৬.২ ভণ্ড মাহদী এর আত্মপ্রকাশ ও ধ্বংস

 বিভিন্ন হাদিস ও সূত্র থেকে সকলেই একমত যে, আমাদের জামানাতেই ইমাম মাহদীর আবির্ভাব ঘটবে, তবে তার আগমনের একটি বড় আলামত হচ্ছে ঘন ঘন (ভণ্ড) মাহদীর দাবীদার বের হবে। যেমন হাদিসে বলা হয়েছে-

...... আমি আরও বলতে শুনেছি, কিয়ামতের প্রাক্কালে অনেক মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব হবে, তোমরা তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। (সংক্ষিপ্ত)
-       (সহীহ মুসলিম ইসঃ ফাঃ ৪৫৬০)

আবূ হুরাইরা (রা:) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ প্রায় ত্রিশজন ডাহা মিথ্যাবাদী (ছোট দাজ্জাল) প্রতারকের আবির্ভাবের পূর্বে কিয়ামাত সংঘটিত হবে না। তাদের সকলে দাবি করবে যে, সে আল্লাহ্ তা'আলার প্রেরিত রসূল।
-       (সহীহ, সূনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২১৮, ২২১৯ [ইঃ ফাঃ ২২২১]; সহীহাহ ১৬৮৩; বুখারী; মুসলিম ৪৬০৫-(১০/১৮২২); সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২৫২)
-       আবূ ঈসা বলেন, জাবির ইবনু সামুরা ও ইবনু উমর (রা:) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহীহ।
-       একই রকম বর্ণনা- (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৩৩; সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২৩২-(৮৪/১৫৭) [ইঃ ফাঃ ৭০৭৮, ইঃ সেঃ ৭১৩২]; সুনান ইবনু মাজাহ; মুসনাদে আহমাদ)

জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী -কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের আগে বহু মিথ্যাবাদীর আগমন ঘটবে। অতএব তোমরা তাদের হতে সতর্ক থাক।
-       (সহীহ, মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৩৮; সহীহুল জামি' ২০৫০; সিলসিলাতুস সহীহাহ ১৬৮৩; মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩৭৫৩৩; মুসনাদে বাযার ২৮৮৮; মুসনাদে আহমাদ ২০৯২২; আবু ইয়া'লা ৭৪৪২; সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৬৫০; আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ১৮৬৫)

আবূ হুরাইরাহ (রা:) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ তিরিশজন মিথ্যাবাদী দাজ্জাল আবির্ভূত না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না। তাদের প্রত্যেকেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর মিথ্যা আরোপ করবে (অর্থাৎ আল্লাহ ও রসূল বলেছেন বা বলে গেছেন এরকম মিথ্যা বলবে)।
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৩৪; মুসনাদে আহমাদ)

ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবু বকর ইবনু আবু শাইবাহ, আবূ কামিল আল জাহদারী (রহঃ) ...... জাবির ইবনু সামুরাহ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ কে এ উক্তি করতে শুনেছি, কিয়ামতের আগে কতক মিথ্যাবাদী ব্যক্তির আগমন ঘটবে। তবে আবুল আহওয়াস-এর বর্ণনায় এ কথা বর্ধিত বর্ণিত রয়েছে যে, আমি জাবির (রা:) কে প্রশ্ন করলাম, আপনি কি রসূলুল্লাহ থেকে এ কথা শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, শুনেছি।
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২৩০-(৮৩/২৯২৩) [ইঃ ফাঃ ৭০৭৬, ইঃ সেঃ ৭১৩০])

সিমাক (রহঃ) বলেন, আমি আমার ভাইকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, জাবির (রা:) বলেছেন, তোমরা তাদের থেকে সতর্ক থাকবে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭০৭৭, ইসলামিক সেন্টার ৭১৩১)
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২৩১ [ইঃ ফাঃ ৭০৭৭, ইঃ সেঃ ৭১৩১])

অতএব, এই সকল হাদিস থেকে আমরা সহজেই বুঝি যে, শেষ জামানায় বিভিন্ন ভণ্ড ব্যক্তিরা বের হবে, তারা নিজেদের আল্লাহর রসূল (আল্লাহর প্রেরিত) বলে দাবি করবে, নবী দাবি করবে এবং ইমাম মাহদী দাবি করবে। আর সত্যিকারের ইমাম মাহদীর আগমনের আগে এটি প্রকট আকার ধারণ করবে। যেহেতু সকলেই জানে যে, শেষ জামানায় অর্থাৎ আমাদের যুগেই ইমাম মাহদীর আগমন ঘটতে পারে তাই এখন বিভিন্ন লোক নিজেদের স্বার্থে, ক্ষমতার বা সম্পদের লোভে বা শয়তানের ফাদে(শয়তান তাকে বুঝাবে যে সেই মাহদী, তা যে মাধ্যমেই হোক) পরে মাহদী দাবি করবে। বর্তমানে একই সময়ে একাধিক মাহদীর দাবীদারদের দেখা যাচ্ছে। যারা কুরআন-হাদিসকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে ব্যাখ্যা করে বুঝাবে যে, এখনই আসার সময় আর সেই ব্যক্তিই সেই। বর্তমান সময়ে এরকম দাবির উপর রয়েছে এমন কিছু লোকের বর্ণনা দেওয়া হলো এখানে।

সমসাময়িক মাহদীর মিথ্যা দাবীদারগণ

মুস্তাক মোহাম্মাদ আরমান খান

এই ব্যক্তিটি বাংলাদেশী। তিনি তার নাম পরবর্তীতে মুহাম্মদ বিন আব্দুল কুদ্দুস হিসেবে পরিচিতি করান সবখানে। ২০১৬-১৭ সাল থেকেই এটি আস্তে আস্তে চলতে থাকে। এরপর সৌদিতে যেয়ে তিনি ইমাম মাহদী ২০২০ সালে আসবেন বলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর স্বপক্ষে বিভিন্ন দলিলও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছেন, কুরআন-হাদিস থেকে অপব্যাখ্যা করছেন। মাহদীর সাহায্যকারী দলের একজন নেতা ইমাম মানসূর বানিয়েছেন ভারতের তাবলীগ এর আমীর মাওলানা সাদকে। আরো অসংখ্য ভুল ব্যাখ্যা। ২০২০ সালের সাথে ইমাম মাহদীর আগমনের ব্যাপারে হাদিস থেকে শুধু মাত্র একটি আলামত মিলে আর তা হচ্ছে মাহদীর আগমনের বছর রমজান মাসের প্রথম ও মধ্য রমজান হবে শুক্রবার। এই আলামতটি আবার ২০২৮ সালের সাথেও মিলে যায়। এর মধ্যে আর কোন বছরের মধ্যেই তা মিলে না। এই একটি ছাড়া আর কোনই আলামত নেই। কিন্তু বিষয় হচ্ছে, আরো যে আলামত আছে তা তো ২০২০ সালের মধ্যে হওয়া সম্ভব নয়। এবং বেশির ভাগ দলিলই এই সময়ের বিপরীতে যায়। যখন সকল আলামতগুলো ঘটবে আর মিলে যাবে তখনই আগমনের সময় হবে। যেমন ইমাম মাহদীর আগমনের আগে পৃথিবীর ৩ ভাগের ২ ভাগ মানুষ মারা যাবে, তার সাহায্যকারী দলগুলোর প্রকাশ ঘটবে ইত্যাদি। প্রথমে তিনি মাহদীর একজন কাছের কেউ বা সৈন্য হিসেবে, অর্থাৎ অন্য কেউ মাহদী বলে প্রচার চালালেও পরবর্তীতে দেখা যায় ২০২০ সালে তিনিই মাহদী দাবি করে বসেন। অনেক লোকই তাকে বিশ্বাস করে ফেলেন তার কথার জাদুতে। পরবর্তীতে জানা যায় তাকে সৌদিতে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং আবারো জানা যায় যে বের হয়ে এখনো নাকি এ ব্যাপারে প্রচারণা চালাচ্ছেন। অন্য জায়গায় শোনা যায় তিনি জেলেই আছেন বা বের হয়ে তওবা করেছেন। আল্লাহু আলিম। তিনি শয়তানের ধোঁকায় পরেই এরকম করেছেন তাতে সন্দেহ নেই।

মোহাম্মাদ কাসিম বিন আব্দুল কারীম

লোকটি পাকিস্তানের অধিবাসী। এই লোকও নিজেকে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ ভাবে নিজেকে ইমাম মাহদী দাবি করে আছে। মূলত তার কিছু অন্ধ অনুসারীরাই এটি বেশি প্রচার করে যে, সে মাহদী। ২০১৮-১৯ থেকে তার প্রচারণা সব জায়গায় বেশি ছড়িয়ে পরে, আর এই লোকের দাবি সে ২০ বছরেরও বেশি সময় থেকে স্বপ্ন দেখে তাতে বিভিন্ন বিষয় যা ঘটবে সেগুলো বলে এবং তার দাবি এগুলো সব আল্লাহর পক্ষ থেকে দেখানো হয়। মূলত এই লোকটিও শয়তান দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। তাকে এই সকল বিষয় শয়তানই জানাচ্ছে, স্বপ্ন দেখাচ্ছে। যারা ফিতনা নিয়ে গবেষণা করেন তারা জানেন যে কেয়ামত পর্যন্ত যা কিছুই হবে তা আল্লাহ তায়ালা তার রসূল কে জানিয়েছেন। তার থেকে আমাদের কাছে যত বিষয় পৌঁছেছে তার অনেকাংশই আমাদের অপরিচিত অবস্থায় আছে। বিভিন্ন পুরাতন হাদিসের পুস্তকে সেগুলো পাওয়া যায়। আর শয়তানের কাজই হচ্ছে সত্যের সাথে শতটি মিথ্যা মিশিয়ে প্রচার করা। যার কিছু সত্য হয় আর বেশির ভাগই মিথ্যা হয়। স্বপ্নের ব্যাপারে যে দলিল রয়েছে সেটি ব্যবহার করে যে, শেষ জামানায় মুমিন ব্যক্তির স্বপ্ন সত্য হবে। কিন্তু বিষয় হচ্ছে তার মধ্যে এত বছরেও সুন্নাত এর কোন নিদর্শন নেই। যদি সে এত বছর ধরেই স্বপ্ন দেখে যা তাকে হেদায়েত হিসেবে আসবে তাহলে তার তো সুন্নতের পাবন্দি হওয়ার কথা। যেখানে দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব, সেটিও নেই। ধরলাম সে পথহারা ছিল, আল্লাহ তাকে সত্য স্বপ্ন দেখালেন বা নিদর্শন দিলেন, তাহলে তার তো উচিৎ ছিল তখন থেকেই রসূলের সুন্নাহ মেনে চলা। কিন্তু এত বছর ধরে এরকম হচ্ছে তার সাথে এরপরও তার কোন পরিবর্তন নেই, সেই আগের রূপেই জীবন কাটাচ্ছে। আর সত্যিকার মুসলিম-মুমিন তাকেই বলা যায়, যে সুন্নাহ পালন করে চলে। কিন্তু শুধু এটি বিষয় না, সে যদি সুন্নাহ পুরোপুরি পালন করেও এরকম দাবি করতো তাও সে ভণ্ডই হতো। যেহেতু শরীয়তে ইমাম মাহদীর আবির্ভাব সম্পর্কে বলা হয়েছে, তাই তার স্বপ্নের ব্যাখ্যার সাথে যদি শরীয়তে বলা তথা হাদিসে বলা আলামত, নিদর্শনগুলো না মিলে তাহলে তা বর্জন করতে হবে এটাই নিয়ম। তার স্বপ্নের ব্যাখ্যাগুলোর সাথে হাদিসে বলা কেয়ামতের আলামত, মাহদীর আগমনের আগে পরের আলামত মিলে না। তাই তার স্বপ্ন যদি কুরআন-হাদিসের সাথে মিলত তাহলে এ বিষয়ে বিবেচনা করা যেত। আর যেটি আল্লাহর পক্ষ থেকে হবে তাতে এরকম বিষয় মূলত হবেই না। মাহদীর সাথে তার কোন মিলও নেই। তবে জানা মতে সে এখনো প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে ও তার অনুসারীরাও।

শফিউল্লাহ হীরা (দাব্বাতুল আরদ)

এই লোকটিও বাংলাদেশের অধিবাসী। সে নিজেকে প্রথমে দাব্বাতুল আরদ দাবি করে আর পরে বলে এই দাব্বাতুল আরদই ইমাম মাহদী। পরবর্তীতে এই লোক তার আরেক সহযোগী নিয়ে (মো. আব্দুল মোমেন) আটক হয়। তাতে উল্লেখ আসে, সে নিজেকে নবীও দাবি করেছেন। এই ব্যক্তি ২০৮৩ সালের ২ মে কেয়ামত হবে বলে প্রচার শুরু করে ও নামাজ ৫ ওয়াক্ত ভুল আর ৩ ওয়াক্ত সঠিক বলে প্রচার শুরু করে। যা সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ এর সাথে সাংঘর্ষিক। এভাবেই তারা প্রচার করতে থাকে এবং বেশি অনুসারী তৈরি করতে পারে নি। শেরপুরে আল্লাহর দূত দাবিদার আটক এই শিরোনামে অনলাইনে সার্চ দিলে আরো তথ্য পাবেন।


হারুন ইয়াহইয়া (আদনান ওকতার)

তার নাম হারুন ইয়াহইয়া, আদনান ওকতার, সামি ওলকুন। তুরস্কের অধিবাসী। এবং পুরো বিশ্বে একজন ধর্মীয় নেতা তথা স্কলার হিসেবে পরিচিত। তার লিখিত অনেক বই বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। যার কথা আমি বলছি সেই ভন্ড নিজেকে আগেই ইমাম মাহ্দী পরোক্ষভাবে দাবি করেছে। একজন কথিত স্কলারও বটে এবং সুপরিচিত। এমনকি তার কিছু বই বাংলা ভাষায়ও অনুবাদিত হয়েছে এবং এর বিক্রি সংখ্যাও অনেক। সে কিয়ামতের আলামত ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বই লিখেছে যা বাংলায় পাওয়া যায়।

এনাকেই ইসলামিক স্কলার মানত বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের লোকজন, যে কিনা পাশে অর্ধ-নগ্ন নারীদের মেলা বসিয়ে ধর্ম বুঝাতেন। সেই প্রোগ্রাম আবার নিজের টিভিতে প্রচার করতেন। পাশের যুবতীরা আবার তার ওয়াজ শুনে "এভেত হোজাম" "এভেত হোজাম" মানে "জি হুজুর" "জি হুজুর" করত... তুরস্ক পুলিশ তাকে অনেক প্রচেষ্টার পর গ্রেপ্তার করে। আর সেই মামলায় রায় দিয়েছে। যৌন নিপীড়ন, শিশুদের যৌন নির্যাতন, ব্যক্তিগত তথ্য রেকর্ডিং, সহিংসতা করে নারীদের স্বাধীনতা বঞ্চিত করা, রাজনৈতিক ও সামরিক গুপ্তচরবৃত্তি করার চেষ্টা, জালিয়াতি এবং চোরাচালানীর অপরাধে তাকে মাত্র ১ হাজার ৭৫ বছর ৩ মাস জেল দিয়েছে ইস্তাম্বুলের একটি আদালত। এত বছরের সাজার বিষয়টি কিন্তু খুবই আশ্চর্যজনক। এই লোকটি খুব বিলাসী। তার বিলাসী জীবন দেখে যে কেউ আশ্চর্য হবেনই। তার হাজারেরও বেশি মেয়ে বন্ধু রয়েছে নাকি আর তাদের সকলের সাথেই নাকি মিলিত হয়েছে।

তিনি নিজেকে পরোক্ষ ভাবে অনেক বার অনেক ভাবে মাহদী দাবি করেছে। তার অনুসারীরা এটি প্রতিনিয়তই প্রচার করে যাচ্ছে। একটি ভিডিওতে এই বিষয়ে তাকে ধরা হয়, যদিও সেই ভিডিওটি এখন প্রাইভেট করে সরিয়ে ফেলা হয়েছে ইউটিউব থেকে। তাতে কথোপকথন এরকম-

১। এখানে Peace TV এর লেকচারার জাকির নায়েক, হারুন ইয়াইয়া, অন্য একজন আলেম ও টিভি উপস্থাপক ছিলেন যাদের কথোপকথন ছিল নিম্নরূপ :

জাকির নায়েক: অনেক লোকের কাছে শুনেছি আপনি নাকি নিজেকে ইমাম মাহাদী হিসেবে দাবি করেন ? আমি বলছি না আপনি সত্যিই দাবি করেছেন, কারণ আমি লোকের কাছে শুনেছি। আর আল্লাহ বলেছেন, যখন তুমি কোন কিছু লোকের মাধ্যমে শোন তুমি তা সত্যতা যাচাই করে দেখ।

হারুন ইয়াইয়া: আমি কখোনো নিজেকে এমন দাবি করিনি। যদি আমি এমন দাবি করি তবে আমার উপর আল্লাহ, ফেরেসতাকূল ও সকল মানুষের লানত।

(অন্য একজন আলেম কথাটিকে ঘুরিয়ে দেন এভাবে যে, যাতে তারা তার ভাবনাকে উল্টো করে দেয় আর সেখানের পরিস্থিতি ঠিক হয়।)

অন্য আলেম: হারুন ইয়াইয়া এই দিক দিয়ে মাহাদী যে, সে মানুষকে হিদায়াহ বা সরল পথ প্রদর্শন করে। কারণ, মাহাদী মানে যে মানুষকে হিদায়াহ দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে আমরা সবাইই মাহদী।

২। দ্বিতীয় একটি টিভি শো দেখতে পাবেন যেখানে একজন দর্শক এর প্রশ্ন ছিল- আপনি তো নিজেকে মাহাদী হিসেবে দাবী করেন, তবে তা প্রমাণ করুন?

হারুন ইয়াহইয়া: তখন সে তা অস্বীকার করে এবং মাহাদী সম্পর্কে বিভিন্ন উদ্ভট কথা বলতে থাকে। আর এই টিভি শো তে কিছু অর্ধ উলঙ্গ নারী ছিল যাদের আচরণ ছিল পর্ণ তারকাদের মত।

তাহলে যেহেতু হারুন ইয়াহইয়া এখনো নিজেকে প্রত্যাক্ষ ইমাম মাহাদী হিসেবে পরিপূর্ণরূপে দাবি করেনি তবে কেন আমরা তাকে সন্দেহ করছি? আর তার অনুসারী বেশি হওয়ার ব্যাপারেও কেন কথা বলছি? এটি একটি বড় বিষয়। যদিও সে পরোক্ষভাবে নিজেকে মাহদী দাবি করে আসছে অনেক আগে থেকেই। আমরা এই ভণ্ড মাহদীর দাবীদারকে একটু গুরুত্বের সাথেই দেখছি, কারণ এই লোক ভবিষ্যতে মাহদীর মিথ্যা দাবি করে আরো ফিতনার সূচনা করে কিনা সেটি নিয়ে। তিনি অনেক সম্পদশালী ও প্রাচুর্যের অধিকারী। তাই এটি দিয়ে অনুসারী বাড়ানো ও বড় পদক্ষেপ নেওয়া খুবই সহজ। তবে তার বর্তমান অবস্থা হচ্ছে তাকে ১০৭৫ বছরের জেল দিয়েছে তুরস্ক আদালত এবং জেলখানায় আছে। তাহলে সে আর কিভাবে নিজেকে মাহদী বলে দাবি করবে বা বাহিরে এসে কার্যক্রম চালাবে? এই বিষয়গুলো আসলেই রহস্য দিয়ে ভরা। তবে তাকে সন্দেহ করার কারণ হচ্ছে ভণ্ড মাহদী বের হওয়ার ব্যাপারে আগামী কথনে যে আলামতগুলো বলা হয়েছে তা তার সাথে সম্পূর্ণ মিলে যায়। আগামী কথনে বলা হয়েছে-

প্যারাঃ (২)

বিংশ শতকের বিংশ সনের,

কিছু করে হেরফের।

প্রকাশ ঘটিবে ভণ্ড মাহদী,

ভূখণ্ড তুরষ্কের।

প্যারাঃ (৩)

সপ্ত বর্ণে নামের মালা,

হা দিয়ে শুরু তার।

খতমে থাকিবে ইয়া- সে,

মাহদীর মিথ্যা দাবিদার।

প্যারাঃ (৪)

বাংলা ভূমির দ্বীনের সেনারা,

করিবে মিথ্যার প্রতিবাদ।

জালিমের ভূখণ্ড হয়েছিল দু ভাগ,

সত্য ভাগে হবে ভণ্ড বরবাদ।

আগামী কথনের এই সকল প্যারা দিয়ে বুঝা যায়, ২০২০ সালের আগে পরে একজন নিজেকে মাহদী দাবি করবে যদিও সে মিথ্যুক হবে, তুরস্ক ভূখণ্ডের হবে। তার নামের অক্ষরও মিলে যায় এবং এতে বলা হয়েছে তার ধ্বংস হওয়ার বর্ণনাও। তবে এগুলো কবে হবে তা নির্দিষ্ট করে আগামী কথনে কিছু বলা হয়নি যদিও অনেক বিষয়ই আগামী কথনে সাল, সময় ধরে উল্লেখ করে বর্ণনা হয়েছে। এখানে হয়তো কোন রহস্য আছে। যদি এই হারুন ইয়াহইয়া-ই হয় সেই ভণ্ড মাহদী তাহলে সে কিভাবে জেল থেকে বের হবে আর কিভাবে পাকিস্তানের মাধ্যমে ধ্বংস হবে। তা হতে হলে তো জেল থেকে বের হওয়াও আবশ্যক! নাকি অন্যকেউ এই ভণ্ড দাবীদার তা এখনো শিওর বুঝা যাচ্ছে না। কিন্তু হারুন ইয়াহইয়ার অনুসারীরা তার ব্যাপারে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েই যাচ্ছে। ব্যাখ্যাতে লেখা ছিল- এটি ২০১৯-২০২১ এর মধ্যেও হতে পারে, আল্লাহু আলিম। আগামী কথনের এই সকল প্যারার ব্যাখ্যা হয়তো আগেই পড়েছেন তাই এখানে সেগুলো উল্লেখ করা হলো না।

ভণ্ড দাবীদারদের উত্থান কেন হয়?

দেখা যাচ্ছে অসংখ্য ভণ্ড মাহদীর দাবীদার এই বর্তমান সময়ে বের হচ্ছে, এখনও একাধিক ব্যক্তি মাহদী দাবীর উপর রয়েছে। এদের এক এক জনের নামেও কি সুন্দর মিল রেখেছে দাবি প্রমাণ করার জন্য যেমন- মুহাম্মাদ বিন আব্দুল কুদ্দুস, মুহাম্মাদ বিন আব্দুল কারিম। কিন্তু মাহদীর মূল নাম হবে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ। শয়তান সরাসরি এখানে কলকাঠি নাড়ছে। আসলে এর উদ্দেশ্য কি?

১। এরকম ভণ্ড বের হওয়ার মাধ্যমে সত্যিকার মাহদীর আগমনের সময় তাকেও মিথ্যা দাবীদার হিসেবে ফিতনা তৈরি করা। কারণ লোকজন তখন মনে করবে সবগুলোর মতো এও ভণ্ড।

২। মাহদীর আগমনের আগে তার খিলাফত প্রতিষ্ঠায় সাহায্যকারী দলের নেতাদের আবির্ভাব ঘটবে যেমন ইমাম মাহমুদ, ইমাম মানসূর ও শুয়াইব ইবনে সালেহ। তারা যখন বের হবে তখন এই সব ভণ্ডদের আবির্ভাবের কারণে ও তাদের অদ্ভুত সব দাবীর কারণে তাদেরকেও লোকজন ভণ্ড মনে করবে। যেমন দেখা গেছে একজন দাবি করেছে দাব্বাতুল আরদ যা কুরআন-হাদিস মতে কোন দাবিই হতে পারে না। আর হাদিস থেকে জানা যায় খুব দ্রুতই হিন্দুস্তান থেকে একজন আমীরের প্রকাশ ঘটবে যিনি হিন্দের যুদ্ধের নেতৃত্ব দিবেন। তাকেও ভণ্ড হিসেবে সকলের কাছে চিহ্নিত করার একটি মহা পরিকল্পনা।

৩। হিন্দুস্তান থেকেই যেহেতু এক সত্যিকারের আমীরের উত্থান হবে তাই দেখা যাচ্ছে এই সকল ভণ্ডগুলো, মিথ্যা দাবিদারগুলো এই হিন্দুস্তান থেকেই বেশি প্রকাশ পাচ্ছে (পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত)। যা হিন্দুস্তানের সকল মুসলিম জনগণকে একটি ফিতনার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে, এর মাধ্যমে তাদের হক থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।

এভাবে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে, সবকিছুকে মিথ্যা সাজিয়ে সত্যকেও মিথ্যা বানিয়ে মানুষের কাছে উপস্থিত করে হক জামায়াত থেকে মুসলিমদেরকে দূরে রাখার বড় ধরনের কূটকৌশল এটি। জীন জাতির বিস্ময়কর ইতিহাস -জালালুদ্দিন সুয়ুতীর লিখিত বইতে শেষ জামানায় শয়তানের কার্যকলাপ সম্পর্কে উল্লেখ এসেছে যে- জীন শয়তানরা শেষ জামানায় মানুষের রূপে প্রকাশ্যে মানুষের কাছে এসে হাদিস বর্ণনা করবে, তারা বড় বড় ফকিহ-আলেম সাজবে। তারা কুরআন সুন্নাহতে পারদর্শী ও বাকপটুও হবে। তারা মানুষের ভিতরে বিভিন্ন সন্দেহ ঢুকিয়ে দিবে।(পৃষ্ঠাঃ ৯৯-১০১ দ্রষ্টব্য, জীন জাতির বিস্ময়কর ইতিহাস)

অন্য এক জায়গায় এসেছে- শয়তান জীনরা মানুষের রূপ নিয়ে সমাজে আলেম-ফকিহ ও বক্তা সাজবে, তাদের উত্থানও হটাত করে হবে। তারা হক দল ও হক আমীরের বিরুদ্ধে কথা বলবে ও মানুষকে তা থেকে বাঁধা দিবে। তারা নামাজ-রোজা, হজ-যাকাত নিয়ে কোন সমস্যা সৃষ্টি না করলেও হক জামায়াত নিয়ে মানুষকে গোমরাহ করতে উঠে-পরে লাগবে, এর জন্য বিভিন্ন ফতোয়া দিবে। যেমন একটি হাদিসেই এসেছে-

ইবরাহীম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তার সামনে এমন কিছু সম্প্রদায়ের আলোচনা করা হলো যারা বলে, এখন কোন জিহাদ নেই। অতঃপর তিনি বললেন, এটা এমন কথা যা শয়তান তাদের সামনে উত্থাপন করেছে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ৩৩৩৮১)

এ থেকে এটি সহজেই অনুমান করা যায় যে, শয়তান হকের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য দরকার হলে মানুষ বাছাই করে করে তাদের দিয়ে বিভিন্ন দাবি করাবে আর তা দিয়ে ফিতনা করাবে। আর শয়তান চাইলে যে কাউকেই স্বপ্ন দেখাতে পারে, অন্তরে খারাপ কিছু ঢেলে দিতে পারে যাতে ঐ লোক মনে করে সে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিদর্শন বা নির্দেশনা পাচ্ছে। তাই শরীয়তে এ বিষয়ে ভালো জ্ঞান অর্জন না করলে শয়তান এভাবেই যে কাউকে পথভ্রষ্ট করতে পারে।

এরকম ফিতনার কারণে হাদিসে বড় বড় ভণ্ড দাবীদারদের ব্যাপারে উল্লেখ এসেছে এবং তা কোন সময়ে হবে তারও ইঙ্গিত দিয়েছে। অহরহই এরকম মিথ্যা দাবি আসে, তা যদি সব উল্লেখ আসতো তাহলে তা প্রচুর হতো। হাদিসে শুধু সেই সকল লোকদের ব্যাপারে এসেছে যাদের অনুসারী বেশি ও ফিতনার বিস্তর ব্যাপক হবে। সেই বিষয়েই আমাদের এই পয়েন্টে আলোচনা হবে।

ইমাম মাহদীর আগমনের আগে যে সকল মাহদী দাবীদার বের হবে

ভণ্ড মাহদীর আবির্ভাব বিষয়ক হাদিস পর্যালোচনা করলে মাহদীর আগমনের আগের অবস্থা ও তার আগমনের সময়কাল সম্পর্কে একটি বিশদ ধারণা পাওয়া যায়। সেই হাদিসগুলো-

হযরত তাবে (রহঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন আশ্রয়প্রাথী আচিরেই মক্কার নিকট আশ্রয় চাইবে। কিন্তু তাকে হত্যা করে দেওয়া হবে। অতঃপর মানুষ এক বুরহা সময় বসবাস করবে। অতঃপর আরেকজন আশ্রয় চাইবে। যদি তুমি তাকে পাও তাহলে তোমরা তাকে আক্রমন করিও না। কেননা সে ধসনেওয়ালা সৈন্যদলের একজন সৈন্য। (অর্থাৎ যারাই তাকে আক্রমণ করতে যাবে, তারাই মাটির নিচে ধ্বসে যাবে)। *
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৩৫)
-       * এরকম একটি ঘটনা পূর্বে ঘটতে দেখা যায়, যদিও জানা নেই আগামীতে মাহদীর আগমনের পূর্বে আর হবে কিনা। সংক্ষেপে সেই ঘটনা- মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহ কাহতানী (১৪০০ হি/১৯৭৯ খৃ)। ১৪০০ হিজরী সালের প্রথম দিনে (১৯/১১/৭৯) এ মাহদীর আবির্ভাব। জুহাইমান উতাইবী নামক একজন সৌদি ধার্মিক যুবক সমাজের অন্যায় অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। সৌদি আরবের প্রসিদ্ধ আলিমগণ তাকে ভালবাসতেন। ক্রমান্বয়ে জুহাইমানের আন্দোলনে অনেক শিক্ষক ও ধার্মিক যুবক অংশ গ্রহণ করেন। একপর্যায়ে জুহাইমানের একজন আত্মীয় মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহ কাহতানীকে তিনি প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদী হিসেবে ঘোষণা করেন। কাহতানী নিজে এবং তার অনেক অনুসারী স্বপ্নে দেখতে থাকেন যে, রসূলুল্লাহ স্বয়ং কাহতানীকে ইমাম মাহদী বলে জানাচ্ছেন। এভাবে স্বপ্নের মাধ্যমে তারা সুনিশ্চিত হন যে কাহতানীই ইমাম মাহদী। যেহেতু কোনো কোনো হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, কাবা শরীফের পাশে হাজারে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহীমের মধ্যবর্তী স্থানে মাহদীর বাইয়াত হবে, এজন্য তারা ১৪০০ হিজরীর প্রথম দিনে এ বাইয়াত সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন। অনেকগুলো লাশের কফিনের মধ্যে অস্ত্র ভরে ১/১/১৪০০ (১৯/১১/৭৯) ফজরের সময় তারা মসজিদুল হারামে প্রবেশ করেন। সালাতের পর তারা মসজিদ অবরোধ করেন এবং ইমাম ও মুছল্লীদেরকে ইমাম মাহদীর বাইয়াত গ্রহণ করতে বাধ্য করেন। সৌদি সরকারী বাহিনী দীর্ঘ ১৫ দিন প্রাণান্ত প্রচেষ্টার পর অবরুদ্ধ মাসাজিদুল হারাম মুক্ত করেন। ইমাম মাহদী ও তার অনেক অনুচর নিহত হয়। এছাড়া অনেক হাজী ও মুছল্লিও উভয় পক্ষের গোলাগুলির মধ্যে নিহত হন।

ইয়াহ্‌ইয়া ইব্‌ন উছমান (রহঃ) .... আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন উমার (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদিন আমরা রসূলুল্লাহ্‌ এর কাছে বসে ছিলাম। এ সময় তিনি ফিত্‌না সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করেন; এমন কি তিনি ইহ্‌লাসের ফিত্‌নার কথাও উল্লেখ করেন। এ সময় জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! ইহ্‌লাসের ফিত্‌নাটা কিরূপ? তিনি বলেনঃ তা হলো- পলায়ন ও ধ্বংস। এরপর তিনি সাররা ফিত্‌নার (এর অর্থ প্রাচুর্যতার-সম্পদের ফিতনা) কথা উল্লেখ করে বলেনঃ তা এমন এক ব্যক্তির দ্বারা সংঘটিত হবে, যাকে লোকেরা আমার বংশের লোক বলে মনে করবে, কিন্তু আসলে সে আমার বংশের লোক হবে না (অর্থাৎ ভণ্ড মাহদীর দাবীদার হবে সেই লোক)। কেননা, আমার বন্ধু-বান্ধব তো মুত্তাকী লোকেরাই। এরপর লোকেরা এমন এক ব্যক্তির নেতৃত্বের উপর একমত হবে, যে দুর্বল চিত্ত ও লেংড়া হবে। (তার শাসনকাল দীর্ঘ হবে না)

এরপর চরম ফিতনা প্রকাশ পাবে, যা এ উম্মতের কাউকে এক চড় না দিয়ে ছাড়বে না। এরপর লোকেরা যখন বলাবলি করতে থাকবে যে, ফিত্‌নার সময় শেষ হয়ে গেছে, তখন তা আরো বৃদ্ধি পাবে (অর্থাৎ দিন দিন তা বাড়তেই থাকবে)। তখন এমন অবস্থার সৃষ্টি হবে, সকালে যে মুমিন থাকবে, সে সন্ধ্যায় কাফির হয়ে যাবে। এ সময় লোকেরা বিভিন্ন দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করবে। আর মুসলিমরা যে দুর্গে অবস্থান করবে, সেখানে কোন মুনাফিক থাকবে না এবং যেখানে মুনাফিকরা থাকবে, সেখানে কোন মুমিন লোক থাকবে না। তোমরা যখন এ অবস্থায় পৌঁছবে, তখন দাজ্জাল বের হওয়ার অপেক্ষা করবে-ঐ দিন থেকেই বা পরের দিন (অর্থাৎ এরপর খুব দ্রুতই বের হবে)। *
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪২৪৩ [ইঃ ফাঃ ৪১৯৫]; মিশকাত হাঃ একাঃ ৫২৯৩; সিলসিলাতুস সহীহাহ ৯৭২; মুসনাদে আহমাদ ৬১৬৮ (২/১৩৩); মুসতাদরাকে হাকিম ৪/৪৬৭)
-       * এই চরম ফিতনাই হচ্ছে মাহদীর আগমনের আগের মহামারী, দুর্ভিক্ষ ও যুদ্ধ-বিগ্রহ। এতে ৩য় বিশ্বযুদ্ধও অন্তর্ভুক্ত। এই ফিতনার কারণে পৃথিবীর ৩ ভাগের ২ ভাগ মানুষই মারা যাবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত এই অধ্যায়টি দেখলে জানা যাবে।

উপরের হাদিস থেকে আমরা পাই, এই ইহলাসের ফিতনার পরে সাররা ফিতনা দেখা যাবে। এবং এই সাররা ফিতনাটি সংঘটিত হবে এক ব্যক্তির মাধ্যমে যে নিজেকে আহলে বাইত তথা মাহদী দাবি করবে, কিন্তু আহলে বাইত তথা সে মাহদী হবে না। এরপর মুসলিমরা এক ব্যক্তির নেতৃত্বের উপর একমত বা অটল হবে যে দুর্বল চিত্ত ও লেংড়া হবে। একই রকম হাদিস এসেছে-

হযরত উমাইর ইবনে হানী (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূল বলেছেন, 'ফিতনায়ে আহলাস' হলো, তাতে পলায়ন হবে। (অর্থাৎ পরস্পরের মধ্যে এমন শত্রুতা দেখা দিবে যে, একে অন্য হতে পলায়ন করতে থাকবে।) এবং ছিনতাই হবে। ফিতনাতুস সাররা (অর্থাৎ প্রাচুর্যের ফিতনা), উক্ত ফিতনার ধোঁয়া কোন এক ব্যক্তির পায়ের নিচ হতে নির্গত হবে। (অর্থাৎ সেই ব্যক্তিই উক্ত ফিতনার নায়ক হবে।) সে আমার খানদানের লোক বলে দাবি করবে অথচ সে আমার আপনজনদের মধ্যে হবেনা। প্রকৃতপক্ষে পরহেজগার লোকই হলেন আমার বন্ধু। অতঃপর লোকেরা এক ব্যক্তির উপর ক্ষমতা অর্পনে একমত হবে, তারপর আরম্ভ হবে ফিতনায়ে দুহাইমা তথা অন্ধকারাচ্ছন্ন ফিতনা। যখন বলা হবে ফিতনা শেষ হয়ে গেছে, তখন তা এত প্রসারিত হবে যে, আরবের এমন কোন ঘর অবশিষ্ট থাকবে না। যেখানে তারা প্রবেশ করবেনা, (অর্থাৎ প্রতিটি ঘরে তা প্রবেশ করবেই। আর মানুষ তখন এমন ভাবে লড়াই করতে থাকবে যে, সে একথা জানবেনা যে, সেকি সত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছে? নাকি বাতিলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এভাবে সব সময় তা চলতে থাকবে। অবশেষে সকল মানুষ দুটি তাবুতে (দলে) বিভক্ত হয়ে যাবে। একটি দল হবে ঈমানের, এখানে মুনাফেকী থাকবে না। আর অপর দলটি হবে মুনাফেকীর যার মধ্যে ঈমান থাকবে না। যখন উভয়টি একত্রিত হবে, তখন তুমি দাজ্জালের আগমন প্রত্যক্ষ কর, সে ঐ দিনই অথবা পরের দিন আবির্ভূত হবে (অর্থাৎ খুব দ্রুতই হবে)।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৩ [মারফু, মুরসাল]; মুসতাদরাকে হাকিম ৪/৫১৩; একই রকম হাদিস আবু দাউদ ৪২৪৩)

এখানেও এটি বলা হয়েছে যে, ইহলাস বা আহলাস ফিতনা হচ্ছে পলায়ন ও ধ্বংস, ছিনতাই বা পরস্পরের মধ্যে এমন শত্রুতা দেখা দিবে যে, একে অন্য হতে পলায়ন করতে থাকবে। বিষয়টি হচ্ছে এটি তো এই যুগে বিদ্যমান আছেই। কিছু অতিতেও ছিল সামনে আরো বাড়তে পারে। কিন্তু এরপর যে সাররা ফিতনার কথা বলা হয়েছে আর সেটি এক ব্যক্তির মাধ্যমে হবে তা কি সংঘটিত হয়েছে? না, এরকম হয়নি। তাহলে এটি কোন সময় হবে? এ ব্যাপারে জানতে আরো কিছু হাদিস পর্যালোচনা করতে হয়।

হযরত আব্দুলাহ ইবনে যবীর গাফেকী (রা:) বলেন, আমি হযরত আলী (রা:) কে বলতে শুনেছি যে, চার ধরনের ফিতনা হবে। ১. ফিতনাতুস সাররা, ২. ফিতনাতু দররা (দরিদ্রতার ফিতনা), ৩. এই রূপ ফিতনা এ কথা বলে তিনি স্বর্ণের খনির (অর্থাৎ ফুরাতের স্বর্ণের ফিতনা) কথা আলোচনা করলেন। অতঃপর নবী করীম () এর বংশধর থেকে এমন এক ব্যক্তি (মাহদী) আবির্ভূত হবেন, যার হাতে আল্লাহ তায়ালা তাদের ক্ষমত ন্যাস্ত করবেন।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৪)

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেন, আমার পরে বহু ফিতনা সংঘটিত হবে। তন্মধ্যে একটি হলো, ফিতনায়ে আহলাস তাতে পলায়ন হবে, (অর্থাৎ পরস্পরের মধ্যে এমন শত্রতা দেখা দেবে যে, একে অন্য হতে পলায়ন করতে থাকবে।) এবং তাতে ছিনতাই হবে। অতঃপর এর পরে এমন ফিতনা সংঘটিত হবে যা তার চেয়েও আরো ভয়াভহ হবে, তারপর এমন ফিতনা হবে যে, যখন বলা হবে ফিতনা শেষ হয়ে গেছে, তখন তা এত প্রসারিত হবে যে, প্রত্যেক ঘরে তা প্রবেশ করবেই। এবং প্রত্যেক মুসলমানকে আঘাত করবেই। এরপর আমার বংশধর থেকে কোন এক ব্যক্তি (মাহদী) আবির্ভূত হবে।
-       (যঈফ জিদ্দান, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৫)

আমরা যদি সকল হাদিসগুলো দেখি তাহলে কোনটির পর কোনটি হবে বুঝতে পারবো। উল্লেখিত হাদিসগুলো থেকে পাওয়া যায় যা পর্যায়ক্রমে ঘটবে-

১। ফিতনায়ে ইহলাস বা আহলাস। (পলায়ন ও ধ্বংস, পরস্পর শত্রুতা)

২। ফিতনায়ে সাররা। এটি হবে এক ব্যক্তির মাধ্যমে যে মাহদীর মিথ্যা দাবীদার হবে(প্রাচুর্য ও ধন-সম্পদের মাধ্যমে)

৩। ফিতনায়ে দররা। (দুঃখ-দুর্দশা, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি)

৪। ফিতনায়ে ফুরাত।

৫। এক ব্যক্তির প্রকাশ যে হবে দুর্বল চিত্ত ও লেংড়া ও তাকে মুসলিমদের একটি জামাত নেতা হিসেবে মেনে নিবে।

৬। ফিতনায়ে দুহাইমা।

৭। ইমাম মাহদীর আবির্ভাব।

এই সকল ফিতনার মধ্যে কোন ফিতনা কখন হবে তার ব্যাপারে হাদিস এসেছে। তার মধ্যে ফুরাত নদীতে স্বর্ণের পাহাড়ের ফিতনার কথা হাদিস থেকে পাওয়া যায় এটি ২০২৩ সালে সংঘটিত হবে (সিরিয়া যুদ্ধ ২০১১ সালে শুরু হয়েছে, হাদিসে এসেছে সিরিয়া যুদ্ধের এক যুগ তথা ১২ বছর পর ফুরাতের স্বর্ণের পাহাড় ভেসে উঠবে)। এ বিষয়ে বিস্তারিত ফুরাত এর স্বর্ণের ফিতনা পরিচ্ছেদে দেওয়া হয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, এই ফুরাতের স্বর্ণের পাহাড়ের বা খনির ফিতনা ২০২৩ সালে সংঘটিত হতে যাচ্ছে এবং তার আগে পরে আরো কিছু বিষয় ঘটবে যা এখানে উল্লেখ এসেছে।

১। ফিতনায়ে ইহলাস বা আহলাসঃ বর্তমানে এটি সারা বিশ্বেই দেখা যাচ্ছে। হাদিসেই উল্লেখ এসেছে এর অর্থ পলায়ন ও ধ্বংস। অন্যত্র এসেছে, তাতে পলায়ন হবে। (অর্থাৎ পরস্পরের মধ্যে এমন শত্রুতা দেখা দিবে যে, একে অন্য হতে পলায়ন করতে থাকবে।) এবং ছিনতাই হবে। এত অধিক মাত্রাতে যা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশ্বে প্রতিটি দেশ বা জাতিই অন্য জাতির সাথে শত্রুতায় লিপ্ত হয়েছে। তারা এজন্য যুদ্ধেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে।

২। ফিতনায়ে সাররাঃ সাররা শব্দের অর্থ হয় প্রাচুর্য বা ধন-সম্পদ তথা সচ্ছলতা। এটি এক ব্যক্তি কেন্দ্রিক হবে। সে নিজেকে রসূলের এর পরিবারের দাবি করবে অর্থাৎ ইমাম মাহদী দাবি করবে। কিন্তু সে হবে মিথ্যাবাদী। আবার অনেকে তাকে তার বংশের মনে করবে, অর্থাৎ তার অনুসারী হবে যারা তাকে ইমাম মাহদী মনে করবে। এটি বড় আকারেই যে হবে তা হাদিসের বর্ণনা থেকেই বুঝা যায়।

৩। ফিতনায়ে দররাঃ এটির অর্থ হচ্ছে দারিদ্রতা, দুঃখ-দুর্দশা, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি। দারিদ্রতার কারণে যে অবস্থা হবে তা হতে পারে যেমন দুর্ভিক্ষের কারণে, অর্থনৈতিক সংকট ইত্যাদি অন্যান্য কারণে যে ফিতনার আগমন হবে।

৪। ফিতনায়ে ফুরাতঃ ফুরাত নদীর তীরে স্বর্ণের পাহাড় উঠবে এটি রসূল এর অন্যতম ভবিষ্যৎবাণী। আর এটি হবে মুমিনদের জন্য একটি পরীক্ষা। সিরিয়ায় ঘরোয়া যুদ্ধ ২০১১ সালে শুরু হয়েছে। আর হাদিসে বলা হয়েছে এর একযুগ পরেই ফুরাত নদীতে স্বর্ণের পাহাড় বা খনি ভেসে উঠবে। হাদিসটি-

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, চতূর্থ ফিতনা হচ্ছে, অন্ধকার অন্ধত্বপূর্ন ফিতনা, যা সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায় উত্তাল হয়ে আসবে, আরব অনারবের কোনো ঘর বাকি থাকবেনা, প্রত্যেক ঘরেই উক্ত ফিতনা প্রবেশ করবে। যদ্বারা তারা লাঞ্ছিত অপদস্ত হয়ে যাবে। যে ফিতনাটি শাম দেশে চক্কর দিতে থাকলেও রাত্রিযাপন করবে ইরাকে। তার হাত পা দ্বারা আরব ভুখন্ডের ভিতরে বিচরন করতে থাকবে। উক্ত ফিতনা এ উম্মতের সাথে চামড়ার সাথে চামড়া মিশ্রিত হওয়ার ন্যায় মিশ্রিত হয়ে যাবে। তখন বালা মুসিবত এত ব্যাপক ও মারাত্নক আকার ধারন করবে যদ্বারা মানুষ ভালো খারাপ নির্ণয় করতে সক্ষম হবেনা। ঐ মুহুর্তে কেউ উক্ত ফিতনা থামানোরও সাহস রাখবেনা। একদিকে একটু শান্তির সুবাতাস বইলেও অন্যদিকে তীব্র আকার ধারন করবে। সকালে কেউ মুসলমান থাকলেও সন্ধা হতে হতে সে কাফের হয়ে যাবে। উক্ত ফিতনা থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না, কিন্তু শুধু ঐ লোক বাঁচতে পারে, যে সমুদ্রে ডুবন্ত ব্যক্তির ন্যায়। করুন সুরে আকুতি জানাতে থাকে। সেটা প্রায় বারো বৎসর পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে। এক পর্যায়ে সকলের কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যে ফুরাত নদীতে স্বর্নের একটি ব্রিজ (খনি বা পাহাড়) প্রকাশ পাবে। যা দখল করার জন্য সকলে যুদ্ধে জড়িয়ে যাবে এবং প্রতি নয় জনের সাতজন মারা পড়বে। (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৭৬)

আর ২০১১+১২=২০২৩ যা আমাদের থেকে অনেক কাছে। তাহলে জানা যায় যে এই ফুরাত নদীতে স্বর্ণের খনি প্রকাশের ফিতনার আগেই ফিতনায়ে ইহলাস, ফিতনায়ে সাররা ও ফিতনায়ে দররা প্রকাশ পাবে ইনশা আল্লাহ।

৫। দুর্বল চিত্ত ও লেংড়া ব্যক্তির উপর নেতৃত্ব বা ক্ষমতা অর্পণঃ মুসলিমদের একটি জামাত তৈরি হবে যারা এক ব্যক্তির উপর নেতৃত্ব ও ক্ষমতা অর্পণে একমত হবে যিনি হবেন দুর্বল চিত্ত ও লেংড়া। ফুরাত এর স্বর্ণের পাহাড় বিষয়ক হাদিসটি থেকে বুঝা যায়, এটি তখন হবে যখন মানুষের কাছে সব বিষয়গুলো স্পষ্ট হওয়া শুরু হবে। কারণ এর পরেই রয়েছে ফিতনায়ে দুহাইমা তথা অন্ধকারাচ্ছন্ন যা সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায় উত্তাল হয়ে আসবে এবং এই উম্মতের কাউকে এক চড় না দিয়ে ছাড়বে না। এই ব্যক্তিটি ইমাম মাহদী নন, ইমাম মাহদী দুর্বল কিংবা লেংড়া হবেন না। এই ব্যক্তি হচ্ছে তার পূর্বে আগমনকারী এক নেতা। আমরা ইতিমধ্যেই জানি যে একজন দুর্বল ব্যক্তির আত্মপ্রকাশ হবে এই যুগেই, যিনি মাহদীর খিলাফত প্রতিষ্ঠার সহযোগী এবং হিন্দের যুদ্ধের আমীর। হাদিসে এসেছে-

আবু সাঈদ খুদরী (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, মাহদীর পূর্বে এক জন ইমামের আর্বিভাব হবে আর তার নাম হবে মাহমুদ। তার পিতার নাম হবে আব্দিল বা আব্দুল (অর্থাৎ নামে আব্দিল বা আব্দুল থাকবে)। সে দেখতে হবে দুর্বল, আর তার চেহারায় আল্লাহ মায়া দান করবেন। আর তাকে সে সময়ের খুব কম লোকই চিনবে। অবশ্যেই আল্লাহ সেই ইমাম ও তার বন্ধু -যার উপাধি হবে সাহেবে কিরাণ, তাদের মাধ্যমে মুমিনদের একটি বিজয় আনবেন।
-   (ইলমে রাজেন ৩৪৭; আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৫৪; ইলমে তাসাউফ ১২৫৩; আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ)

হযরত আলী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল বলেছেন, অচিরেই হিন্দুস্তানের মুশরিকরা মুসলিমদের প্রতি নির্যাতন বৃদ্ধি করবে। সে সময়ে হিন্দুস্তানের পূর্ব অঞ্চল থেকে একজন নেতার প্রকাশ ঘটবে। যার নাম হবে মাহমুদ। পিতার নাম আব্দুল ক্বদির। সে দেখতে খুবই দুর্বল হবে। তার মাধ্যমে আল্লাহ হিন্দুস্তানের মুসলিমদের বিজয় দান করবেন।
-       (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ, অধ্যায়ঃ গাজওয়াতুল হিন্দ, ২৩০; ক্বাশ্ফুল কুফা ২৬১)

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি অবশ্যই অবশ্যই পৃথিবী ততদিন ধ্বংস হবে না যতদিন না মানুষ পাঁচজন শাসকের দেখা পাবে। যারা আল্লাহর দ্বীনকে যুক্তি করে ধ্বংস করতে চাইবে। আর তারা পাঁচ শাসকই এক সাথে পৃথিবীতে উপস্থিত থাকবে। আমি (আবু হুরায়রা) বললামঃ হে আল্লাহর রসূল ! সে পাঁচজনের পরিচয় কী? তিনি বললেনঃ তাদের একজন এই পবিত্র ভূমিতে আসবে। যার নাম হবে আমার নামের মতো (মুহাম্মাদ)। সে আরবের দ্বীনকে হাস্যকর বানাবে। আর অভিশপ্ত (ইহুদী-খ্রিষ্টান) জাতিকে বন্ধু বানাবে। দ্বিতীয় সে বিশ্ব শাসক হবে। আর মুসলমানদের নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকবে। তৃতীয় জন হিন্দুস্তানের বাদশা, সে বন্ধু অঞ্চলের মুসলমানদের নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করবে। চতুর্থ জন, হিন্দুস্তানের দ্বিতীয় বাদশা। যে মুসলমানদের হত্যার শপথ নিয়ে শাসন ক্ষমতায় যাবে। আর মুসলিম হত্যায় সে উন্মাদ হয়ে পড়বে। পঞ্চম হলো একজন নারী শাসক, সে শাসন ক্ষমতা হাতে পেয়ে বা'আল দেবতার ইবাদত (অর্থাৎ পূর্বপুরুষদের পূজা) বৃদ্ধি করবে। আর মুশরিকদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে। আর মুসলমানদের হত্যা করবে। অথচ সে হবে মুসলমান। তখন দেখবে সেখানকার দুর্গম নামক অঞ্চলের এক দুর্বল বালক তাদের ষড়যন্ত্রের সমাপ্তি ঘটাবে এবং মুমিনদের বড় বিজয় আনবে।
-       (কিতাবুল আক্বিব ১৭২; আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ১৭৫)

হযরত সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ (রহ.) বলেন, আমি আমার পিতা থেকে শুনেছি, রসূলুল্লাহ বলেছেন খুব শীঘ্রই হিন্দুস্তানের মুশরিকদের পতন হবে। আর তা হবে এক দুর্বল বালকের নেতৃত্বে। আর তার নাম হবে মাহমুদ। আল্লাহ তার মাধ্যমে হিন্দুস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। (প্রয়োজনীয় অংশ)
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৫৩৮, ১৭০৩; কিতাবুল আক্বিব ১৩৭)

হযরত কাতাদাহ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলে পাক বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে মুশরিকদের সাথে মুমিনদের একটি জিহাদ হবে, আর সেই যুদ্ধের শহীদরা কতইনা উত্তম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল ! সেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিবেন কে? তিনি বললেন, উমর (রা:) এর বংশের এক দুর্বল বালক।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৮৭)

এ সকল হাদিস থেকেই সেই ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায়, যার আবির্ভাব বর্তমান সময়েই হবে তথা ২০২১-২০২৪ এর মধ্যেই হওয়ার কথা। এবং ফুরাত নদীতে স্বর্ণের ফিতনার পরেই তার উপর মুসলিমরা ক্ষমতা অর্পণ তথা নেতৃত্বে একমত হবে। এক কথায় মুসলিমদের একটি দল তাকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করবে। দেখা যাচ্ছে এই দুইটি সময়ই এক ব্যক্তির উপর মিলে যাচ্ছে। অতএব, এ থেকেই বুঝা যায়, সেই দুর্বল চিত্ত ও লেংড়া ব্যক্তিটি ইমাম মাহমুদ

৬। ফিতনায়ে দুহাইমাঃ এর অর্থ অন্ধকারাচ্ছন্ন, অন্ধকার। চারটি ফিতনার মধ্যে এই ফিতনাটি ৩য় ফিতনা। এরপরের ৪র্থ ফিতনাটাই হচ্ছে দাজ্জালের ফিতনা। অনেক জায়গায় মোট ৫টি ফিতনার কথা বলা হয়েছে। সেই হিসেবে এটি ৪র্থ হয় এবং দাজ্জালেরটি ৫ম। তাহলে এই ৩য় ফিতনাটা কীরূপ? হাদিসে যাকে বলা হয়েছে অন্ধকার অন্ধত্বপূর্ন ফিতনা, যা সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায় উত্তাল হয়ে আসবে?

আল ফিতানে রয়েছে- তারপর আরম্ভ হবে ফিতনায়ে দুহাইমা তথা অন্ধকারাচ্ছন্ন ফিতনা। যখন বলা হবে ফিতনা শেষ হয়ে গেছে, তখন তা এত প্রসারিত হবে যে, আরবের এমন কোন ঘর অবশিষ্ট থাকবে না। যেখানে তারা প্রবেশ করবেনা, (অর্থাৎ প্রতিটি ঘরে তা প্রবেশ করবেই। আর মানুষ তখন এমন ভাবে লড়াই করতে থাকবে যে, সে একথা জানবেনা যে, সেকি সত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছে? নাকি বাতিলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এভাবে সব সময় তা চলতে থাকবে। অবশেষে সকল মানুষ দুটি তাবুতে (দলে) বিভক্ত হয়ে যাবে। একটি দল হবে ঈমানের, এখানে মুনাফেকী থাকবে না।(আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৩)

আবু দাউদে আছে- এরপর চরম ফিতনা প্রকাশ পাবে, যা এ উম্মতের কাউকে এক চড় না দিয়ে ছাড়বে না। এরপর লোকেরা যখন বলাবলি করতে থাকবে যে, ফিত্‌নার সময় শেষ হয়ে গেছে, তখন তা আরো বৃদ্ধি পাবে (অর্থাৎ দিন দিন তা বাড়তেই থাকবে)। তখন এমন অবস্থার সৃষ্টি হবে, সকালে যে মুমিন থাকবে, সে সন্ধ্যায় কাফির হয়ে যাবে। এ সময় লোকেরা বিভিন্ন দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করবে। আর মুসলিমরা যে দুর্গে অবস্থান করবে, সেখানে কোন মুনাফিক থাকবে না এবং যেখানে মুনাফিকরা থাকবে, সেখানে কোন মুমিন লোক থাকবে না। (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪২৪৩ [ইঃ ফাঃ ৪১৯৫])

এই দুটি বর্ণনা থেকেই এর ভয়াবহতা আন্দাজ করা যাচ্ছে। আর এই ফিতনার ঠিক আগ মুহূর্তেই মুসলিমরা ইমাম মাহমুদের উপর নেতৃত্বে একমত হবে। এ বিষয়ে আমরা হাদিস দেখলে বুঝি যে, তার (মাহমুদ) আগমনের পরই হিন্দের যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হবে, এরপর দুর্ভিক্ষ, ৩য় বিশ্বযুদ্ধ রয়েছে। যদি এগুলো পর পর ঘটতে থাকে তাহলে সেটি যে কিরকম ভয়াবহ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এটাই ফিতনায়ে দুহাইমা কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য কিছু হাদিস ও বিশ্লেষণ দেখা দরকার। হাদিসে এসেছে-

হযরত ফিরোজ দায়লামী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আখেরী জামানায় ইমাম মাহদীর পূর্বে ইমাম মাহমুদ এর প্রকাশ ঘটবে। সে বড় যুদ্ধের শক্তির যোগান দিবে। তার জামানায় মহাযুদ্ধের (৩য় বিশ্বযুদ্ধে) বজ্রাঘাতে (পারমাণবিক অস্ত্রের আঘাত) বিশ্বের অধ্বঃপতন হবে এবং বিশ্ব এই সময়ে ফিরে আসবে (অর্থাৎ আধুনিকতা ধ্বংস হয়ে প্রাচীন যুগে ফিরবে)। সে তার সহচর বন্ধু সাহেবে কিরান শামীম বারাহকে সাথে নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করবে, যে বেলাল ইবনে বারাহ-এর বংশোদ্ভুত হবে। তোমরা তাদের পেলে জানবে ইমাম মাহদীর প্রকাশের সময় হয়েছে।
-       (আসরে যুহরি; তারিখে দিমাশাক; ইলমে তাছাউফ; ইলমে রাজেন; বিহারুল আনোয়ার; উক্ত হাদিসটি এই পাঁচটি গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। অধিকাংশ মুহাদ্দিছগণ ব্যক্ত করেছেন উক্ত হাদিসটি সহীহ, কেউ কেউ বলেছেন হাসান।)

এই হাদিস থেকেই আমরা বুঝতে পারি যে, মাহদীর আগমনের আগে মাহমুদ এর প্রকাশ কালে বড় যুদ্ধ সংঘটিত হবে। এখানে বজ্রাঘাত শব্দটি দিয়ে পারমাণবিক অস্ত্রকেই বুঝিয়েছে। উপরের উল্লিখিত হাদিস থেকেই আমরা বুঝতে পারি যে, ফিতনায়ে দুহাইমা তে মানুষ একে অন্যের সাথে লড়াই করতে থাকবে। ফিতনায়ে দুহাইমা কীরূপ হবে এ ব্যাপারে এক গবেষকের তথ্য নিচে উল্লেখ করছি।

ইমাম আবু উবাইদ আল-কাসেম রহ. (মৃ: ২২৪ হি:) নিজ সনদে হুযাইফা (রা:) থেকে বর্ণনা করেছেন, তোমদের (মুসলমানদের) উপর (ফিতনায়ে) দুহাইমা আবির্ভূত হবে। (তখন) নাশফ্ নিক্ষেপ করা হবে। এর পরে আসবে রাদফ্ (অগ্নী শীলা)-এর নিক্ষেপণ।
-       (গারিবুল হাদিস, ইমাম আবু উবায়েদ- ২/২৩২)

তিনি তিনবার বললেন: তোমদের (মুসলমানদের) উপর (ফিতনায়ে) দুহাইমা আবির্ভূত হবে। (তখন) নাশফ্ নিক্ষেপ করা হবে। দ্বিতীয় বারে রাদফ্ (অগ্নী শীলা) নিক্ষেপ করা হবে। তৃতীয়ত পর্যায়ে ঘন কালো অন্ধকার (রূপে এক ফিতনা আগমন করবে যা) কেয়ামত পর্যন্ত (সময়ের পূর্বে আল্লাহ যতদিন চান থাকবে।) সে সময় জাহেলিয়াতের হত্যার ন্যায় হত্যা (সংঘটিত) হবে। *
-       (তাসহিকাতুল মুহাদ্দিসীন, আসকারী- ১/৩২৭; তারিখে ইবনে মুয়াইয়েন- ১/৩২৭)
-       এখানে ফিতনায়ে দুহাইমাতে প্রথমে নাশফ এবং পরেই রাদফ নিক্ষেপ এর কথা বলা হয়েছে। এর অর্থ ১। تَرْمِي بِالنَّشَفِ নাশফ নিক্ষেপ করা হবে। النَّشْفُ (নাশফ্)-এর এক অর্থ কালো পাথড় যা দিয়ে হাম্মামে গা পরিষ্কার করা হয়। [তাজুল আরুস ২৪/৪০৬, আল-ফায়েক- ১/৪২২] এটি দিয়ে এরকম বুঝায় যে তখন মুসলীম উম্মাহর উপরে النَّشْفُ (নাশফ্) নিক্ষেপ তথা যুদ্ধাস্ত্রের বুলেট, বোমা বা মিসাইল নিক্ষেপ হবে, যা দেখতেও অনেক সময় কালোই দেখায়।
২। ترمي بالرضف রাযফ্ (অগ্নী শীলা) নিক্ষেপ করা হবে। الرَّضْفُ (রাযফ্)-এর এক অর্থ আগুনে গরম/দগ্ধ হওয়া পাথর/শীল। [আল-ফায়েক- ১/৪২২, ৪৮০] এটি দিয়ে যে অগ্নি নিক্ষেপ বুঝায় তা সহজেই বুঝা যায়, আর এটি পারমাণবিক বোমাকেই উদ্দেশ্য করে।

তাহলে এ থেকে সহজেই বুঝতে পারছি যে, সেই দুর্বল চিত্ত ব্যক্তির উপর মুসলিমরা জামায়াত বদ্ধ হওয়ার পর বিভিন্ন দিকে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে, ফিতনায়ে দুহাইমা শুরু হবে, মুসলিম-মুনাফিক আলাদা হয়ে যাবে। হিন্দের যুদ্ধের আমীর ইমাম মাহমুদ হিন্দের যুদ্ধ বিজয় করার সময়কালীনই ৩য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। এটিই হচ্ছে রাযফ্ (অগ্নী শীলা) নিক্ষেপ করা হবে এর ব্যাখ্যা। এ বিষয়ে আরো স্পষ্টভাবে হাদিসে এসেছে-

হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা:) বলেন, রসূলে পাক বলেছেন, কিয়ামতের পূর্বে মানুষগণ অগ্নি নিক্ষেপ করবে, আর সে অগ্নি দ্বারা তারা নিজেরাই ধ্বংস হবে। অবশ্যই তারা আল্লাহর অবাধ্য জাতি। এই অবাধ্য জাতি ধ্বংসের পর আল্লাহ তাআলা পৃথিবীকে শান্তিময় করবেন।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৭৯)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, সাবধান! মুশরিকরা নিজেদের অবাধ্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পৃথিবীতে কেয়ামত আনয়ন করবে (৩য় বিশ্বযুদ্ধ ঘটাবে)। আর তখন পৃথিবীতে অগ্নি (পারমাণবিক অস্ত্র) প্রকাশ পাবে, যা পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ মানুষকে ধ্বংস করবে। তাঁর পরেই আল্লাহ তায়ালা একটি শান্তিময় পৃথিবী দেখাবেন, যেখানে কোনো বিশৃঙ্খলা থাকবে না। এ কথা বলে তিনি সূরা ইবরাহীমের ৪৮ নম্বর আয়াত পাঠ করলেন। *

-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৭৮)

-   * দেখা যাচ্ছে এই হাদিসগুলো খুব দ্রুতই বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। আজ যদি হিসাব করা হয় তাহলে দেখা যাবে মুসলিমদের চেয়ে আধুনিক অস্ত্রে মুশরিক তথা ইহুদী-খ্রিষ্টানরাই এগিয়ে। মুশরিক দেশগুলোতেই বেশির ভাগ পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ। সব জায়গাতেই এখন যুদ্ধের দামামা বেজে চলেছে। ইহুদী-খ্রিষ্টানদের মধ্যেই এখন পারস্পারিক শত্রুতা বিরাজ করছে। তারা নিজেরা নিজেরাই যুদ্ধ করে ধ্বংস হয়ে যাবে আর এটি মুসলিমদের জন্যই আল্লাহর একটি অশেষ নিদর্শন হবে। এরপর এই পৃথিবী শান্তিময় হবে।

৭। ইমাম মাহদীর আবির্ভাবঃ উপরে উল্লিখিত ঘটনাগুলো ঘটার পর ইমাম মাহদীর আগমন ঘটবে। তার আবির্ভাবের আগেই বিশ্বের অনেক অঞ্চল মুসলিমদের ক্ষমতাধীন থাকবে। তিনি এসে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করবেন। যেমনটি ইহলাসের ফিতনা নিয়ে বলা হাদিসটিতে এসেছে।

অতঃপর নবী করীম () এর বংশধর থেকে এমন এক ব্যক্তি আবির্ভূত হবেন, যার হাতে আল্লাহ তায়ালা তাদের ক্ষমতা ন্যাস্ত করবেন। (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৪)

এরপর আমার বংশধর থেকে কোন এক ব্যক্তি আবির্ভূত হবে। (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৫)

একটি বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখলেই আমরা ইমাম মাহদীকে এবং তিনি ব্যতীত অন্য ইমামের বর্ণনাকে আলাদা রাখতে পারবো। আর তা হচ্ছে যখনই নাম উল্লেখ ছাড়া রসূল বলেন যে আমার বংশ থেকে আসবে বা আমার আহলে বাইত থেকে; তাহলে বুঝতে হবে ৯০% ইমাম মাহদীকেই বুঝায়। আর যদি এরকম বলে যে এক ব্যক্তির প্রকাশ বা আবির্ভাব, তোমাদের মধ্য থেকে একজন; তাহলে বুঝতে হবে সে ইমাম মাহদী ব্যতীত অন্য কেউ।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ