৬.৫ জুলফি বিশিষ্ট তারকা উদয়, বিস্ফোরণ ও চূড়ান্ত দুর্ভিক্ষ

 "জুলফি বিশিষ্ট তারকা" উদয়ন যা ইমাম মাহদীর আগমনের একটি আলামত। তবে এটি আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিতও বহন করে যা হাদিস থেকে সরাসরি জানা যায়। এর আরেকটি আলামত যা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়া। এর সম্মন্ধে যা জানতে হবে তা নিচে দেওয়া হলো। হাদিসের আলোকে তার সত্যতা, করনীয়-বর্জনীয় দেখে নেই। প্রচলিত কিছু ভ্রান্ত ধারনাও পরিষ্কার করার প্রচেষ্টা করেছি এখানে।

১. জুলফি তারকার ঘটনা কি সত্য?

২. কখন এই তারকা উদিত হবে?

৩. কেন এই তারকা উদিত হবে?

৪. এই তারকার সাথে ১ বছরের খাদ্য মজুদ করার সম্পর্ক কী?

৫. কেন আমাদেরকে ১ বছরের জন্য খাদ্য সংগ্রহ করে রাখতে হবে?

১. জুলফী তারকার ঘটনার যে বিবরণী পাওয়া যায়, তা কি সত্য?

এটা সত্য। কেননা, হাদিসে এই ঘটনার ভবিৎষ্যতবানী উল্লেখ পাওয়া যায়। যদিও হাদিসগুলো সব সহীহ নয়। তবে হাসান-গরিব ও যঈফ এর পর্যায়ভুক্ত। তবে যেহেতু মাউযু নয় তাই গ্রহনীয়। জুলফি বিশিষ্ট একটি তারকা (অগ্নি শিখা) উদিত হবে এ ব্যাপারে হাদিসগুলো-

হযরত ওলীদ (রহঃ) কাব (রহঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত মাহদী এর আগমনের পূর্বে পূর্বাকাশে জুলফি বিশিষ্ট একটি তাঁরকা উদিত হবে।
-       (যঈফ, আল ফিতানঃ নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৪২)

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, রসূল বলেছেন, কেয়ামতের পূর্ব অবশ্যই আসমান থেকে উজ্জ্বল তারকা জমিনে দেখা যাবে, যাতে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
-       (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৭৪)

হযরত আবু বাসির (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, জাফর সাদিক বলেছেন, মাহদীর আগমনের কিছু পূর্বে, অবশ্যই মানুষ আসমানের তারকা জমিনে দেখতে পাবে।
-       (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৭৫)

হযরত কাব (রা:) থেকে বর্ণিত যে, এমন একটি তারকা উদিত হবে, যার আলো হবে চন্দ্রের আলোর ন্যায়। এরপর উক্ত তারকা সাপের ন্যায় কুন্ডুলি পাকাতে থাকবে। যার কারণে তার উভয় মাথা একটা আরেকটার সাথে মিলিত হওয়ার উপক্রম হবে। দীর্ঘকার রাত্রে দুইবার ভূমিকম্প হওয়া এবং আসমান থেকে জমিনের দিকে যে তারকাটি নিক্ষিপ্ত হবে, তার সাথে থাকবে বিকট আওয়াজ। এক পর্যায়ে সেটা পূর্বাকাশে গিয়ে পতিত হবে। যা দ্বারা মানুষ বিভিন্ন ধরনের বালা-মুসিবতের সম্মুখিন হবে। (হাদিস বড় হওয়ায় কেবল শেষ অংশ উল্লেখ করা হল)
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৪৩)

আবু জাফর ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আলী (রহঃ) বলেন, "যখন পূর্বাকাশে ৩ দিন থেকে ৭ দিন পর্যন্ত আগুনের অগ্নিশিখা দেখতে পাবে, তখন আহলে মুহাম্মদ এর (ইমাম মাহদীর) জন্য অপেক্ষা কর। একপর্যায়ে আল্লাহ তায়ালা (হযরত জিব্রাইল আঃ এর মাধ্যমে) মাহদীর নাম ঘোষণা করবেন। যা পৃথিবীর সকল মানুষ শুনতে পাবে।
-       (আল বুরহান ফি আলামত আল মাহদী, আল মুত্তাকী আল হিন্দি, পৃষ্ঠাঃ ৩২)

হযরক কাব (রহ:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনু আব্বাসের রাজত্ব পতন হওয়ার অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে, আসমানের বুকে এক প্রকার লাল বর্ণের আত্মপ্রকাশ করা এবং সেটা রমাযানের দশ তারিখ থেকে পনের তারিখ পর্যন্ত স্থায়ী হবে। আরেক ধরনের জীর্ণতা দেখা দিবে যা বিশ রমাযান প্রকাশিত হয়ে চব্বিশ রমাযান পর্যন্ত থাকবে। একটি তারকা উদিত হবে যেটা পূর্নিমার রাত্রির মত উজ্জল হয়ে হঠাৎ বাঁকা হয়ে যাবে। হাদীস বর্ণনাকার ওলীদ বলেন, আমার নিকট হযরত কাব থেকে সংবাদ এসেছে, তিনি বলেন, পূর্বদিকের এলাকায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে, পশ্চিমে জীর্ণতা প্রকাশ পাবে, আসমানে লালিমা দৃশ্যায়ন হবে এবং কেবলার দিকে ব্যাপকহারে মানুষ মারা যাবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬২২)

২. কখন এই তারকা উদিত হবে?

হাদিসে এসেছে রমজান মাসে এই তারকাটি উদিত হবে।

বর্ণনাকারী আব্দুল ওয়াহাব ইব্নে বুখ্ত বলেন, আমাদের কাছে সংবাদ পৌঁছেছে রসূলুল্লাহ এরশাদ করেন, রমাযান মাসে আসমানে একটি আলামত প্রকাশ পাবে যা হবে উজ্জল একটি পিলারের ন্যায়। শাওয়াল মাসে বিভিন্ন বালা-মসিবত দেখা দিবে, জিলক্বদ মাসে ধ্বংস হয়ে যাবে এবং জিলহজ্ব মাসে হারাম শরীফের উদ্দেশ্যে রওয়ানাকারীদের ছিনতাই করা হবে। আর মুহাররম মাসের কথা তো কিই বা বলব।
-       (যঈফ, আল ফিতান, নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬২৬)

হযরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুসলমানদের কাছে এমন এক যুগ আসবে যখন রমাযান মাসে বিকট আওয়াজ শুনা যাবে, শাওয়াল মাসে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আবির্ভাব হবে, জিলকদ্ব মাসে এক গোত্রের লোকজন অন্য গোত্রের উপর হামলে পড়বে। জিলহজ্ব মাসে হাজী সাহেবদের যাবতীয় রসদপত্র ছিনিয়ে নেয়া হবে। মুহাররম মাস সম্বন্ধে কি বলব; মুহাররম মাস, যেটা সম্বন্ধে কিই বা বলার আছে।
-       (যঈফ, আল ফিতান, নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬২৯)

যদিও হাদিছে তার কোন দিনক্ষণ বা কোন বছর প্রকাশ পাবে তা বলা নেই, তবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিময় বিশ্বের সুবাদে, বিজ্ঞানীগণ এই তারকা নিয়ে তথ্য দিয়েছেনঃ

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস প্রদেশের গ্রেন্ড রেপিট মিশিগানের Calvin College এর একদল গবেষক ও খ্যাতিমান জ্যোতির্বিজ্ঞানী প্রসেসর লরেন্স মুলনার বলেছেন, ২০২২ সালে এই প্রথম মানুষ খালি চোখে দুটি তারকার সংঘর্ষ দেখতে পাবে।

তবে দুটি তারকার সংঘর্ষের পূর্বে পরস্পরের দিকে কয়েক দিন ঘুরতে থাকবে, এবং এদের আলো চাঁদের আলোর মত উজ্জ্বল হবে। এদের পরস্পরের সংঘর্ষের পর লাল রঙের আভা আকাশে ছড়িয়ে পরবে। (হুবহু হাদিসের বর্ণনা) যা American Astronomical Society (AAS) এর ২২৯ তম বৈঠকে এই গবেষণার বিষয়বস্তু উপস্থাপন করা হয়। তাদের দাবি, ২০১৩ সাল থেকে তারা Binary system বা, একই কক্ষপথে চলা এই দুটি তারকার উপর নজরদারি করে আসছিল এবং তারা তারকা দুটিকে KIC9832227 নামে চিহ্নিত করেছেন।

তাহলে জানা গেলো, বিজ্ঞানীগনের মতে, ২০২২ সালে এই তারকা উদিত হবে। (আল্লাহু আলাম)

তবে এটি ইমাম মাহদীর আগমনের সময়কাল ঘনিয়ে আসার একটি আলামত। তাই তার আবির্ভাবের পূর্বে অবশ্যই ঘটবে, তবে তার আগমনের আগে কোন বছর উদিত হবে সে বিষয়ে সঠিকভাবে হাদিসে কিছু আসেনি।

৩. কেন এই তারকা উদিত হবে?

যদিও এটা আমাদের জন্য গজব স্বরূপ, তবে তা নিয়ে কথা না বলে বলছি, এই আলামতটি তিনটি প্রধান কারণে প্রকাশ পাবে।

কারণ (১) ইমাম মাহদীর প্রকাশের পুর্বে যে কয়েকটি আলামত প্রকাশ পাবে, তার একটি হলো এই তারকা। অর্থাৎ, এটা হলো ইমাম মাহদীর আগমনের আলামত। যেমন হাদিছে এসেছে-

আবু জাফর ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আলী (রহঃ) বলেন, "যখন পূর্বাকাশে ৩ দিন থেকে ৭ দিন পর্যন্ত আগুনের অগ্নিশিখা দেখতে পাবে, তখন আহলে মুহাম্মদ এর (ইমাম মাহদীর) জন্য অপেক্ষা কর। একপর্যায়ে আল্লাহ তায়ালা (হযরত জিব্রাইল আঃ এর মাধ্যমে) মাহদীর নাম ঘোষণা করবেন। যা পৃথিবীর সকল মানুষ শুনতে পাবে।
-       (আল বুরহান ফি আলামত আল মাহদী -আল মুত্তাকী আল হিন্দি, পৃষ্ঠাঃ ৩২)

[এখন তার মানে আপনারা যদি ধরে নেন, এই তারকার প্রকাশের পরপর দ্রুতই ইমাম মাহদী চলে আসবেন হয়তো তাহলে ভুল করছেন। কারণ, এগুলো হলো আলামত। যেমন মাহদীর আগমনের আরও আলামত হলোঃ সিরিয়ার ফিতনা শুরু হওয়া, ফুরাত নদীর সোনার পাহাড় প্রকাশিত হওয়া, ইমাম মাহমুদ, ইমাম মানসূর, শুয়াইব ইবনে সালেহ এর আত্মপ্রকাশ হওয়া, পৃথিবীর ৩ ভাগের ২ ভাগ মানুষের মৃত্যু হওয়া, আবু সুফিয়ানীর আগমন হওয়া, রমজানের ১ম ও ১৫ তারিখ শুক্রবার হওয়া, মধ্য রমজানে আওয়াজ, বায়দাহ ধ্বসে যাওয়া ইত্যাদি। এখন এগুলোর মানে এটা নয় যে, মাহদী তখনি প্রকাশ পাবে, বরং এগুলো তার আগমন নিকটে হবার আলামত মাত্র।]

কারণ (২) এক বছরের খাদ্য মজুদের সতর্কবাণী হিসেবে এই তারকা উদিত হবে। যেমন হাদিছে এসেছে-

হযরত খালেদ ইবনে মাদান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অতিসত্ত্বর পূর্বদিক থেকে আগুনের তৈরি পিলারের ন্যায় এক নিদর্শন প্রকাশ পাবে। যেটা জমিনের সকলে দেখবে। তোমাদের কেউ এমন যুগ প্রাপ্ত হলে, সে যেন তার পরিবারের জন্য এক বৎসরের খোরাকী (খাদ্য) প্রস্তুত রাখে।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৩৩)

হযরত কাসির ইবনে মুররা আল হাজরনী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আসমানে বিভিন্ন আলামত প্রকাশ পেতে থাকলে মানুষের মাঝে ব্যাপক এখতেলাফ (মতপার্থক্য) দেখা দিবে। তুমি এমন অবস্থাপ্রাপ্ত হলে (দেখলে) তোমার সাধ্যানুযায়ী খাবারের মজুদ করে রাখ।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৩৪)

কারণ (৩) এরপরেই ধোঁয়ার আযাব সন্নিকটে হবে। ধোঁয়ার আজাব হচ্ছে কেয়ামতের বড় আলামতের অন্যতম। যখন এই তারকা দেখা দিবে তার পরবর্তীতেই এই ধোঁয়ার আজাব সংঘটিত হবে।

আব্দুল্লাহ বিন আবি মুলাইকা (রা:) বলেন, একদিন প্রত্যুষে আমি ইবনে আব্বাস (রা:) এর কাছে গমন করলাম। তিনি বললেন- গতরাতে আমি একদম ঘুমাতে পারিনি। আমি বললাম- কেন? কি হয়েছে। তিনি বললেন- লেজবিশিষ্ট তারকা উদয় হয়েছিল (লোকেরা বলাবলি করছিল যে এরকম তারকা দেখা গিয়েছে)। ভয় পেয়েছিলাম, ধোঁয়া এসে যায় কিনা! তাই সকাল পর্যন্ত চোখে ঘুম আসেনি।
-       (ইবনে জারীর তাবারী; ইবনে আবী হাতিম; তাফসীর ইবনে কাছীর; হায়াতুস সাহাবা, ইউসুফ কান্ধলভী (রহ:))

ইবনে আব্বাস (রা:) যখন (লোকে মুখে) শুনেছেন যে, লেজ বিশিষ্ট তারকা উদিত হয়েছে তখন ধোঁয়ার আশঙ্কা করেছিলেন। যদিও আদৌ তা উদিত হয়নি। এ থেকে বুঝা যায়, এই তারকা উদিত হলে তারপর ধোঁয়ার সেই আযাব সন্নিকটে। এছাড়াও এই তারকা উদিত হওয়া মানে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ও ফিতনা-ফাসাদ দেখা দেওয়া এবং এই তারকার উদয়ন আমাদের জন্য একটি চূড়ান্ত সতর্কবার্তা হবে। এই ব্যাপারে হাদিসে এসেছে-

হযরত কাসীর ইবনে মুররা (রহ:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ফিতনার সূচনা লক্ষণ সমূহ প্রকাশ পাবে মূলতঃ রমযান মাসে, তীব্র আকার ধারন করবে শাওয়াল মাসে। জিলকদ মাসে এক এলাকার লোকজন আরেক এলাকার দিকে ধাবিত হবে এবং জিলহজ্ব মাসে এক শহরের বাসিন্দাগণ অন্য শহরের বাসিন্দাদের প্রতি যুদ্ধের লক্ষে ধেয়ে আসবে। এসব কিছুর চুড়ান্ত নিদর্শন হচ্ছে, আকাশে আলোকিত-উজ্জল কোনো পিলার (জুলফি তারকা) প্রকাশ পাওয়া।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৪৭)

হযরত কাসীর ইবনে মুররা হাজরামী (রহ:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি দীর্ঘ সত্তর বৎসর যাবত রমযান মাসে ফিতনা প্রকাশ পাওয়ার রাত্রের অপেক্ষায় প্রহর গুনছি। হযরত আব্দুর রহমান ইব্নে যুবায়ের (রহ:) বলেন, যখনই আকাশে এ ধরনের কোনো আলামত প্রকাশ পাবে, সাথে সাথে মানুষের মাঝে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে থাকবে।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৫০)

শাহার ইবনে হাওশব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ফিতনা-ফাসাদের সূচনা হবে রমযান মাস থেকে, বিভিন্ন শহরের লোকজন একে অন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে শাওয়াল মাসে, জ্বিলকদ মাসে অন্য এলাকার মধ্যে সামরিক স্থাপনা ফেলবে এবং জিলহজ্ব মাস আসলে একে অপরের উপর হামলা করবে, অর্থাৎ চুড়ান্ত লড়াই শুরু হয়ে যাবে। সে বৎসরই হাজিদের উপর আক্রমণ করা হবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৫২)

৪. এই তারকার সাথে ১ বছরের খাদ্য মজুদ করার সম্পর্ক কী?

বর্তমানে কিছু মুফতি, আলেম, গবেষকসহ অধিক মানুষের একটি বহুল প্রচলিত ধারনা হলো, এই জুলফি তারকা বিস্ফোরণের পূর্বেই আমাদের ১ বছরের খাদ্য মজুদ করতে হবে।

এই কথটি একেবারেই ভুল। না, তার আগে খাদ্য মজুদ করতে হবেনা। কেননা, এই তারকা দেখার আগে খাদ্য মজুদ করার কোনই কারণ নেই। কিন্তু ১ বছরের খাদ্য মজুদ করতে হবে তখন, যখন এই তারকা আমরা দেখতে পাবো তারপর খাদ্য মজুদের কাজ করবো। হাদিস থেকে এটি স্পষ্ট বুঝা যায়-

হযরত খালেদ ইবনে মাদান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অতিসত্ত্বর পূর্বদিক থেকে আগুনের তৈরি পিলারের ন্যায় (জুলফি বিশিষ্ট তারকা) এক নিদর্শন প্রকাশ পাবে। যেটা জমিনের সকলে দেখবে। তোমাদের কেউ এমন যুগ প্রাপ্ত হলে, সে যেন তার পরিবারের জন্য এক বৎসরের খোরাকী (খাদ্য) প্রস্তুত রাখে।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৩৩)

হযরত কাসির ইবনে মুররা আল হাজরনী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আসমানে বিভিন্ন আলামত প্রকাশ পেতে থাকলে মানুষের মাঝে ব্যাপক এখতেলাফ (মতপার্থক্য) দেখা দিবে। তুমি এমন অবস্থা প্রাপ্ত হলে (দেখলে) তোমার সাধ্যানুযায়ী খাবারের মজুদ করে রাখ।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৩৪)

ইবনে মাদান (রহ:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন তোমরা আকাশে রমাযান মাসে পূর্বদিক থেকে আগুনের কিছু পিলার (তারকা) প্রকাশ পেতে দেখবে, তখন সাধ্যমত খাবার জোগাড় করে রাখবে। কেননা তার পরবর্তী বৎসর হচ্ছে দুর্ভিক্ষের বৎসর।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৪৯)

অর্থাৎ, যদি তুমি সে অবস্থার সম্মুখীন হও তাহলে সাধ্য অনুযায়ী খাবার জোগাড় করে রাখবে।

হাদিস বলছে জুলফীসহ তারকা যখন মানুষ আকাশে দেখতে পাবে, তখন যেনো ১ বছরের খাবার জমা করার কাজে লেগে যায়। হাদিস কিন্তু এটা বলছে না, জুলফীসহ তারকা আকাশে প্রকাশের আগেই তোমরা ১ বছরের খাদ্য জমা রাখো। এই তারকা দেখার আগে খাবার সংগ্রহের প্রয়োজন নেই। বরং, তারকা দেখার পর খাবার সংগ্রহ করতে হবে।

কেননা, এই তারকা এমন একটি ঘটনাকে হয়তো ইঙ্গিত করছে, যা ঘটলে তার পরবর্তীতে ১ বছর চরম দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে, তাই এই জুলফী তারকা মানুষের সতর্কবার্তার মত কাজ করবে।

তাই আমরা যখনই আকাশে এই আলামত দেখবো, তখনই আমাদের ভাবতে হবে যে, হয়তো সামনের ২-৩ বছরের মধ্যেই পৃথিবীতে এমন কিছু ঘটতে পারে যার কারণে ১ বছরের খাদ্য মজুদ করা আবশ্যকীয়। এটি মুমিনদের জন্য আল্লাহ তায়ালার একটি নিদর্শন এবং এভাবেই আল্লাহ মুমিনদের এই বড় ধরণের দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে ধ্বংস হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দিবেন।

৫. কেন আমাদেরকে ১ বছরের জন্য খাদ্য সংগ্রহ করে রাখতে হবে?

এই জুলফি সহ তারকা নিজ চোখে দেখার পরই কেবল খাদ্য মজুদ করবো। কারণ এই তারকাটি এমন একটি সতর্কবার্তা যেটা আমাদের জানান দিবে যে, হয়তো সামনের ২-৩ বছরের মধ্যেই এমন ঘটনা ঘটবে, যাতে করে ১ বছর খাদ্য জন্মাবে না। গবেষণা করে দেখা যায় তা হলো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যার ফলে পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যাবে। (এক ভাগ অনাহারে, মহামারীর প্রাদুর্ভাবে আর এক ভাগ যুদ্ধ-বিগ্রহের কারণে। -আল ফিতান)

কারণটা আপনারাও জানেন যে, বর্তমান যুগে যদি বিশ্বযুদ্ধ হয়, তাহলে পরবর্তী ১ বছর দুর্ভিক্ষ হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তবে মূল কথা এটি অবশ্যই ঘটবে ইমাম মাহদীর আগমনের পূর্বে। কারণ এটি ইমাম মাহদীর আগমনের আগের একটি আলামত আর তা অবশ্যই সংঘটিত হবে। আর দুর্ভিক্ষ যে অনাবৃষ্টির কারণেই হবে তা নয়, যেমন হাদিসে এসেছে-

কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ..... আবু হুরাইরাহ (রা:) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ বলেন, অনাবৃষ্টির কারণেই কেবল দুর্ভিক্ষ হবে না। বরং অধিক বৃষ্টিপাত হতে থাকবে এবং জমিন কোন কিছু উৎপাদন করবে না (ফলে তা দুর্ভিক্ষের কারণ হয়ে থাকে)।
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭১৮৩-(৪৪/২৯০৪) [ইঃ ফাঃ ৭০২৭; ইঃ সেঃ ৭০৮৫])

বিঃ দ্রঃ এই জুলফি তারকা নিয়ে কিছু লেখা পাওয়া যায় যা অনর্থক, কারণ ঐ তারকার প্রকাশের পর আকাশ লাল হবে এবং তাপমাত্রাও কিছুটা বেড়ে যাবে এটা সত্য তবে তা কিছু দিনের জন্য। কিন্তু যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে তা ভ্রান্ত। নিচে সেই তথ্য দেওয়া হলোঃ

রসূলুল্লাহ ও তার সাহাবীরা কেন পূর্বাকাশে উজ্জ্বল তারকা দেখলে আমাদেরকে এক বছরের জন্য খাদ্য মজুদ করে রাখতে বলেছেন, তা একটু বৈজ্ঞানিক ভাবে ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন।

১, Red nova star বিস্ফোরণের পর মেঘের মতো যে লাল আভা আকাশে ছড়িয়ে পরবে, সেগুলো মূলত তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। কারণ, KIC9832227 দুটি তারকা তে অগ্নি পরিবাহী উপাদান রয়েছে। আর এগুলো তাপমাত্রা বৃদ্ধির আরো একটি কারণ হল, এসব ছড়িয়ে পরা উপাদান গুলোতে আবার সূর্যের তাপ পরবে। সহজ ভাষায় বললে, মনে করেন এখন স্বাভাবিক তাপমাত্রা হল ৩৫°ডিগ্রি থেকে 45°ডিগ্রি। কিন্তু Red nova বিস্ফোরণের পর তাপমাত্রা হবে ৭০° ডিগ্রি থেকে ৮০°ডিগ্রি।

আর তাপমাত্রা যখন ৭০° ডিগ্রি থেকে ৮০° ডিগ্রি হবে, স্বাভাবিক ভাবেই মাঠের সকল ফসল ফলাদি জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। নদ নদী, খাল বিল, পুকুরের পানি শুকিয়ে যাবে। এমনকি ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ও নিচে নেমে যাবে। গবাদি পশু গরু, ছাগল, ভেড়া, গাদা, হাস, মুরগি সব মরে যাবে। এমনকি পোকা মাকর, অন্যান্য বন্য প্রাণী গুলো ও মরে যাবে।

২, গাছ পালা, শাক সবজি এগুলো মূলত সূর্যের তাপ, আলো, পানি ও কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহনের মাধ্যমে বে ড়ে উঠে এবং ফুল, ফল-মূল ও অক্সিজেন দেয়। কিন্তু যখন ৪০ দিন সূর্যের আলো পৃথিবীতে পরবে না, তখন স্বাভাবিক ভাবেই মাঠের ফসল ফলাদি ও শাক সবজি গুলো নষ্ট হয়ে যাবে এবং অত্যধিক তাপমাত্রার কারণে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।

উপরের তথ্যানুযায়ী এতটা কিছুই হবেনা। সামান্য যা কিছু হবে তা এই তারকা প্রকাশের পর। তারকাটা দেখলে খাদ্য মজুদ করতে হবে কিন্তু তার আগে মজুদ করাটা বোকামির শামিল। তারকাটা বিজ্ঞানীদের মতানুসারে ২০২২ সালেই প্রকাশ পাক বা যে কোন সালে প্রকাশ পাক, যেদিন জমিন থেকে সরাসরি দেখা যাবে, তার পরেই আমরা জেনে রাখবো, যে ৩ টি জিনিস হতে চলেছে-

(১) দুর্ভিক্ষ আসতে চলেছে।

(২) ধুম্র বা ধোঁয়ার আজাব সন্নিকটে। এবং

(৩) ইমাম মাহদী আগমন সন্নিকটে।

এছাড়া এটি প্রকাশের পর বিশ্বব্যাপী ফিতনা-ফাসাদ ও ব্যাপক মতবিরোধ ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে এবং তখন অন্যতম করনীয়ঃ এক বছরের খাদ্য মজুদ করা।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ