালকে হত্যা করার পর পৃথিবীতে যখন মোটামুটি স্বস্তি ফিরে আসবে ঠিক তখন আল্লাহ তায়ালা ঈসাকে (আ.) বলবেন, এখন আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে এমন লোকদের বের করব, যাদের মোকাবেলা করার শক্তি কারও নেই। তাই আপনি মুসলমানদের সমবেত করে তূর পর্বতে আশ্রয় গ্রহণ করুন। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা ইয়াজুজ-মাজুজের রাস্তা খুলে দেবেন। তাদের দ্রুত চলার কারণে মনে হবে, যেন ওপরের দিক থেকে বড় পাথর পিছলে নিচে গড়িয়ে পড়ছে।
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম, হাঃ একাঃ ৭২৬৩-(১১০/২৯৩৭) [আন্তঃ নাম্বারঃ ২৯৩৭])

জুবাইর ইবনু নুফাইর (রা:) রসূল থেকে বর্ণনা করে বলেন, ইয়াজুজ মাজুজ হতে বাঁচতে মুসলমানদের দূর্গ হবে তুর পাহাড়।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৬৩৮)

আবু যাহেরা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়াজুজ মাজুজ মানুষদের তুর পাহাড়ে অবরুদ্ধ করে রাখবে। এমনকি তাদের কাছে ষাঁড়ের মাথার মূল্য একশত দিনার থেকেও উত্তম হবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৬৪৪)

 

 

৬.৬৩.২ আবারো দুই তৃতীয়াংশ মানুষ হত্যা

এরপর তারা বেরিয়ে আসবে ও সে সময়ের জীবিত থাকা মানুষদের থেকে ৩ ভাগের ২ ভাগ মানুষকে হত্যা করবে। তাদের সাথে কেউ লড়াই করতে পারবে না। তখন ঈসা (আঃ) ও তার অনুসারীরা (মুসলিমরা) তূর পর্বতে আশ্রয় নিয়ে নিরাপদে থাকবে।

অবস্থা এমন হবে যে, এই বর্বর জাতি মনে করবে যে পৃথিবীর সকল মানুষকে হত্যা করে ফেলেছে। এরপরই তারা আকাশবাসীকেও হত্যা করতে চাইবে। একপর্যায়ে তারা মানুষদের হত্যা করে আসমানে তীর ছুড়বে, আল্লাহ বা প্রভুকে হত্যা করতে। আল্লাহ তাদের তীরের মাথায় রক্ত সহ ফেরত দিবে যেমনটি হাদিসে এসেছে। ফলে তারা আসমানবাসীদেরকে হত্যার আনন্দ অনুভব করবে। হাদিসে এসেছে-

...অতঃপর, সেই বছর শেষেই মানুষ দুইটি সম্প্রদায়কে দেখতে পাবে। যারা তীর চালনাতে পারদর্শী থাকবে এবং পৃথিবীর তিন ভাগের দুই ভাগ মানুষকেই হত্যা করবে। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের ঘাড়ের ওপর আজাব নামবে, যাতে তাদের সকলেরই মৃত্যু ঘটবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, তারা কোন দুটি সম্প্রদায়? তিনি বললেন, ইয়াজুজ ও মাজুজ।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদউস ১৮০৩; আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ২৯০)

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা:) বলেন, রসূল বলেছেন, হে আমার উম্মত! তোমরা সাবধান হও। ইয়াজুজ-মাজুজের প্রাচীর ভেদ এর সময় হয়ে গেছে। খুব শিগগিরই তারা তোমাদের পাকড়াও করবে। তখন তোমরা মরিয়ম পুত্র ঈসা (আঃ) এর আনুগত্য করবে।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৮৩)

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূল বলেন, 'ইয়াজুজ-মাজুজ প্রাচীর ভেদ করে পৃথিবীর মানুষের ভেতর বের হয়ে আসবে। আল্লাহ যেমন বলেছেন, উঁচু ভূমি থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে নামবে। সমগ্র ভূপৃষ্ঠে তারা ভীতি ও ত্রাস ছড়িয়ে দেবে। তাদের থেকে আত্মরক্ষার জন্য মুসলমানরা গবাদি পশু সঙ্গে করে যার যার শহরে ও দুর্গে আশ্রয় নেবে। ইয়াজুজ-মাজুজ ভূপৃষ্ঠের পানি খেয়ে ফেলবে। তাদের প্রথম দল নদীর পানি এই পরিমাণ নিঃশেষ করবে যে, তা শুকিয়ে যাবে। তাদের পরবর্তী দল সে স্থান অতিক্রম করার সময় বলাবলি করবে, এখানে তো কোনো কালে পানি ছিল না!'
-       (মুসনাদে আহমাদ ১১৭৩১; কানজুল উম্মাল ৩৮৬৪৫)

ইয়াজুজ-মাজুজ তাবরিয়া উপসাগর অতিক্রম করে পৃথিবীতে সাধারণ মানুষদের খুন করতে থাকবে। অতঃপর বাইতুল মোকাদ্দাসের নিকটবর্তী পাহাড় জাবালুল খামারে আরোহণ করে ঘোষণা করবে আমরা পৃথিবীর অধিবাসীকে হত্যা করেছি। এখন আকাশের অধিবাসীদের খতম করার পালা। তখন তারা আকাশের দিকে তীর নিক্ষেপ করবে। আল্লাহর আদেশে সেসব তীর রক্তরঞ্জিত হয়ে তাদের কাছে ফিরে আসবে। তারা এই ভেবে আনন্দিত হবে যে, আকাশের অধিবাসীরাও শেষ হয়ে গেছে।
-       (সহীহ, ছহীহ মুসলিম, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৩৭)

এখন একটি প্রশ্ন থেকেই যায় সবার মনে যে, ঈসা (আঃ) এর জামানাতে ইয়াজুজ-মাজুজের আবির্ভাব হবে তাহলে তাদের সাথে ঈসা (আঃ) মুসলিমদেরকে নিয়ে যুদ্ধ করবে না কেন? উল্টা তারা সকলে তুর পাহাড়ে আশ্রয় নিবে যুদ্ধ না করে! এর কারণ হিসেবে দুটি বিষয় উল্লেখ করা যায়, একটি হচ্ছে হাদিসের ভবিষ্যৎবাণী যাতে বলা হয়েছে দাজ্জাল ও তার বাহিনীর সাথে যুদ্ধই হচ্ছে মুসলিমদের সর্বশেষ যুদ্ধ এবং আরেকটি বিষয় হচ্ছে ইয়াজুজ-মাজুজ এমন সম্প্রদায় তার সাথে যুদ্ধ করে মানুষ জাতি পারবে না এবং এটি আল্লাহই বলে দিয়েছেন। এই দুটি কারনের ব্যাপারে হাদিসে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে।

হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা:) হতে বর্ণিত, রসূলে পাক বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে সর্বদা একটি দল থাকবে যারা হকের পক্ষে যুদ্ধ করবে, তারা দুশমনদের উপর বিজয় থাকবে, তাদের সর্বশেষ দলটি দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। (অর্থাৎ, দাজ্জালের সাথে যুদ্ধের পর আর যুদ্ধ নেই)
-       (সহীহুল মুসলিম ২৯২, ৪৭১৭; সুনান আবু দাউদ ২৪৮৪; আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৫১, ১১৬৭; মুসনাদে আহমদ ১৯৮৯৫; মুসতাদরাকে হাকিম ৩/৪৫০)

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মানুষের মাঝে পাঁচটি যুদ্ধ হবে। দুটি যুদ্ধ অতিবাহিত হয়ে গেছে। আর তিনটি এই উম্মতের মধ্যে ঘটবে। আর তা হল তুর্কিদের যুদ্ধ, রোমের যুদ্ধ আর দাজ্জালের যুদ্ধ। আর দাজ্জালের সাথে যুদ্ধের পর আর কোনো যুদ্ধ নেই।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৯১৮; আস-সুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, ইমাম আদ-দানী ১/৯২৭ হাঃ ৪৮৬; কিতাবুল আমালী, ইবনুল হুসাঈন ২/২৯৬)

...রসূলুল্লাহ বলেনঃ যাকেই তাঁর শ্বাস প্রশ্বাস স্পর্শ করবে সেই মারা যাবে। চক্ষু দৃষ্টি যেখানে গিয়ে শেষ হবে সেখানে পর্যন্ত তাঁর নিঃশ্বাসের বাতাস পৌছবে। তিনি দাজ্জালকে তালাশ করবেন এবং লুদ (বায়তুল মুকাদ্দাসের নিকটবর্তী একটি শহর)-এর নগর দরওয়াজার কাছে তাকে পাবেন। তারপর একে তিনি হত্যা করবেন।

আল্লাহ যতদিন চান তিনি এভাবে বসবাস করবেন। পরবর্তীতে আল্লাহ তাআলা তাকে ওয়াহী পাঠাবেনঃ আমার বান্দাদেরকে তুর পাহাড়ে সরিয়ে নাও। আমি আমার এমন একদল বান্দা নামাচ্ছি যাদের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা কারো নেই। এরপর আল্লাহ তাআলা ইয়াজুজ-মাজুজের দল পাঠাবেন। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার বিবরণ মত প্রতি উচ্চ ভূমি থেকে তারা ছুটে আসবে।... (সংক্ষিপ্ত)
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২৬৩-(১১০/২৯৩৭) [ইঃ ফাঃ ৭১০৬, ইঃ সেঃ ৭১৬০]; সুনান তিরমিজী ইঃ ফাঃ ২২৪৩ [আল মাদানী প্রকাঃ ২২৪০]; মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৭৫; আবূ দাউদ ৪৩২১; ইবনু মাজাহ ৪০৭৫; মুসনাদে আবদ ইবনু হুমায়দ ৩৬৫; আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ১০৭৮৩; আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৯৮৮৪; সহিহাহ ৪৮১; তাখরিজ ফাযায়েলুশশাম ২৫;)

আলী ইবনু হুজর আস্ সাদী (রহঃ) ..... আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ ইবনু জাবির (রা:) থেকে এ সূত্রে অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এতে "এখানেও এক সময় পানি ছিল" এ কথার পর বর্ধিত এ কথাও উল্লেখ রয়েছে যে, এরপর তারা অগ্রসর হতে থাকবে। পরিশেষে যেতে যেতে তারা জাবালে খামার নামক স্থানে গিয়ে পৌছবে। এ হলো, বাইতুল মুকাদ্দাসের একটি পর্বত। এখানে পৌছে তারা বলবে, আমরা তো পৃথিবী বাসীদেরকে নিঃশেষ করে দিয়েছি। এসো, আকাশমণ্ডলীর সত্তাকেও নিঃশেষ করে দেই। এ বলেই তারা আকাশের পানে তীর ছুঁড়তে থাকবে। আল্লাহ তাআলা তীর রক্তে রঞ্জিত করে তাদের প্রতি আবার ফিরিয়ে দিবেন। বর্ণনাকারী ইবনু হুজুরের বর্ণনায় এ কথাও বর্ধিত আছে যে, আল্লাহ বলবেন, আমি আমার এমন বান্দাদের আবির্ভাব ঘটিয়েছি, যাদের সঙ্গে যুদ্ধ করার শক্তি কারো নেই।
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২৬৪ [ইঃ ফাঃ ৭১০৭, ইঃ সেঃ ৭১৬১])

৬.৬৩.৩ ইয়াজুজ-মা’জুজ এর ধ্বংস

সে বছরই ঐ জাতিকে আল্লাহ তায়ালা ভয়ংকর ফোঁড়া দিবেন ঘাড়ের উপর। তখন রগ বা শ্বাসনালী নষ্ট হয়ে সমূলে মারা যাবে। এরপর তাদের দেহগুলো আসমান থেকে ঝাকে ঝাকে শকুন জাতীয় পাখি এসে নিয়ে যাবে। আর ৪০ দিন বৃষ্টি হয়ে তাদের সৃষ্ট দুর্গন্ধ দূর করবে ও সবকিছু পরিচ্ছন্ন হবে। এরপর পৃথিবী সুস্থ হবে। আর তাদের সকলের হাজার হাজার তীর-ধনুক তখন জ্বালানি হবে। কিছু বর্ণনায় আছে যে তা অনেক বছর ধরে জ্বালানী ব্যবহার করা যাবে।

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রা:) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ বলেনঃ ইয়াজূজ-মাজূজকে ছেড়ে দেয়া হবে, অতঃপর তারা বের হবে, যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ তারা প্রত্যেক উচ্চভূমি থেকে ছুটে আসবে (সূরা আম্বিয়া, আঃ ৯৬) এবং তারা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। মুসলিমগণ তাদের থেকে পৃথক হয়ে যাবে এবং অবশিষ্ট মুসলিমরা তাদের শহরে ও দূর্গে আশ্রয় নিবে। সেখানে তারা তাদের গবাদি পশুও সাথে করে নিয়ে যাবে। ইয়াজূজ ও মাজূজের অবস্থা এই হবে যে, তাদের লোকগুলো একটি নহরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে এবং তার পানি পান করে নিঃশেষ করে ফেলবে, এক ফোঁটা পানিও অবশিষ্ট থাকবে না। এরপর এদের দলের অবশিষ্টরা তাদের অনুসরণ করবে। তখন তাদের মধ্যে কেউ বলবে, এখানে হয়তো কখনো পানি ছিলো। পৃথিবীতে তারা আধিপত্য বিস্তার করবে। অতঃপর তাদের কেউ বলবে, আমরা তো পৃথিবীবাসীদের থেকে অবসর হয়েছি। এবার আমরা আসমানবাসীদের বিরুদ্ধে লড়বো। শেষে এদের কেউ আকাশের দিকে বর্শা নিক্ষেপ করবে। তা রক্তে রঞ্জিত হয়ে ফিরে আসবে। তখন তারা বলবে, আমরা আসমানবাসীদেরও হত্যা করেছি। তাদের এ অবস্থায় থাকতে আল্লাহ তাআলা টিড্ডি বাহিনী পাঠাবেন এবং সেগুলো ঘাড়ে প্রবেশ করার ফলে এরা সকলে ধ্বংস হয়ে একে অপরের উপর পড়ে মরে থাকবে। মুসলিমগণ সকালবেলা উঠে তাদের বীভৎস চিৎকার শুনতে না পেয়ে বলবে, এমন কে আছে যে তার নিজের জীবনকে বিক্রয় করবে এবং ইয়াজূজ-মাজূজেরা কী করছে তা দেখে আসবে? তখন তাদের মধ্যকার এক ব্যক্তি ইয়াজূজ-মাজূজ কর্তৃক নিহত হওয়ার পূর্ণ ঝুঁকি নিয়ে বের হয়ে এসে এদেরকে মৃত অবস্থায় দেখতে পেয়ে মুসলিমদের ডেকে বলবে, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো, তোমাদের শত্রুরা ধ্বংস হয়েছে। লোকজন (তার ডাক শুনে) বের হয়ে আসবে এবং তাদের গবাদি পশু চারণভূমিতে ছেড়ে দিবে। সেগুলোর চারণভূমিতে ইয়াজূজ-মাজূজের গোশত ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। ওরা তাদের গোশত খেয়ে বেশ মোটাতাজা হবে, যেমন কখনো ঘাস-পাতা খেয়ে মোটা তাজা হয়।
-       (হাসান, সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ৪০৭৯; মুসনাদে আহমাদ ১১৩২৩; সহীহাহ ১৭৯৩)

নাওয়াস ইব্‌ন সামআন থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহ ইয়াজুজ ও মাজুজকে প্রেরণ করবেন, তারা প্রত্যেক উঁচু স্থান থেকে ছুটে আসবে। তাদের প্রথমাংশ পানিতে পূর্ণ নদীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে, তারা তার পানি পান করে ফেলবে। তাদের শেষাংশ অতিক্রম করবে ও বলবেঃ এখানে কখনো পানি ছিল। আল্লাহর নবী ঈসা ও তার সাথীগণ তুরে (পাহাড়ে) আটকা পড়বেন, অবশেষে গরুর একটি মাথা তাদের নিকট বর্তমানে তোমাদের একশো দিনার থেকে উত্তম হবে। অতঃপর আল্লাহর নবী ঈসা ও তার সাথীগণ আল্লাহর নিকট মনোনিবেশ করবেন, ফলে আল্লাহ তাদের (ইয়াজুজ-মাজুজের) গ্রীবায় গুটির রোগ সৃষ্টি করবেন, ফলে তারা সবাই এক ব্যক্তির মৃতের ন্যায় মৃত পড়ে থাকবে। অতঃপর আল্লাহর নবী ঈসা ও তার সাথীগণ যমীনে অবতরণ করবেন, তারা যমীনে এক বিঘত জায়গা পাবে না যেখানে তাদের মৃত দেহ ও লাশ নাই। অতঃপর আল্লাহর নবী ঈসা ও তার সাথীগণ আল্লাহর নিকট দোআ করবেন, ফলে তিনি উটের গর্দানের ন্যায় পাখি প্রেরণ করবেন, তারা এদেরকে বহন করে আল্লাহর যেখানে ইচ্ছা নিক্ষেপ করবে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, কাঁচা-পাকা কোন ঘর অবশিষ্ট থাকবে না যেখানে সে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করবে না, জমিন ধৌত করে অবশেষে আয়নার মত করে দিবে। [হাদিস বড় হওয়ায় প্রয়োজনীয় অংশ]
-       (সহীহ মুসলিম; সহীহ হাদিসে কুদসিঃ ১৬২)
-       (সহীহ, সহিহাহ ৪৮১; তাখরিজ ফাযায়েলুশশাম ২৫; সূনান তিরমিজী ইসঃ ফাঃ ২২৪৩; [আল মাদানী প্রকাশনী-২২৪০])

......খাদ্য সংকটের কারণে তখন একটি গরুর মাথার মূল্য ১০০ দিনার স্বর্ণমুদ্রার চেয়েও বেশি হবে। মুসলমানরা কষ্ট লাঘবের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন। আল্লাহ তায়ালা ইয়াজুজ-মাজুজ সম্প্রদায়ের সবার ঘাড়ে এক প্রকার রোগ ছড়িয়ে দেবেন। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই ইয়াজুজ-মাজুজ সম্প্রদায়ের সবাই মারা যাবে। অতঃপর ঈসা (আ.) সঙ্গীদের নিয়ে তুর পর্বত থেকে নিচে নেমে এসে দেখবেন পৃথিবীতে তাদের মৃতদেহ থেকে অর্ধহাত পরিমাণ স্থানও খালি নেই। আর মৃতদেহ পচে অসহ্য দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থা দেখে পুনরায় ঈসা (আ.) ও মুসলমানরা আল্লাহর দরবারে দোয়া করবেন। তখন আল্লাহ বিরাটাকার এক প্রকার পাখি প্রেরণ করবেন, যাদের ঘাড় হবে উটের ঘাড়ের মতো। তারা মৃতদেহগুলো উঠিয়ে যেখানে আল্লাহ ইচ্ছা করবেন, সেখানে ফেলে দেবে। (প্রয়োজনীয় অংশ)
-       (সহীহ, সহিহাহ ৪৮১; তাখরিজ ফাযায়েলুশশাম ২৫; সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২৬৩-(১১০/২৯৩৭) [ইঃ ফাঃ ৭১০৬, ইঃ সেঃ ৭১৬০]; সুনান তিরমিজী ইঃ ফাঃ ২২৪৩ [আল মাদানী প্রকাঃ ২২৪০])

নাওয়াস ইবনে সামআন (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ মুসলিমগণ অচিরেই ইয়াজূজ ও মাজূজের তীর-ধনুক, বর্শাফলক এবং ঢালসমূহ সাত বছর ধরে জ্বালানী কাঠরূপে ভষ্মীভূত করবে।
-       (সহীহ, সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ৬/৪০৭৬; সহীহ মুসলিম ২৯৩৭; তিরমিযী ২২৪০; আবূ দাউদ ৪৩২১; সহীহাহ ১৯৪০; মেশকাত ৫৪৭৫)

আবূ সাঈদ খুদরী (রা:) হতে বর্ণিত। নবী বলেন, মহান আল্লাহ ডাকবেন, হে আদম (আঃ)! তখন তিনি জবাব দিবেন, আমি হাযির, আমি সৌভাগ্যবান এবং সকল কল্যাণ আপনার হতেই। তখন আল্লাহ বলবেন, জাহান্নামীদেরকে বের করে দাও। আদম (আঃ) বলবেন, জাহান্নামী কারা? আল্লাহ বলবেন, প্রতি হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন। এ সময় ছোটরা বুড়ো হয়ে যাবে। প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করে ফেলবে। মানুষকে দেখবে নেশাগ্রস্তের মত যদিও তারা নেশাগ্রস্ত নয়। বস্তুতঃ আল্লাহর শাস্তি কঠিন- (সূরা হাজ্জঃ। আঃ ২)। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের মধ্যে সেই একজন কে? তিনি বললেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর। কেননা তোমাদের মধ্য হতে একজন আর এক হাজারের অবশিষ্ট ইয়াজুজ-মাজুজ হবে। অতঃপর তিনি বললেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম। আমি আশা করি, তোমরা সমস্ত জান্নাতবাসীর এক তৃতীয়াংশ হবে। [আবূ সাঈদ (রা:) বলেন] আমরা এ সংবাদ শুনে আবার আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর দিলাম। তিনি আবার বললেন, আমি আশা করি তোমরা সমস্ত জান্নাতীদের অর্ধেক হবে। এ কথা শুনে আমরা আবারও আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর দিলাম। তিনি বললেন, তোমরা তো অন্যান্য মানুষের তুলনায় এমন, যেমন সাদা ষাঁড়ের দেহে কয়েকটি কালো পশম অথবা কালো ষাঁড়ের শরীরে কয়েকটি সাদা পশম।
-       (সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৩৩৪৮, ৪৭৪১, ৬৫৩০, ৭৪৮৩ [আঃ প্রঃ ৩১০০; ইসঃ ফাঃ ৩১০৮])

যায়েদ ইবনু আসলাম রহিমাহুল্লাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করে বলেন, রসূল বলেছেন, নিশ্চয়ই ইয়াজুজ মাজুজ বের হবে। তাদের প্রথমদল তাবরিয়ার জলাশয় দিয়ে বের হবে। অতঃপর তারা তা পান করে ফেলবে। তাদের শেষের দল যখন সেখানে আসবে, তারা বলবে, মনে হয় এখানে কোনো একসময় পানি ছিল! যখন তারা পৃথিবীতে শক্তিশালী হয়ে উঠবে, তখন তারা বলবে, আমরা পৃথিবীতে শক্তিশালী হয়েছি, সুতরাং আসো, আমরা আসমানবাসীদের সঙ্গে যুদ্ধ করি। তখন সাহাবিগণ প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! মুসলমানগণ কোথায় থাকবে? রসূল উত্তরে বললেন, তারা দূর্গ বানাবে। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা মেঘ প্রেরণ করবেন, যাকে আনান বলা হয়। এরূপ (মেঘের) নামই আল্লাহ তায়ালার নিকটে (আছে)। অতঃপর তারা (উক্ত মেঘ লক্ষ করে) তীর নিক্ষেপ করবে। আর তাদের তীরগুলো রক্তমিশ্রীত অবস্থায় নিচে পড়বে। তারা বলবে, আমরা আল্লাহকে হত্যা করেছি। অথচ আল্লাহ তায়ালাই তাদের হত্যাকারী। তারা যতক্ষণ আল্লাহ তায়ালা চান জীবন যাপন করবে। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা মেঘের কাছে ওহী পাঠাবেন, ফলে মেঘ তাদের উপর উটের নাকের কীটের মতো একপ্রকার কীট বর্ষণ করবে। উক্ত কীটগুলো বের হয়ে তাদের প্রত্যেকের ঘাড়ে ধরবে এবং তাকে হত্যা করে দিবে। তাদের এ অবস্থা যখন হবে, তখন মুসলমানদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি বলবে, আমার জন্য দরজাটা খুলে দাও, আমি বের হয়ে আল্লাহর শত্রুরা কি করেছে তা দেখবো। হয়তো আল্লাহ তায়ালা তাদের ধ্বংস করে দিয়েছেন। অতঃপর সে বের হয়ে তাদের নিকটে এসে তাদেরকে মৃত দাঁড়ানো অবস্থায় পাবে। তারা একে অপরের উপরে থাকবে। অতঃপর সে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করবে এবং তার সাথীদের ডেকে বলবে, আল্লাহ তায়ালা তাদের ধ্বংস করে দিয়েছেন। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা বৃষ্টি প্রেরণ করে তাদের হতে পৃথিবী ধৌত করবেন। তিনি বলেন, অতঃপর মুসলমানগণ তাদের তীর ধনুক দিয়ে এত এত বছর আগুন জ্বালাবে। আর মুসলমানদের জন্তু তাদের মৃতদেহ হতে খাবে। এবং তাদের উপর মোটা তাজা হবে।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৬২৯)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ