৬.৬৮ ফিতনা তার মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে

 হযরত হুযায়ফা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফিতনা সংঘটিত হবে, অতঃপর জামাত ও তাওবা হবে। অতঃপর জামাত ও তাওবা হবে। (এর পর চতুর্থবার উল্লেখ করলেন) অতঃপর তাওবাও হবেনা এবং জামাতও (নেতা থাকবে না) হবে না।

-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৭৯; জামিউস সগীর ২৩১)

হযরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম বলেছেন, ফিতনা সংঘটিত হবে। অতঃপর জামাত হবে। অতঃপর ফিতনা হবে, অতঃপর জামাত হবে। অতঃপর এমন ফিতনা হবে যেখানে পুরুষদের বুদ্ধি থেমে যাবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮১; জামিউস সগীর ২৩৫)

৬.৬৮.১ এই ফিতনাকালীন সময় অস্ত্র না উঠানো

এই ফিতনাকালীন সময় অস্ত্র না উঠানো এবং উচিৎ হবে দ্বীন নিয়ে কোথাও পলায়ন করা। এ বিষয়ে আগেই কিছু হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে। আরো কিছু দেওয়া হলো-

ইয়াযীদ ইব্‌ন খালিদ (রহঃ) .... সাঈদ ইব্‌ন আবী ওয়াক্‌কাস (রা:) এ হাদিস নবী থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ আমি বলিঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! তখন যদি কেউ আমার ঘরে ঢুকে আমাকে হত্যা করতে চায়, তখন আমি কি করবো? রাবী বলেনঃ তখন রসূলুল্লাহ্‌ বলেনঃ তুমি আদমের উত্তম সন্তান (হাবিল)-এর মত হবে। এরপর ইয়াযীদ (রহঃ) এ আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ (لَئِنْ بَسَطْتَ إِلَىَّ يَدَكَ) অর্থাৎ যদি তুমি আমাকে হত্যার জন্য তোমার হাত আমার দিকে সম্প্রসারিত কর, তবুও আমি তোমাকে হত্যার জন্য আমার হাত বিস্তার করবো না। (সূরা মায়িদাঃ ২৮)
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪২৫৭ [ইঃ ফাঃ ৪২০৮]; তিরমিযী; আহমাদ)

আবূ মূসা আল-আশআরী (রা:) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয়ই কিয়ামতের কাছাকাছি সময়ে অন্ধকার রাতের টুকরার ন্যায় বিপদ আসতে থাকবে। তখন সকালবেলা যে ঈমানদার ছিলো, সন্ধ্যাকালে সে কাফির হয়ে যাবে। আর সন্ধ্যাবেলা যে ঈমানদার ছিলো, সে সকালবেলা কাফির হয়ে যাবে। তখন দাঁড়ানো ব্যক্তির চাইতে বসা ব্যক্তি এবং হেঁটে চলার লোক দৌঁড়ে চলা লোকের চাইতে উত্তম হবে। তখন তোমরা তোমাদের ধনুকগুলো ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলো, ধনুকের ছিলাগুলো কেটে ফেলো এবং তরবারিগুলো পাথরে আঘাত করে চূর্ণ-বিচূর্ণ করো। তবুও যদি তোমাদের কারো কারো নিকট কেউ এসে পড়ে, তবে যেন সে আদম (আঃ)-এর দুপুত্রের মধ্যে উত্তমটির (হাবীলের) মতো হয়। *
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪২৫৯ [ইঃ ফাঃ ৪২১০]; তিরমিযী; আহমাদ। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হাদীসটি হাসান গরীব ও সহীহ)
-       * এটি ঈসা (আঃ) এর মৃত্যুর পরের সময়ের করণীয়। কারণ এরপর আর কোন জিহাদ নেই এবং এমন ফিতনা প্রকাশ পাবে যাতে অস্ত্র উঠানো হবে উল্টো ফিতনার দরজা খুলে দেওয়া। আর এই হাদিস দিয়ে যেন জিহাদ বিরোধীরা (ওলামায়ে সূ) জিহাদের বিরোধিতা করার দলিল না বের করে তাই স্পষ্টভাবে এর ব্যাখ্যা দেওয়া হলো। যেহেতু সর্বশেষ হক দল দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, তাই সে পর্যন্ত যেন জিহাদে অংশগ্রহণ করে আর দাজ্জালের আগমন এখনো হয়নি এবং কখন হবে তা হাদিসসমূহে বর্ণিত হয়েছে।

আবূ কাবশাহ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ মূসা (রা:) কে বলতে শুনেছি, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ নিশ্চয়ই তোমাদের সামনে অন্ধকার রাতের টুকরার ন্যায় একের পর এক বিপদ আসতে থাকবে। সেই বিপদের সময় সকালবেলা যে ব্যক্তি ঈমানদার ছিলো, বিকেলবেলা সে কাফির হয়ে যাবে, আর সন্ধ্যাবেলা যে লোকটি ঈমানদার ছিলো, সকালে সে কাফির হয়ে যাবে। সে সময়ের বসে থাকা ব্যক্তি দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির চাইতে উত্তম হবে এবং দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি হেঁটে চলা ব্যক্তির চাইতে উত্তম এবং হেঁটে চলা ব্যক্তি দৌড়ে চলা ব্যক্তির চাইতে উত্তম হবে। লোকজন বললো, আপনি আমাদের কি করতে আদেশ দিচ্ছেন? তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের ঘরের পর্দার ন্যায় হয়ে যাও (বের হয়ো না)।
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪২৬২ [ইঃ ফাঃ ৪২১৩]; আহমাদ)

কুতায়বা (রহঃ) ..... বুসর ইবন সাঈদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উসমান ইবন আফফান (রা:) এর আমলের ফিতনা-কালে সাদ ইবন আবূ ওয়াককাস (রা:) বলেছিলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, রসূলুল্লাহ বলেছিলেনঃ অচিরেই এমন ফিতনা আসবে যে সে সময় উপবিষ্ট ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তি থেকে উত্তম হবে। দাঁড়ানো ব্যক্তি চলমান ব্যক্তি থেকে উত্তম হবে, চলমান ব্যক্তি ফিতনা-প্রয়াসী ব্যক্তি থেকে উত্তম হবে। সাদ (রা:) বলেন, যদি আমার ঘরে এসে ঢুকে পড়ে এবং আমাকে হত্যা করার জন্য হাত বাড়িয় দেয় এমতাবস্থায় আপনি কি মনে করেন? তিনি বললেনঃ তখন তুমি আদম (আঃ)-এর সন্তানের (হাবীল) ন্যায় হও।
-       (সহীহ, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত/আল মাদানী প্রকাঃ) ২১৯৪ [ইঃ ফাঃ ২১৯৭]; ইরওয়া ৮/১৪০)

আবূ সাঈদ খুদরী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল বলেছেনঃ সেদিন দূরে নয়, যেদিন মুসলিমের উত্তম সম্পদ হবে কয়েকটি বকরী, যা নিয়ে সে পাহাড়ের চুড়ায় অথবা বৃষ্টিপাতের স্থানে চলে যাবে। ফিতনা থেকে বাঁচতে সে তার দ্বীন নিয়ে পালিয়ে যাবে।
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী ১৮, ১৯, ৩৩০০, ৩৬০০, ৬৪৯৫, ৭০৮৮ [ইসঃ ফাঃ ১৮]; রিয়াযুস স্বা-লিহীন তাঃ ফা; ৬০৪; সুনান নাসায়ী ৫০৩৬; সুনান আবূ দাউদ (আলবানী একাঃ) ৪২৬৭ [ইঃ ফাঃ ৪২১৮]; সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ৩৯৮০; সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ২৭৩৫; মুয়াত্তা মালেক ১৮১১, ৩৫৫৮; মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩৭১১৬; সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৯৫৮; মুসনাদে আহমাদ ১০৬৪৯, ১০৮৬১, ১০৯৯৮, ১১১৪৮, ১১৪২৮)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ