৪.৮ দ্বিতীয় কারবালা; ভারতের বাংলাদেশ দখল ও গণহত্যা

 হিন্দুস্তানের যুদ্ধের আগে হিন্দুস্তানের (ভারতের) তথা সেখানকার মুশরিকরা যাদেরকে হিন্দু বা সনাতনী ধর্মের অনুসারী বলা হয়, তারা (পূর্ব অঞ্চল) বাংলাদেশকে দখল করবে এবং একটি গণহত্যার মত ঘটনা ঘটাবে। এটা আল্লাহর রসূল এর করা ভবিষ্যৎবাণী। আজ ভারতে যত মুসলিম বসবাস করছে তাদের উপরও চলছে মারাত্মক জুলুম নির্যাতন। কিছু জায়গায় কম আর কিছু জায়গায় বেশি, কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে যেখানে উগ্র হিন্দুত্ববাদ, অ্যান্টি-মুসলিম স্লোগান চলছে সেখানে আর কি করার থাকে। এই জুলুম চলছে কাশ্মীরেও। এরপর বাংলাদেশেও আসতে যাচ্ছে এই একই অবস্থা এবং আরো ব্যাপক আকার ধারণ করে আসছে এটি। এই বিষয়টি একটু শুনতে অবাক লাগলেও আমরা যদি কিছু বিশ্লেষণ করি তাহলে সহজেই বুঝতে পারবো যে, এই সনাতনী ধর্মের অনুসারীরা যারা সত্যিকারে তাদের নিজেদের ধর্মকেই মানে না, তাদের ধর্মগ্রন্থে কি লেখা তাও জানে না, যারা মন মতো চলে। যাদের হিন্দু গুরুরাও পথভ্রষ্ট, কারণ তারাও নিজেদের ধর্মগ্রন্থ পর্যন্ত মান্য করে চলে না আর চলার চেষ্টাও করে না। যাদের পুরোহিতরা সব সময় ধর্মীয় যুদ্ধের উস্কানি বক্তব্য দিতে থাকে যে, এই হিন্দুস্তানে রাম রাজত্ব কায়েম করতে হবে আর এই মুসলমানদের শেষ করতে হবে নাহলে এরা ভবিষ্যতে আমাদের জন্য হুমকি হয়ে যাবে, আমাদেরকে শেষ করে ফেলবে ইত্যাদি বিভিন্ন বক্তব্য। এর জন্য তারা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে আগাচ্ছে। আর সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। এর ফলই হচ্ছে ভারতে মুসলিমদের উপর অত্যাচার বৃদ্ধি ও গুম, খুন, ধর্ষণ। মসজিদ-মাদ্রাসায় হামলা। এমনকি সাধারণ গরুর গোস্ত খাওয়ার কারণে, গরু বিক্রি করার কারণে অমানবিক নির্যাতন করে হত্যা করেছে যার অডিও-ভিডিও প্রকাশ হয়েছে আর তা বিশ্বের সবাই দেখেছেও। এমনকি শুধু নাম ইসলামিক বা মুসলিম তাতেই সরাসরি গুলি মেরে দেওয়া হয়েছে ও পরে তাকে বলা হয়েছে যে, পাকিস্তানে চলে যেতে। এগুলো পুরো বিশ্বই দেখেছে। তাহলে এইগুলো করার কি কারণ? অর্থাৎ তারা সেই ভবিষ্যৎবাণীর দিকেই এগোচ্ছে। তাদের এই জুলুম নির্যাতন ও মুসলিমদেরকে দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ নিধন এর পরিকল্পনা করে তারা নিজেরাই নিজেদেরকে দুনিয়া থেকে চিরতরে হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছে। আর আখিরাতের কথা নাই বা বললাম। হাদিসে এসেছে-

সাহল ইবনু সা'দ (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল বলেছেন, অচিরেই পূর্ব দিকে এক ফিতনার সৃষ্টি হবে (দ্বিতীয় কারবালা)। আর তা হবে মুশরিকদের দ্বারা। তখন মুমিনদের একটি দল তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয় আনবে। (প্রয়োজনীয় অংশ)
-       (তারিখুল বাগদাদ ১২২৯)

বুরায়দা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি, খুব শীঘ্রই মুশরিকরা তাদের বন্ধু অঞ্চলের মুসলমানদের উপর অত্যাচার বৃদ্ধি করে দেবে আর নির্বিচারে হত্যা করবে। (প্রয়োজনীয় অংশ)
-       (আস সুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান ১৭৯১; আসারুস সুনান ৮০৩; আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮৮১)

হযরত আলী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল বলেছেন, অচিরেই হিন্দুস্তানের মুশরিকরা মুসলমিদের প্রতি নির্যাতন বৃদ্ধি করবে। (প্রয়োজনীয় অংশ)
-       (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ, অধ্যায়ঃ গাজওয়াতুল হিন্দ, ২৩০; ক্বাশ্ফুল কুফা ২৬১)

হযরত আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের মুসলমানদের উপর ইহুদী-নাসারাগণ অত্যাচার বৃদ্ধি করে দিবে। তখন কেবল খোরাসানীরাই তাদের মোকাবেলায় সুদৃঢ় থাকবে। এরূপ হিন্দুস্তানের মুশরিকরাও মুসলিমদের প্রতি নির্যাতন বৃদ্ধি করে দেবে। (প্রয়োজনীয় অংশ)
-   (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ, অধ্যায়ঃ গাজওয়াতুল হিন্দ, ২৩২)

হযরত হুযাইফা (রা:) বলেন, আমি আল্লাহর রসূল কে বলতে শুনেছি, মানুষের জীবনে এমন একটি সময় আসবে, যখন তারা বছরে দু এক বার বিপর্যস্ত হবে! যার একটি শুরু হবে বায়ু দ্বারা যা মুশরিকদের দূর্গ ক্ষতিগ্রস্তের মাধ্যমে! আর শেষ হবে দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে। আর এই দুর্ভিক্ষ শেষ হতেই মুশরিকরা একটি ফিতনা সৃষ্টি করবে! যার মুকাবিলা করার জন্য হিন্দুস্তানের পূর্ব অঞ্চল থেকে একদল মুসলিম ধাবিত হবে। কিন্তু মুশরিকরা তাদের এমন ভাবে হত্যা করবে যেমন ভাবে তোমরা এক নির্দিষ্ট দিনে (কুরবানীর দিন) পশুগুলোর উপর আল্লাহর নাম স্মরণ করো! ফলে তারা পরাজিত হবে। অনুরূপ আরেকটি মুসলিম দল মুশরিকদের দিকে ধাবিত হবে (মুকাবিলা করতে)। তাদের সাথে আল্লাহর সাহায্য থাকবে। তারাই বিজয়ী। একথা তিনি (রসূল ) তিন বার বললেন। অতঃপর বললেন, তাদের নেতা হবে দুর্বল! আহ্ প্রথম দলটির জন্য কতইনা উত্তম হতো যদি তারা তাদের নেতাকে গ্রহণ করতো! আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল ! তারা তাদের নেতাকে গ্রহণ করবে না কেন? তিনি বললেন, কেননা তারা সে সময় নিজেরাই নিজেদের যোগ্য মনে করবে!
-       (আখীরুজ্জামানা আল মাহাদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ১১৯)

শাহ্‌ নিয়ামাতুল্লাহ এর ইলহামী ভবিষ্যৎবাণী সম্বলিত কাসিদাতেও হিন্দুস্তানের অবস্থার ভবিষ্যৎবাণীতে এই বিষয়টি উল্লেখ করেছে। তাতে ভারতের পার্শ্বভূমি হিসেবে বাংলাদেশকে নির্দেশ করেছে, যেই অঞ্চলে মুশরিকরা গণহত্যা করবে মুসলিমদের। যদিও হাদিসের প্রমানের পরে আর কিছু দরকার হয় না কিন্তু তারপরও দলিল মজবুত করতে এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স হিসেবে কাজ করবে। কারণ অনেক আলেমরাই এটিকে তাদের গ্রন্থে জায়গা দিয়ে এর থেকে নোট বা পরামর্শ নিতে বলেছে। আর এই আজাব আসার কারণও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

ওয়াহাব ইব্‌ন বাকীয়্যা (রহঃ) .... আবূ বকর (রা:) থেকে বর্ণিত। একদা তিনি আল্লাহ্‌ ও রাসূলের প্রশংসার পর বলেনঃ হে লোক সকল! তোমরা এ আয়াত তিলাওয়াত কর, কিন্তু তোমরা একে অন্যস্থানে প্রয়োগ কর। তোমাদের চিন্তা করা উচিত যে, তোমাদের মাঝে যারা গুমরাহ হবে, তারা তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তবে শর্ত হলো-যদি তোমরা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক। আল্লাহর বাণীঃ তোমরা যদি সৎ পথে পরিচালিত হও তবে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না (সূরা আল-মায়িদাহ, আঃ ১০৫)।

রাবী খালিদ (রা:) বলেনঃ আমি নবী -কে বলতে শুনেছি যে, যখন লোকেরা জালিমের হাত ধরে তাকে জুলুম করা থেকে বিরত না রাখবে, তখন মহান আল্লাহ্‌ তাদের উপর ব্যাপকভাবে আযাব নাযিল করবেন।

রাবী আমর ইবন হুশাযম (রা:) বলেন- আমি রসূলুল্লাহ্‌ কে বলতে শুনেছি, যে কওম এরূপ হবে যে, তারা যখন গুনাহে লিপ্ত হবে, তখন তা প্রতিরোধ করার মত কিছু লোক থাকা সত্ত্বেও যদি তারা প্রতিকার না করে, তখন আল্লাহ্‌ তাআলা সকলকে আযাবে গ্রেফতার করবেন।

রাবী শুবা (রহঃ) বলেনঃ যে সম্প্রদায়ের অধিকাংশ লোক গুনাহে লিপ্ত হবে, আল্লাহ্‌ তাদের সকলকে আযাবে নিপতিত করবেন।
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (আলবানী একাঃ) ৪৩৩৮ [ইঃ ফাঃ ৪২৮৭]; তিরমিযী; ইবনু মাজাহ; মুসনাদে আহমাদ)

এরকম সময় সকলে দোয়া করলেও তা কবুল হবে না, কারণ তাদের পাপচারের কারণেই এই আজাব এসেছে এবং তা এমন পর্যায়ে গিয়েছে যাতে এই বিষয়ে হুজ্জত প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় যে তা আজাব আসার জন্য দলিল হতে পারে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

কুতায়বা (রহঃ) ...... হুযায়ফা ইবন ইয়ামান (রা:) থেকে বর্ণিত যে, নবী বলেছেনঃ যাঁর হাতে আমার প্রাণ সে সত্তার কসম, তোমরা অবশ্যই সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজের নিষেধ করতে থাক। নতুবা অচিরেই আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর তাঁর আযাব নিপতিত করবেন। তখন তোমরা তাঁর নিকট দুআ করবে কিন্তু তিনি তোমাদের দুআ কবুল করবেন না।
-       (সহীহ, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত/আল মাদানী প্রকাঃ) ২১৬৯ [ইঃ ফাঃ ২১৭২]; সহিহাহ ২৮৬৮; বুখারি; মুসলিম)

আবূ মূসা আল-আশআরী (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা জালেমকে অবকাশ দেন। কিন্তু যখন তিনি তাকে পাকড়াও করেন, তখন তাকে আর ছাড়েন না। অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন (অনুবাদঃ) এরূপই তোমার রবের পাকড়াও, তিনি যখন কোন অত্যাচারী জনবসতিকে পাকড়াও করেন (১১: ১০২)।
-       (সহীহ, সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ১/৪০১৮; সহীহুল বুখারী ৪৬৮৬; মুসলিম ২৫৮৩; তিরমিযী ৩১১০)

তাহলে এই দেশে এবং সারা ভারত উপমহাদেশে মুশরিকদের কর্তৃক মুসলিমদের উপর কারবালার ন্যায় গণহত্যা, জুলুম-নির্যাতন হওয়াটি আল্লাহর একটি আজাব হিসেবেই আসছে। আজ যদি আমরা ভারতীয় উপমহাদেশীয় মুসলিম দেশগুলো ও মুসলিম অঞ্চল বা মুসলিম বসবাসকারী শহর ও গ্রামগুলো দেখি তাহলে দেখতে পাবো যে, তাদের এক শোচনীয় অবস্থা। তারা ইসলামী জীবনব্যবস্থা ছেড়ে অন্য কিছু গ্রহণ করে আছে, শুধু এখন তাদের নামটাই মুসলিমদের নাম রয়ে গিয়েছে আর কিছুতেই তাদের মুসলিমদের সাথে মিলিয়ে পারা যায় না। তারা গণতন্ত্র নিয়ে পরে আছে। নামাজ-রোজা, হজ-যাকাত সম্পর্কে তারা গাফিল।

তাদের জীবন কাটছে এক মুশরিক ইহুদী-খ্রিষ্টান এর মতো। দিন দিন এ সকল মুসলিমরা মুরতাদ হয়ে যাচ্ছে, নাস্তিক হয়ে যাচ্ছে। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সব জায়গাতেই এখন ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ হচ্ছে, ইসলামবিরোধী আইন দিয়ে বিচার-ফয়সালা হচ্ছে। এর চেয়েও ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে তারা মুশরিকদেরকে বন্ধুরুপে গ্রহণ করে আছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক কাজ হিসেবে সেই সকল পূর্বপুরুষদের আদর্শ বানিয়ে নিয়েছে। তাদের শ্রদ্ধা-সম্মানের নামে পূজা করা হচ্ছে।

হাদিসে এসেছে যে বাআল দেবতার পূজা অর্থাৎ পূর্বপুরুষদের পূজা শুরু করবে। আর বর্তমানে যা হচ্ছেই। এছাড়াও এত কারণ আছে যাতে এই হুজ্জত বা দলিল প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় যে তাতে আজাব আসবেই। এটা হয়তো সকল মুখে স্বীকার করা মুসলিম নামধারীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হবে যাতে তারা সঠিক ইসলামে দ্রুতই ফিরে আসে। আর না হলে তাদের জন্য আর রেহাই নেই। আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ