৬.৫৩ দাজ্জাল এর পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য

 দাজ্জাল সুনির্দিষ্ট এক ব্যক্তি হবে। কারণ, হাদীছে সুস্পষ্টভাবে এ-বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে। কাজেই কোনো রাষ্ট্রকে দাজ্জাল মনে করা ঠিক নয়। যেমনটি খাওয়ারেজ ও জাহমিয়া প্রভৃতি ভ্রান্ত দলসমূহ মনে করে থাকে। কাজী ইয়ায (রহ.) বলেছেন, 'ইমাম মুসলিম প্রমুখ দাজ্জালের কাহিনীতে এই যে হাদীসগুলো বর্ণনা করেছেন, এগুলো প্রমাণ করছে, দাজ্জালের অস্তিত্ব যথার্থ এবং সে সুনির্দিষ্ট একজন ব্যক্তি হবে।

-       (মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড ১২, পৃষ্ঠা: ২২১)

আবদুল্লাহ ইবন মুআবিয়া জুমাহী (রহঃ), আবদুর রাহমান ইবন আবূ বকরা তার পিতা আবূ বকরা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ দাজ্জালের পিতা-মাতা ত্রিশ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করবে তাদের কোন সন্তান হবে না। পরে তাদের এক কানা শিশুর জন্ম হবে। যা হবে সবচেয়ে ক্ষতিকর এবং অত্যন্ত অনুপোকারী। তার চোখ তো হবে নিদ্রিত কিন্তু অন্তর হবে না। এরপর নবী তার পিতা-মাতার বিবরণ দিলেন। বললেনঃ তার পিতা হবে লম্বা, পাতলা গড়ানের। তার নাকটা যেন পাখির ঠোট। তার মা হবে স্থুলকায়, সুদীর্ঘ স্তন বিশিষ্টা মহিলা।
-       (যঈফ, সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২৪৮ [ইঃ ফাঃ ২২৫১]; মিশকাত; তাহকিক ছানী ৫৫০৩)

নবী -এর চাচাত ভাই ইবনু আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত, নবী বলেন, মিরাজের রাত্রে আমি মূসা (আঃ)-কে দেখেছি। তিনি গোধুম বর্ণের পুরুষ ছিলেন; দেহের গঠন ছিল লম্বা। মাথার চুল ছিল কোঁকড়ানো। যেন তিনি শানূআ গোত্রের জনৈক ব্যক্তি। আমি ঈসা (আঃ)-কে দেখতে পাই। তিনি ছিলেন মধ্যম গঠনের লোক। তাঁর দেহবর্ণ ছিল সাদা লালে মিশ্রিত। তিনি ছিলেন মধ্যম দেহ বিশিষ্ট। মাথার চুল ছিল অকুঞ্চিত। জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক মালিক এবং দজ্জালকেও আমি দেখেছি। আল্লাহ তাআলা নবী -কে বিশেষ করে যে সকল নিদর্শনসমূহ দেখিয়েছেন তার মধ্যে এগুলোও ছিল। সুতরাং তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে তুমি সন্দেহ পোষণ করবে না। আনাস এবং আবূ বকরাহ (রা:) নবী হতে বর্ণনা করেছেন, ফেরেশতামন্ডলী মদিনাকে দাজ্জাল হতে পাহারা দিয়ে রাখবেন।
-       (সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৩২৩৯, ৩৩৯৬ [আঃ প্রঃ ২৯৯৯; ইসঃ ফাঃ ৩০০৯]; মুসলিম ১/৭৪ হাঃ ১৬৫, মুসনাদে আহমাদ ৩১৮০)

সালিম (রহ.) বলেন, ইবনু উমার (রা:) হতে বর্ণিত। রাসূলূল্লাহ একদা জনসমাবেশে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করলেন, অতঃপর দাজ্জালের উল্লেখ করে বললেন, আমি তোমাদেরকে তার নিকট হতে সাবধান করছি আর প্রত্যেক নবীই নিজ নিজ সম্প্রদায়কে এ দাজ্জাল হতে সাবধান করে দিয়েছেন। নূহ (আঃ)-ও নিজ সম্প্রদায়কে দাজ্জাল হতে সাবধান করেছেন। কিন্তু আমি তোমাদেরকে তার সম্বন্ধে এমন একটা কথা বলছি, যা কোন নবী তাঁর সম্প্রদায়কে বলেননি। তা হলো তোমরা জেনে রেখ, নিশ্চয়ই দাজ্জাল এক চক্ষু বিশিষ্ট, আর আল্লাহ এক চক্ষু বিশিষ্ট নন।
-       (সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৩৩৩৭, ৩০৫৭ [আঃ প্রঃ ৩০৯০; ইসঃ ফাঃ ৩০৯৮]; মুসলিম ২৮/৭ হাঃ ৩৯৩২; আহমাদ ৩৬৩০; আল ফিতান ১৪৬০)

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী লোকজনের সামনে মাসীহ দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, আল্লাহ্ ট্যাঁরা নন। সাবধান! মাসীহ দাজ্জালের ডান চক্ষু ট্যাঁরা। তার চক্ষু যেন ফুলে যাওয়া আঙ্গুরের মত।
-       (সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৩৪৩৯ [ইঃ ফাঃ ৩১৯৪ প্রথমাংশ])

আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ..... ইবনু উমার (রা:) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ মানুষের মধ্যে দাজ্জালের আলাপ-আলোচনা করে বললেন, আল্লাহ তাআলা অন্ধ নন। কিন্তু সতর্ক হও! দাজ্জালের ডান চোখ কানা হবে। আর তা আঙ্গুরের মতো ফোলা হবে।
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২৫১-(১০০/১৬৯) [ইঃ ফাঃ ৭০৯৫, ইঃ সেঃ ৭১৪৯]; মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৭০; সহীহুল জামি ২৬৩৬; মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩৭৪৫৬; মুসনাদে বাযযার ৪৬৩৪; মুসনাদে আহমাদ ৪৯৪৮; আবু ইয়া'লা ৫৮২৩; আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৬৯৩৮)

ইবনু উমার (রা:) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ আমি এক রাতে স্বপ্নে নিজেকে কাবার নিকট দেখলাম। হঠাৎ সেখানে বাদামী রং এর এক ব্যক্তিকে দেখলাম। তোমরা যেমন সুন্দর বাদামী রঙের লোক দেখে থাক তার থেকেও অধিক সুন্দর ছিলেন তিনি। তাঁর মাথার সোজা চুল, তাঁর দুস্কন্ধ পর্যন্ত ঝুলছিল। তার মাথা হতে পানি ফোঁটা ফোঁটা পড়ছিল। তিনি দুজন লোকের স্কন্ধে হাত রেখে কাবা তাওয়াফ করছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম ইনি কে? তারা জবাব দিলেন, ইনি হলেন, মসীহ ইবনু মারইয়াম। অতঃপর তাঁর পেছনে অন্য একজন লোককে দেখলাম। তার মাথায় চুল ছিল বেশ কোঁকড়ানো, ডান চক্ষু ট্যাঁরা, আকৃতিতে সে আমার দেখা মত ইবনু কাতানের সঙ্গে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। সে একজন লোকের দুস্কন্ধে ভর দিয়ে কাবার চারদিকে ঘুরছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ লোকটি কে? তারা বললেন, এ হল মাসীহ দাজ্জাল।
-       (সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৩৪৪০, ৫৯০২, ৬৯৯৯, ৭০২৬ [আঃ প্রঃ ৩১৮৫; ইসঃ ফাঃ ৩১৯৪]; সহীহুল মুসলিম ১/৭৫ হাঃ ১৬৯; মুসনাদে আহমাদ ৪৯৪৮)

সালিম এর পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! নবী এ কথা বলেননি যে ঈসা (আঃ) লাল বর্ণের ছিলেন। বরং বলেছেন, একদা আমি স্বপ্নে কাবা ঘর তাওয়াফ করছিলাম। হঠাৎ সোজা চুল ও বাদামী রঙের জনৈক ব্যক্তিকে দেখলাম। তিনি দুজন লোকের মাঝখানে চলছেন। তাঁর মাথার পানি ঝরছে অথবা বলেছেন, তার মাথা হতে পানি বেয়ে পড়ছে। আমি বললাম, ইনি কে? তারা বললেন, ইনি মারিয়ামের পুত্র। তখন আমি এদিক ওদিক তাকালাম। হঠাৎ দেখলাম, এক লোক তার গায়ের রং লালবর্ণ, খুব মোটা, মাথার চুল কোঁকড়ানো এবং তার ডান চোখ ট্যাঁরা। তার চোখ যেন ফোলা আঙ্গুরের মত। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ লোকটি কে? তারা বললেন, এ হলো দাজ্জাল। মানুষের মধ্যে ইবনু কাতানের সঙ্গে তার বেশি সাদৃশ্য রয়েছে। যুহরী (রহ.) তার বর্ণনায় বলেন, ইবনু কাতান খুযাআ গোত্রের জনৈক ব্যক্তি, সে জাহিলীয়াতের যুগেই মারা গেছে।
-       (সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৩৪৪১ [আঃ প্রঃ ৩১৮৬; ইসঃ ফাঃ ৩১৯৫])

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী আমাদের মাঝে উপস্থিত থাকাবস্থায় আমরা বিদায় হাজ্জ সম্পর্কে আলোচনা করতাম। আর আমরা বিদায় হাজ্জ কাকে বলে তা জানতাম না। এরপর রসূলুল্লাহ আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা করেন। তারপর তিনি মাসীহ্ দাজ্জাল সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করেন এবং বলেন, আল্লাহ এমন কোন নবী প্রেরণ করেননি যিনি তাঁর উম্মতকে (দাজ্জাল সম্পর্কে) সতর্ক করেননি। নূহ (আঃ) এবং তাঁর পরবর্তী নবীগণও তাঁদের উম্মতগণকে এ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। সে তোমাদের মধ্যে প্রকাশিত হবে। তার অবস্থা তোমাদের নিকট অপ্রকাশিত থাকবে না। তোমাদের কাছে এও অস্পষ্ট নয় যে, তোমাদের রব কানা নন। আর দাজ্জালের ডান চোখ কানা হবে। যেন তার চোখ একটি ফোলা আঙ্গুর।
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৩৪৯৩, ৪৪০২ [আঃ প্রঃ ৪০৫৩; ইসঃ ফাঃ ৪০৫৮]; সহীহুল মুসলিম (১/১০৭) প্রশ্নের উল্লেখ ব্যতীত, ১৬৯, ১৭১, ২৯৩১; সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২৪১ [ইঃ ফাঃ ২২৪৪]; রিয়াযুস স্বা-লিহীন তাঃ পাঃ ১২/১৮২৮ [আন্তঃ ১৮১৯]; মুসনাদে আহমাদ ৪৭২৯, ৪৭৮৯, ৪৯৫৭, ৫৫২৮, ৫৯৯৭, ৬০৬৪, ৬১৫০, ৬২৭৬, ৬৩২৪, ৬৩২৭, ৬৩৮৯)
-       এ বিষয়ে সাদ, হুযায়ফা, আবূ হুরায়রা, আসমা, জাবির ইবন আবদুল্লাহ, আবূ বকরা, আয়িশা, আনাস, ইবন আব্বাস এবং ফালাতান ইবন আসিম রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান-সহীহ ইবন উমার রাঃ-এর রিওয়ায়াত সূত্রে গারীব।
-       (একই রকম বর্ণনা- সহীহুল বুখারী ১৩৫৫, ২৬৩৮, ৩০৫৫-৫০৫৭, ৩৩৩৭, ৩৪৪০, ৩৪৪১, ৫৯০২, ৬১৭৩, ৬৬১৮, ৬৯৯৯, ৭০২৬, ৭১২৭, ৭১২৮, ৭৪০৭)

ইবনু উমার (রা:) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ আমি ঘুমের অবস্থায় দেখতে পেলাম যে, আমি কাবার তাওয়াফ করছি। হঠাৎ একজন লোককে দেখতে পেলাম ধূসর বর্ণের আলুথালু কেশধারী, তার মাথা থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে কিংবা টপকে পড়ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? লোকেরা বলল, ইনি মারিয়ামের পুত্র। এরপর আমি তাকাতে লাগলাম, হঠাৎ দেখতে পেলাম, এক ব্যক্তি স্থুলকায় লাল বর্ণের, কোঁকড়ানো চুল, এক চোখ কানা, চোখটি যেন ফোলা আঙ্গুরের মত। লোকেরা বলল এ-হল দাজ্জাল! তার সঙ্গে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ লোক হল ইবনু কাতান, বানী খুযাআর এক লোক।
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৭১২৮ [আঃ প্রঃ ৬৬২৯; ইসঃ ফাঃ ৬৬৪৩])

হায়ওয়া ইব্‌ন শুরায়হ (রহঃ) .... উবাদা ইব্‌ন সামিত (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্‌ বলেছেনঃ আমি তোমাদের কাছে দাজ্জাল সম্পর্কে অনেক হাদীছ বর্ণনা করেছি, এতসত্ত্বেও আমার ভয় হয়, তোমরা তাকে চিনতে পারবে না। (জেনে রাখ!) মাসীহ্‌ দাজ্জাল হবে বেঁটে, তার পদক্ষেপ হবে দীর্ঘ, মাথার চুল হবে কুঞ্চিত, আর সে হবে কানা। তার চোখ হবে সমতল, যা উপরে উঠে থাকবে না এবং নীচে থাকবে না। এরপরও যদি তোমরা সন্দীহান হও, তবে জেনে রাখ! তোমাদের রব কানা নন।
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪৩২০ [ইঃ ফাঃ ৪২৬৯]; মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৮৫; সহীহুল জামি ২৪৫৯; মুসনাদে আহমাদ)

হযরত শুরাইহ ইবনে উবাইদ হতে বর্ণিত যে, রসূল তার সাথীদেরকে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করতেন। অতঃপর বলতেন, হে মানুষ সকল তোমরা ভালোভাবে জেনে রাখ, তোমরা ততক্ষন পর্যন্ত তোমাদের রবের সাথ সাক্ষাত করতে পারেবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা মৃত্যুবরণ করো। আরা তোমাদের রব অন্ধ নন। নিশ্চয়ই দাজ্জাল আল্লাহ তা'য়ালার উপর মিথ্যারোপ করবে। তার এক চক্ষু হবে সমান। অর্থাৎ একেবারে ভিতরে ঢুকে থাকবেনা এবং বাহিরেও উঠে থাকবে না। তার দুই চক্ষুর মাঝখানে কাফের লেখা থাকবে। যেটা প্রত্যেক মুমিনই পড়তে পারবে। আমি তোমাদের মধ্যে থাকা অবস্থায় যদি সে বের হয় তাহলে আমি তোমাদের মধ্যে দলিল প্রমাণ সহ বিজয়ী হবো। আর যদি আমার পরে বের হয় তাহলে তোমরা প্রত্যেকে দলিল প্রমাণ সহকারে মোকাবেলা করবে। আর আল্লাহ আমার খলীফা প্রত্যেক মুসলমানের উপর। তোমাদের মধ্যে যার তার (দাজ্জালের) সাথে সাক্ষাত হয় সে যেন সূরা কাহাফের প্রথমাংশ পড়ে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৪৪৮ [পথিক প্রকা: ১৪৪৬; তাহকীক: মারফু, মুরসাল, মুয়াল্লাক। তবে মানা সহীহ])

মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, মুহাম্মাদ ইবনুল আলা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ...হুযাইফাহ্ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ দাজ্জালের বামচোখ কানা হবে। তার দেহে ঘন পশম হবে (মাথার কেশ অত্যধিক)। তার সাথে থাকবে জান্নাত ও জাহান্নামের চিত্র। প্রকৃতপক্ষে তার জাহান্নাম জান্নাত হবে এবং তার জান্নাত জাহান্নাম বলে গণ্য হবে।
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২৫৬-(১০৪/২৯৩৪) [ইঃ ফাঃ ৭১০০, ইঃ সেঃ ৭১৫৪]; সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ৪০৭১; মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৭৪; সহীহুল জামি ৩৪০০; আহমাদ ২২৭৩৯, ২৩২৯৮, ২২৮৫৬; আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৫৩০)

আবু বকর ইবনু আবু শাইবাহ্ (রহঃ) ..... হুযাইফাহ্ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ দাজ্জালের সাথে কি থাকবে, এ সম্পর্কে আমি নিশ্চিত অবগত আছি। তার সাথে প্রবাহমান দুটি নহর থাকবে। একটি দৃশ্যত ধবধবে সাদা পানি বিশিষ্ট এবং অপরটি দৃশ্যত লেলিহান অগ্নির মতো হবে। যদি কেউ সুযোগ পায় তবে সে যেন ঐ নহরে প্রবেশ করে যাকে দৃশ্যত অগ্নি মনে হবে এবং চক্ষু বন্ধ করতঃ মাথা অবনমিত করে সে যেন সেটা থেকে পানি পান করে। সেটা হবে ঠাণ্ডা পানি। দাজ্জালের চক্ষু লেপা হবে এবং তার চোখের উপর নখের মতো পুরু চামড়া থাকবে এবং উভয় চোখের মাঝখানে পৃথক-পৃথকভাবে কাফির লেখা থাকবে। শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকল মুমিন ব্যক্তি এ লেখা পাঠ করতে পারবে।
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২৫৭ [ইঃ ফাঃ ৭১০১, ইঃ সেঃ ৭১৫৫])

রাবী সালিম আরও বলেন, আবদুল্লাহ (রা:) বর্ণনা করেছেন যে, একদিন রসূলুল্লাহ সাহাবাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আল্লাহ তাআলার যথাবিহিত প্রশংসার পর দাজ্জালের উল্লেখ করে বললেনঃ আমি তোমাদের তার ব্যাপারে সাবধান করে দিচ্ছি। প্রত্যেক নবীই এর ব্যাপারে তাঁর কওমকে সাবধান করে গিয়েছেন। আমি এর ব্যাপারে এমন কথা বলছি যা অন্য কোন নবী তাঁর কওমকে বলেননি। তোমরা জেনে রাখ সে কানা; কিন্তু আল্লাহ কানা নন।
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৬১৭৫ [আঃ প্রঃ ৫৭৩৩; ইসঃ ফাঃ ৫৬২৯]; আল ফিতান ১৪৬০)

আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা:) বলেন। নবী লোক সমাবেশে দাঁড়ালেন এবং মহান আল্লাহর প্রশংসা করলেন। এরপর তিনি দাজ্জাল প্রসঙ্গে বললেনঃ তার সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে সতর্ক করছি। এমন কোন নবী নেই যিনি তাঁর কাওমকে এ বিষয়ে সতর্ক করেননি। তবে তার সম্পর্কে আমি তোমাদের এমন একটি কথা বলব যা কোন নবীই তাঁর জাতিকে বলেননি। তা হল যে, সে কানা হবে আর আল্লাহ্ অবশ্যই কানা নন। *
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৭১২৭ [আঃ প্রঃ ৬৬২৮; ইসঃ ফাঃ ৬৬৪২])
-       * উল্লেখিত হাদীসে দাজ্জাল সম্পর্কে দুটি বিষয় বর্ণিত হয়েছেঃ
প্রথম বিষয় : প্রত্যেক নবী তাদের নিজ নিজ উম্মতদেরকে দাজ্জাল সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করেছেন। তারই ধারাবাহিকতা স্বরূপ রসূল ও তাঁর উম্মতকে উদ্দেশ করে বলেন, إني لأنذركموه (অর্থাৎ নিশ্চয় আমিও অবশ্যই তোমাদেরকে তার ব্যাপারে সতর্ক করেছি)।
দ্বিতীয় বিষয় : রসূল বলেন, আমার পূর্ববর্তী সব নবী দাজ্জালের ভীতি প্রদর্শন করলেও তার সম্পর্কে যে কথাটি বলেননি, আমি তোমাদের অবশ্যই সে কথাটি বলব। আর তা হচ্ছে সে কানা। আল্লাহ কিন্তু কানা নয়। এখানে একদিকে যেমন দাজ্জালের এক চোখ নেই তা প্রমাণ হচ্ছে, অপরদিকে আল্লাহর চোখ রয়েছে এবং তিনি দেখেন এটাও প্রমাণিত হচ্ছে। সুতরাং আল্লাহ তাআলার অসংখ্য সিফাতের মধ্যে এটিও তাঁর একটি সিফাত যে, তাঁর চক্ষু রয়েছে এবং তিনি দেখেন। তাঁর চক্ষু কেমন তা যেমন বলা যাবে না, তদ্রুপ তা অস্বীকার, অপব্যাখ্যা, সাদৃশ্য দেয়া বা প্রকৃতি বর্ণনা করা মোটেও ঠিক নয়। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ليس كمثله شيء وهو السميع البصير

আবদুল্লাহ্ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী -এর কাছে দাজ্জাল সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ তোমাদের কাছে গোপন থাকবেন না। আল্লাহ্ অন্ধ নন। এর সঙ্গে নবী তাঁর হাত দিয়ে স্বীয় চোখের দিকে ইশারা করলেন। মাসীহ্ দাজ্জালের ডান চোখ কানা। তার চোখটি যেন আংগুরের মত ভাসমান।
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৭৪০৭ [আঃ প্রঃ ৬৮৯১; ইসঃ ফাঃ ৬৯০৩])

মুহাম্মদ ইব্‌ন মুছান্না (রহঃ) .... শুবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তার কপালে "কাফ" "ফা" "র" (অর্থাৎ কাফির) লেখা থাকবে।
-       (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪৩১৭ [ইঃ ফাঃ ৪২৬৬])

আনাস ইবনু মালিক (রা:) থেকে নবী -এর সূত্রে এ হাদীস বর্ণিত আছেঃ (কাফির লেখাটি) প্রত্যেক মুসলিম তা পড়তে পারবে।
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪৩১৮ [ইঃ ফাঃ ৪২৬৭]; মুসলিম; মুসনাদে আহমাদ)

যুহরী (রহঃ) বলেন যে, তাকে উমার ইবন ছাবিত আনসারী বলেছেন যে, তাকে কতক সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহুম অবহিত করেছেন যে, নবী সেদিন লোকদের ফিতনা সম্পর্কে সতর্ক করতে যেয়ে বলেছিলেনঃ তোমরা বিশ্বাস কর তোমাদের কেউ মৃত্যু পর্যন্ত তার রবকে কখনো দেখতে সক্ষম হবে না। দাজ্জালের দুই চোখের মধ্যবর্তী স্থানে লেখা থাকবে কাফির। যে ব্যক্তি তার কর্মকান্ডকে ঘৃণা করবে সে এ লেখা পড়তে পারবে।
-       (সহীহ, সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২৩৫ [ইঃ ফাঃ ২২৩৮]; সহিহাহ ২৮৬১; আল ফিতান ১৪৬১)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন দাজ্জালের দুই বাহু হবে মাংশপেশী ওয়ালা। আঙ্গুল হবে খাটো খাটো। ঘাড় হবে মিলানো। এক চক্ষু থাকবে মিলানো। তার দুই চক্ষুর মাঝখানে লেখা থাকবে কাফের।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৫১৯ [পথিক প্রকা: ১৫১৭; তাহকীক: যঈফ])

ছালেম (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি ইবনু উমর (রা:) কে বলতে শুনেছেন, রসূল বলেছেন, আমি এক ব্যক্তিকে (স্বপ্নে) দেখেছি, যার গায়ের রং লাল। চুলগুলি কোঁকড়ানো ডান চক্ষু কানা। আমার দেখা মানুষের মধ্যে ইবনু কাতানের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। ইবনু উমর (রা:) বলেন, অতঃপর আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এই লোকটি কে? উত্তরে বলা হলো মাসিহ দাজ্জাল।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৫৩৫; তাহকীক: সহীহ)

আনাস ইবনু মালিক (রা:) সূত্রে নবী হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ্ এমন কোন নবী পাঠাননি যিনি তাঁর জাতিকে কানা মিথ্যুকটির ব্যাপারে সতর্ক করেননি। সে কানা (দাজ্জাল)। আর তোমাদের প্রতিপালক কানা নন। তার দুচোখের মাঝখানে কাফির’ (كَافِرٌ) লেখা থাকবে। এ সম্পর্কে আবূ হুরাইরাহ (রা:) ও ইবনু আব্বাস (রা:) থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে।
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৭১৩১, ৭৪০৮ [আঃ প্রঃ ৬৬৩২, ৬৮৯২; ইসঃ ফাঃ ৬৬৪৬, ৬৯০৪]; মুসলিম ৫২/২০, হাঃ ২৯৩০, ২৯৩৩; সুনান আবূ দাউদ (আলবানী একাঃ) ৪৩১৬ [ইঃ ফাঃ ৪২৬৫]; সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২৪৫ [ইঃ ফাঃ ২২৪৮]; মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৭১; রিয়াযুস স্বা-লিহীন তাঃ পাঃ ১০/১৮২৬ [আন্তঃ ১৮১৭]; তাখরিজু শারহিল আকিদাতিত তাহাবিয়া ৭৬২; সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ২৪৫৭; সহীহুল জামি ৫৭৮৯; মুসনাদে বাযযার ৭১৪৬; আবূ ইয়া'লা ৩২৬৫; মুসনাদে আহমাদ ১১৫৯৩, ১১৭৩৫, ১২০২৩, ১২৩৫৯, ১২৬৬৮, ১২৭৩৭, ১২৭৯৪, ১২৯৭২, ১২৯৮১, ১৩০২৬, ১৩১৮৭, ১৩২০৯, ১৩৫১৩, ১৩৬৮০, ১৩৩৯৩; কিচ্ছাতুল মাসিহিদ্দাজ্জাল)
-       * এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
-       ১। ঈমানদার মুসলিম ব্যক্তির মাসীহ দাজ্জালের বিষয়ে তার অন্তরে এই ভাবে ঈমান স্থাপন করা অপরিহার্য যে, কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে মাসীহ দাজ্জাল আত্মপ্রকাশ করবে। এবং তাকে ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) শাম অঞ্চলে সিরিয়া দেশে দামেস্কের নিকটে তেল আভিভ শহরের কাছে লুদ্দ এলাকার দ্বারপ্রান্তে হত্যা করবেন।
-       ২। দাজ্জালের নিদর্শনের বিবরণ হলো এই যে, তার দুই চোখেই খুঁত থাকবে। তাই একটি বর্ণনা মোতাবেক তার ডান চোখ অথবা অন্য বর্ণনা মোতাবেক তার বাম চোখ দুষিত হবে। তবে প্রকৃতপক্ষে তার দুটি চোখের মধ্যে একটি চোখ সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলে দেওয়ার মত হবে। এবং সেই চোখটির উপরে মোটা চামড়ার একটি আবরণ থাকবে। সব হাদিস পর্যালোচনা করে বুঝা যায়, দাজ্জালের এক চোখ (বাম) কানা থাকবে আর ডান চোখ আঙ্গুরের মতো ফোলা থাকবে যা দিয়ে দেখতে পারবে। তার কপালে কাফের كَافِرٌ লিখা থাকবে। তার মুখের ও চেহারার আকৃতি খুব কুৎসিত হবে। কেননা তার তো একটি মাত্র চোখ থাকবে, তবুও সেই চোখটি খুব বিকৃত ও অস্বাভবিক হবে। সুতরাং সেটি যেন গুচ্ছ আঙ্গুর থেকে ভেসে ওঠা একটি আঙ্গুর। মোটকথা দাজ্জালের একটি মাত্র কুৎসিত চোখ থাকবে, সেই চোখটির দ্বারা সে দেখতে পাবে। [এই বিষয়ে দেখতে পারা যায় সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯০২ এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৩ -(১৬৯), ১০৪ -(২৯৩৪) এবং ১০৫ -(২৯৩৪)]। আর মহান আল্লাহই সব চেয়ে বেশি জানেন।

-       ৩। দাজ্জালের কপালে কাফের শব্দটি লিখা থাকার বিষয়টি হলো একটি সত্য বিষয়। মহান আল্লাহ এই বিষয়টির দ্বারা তাকে মিথ্যুক, কাফের ও বাতিল সাব্যস্ত করার জন্য একটি অকাট্য নিদর্শন নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এবং তার কপালে যে কাফের শব্দটি লিখা থাকবে, সেই শব্দটিকে সমস্ত ঈমানদার মুসলিম শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত ব্যক্তি পড়তে পারবে।

দাজ্জালের চোখ সম্পর্কে একাধিক বর্ণনা এসেছে। কোথাও তার ডান চোখ কানা বলা হয়েছে। কোথাও বাম চোখ। এ-বিষয়ে মুফতী মুহাম্মাদ রফী' উছমানি সাহেব 'আলামাতে কেয়ামাত ওয়া নুমূলে মাসীহ' নামক গ্রন্থে লিখেছেন, 'সারকথা হলো, দাজ্জালের দুটো চোখই ত্রুটিপূর্ণ হবে। বাঁয়েরটি একদম জ্যোতিহীন ও মোছানো আর ডানেরটি কোঠর থেকে বের হওয়া থাকবে আঙুরের মতো।'

হাফিয ইবনে হাজর আসকালানি (রহ.) 'তাফিয়া'র ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন যে, দাজ্জালের ডান চোখটি বাইরে বের হওয়া থাকবে।
-       (ফাতহুল বারী, খণ্ড ১৩, পৃষ্ঠা: ৩২৫)

উবাইদুল্লাহ ইবনু উমার আল কাওয়ারীরী ও মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ) ..... আবু সাঈদ আল খুদরী (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন মক্কাহ যাওয়ার পথে ইবনু সাইয়্যাদ মক্কাহ পর্যন্ত আমার সফর সঙ্গী ছিল। পথে সে আমাকে বলল, এমন কতিপয় লোকের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ঘটেছে যারা ধারণা করে যে, আমিই দাজ্জাল। আপনি কি রসূলুল্লাহ কে বলতে শুনেননি যে, দাজ্জালের কোন সন্তান হবে না? তিনি বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ, শুনেছি। তখন সে বলল আমার তো সন্তানাদি রয়েছে। আপনি কি রসূলুল্লাহ -কে বলতে শুনেননি যে, দাজ্জাল মক্কাহ ও মদীনাতে ঢুকতে পারবে না? আমি বললাম, হ্যাঁ, শুনেছি। সে বলল, মনে রাখুন, আমি তো মদীনায় জন্মগ্রহণ করেছি এবং এখন মক্কাহ যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হয়েছি। আবূ সাঈদ আল খুদরী বলেন, অতঃপর এসব কথা বলার পর পরিশেষে সে বলল, আল্লাহর শপথ আমি অবশ্যই জানি দাজ্জালের জন্মস্থান, বাসস্থান এবং তার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে। আবূ সাঈদ আল খুদরী (রা:) বলেন, (এ কথা বলে) সে আমাকে দ্বিধা ও সংশয়ে ফেলে দিল।
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২৩৮-(৮৯/২৯২৭) [ইঃ ফাঃ ৭০৮৪, ইঃ সেঃ ৭১৩৮])

ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) ..... আবু সাঈদ আল খুদরী (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন ইবনু সাইয়্যাদ আমার সঙ্গে কিছু কথা বলেছে যাতে আমার মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়ে গেছে। তা হচ্ছে ইবনু সাইয়্যাদ এর এ বক্তব্যঃ আমি মানুষকে এ বলে ওযর পেশ করছি। হে মুহাম্মাদ এর সঙ্গী-সাথীগণ! আমার ব্যাপারে তোমাদের কি হয়েছে? আল্লাহর নবী কি এ কথা বলেননি যে, দাজ্জাল ইয়াহুদী হবে? কিন্তু আমি তো মুসলিম। তিনি বলেছেনঃ দাজ্জালের কোন সন্তান হবে না অথচ আমার তো সন্তানাদি রয়েছে। তিনি তো এ-ও বলেছেন যে, আল্লাহ তাআলা দাজ্জালের উপর মক্কাহ প্রবেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। অথচ আমি হাজ্জও করেছি। আবূ সাঈদ (রা:) বলেন, সে অনর্গল এমনভাবে বলে যেতে লাগল, যার ফলে আমি তাকে সত্যবাদী মনে করার কাছাকাছি পৌছে গেলাম। অতঃপর সে বলল, আল্লাহর কসম! অবশ্যই আমি জানি, দাজ্জালের অবস্থান সম্পর্কে। আমি তার পিতামাতাকেও চিনি। লোকেরা ইবনু সাইয়্যাদকে জিজ্ঞেস করল, তুমি যদি দাজ্জাল হও, তাতে কি তুমি আনন্দিত হবে? উত্তরে সে বলল, যদি আমাকে দাজ্জালরূপে সাব্যস্ত করা হয়, তবে আমি তাতে নারায হব না।
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২৩৯ [ইঃ ফাঃ ৭০৮৫, ইঃ সেঃ ৭১৩৯])
-       বিঃ দ্রঃ উপরোক্ত দুইটি হাদিস পড়ে অনেকেই অনেক কিছু মনে করে থাকেন। এরপর যখন আবার উমর (রা:) এর কসম করে বলা যে ইবনে সাইয়াদই দাজ্জাল এবং রসূলও সঠিকভাবে এটি জানিয়ে যায়নি যে সে আসলেই সেই দাজ্জাল কিনা। এতে একটি বিভ্রান্তিও দেখা দেয়। সঠিকভাবে জানতে হলে আরো কিছু কিতাবের সাহায্য নেওয়া সঠিক হবে। এর উপযুক্ত ব্যাখ্যা দিয়েছেন ইবনে কাছীর তার কিতাবুল ফিতান গ্রন্থে। তিনি তাতে অনেক পর্যালোচনা করে বলেছেন যে ইবনে সাইয়াদ ছোট দাজ্জাল (যেমন বলা হয়েছে হাদিসে যে, ৩০ জন মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে অর্থাৎ মিথ্যাবাদী/প্রতারক/ভণ্ড/শয়তানের অনুসারী), কাঙ্ক্ষিত সেই দাজ্জাল নয় যে ঈসা (আঃ) দ্বারা হত্যা হবে কেয়ামতের আগে। ইবনে সাইয়াদ থেকে যে সকল কথা হাদিসে প্রকাশ পায় তাতে তার মুসলিমত্ত্ব থাকে না। তবে পরবর্তীতে সে মুসলিম হয়, এরপর আবার তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না এবং অনেক দিন পর এক মজলিশে তার সন্ধান পাওয়ার ব্যাপারে হাদিসে বর্ণনা পাওয়া যায়। এটির ব্যাখ্যা হচ্ছে এই ইবনে সাইয়াদ সেই দাজ্জাল নয় তবে সে শয়তানের অনুসারী হিসেবে তার থেকে এরকম কথা, ক্ষমতা প্রকাশ পায়। যেমন রসূল এর পরীক্ষার সময় সে তার মনে রাখা নতুন নাযিলকৃত সূরা দুখান এর নামের প্রথম অংশ বলে দেয়। এটি মুলত শয়তান এর শক্তি ব্যবহার করেই পেরেছে। তবে এর পরবর্তীতে হাদিসে তাকে মুসলিম হিসেবে পরিচয় পাওয়া যায় যেমন উপরের কথা। তবে সে নিজেই বলেছে সে সেই দাজ্জাল নয় এবং রসূল যেরকম বলেছে তার সাথে সেগুলোর মিল নেই যেমন দাজ্জাল ইহুদী হবে, দাজ্জালের সন্তান হবে না, মক্কা-মদিনায় প্রবেশ করতে পারবে না। এই বৈশিষ্ট্য গুলো অবশ্যই থাকতে হবে তখনই সে সেই দাজ্জাল হতে পারবে যার ফিতনাকে সবচেয়ে বড় ফিতনা বলা হয়। তবে একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করি, দাজ্জালের জন্ম হবে যখন তার আবির্ভাবের সময় ঘনিয়ে আসবে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ে আত্মপ্রকাশ করে ফিতনা শুরু করবে। আগে থেকেই রয়েছে বা হাজার বছর ধরে বেঁচে আছে এরকম নয়। এবং সে একজন মানব বা ব্যাক্তিই হবে, অন্য কোন ব্যাখ্যা সম্পূর্ণই অসংখ্য হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক। তাই আমাদের সকল হাদিসগুলো এক জায়গায় করে এরপর মতামত দিতে হবে।

মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ) ..... আবু সাঈদ আল খুদরী (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা হাজ্জ বা উমরার উদ্দেশে রওয়ানা হলাম। আমাদের সঙ্গে ইবনু সায়িদ ছিল। তারপর কোন এক মঞ্জিলে আমরা অবতরণ করলাম। লোকেরা এদিক-সেদিক ছড়িয়ে পড়ল। কেবল আমি এবং সে থেকে গেলাম। লোকেরা ইবনু সাইয়্যাদ এর ব্যাপারে যে কথা কথোপকথন করছে, এ কারণে আমি তার প্রতি অত্যধিক ভীত ও ঘাবড়িয়ে গিয়েছিলাম। তিনি বলেন, ইবনু সাইয়্যাদ তার দ্রব্য-সামগ্রী আমার সাথে এনে রাখল। আমি বললাম, গরম খুব বেশী মনে হচ্ছে। তুমি যদি তোমার দ্রব্য-সামগ্রী ঐ গাছের নীচে রাখতে তবে ভালো হতো। এ কথা শুনে সে তা-ই করল। তারপর আমাদের জন্য কতগুলো বকরী নিয়ে আসা হলো। এ দেখে ইবনু সাইয়্যাদ সেখানে গেল এবং এক পাত্র দুধ নিয়ে এলো। এরপর সে আমাকে বলল, হে আবু সাঈদ! তুমি দুধ পান করে নাও। আমি বললাম, গরম খুব বেশী। দুধও গরম। আবু সাঈদ আল খুদরী (রা:) বলেন, তার হাতে দুধ পান করা বা তার হাত হতে দুধ গ্রহণ করা আমি পছন্দ করিনি। এ দেখে ইবনু সাইয়্যাদ বলল, হে আবু সাঈদ! লোকেরা আমার ব্যাপারে যে সব কথাবার্তা বলছে, এখন আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি একটি রশি নিয়ে সেটা গাছে লটকিয়ে ফাঁসি দিয়ে মরে যাই এবং তাথেকে পরিত্রাণ লাভ করি।

তারপর সে বলল, হে আবু সাঈদ! তোমাদের আনসার সম্প্রদায়ের চেয়ে রসূলুল্লাহ এর হাদীস আর কারো কাছে অজানা নেই? তুমি কি রসূলুল্লাহ এর হাদীস সম্বন্ধে সবচেয়ে বেশী জ্ঞাত নও? রসূলুল্লাহ কি বলেননি যে, সে ব্যক্তি (দাজ্জাল) কাফির হবে? অথচ আমি মুসলিম। তিনি কি বলেননি যে, দাজ্জাল নিঃসন্তান? আর তার কোন সন্তান হবে না? অথচ মদীনায় আমি আমার সন্তান রেখে এসেছি। রসূলুল্লাহ কি বলেননি যে, দাজ্জাল মক্কাহ-মদীনাহ প্রবেশ করতে পারবে না? অথচ আমি মদীনাহ থেকে এসেছি এবং মক্কাহ যাবার ইচ্ছা করছি। আবূ সাঈদ আল খুদরী (রা:) বলেন, তার কথায় আমি তাকে বিশ্বাস করার কাছাকাছি পৌছে গিয়েছিলাম। অতঃপর ইবনু সাইয়্যাদ বললঃ আল্লাহর শপথ আমি তাকে (দাজ্জালকে) চিনি, তার জন্মস্থান চিনি এবং এখন সে কোথায় অবস্থান করছে, তাও আমি জানি। এ কথা শুনে আমি বললাম, তোমার সারাটা দিন ধ্বংস হোক, অকল্যাণকর হোক। *
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২৪০ [ইঃ ফাঃ ৭০৮৬, ইঃ সেঃ ৭১৪০]; বুখারী; সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২৪৬ [ইঃ ফাঃ ২২৪৯])
-       * এখানে ইবনে সাইয়াদ শেষে যেটি বলেছে যেটি তা জানা গায়েবের বিষয় নয়। যেহেতু ইবনে সাইয়াদ শয়তানের ক্ষমতা ব্যবহার করে অনেক বিষয়ই আগে জেনে গিয়েছিল এটিও তাই তার জানা রয়েছে। হাদিসে দাজ্জালের জন্মস্থান ও কোন গোত্রে হবে তার কথা উল্লেখ পাওয়া যায়, আর দাজ্জালকে দেখার বিষয়েও যদি বলি হাদিসে রয়েছে দাজ্জালকে অনেকে (সাহাবীগণ) স্বপ্নেও দেখেছে তার আসল রূপ সহ, এমনকি রসূল ও দেখেছেন। সেই হাদিসটি এই পরিচ্ছেদে দেওয়া হয়েছে। আর দাজ্জাল এখন কোথায় আছে, এই কথাটিই বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। মূলত তখনকার জন্য সঠিক হচ্ছে- তার জন্ম যে কখন হবে এটি জানার মাধ্যমেই এটি বলা যায় যে, সে এখন কোথায় আছে। হয় তার জন্ম হয়েছে বা হয়নি বা আরো পরে হবে। এই তথ্যটুকু জেনেই বলা যায় এই কথা। তাই ইবনে সাইয়াদ এর এটি জানা ছিল বলেই এরকম বলেছে। সঠিকটি হচ্ছে তখন দাজ্জালের জন্মই হয়নি। ভবিষ্যতে হবে যখন তার আবির্ভাবের সময় কাছাকাছি হবে।

রসূলুল্লাহ সালাত আদায়ন্তে হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় মিম্বারে বসে গেলেন। অতঃপর বললেন, প্রত্যেকেই আপন আপন স্থানে বসে যাও। তারপর তিনি বললেন, তোমরা কি জান, আমি কি জন্য তোমাদেরকে সমবেত করেছি? সাহাবায়ে কিরাম বললেন, আল্লাহ ও তার রসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ আমি তোমাদেরকে কোন আশা বা ভয়-ভীতির জন্য জমায়েত করিনি। তবে আমি তোমাদেরকে কেবল এজন্য জমায়েত করেছি যে, তামীম আদ দারী (রা:) প্রথমে খ্রিষ্টান ছিল। সে আমার কাছে এসে বাইআত গ্রহণ করেছে এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। সে আমার নিকট এমন একটি কাহিনী বর্ণনা করেছে যদ্বারা আমার সে বর্ণনার সত্যায়ন হয়ে যায়, যা আমি দাজ্জালের ব্যাপারে তোমাদের নিকট বর্ণনা করেছিলাম।

সে আমাকে বলেছে যে, একবার সে লাখ্‌ম ও জুযাম গোত্রের ত্রিশজন লোকসহ একটি সামুদ্রিক জাহাজে আরোহণ করেছিল। সামুদ্রিক ঝড় এক মাস পর্যন্ত তাদেরকে নিয়ে খেলা করতে থাকে। অতঃপর সূর্যাস্তের সময় তারা সমুদ্রের এক দ্বীপে আশ্রয় গ্রহণ করে। তারপর তারা ছোট ছোট নৌকায় বসে ঐ দ্বীপে প্রবেশ করে। দ্বীপে নামতেই জন্তুর ন্যায় একটি জিনিস তাদের দেখতে পায়। তার পূর্ণ দেহ পশমে ভরা ছিল। পশমের কারণে তার আগা-পাছা চেনার উপায় ছিল না। লোকেরা তাকে বলল, হতভাগা, তুই কে? সে বলল, আমি জাস্‌সা-সাহ। লোকেরা বলল, জাস্‌সা-সাহ! আবার কি? সে বললঃ ঐ যে গীর্জা দেখা যায়, সেখানে চলো। সেখানে এক লোক গভীর আগ্রহে তোমাদের অপেক্ষা করছে। তামীম আদ দারী (রা:) বলেন, তার মুখে এক লোকের কথা শুনে আমরা ভয়ে শঙ্কিত হলাম যে, সে আবার শাইতান (শয়তান) তো নয়! আমরা দ্রুত পদব্রজে গীর্জায় প্রবেশ করতেই এক দীর্ঘাকৃতির এক লোককে দেখতে পেলাম। যা ইতোপূর্বে এমন আমরা আর কক্ষনো দেখিনি। লোহার শিকলে বাঁধা অবস্থায় দু হাটুর মধ্য দিয়ে তার উভয় হাত ঘাড়ের সাথে মিলানো।

আমরা তাকে বললাম, তোর সর্বনাশ হোক, তুই কে? সে বলল, তোমরা আমার সন্ধান কিছু না কিছু পেয়েই গেছ। এখন তোমরা বলো, তোমাদের পরিচয় কি? তারা বলল, আমরা আরবের বাসিন্দা। আমরা সমুদ্রে নৌকায় চড়ে ভ্রমণ করছিলাম। আমরা সমুদ্রকে উত্তাল তরঙ্গে উদ্বেলিত অবস্থায় পেয়েছি। এক মাস পর্যন্ত ঝড়ের কবলে থেকে অবশেষে আমরা তোমার এ দ্বীপে এসে পৌছেছি। অতঃপর ছোট ছোট নৌকায় আরোহণ করে এ দ্বীপে আমরা প্রবেশ করেছি। এখানে আমরা একটি সর্বাঙ্গ পশমে আবৃত জন্তুকে দেখতে পেয়েছি। পশমের মাত্রাতিরিক্তের কারণে আমরা তার আগা-পাছা চিনতে পারছি না। আমরা তাকে বলেছি, তোর সর্বনাশ হোক! তুই কে? সে বলেছে, সে নাকি জাসসা-সাহ। আমরা বললাম, জাসসা-সাহ! আবার কি? তখন সে বলেছে, ঐ যে গীর্জা দেখা যায়, তোমরা সেখানে চলো। সেখানে এক লোক গভীর আগ্রহে তোমাদের অপেক্ষায় আছে। তাই আমরা দ্রুত তোর কাছে এসে গেছি। আমরা তার কথায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি না জানি এ আবার কোন জিন ভূত কিনা?

অতঃপর সে বলল, তোমরা আমাকে বাইসানের খেজুর বাগানের সংবাদ বলো। আমরা বললাম, এর কোন বিষয়টি সম্পর্কে তুই সংবাদ জানতে চাচ্ছিস? সে বলল, বাইসানের খেজুর বাগানে ফল আসে কি না, এ সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করছি। তাকে আমরা বললাম, হ্যাঁ, আছে। সে বলল, সেদিন নিকটেই যেদিন এগুলোতে কোন ফল ধরবে না। তারপর সে বলল, আচ্ছা, তিবরিয়্যা সমুদ্রের ব্যাপারে আমাকে অবগত করো। আমরা বললাম, এর কোন বিষয় সম্পর্কে তুই আমাদের থেকে জানতে চাচ্ছিস? সে বলল, এর মধ্যে পানি আছে কি? তারা বলল, হ্যাঁ, সেখানে বহু পানি আছে। অতঃপর সে বলল, সেদিন বেশি দূরে নয়, যখন এ সাগরে পানি থাকবে না। সে আবার বলল, যুগার এর ঝর্ণার ব্যাপারে তোমরা আমাকে অবহিত করো। তারা বলল, তুই এর কি সম্পর্কে আমাদের নিকট জানতে চাচ্ছিস? সে বলল, এর ঝর্ণাতে পানি আছে কি? আর এ জনপদের লোকেরা তাদের ক্ষেত্রে এ ঝর্ণার পানি দেয় কি? আমরা বললাম, হ্যাঁ, এতে অনেক পানি আছে এবং এ জনপদের লোকেরা এ পানির মাধ্যমেই তাদের ক্ষেত আবাদ করে।

সে আবার বলল, তোমরা আমাকে উম্মীদের নবীর ব্যাপারে খবর দাও। সে এখন কি করছে? তারা বলল, তিনি মক্কাহ থেকে হিজরত করে মদীনায় চলে এসেছেন। সে জিজ্ঞেস করল, আরবের লোকেরা তার সাথে যুদ্ধ করেছে কি? আমরা বললাম, হ্যাঁ, করেছে। সে বলল, সে তাদের সঙ্গে কিরূপ আচরণ করেছে। আমরা তাকে খবর দিলাম যে, তিনি আরবের পার্শ্ববর্তী এলাকায় জয়ী হয়েছেন এবং তারা তার বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছে। সে বলল, এ কি হয়েই গেছে? আমরা বললাম, হ্যাঁ। সে বলল, বশ্যতা স্বীকার করে নেয়াই জনগণের জন্য কল্যাণকর ছিল।

এখন আমি নিজের ব্যাপারে তোমাদেরকে বলছি, আমিই মাসীহ দাজ্জাল। অতি সত্ত্বরই আমি এখান থেকে বাইরে যাবার অনুমতি পেয়ে যাব। বাইরে যেয়ে আমি সমগ্র ভূ-পৃষ্ঠ প্রদক্ষিণ করব। চল্লিশ দিনের ভেতর এমন কোন জনপদ থাকবে না, যেখানে আমি প্রবেশ না করব। তবে মক্কাহ্ ও তাইবাহ এ দুটি স্থানে আমার প্রবেশ নিষিদ্ধ। যখন আমি এ দুটির কোন স্থানে প্রবেশের ইচ্ছা করব, তখন এক ফেরেশতা উন্মুক্ত তরবারি হাতে সম্মুখে এসে আমাকে বাধা দিবে। এ দুটি স্থানের সকল রাস্তায় ফেরেশতাদের পাহারা থাকবে।

বর্ণনাকারী বলেন, তখন রসূলুল্লাহ তার ছড়ি দ্বারা মিম্বারে আঘাত করে বললেন, এ হচ্ছে তাইবাহ, এ হচ্ছে তাইবাহ, এ হচ্ছে তাইবাহ। অর্থাৎ- তাইবাহ অর্থ এ মদীনাই। সাবধান! আমি কি এ কথাটি ইতোপূর্বে তোমাদেরকে বলিনি? তখন লোকেরা বলল, হ্যাঁ, আপনি বলেছেন। রসূলুল্লাহ বললেন, তামীম আদ দারীর কথাটি আমার খুবই ভালো লেগেছে। যেহেতু তা সামঞ্জস্যপূর্ণ আমার ঐ বর্ণনার, যা আমি তোমাদেরকে দাজ্জাল, মদীনাহ ও মক্কাহ বিষয়ে ইতোপূর্বে বলেছি। জেনে রেখ। উল্লেখিত দ্বীপ সিরিয়া সাগরে অথবা ইয়ামান সাগরের পার্শ্বস্থ সাগরের মাঝে অবস্থিত। যা পৃথিবীর পূর্বদিকে অবস্থিত, পৃথিবীর পূর্বদিকে অবস্থিত, পৃথিবীর পূর্বদিকে অবস্থিত। এ সময় তিনি নিজ হাত দ্বারা পূর্ব দিকে ইশারাও করলেন। বর্ণনাকারী ফাতিমাহ বিনতু কায়স (রা:) বলেন, এ হাদীস আমি রসূলুল্লাহ হতে সংরক্ষণ করেছি। * (প্রয়োজনীয় অংশ)
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২৭৬-(১১৯/২৯৪২) [ইঃ ফাঃ ৭১১৯, ইঃ সেঃ ৭১৭২])
-       * এখানে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যে এই ঘটনাটি তামিম আর দারী (রা:) এর একটি স্বপ্ন ছিল। স্বপ্নের বর্ণনা এখানে এসেছে। বাস্তবে নয় তবে স্বপ্নটি সত্য ছিল এবং একারণেই সে ইসলাম গ্রহণ করেছেন পরে। তবে শেষের কথার (সেই দ্বীপ যেথায় অবস্থিত) অর্থ হয়তো এটি যে দাজ্জালের আবির্ভাব মুহূর্তে সে ঐ দ্বীপে থাকবে আর অন্যান্য হাদিস থেকেও পাওয়া যায় যে দাজ্জাল পূর্ব দিক থেকে বের হবে যেমন ইরান ও ইরানের ইস্ফাহান শহরের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যদি কেউ বলে যে এটি স্বপ্ন ছিল না, তাহলে এর পরবর্তী ৭২৭৯ নং হাদিসে বর্ণিত আছে যে, এক সময় তার সম্প্রদায়ের কতিপয় লোক সমুদ্রে ভ্রমণ করছিল। অতঃপর সমুদ্রের মাঝে তাদের জাহাজটি ভেঙ্গে গেল। উপায়ান্তর না পেয়ে তাদের কেউ কেউ নৌকার কাষ্ঠে ভর করে সামুদ্রিক দ্বীপে গিয়ে পৌছে। এখন প্রশ্ন হলো যেখানে জাহাজ ভেঙ্গে গেছে এবং নৌকার কাঠে ভর করে দ্বীপে পৌছায় আর যা সমুদ্রে তাহলে তারা আবার ফিরে আসলো কিভাবে সেখান থেকে? আর এটির অবস্থান কোথায় ছিল সেটি হাদিসে বলা হয়েছে যা অনেক দূরবর্তী জায়গা।

আবু বাকরা রহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুসাইলামার ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ কথা বলার পূর্বে কিছু কথা বলেছিল। অতঃপর রসূল খুতবা দেওয়ার জন্য দাঁড়ালেন। অতঃপর বললেন, পর কথা হল এই যে এই ব্যক্তি (ইবনে সাইয়াদ), যার ব্যাপারে তোমরা বেশী আলোচনা করছো, সে হলো ত্রিশজন বড় মিথ্যাবাদীদের মধ্যে একজন বড় মিথ্যাবাদী। যারা মাসিহ এর আগে বের হবে। সে একমাত্র মদিনা ব্যতীত পৃথিবীর প্রত্যেকটি এলাকায় যাবে এবং তার প্রত্যেক ছিদ্র দিয়ে ভয় দেখাবে। মাসিহ এর ভয় থেকে দুইজন ফেরেশতা মদিনাকে প্রতিরক্ষা করবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৫৪৪; তাহকীক: মাকতু, মুআল্লাক। তবে মা'না সহীহ)

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হুজইফা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদিন রসূলুল্লাহ এর কাছে জানতে চাইলাম যে, ইয়া রসূলাল্লাহ! দাজ্জাল আগে আসবে নাকি ঈসা (আঃ) আগে আসবেন? জবাবে রসূলুল্লাহ বললেন প্রথমে দাজ্জালের আবির্ভাব হবে, এরপর হযরত ঈসা (আঃ) আসবেন। এরপর কারো ঘোড়া বাচ্চা দিলে সেটার উপর সওয়ারের উপযুক্ত হওয়ার সময় আসার পূর্বেই কিয়ামত এসে যাবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৩১০ [পথিক প্রকা: ১৩০৮; তাহকীক: যঈফ])

আবূ হুরায়রাহ্ (রা:) নবী হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন: দাজ্জাল একটি ধবধবে সাদা বর্ণের গাধায় আরোহী হয়ে বের হবে। তার দু কানের মধ্যবর্তী স্থানটি সত্তর (দূরত্ব) পরিমাণ চওড়া হবে। (বায়হাক্বীকিতাবুল বাসি ওয়ান্ নুশূর)
-       (যঈফে জিদ্দান (খুবই দুর্বল), মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৯৩; য'ঈফাহ ১৯৬৮; মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩৭৫৩৬; কারণ সনদে আবদুল আযীয ইবনু ইয়াহইয়া আল মাদানী মাতরূক, ইবরাহীম ইবনুল মুনযির তাকে মিথ্যুক বলেছেন)
নাওয়াস ইবনে সামআন (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ এক সকালে দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তাতে তিনি একবার নিম্নস্বরে এবং একবার উচ্চস্বরে বাক ভঙ্গিমা অবলম্বন করলেন। শেষ পর্যন্ত আমরা [প্রভাবিত হয়ে] মনে মনে ভাবলাম যে, সে যেন সামনের এই খেজুর বাগানের মধ্যেই রয়েছে। তারপর আমরা যখন রসূলুল্লাহ -এর নিকট গেলাম, তখন তিনি আমাদের উদ্বিগ্নতা দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের কি হয়েছে?

আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আজ সকালে দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে এমন নিম্ন ও উচ্চ কণ্ঠে বর্ণনা করলেন, যার ফলে আমরা ধারণা করে বসি যে, সে যেন খেজুর বাগানের মধ্যেই রয়েছে। তিনি বললেন, দাজ্জাল ছাড়া তোমাদের ব্যাপারে অন্যান্য জিনিসকে আমার আরও বেশী ভয় হয়। আমি তোমাদের মাঝে থাকাকালে দাজ্জাল যদি আত্মপ্রকাশ করে, তাহলে আমি স্বয়ং তোমাদের পক্ষ থেকে তার প্রতিরোধ করব। আর যদি তার আত্মপ্রকাশ হয় এবং আমি তোমাদের মাঝে না থাকি, তাহলে [তোমরা] প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ নিজ আত্মরক্ষা করবে। আর আল্লাহ স্বয়ং প্রতিটি মুসলিমের জন্য [আমার] প্রতিনিধিত্ব করবেন। সে দাজ্জাল নব-যুবক হবে, তার মাথার কেশরাশি হবে খুব বেশি কোঁচকানো। তার একটি চোখ [আঙ্গুরের ন্যায়] ফোলা থাকবে। যেন সে আব্দুল উয্যা ইবনে ক্বাত্বানের মত দেখতে হবে। সুতরাং তোমাদের যে কেউ তাকে পাবে, সে যেন তার সামনে সূরা কাহাফের শুরুর [দশ পর্যন্ত] আয়াতগুলি পড়ে। সে শাম ও ইরাকের মধ্যবর্তী স্থানে আবির্ভূত হবে। আর তার ডাইনে-বামে [এদিকে ওদিকে] ফিতনা ছড়াবে। হে আল্লাহর বান্দারা। [ঐ সময়] তোমরা অবিচল থাকবে।আমরা বললাম, পৃথিবীতে তার অবস্থান কতদিন থাকবে? তিনি বললেন, চল্লিশ দিন পর্যন্ত। আর তার একটি দিন এক বছরের সমান দীর্ঘ হবে। একটি দিন হবে এক মাসের সমান লম্বা। একটা দিন এক সপ্তাহের সমান হবে এবং বাকি দিনগুলি প্রায় তোমাদের দিনগুলির সম পরিমাণ হবে।

আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! যেদিনটি এক বছরের সমান লম্বা হবে, তাতে আমাদের একদিনের [পাঁচ ওয়াক্তের] নামাযই কি যথেষ্ট হবে? তিনি বললেন, তোমরা [দিন রাতের ২৪ ঘণ্টা হিসাবে] অনুমান করে নামায আদায় করতে থাকবে।

আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ভূপৃষ্ঠে তার দ্রুত গতির অবস্থা কিরূপ হবে? তিনি বললেন, তীব্র বায়ু তাড়িত মেঘের ন্যায় [দ্রুত বেগে ভ্রমণ করে অশান্তি ও বিপর্যয় ছড়াবে।] সুতরাং সে কিছু লোকের নিকট আসবে ও তাদেরকে তার দিকে আহ্বান জানাবে এবং তারা তার প্রতি ঈমান আনবে ও তার আদেশ পালন করবে। সে আকাশকে বৃষ্টি বর্ষণ করতে আদেশ করবে, আকাশ আদেশত্রুমে বৃষ্টি বর্ষণ করবে। আর জমিনকে [গাছ-পালা] উদ্গত করার নির্দেশ দেবে। জমিন তার নির্দেশত্রুমে তাই উদ্গত করবে। সুতরাং [সে সব গাছ-পালা ভক্ষণ করে] সন্ধ্যায় তাদের গবাদি পশুদের কুঁজ [ও ঝুঁটি] অধিক উঁচু হবে ও তাদের পালানে অধিক পরিমাণে দুধ ভরে থাকবে। উদর পূর্ণ আহার জনিত তাদের পেট টান হয়ে থাকবে। অতঃপর দাজ্জাল [অন্য] লোকের নিকট যাবে ও তার দিকে [আসার জন্য] তাদেরকে আহ্বান জানাবে। তারা কিন্তু তার ডাকে সাড়া দেবে না। ফলে সে তাদের নিকট থেকে ফিরে যাবে। সে সময় তারা চরম দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হয়ে পড়বে ও সর্বস্বান্ত হবে।

তারপর সে কোন প্রাচীন ধ্বংসস্তূপের নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় সেটাকে সম্বোধন করে বলবে, তুই তোর গচ্ছিত রত্নভাণ্ডার বের করে দে। তখন সেখানকার গুপ্ত রত্নভাণ্ডার মৌমাছিদের নিজ রাণী মৌমাছির অনুসরণ করার মতো [মাটি থেকে বেরিয়ে] তার পিছন ধরবে। তারপর এক পূর্ণ যুবককে ডেকে তাকে অস্ত্রাঘাতে দ্বিখণ্ডিত করে তীর নিক্ষেপের লক্ষ্যমাত্রার দূরত্বে নিক্ষেপ করে দেবে। তারপর তাকে ডাক দেবে। আর সে উজ্জ্বল সহাস্য-বদনে তার দিকে [অক্ষত শরীরে] এগিয়ে আসবে। দাজ্জাল এরূপ কর্ম-কাণ্ডে মগ্ন থাকবে। ইত্যবসরে মহান আল্লাহ তাআলা মসীহ ইবন মারয়্যাম আঃ-কে পৃথিবীতে পাঠাবেন। তিনি দামেস্কের পূর্বে অবস্থিত শেবত মিনারের নিকট অর্স ও জাফরান মিশ্রিত রঙের দুই বস্ত্র পরিহিত অবস্থায় দুজন ফিরিশ্তার ডানাতে হাত রেখে অবতরণ করবেন। তিনি যখন মাথা নিচু করবেন, তখন মাথা থেকে বিন্দু বিন্দু পানি ঝরবে এবং যখন মাথা উঁচু করবেন, তখনও মতির আকারে তা গড়িয়ে পড়বে। যে কাফেরই তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাসের নাগালে আসবে, সে সঙ্গে সঙ্গে প্রাণ হারাবে। তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস তাঁর দৃষ্টি যত দূর যাবে, তত দূর পৌঁছবে। অতঃপর তিনি দাজ্জালের সন্ধান চালাবেন। শেষ পর্যন্ত [জেরুজালেমের] লুদ প্রবেশ দ্বারে তাকে ধরে ফেলবেন এবং অনতিবিলম্বে তাকে হত্যা করে দেবেন। তারপর ঈসা আলাইহিস সালাম এমন এক জনগোষ্ঠীর নিকট আসবেন, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা দাজ্জালের চক্রান্ত ও ফিতনা থেকে মুক্ত রেখেছেন। তিনি তাদের চেহারায় হাত বোলাবেন [বিপদমুক্ত করবেন] এবং জান্নাতে তাদের মর্যাদাসমূহ সম্পর্কে তাদেরকে জানাবেন। এসব কাজে তিনি ব্যস্ত থাকবেন এমন সময় আল্লাহ তাআলা তাঁর নিকট অহি পাঠাবেন যে, আমি আমার কিছু বান্দার আবির্ভাব ঘটিয়েছি, তাদের বিরুদ্ধে কারো লড়ার ক্ষমতা নেই। সুতরাং তুমি আমার প্রিয় বান্দাদের নিয়ে ত্বূর পর্বতে আশ্রয় নাও। আল্লাহ তাআলা য়্যাজুজ-মাজুজ জাতিকে পাঠাবেন। তারা প্রত্যেক উচ্চস্থান থেকে দ্রুত বেগে ছুটে যাবে। তাদের প্রথম দলটি ত্বাবারী হ্রদ পার হবার সময় তার সম্পূর্ণ পানি এমনভাবে পান করে ফেলবে যে, তাদের সর্বশেষ দলটি সেখান দিয়ে পার হবার সময় বলবে, এখানে এক সময় পানি ছিল। আল্লাহর নবী ঈসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর সাথীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়বেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত তাঁদের কাছে একটি গরুর মাথা, বর্তমানে তোমাদের একশটি স্বর্ণমুদ্রা অপেক্ষা অধিক উত্তম হবে। সুতরাং আল্লাহর নবী ঈসা আলাইহিস সালাম এবং তাঁর সঙ্গীগণ আল্লাহর কাছে দোআ করবেন। ফলে আল্লাহ তাআলা তাদের [ইয়্যাজূজ-মাজূজ জাতির] ঘাড়সমূহে এক প্রকার কীট সৃষ্টি করে দেবেন। যার শিকারে পরিণত হয়ে তারা এক সঙ্গে সবাই মারা যাবে। তারপর আল্লাহ তাআলার নবী ঈসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর সাথীগণ নিচে নেমে আসবেন। তারপর [এমন অবস্থা ঘটবে যে,] সেই অঞ্চল তাদের মৃতদেহ ও দুর্গন্ধে ভরে থাকবে; এক বিঘত জায়গাও তা থেকে খালি থাকবে না। সুতরাং ঈসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর সঙ্গীরা আল্লাহর কাছে দোআ করবেন। ফলে তিনি বুখতী উটের ঘাড়ের ন্যায় বৃহদকায় এক প্রকার পাখি পাঠাবেন। তারা উক্ত লাশগুলিকে তুলে নিয়ে গিয়ে আল্লাহ যেখানে চাইবেন সেখানে নিয়ে গিয়ে নিক্ষেপ করবে। তারপর আল্লাহ তাআলা এমন প্রবল বৃষ্টি বর্ষণ করবেন যে, কোন ঘর ও শিবির বাদ পড়বে না। সুতরাং সমস্ত জমিন ধুয়ে মসৃণ পাথরের ন্যায় অথবা স্বচ্ছ কাঁচের ন্যায় পরিষ্কার হয়ে যাবে। তারপর জমিনকে আদেশ করা হবে যে, তুমি আপন ফল-মূল যথারীতি উৎপন্ন কর ও নিজ বরকত পুনরায় ফিরিয়ে আন। সুতরাং [বরকতের এত ছড়াছড়ি হবে যে,] একদল লোক একটি মাত্র ডালিম ফল ভক্ষণ করে পরিতৃপ্ত হবে এবং তার খোসার নীচে ছায়া অবলম্বন করবে। পশুর দুধে এত প্রাচুর্য প্রদান করা হবে যে, একটি মাত্র দুগ্ধবতী উটনী একটি সম্প্রদায়ের জন্য যথেষ্ট হবে। একটি দুগ্ধবতী গাভী একটি গোত্রের জন্য যথেষ্ট হবে। আর একটি দুগ্ধবতী ছাগী কয়েকটি পরিবারের জন্য যথেষ্ট হবে। তারা ঐ অবস্থায় থাকবে, এমন সময় আল্লাহ তাআলা এক প্রকার পবিত্র বাতাস পাঠাবেন, যা তাদের বগলের নীচে দিয়ে প্রবাহিত হবে। ফলে প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জীবন হরণ করবে। তারপর স্রেফ দুর্বৃত্ত ও অসৎ মানুষজন বেঁচে থাকবে, যারা এই ধরার বুকে গাধার ন্যায় প্রকাশ্যে লোকচক্ষুর সামনে ব্যভিচারে লিপ্ত হবে। সুতরাং এদের উপরেই সংঘটিত হবে মহাপ্রলয় [কিয়ামত]।
-       (সহীহ, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন) ১/১৮১৭; সহীহুল মুসলিম ২৯৩৭; তিরমিযী ২২৪০, ৪০০১; আবূ দাউদ ৪৩২১; সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ৪০৭৫; মুসনাদে আহমাদ ১৭১৭৭; তাখরীজুল ফাদাইলুশ শাম ২৫; সহীহাহ ১৭৮০)

জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রা:) থেকে বর্ণিত,  রসূলুল্লাহ এরশাদ করেন, দাজ্জাল বের হবে দ্বীনের খলৎমলৎ অবস্থায় এবং (কুরআন সুন্নাহর) ইলম থেকে (উম্মাহর পাইকারী হারে লেজগুটিয়ে) পিছুটান কালে। (মানুষকে ফিতনায় ফেলার জন্য) তার (হাতে) থাকবে চল্লিশ রাত; (যে সময়টিতে) সে পৃথিবীতে ছুটে বেড়াবে। (ওই চল্লিশ দিনের মধ্যে) একটি দিন হবে (এমন, যার দৈর্ঘ হবে) এক বছরের মতো, একটি দিন হবে (এমন, যার দৈর্ঘ হবে) এক মাসের মতো, একটি দিন হবে (এমন, যার দৈর্ঘ হবে) এক সপ্তাহের মতো। অতঃপর তার (বাকি) দিনগুলোর সবটাই হবে তোমাদের এই (দুনিয়ার স্বাভাবিক) দিনগুলোর মতো। তার থাকবে গাধা, যার উপরে সে আরোহন করবে। তার (গাধার) দুই কানের মধ্যবর্তী দূরুত্ব হবে চল্লিশ হাত। সে(ই দাজ্জাল) মানুষকে বলবে: আমি তোমাদের রব (প্রভু)। সে হবে (এক-চোখ) অন্ধ (এক ব্যাক্তি), আর নিশ্চই তোমাদের (প্রকৃত) রব (আল্লাহ তাআলা) অন্ধ নন। (সুতরাং, তোমরা ওর ফেতনায় পড়ে ওকে চিনতে ভুল করো না যেন)। ওর দুই চোখের মাঝখানে (কপালের কাছে) লিখা থাকবে কাফের ك ف ر’ -(এরকম) অক্ষরে, যা সকল মুমিন পড়তে পারবে -(চাই সে) লেখাপড়া জানুক কিংবা নিরক্ষর হোক। সে মদিনা ও মক্কা ছাড়া (পৃথিবীর) সকল পানি ও ঝরনার (স্থানে) যেতে পারবে; (কারণ) ওই দুই(স্থানে প্রবেশ করা)কে আল্লাহ ওর উপরে হারাম করে দিয়েছেন। উহার বিভিন্ন প্রবেশ পথে ফেরেশতারা দাঁড়িয়ে থাকবে। ওর সাথে থাকবে রুটির পাহাড়। যে ব্যাক্তি তার অনুসরণ করবে সে ছাড়া (বাকি) মানুষ কষ্টেক্লেশে পড়ে যাবে। ওর সাথে থাকবে দুটি নহর (প্রস্রবন/নদী/নালা)। আমি ওই দুটি সম্পর্কে ভাল করে জানি। সে ওর একটি নহরকে বলবে জান্নাত এবং একটি নহরকে বলবে দোযখ। সে সেটিকে জান্নাত নাম দিয়ে যাকে তাতে ঢুকাবে সেটা হবে দোযখ এবং সে দোযখ নাম দিয়ে যাকে তাতে ঢুকাবে সেটা হবে জান্নাত। আল্লাহ তার সাথে শয়তানদেরকে পাঠাবেন, তারা মানুষের সাথে কথা বলবে। তার সাথে থাকবে বিশাল ফিতনা। সে আকাশকে নির্দেশ দিবে, তখন বৃষ্টি হবে, যা মানুষজন দেখতে পাবে। সে (এক যুবক) ব্যাক্তিকে হত্যা করবে, অতঃপর (আবার) তাকে জীবিত করবে, যা মানুষজন দেখতে পাবে। সে(ই যুবকের পরে সে) ছাড়া আর কোনো (মুমিন) মানুষের উপর তার কর্তৃত্ব চলবে না। সে(ই দাজ্জাল তথাকার লোকজনকে উদ্দেশ্য করে) বলবে: হে লোক সকল! (তোমাদের) রব (প্রভু) ছাড়া আর কেউ কি এমন কাজ করতে পারে? তখন মুসলমানরা (তার থেকে) পালিয়ে শাম-এর ধুঁয়োর পাহাড়ের দিকে যাবে। তখন সে তাদের কাছে গিয়ে তাদেরকে অবরোধ করে রাখবে। পরে সে তাদের (প্রতি ওই) অবরোধকে সুকঠিন করে তুলবে (যাতে তারা ওর অনুসরন করতে বাধ্য হয়)। এতে তারা চরম কষ্টক্লেশে পড়ে যাবে। এরপর (এক সময় আসমান থেকে) ঈসা ইবনে মারইয়াম (আ.) নাজিল হবেন। তারপর তিনি এক জাদুময়ী ডাক দিবেন। তারপর তিনি বলবেন: হে লোক সকল! (এই) খবিস মিথ্যুকের দিকে (যুদ্ধের জন্য) বেরিয়ে পড়তে কী তোমাদেরকে বাঁধা দিয়ে রেখেছে? তারা বলবে: এই লোকটি জ্বীন্নী (জ্বীন দ্বারা সাহায্যপ্রাপ্ত)। (যখন মুসলমানরা বুঝবে যে, ঈসা ইবনে মারইয়াম আ.-এর মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য এসে গেছে) তখন তারা (দাজ্জাল ও তার বাহীনির দিকে যুদ্ধের জন্য) এগুতে থাকবে। ঈসা ইবনে মারইয়াম (আ.) তাদের সাথে থাকাবস্থাতেই নামাযের (সময় হয়ে গেলে নামাযের জামাআতের) ইকামত দেয়া হবে। তাঁকে বলা হবে: ইয়া রুহাল্লাহ ! আপনি (নামাযের ইমামতীর জন্য) এগিয়ে যান। (কিন্তু) তখন তিঁনি তোমাদের (মুসলমানদের আমীর ও) ইমামকেই (নামাযের ইমামতীর জন্য) অগ্রসর হতে বলবেন। তখন (তোমাদের ইমাম, জাহজাহ) নামায পড়াবেন। যখন ফজরের নামায পড়া হবে, তখন তারা (মোকাবেলার উদ্দেশ্যে সকলে মিলে) ওর দিকে অগ্রসব হবে। মিথ্যুক (খবীস দাজ্জাল) যখন (ঈসা ইবনে মারইয়াম আ.-কে) দেখবে, তখন -লবন যেভাবে পানিতে গলে যায়, সেও (তেমনি ভাবে) গলে যেতে থাকবে। পরে তিঁনি ওর দিকে ধাওয়া করে ওকে (বাবে-লুদ নামক স্থানে পাকড়াও করে) হত্যা করে ফেলবেন। অবশেষে গাছগাছালী এবং সমুদ্র পর্যন্ত (এই বলে) চিৎকার দিবে: ইয়া রুহাল্লাহ ! এই যে (এখানে) ইহূদী! পরে (ইহূদীদের মধ্যে) এমন কেউ অবশিষ্ট থাকবে না, যে তাঁর অনুগত্য ইত্তেবা-অনুসরণ করবে না, আর তিঁনি তাকে হত্যা না করবেন।
-       (মুসনাদে আহমদ ৩/৩৬৭; শারহু মুশকিলিল আছার, ত্বাহাবী ৫৬৯৪; আত-তাউহীদ, ইবনে খুযাইমাহ ১/১০২; মুসতাদরাকে হাকিম ৩/৫৩০)

যুনাদাহ বিন আবি উমাইয়্যাহ আল-আযদী রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, (একবার) আমি এবং এক আনসারী ব্যাক্তি -রসূলুল্লাহ -এর এক সাহাবীর কাছে গেলাম। পরে আমরা তাঁকে বললাম: আপনি রসূলুল্লাহ থেকে দাজ্জালের ব্যাপারে কী আলোচনা করতে শুনেছেন তা আমাদের কাছে বর্ণনা করুন। আপনি তাঁর থেকে ছাড়া অন্য কারো হাদিস আমাদের কাছে বর্ণনা করবেন না -চাই সে যতই (সত্যবাদী হিসেবে) সত্যায়িত হোক না কেনো। তিনি বললেন: নবী (একদিন) আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে কথা বলছিলেন, এমতাবস্থায় তিনি বললেন: আমি তোমাদেরকে দাজ্জালের ব্যাপারে সতর্ক করছি। (এভাবে তিনি কথাটা) তিনবার (বললেন)। (অত:পর বললেন:) আমার পূর্বে এমন কোনো নবী ছিলেন না, যিনি তাঁর উম্মতকে ওর ব্যাপারে সতর্ক করেন নি। (তবে দাজ্জাল তাঁদের কারোর জামানাতেই আসেনি)। হে (আমার) উম্মত! নিশ্চই সে তোমাদের মধ্যে (আসবে)। নিশ্চই সে কোকড়ানো চুল ওয়ালা বাদামী বর্ণের (ও) বাম চোখ অন্ধ (এক) ব্যাক্তি। তার সাথে (থাকবে) জান্নাত ও দোযখ। বস্তুতঃ তার দোযখটি হল জান্নাত এবং তার জান্নাতটি হল দোযখ। তার সাথে থাকবে রুটির পাহাড় এবং পানির নহর। সে (আকাশকে নির্দেশ দিয়ে) বৃষ্টি বর্ষাবে, আবার (জমিনকে নির্দেশ দিয়ে) তাতে ফলন হতে দিবে না। সে এক (যুবক) ব্যাক্তির উপরে কর্তৃত্ব খাটিয়ে তাকে হত্যা করবে, (যার পর) সে ভিন্ন (মুমিনদের) অন্য কারোর উপরে সে কর্তৃত্ব খাটাতে পারবে না। সে পৃথিবীতে চল্লিশ দিন থাকবে এবং তাতে সে প্রতিটি মানহাল (পানি-ধারা)-এর কাছে পৌছবে। তবে সে চারটি মসজিদের কাছে যেতে পারবে না: (মক্কার) মসজিদে হারাম, মসজিদে মদিনা, মসজিদে তূর এবং মসজিদে আক্বসা (বায়তুল মাকদিস)। তোমাদের উপরে (যেন) ওর বিভ্রান্তি চড়াও না হতে পারে। কারণ, তোমাদের (প্রকৃত) রব (প্রভু আল্লাহ তাআলা) অন্ধ নন।
-       (মুসনাদে আহম ৫/৪৩৫; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শায়বাহ ১৫/১৪৭ হাঃ ১৯৩৫২; মুসনাদে হারেছ, হাঃ ৭৮৪; শারহু মুশকিলিল আছার, ইমাম ত্বাহাবী ৪/৩৭৬; আস-সুন্নাহ, ইমাম ইবনে হাম্বল ২/৪৫২ হাঃ ১০১৬, ১২৩২; আল-বাছ, ইমাম বাইহাকী, হাদিস ১৪৯; আশ-শারইয়্যাহ, ইমাম আযরী ৩৭৫; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী ৭/৩৪৩)

আবূ উমামা আল-বাহিলী (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। আমাদের উদ্দেশে দেয়া তাঁর দীর্ঘ ভাষণের অধিকাংশ ছিলো দাজ্জাল প্রসঙ্গে। তিনি আমাদেরকে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেন। তার সম্পর্কে তিনি তাঁর ভাষণে বলেনঃ আল্লাহ আদমের বংশধর সৃষ্টি করার পর থেকে দাজ্জালের ফেতনার চেয়ে মারাত্মক কোন ফেতনা পৃথিবীর বুকে সংঘটিত হবে না। আল্লাহ এমন কোন নবী পাঠাননি যিনি তাঁর উম্মাতকে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেননি। আর আমি সর্বশেষ নবী এবং তোমরা সর্বশেষ উম্মাত। সে অবশ্যই তোমাদের মাঝে আত্মপ্রকাশ করবে। আমি তোমাদের মধ্যে বর্তমান থাকতে যদি সে আবির্ভূত হয়, তবে আমিই প্রত্যেক মুসলিমের পক্ষ থেকে প্রতিরোধকারী হবো। আর যদি সে আমার পরে আবির্ভূত হয় তবে প্রত্যেক মুসলিমকে নিজের পক্ষ থেকে প্রতিরোধকারী হতে হবে। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আমার প্রতিনিধি।

নিশ্চয় সে সিরিয়া ও ইরাকের খাল্লা নামক স্থান থেকে বের হবে। অতঃপর সে তার ডানে ও বামে সর্বত্র বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা (দীনের উপর) অবিচল থাকবে। কেননা আমি এখনই তোমাদের নিকট এমন সব নিকৃষ্ট অবস্থা বর্ণনা করবো যা আমার পূর্বে, বিশেষভাবে কোন নবীই তাঁর উম্মাতের নিকট বলেননি।

সে তার দাবির সূচনায় বলবে, আমি নবী। অথচ আমার পরে কোন নবী নাই। অতঃপর সে দাবি করবে, আমি তোমাদের রব। অথচ মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তোমরা তোমাদের প্রভুকে দেখতে পাবে না। সে হবে অন্ধ। অথচ তোমাদের রব মোটেই অন্ধ নন। তার দু চোখের মাঝখানে লেখা থাকবে কাফের। শিক্ষিত ও অশিক্ষিত প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তিই এ লেখাটি পড়তে সক্ষম হবে।

দাজ্জালের অনাসৃষ্টির মধ্যে একটি এই যে, তার সাথে জান্নাতে ও জাহান্নাম থাকবে। তবে তার জাহান্নাম হবে জান্নাত এবং তার জান্নাত হবে জাহান্নাম। যে ব্যক্তি তার জাহান্নামের বিপদে পতিত হবে, সে যেন আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে এবং সূরা কাহ্ফ-এর প্রথমাংশ তিলাওয়াত করে। তাহলে সেই জাহান্নাম হবে তার জন্য শীতল আরামদায়ক, ইবরাহীম (আ)-এর বেলায় আগুন যেরূপ হয়েছিল।

দাজ্জালের আরেকটি অনাসৃষ্টি এই যে, সে এক বেদুঈনকে বলবে, আমি যদি তোমার পিতা-মাতাকে তোমার সামনে জীবিত করে তুলতে পারি তবে তুমি কি এই সাক্ষ্য দিবে যে, নিশ্চয় আমি তোমার রব? সে বলবে, হাঁ। তখন (দাজ্জালের নির্দেশে) দুটি শয়তান তার পিতা-মাতার অবয়ব ধারণ করে হাযির হবে এবং বলবে, হে বৎস! তার অনুগত্য করো। সে-ই তোমার রব।

দাজ্জালের আরেকটি অনাসৃষ্টি এই যে, সে জনৈক ব্যক্তিকে পরাভূত করে হত্যা করবে। অতঃপর করাত দ্বারা তাকে ফেড়ে দু টুকরা করে ছুঁড়ে মারবে। অতঃপর সে বলবে, তোমরা আমার এ বান্দার দিকে লক্ষ্য করো, আমি একে এখনই জীবিত করবো। তারপরও কেউ বলবে কি যে, আমি ব্যতীত তার অন্য কেউ রব আছে? এরপর আল্লাহ তাআলা সে লোকটিকে জীবিত করবেন। তখন (দাজ্জাল) খবীস তাকে বলবে, তোমার রব কে? সে বলবে, আমার রব আল্লাহ। আর তুই তো আল্লাহর দুশমন। তুই তো দাজ্জাল। আল্লাহর শপথ! আজ আমি তোর সম্পর্কে প্রত্যক্ষভাবে বুঝতে পারছি ( যে, তুই-ই দাজ্জাল)।

আবুল হাসান আত-তানাফিসী (রা:) বলেন ... আবূ সাঈদ (রা:) বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে জান্নাতেই সে ব্যক্তির সর্বাধিক মর্যাদা হবে। রাবী বলেন, আবূ সাঈদ (রা:) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমরা ধারণা করতাম যে, এ ব্যক্তি উমার ইবনুল খাত্তাব, এমনকি তিনি শাহাদত বরণ করেন।

মুহারিবী (রা:) বলেন, এরপর আমরা আবূ রাফে (রা:) -র সূত্রে বর্ণিত হাদীসে ফিরে যাচিছ। তিনি বলেন, দাজ্জালের আরেকটি অনাচার এই যে, সে আসমানকে বৃষ্টি বর্ষাতে নির্দেশ দিলে বৃষ্টি হবে এবং যমীনকে ফসল উৎপাদনের নির্দেশ দিলে ফসল উৎপাদিত হবে।

দাজ্জালের আরেকটি অনাচার এই যে, সে একটি জনপদ অতিক্রমকালে তারা তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করবে। ফলে তাদের গবাদি পশু সমূলে ধ্বংস হয়ে যাবে।

দাজ্জালের আরেকটি অনাচার এই যে, সে আরেকটি জনপদ অতিক্রমকালে তারা তাকে সত্য বলে মেনে নিবে। সে আসমানকে বৃষ্টি বর্ষণের নির্দেশ দিলে বৃষ্টি বর্ষিত হবে। অতঃপর সে যমীনকে শস্য উৎপাদনের নির্দেশ দিলে যমীন শস্য উৎপাদন করবে। যমীন পর্যাপ্ত ফসলাদি, ঘাসপাতা ও তৃণলতা উদগত করবে, এমনকি তাদের গবাদি পশু সেদিন সন্ধ্যায় মোটাতাজা এবং উদর পূর্তি করে দুধে স্তন ফুলিয়ে ফিরে আসবে।

অবস্থা এই হবে যে, সে গোটা দুনিয়া চষে বেড়াবে এবং তা তার পদানত হবে, মক্কা ও মদীনা ব্যতীত। এই দু শহরের প্রবেশদ্বারে উন্মুক্ত তরবারিসহ সশস্ত্র অবস্থায় ফেরেশতা মোতায়েন থাকবেন। শেষে সে একটি ক্ষুদ্র লাল পাহাড়ের পাদদেশে অবতরণ করবে যা হবে তৃণলতা শূন্য স্থানের শেষভাগ। এরপর মদীনা তার অধিবাসীসহ তিনবার প্রকম্পিত হবে। ফলে মুনাফিক নারী-পুরুষ মদীনা থেকে বের হয়ে দাজ্জালের সাথে যোগ দিবে। এভাবে মদীনা তার ভেতরকার নিকৃষ্ট ময়লা বিদূরিত করবে, যেমনিভাবে হাঁপর লোহার মরিচা দূর করে। সে দিনের নাম হবে নাজাত দিন

আবুল আকার-কন্যা উম্মু শুরাইক (রা:) বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আরবের লোকেরা তৎকালে কোথায় থাকবে? তিনি বলেনঃ তৎকালে তাদের সংখ্যা হবে খুবই নগণ্য। তাদের অধিকাংশ (ঈমানদার) বান্দা তখন বাইতুল মুকাদ্দাসে অবস্থান করবে। তাদের ইমাম (জাহজাহ) হবেন একজন নিষ্ঠাবান সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তি। এমতাবস্থায় একদিন তাদের ইমাম তাদের নিয়ে ফজরের নামায পড়বেন। ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ) সেই সকালবেলা অবতরণ করবেন। তখন ইমাম পেছন দিকে সরে আসবেন যাত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ) সামনে অগ্রসর হয়ে লোকেদের নামাযে ইমামতি করতে পারেন। ঈসা (আ) তাঁর হাত ইমামের দু কাঁধের উপর রেখে বলবেনঃ আপনি অগ্রবর্তী হয়ে নামাযে ইমামতি করুন। কেননা এই নামায আপনার জন্যই কায়েম (শুরু) হয়েছে। অতএব তাদের ইমাম তাদেরকে নিয়ে নামায পড়বেন।

তিনি নামায থেকে অবসর হলে ঈসা (আ) বলবেন, দরজা খুলে দাও। তখন দরজা খুলে দেয়া হবে এবং দরজার পেছনে দাজ্জাল অবস্থানরত থাকবে। তার সাথে থাকবে সত্তর হাজার ইহূদী কারুকার্য খচিত ও খাপবদ্ধ তরবারিসহ। দাজ্জাল ঈসা (আ)-কে দেখামাত্র পানিতে লবণ বিগলিত হওয়ার ন্যায় বিগলিত হতে থাকবে এবং ভেগে পলায়ণ করতে থাকবে। তখন ঈসা (আ) বলবেনঃ তোর উপর আমার একটা আঘাত আছে, যা থেকে তোর বাঁচার কোন উপায় নাই। তিনি লুদ্দ-এর পূর্ব ফটকে তার নাগাল পেয়ে যাবেন এবং তাকে হত্যা করবেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা ইহূদীদের পরাজিত করবেন। আল্লাহর সৃষ্টি যে কোন বস্ত্ত-পাথর, গাছপালা, দেয়াল অথবা প্রাণী, যার আড়ালেই কোন ইহূদী লুকিয়ে থাকবে, আল্লাহ তাকে বাকশক্তি দান করবেন এবং সে ডেকে বলবে, হে আল্লাহর মুসলিম বান্দা! এই যে এক ইহূদী, এদিকে এসো এবং তাকে হত্যা করো। তবে গারকাদ নামক গাছ কথা বলবে না। কারণ সেটা ইহূদীদের গাছ।

রসূলুল্লাহ বলেনঃ দাজ্জাল চল্লিশ বছর বিপর্যয় ছড়াবে। তার এক বছর হবে অর্ধ বছরের সমান, এক বছর হবে এক মাসের সমান, এক মাস এক সপ্তাহের সমান এবং অবশিষ্ট কাল অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বায়ুমন্ডলে উড়ে যাওয়ার মত দ্রুত অতিক্রান্ত হবে। তোমাদের কেউ সকালবেলা মদীনার এক ফটকে (প্রান্তে) থাকলে তার অপর ফটকে পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! এতো ক্ষুদ্র দিনে আমরা কিভাবে নামায পড়বো? তিনি বলেনঃ তোমরা অনুমান করে নামাযের সময় নির্ধারণ করবে, যেমন তোমরা লম্বা দিনে অনুমান করে নামাযের সময় নির্ধারিণ করে থাকো এবং এভাবে নামায আদায় করবে।

রসূলুল্লাহ বলেনঃ ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ) আমার উম্মাতের একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক ও ইনসাফগার ইমাম হবেন। তিনি ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন, এমনভাবে শূকর হত্যা করবেন যে, তার একটিও অবশিষ্ট থাকবে না। সম্পদের প্রাচুর্যের কারণে তিনি জিয্য়া মওকুফ করবেন, যাকাত আদায় বন্ধ করবেন এবং না বকরীর উপর যাকাত ধার্য করা হবে, আর না উটের উপর। লোকেদের মাঝে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতার অবসান হবে। প্রত্যেক বিষাক্ত প্রাণী বিষশূন্য হয়ে যাবে। এমনকি দুগ্ধপোষ্য শিশু তার হাত সাপের মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দিবে কিন্তু তা তার কোন ক্ষতি করবে না। এক ক্ষুদ্র মানব শিশু সিংহকে তাড়া করবে, তাও তার কোন ক্ষতি করবে না। নেকড়ে বাঘ মেষ পালের সাথে এমনভাবে অবস্থান করবে যেন তা তার পাহারায় রত কুকুর। পানিতে পাত্র পরিপূর্ণ হওয়ার মত পৃথিবী শান্তিতে পূর্ণ হয়ে যাবে। সকলের কলেমা এক হয়ে যাবে। আল্লাহ ব্যতীত কারো ইবাদত করা হবে না। যুদ্ধ-বিগ্রহ তার সাজসরঞ্জাম রেখে দিবে। কুরাইশদের রাজত্বের অবসান হবে। পৃথিবী রূপার পাত্রের ন্যায় স্বচ্ছ হয়ে যাবে। তাতে এমন সব ফলমূল উৎপন্ন হবে যেমনটি আদম (আ)-এর যুগে উৎপাদিত হতো। এমনকি কয়েকজন লোক একটি আংগুরের থোকার মধ্যে একত্র হতে পারবে এবং তা সকলকে পরিতৃপ্ত করবে। অনেক লোক একটি ডালিমের জন্য একত্র হবে এবং তা সকলকে পরিতৃপ্ত করবে। তাদের বলদ গরু হবে এই এই (উচ্চ) মূল্যের এবং ঘোড়া স্বল্প মূল্যে বিক্রয় হবে। লোকজন বললেন, হে আল্লাহর রসূল! ঘোড়া সস্তা হবে কেন? তিনি বলেনঃ কারণ যুদ্ধের জন্য কখনো কেউ অশ্বারোহী হবে না। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, গরু অতি মূল্যবান হবে কেন? তিনি বলেনঃ সারা পৃথিবীতে কৃষিকাজ সম্প্রসারিত হবে। দাজ্জালের আবির্ভাবের তিন বছর পূর্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে, তখন মানুষ চরমভাবে অন্নকষ্ট ভোগ করবে। প্রথম বছর আল্লাহ তাআলা আসমানকে তিন ভাগের এক ভাগ বৃষ্টি আটকে রাখার নিদেৃশ দিবেন এবং যমীনকে নির্দেশ দিলে তা এক-তৃতীয়াংম ফসল কম উৎপাদন করবে। এরপর তিনি আসমানকে দ্বিতীয় বছর একই নির্দেশ দিলে, তা দু-তৃতীয়াংশ কম বৃষ্টি বর্ষণ করবে এবং যমীনকে হুকুম দিলে তাও দুই-তৃতীয়াংশ কম ফসল উৎপন্ন করবে। এরপর আল্লাহ তাআলা আকাশকে তৃতীয় বছরে একই নির্দেশ দিলে তা সম্পূর্ণভাবে বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দিবে। ফলে এক ফোঁটা বৃষ্টিও বর্ষিত হবে না। আর তিনি যমীনকে নির্দেশ দিলে তা শস্য উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ রাখবে। ফলে যমীনে কোন ঘাস জন্মাবে না, কোন সবজি অবশিষ্ট থাকবে না, বরং তা ধ্বংস হয়ে যাবে, তবে আল্লাহ যা চাইবেন। জিজ্ঞাসা করা হলো, এ সময় লোকেরা কিরূপে বেঁচে থাকবে? তিনি বলেনঃ যারা তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবীর (আল্লাহু আকবার), তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) ও তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ) বলতে থাকবে, এগুলো তাদের খাদ্যনালিতে প্রবাহিত করা হবে। আবূ আবদুল্লা ইবনে মাজাহ (রহ.) বলেন, আমি আবুল হাসান আত-তানাফিসী (রহ.) থেকে শুনেছি। তিনি বলেছেন, আমি আবদুর রহমান আল-মুহারিবী (রহ.)-কে বলতে শুনেছি যে, এই হাদীসখানি মকতবের উস্তাদগণের কাছে পৌঁছানো প্রয়োজন, যাতে তারা বাচ্চাদের এটা শিক্ষা দিতে পারেন।
-       (যঈফ, সুনানে ইবনে মাজাহ ২/১৩৫৯, হাঃ ৪০৭৭; আবূ দাউদ ৪৩২১; মিশকাত ৬০৪৪; আয-যিলাল ৩৯১; যইফ আল-জামি' ৬৩৮৪)

৬.৫৩.১ দাজ্জাল মক্কা ও মদিনায় প্রবেশ করতে পারবে না

আনাস ইবনু মালিক (রা:) হতে বর্ণিত। নবী বলেছেনঃ মক্কা ও মদিনা ব্যতীত এমন কোন শহর নেই যেখানে দাজ্জাল পদচারণ করবে না। মক্কা এবং মদিনার প্রত্যেকটি প্রবেশ পথেই ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে পাহারায় নিয়োজিত থাকবে। এরপর মাদিনা তার অধিবাসীদেরকে নিয়ে তিনবার কেঁপে উঠবে এবং আল্লাহ তাআলা সমস্ত কাফির এবং মুনাফিকদেরকে বের করে দিবেন।
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ১৮৮১ [আঃ প্রঃ ১৭৪৭; ইসঃ ফাঃ ১৭৫৮]; সহীহুল মুসলিম ৫২/২৪, হাঃ ২৯৪৩ [হাঃ একাঃ ৭২৮০; ইঃ ফাঃ ৭১২৩; ইঃ সেঃ ৭১৭৬]; রিয়াযুস স্বা-লিহীন তাঃ পাঃ ৪/১৮২০ [আন্তঃ ১৮১১]; মুসনাদে আহমাদ ১১৮৩৫, ১২৫৭৪, ১২৬৭৬, ১২৭৩২, ১২৯৮০, ১৩০৮৩, ১৩৫৩৫)

আনাস ইবনু মালিক (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নবী বলেছেনঃ দাজ্জাল আসবে। অবশেষে মাদিনার এক পার্শ্বে অবতরণ করবে। (এ সময় মদিনা) তিনবার কেঁপে উঠবে হবে। তখন সকল কাফির ও মুনাফিক বের হয়ে তার নিকট চলে আসবে।
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৭১২৪ [আঃ প্রঃ ৬৬২৫; ইসঃ ফাঃ ৬৬৩৯])

আনাস (রা:) নবী থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন যে, মদিনার দিকে দাজ্জাল আসবে, সে ফেরেস্তাদেরকে মদিনা প্রহরারত অবস্থায় দেখতে পাবে। অতএব দাজ্জাল ও প্লেগ এর নিকটবর্তী হবে না ইনশা আল্লাহ্।
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৭১৩৪ [আঃ প্রঃ ৬৬৩৫; ইসঃ ফাঃ ৬৬৪৯])

আনাস ইবনু মালিক (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ দাজ্জাল মদীনার দিকে আসবে, তখন সে দেখতে পাবে ফেরেশতাগণ মদীনাহকে পাহারা দিয়ে রেখেছে। কাজেই দাজ্জাল ও প্লেগ মদীনার নিকটেও আসতে পারবে না ইনশাআল্লাহ্।
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৭৪৭৩ [আঃ প্রঃ ৬৯৫৫; ইসঃ ফাঃ ৬৯৬৫]; সহিহাহ ২৪৫৮; সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২৪২ [ইঃ ফাঃ ২২৪৫])
-       এ বিষয়ে আবূ হুরায়রা, ফাতিমা বিনত কায়স, মিনহাজ, উসামা ইবন যায়দ এবং সামুরা ইবন জুন্দুব রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকেও হাদীস বর্ণত আছে। এ হাদীসটি সহীহ।

আবূ বাকরাহ (রহ:) হতে বর্ণিত। নবী বলেছেন, মদিনাতে দাজ্জালের ত্রাস ও ভীতি প্রবেশ করতে পারবে না। ঐ সময় মদিনার সাতটি প্রবেশ পথ থাকবে। প্রত্যেক পথে দুজন করে ফেরেশতা (পাহারা দেয়ার জন্য মোতায়েন) থাকবে।
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ১৮৭৯, ৭১২৫ [আঃ প্রঃ ১৭৪৪, ৬৬২৬; ইসঃ ফাঃ ১৭৫৫, ৬৬৪১]; মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৮১; মুসনাদে আহমাদ ২০৪৫৯; সহীহুল জামি ৭৬৭৮; মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৩২৪২৫; সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৭৩১; আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৮৬২৭)

আবূ বকরাহ (রা:) নবী থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ মদিনায় মাসীহ্ দাজ্জাল-এর প্রভাব পড়বে না। সে সময় মদিনার সাতটি প্রবেশদ্বার থাকবে। প্রতিটি প্রবেশদ্বারে দুজন করে ফেরেশতা নিযুক্ত থাকবেন।

ইবনু ইসহাক.....ইবরাহীম (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমি যখন বসরায় আগমন করলাম তখন আবূ বকরাহ (রা:) আমাকে বললেন যে, এ হাদীসটি আমি নবী থেকে শুনেছি।
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৭১২৬ [আঃ প্রঃ ৬৬২৭; ইসঃ ফাঃ ৬৬৪০])

আবূ হুরাইরাহ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল বলেছেনঃ মদিনার প্রবেশ পথসমূহে ফেরেশতা পাহারায় নিয়োজিত আছে। তাই প্লেগ রোগ এবং দাজ্জাল মদিনায় প্রবেশ করতে পারবে না।
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ১৮৮০, ৭১১৭, ৫৭৩১ [আঃ প্রঃ ১৭৪৫, ৬৬৩৪; ইসঃ ফাঃ ১৭৫৬, ৬৬৪৮]; সহীহুল মুসলিম ১৫/৮৭, হাঃ ১৩৭৯, আহমাদ ৭২৩৮)

কুতায়বা (রহঃ)......আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ বলেছেঃ ঈমান হল ইয়ামানে, কুফর হল পূর্ব দিকে, ছাগল ওয়ালাদের মধ্যে রয়েছে প্রশান্তি, অহংকার এবং রিয়াকারী রয়েছে উট ও ঘোড়ার পিছনে চিৎকারকারীদের মাঝে। মাসীহ-এ-দাজ্জাল আসবে, উহুদের পিছনে যখন সে পৌছবে ফেরেশতাগণ শামের দিকে তার চেহারা ফিরায়ে দিবেন। আর সেখানেই সে ধ্বংস হবে।
-       (সহীহ, সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২৪৩ [ইঃ ফাঃ ২২৪৬]; সহিহাহ ১৭৭০; মুসলিম)

আবূ হুরায়রাহ (রা:) রসূলুল্লাহ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন: মাসীহে দাজ্জাল পূর্বদিক থেকে আগমন করে মদীনাহ্ মুনাওয়ারায় প্রবেশ করতে চাইবে। এমনকি সে উহুদ পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত পৌছে যাবে। অতঃপর মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তার চেহারা (গতি) সিরিয়ার দিকে ঘুরিয়ে দেবেন এবং (ফলে সে শামে চলে যাবে ও ঘটনার এক পর্যায়ে) সেখানে সে (ঈসা আলায়হিস সালাম-এর হাতে) ধ্বংস হবে।
-       (সহীহ, মুসলিম ৪৮৬-(১৩৮০); মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৮০; মুসনাদে আহমাদ ৯১৫৫, ২৭৫০৮; আবূ ইয়া'লা ৬৪৫৯; সহীহুল জামি' ৭৯৯৫; সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৭৭৪; সিলসিলাতুস সহীহাহ ১৭৭০; সুনানে তিরমিযী ২১৬৯)

উবায়দুল্লাহ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু উতবা (রা:) থেকে বর্ণিত, আবু সাঈদ খুদরি (রা:) বলেন, দাজ্জালের উপর হারাম হল যে, সে মদিনার কোন ছিদ্রপথে প্রবেশ করবে।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৫৮০)

আমর ইবনু সুফিয়ান সাকাফি জনৈক এক আনসারি সাহাবি থেকে বর্ণনা করেন। তিনি রসূল এর কতিপয় সাহাবি থেকে বর্ণনা করেন, রসূল বলেন, দাজ্জাল মদিনার ছিদ্রপথে আসবে অথচ তার মদিনার কোন ছিদ্রপথ দিয়ে প্রবেশ করা হারাম। অতঃপর দাজ্জালের দিকে মদিনার প্রত্যেক পুরুষ মুনাফিক ও মহিলা মুনাফিক বাহির হয়ে যাবে। তারা সিরিয়ার দিকে পলায়ন করবে।
-       (জাইয়িদ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৫৮২)

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবি রসূল থেকে বর্ণনা করে বলেন, যখন দাজ্জাল মদিনার লবনাক্ত অঞ্চলে অবতরণ করবে, তখন মদিনা একবার বা দুইবার তার অধিবাসীদের ঝাড়া দিবে, অর্থাৎ ভূমিকম্প হবে, ফলে তা থেকে প্রত্যেক মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক মহিলা বের হয়ে যাবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৭১৪)

আনাস বিন মালেক (রা:) এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ এরশাদ করেছেন, দাজ্জালের দুই চোখের মাঝখানে (কপালের কাছে) লিখা থাকবে- ك ف ر (কাফ-ফা-রা তথা কাফের)। রাবী বলেন: ক্বাতাদাহ (তাঁর বর্ণিত হাদিসে আরো) উল্লেখ করেছেন: সে(ই লেখা)টাকে প্রত্যেক নিরক্ষর ও শিক্ষিত মুমিন (উভয়ই) পড়তে পারবে। (পৃথিবীতে) মানুষের স্বল্পতা এবং খ্যাদের সংকটের সময়ে সে বের হবে। সে আরবের তৈয়্যেবাহ ব্যতীত সকল শহরে প্রবেশ করবে -আর সে(ই তৈয়্যেবাহ)টা হল মদিনা। (তখন) কেউ জিজ্ঞেস করলো: হে আল্লাহর-নবী! আল-মদিনা(র লোকদেরকে ফিতনাগ্রস্থ করাও) তার উদ্দেশ্য হবে? তিনি বললেন: হ্যাঁ। তবে ফেরেশতাগণ তার অলিগলি ও প্রবেশপথে (তরবারী হাতে) সারিবদ্ধ হয়ে পাহারায় থাকবে।
-       (মুসনাদে আবু ইয়ালা ৫/৩৬৮ হাঃ ৩০১৬)

মিহযান বিন আদরা (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি এরশাদ করেন, (একবার) রসূলুল্লাহ লোকজনের সামনে কথা রাখছিলেন। তখন (এক পর্যায়ে) বললেন: ইয়ামুল খালাস (বহিষ্কারের দিন)! (তোমরা জানো কি) ইয়ামুল খালাস কী? ইয়ামুল খালাস (বহিষ্কারের দিন)! (তোমরা জানো কি) ইয়ামুল খালাস কী? ইয়ামুল খালাস (বহিষ্কারের দিন)! (তোমরা জানো কি) ইয়ামুল খালাস কী? (এভাবে কথাটি তিনি) তিনবার বললেন। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল: (ইয়া রসূলাল্লাহ!) ইয়ামুল খালাস (বহিষ্কারের দিন) কী? তিনি বললেন: দাজ্জাল (মদিনার কাছে) আসবে। পরে সে উহূদ (পাহাড়)-এ আরোহন করবে। তারপরে সে (ওখান থেকে) মদিনার (মসজিদের) দিকে তাকিয়ে তার সঙ্গিসাথীদেরকে বলবে: তোমরা কি এই সাদা বিল্ডিংটিকে দেখতে পাচ্ছো? এটা হল আহমাদ -এর মসজিদ। এরপর সে (ওখান থেকে নেমে) মদিনায় (ঢোকার উদ্দেশ্যে) আসবে। (এসে) দেখতে পাবে যে, সেখানকার প্রতিটি গলিতে ফিরেশতা অস্ত্রহাতে রয়েছে। তখন সে (মদিনার অনতিদূরে) সাবখাতুল-যুরফ (এলাকা)-এ এসে সেটার কিনারায় আঘাত/প্রহার করবে। এরপর মদিনা তিন বার কম্পনে প্রকম্পিত হয়ে উঠবে। তখন এমন কোনো মুনাফেক পুরুষ, মুনাফেক নারী, ফাসেক পুরুষ ও ফাসেক নারী বাকি থাকবে না, যে (মদিনা থেকে) বের হয়ে তার কাছে না যাবে। এটাই হল ইয়ামুল খালাস (বহিষ্কারের দিন)।
-       (মুসনাদে আহমদ ৪/৩৩৮, ৫/৩১ ; মুসতাদরাকে হাকিম ৪/৫৪৩; আল-মুজামুল আউসাত, ত্বাবরাণী ৩৫১৫; মুজামুস সাহাবাহ, ইবনু কানে ১৮১৪; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী ৩/৩১১)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ