৬.২২ সুফিয়ানীর আত্মপ্রকাশ

 অসংখ্য হাদিসে ইমাম মাহদীর আগমনের আগে সুফিয়ানীর আত্মপ্রকাশের কথা বলা হয়েছে। সুফিয়ানীর জন্ম ও আবির্ভাবে আকাশের আলামতের কথাও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হ্যালির ধূমকেতু যা দেখা গিয়েছিল ১৯৮৬ সালে তখনই তার জন্ম হয়েছে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন সব সুপার পাওয়ারগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে তখন আবার বিশ্বে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নেতাদের আবির্ভাব ঘটবে। যেসকল নেতাদের প্রভাব-বিস্তার বেশি হবে সেই সকল নেতাদের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সুফিয়ানী। যে হবে জালিম ও স্বৈরাচারী শাসক। আবার একই সাথে অন্যদিকে আবির্ভাব হবে ইমাম মানসূরের যিনি হবেন সৎ ও নেককার, ইমাম মাহদীর খিলাফত প্রতিষ্ঠার অন্যতম সহযোগী। এছাড়া তার সহচর হারিস ইবনু হাররাস এবং শুয়াইব ইবনে সালেহ। কিন্তু সুফিয়ানী হবে ইসলামের বড় এক শত্রু। মাহদীর সাহায্যকারী দলের সাথে সে যুদ্ধ করবে, এমনকি এক যুদ্ধে ইমাম মানসূর ও শুয়াইব ইবনে সালেহ এর বাহিনীকে হারিয়ে দিবে। তারপরই খুরাসানীদের নেতা ইমাম মাহমুদ এর নেতৃত্বে কালো পতাকা বের হয়ে পশ্চিমের দিকে যাবে সেখানে ইরাকে সুফিয়ানীর সাথে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করবে, সুফিয়ানীর বাহিনীকে ধ্বংস করবে এবং এরপর বাহিনী আরবের দিকে মাহদীর কাছে যাবে।

হযরত জয়নুল আবেদিন (রহঃ) থেকে হাজলাম ইবনে বশির (রহঃ) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি জয়নুল আবেদিন (রহঃ) কে অনুরোধ করলাম, তিনি যেন আমাকে ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের পূর্ব আলামত সম্পর্কে অবহিত করেন? উত্তরে তিনি বললেন, মাহদীর আবির্ভাবের পূর্বে জাজিরায় (ইরাক ও সিরিয়ার বর্ডার) থেকে আউফ সালামী নামে এক ব্যক্তি বের হবে।

তার মাতৃভূমি হবে তিকরিত (Tikrit, Iraq ইরাকের একটি শহর) এবং তার নিহত হওয়ার স্থান হবে দামেস্কের মসজিদ। তারপর সমরখন্দ থেকে শুয়াইব ইবনে সালেহ আবির্ভূত হবে এবং একই সময়ে ওয়াদিউল ইয়াবেস (দক্ষিণ সিরিয়ার দারা শহর) থেকে অভিশপ্ত সুফিয়ানীর উত্থান হবে। আর এই সুফিয়ানী হবে আবু সুফিয়ানের ছেলে উতবার বংশধর। সুফিয়ানীর আবির্ভাবের সময়ে মাহদী লুকায়িত থাকবে এবং কিছুদিন পরেই তার আত্নপ্রকাশ হবে
-       (কিতাবুল গাইবাত, শাইখ তুসী; বিহারুল আনোয়ার, খণ্ড ৫২, পৃষ্ঠাঃ ২১৩; আসরে জুহুরী, পৃষ্ঠাঃ ১৬৯)

হযরত জাফর সাদিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, "সুফিয়ানীর উত্থান অবশ্যই হবে, তিনি রজব মাসে আত্নপ্রকাশ করবেন"।
-   (কিতাবুল গাইবাহ, অধ্যায় নং ১৮, পৃষ্ঠা ৪৪০; বিহারুল আনোয়ার, খণ্ড ৫২, পৃষ্ঠা ২৫; মুজ'আম আল হাদিস ইমাম আল মাহদী, খণ্ড ৩, ৪৬৩)

হযরত ইবনে আব্বাছ (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি একদিন মুআবিয়া (রা:) এর কাছে আসলেন। আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। হযরত মুআবিয়া (রা:) তাকে খুবই সম্মান করলেন। তিনিও সম্মানের প্রতিদান দিয়ে বললেন, হে আবুল আব্বাছ! তোমাদের জন্য কি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থাকবে। জবাবে তিনি বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন আমাকে এ দায়িত্ব থেকে ক্ষমা করুন। তিনি বললেন, আমাকে কি বলা যাবে? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ, সেটা অবশ্য আখেরী জামানায়।

হযরত মুআবিয়া (রা:) বললেন, তোমাদের সাহায্যকারী কারা হবে? ইবনে আব্বাছ (রা:) বললেন, তারা হবে, আহলে খোরাসান। তিনি আরো বলেন, বনু হাশেম এবং বনু উমাইয়া, বনু উমাইয়া এবং বনু হাশেমের মাঝে বিভিন্ন সময় ঝগড়া-ফাসাদ হতে থাকলে সুফিয়ানীর আত্মপ্রকাশ ঘটবে।
-   (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৫৫০)

হযরত আরতাত (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সুফিয়ানীর যুগে যুদ্ধ-বিগ্রহ এত ব্যাপক আকার ধারন করবে, যা দ্বারা প্রত্যেক জাতি মনে করবে তার পার্শ্ববর্তী এলাকা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
-   (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৩২)

হযরত আলী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন কালো ঝান্ডা বাহীরা পরস্পর মতানৈক্যে লিপ্ত হবে তখন আরম জনপদের একাংশ ধ্বসে পড়বে এবং তার পশ্চিম পার্শ্বের মসজিদের এক পাশ ধ্বংস হয়ে যাবে। অতঃপর শাম দেশ থেকে তিন প্রকারের ঝান্ডা আত্নপ্রকাশ করবে। আসহাব, আবকা এবং সুফিয়ানীর ঝান্ডা। সুফিয়ানী বের হবে শাম দেশ থেকে, এক পর্যায়ে সুফিয়ানী সব দলের উপর জয়লাভ করবে।
-   (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৪১)

ইবনুল হানাফিয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সুফিয়ানী আবকাদের উপর জয়লাভ করে মিশরে প্রবেশ করলে মিশর বিরান ভূমিতে পরিনত হয়ে যাবে।

-   (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৫২)

হযরত হোজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন সুফিয়ানী মিশরে প্রবেশ করে সেখানে দীর্ঘ চার মাস পর্যন্ত অবস্থান করে লোকজনকে হত্যা করবে এবং সেখানের বাসিন্দাদেরকে বন্দী করবে, সেদিন অনেক ক্রদন্দনকারী মহিলারা তাদের সম্ভ্রমহানী হওয়ার কারণে কান্নাকাটি করবে, অনেকে তাদের সন্তান হারানোর বেদনায় রোনাজারী করতে থাকবে, অনেকে সম্মানিত হওয়ার পর সম্মানহানী হওয়ার কারণে ক্রন্দন করবে। আবার কেউ কেউ বিলাপ করতে থাকবে, কবরে চলে যাওয়ার আগ্রহ নিয়ে।
-   (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৪৭)

হযরত আবু সাদেক হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, ততক্ষণ পর্যন্ত মাহদী বের হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না সুফিয়ানী তার কাষ্ঠের (লাঠি বা এরকম) উপর না দাঁড়ায়।
-   (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৫৫)

হযরত আবু জা’ফর (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন অন্ধকারে ছেয়ে না যাওয়া পর্যন্ত সুফিয়ানী বের হবে না। *

-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৫৬)

-       * এই অন্ধকার হওয়ার বা অন্ধকারে ছেয়ে যাওয়া সম্ভব একমাত্র সেই ধোঁয়ার আজাবের সময়ই। অর্থাৎ যখন আকাশ কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যাবে তখন বিশ্ব অন্ধকারে ছেয়ে যাবে। আর এটি ঘটার পরই সুফিয়ানীর আত্মপ্রকাশ হবে।

 

 

 ৬.২২.১ সুফিয়ানীর আত্মপ্রকাশের সময়কাল

ইমাম মাহদীর আগমনের ২, ৩ বছর আগে এই সুফিয়ানীর আত্মপ্রকাশ ঘটবে। মাহদীর আগমনের ব্যাপারে বিভিন্ন দলিল থেকে পাওয়া যায় ২০২৮ সালের কথা। আর ২, ৩ বছর আগে হলে হয় ২০২৫, ২০২৬ সাল। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন বিভিন্ন এলাকা সংগঠিত থাকবে না, নেতৃত্বশূন্য বা বিভিন্ন বিদ্রোহ থাকবে তখনই এই সুফিয়ানীর প্রকাশ ঘটবে।

হযরত ইবনে শিহাব যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দ্বিতীয় সুফিয়ানীর রাজত্ব এবং তার আবির্ভাবের মধ্যে এমন কতক আলামত রয়েছে, যা তুমি আকাশে দেখতে পাবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৩৫)

হযরত যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দ্বিতীয় সুফিয়ানীর জন্মের সময় আকাশে আলামত বা নিদর্শন দেখা যাবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৫৪)

১৯৮৬ সালের ৮ই মার্চ আকাশে হেলির ধূমকেতু দেখা গিয়েছিল। সাধারণত প্রতি ৭৪ থেকে ৭৯ বছর পর পর হেলির ধূমকেতু পৃথিবীতে দৃশ্যমান হয়। অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন, যে বছর হেলির ধূমকেতু দৃশ্যমান হয়, সে বছর একটা বিখ্যাত ঘটনা ঘটে।

হযরত হুজায়ফা (রা:) থেকে বর্ণিত, হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন খুযায়ী (রা:) রসূল কে জিজ্ঞেস করলেন, আমরা এই সুফিয়ানিকে কিভাবে চিনব? উত্তরে রসূল বললেন, তার গাঁয়ে দুটি কাতওয়ানির চাদর থাকবে (দুটি শক্তিশালী দল)। তার চেহারার রং ঝলমলে তারকার মতো হবে। ডান গালে তিলক থাকবে। আর বয়স চল্লিশের কম হবে
-       (আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১১০)

সুতরাং ১৯৮৬+৪০=২০২৬ সাল। অর্থাৎ ২০২৬ সালের আগে পিছেই সুফিয়ানীর উত্থান হবে। আমরা সবাই জানি ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের পূর্বে সিরিয়াতে সুফিয়ানীর উত্থান হবে। অর্থাৎ তার আগে মাহদীর আগমন হবে না।

বিঃ দ্রঃ অনেক গবেষক সুফিয়ানী বিষয়ে হাদিস থেকে গবেষণা করে বলেছেন সুফিয়ানী দুইজন হবে এবং তাদের কর্মকাণ্ডও উল্লেখ করেছেন, অনেকটা বিস্তারিতভাবে। হ্যাঁ, তাতে অবশ্যই অনেক তথ্য নতুন করে যোগ হবে। তবে তাতে বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনার মিশ্রণ থাকায় অনেক বিষয় আগে পরে, সত্য-মিথ্যা ইত্যাদি ঢুকে গেছে। তবে মাহদীর প্রধান শত্রু যে হবে তাকে দ্বিতীয় সুফিয়ানী বলা হয়েছে অনেক হাদিসে এবং তা বলাও যেতে পারে (আল্লাহু আলিম)। তাই সেই বর্ণনাগুলো এখানে দিয়ে বইকে বড় না করে ভবিষ্যতে সেগুলো উল্লেখপূর্বক সংস্করণ করার চেষ্টা করা হবে ইনশাআল্লাহ। তবে আমাদের যতটুকু না জানলেই নয় তা এখানে থাকছেই ইনশাআল্লাহ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ