৬.৬ ফুরাত নদীতে স্বর্ণের পাহাড় প্রকাশ ও সেটি নিয়ে যুদ্ধ

 ফুরাত নদীতে স্বর্ণের খনি বা পাহাড় প্রকাশ পাওয়া কেয়ামতের অন্যতম আলামত এবং ইমাম মাহদীর আগমনের অন্যতম বড় আলামত। হাদিসে এসেছে-

আবূ হুরাইরাহ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ অদূর ভবিষ্যতে ফুরাত (ইউফ্রেটিস) নদী উন্মুক্ত হয়ে যাবে (শুকিয়ে যাবে) এবং তার তলদেশ হতে স্বর্ণের খনি বের হবে। তখন সেখানে যে কেউ উপস্থিত হয়, সে যেন তা হতে গ্রহণ না করে।

উক্বাহ (রা:) ..... আবূ হুরাইরাহ (রা:) সূত্রে নবী থেকে এ হাদীসটি এরূপেই বর্ণনা করেছেন। তবে সেখানে كَنْزٍ مِنْ ذَهَبٍ এর স্থলে جَبَلٍ مِنْ ذَهَبٍ (স্বর্ণের পর্বত) উল্লেখ আছে।
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৭১১৯ [আঃ প্রঃ ৬৬২০; ইসঃ ফাঃ ৬৬৩৪]; সহীহুল মুসলিম ৫২/৮, হাঃ ২৮৯৪ [হাঃ একাঃ ৭১৬৬, ইঃ ফাঃ ৭০১১, ইঃ সেঃ ৭০৬৮]; মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৪২; সহীহুল জামি' ৮১৮০; মুসনাদে আবদ ইবনু হুমায়দ ১৮০; সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৬৯৩; মুসনাদে আহমাদ ২১২৯৭, ২১৩১৯)

আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন সাঈদ (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত যে, নবী এরূপ বলেছেনঃ তবে তিনি তাতে এরূপ ও বলেছেন যে, সেখানে সোনার পাহাড় প্রকাশ পাবে।
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (আলবানী একাঃ) ৪৩১৪ [ইঃ ফাঃ ৪২৬৩])

কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ..... আবু হুরাইরাহ (রা:) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ বলেনঃ কিয়ামত সংঘটিত হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ না ফুরাত তার মধ্যস্থিত [তার গর্ভস্থ] স্বর্ণের পাহাড় বের করে দেয়। লোকেরা এ নিয়ে যুদ্ধ করবে এবং একশতের মধ্যে নিরানব্বই জন নিহত হবে। তাদের সকলেই বলবে, আমার মনে হয় আমি জীবন্ত থাকব (বেঁচে যাব, একাই সম্পদ ভোগ করব)।
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭১৬৪-(২৯/২৮৯৪) [ইঃ ফাঃ ৭০০৮, ইঃ সেঃ ৭০৬৫]; সুনান তিরমিযী ২৫৬৯; রিয়াযুস স্বা-লিহীন তাঃ পাঃ ১৫/১৮৩১ [আন্তঃ ১৮২২]; মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৪৩; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২০৮০৪; সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৬৯১; হিলইয়াতুল আওলিয়া ১/২৫৫; আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ৫৩৮; মুসনাদে আহমাদ ৭৫০১, ৮০০১, ৮১৮৮, ৮৩৫৪, ৮৩৭০, ৯১০৩; আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৭১৮, ১৭২৩)

অনেক লোক এই বিষয়ে গবেষণা করেছেন এবং তাদের মধ্যে কিছু লোক এই স্বর্ণের খনি বা পাহাড় উঠবে বিষয়টি অস্বীকার করে এর ভিন্ন ব্যাখ্যা দাড় করিয়েছে। আর তা হচ্ছে স্বর্ণকে গোল্ড বলে আর বর্তমানে খনিজ তেলকে ব্ল্যাক গোল্ড বলে। তাহলে এই স্বর্ণ হচ্ছে ব্ল্যাক গোল্ড। এটি একটি ভুল ব্যাখ্যা।

রসূলুল্লাহ এর হাদীসে তৈল সংক্রান্ত কিছু বোঝাতে তিনি "কাফিসু"(قفيز) শব্দটি ব্যবহার করেছেন। টাকা পয়সার জন্য "দিরহাম" (درهم) শব্দটি ব্যবহার করেছেন। আর স্বর্নের জন্য "জাহাবুন" (ذهب) শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
-       (সহীহ মুসলিম ইঃ ফাঃ ৭০১৩)

আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ফুরাত নদীতে স্বর্ণের পাহাড় উন্মোচিত করে দেওয়া হবে। আর তাকে কেন্দ্র করে প্রত্যেক একশ জনে নিরানব্বই জনকে হত্যা করা হবে। একজন অবশিষ্ট থাকবে।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৭১৫)

 

এই উম্মতের জন্য একটি ফিতনা অর্থাৎ পরীক্ষা

রসূল ফুরাত নদীতে স্বর্ণের খনি বা পাহাড় প্রকাশ পাওয়ার বিষয়ে বলেছেন এটি প্রকাশ পেলে কেউ যেন এর কাছে না যায়। এটি একটি ফিতনা তথা ঈমানের পরীক্ষা হবে। কিন্তু হাদিসে বলা হয়েছে এরপরও সেখানে লোকজন যুদ্ধে নিহত হবে এবং অধিকাংশ লোকই নিহত হবে। আর কেউই এটি দখল করতে পারবে না। হাদিসে এসেছে-

আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, রসূল বলেছেন, অচিরেই ফুরাত নদী স্বর্ণের খনি উন্মোচন করবে। অতএব যারা তখন সেখানে থাকবে তারা যেন তা থেকে কিছুই গ্রহণ না করে।
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪৩১৩ [ইঃ ফাঃ ৪২৬২]; আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৭১০)

উমাইয়াহ ইবনু বিস্‌তাম (রহঃ) ..... সুহায়ল (রহঃ) থেকে এ সূত্রে অবিকল বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি এতে বর্ধিত বর্ণনা করেছেন যে, আমার পিতা বলেছেন, যদি তোমরা ঐ পাহাড় দেখো তবে তোমরা এর নিকটেও যেও না।
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭১৬৫ [ইঃ ফাঃ ৭০০৯, ইঃ সেঃ ৭০৬৬])

আবূ মাসউদ সাহল ইবনু উসমান (রহঃ) ..... আবু হুরাইরাহ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ শীঘ্রই ফুরাত তার গর্ভস্থত স্বর্ণভাণ্ডার বের করে দিবে। সুতরাং এ সময় যারা উপস্থিত থাকবে তারা যেন এ থেকে কিছুই গ্রহণ না করে।
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭১৬৬ [ইঃ ফাঃ ৭০১০, ইঃ সেঃ ৭০৬৭]; সহিহ বুখারি, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৬০৫)

আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূল বলেন, সময় অতিবাহিত হবে না, এমনকি ফুরাত নদী স্বর্ণের পাহাড় খুলে দিবে। ফলে সেখানে অনেক হত্যাযজ্ঞ হবে। শত শত মানুষকে হত্যা করা হবে। যদি তুমি এমন অবস্থা পাও, তাহলে তুমি কখনো তার নিকটবর্তী হবে না।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৬৯৭; মুসনাদে আহমাদ ২১১৫৮)

নবীজি ধন-সম্পদকে এই উম্মতের জন্য ফিতনা সাব্যস্ত করেছেন। তিনি বলেছেনঃ প্রত্যেক জাতির জন্য একটি করে ফিতনা আছে। আমার উম্মতের ফিতনা হলো সম্পদ।
-       (আল-আহাদ ওয়াল মাছানী খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৪৬২)

আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ ফোরাত নদীতে সোনার পাহাড় জেগে না উঠা পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না এবং লোকজন সেখানে যুদ্ধ-সংঘাতে লিপ্ত হবে। তাদের প্রতি দশজনে নয়জন নিহত হবে।
-       (সহীহ, সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ৭/৪০৪৬)

 

অন্যত্র এসেছে- মাহদী বের হবে না, যতক্ষন প্রতি ৯ জনে ৭ জনকে হত্যা না করা হয়।
-       (আল কাউলু মুখতাসার ফি আলামাত আল মাহদি আল মুনতাদার ৩-২৮)

হযরত ইবেন সিরীন হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন ততক্ষণ পর্যন্ত মাহদী বের হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রত্যেক নয় জনের সাত জনকে হত্যা করা হয়। *
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৫৮)
-       * অর্থাৎ, এটি মাহদীর আগমনের অন্যতম বড় আলামত।

হযরত আবু হুরাইরা (রা:) রসূল থেকে বর্ণনা করেন যে, রসূল বলেন স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাহাড় (বড় খনি) থেকে ফুরাত (নদী) কে খুলে দেওয়া হবে। অতঃপর সেখানে প্রত্যেক নয় জনের সাত জনকে হত্যা করা হবে। যদি তোমরা উক্ত ঘটনা পাও, তাহলে তোমরা উহার নিকটবর্তী হইও না।
-       (যঈফ, সনদ বিচ্ছিন্ন, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৬৯)

হযরত আবু হুরাইরা (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন চতূর্থ ফিতনা বা যুদ্ধ বার মাস স্থায়ী হবে। যখন অবসান হবে তখন অবসান হবে। (অবসানের সময়ে অবসান হবে।) আর স্বর্ণের পাহাড় থেকে ফুরাতকে খুলে দেওয়া হবে। অতঃপর তার উপর প্রত্যেক নয়জনের সাতজনকে হত্যা করা হবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৭০)

আবূ কামিল ফুযায়ল ইবনু হুসায়ন ও আবু মান আর রাকাশী (রহঃ) ..... আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস ইবনু নাওফাল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উবাই ইবনু কাব (রা:) এর সাথে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় তিনি বললেন, বিভিন্ন প্রক্রিয়া গ্রহণ করতঃ মানুষ জাগতিক সম্পদ উপার্জনের কাজে সর্বদা নিয়োজিত থাকবে। আমি বললাম, হ্যাঁ, ঠিকই। তখন তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ কে বলতে শুনেছি, শীঘ্রই ফুরাত তার গর্ভস্থিত স্বর্ণসম পর্বত বের করে দিবে। এ কথা শোনা মাত্রই লোকজন সেদিকে চলতে রওনা হবে। সেখানকার লোকেরা বলবে, আমরা যদি লোকদেরকে ছেড়ে দেই তবে তারা সমস্ত কিছুই নিয়ে চলে যাবে। এ নিয়ে তারা পরস্পর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে এবং এতে একশতের মধ্যে নিরানব্বই জন লোকই নিহত হবে। বর্ণনাকারী আবু কামিল (রহঃ) তার হাদীসে উল্লেখ করেছেন যে, আমি এবং উবাই ইবনু কাব (রা:) হাসসান এর কিল্লার ছায়ায় দাঁড়িয়ে ছিলাম।
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭১৬৮-(৩২/২৮৯৫) [ইঃ ফাঃ ৭০১২, ইঃ সেঃ ৭০৬৯])

যারা সত্যনিষ্ঠ মুসলমান আর যারা এই বিষয়ে জ্ঞান রাখে তারা হয়তো এখানে যাবে না। কারণ এটি একটি পরীক্ষা আর এতে নিহতের সংখ্যা হবে জীবিতদের থেকে বেশি, অবশেষে কেউই তা নিতে পারবে না।

৬.৬.১ কখন এই স্বর্ণের পাহাড় প্রকাশ পাবে?

শেষ জামানায় ইমাম মাহদীর আগমনের আগে অবশ্যই ফুরাতের স্বর্ণের পাহাড় বা খনি প্রকাশিত হবে। হাদিসে এসেছে চতুর্থ ফিতনা বা যুদ্ধ ১২ বছর স্থায়ী হওয়ার পর স্বর্ণের পাহাড় ভেসে উঠবে।

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, চতূর্থ ফিতনা হচ্ছে, অন্ধকার অন্ধত্বপূর্ন ফিতনা, যা সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায় উত্তাল হয়ে আসবে, আরব অনারবের কোনো ঘর বাকি থাকবেনা, প্রত্যেক ঘরেই উক্ত ফিতনা প্রবেশ করবে। যদ্বারা তারা লাঞ্ছিত অপদস্ত হয়ে যাবে। যে ফিতনাটি শাম দেশে চক্কর দিতে থাকলেও রাত্রিযাপন করবে ইরাকে। তার হাত পা দ্বারা আরব ভুখন্ডের ভিতরে বিচরণ করতে থাকবে। উক্ত ফিতনা এ উম্মতের সাথে চামড়ার সাথে চামড়া মিশ্রিত হওয়ার ন্যায় মিশ্রিত হয়ে যাবে। তখন বালা মুসিবত এত ব্যাপক ও মারাত্নক আকার ধারন করবে যদ্বারা মানুষ ভালো খারাপ নির্ণয় করতে সক্ষম হবেনা। ঐ মুহুর্তে কেউ উক্ত ফিতনা থামানোরও সাহস রাখবেনা। একদিকে একটু শান্তির সুবাতাস বইলেও অন্যদিকে তীব্র আকার ধারন করবে। সকালে কেউ মুসলমান থাকলেও সন্ধা হতে হতে সে কাফের হয়ে যাবে। উক্ত ফিতনা থেকে কেউ বাঁচতে পারবেনা, কিন্তু শুধু ঐ লোক বাঁচতে পারে, যে সমুদ্রে ডুবন্ত ব্যক্তির ন্যায় করুন সুরে আকুতি জানাতে থাকে। সেটা প্রায় বারো বৎসর পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে। এক পর্যায়ে সকলের কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যে ফুরাত নদীতে স্বর্নের একটি ব্রিজ (খনি বা পাহাড়) প্রকাশ পাবে। যা দখল করার জন্য সকলে যুদ্ধে জড়িয়ে যাবে এবং প্রতি নয় জনের সাতজন মারা পড়বে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৭৬)

হযরত আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন চতূর্থ ফিতনা বা যুদ্ধ ১২ বছর স্থায়ী হবে। যখন অবসান হওয়ার তখন অবসান হবে। (অর্থাৎ ১২ বছর সময় শেষ হবে তারপর) স্বর্ণের পাহাড় থেকে ফুরাতকে খুলে দেওয়া হবে (প্রকাশ পাবে)। অতঃপর তার উপর (অর্থাৎ তাতে) প্রত্যেক নয় জনের সাত জনকে হত্যা করা হবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৭০)

কিন্তু এই ফিতনা শুরু হয়েছিল কখন? যাতে আমরা হিসাব করতে পারি যে তার এক যুগ তথা ১২ বছর পর এই ফুরাতের ফিতনা দেখা দিবে? এই চতুর্থ ফিতনা যেটা শুরু হয়েছে সিরিয়াতে চলমান যুদ্ধের মাধ্যমে। হাদিসে এসেছে-

হযরত সাঈদ ইবনে মোসায়েব (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, একটা যুদ্ধ হবে যার শুরুতে থাকবে শিশুদের খেলা (ছোটদের খেলা থেকেই যুদ্ধ শুরু হবে)। যুদ্ধটা এমন হবে যে, এক দিক হতে থামলে অন্যদিক হতে তা আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। যুদ্ধ থামবে না এমন অবস্থায় আসমান থেকে জিবরাঈল (আঃ) বলবেন, অমুক ব্যক্তি তোমাদের নেতা। আর ইবনে মোসায়েব (রা:) বলেন, তাঁর দুই হাত গুটাবেন ফলে তাঁর হাত দুটা সংকুচিত হয়ে যাবে। অতঃপর তিনি এই কথাটি তিনবার বললেন, সেই নেতাই সত্য।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৭৩; আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৫৭)

হযরত ইবনুল মুসাইয়িব (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন সিরিয়ায় একটি যুদ্ধ হবে। যার শুরুটা হবে শিশুদের খেলাধূলা (দিয়ে)। অতঃপর তাদের এ যুদ্ধ কোন ভাবেই থামবে না। আর তাদের কোন দলও থাকবে না। এমনকি আকাশ থেকে এক সম্বোধনকারী সম্বোধন করে বলবে, তোমাদের উপর অমুক ব্যক্তি। এবং সুসংবাদদাতার হাত উত্থিত হবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৭৭)

এ বিষয়ে জানা যায়- ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ১৪ বছর বয়সী ৭ম শ্রেণীর ছাত্র মুয়াইয়া সিয়াসনেহ টেলিভিশনে তিউনেশিয়া ও মিশরের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সরকার বিরোধী খবর দেখে দক্ষিণ সিরিয়ার দারা শহরে নিজের স্কুলের দেয়ালে সরকার বিরোধী স্লোগান লেখে। বিবিসি এর নিউজ মতে এক ছোট ছেলে খেলাধুলার বসে দেয়ালে লিখে বাশার (শাসক) তোমাকে চলে যেতে হবে। আর সেখানে নিয়ম ছিল প্রেসিডেন্ট এর নামের আগে সম্মানজনক কিছু উল্লেখ করা। তারপর রাতের বেলা পুলিশ এসে তাকে সহ আরো ৩ বন্ধুকে আটক করে মারাত্মক নির্যাতন করে। কিছু খবরে আসে সেই আটককৃতদের থেকে একজন নির্যাতনের কারণে মারাও যায়।

এই ঘটনার পর অভিভাবকরা ও সমাজের লোকেরা রাস্তায় মিছিলে নামে। যার কারণে দারা শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরে, এবং পরবর্তীতে যা পুরো সিরিয়াতে ছড়িয়ে পরে। পরিস্থিতি খারাপ দেখে বাশার আল আসাদ সেনাবাহিনী মোতায়েন করে এবং তাদেরকে নির্দেশ দেয় বিক্ষোভকারীদের সরাসরি গুলি করতে। কিন্তু সেনাবাহিনীর কেউ কেউ সাধারণ জনগণকে গুলি করতে অস্বীকার করে। তারপর সেনাবাহিনীর সেই বিদ্রোহী অংশটি নিয়ে গঠিত হয় FSA অর্থাৎ ফ্রি সিরিয়ান আর্মি। তারপর যুক্তরাষ্ট্র ও তার আরব দেশের মিত্ররা বিদ্রোহীদের অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে। ২০১২ সালে আল কায়দা আফগানিস্তান থেকে কিছু প্রশিক্ষিত যোদ্ধা সিরিয়াতে পাঠায় এবং ইরাকের ইসলামিক স্টেট কে সিরিয়াতে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সাম্প্রতিক কালে, HTS এর কমান্ডার আবু মুহাম্মদ জুলানী বলেন, মাত্র ৫ টি AK47 রাইফেল দিয়ে তারা সিরিয়া যুদ্ধের যাত্রা শুরু করে। অর্থাৎ এই এখানে অনেকগুলো দল একসাথে যুদ্ধে জড়িয়ে যায়। যা এখনো চলমান। আর এটাই হচ্ছে সিরিয়া যুদ্ধ তথা চতুর্থ ফিতনা।

দেখা যাচ্ছে হাদিসের সাথে হুবহু এই যুদ্ধের সূত্রপাতের সাথে মিলে যাচ্ছে এবং এ বিষয়ে সকলেই একমত যে, ২০১১ সালেই সিরিয়া ফিতনা শুরু হয়েছে। তাহলে এই ফিতনা শুরু হওয়ার ১২ বছর পর ফুরাতের ফিতনা ঘটিত হবে। এই হিসেবে-

২০১১+১২=২০২৩ সালে ফুরাত নদীতে স্বর্ণের পাহাড় বা খনি উন্মোচিত হবে ও তা নিয়ে যুদ্ধ হবে। এটাই বেশির ভাগ হাদিসের সাথে সামজ্জস্যপূর্ণ। আল ফিতানের ( হাঃ ৯৭২) একটি হাদিসে আছে যাতে ১৮ বছরের উল্লেখ এসেছে, কিন্তু অন্যান্য সব আলামতের সাথে মিলালে এবং ভালোভাবে গবেষণা করলে দেখা যায় ১২ বছর পর দেখা যাবে বর্ণনাটাই সঠিক। ১২ বছরের দলিল বেশি, আর ১৮ বছরেরটি একক বর্ণনা। তাই শক্তিশালী মতই গ্রহণযোগ্য হবে। আল ফিতান এর বাংলা অনুবাদক মুফতি মাহদী খান ২য় খণ্ডের অনুবাদেও ২০২৩ সালের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ, হাদিস মতে ২০২৩ সালে বা তাঁর কিছু পরেই এটি দেখা যাবে ইংশাআল্লাহ। আর ১৮ বছরের বিষয়টি এভাবে নেওয়া যেতে পারে যে ফুরাত নদীতে স্বর্ণের প্রকাশ হওয়ার পরেও সিরিয়ায় এই ফিতনা থামবে না, এক পর্যায়ে ইমাম মাহদীর মাধ্যমে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তা শেষ হবে।

৬.৬.২ কারা এই যুদ্ধে জড়াবে

হাদিসে বর্ণিত বিষয় থেকেই জানা যায়, লোকজন সেখানে যুদ্ধ-সংঘাতে লিপ্ত হবে এবং বিভিন্ন বর্ণনায় বিভিন্ন ভাবে মারা যাওয়ার হিসাব বর্ণিত হয়েছে। কোন হাদিসে ১০০ জনের ৯৯ জনই, এক জায়গায় ১০ জনের ৯ জনই, অন্যত্র ৯ জনের ৭ জনই নিহত হবে বলে উল্লেখ এসেছে। আর নয় জনের সাত জনই হত্যা হবে এই দলিলটি বেশি পাওয়া যায়। যেখানে রসূল নিষেধ করেছেন যেতে, সেখানে কোন হতভাগারা যাবে সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। অনেক গবেষক বিভিন্ন হাদিস গবেষণা করে বিভিন্ন দেশকে উল্লেখ করেছেন যারা যুদ্ধে জড়াবে। তবে তাদের মধ্যে সব জায়গায় একটি দেশ কমন আর তা হচ্ছে শাম বা বর্তমান সিরিয়া, কারণ হিসেবে ফুরাত নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় সিরিয়া অঞ্চল। অর্থাৎ সিরিয়া ফুরাতের স্বর্ণ দখলের জন্য যুদ্ধ করবে। তবে হাদিস থেকে সরাসরি জানা যায় না যে, কোন কোন দেশ বা জাতি এটি দখলে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। তবে আশ-শাহরান এর ইলহামী ভবিষ্যৎবাণী সম্বলিত আগামী কথন কবিতায় এই বিষয়ের একটি উল্লেখ পাওয়া যায়।

আগামী কথনে উল্লেখ করা হয়েছে

প্যারাঃ (৮)

একটি "শীন", দুইটি "আলিফ",
তিন ভূখণ্ডেই হবে ঝড়।
বিদায় জানালো মহাদূত,
তার তের-নব্বই-এক পর।

ব্যাখ্যাঃ এই পর্বে লেখক আশ-শাহরান, একটু অস্পষ্ট ভাবে বাক্য উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন যে, সেই ফুরাত নদীর স্বর্নের পাহাড় দখলে আনার জন্য তিনটি রাষ্ট্র যুদ্ধে জড়িয়ে পরবে। সেই ৩ টি দেশের নামের প্রথম হরফ এখানে লেখক উল্লেখ করছেন। আর তা হলো, (১) শীন (২) আলিফ এবং (৩) আলিফ। যেহেতু ফুরাত নদী তুরস্ক থেকে উৎপন্ন হয়ে, আরবের পাশ দিয়ে শাম বা সিরিয়া অঞ্চল দিয়ে ইরাক পর্যন্ত বিস্তৃত। তাই সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, (১) শীন হলো শাম বা সিরিয়া অঞ্চল এবং (২) আলিফ হলো ইরাক। তাহলে (৩) নং আলিফ কোন দেশ? (পরবর্তী প্যারায় প্রকাশিত)

এখন প্রশ্ন হলো, কবে কত সালে এই সোনার পাহাড় প্রকাশ পাবে? এ প্রসঙ্গে (আশ-শাহরান) বলেছেন যে, বিদায় জানালো মহাদূত, তার তের নব্বই এক পর। কে এই মহাদূত? আমরা সবাই জানি যে, মানবতার মুক্তির মহাদূত হলেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ । তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় জানিয়েছেন ৬৩২ খ্রীঃ তে। আর ১৩-৯০-১ মানে লেখক এখানে ১৩৯১ বছর বুঝিয়েছেন। সুতরাং ৬৩২+১৩৯১ = ২০২৩। অর্থাৎ, এখানে লেখক (আশ-শাহরান) ভবিষ্যৎবাণী করে বলেছেন যে, আগামী ২০২৩ সালের পর বা সে বছরই যেকোন সময়ই ফুরাত নদী থেকে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠবে। যেটা কিয়ামতের অন্যতম আলামত।

প্যারাঃ (৯)

যে ভূমি থেকে দিয়েছিলো নিষেধ,
খোদার প্রিয় নবী।
নিষেধ ভুলিবে করিবে রণ,
তাতে হইবেনা কামিয়াবি।

ব্যাখ্যাঃ এই প্যারায় লেখক (আশ-শাহরান) বলেছেন যে, মুহাম্মাদ যে দেশ থেকে ঐ স্বর্নের খনি দখল করতে যাওয়ার নিষেধ করেছিলেন তার নিষেধ ভুলিয়া ঐ দেশটিও লোভের বশীভুত হয়ে ফুরাত নদীর সোনার পাহাড় দখল করতে লড়াই করবে। অর্থাৎ, সৌদি আরবও যুদ্ধ করবে সোনার লোভে।

এই প্যারা থেকে প্রমানিত যে, (৩) নং আলিফ নামক দেশটি হলো "আরব/সৌদি আরব"! একটি বিষয় এখানে রয়ে যায় তা হচ্ছে আরব তো আইন দিয়ে তাহলে আলিফ দিয়ে কিভাবে হয়। এখানে দুইটি বিষয় হতে পারে। একটি হচ্ছে যে এই আলিফ দ্বারা বাংলার আ অক্ষরকে বুঝিয়েছে যা দিয়ে আরব লেখা হয়। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, আলিফ দিয়েও আরব লেখা হয়। কিছু জায়গায় এরকম দেখাও গিয়েছে। আল্লাহু আলিম। তাহলে যে ৩টি দেশ আল্লাহর রসূল এর নিষেধ অমান্য করে ফুরাত নদীর সোনার পাহাড় দখল করতে যুদ্ধের সুচনা করবে সেই ৩ টি দেশ হলো, (১) শাম বা সিরিয়া, (২) ইরাক ও (৩) আরব। কিন্তু কেউই সেই যুদ্ধে সফলতা পাবে না।

প্যারাঃ (১০)

দুপক্ষ কাল চলিবে লড়াই,
দখল করিতে জলাংশ।
প্রতি নয় জনের সাত জনই হায়,
হইবে সে রনে ধ্বংস।

ব্যাখ্যাঃ লেখক (আশ-শাহরান) ভবিষ্যৎবাণীতে বলেছেন যে, ফুরাত নদীর সোনার পাহাড় দখল করার জন্য শাম বা সিরিয়া, আরব ও ইরাক দুই (২) পক্ষ কাল সময় ধরে যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে। আমরা জানি যে, ১ পক্ষ কাল সময় = ১৫ দিন। সুতরাং, ২ পক্ষ কাল = ৩০ দিন। অর্থাৎ, সোনার খনি দখল করতে ১ মাস যুদ্ধ চালাবে সিরিয়া, ইরাক ও আরব। ২০২৩ সালের যে কোন মুহূর্তে। আর সেই যুদ্ধে যত জন অংশ গ্রহণ করবে তাদের প্রতি ৯ জনের মধ্যে ৭ জন করেই মারা পরবে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ