৬.৫৮ ঈসা (ؑআঃ) এর ফিরে আসা নিয়ে বর্ণনা

 আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে এরশাদ করেন-

إِذْ قَالَ اللَّهُ يَا عِيسَىٰ إِنِّي مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَيَّ وَمُطَهِّرُكَ مِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا وَ جَاعِلُ الَّذِينَ اتَّبَعُوكَ فَوْقَ الَّذِينَ كَفَرُوا إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ  ۖ  ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأَحْكُمُ بَيْنَكُمْ فِيمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ

যখন আল্লাহ বলেছিলেন: হে ঈসা! নিশ্চই আমি তোমাকে (কাফেরদের থেকে আমার বিশেষ নিরাপত্তায়) নিয়ে নিবো এবং আমার কাছে (আসমানে) তোমাকে তুলে/উঠিয়ে নিবো এবং যারা কুফুরী করেছে তাদের থেকে তোমাকে পবিত্র (মুক্ত) করবো। এবং যারা কুফরী করবে, তাদের উপরে আমি ওই সকল (মুমিন ব্যাক্তিদের)কে কেয়ামত পর্যন্ত সমুন্নত রাখবো, যারা তোমার অনুগত্য-অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদেরকে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে। তখন আমি তোমাদের মাঝে মিমাংসা করে দিবো, যে ব্যাপার নিয়ে তোমরা (পৃথিবীতে) দ্বন্দ্ব-মতবিরোধ করতে। [সূরা আল-ইমরান, আঃ ৫৫]

يَسْأَلُكَ أَهْلُ الْكِتَابِ أَن تُنَزِّلَ عَلَيْهِمْ كِتَابًا مِّنَ السَّمَاءِ ۚ فَقَدْ سَأَلُوا مُوسَىٰ أَكْبَرَ مِن ذَٰلِكَ فَقَالُوا أَرِنَا اللَّهَ جَهْرَةً فَأَخَذَتْهُمُ الصَّاعِقَةُ بِظُلْمِهِمْ ۚ ثُمَّ اتَّخَذُوا الْعِجْلَ مِن بَعْدِ مَا جَاءَتْهُمُ الْبَيِّنَاتُ فَعَفَوْنَا عَن ذَٰلِكَ ۚ وَآتَيْنَا مُوسَىٰ سُلْطَانًا مُّبِينًا – وَرَفَعْنَا فَوْقَهُمُ الطُّورَ بِمِيثَاقِهِمْ وَقُلْنَا لَهُمُ ادْخُلُوا الْبَابَ سُجَّدًا وَقُلْنَا لَهُمْ لَا تَعْدُوا فِي السَّبْتِ وَأَخَذْنَا مِنْهُم مِّيثَاقًا غَلِيظًا – فَبِمَا نَقْضِهِم مِّيثَاقَهُمْ وَكُفْرِهِم بِآيَاتِ اللَّهِ وَقَتْلِهِمُ الْأَنبِيَاءَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَقَوْلِهِمْ قُلُوبُنَا غُلْفٌ ۚ بَلْ طَبَعَ اللَّهُ عَلَيْهَا بِكُفْرِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُونَ إِلَّا قَلِيلًا – وَبِكُفْرِهِمْ وَقَوْلِهِمْ عَلَىٰ مَرْيَمَ بُهْتَانًا عَظِيمًا – وَقَوْلِهِمْ إِنَّا قَتَلْنَا الْمَسِيحَ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ رَسُولَ اللَّهِ وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَٰكِن شُبِّهَ لَهُمْ ۚ وَإِنَّ الَّذِينَ اخْتَلَفُوا فِيهِ لَفِي شَكٍّ مِّنْهُ ۚ مَا لَهُم بِهِ مِنْ عِلْمٍ إِلَّا اتِّبَاعَ الظَّنِّ ۚ وَمَا قَتَلُوهُ يَقِينًا – بَل رَّفَعَهُ اللَّهُ إِلَيْهِ ۚ وَكَانَ اللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا

(হে নাবী মুহাম্মাদ!) আহলে কিতাব (ইহূদীরা) তোমার কাছে আবদার করে যে, তাদের উপরে আসমান থেকে (কোনো লিখিত) কিতাব নাজিল করা হোক। বস্তুত: (সত্যকে কবুল না করার এজাতীয় ছলচাতুরীপূর্ণ দাবী এদের নতুন নয়। এদের পূর্বের ইহূদীরা) মুসার কাছে এর থেকে (আরো অনেক) বড় আবদার করেছিল। তখন তারা (মুসাকে) বলেছিল, আমাদেরকে প্রকাশ্যে (সরাসরি) আল্লাহকে দেখাও। ফলে বজ্রপাত তাদেরকে পাকড়াও করেছিল তাদের জুলুমের কারণে। অত:পর তাদের কাছে (আমার পক্ষ থেকে) সুস্পষ্ট-নিদর্শন আসার পরও তারা বাছুরকে (উপাস্য হিসেবে) গ্রহণ করে নিয়েছিল। পরে আমি তা ক্ষমা করে দিয়েছিলাম। বস্তুত: মুসাকে আমি দিয়েছিলাম সুস্পষ্ট প্রমাণ। আর (আমার নির্দেশের উপরে) তাদেরকে (আমল করানোর স্বপক্ষে) অঙ্গীকার করাতে আমি তাদের (মাথার) উপরে তুলে ধরেছিলাম তূর (পাহাড়)কে। আর তাদেরকে আমি বলেছিলাম, তোমরা দ্বারপথে প্রবেশ করো সিজদাহরত: অবস্থায়। আর আমি তাদেরকে (আরো) বলেছিলাম, তোমরা শনিবারের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করো না। আর তাদের থেকে আমি নিয়েছিলাম সুদৃঢ় প্রতিশ্রুতি। পরে তাদের অঙ্গীকার লঙ্ঘন, আল্লাহর আয়াতসমূহের সাথে তাদের কুফুরী, না-হক্ব ভাবে (আমার প্রেরিত) নবীগণকে হত্যা করা এবং তাদের (এজাতীয়) কথা (বলা যে,) আমাদের অন্তরগুলো আচ্ছাদিত -এ(সব) কারণে (তাদেরকে পাকড়াও করা হয়েছিল)। বরং, আল্লাহ ও(ই অন্তর)গুলোর উপরে মোহর মেরে দিয়েছেন তাদের কুফুরীর কারণে। কাজেই, তাদের অল্প সংখ্যক ব্যতীত কেউ ঈমান আনবে না। আর (এমনি পরবর্তীতে আমার প্রেরিত রসূল ঈসা ও ইঞ্জিলের সাথে) তাদের (প্রদর্শিত) কুফুরী, (ঈসা) ইবনে মারইয়ামের উপরে গুরুতর অপবাদ (আরোপ) এবং তাদের (কটাক্ষ ও তাচ্ছিল্লপূর্ণ কুফরী) কথা -আল্লাহর রসূল (বলে দাবীদার এই কথিত) আল-মাসিহ ঈসা ইবনে মারইয়ামকে আমরা হত্যা করে ফেলেছি এ(সবে)র কারণে (তাদেরকে পাকড়াও করা হয়েছিল)। অথচ (সত্য হল) তারা তাঁকে হত্যাও করেনি, তারা তাঁকে ক্রুশবিদ্ধও করেনি। বরং (গোটা বিষয়টিতেই) তাদের (মারাত্মক) বিভ্রম ঘটেছিল। আর নিশ্চয়ই যারা এ ব্যাপারে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছে, তারা তাঁর ব্যাপারে অবশ্যই সন্দেহে রয়েছে। এব্যাপারে তাদের কাছে (সত্য) জ্ঞানের কিছু নেই; আছে কেবল (নিজেদের কিছু চিন্তা প্রসূত) ধারনার অনুসরণ। নিঃসন্দেহে তারা তাঁকে হত্যা করেনি। বরং আল্লাহ তাকে (আসমানে) তাঁর (নিজের) কাছে (নিরাপদে) তুলে/উত্তোলন করে নিয়েছেন। আর আল্লাহ হলেন মহাপরাক্রমশালী মহাপ্রজ্ঞাময়। [সূরা নিসা, আঃ ১৫৩-১৫৮]

وَ لَمَّا ضُرِبَ ابْنُ مَرْيَمَ مَثَلًا إِذَا قَوْمُكَ مِنْهُ يَصِدُّونَ – وَقَالُوا أَآلِهَتُنَا خَيْرٌ أَمْ هُوَ ۚ مَا ضَرَبُوهُ لَكَ إِلَّا جَدَلًا ۚ بَلْ هُمْ قَوْمٌ خَصِمُونَ – إِنْ هُوَ إِلَّا عَبْدٌ أَنْعَمْنَا عَلَيْهِ وَجَعَلْنَاهُ مَثَلًا لِّبَنِي إِسْرَائِيلَ – وَ لَوْ نَشَاءُ لَجَعَلْنَا مِنكُم مَّلَائِكَةً فِي الْأَرْضِ يَخْلُفُونَ – وَ إِنَّهُ لَعِلْمٌ لِّلسَّاعَةِ فَلَا تَمْتَرُنَّ بِهَا وَ اتَّبِعُونِ ۚ هَٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيمٌ

(হে নবী মুহাম্মাদ!) যখনই (ঈসা) ইবনে মারইয়ামের উদাহরণ পেশ করা হয়, তখনই তোমার কওম তাঁর ব্যাপারে চিৎকার জুড়ে দেয় এবং বলে, (আমরা আমাদের উপাস্যদের ইবাদত করলে দোষ হয়! এদিকে খৃষ্টানরাও তো ঈসার ইবাদত করে।) আমাদের উপাস্যরা উত্তম, নাকি সে? তারা তোমার কাছে এ (জাতীয় উদাহরণ) পেশ করে শুধুমাত্র তর্কের জন্য। বরং তারা হল (একটা) ঝগড়াটে (তর্কবাজ) কওম। সে তো (আমার একনিষ্ঠ একজন) বান্দা, যার উপরে আমরা (রিসালাতের মতো মর্যাদাবান) নিয়ামত দিয়েছিলাম এবং তাকে বনী ইসরাঈলের জন্য বানিয়েছিলাম (অনুকরণীয় আদর্শের এক উজ্জল) নমুনা। আমি যদি চাইতাম, তাহলে জমিনে তোমাদের মধ্য থেকে ফেরেশতা বানাতে পারতাম। (তখন আমার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য) তারা (তোমাদের) স্থাভিষিক্ত হতো। আর নিশ্চয়ই সে কেয়ামতের (একটি বড় আলামত ও) নিদর্শন। তোমরা সে ব্যাপারে কোনো সংশয় পোষন করো না। আর তোমরা (আমার) অনুগত্যকারী হয়ে যাও। এটাই সিরাতে মুস্তাকীম (সরল সঠিক পথ)। [সূরা যখরুফ, আঃ ৫৭-৬১]

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, রসূল বলেছেন, কোন জাতিকে কেয়ামত (জাতিগত আযাব) দ্বারা ধ্বংসের পূর্বেই তাদের নিকট আল্লাহ তা'আলা সাবধানকারী পাঠান। যেন আল্লাহ ভীরু লোকগণ কেয়ামত (জাতিগত আযাব) থেকে নাজাত পান। আর মরিয়ম পুত্র ঈসা (আঃ) হলো, শেষ কিয়ামতের পূর্বে সাবধানকারী।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৭৭)

আব্দুল্লাহ ইবনু জুবাইর (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল বলেছেন, অবশ্যই আমার উম্মতের কিছু লোক ঈসা ইবনু মারিয়াম আলাইহিস সালামকে পাবে। তারা তোমাদের মতোই বা তাদের সৎজনেরা তোমাদের মতো বা ভালো৷
-       (মুরসাল, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৫৯৪)

মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ..... আবূ সারীহাহ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ এক গৃহের ভিতর ছিলেন। আমরা তার নীচে বসা ছিলাম। অতঃপর বর্ণনাকারী হাদীসটি পূর্বের অবিকল বর্ণনা করেছেন। শুবাহ্ (রহঃ) বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছেনঃ তারা যেখানে অবতরণ করবে আগুনও সেখানে অবতরণ করবে এবং তারা যেখানে দ্বিপ্রহরে কইলুলা করবে আগুনও সেখানে তাদের সাথে থাকবে। বর্ণনাকারী শুবাহ (রহঃ) বলেন, এক লোক আবূ সারীহার এ হাদীসটি আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। তবে মারফু হিসেবে তিনি এ হাদীসটি বর্ণনা করেননি। এতে জনৈক লোক বলেছেন, দশম নিদর্শনটি হলো, ঈসা (আঃ) এর অবতরণ। কিন্তু অপর লোক বলেছেন, দশম নিদর্শনটি হলো, তখন এমন প্রবলবেগে বায়ু প্রবাহিত হবে, যা মানুষদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করবে।
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭১৭৯ [ইঃ ফাঃ ৭০২৩, ইঃ সেঃ ৭০৮০])

মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ) ..... আবু সারীহাহ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আলোচনা করছিলাম, এমতাবস্থায় রসূলুল্লাহ আমাদের সম্মুখে আসলেন। অতঃপর তিনি মুআয ও ইবনু আবু জাফার এর অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি তার হাদীসের শেষভাগে বর্ণনা করেছেন যে, দশম নিদর্শনটি হলো, মারইয়াম পুত্র ঈসা (আঃ) এর অবতরণ। বর্ণনাকারী শুবাহ (রহঃ) বলেন, আবদুল আযীয (রহঃ) এ হাদীসটি মারফু হিসেবে উল্লেখ করেননি।
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭১৮০ [ইঃ ফাঃ ৭০২৪, ইঃ সেঃ ৭০৮১])

নবী -এর চাচাত ভাই ইবনু আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত। নবী বলেন, মিরাজের রাত্রে আমি মূসা (আঃ)-কে দেখেছি। তিনি গোধুম বর্ণের পুরুষ ছিলেন; দেহের গঠন ছিল লম্বা। মাথার চুল ছিল কোঁকড়ানো। যেন তিনি শানূআ গোত্রের জনৈক ব্যক্তি। আমি ঈসা (আঃ)-কে দেখতে পাই। তিনি ছিলেন মধ্যম গঠনের লোক। তাঁর দেহবর্ণ ছিল সাদা লালে মিশ্রিত। তিনি ছিলেন মধ্যম দেহ বিশিষ্ট। মাথার চুল ছিল অকুঞ্চিত। জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক মালিক এবং দাজ্জালকেও আমি দেখেছি। আল্লাহ তাআলা নবী -কে বিশেষ করে যে সকল নিদর্শনসমূহ দেখিয়েছেন তার মধ্যে এগুলোও ছিল। সুতরাং তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে তুমি সন্দেহ পোষণ করবে না। আনাস এবং আবূ বকরাহ (রা:) নবী হতে বর্ণনা করেছেন, ফেরেশতামন্ডলী মদিনাকে দাজ্জাল হতে পাহারা দিয়ে রাখবেন।
-       (সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৩২৩৯,৩৩৯৬ [আঃ প্রঃ ২৯৯৯; ইসঃ ফাঃ ৩০০৯]; মুসলিম ১/৭৪ হাঃ ১৬৫, মুসনাদে আহমাদ ৩১৮০)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ মিরাজ গমনের রাতে ইবরাহীম (আ), মূসা ও ঈসা (আ)-এর সাক্ষাত লাভ করেন। তাঁরা পরস্পর কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনায় প্রবৃত্ত হন। তাঁরা প্রথমে ইবরাহীম (আ)-এর কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে কিয়ামত সম্পর্কিত কোন জ্ঞান তাঁর ছিলো না। অতঃপর তাঁরা মূসা (আ)-কে জিজ্ঞেস করলে তাঁরও এ সম্পর্কে কোন জ্ঞান ছিলো না। অতঃপর বিষয়টি ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ)-এর নিকট পেশ করা হলে তিনি বলেনঃ আমার থেকে কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে দুনিয়াতে প্রত্যাবর্তনের প্রতিশ্রুতি নেয়া হয়েছে। কিন্তু কিয়ামতের সঠিক জ্ঞান আল্লাহ ব্যতীত কারো কাছে নেই। অতঃপর তিনি দাজ্জালের আবির্ভাবের কথা উল্লেখ করে বলেনঃ আমি দুনিয়াতে অবতরণ করবো এবং দাজ্জালকে হত্যা করবো। অতঃপর লোকেরা তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবে। ইত্যবসরে তাদের নিকট ইয়াজূজ-মাজূজ আত্মপ্রকাশ করবে। তারা প্রতিটি উঁচু ভূমি থেকে ছুটে আসবে। তারা যে পানির উৎসের নিকট দিয়ে অতিক্রম করবে তা পান করে শেষ করবে। এরা যে বস্তুর নিকট দিয়ে যাবে তা নষ্ট করে ফেলবে। তখন লোকেরা তাদেরকে মেরে ফেলার জন্য আল্লাহর নিকট চিৎকার করে ফরিয়াদ করবে এবং আমিও দোয়া করবো। ফলে পৃথিবী তাদের (গলিত লাশের) গন্ধে দুর্গন্ধময় হয়ে যাবে। ফলে আল্লাহ আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, যা তাদের ভাসিয়ে নিয়ে সমুদ্রে নিক্ষেপ করবে। অতঃপর পাহাড়-পর্বত উৎপাটিত করা হবে, পৃথিবীকে প্রশস্ত করা হবে, যেমন চামড়া প্রশস্ত করা হয়। তারপর আমাকে বলা হলোঃ যখন এসব বিষয় প্রকাশিত হবে তখন কিয়ামত মানুষের এত নিকটবর্তী হবে যেমন গর্ভবর্তী নারী, যার পরিবারের লোকজন জানে না যে, কোন্ মুহূর্তে সে সন্তান প্রসব করবে। আওয়াম (রা:) বলেন, এ ঘটনার সত্যতা আল্লাহর কিতাবে বিদ্যমান আছেঃ

এমনকি যখন ইয়াজূজ ও মাজূজকে মুক্তি দেয়া হবে এবং এরা প্রতিটি উচ্চভূমি থেকে ছুটে আসবে। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৯৬)
-       (যঈফ, সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ৪০৮১; আহমাদ ৩৫৪৬; যইফাহ ৪৩১৮)
-       তাহকীক আলবানীঃ যইফ। উক্ত হাদিসের রাবী মু'সির বিন আফাযাহ এর জাহালাতের কারণে হাদিসটি দুর্বল হওয়ার কথা বলা হয়েছে। হাদিসটিকে বুসায়রী সহীহ বলেছেন। (মিসবাহুয যুজাজাহ)

ইবনু উমার (রা:) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ আমি এক রাতে স্বপ্নে নিজেকে কাবার নিকট দেখলাম। হঠাৎ সেখানে বাদামী রং এর এক ব্যক্তিকে দেখলাম। তোমরা যেমন সুন্দর বাদামী রঙের লোক দেখে থাক তার থেকেও অধিক সুন্দর ছিলেন তিনি। তাঁর মাথার সোজা চুল, তাঁর দুস্কন্ধ পর্যন্ত ঝুলছিল। তার মাথা হতে পানি ফোঁটা ফোঁটা পড়ছিল। তিনি দুজন লোকের স্কন্ধে হাত রেখে কাবা তাওয়াফ করছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম ইনি কে? তারা জবাব দিলেন, ইনি হলেন, মাসীহ ইবনু মারইয়াম। অতঃপর তাঁর পেছনে অন্য একজন লোককে দেখলাম। তার মাথায় চুল ছিল বেশ কোঁকড়ানো, ডান চক্ষু ট্যাঁরা, আকৃতিতে সে আমার দেখা মত ইবনু কাতানের সঙ্গে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। সে একজন লোকের দুস্কন্ধে ভর দিয়ে কাবার চারদিকে ঘুরছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ লোকটি কে? তারা বললেন, এ হল মাসীহ দাজ্জাল। মিশকাতে অতিরিক্ত- অপর এক বর্ণনাতে তিনি দাজ্জালের বর্ণনায় বলেছেন, সে লাল বর্ণের, মোটা দেহ, মাথার চুল কোঁকড়ানো, ডান চক্ষু কানা, মানুষের মাঝে ইবনু কতানই তার কাছাকাছি সাদৃশ্য। আর আবূ হুরায়রাহ রাঃ-এর বর্ণিত হাদীস (لَا تَقُومُ السَّاعَةُ) মহাযুদ্ধ অধ্যায়"-এ বর্ণিত হয়েছে। আর ইবনু উমার রাঃ-এর হাদীস (قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي النَّاس) শীঘ্রই (بْن الصياد) এর ঘটনায় বর্ণনা করব ইনশাআল্লাহ।
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৩৪৪০, ৩৪৪১, ৫৯০২, ৬৯৯৯, ৭০২৬, ৭১২৮ [আঃ প্রঃ ৩১৮৫; ইসঃ ফাঃ ৩১৯৪]; সহীহুল মুসলিম ১/৭৫ হাঃ ১৬৯; মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৮৩; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩৪০৫; সহীহুল জামি' ৮৬৯; সহীহ ইবনু হিব্বান ৬২৩১; মুসনাদে আহমাদ ৪৯৪৮)

সালিম এর পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! নবী এ কথা বলেননি যে ঈসা (আঃ) লাল বর্ণের ছিলেন। বরং বলেছেন, একদা আমি স্বপ্নে কাবা ঘর তাওয়াফ করছিলাম। হঠাৎ সোজা চুল ও বাদামী রঙের জনৈক ব্যক্তিকে দেখলাম। তিনি দুজন লোকের মাঝখানে চলছেন। তাঁর মাথার পানি ঝরছে অথবা বলেছেন, তার মাথা হতে পানি বেয়ে পড়ছে। আমি বললাম, ইনি কে? তারা বললেন, ইনি মারিয়ামের পুত্র। (প্রয়োজনীয় অংশ)
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৩৪৪১ [আঃ প্রঃ ৩১৮৬; ইসঃ ফাঃ ৩১৯৫])

আবূ হুরাইরাহ্ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল বলেছেন, শপথ সেই সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, শীঘ্রই তোমাদের মধ্যে মারিয়ামের পুত্র ঈসা (আঃ) ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসেবে আগমন করবেন। তিনি ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন এবং তিনি যুদ্ধের সমাপ্তি টানবেন। তখন সম্পদের ঢেউ বয়ে চলবে। এমনকি কেউ তা গ্রহণ করতে চাইবে না। তখন আল্লাহকে একটি সিজদা করা তামাম দুনিয়া এবং তার মধ্যকার সমস্ত সম্পদ হতে অধিক মূল্যবান বলে গণ্য হবে। অতঃপর আবূ হুরাইরাহ্ (রা:) বলেন, তোমরা ইচ্ছা করলে এর সমর্থনে এ আয়াতটি পড়তে পারঃ ‘‘কিতাবীদের মধ্যে প্রত্যেকে তাঁর (ঈসা (আঃ)-এর) মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে বিশ্বাস করবেই এবং কিয়ামতের দিন তিনি তাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবেন। (আন-নিসা ১৫৯)
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৩৪৪৮, ২২২২ [আঃ প্রঃ ৩১৯৩; ইসঃ ফাঃ ৩২০২]; মুসলিম ২৪২-(১৫৫); মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৫০৫; সহীহুল জামি ৭০৭৭; সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৭৭৯; আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ২৫৬৫)

আবূ হুরাইরা (রা:) সূত্রে বর্ণিত। নবী বলেনঃ আমার ও তাঁর অর্থাৎ ঈসা (আঃ)-এর মাঝে কোনো নবী নেই। আর তিনি তো অবতরণ করবেন। তোমরা তাঁকে দেখে এভাবে চিনতে পারবে যে, তিনি মাঝারি উচ্চতার, লাল-সাদা ও গেরুয়া রঙের মাঝামাঝি অর্থাৎ দুধে আলতা তাঁর দেহের রং হবে এবং তাঁর মাথার চুল ভিজা না থাকলেও মনে হবে চুল থেকে যেন বিন্দু বিন্দু পানি টপকাচ্ছে। তিনি ইসলামের জন্য মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন, ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শুকর নিধন করবেন ও জিযিয়া রহিত করবেন। তিনি তাঁর যুগে ইসলাম ছাড়া সকল ধর্ম বিলুপ্ত করবেন এবং মাসীহ দাজ্জালকে হত্যা করবেন। তিনি পৃথিবীতে চল্লিশ বছর অবস্থান করবেন, অতঃপর মৃত্যুবরণ করবেন এবং মুসলিমরা তাঁর জানাযা পড়বে।
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (আলবানী একাঃ) ৪৩২৪ [ইঃ ফাঃ ৪২৭৩]; ইবনু হিব্বান; মুসনাদে আহমাদ)

আবূ হুরাইরা (রা:) হতে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ সেই মহান সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! তোমাদের মাঝে ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ) খুব শীঘ্রই ন্যায়বিচারক শাসক হিসাবে অবতরণ করবেন। তিনি ক্রুশ ভঙ্গ করবেন, শূকর হত্যা করবেন এবং জিযয়া বাতিল করবেন। তখন এতই ধন-সম্পদের প্রাচুর্য হবে যে, কেউ তা গ্রহণ করবে না।
-       (সহীহ, সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২৩৩ [ইঃ ফাঃ ২২৩৬]; সহীহুল বুখারী ২২২২, ২৪৭৬, ৩৪৪৮; সহীহুল মুসলিম ১৫৫; আবূ দাউদ ৪৩২৪; সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ৪০৭৮; মুসনাদে আহমাদ ১০০৩২, ১০৫৬১; সহীহাহ ২৪৫৭; মুসনাদে আবু আউয়ানাহ ১/৮০, হাঃ ২৩০; আল-ইমান, ইবনু মানদাহ ১/৫১৩, হাঃ ৪০৮; তারিখে দামেশক, ইবনুল আসাকীর ৪৭/৪৯০; মুসলিম আরো পুর্নাঙ্গরূপে বর্ণনা করেছেন)

হানযালা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি সালেম (রা:) কে বলতে শুনেছেন, (সালেম (রা:) বলেন)- আমি ইবনু উমার (রা:) কে বলতে শুনেছি, রসূল বলেছেন, কাবা ঘরের নিকটে যেখানে মাকাম অবস্থিত, সেখানে আমি একজন লোক, যার মাথার চুল কোঁকড়ানো, দুই হাত তার পায়ের উপর মাথা ঝড়ানো বা তার মাথা হতে পানি ঝরছে। অতঃপর আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এই ব্যক্তি কে? অতঃপর একজন বলল, ইনি ঈসা ইবনু মারিয়াম আলাইহিস সালাম।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৫৯৩; মুসনাদে আহমাদ ৫/৫৫৫৩ দারুল হাদিস, কায়রো)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ