৮.৩ যঈফ হাদিস গ্রহণ করার নীতি

 এই বইটি লিখতে অসংখ্য যঈফ হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে। এখন এই হাদিস গ্রহণ করার বিষয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন মত দিয়ে থাকেন। কেউ শিথিল ভাবে নেন আবার কেউ কঠিন ভাবে নেন। অনেকে সব সময়ই একটা কথা বলে থাকেন যে যঈফ হাদিস দিয়ে দলিল সাব্যস্ত হয় না। এটার সাথে যে আমাদের দ্বিমত এরকম নয়। এরপরও এখানে কিন্তু আছে। কারণ এগুলো শরীয়তের হুকুম-আহকাম এর হাদিস নয়, ফিতনা-মালহামা ও ভবিষ্যৎবাণী সম্বলিত হাদিস। সেই বিষয়টিকে আরো বিস্তারিতভাবে এখানে দেওয়া হয়েছে। ৩.৩ ফিতনার হাদিসগুলো বেশির ভাগই যঈফ হওয়ার কারণ পরিচ্ছেদে আগেই লেখা হয়েছে যে ফিতনা বিষয়ক হাদিসগুলো কেন যঈফ হয়। সেটি আগে একবার দেখে নিবেন।

দেশে বর্তমানের একজন মুফতি আলেম কাজী ইবরাহীম যিনি ফিতনার হাদিসগুলো নিয়ে, শেষ জামানার আলামত ও মালহামা নিয়ে গবেষণা করেন এই বিষয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ একটি বক্তব্য আবারো উল্লেখ করছি এখানে যা অনলাইনে ঘুরাঘুরি করছে।

মুফতি কাজী ইবরাহীম তার বক্তব্যে বলেন- কেয়ামত বিষয়ক হাদিস দুর্বল হবে এটাই নিয়ম। এগুলি সবল হবে না, সহীহ হবে না এটাই নিয়ম। হুকুম-আহকাম বিষয়ক, নামাজ-রোজা, হজ-যাকাত বিষয়ক হাদিস সহীহ হইতে হবে এটা নিয়ম। আর কেয়ামতের সংবাদ, কোন রাজা কেমন, তার সৈন্যবাহিনী কেমন, সে কি করবে এই সংক্রান্ত হাদিসগুলি দুর্বল হওয়াই নিয়ম। দুর্বল হওয়াই স্বাভাবিক। এখানে সহীহ খোজা বোকামি। যারা সহীহ খুঁজে তারা হাদিসের প্রাথমিক ছাত্র। হাদিসের চূড়ান্ত ক্লাসের ছাত্র তারা হতে পারে নাই। কারণ কি, এই হাদিসগুলি যারা বর্ণনা করেছেন সাহাবায়ে কেরাম তাদের মধ্যে শীর্ষ একজন সাহাবী আবু হুরাইরা রাঃ। উনি বলেছেন, আমি আল্লাহর রসূল থেকে দুপাত্র ইলম আয়ত্ত করে রেখেছিলাম। তার একটি পাত্র আমি বিতরণ করে দিয়েছি। আর অপরটি এমন যে, প্রকাশ করলে আমার কণ্ঠনালী কেটে দেয়া হবে। নামাজের বিধানগুলি, যাকাত, সিয়াম, হজ-ওমরা, ইবাদত-বন্দেগী, আখলাক, মুআমালাত, আকাইদ এই বিষয়ের হাদিসগুলি তোমাদের সব দিয়ে দিয়েছি, একটি হাদিসও আমি না বলে যাইনি। আমার কাছে আরেক ব্যাগ হাদিস আছে, আমি যদি এগুলি ছড়িয়ে দেই, সবার কাছে বলতে যাই, আমার এই গলা কেটে দেওয়া হবে। এজন্য এই হাদিস সবার সম্মুখে আবু হুরাইরা (রা:) কখনো বলেন নাই। দু এক জনের কাছে বলে গেছেন যারা খুব বিশ্বস্ত আর মৃত্যুর আগে দু তিন জনকে বলে গেছেন, এই। এজন্য হাজার হাজার, লাখ লাখ ছাত্ররা শুনলে না এক হাজার ছাত্রের মধ্যে একশ পাবো আমি সহীহ হাদিসের রাবী। ঠিক না? উনি বায়ানই করেছেন তিন-চার জনের কাছে, আমি সহীহ পাব কই। এখানে সহীহ পাওয়া, সহীহ খোজা বোকামি, জাহালত, এইসব হাদিস সম্বন্ধে অজ্ঞতা। এই হাদিসের যিনি বিশেষজ্ঞের বিশেষজ্ঞ ছিলেন ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) যার ব্যাপারে বলা হয় দশ লক্ষাধিক হাদিস তার মুখস্ত ছিল, সেই ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) বলতেন, তিনটা ইলম আছে এগুলোর কোন সনদ পাইবা না। ঐ তিন এলেমের হাদিসগুলির সনদ, সূত্র পাইবা না। কিন্তু ওইগুলি শুদ্ধ মানতে হবে। তাফসীর, আল আশরাত, আল মালাহিম। কুরআনের তাফসিরের রেওয়ায়েত সব সহীহ পাওয়া যায় না। কারণ কুরআন নিজেই তো আছে। এখানে রেওয়ায়েত না পাইলেও তেমন সমস্যা নেই। কুরআন একাই একশ। দ্বিতীয় হলো কেয়ামতের আলামত আর তৃতীয় হলো শেষ জামানার যে মহাযুদ্ধগুলি হবে এগুলির সহীহ সনদ পাওয়া যায় না। ভয়ে এগুলি কেউ বলে নাই। যে বলছে, তারে বন্দী করছে, ফাসি দিসে, তারে দেশান্তরিত করছে। আমি যদি এখন বাংলাদেশে বসে কিছু হাদিস বলি যে আমাদের অমুক নেতাদের নাম এই হাদিসে আছে, আমারে রাখবো আস্ত? যার ফলে আমি ডরে-ভয়ে কোনদিনও কারো নাম থাকলেও বলতাম না। খামাখা আমার মরার দরকার আছে!

যে সকল কারণে/নীতিতে যঈফ হাদিস নেওয়া হয়েছেঃ

যঈফ হাদিস গ্রহণ করার নীতি জানার আগে যঈফ হাদিস কি সেটি জানা দরকার। উসুলে হাদিসে এর অনেক সুন্দর সুন্দর সংজ্ঞা দেওয়া আছে। একটি হাদিস অনেক সময় মতন তথা কওলের কারণেও যঈফ হয়। যদি সহজে বুঝাতে যাই তাহলে তা হবে-

যঈফ ওই হাদীসকে বলা হয়, যার মধ্যে সহীহ এবং হাসানের শর্তগুলো পরিপূর্ণরূপে বিদ্যমান থাকবে না। অর্থাৎ যে হাদীসটি সহীহও নয়; হাসানও নয় মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায় তাকে যঈফ হাদীস বলে। অর্থাৎ, রাবীর বিশ্বস্ততার ঘাটতি, বা তাঁর বিশুদ্ধ হাদীস বর্ণনা বা স্মৃতির ঘাটতি, বা সনদের মধ্যে কোন একজন রাবী তাঁর ঊর্ধ্বতন রাবী থেকে সরাসরি ও স্বকর্ণে শোনেননি বলে প্রমানিত হওয়া বা দৃঢ় সন্দেহ হওয়া, বা অন্যান্য প্রমানিত হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়া, অথবা সূক্ষ্ম কোন সনদগত বা অর্থগত ত্রুটি থাকা; ইত্যাদি যে কোন একটি বিষয় কোন হাদীসের মধ্যে থাকলে হাদিসটি যঈফ বলে গণ্য।

একজন মুহাদ্দিস বলেছিল, যদি আমরা বিবেক দিয়ে দেখি তাহলে সহীহ হাদিস মানে সত্য-সঠিক, আর জাল বা মাওজু হাদিস মানে মিথ্যা-বানোয়াট। তাহলে যঈফ হবে এর মাঝামাঝি পর্যায়ের, অর্থাৎ এটি সত্যও হতে পারে, মিথ্যাও হতে পারে। তাই এটিকে মিথ্যা বলে ফেলেও দেওয়া যায় না কারণ এটি সত্য হওয়ার গুণ রাখে এবং এটা সম্পূর্ণ সত্যও বলা যায় না কারণ তা মিথ্যা হওয়ার গুণ রাখে

এই কথা যদি ধরি তাহলে আমাদের অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যায়। যঈফ হাদিস এমন ধরণের হাদিস তা সত্য না মিথ্যা সেটির উপর গবেষণা করলে পাওয়া যায় যে সেটি সত্য বা মিথ্যার কোন একটির কাছাকাছিই হয়। যেমন সেই যঈফ হাদিসের একই বর্ণনা সহীহ হাদিসে রয়েছে। আবার যঈফ হাদিসটির একই বর্ণনা আরো অনেক যঈফ সনদের হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তাই অনেক মুহাদ্দিসদের বলতে দেখা যায়- কোন যঈফ হাদীস একাধিক সনদে বর্ণিত হওয়ার দ্বারা তা হাসান লি-গাইরিহী এর পর্যায়ে পৌছে যায়।

 

আমরা যঈফ হাদিস নিয়েছি যে সকল নীতিতেঃ

১। যে সকল যঈফ হাদিসের একই মতনে সহীহ মানের হাদিস বিদ্যমান।

-       এরকম হাদিসগুলো নিতে কারোরই কোন আপত্তি থাকার কথা না। কারণ সেটির অন্য সূত্রে বর্ণিত হাদিস সহীহ/বিশ্বস্ত সনদে এসেছে। দলিলকে মজবুত করতে সেগুলোও পেশ করা হয়ে থাকে এবং জানামতে তা মুহাদ্দিসগণ করে থাকেন।

২। যে সকল যঈফ হাদিসের মতনের (কথার সাথে) সহীহ সনদের হাদিসের কিছু শব্দে ও তথ্যে পার্থক্য আছে।

-       এরকম হাদিস নেওয়া অনেক সময় রিস্কি হয় যদি তা শরীয়তের হুকুম-আহকাম বিষয়ক হয়, কিন্তু এই সকল হাদিসগুলো ফিতনা বিষয়ক, ভবিষ্যৎবাণী বিষয়ক তাই সহীহ মানের হাদিসের শব্দের সাথে অর্থের তেমন কোন পার্থক্য হয় না এরকম গুলো নেওয়া হয়েছে। এক কথায়, একই বিষয়টিকেই তুলে ধরে দুটি মতনেই।

-       শরীয়তের হুকুম-আহকাম বিষয়ক (যেমন নামাজ, রোজা, হজ, জিহাদ, বিয়ে, তালাক) যদি হয় এবং এরকম দেখা যায় তাহলে অবশ্যই সহীহ হাদিসটিই প্রাধান্য পাবে, এর একটি কারণ হচ্ছে একটি শব্দ একই রকম অর্থ প্রকাশ করলেও মাসাআলা ও ফিকহের ক্ষেত্রে সেই শব্দটিই আলাদা একটি পন্থা বা পদ্ধতি হিসেবে সাব্যস্ত হয়। এক কথায়, এক শব্দের পরিবর্তনের কারণে তার ফিকহ ও মাসআলাই আলাদা হয়ে যায় অনেক সময়।

৩। যে সকল যঈফ হাদিসের মতন বা কওল অন্য একটি সহীহ বা হাসান হাদিসকে আরো বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করে আরো নতুন কিছু জানার ব্যবস্থা করে দেয়। অর্থাৎ একই বিষয়কেই উল্লেখ করে এবং মতনে ব্যাপক অমিল থাকে।

-       এই বিষয়টি বুঝাতে উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি, যেমন হিন্দের যুদ্ধ নিয়ে সুনান আন নাসায়ী এর তিনটি হাদিস যার মধ্যে একটি মাত্র সহীহ সনদের, বাকি দুটি যঈফ বা দুর্বল সনদের। কিন্তু দেখা গিয়েছে বেশির ভাগ আলেমরাই সেই দুটিকেও গ্রহণ করেছে এই কথা বলে যে, যেহেতু এর (বিষয়ের উপর) সাপোর্টে সহীহ দলিল রয়েছে তাই এটি গ্রহণযোগ্য/ গ্রহণ করতে সমস্যা নেইনেদায়ে তাওহীদ বইতে লেখক আবু উমার আল মুহাজির একই কাজটিই করেছেন।

-       শরীয়তের হুকুম-আহকাম বিষয়ক হলে সহীহ হাদিসটিই প্রাধান্য পাবে এবং যঈফ হাদিস দিয়ে বাড়তি করণীয়টি পালন করা কোন মতে সঠিক হতো না। আর শরীয়তের হুকুম-আহকামের বিষয়গুলো নিয়ে যথেষ্ট সহীহ হাদিস রয়েছে যা পূর্ণতা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। তাই যঈফ হাদিসের উপর নির্ভর করতে হয় না।

৪। যে সকল যঈফ হাদিস একাধিক যঈফ সনদে বর্ণিত হয়েছে এবং কোন সহীহ-হাসান পর্যায়ের হাদিসের সাথে বৈপরীত্য পাওয়া যায় না।

-       এরকম হলে তখন মুহাদ্দিসগণের মতে, অনেক দুর্বল মিলে সবল বা সবলের কাছাকাছি চলে যায়। যেমন বলা হয়েছে- কোন যঈফ হাদীস একাধিক সনদে বর্ণিত হওয়ার দ্বারা তা হাসান লি-গাইরিহী এর পর্যায়ে পৌছে যায়। এরকম অসংখ্য বিষয় পাওয়া যায় এবং সেগুলোতে কোন সহীহ-হাসান পর্যায়ের হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক হয় না। সেরকম হাদিস নেওয়া হয়েছে।

-       শরীয়তের হুকুম-আহকামের ক্ষেত্রে এই নীতিটি আরো বিবেচনা করে নিতে হয় তবে যারা হাদিসের মানের বিষয়ে কঠোর তারা এটিকেও দলিল হিসেবে গ্রহণ করেন না।

৫। এমন যঈফ হাদিস যার সমর্থনে অন্য কোন হাদিস পাওয়া যায় না।

-       অর্থাৎ মুহাদ্দিসগণের নিকট- কোন বিষয়ে যঈফ হাদীস ব্যতীত অন্য কোন নস (দলীল) পাওয়া না গেলে তা-ই একমাত্র অবলম্বন। আল্লামা সুয়ূতী (رحمة الله عليه) মুহাম্মাদ ইবনে সাদ আল বাওয়ারদী (رحمة الله عليه) থেকে বর্ণনা করেনঃ ইমাম নাসাঈর মাযহাব ছিল তিনি প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির হাদীস আনতেন যাকে তরক করার ব্যপারে মুহাদ্দিসীনে কেরাম একমত হননি। ইবনে মানদাহ বলেন, অনুরূপভাবে ইমাম আবূ দাউদ ও তার পন্থা অবলম্বন করেছেন। তিনি দুর্বল সনদের হাদীস (তার সুনানে) নিয়ে আসেন যখন তিনি কোন অধ্যায় যঈফ সনদ ব্যতীত অন্য কোন হাদীস না পান। কেননা তার নিকট যঈফ সনদ মানুষের কিয়াস থেকে উত্তম। আর এটা ইমাম আহমাদ (رحمة الله عليه) এরও মত। তিনি বলেছেন যঈফ হাদীস আমার নিকট মানুষের কিয়াসের চেয়ে অধিক পছন্দনীয়। (আল্লামা সুয়ূতী, তাদবীবুর রাবী, পৃষ্ঠা ৯৭)

-       হাফেয সাখাবী (رحمة الله عليه) ফাতহুল মুগীছে বলেনঃ ইমাম আহমাদ (رحمة الله عليه) যঈফ হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন যখন তিনি কোন অধ্যায়ে উক্ত হাদীস ছাড়া অন্য হাদীস না পান। ইমাম আবু দাউদও তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। তারা উভয়েই হাদীসকে যুক্তি ও কিয়াসের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। ইমাম আবু হানীফার (رحمة الله عليه) ব্যাপারেও অনুরূপ বলা হবে। আর ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله عليه) মুরসাল রেওয়ায়েত দ্বারা দলীল পেশ করেন যখন তিনি তা ছাড়া অন্য কোন রেওয়ায়েত না পান। (হাফেয সাখবী, ফাতহুল মুগীছ, পৃষ্ঠা ১২০)

-       কিন্তু ফিতনার হাদিসগুলো নিয়ে আরো বিষয় রয়েছে। শরীয়তের হুকুম-আহকাম পরিপূর্ণ। তা হাদিসের দলিলের মাধ্যমেই শুধুমাত্র প্রমাণিত হয়, নতুন করে তা প্রমাণ করার বা সত্যতা নির্ণয় করার আর কোন উপায় বা মাধ্যম থাকে না। কিন্তু ফিতনা-মালহামা-কেয়ামতের আলামত বিষয়ক হাদিসের ক্ষেত্রে তা প্রমাণ করা যায় এবং প্রমাণ করার উপায়-উপকরণ থাকে। যেমন একটি যঈফ হাদিস শেষ জামানায় অমুক বিষয় দেখা যাবে। এখন আমরা শেষ জামানায় এসেছি এবং সেই বিষয়টি ঘটতে দেখলাম, তাহলে কি তা সত্য না মিথ্যা সেটি যাচাই করা হয়ে গেল না? তাহলে সেই যঈফ হাদিসটি বাস্তবে ঘটে যাওয়ার ফলে সেটি সত্য হওয়ার ব্যাপারে প্রমাণ সাব্যস্ত হয়ে যায়। কিন্তু শরীয়তের কোন আহকাম-আমল প্রমাণ করার এরকম উপায় নেই।

৫। এমন যঈফ বা যঈফে জিদ্দান হাদিস যার ব্যাপারে কোন সহীহ-হাসান পর্যায়ের সেই বিষয়ের কোন নস বা হাদিস নেই এবং গরীব (যে হাদিস শুধু একজন রাবি বর্ণনা করেন তাই গরিব) মানের সেইগুলো গ্রহণ করা হয়েছে বাস্তবতার সাথে মিল থাকার কারণে বা ভবিষ্যৎবাণীটি ঘটে গেছে বা ঘটার আলামত প্রকাশ পাওয়ার কারণে বা আলেমগণ তা ব্যাপকভাবে গ্রহণ করার কারণে।

-       এর কারণ আগেই বলা হয়েছে যে ফিতনা বা শেষ জামানার হাদিসগুলো এরকম বেশি হয়, তাই যেহেতু তা প্রমাণ করা যায় বা আমরা বর্তমানের অবস্থার সাথে মিলিয়ে তার সত্যতা নির্ণয় করতে পারি তাই সেগুলো গ্রহণ করতে কোন ধরণের সমস্যা নেই। এরকম অনেক উদাহরণ পাওয়া যায় যে যঈফ হাদিস কিন্তু তাতে বলা ঘটনাটি সত্যে পরিণত হয়েছে। সেটি নিয়ে কারো আপত্তি থাকার কথা না।

৬। সর্বশেষ এমন যঈফ বা যঈফে জিদ্দান হাদিস যা শরীয়তের উসুলের সাথে সাংঘর্ষিক হয় না, যাতে ইসলামের এমন কোন বিষয়ের দোষত্রুটি প্রকাশ করে না বা যাতে কোন আপত্তি দেখা দেয় না।

-       বিভিন্ন সময় দেখা যায় অনেক যঈফ হাদিসে তাতে এমন বিষয় উল্লেখ থাকে যা দিয়ে ইসলামের, রসূলের বা সাহাবীদের দোষত্রুটি প্রকাশ করে বা কারো থেকে এমন মন্তব্য আসে যা আপত্তিকর এরকম হাদিসগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে।

তাই যঈফ হাদিস নেওয়ার ক্ষেত্রে যে নীতি আমরা এখানে নিয়েছি, যাতে সহীহ হাদিসের বিপরীত, সাংঘর্ষিক বা শরীয়তের উসুলের খেলাপ ও আপত্তিকর বিষয় উল্লেখ থাকে তা বাদ দেওয়া হয়েছে। কারণ যঈফ মান হলেও এমন অসংখ্য হাদিস রয়েছে যার তথ্য খুবই ত্রুটিপূর্ণ বা মিথ্যা পর্যায়ের। হয়তো এটি ভুলে বা স্মরণশক্তির কারণে বা এক হাদিসকে অপর হাদিসের সাথে মিলিয়ে ফেলার ফলেও হয়ে থাকতে পারে। তবে এর কারণে সরাসরি রাবীদের মিথ্যাবাদী বলা যায় না। এইসব নীতি বাছাই করে আমরা উত্তমটিই নিয়েছি।

একটি হাদিস যঈফ বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। খুব সামান্য ভুলের কারণে বা রাবীর হাদিস বর্ণনায় দুর্বল থাকার কারণে বা মুরসালভাবে বর্ণনার কারণে একটি সহীহ হাদিস যঈফের কাতারে পরে যায়। এটি শুধু সনদের জন্য যঈফ হয়ে যায় কিন্তু দেখা যায় সেটির অন্য সনদের মজবুত দলিল প্রায়ই থাকে। তাই যারা যঈফ হাদিস শুনলেই তাকে হেয় করে বা অগ্রহণযোগ্য মনে করে তাদের এ বিষয়ে আরো গবেষণা করা উচিৎ এবং মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা উচিৎ। তবে তাদের সাথে আমরা এই কথাতে একমত যে শরীয়তের হুকুম-আহকাম ও আমলের ক্ষেত্রে আমরা মজবুত দলিলকেই প্রাধান্য দিবো এবং যঈফের উপর কম আমল করবো বা করবো না (যঈফের পর্যায় বুঝে)। আর যে সকল হাদিস যঈফ কাতারে রয়েছে কিন্তু তা সত্য না মিথ্যা প্রমাণ করার উপায়-উপকরণ বিদ্যমান থাকে যেমন ফিতনা-মালহামা-কেয়ামতের আলামতগুলো তা আমরা সেভাবেই গ্রহণ করবো। তাই এই সকল বিষয়ের হাদিসের উসুলের ব্যাপারে মুফতি কাজী ইবরাহীমের সেই বক্তব্যটি আবারো মনে করিয়ে দিতে চাই।

নির্ঘণ্ট

কিতাবের নাম

লেখক

মন্তব্য

আল-কুরআনুল-কারীম

 

কিতাবুল্লাহ

তাফসীরে ইবনে কাছীর

ইমাম ইবনে কাছীর

 

তাফসীর ইবনে আব্বাস

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস

 

তাফসীরে তাবারী

মুহাম্মদ ইবনে জারির আত-তাবারি

 

তাফসীরে কুরতুবী

ইমাম কুরতুবী

 

তাফসীরে বয়ানুল কুরআন

আশরাফ আলী থানভী (১৮৬৩-১৯৪৩)

 

তাফসীরে কুরআনুল আজীম

ইমাম ইবনে আবী হাতিম আর-রাযী

 

তাফসীরে আহসানুল বয়ান

আল্লামা হাফিয সালাহুদ্দীন ইউসুফ

 

তাফসীরে আবু বকর জাকারিয়া

আবু বকর জাকারিয়া

 

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ

শাইখ শহীদুল্লাহ খান মাদানী

 

তারীখে তাবারী

মুহাম্মদ ইবনে জারির আত-তাবারি

 

তাফসীরে বাগাভি

হোসাইন ইবনে মাসউদ আল-বাগাভি

 

সহীহ বুখারী

ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাইল আল বুখারী

 

সহীহ মুসলিম

ইমাম মুসলিম বিন হাজ্জাজ ইবনে মুসলিম

 

সুনানে আবু দাউদ

ইমাম আবু দাউদ আস-সিজিস্তানী

 

সুনান আত-তিরমিজী

মুহাম্মদ ইবনে ঈসা আত-তিরমিজি

 

সুনানে নাসাঈ

ইমাম আবু আবদুর রহমান আন-নাসাঈ

 

সুনানে ইবনে মাজাহ

ইমাম আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াজিদ ইবনে মাজাহ আল-কুয়াজুইনী

 

মুয়াত্তা ইমাম মালিক

ইমাম মালিক ইবনে আনাস

 

সুনান আদ-দারিমী

আবদুল্লাহ ইবনে আব্দুল রহমান আদ-দারিমী

 

মুসনাদে আহমাদ

ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল

 

মুসনাদে আহমাদ: ব্যাখ্যা

কাজী আহমাদ শাকের

 

সহীহ ইবনে খুজাইমাহ

আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক ইবনে খুজাইমাহ

 

সহীহ ইবনে হিব্বান

ইবনে হিব্বান

 

আল-মুস্তাদরাক আলা আল-সহীহাইন (তালখিস আল-মুস্তাদরাক)

ইমাম হাকীম নিশাপুরী

 

মুজামুল কাবীর

ইমাম তাবারানী

 

মুজামুল আওসাত

ইমাম তাবারানী

 

মুজামুস সাগির

ইমাম তাবারানী

 

মুসনাদ আত-তায়ালিসি

ইমাম আবু দাউদ আত-তায়ালিসি

 

মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাহ

ইবনে আবি শাইবাহ

 

মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক

আব্দুর রাজ্জাক

 

আল-আদাবুল মুফরাদ

ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাইল আল বুখারী

 

সুনানুল কুবরা লিল-বায়হাকি (আল-সুনান আল-কাবির)

ইমাম বায়হাকী

 

শুয়াবুল ঈমান

ইমাম আল-বায়হাকি

 

শামাইল তিরমিযী

ইমাম তিরমিজি

 

মুসান্নাফ ইবনে জুরায়জ

ইবনে জুরায়জ

 

সুনান আল-কুবরা লিল নাসা'ই

ইমাম নাসাঈ

 

আস-সুনানুল মুজতবা

ইমাম নাসাঈ

 

সিলসিলাতুল আহাদীসুস সহীহাহ

নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী

 

মুসনাদ আশ-শাফিয়ী

আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবন ইদরিছ আল-শাফিঈ

 

মুসনাদ আবু ইয়া'লা

ইমাম আবু ইয়ালা আল-মাওসিলী

 

সুনান আদ-দারাকুতনী

আবুল হাসান 'আলী ইবনে 'উমার আল-দারাকুতনী

 

মুসনাদ হুমাইদি

ইমাম আল-হুমাইদী

 

মুসনাদ ইসহাক ইবনে রাহওয়াইহ

ইসহাক ইবনে রাহওয়াইহ

 

মুসনাদ আল বাজ্জার

হাফিজ আবু বকর আহমদ আল-বাজ্জার

 

মুস্তাদরাক লিল হাকিম

হাকিম নিশাপুরী

 

আল-খাসায়েসুল কুবরা

ইমাম সুয়ুতি

 

সহীহ ইবনে খুযায়মাহ

আবূ বাকার মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক্ব ইবনে খুজায়মা

 

মিশকাত আল-মাসাবিহ

ওয়ালীউদ্দিন মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল খাতীব আল আমরী আত তিবরিযী ও ইমাম আল বাগাভী

 

রিয়াযুস সালিহিন

ইমাম মুহিউদ্দীন ইয়াহইয়া আন-নববী

 

মাজমাউজ জাওয়াইদ

আলি ইবনে আবু বাকার আল হায়সামি

 

মুসনাদ আবু দাউদ তায়ালিসী

আবু দাউদ তায়ালিসী

 

কানজুল উম্মাল

আলি ইবনে আবদুল মালিক আল-হিন্দি

 

জামেউল আহাদিস

ইমাম আহমাদ রিদ্বা খান

 

আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব

হাফিজ জাকিউদ্দিন আবদুল আজিম আল মানজারি (মৃত্যুঃ ৬৫৬ হিঃ)

 

আত-তাকরীব

মাওলানা মোহাম্মদ ইব্রাহীম

 

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া

ইমাম ইবনে কাছীর

ইতিহাস গ্রন্থ

আন নিহায়া ফিল ফিতান ওয়াল মালাহিম

ইমাম ইবনে কাছীর

ফিতনা বিষয়ক গ্রন্থ

আল ফিতান (কিতাবুল ফিতান)

ইমাম নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ

ফিতনা বিষয়ক গ্রন্থ

ইবনে হাম্মাদের হস্তলিখিত পান্ডুলিপি

ইমাম নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ

ফিতনা বিষয়ক গ্রন্থ

আস সুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান

আবু আমর আদ-দানী

ফিতনা বিষয়ক গ্রন্থ; হাদিস সংখ্যা ১৯০০+ কিন্তু বর্তমানের সংস্করণে ৭৩০ এর বেশি হাদিস পাওয়া যায় না। বাকিগুলোর কিছু দেখতে দেখুন- দাওয়াতুল মুকমাতুল ইসলামিয়াতিল আলামিয়াহ পৃষ্ঠা ১৫০০ থেকে ১৬০০ -আবু মুসআব আস-সুরী।

আল-ফিরদাউস (বিমা সুরিল খিতাব/ খত্তাব)

ইমাম আবু শুজা আদ-দায়লামী

ইমাম দায়লামী হিসেবে পরিচিত

মুসনাদুল ফিরদাউস

ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে দায়লামী

ইমাম দায়লামীর পুত্র

আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস

ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে দায়লামী

ইমাম দায়লামীর পুত্র। বাংলায় আল্লামা হাবিবুর রহমান অনুবাদ করেছেন ২০০৪ সালে।

গাজওয়াতুল হিন্দ

ড. ইসমাতুল্লাহ

লাহোর ইউনিভার্সিটি, পাকিস্তান

৩য় বিশ্বযুদ্ধ, মাহদী ও দাজ্জাল

শহীহ মাওলানা আসেম ওমর

 

আধুনিক মাসায়েল (মাসায়েলে জিহাদ)

আবু উমার আল মুহাজির

 

তাখরিজ ফাযায়েলুশশাম

হাফিয আবুল হাসান রিব

 

তাহযিবুল কামাল

ইমাম মযী

 

তারিখে দিমাশাক

ইবনে আসাকির

 

তারিখে বাগদাদ

খতীবে বাগদাদী

 

আল-কামিলু ফিদ-দুআফাউররিজাল

ইবনে আদি

 

কিতাবুল জিহাদ

ইমাম ইবনে আবি আসেম

 

(সময় স্বল্পতায় নির্ঘণ্ট ছোট করা হয়েছে)

 

 

বিভিন্ন সংক্ষিপ্ত রূপ

সংক্ষিপ্ত রূপ

পূর্ণরূপ

তাঃ পাঃ / তাঃ প্রকাঃ

তাওহীদ পাবলিকেশন/প্রকাশনী

ইঃ ফাঃ / ইসঃ ফাঃ

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

ইঃ সেঃ / ইসঃ সেঃ

ইসলামিক সেন্টার

আঃ প্রঃ

আধুনিক প্রকাশনী

আলবানী একাঃ

আলবানী একাডেমী

আল মাদানী প্রকাঃ

আল মাদানী প্রকাশনী

হাঃ একাঃ

হাদিস একাডেমী

আন্তঃ

আন্তর্জাতিক ক্রমিক নাম্বার

 

 

লেখকের পরিচয়ঃ

আল্লাহর প্রিয় বান্দা শাইখ নাজমুস সাকিব আল-হিন্দী এর পরিচয়ের বিষয়ে বিস্তারিত বইতে উল্লেখ করা হলো না, তাঁর কোন মন্তব্যও তুলে ধরা হলো না। ইংশাআল্লাহ আগামীতে তাঁর পরিচয় প্রকাশ করা হবে। যদি তিনি কোন মন্তব্য দিতেন এই বইয়ের ব্যাপারে এবং সংস্কারের সময় তত্ত্বাবধানে সরাসরি উপস্থিত থাকতে পারতেন তাহলে এই বইটি আরো সুন্দরভাবে ফুটে উঠত এবং পাঠকদেরকে আরো অনেক বিষয় এই বইতে উপহার দেওয়া যেত। ইংশাআল্লাহ পরবর্তী কোন সংস্কারে তাঁর কথা/মন্তব্য তুলে আনার চেষ্টা করবো।

 

 

  

সমাপ্ত


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ