৫.৪ তাদেরকে কিভাবে চিনতে পারবো আমরা?

 ৫.৪.১ ইমাম মাহমুদ হাবীবুল্লাহ কে যেভাবে চিনবেন

আগের পয়েন্টগুলো থেকে এটা জানতে পেরেছি যে, ইমাম মাহমুদ হাবীবুল্লাহ এর নেতৃত্বে হিন্দুস্তানের যুদ্ধ সংঘটিত হবে। কিন্তু তাকে আমরা কিভাবে চিনতে পারবো? মূলত তাকে আমরা যাচাই করবো হাদিস দিয়ে। হাদিসে যে তথ্যগুলো দেওয়া আছে তাঁর সাথে সেই ব্যক্তি এর মিল আছে কিনা। কারণ নাহলে যে কেউই মাহমুদ দাবি করতে পারে, ফলে সাধারণ মুসলিমরা বিভ্রান্তিতে পড়বে। এখানে আমরা সংক্ষেপে সেগুলো নিচে উল্লেখ করছি যা আমরা হাদিসের বর্ণনা থেকে জানতে পেরেছি-

  •   তার নাম হবে মাহমুদ। তার উপাধি নাম হবে হাবীবুল্লাহ।
  •   তার পিতার নাম হবে আব্দুল কাদির। যিনি কুরাইশী বংশধর হবেন।
  •   তার মাতার নাম হবে সাহারা। যিনি কাহতানী বংশ থেকে হবেন।
  •   তিনি পিতার দিক হতে ওমর (রা:) এর বংশধর হবেন।
  •   তিনি হিন্দুস্তানের পূর্ব ভূখণ্ডে জন্মগ্রহণ করবেন।
  •   তিনি হিন্দুস্তানের পূর্ব ভূখণ্ডের দুর্গম নামক অঞ্চলের পাকা নামক জনপদের অধিবাসী হবেন।
  •   তিনি দেখতে দুর্বল হবেন। তাকে সে সময়ের খুব কম লোকেরাই চিনবে।
  •   আল্লাহ তার চেহারায় মায়া দান করবেন।
  •   তিনি বালক হবেন বা একজন যুবক হবেন। আরবিতে শাব্বুন শব্দ এসেছে।
  •   তার একজন সহচর বন্ধু থাকবেন যার নাম হবে শামীম ইবনে মুখলিস এবং সেই বন্ধুর উপাধি হবে সাহেবে কিরাণ।
  •   তিনি হিন্দুস্তানের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিবেন এবং যুদ্ধের বায়াত নিবেন।
  •   তিনি হিন্দুস্তানের অত্যাচারী মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদের ঘোষণা দিবেন।
  •   তিনি শতবর্ষী মুজাদ্দিদ ও ইমাম হবেন এবং তার আত্মপ্রকাশ ইমাম মাহদীর আগে হবে।
  •   তিনি আল্লাহ তায়ালা থেকে গোপনবাণী তথা ইলহাম পাবেন।
  •   তিনি দ্বীনকে সংস্কারের জন্য কাজ করবেন।
  •   তিনি মাহদীর আগমন বার্তা নিয়ে আসবেন।
  •   তিনি খলীফা মাহদীর খিলাফত কায়েমের জন্য কাজ করে যাবেন ও খলীফা মাহদীর কাছে বায়াত নেওয়ার কথা বলবেন।

 

 

 

৫.৪.২ সাহেবে কিরান শামীম বারাহ কে যেভাবে চিনবেন

আগের পয়েন্টগুলো থেকে জানতে পেরেছি যে সাহেবে কিরাণ যার নাম শামীম বারাহ হবে তিনি হিন্দের যুদ্ধের মূল সেনাপতি হবেন এবং ইমাম মাহমুদ এর সহচর বা বন্ধু হবেন। তার যে সকল পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য দেখে তাকে চিনতে পারবো তা হাদিসে উল্লেখ হয়েছে। যাতে আমরা সঠিক ব্যক্তিকে চিনতে পারি ও বিভ্রান্তিতে না পড়ি। তবে আমরা যদি আসল ইমাম মাহমুদকে খুঁজে বের করতে পারি তাহলে তার বন্ধুকেও পাওয়া যাবে। তারপরও তাকে চেনার লক্ষণগুলো সংক্ষেপে নিচে উল্লেখ করছি-

  •   তার নাম হবে শামীম তথা শামীম বারাহ। তার উপাধি নাম হবে সাহেবে কিরাণ বা সৌভাগ্যবান।
  •   তার পিতার নাম হবে মুখলিস।
  •   তিনি পিতার দিক দিয়ে বেলাল (রা:) এর বংশধর হবেন অর্থাৎ (হাবশী)।
  •   তিনি মাতার দিক থেকে আবু বকর (রা:) এর বংশধর থেকে হবেন অর্থাৎ (কুরাইশী), বনু তামীম গোত্রের।
  •   তিনি একজন ইমামের সহচর হবেন এবং তার সত্যায়ন সেই ইমামই করবেন। আর সেই ইমামের নাম হবে মাহমুদ, উপাধি নাম হাবীবুল্লাহ।
  •   তিনি হিন্দুস্তানের যুদ্ধের মূল সেনাপতি হবেন।
  •   তার আত্মপ্রকাশও ইমাম মাহদীর আগমনের আগেই ঘটবে।

সবশেষে বায়াত ও আনুগত্য

তাদের খোজ পেলে জানতে হবে যে, সেই হিন্দের যুদ্ধ একদমই কাছে চলে এসেছে এবং দুনিয়াব্যাপী ফিতনা-ফাসাদ শুরু হতে চলেছে। যেহেতু তারা হবেন এই সময়ের আল্লাহর মনোনীত আমীর ও সেনাপতি, তাই তাদের কাছে আনুগত্যের বায়াত নেয়ার মাধ্যমে সেই হক জামায়াতে শামিল হতে হবে। বায়াত ও আনুগত্য যেকোনো দলের জন্য অপরিহার্য একটি বিষয়। আর যেখানে আল্লাহর মনোনীত আমীর ও জামায়াত থাকবে, সেই দলে তা আরো গুরুত্ব বহন করে। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে-

হুযায়ফা (রা:) বলেনঃ লোকেরা রসূলুল্লাহ্‌ এর নিকট কল্যাণ ও মঙ্গলের বিষয়াদী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতো এবং আমি তাঁর নিকট অকল্যাণের বিষয়াদী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম। এ কথা শুনে লোকেরা তাঁর প্রতি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকাতে থাকলে, তিনি বলেনঃ আমার কথা যারা খারাপ মনে করে, আমি তাদের দেখতে পাচ্ছি। এরপর তিনি বলেন, একদা আমি বলিঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! মহান আল্লাহ্‌ আমাদের যে কল্যাণ ও মঙ্গল দান করেছেন, এরপর কি আবার খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হবে, যেমন আগে ছিল? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ। আমি বলিঃ এর থেকে বাঁচার ব্যবস্থা কি? তিনি বলেনঃ তরবারি। আমি জিজ্ঞাসা করিঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! এরপর কি হবে? তিনি বলেনঃ এ সময় পৃথিবীতে যদি আল্লাহ্‌র কোন প্রতিনিধি (খলীফা) থাকে এবং সে জুলুম করে তোমার পিঠ ভেঙ্গে দেয়, তোমার ধন-সম্পদ লুট করে নেয়, তবুও তুমি তার আনুগত্য করবে। আর যদি এরূপ কেউ না থাকে, তবে তুমি জঙ্গলে চলে যাবে এবং গাছের লতা-পাতা খেতে খেতে মরে যাবে। (প্রয়োজনীয় অংশ)
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪২৪৪ [ইঃ ফাঃ ৪১৯৬]; আহমাদ)

হযরত আবু উমামা সুদাই ইবনে আজলান আল বাহিলী (রা:) বলেন, আমি বিদায় হজ্বে রসূলে পাক কে বলতে শুনেছি। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করো, রমজানের রোজা রাখ, নিজেদের অর্থ-সম্পদের যাকাত আদায় করো এবং নিজেদের ইমামের তথা আমীরদের আনুগত্য কর। তবে তোমরা আল্লাহর জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।
-       (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১০৯০)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) বলেন, রসূল বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর মনোনীত দ্বীনের হক আদায় করবে, আল্লাহ তা'আলার জান্নাত তাঁর জন্য আবশ্যক যদি সে এই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল ! দ্বীনের হক কি? তিনি বলেন, যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে, আর আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তিদের সন্নিকটে (আনুগত্য করবে) থাকবে। এ কথা বলে আল্লাহর রসূল সূরা নিসার ৫৯ নম্বর আয়াত পাঠ করে শোনালেন। *
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১২৫)
-       * সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াতটি হচ্ছে- হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস কর, তাহলে তোমরা আল্লাহর অনুগত হও, রসূল ও তোমাদের নেতৃবর্গ (মনোনীত আমীর বা নেতা) দের অনুগত হও। আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সে বিষয়কে আল্লাহ ও রসূলের (কুরআন ও সুন্নাহ) দিকে ফিরিয়ে দাও। এটিই হল উত্তম এবং পরিণামে প্রকৃষ্টতর।

রসূলুল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করলো সে প্রকৃত অর্থে আল্লাহর আনুগত্য করলো এবং যে ব্যক্তি আমার নাফরমানি করলো সে প্রকৃত অর্থে আল্লাহর নাফরমানি করলো। যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য করলো সে প্রকৃত অর্থে আমার আনুগত্য করলো এবং যে ব্যক্তি আমীরের নাফরমানি করলো সে প্রকৃত অর্থে আমার নাফরমানি করলো।

অন্য বর্ণনায় বর্ধিত- প্রকৃতপক্ষে ইমাম (নেতা) হলেন ঢাল স্বরূপ। তার পিছন থেকে যুদ্ধ করা হয়, তার দ্বারা (শত্রুদের কবল থেকে) নিরাপত্তা পাওয়া যায়। সুতরাং শাসক যদি আল্লাহর প্রতি ভয়প্রদর্শন পূর্বক প্রশাসন চালায় এবং ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠা করে, তাহলে এর বিনিময়ে সে সাওয়াব (প্রতিদান) পাবে। কিন্তু সে যদি এর বিপরীত কর্ম সম্পাদন করে, তাহলে তার গুনাহও তার ওপর কার্যকর হবে
-   (সহীহ, মুসনাদে আহমদ ৭৪৩৪, ৮১৩৪; আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৬৫; বুখারী ২৯৫৭; মুসলিম ১৮৩৫; সহীহ আল জামি ৬০৪৪)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ