৬.৩ ক্ষুদ্র সেনাদের পূর্ব প্রস্তুতি (বিজয়ের শতাব্দী)

 এই শতাব্দী বিজয়ের শতাব্দী। এই বাক্যটি আজ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এর উপর লেখা হচ্ছে প্রবন্ধ, তৈরি হচ্ছে অডিও-ভিডিও লেকচার। স্লোগান চলছে- রাত যত গভীর হয়, দিন তত নিকটে আসে। আজ চারিদিকে মুসলিমরা মাজলুম আর জুলুম-নির্যাতন যেন সব সময়ের সঙ্গী। এ থেকেই সকলের বিশ্বাস এই জুলুম চরমে পৌঁছলেই জালিমদের পতন ঘটবে। কিন্তু সেই আসবাব বা উপকরণ কি সেটি কি জানা আছে? আজ যেমন চারিদিকে মুসলিম নিধনের জন্য বিশ্বের মুশরিকরা মহা পরিকল্পনা নিয়েছে। তারা মুসলিমদের প্রায় নিশ্চিহ্নই করে ফেলবে। ঠিক যেমন পরিকল্পনা নিয়েছে ভারতের মুশরিকরা। তারা মুসলিমবিহীন অখণ্ড ভারত তৈরির জন্য জান-মাল সবই ব্যয় করছে। কিন্তু তাদের রুখে দেওয়ার জন্য কি মুসলিমরা কোন প্রস্তুতি নিবে না? প্রস্তুতি বা পরিকল্পনা ছাড়াই কি এমনিতেই ইসলাম বিজয় হবে? এর জন্য মুসলিমদের কি কিছুই ত্যাগ করতে হবে না? মুসলিমরা কিভাবে ঐক্যবদ্ধ হবে? ঐক্যবদ্ধ জামাতের কর্ম পরিকল্পনা কীরূপ হবে? এগুলো সবই চিন্তা-ভাবনা করার বিষয়। কিন্তু মুসলিমদের মধ্যে আজকের যুবক শ্রেণী জেগে উঠছে। ঠিক যেমন ফেরাউন এর ঘর থেকে মুসা আঃ! ঠিক যেমন আজর এর ঘরে ইবরাহীম আঃ! ফাতুবা লিল গুরাবা! বিজয়ের শতাব্দী যেহেতু হবে, সেই বিজয়ের জন্য আজকে সারা বিশ্বে এক জাগরণ লক্ষ্য করা যায়। হিন্দেও একই অবস্থা। হিন্দের যুবকরাও জাগছে। আলেমরাও এখন বুঝতে পারছে যে, গণতন্ত্র, পীর-মুরিদি দিয়ে ইসলামকে টিকিয়ে রাখা যায় না, নিজেরাও টিকে থাকা যায় না। আজকে দ্বীন নিভু নিভু কিন্তু তা জ্বলে উঠার জন্য মুসলিমদের যে জাগরণ দরকার সেটিও তার সাথে চলমান রয়েছে। যুবকরা এই যুগের চাকচিক্য, অশ্লীলতা ছেড়ে তাওবা করে দ্বীনে ফিরছে। ৯ মাস আগে তাওবা করে দ্বীনে ফেরা ১৯-২০ বছরের যুবকও এখন দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য মাঠে নেমেছে, হিজরতে নেমেছে। গুম ঘরে যেয়ে যখন জিজ্ঞেস করে এটা কোথায়, আর যখন উত্তরে শোনে, এটা গুম ঘর। তখন কেউ যদি তার খুশি হওয়া দেখতে পেত! আজ জালিমের ঘর থেকেই এরা বের হচ্ছে দ্বীনের জন্য। তো বিজয় কেন, কিভাবে আসবে তা কি বুঝতে বাকি আছে? এই দ্বীন বিজয়ের আসবাব তৈরি হচ্ছে। চারিদিকেই চলছে প্রস্তুতি। তারা আর কিছু না বুঝুক, দ্বীন কায়েম করতে হবে, খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে হবে, পৃথিবীতে ইসলামী আইন চলবে, চলতে হবে এটি বোঝে। ইসলাম প্রতিষ্ঠা হতে হবে এটিই তাদের দাবি। আর তারা দরবারী আলেমদের মতো কুরআন-হাদিসের অগাধ জ্ঞানের অধিকারী না হলেও, কেমন যেন বলা যায় হাবশী মূর্খ গোলাম বেলাল (রা:) এর মতো আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়েত প্রাপ্ত। এই হেদায়েতই আজ বিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে যুবকদের মধ্যে। কারণ? কারণ এই শতাব্দী বিজয়ের শতাব্দী।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, প্রতিটা যুগেই ইসলাম নিভিয়ে যায়। আর আমার পরেও নিভিয়ে যাবে, আর প্রত্যেক যুগেই একটি দল থাকবে। যারা আমার সুন্নতকে আঁকড়ে ধরবে, আর আল্লাহর দ্বীনের আলো পূর্ণ বিকশিত করবেন।
-   (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৬৪)

হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী রাখার জন্য প্রতিটি যুগের একটি দল বের হবেন। যারা আল্লাহর নির্দেশে সংগ্রাম করবে। আর তারা কোন নিন্দুকের নিন্দাকে পরোয়া করবে না। তারাই আল্লাহর জান্নাতের অধিকারী।
-   (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৬৫)


হযরত আবু মুসা আশআরী (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, যখনই আল্লাহর এই দিন নিভে যাওয়ার অবস্থায় আসবে, তখনই আল্লাহ তাআলা এই দ্বীনকে বিজয়ী রাখার জন্য, আল্লাহ তাআলা একটি করে দল তৈরি করে দেন। যারা আল্লাহর দ্বীনকে মজবুত ভাবে ধরেন।
-   (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৬৬)

হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা:) হতে বর্ণিত, রসূলে পাক বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে সর্বদা একটি দল থাকবে যারা হকের পক্ষে যুদ্ধ করবে, তারা দুশমনদের উপর বিজয় থাকবে, তাদের সর্বশেষ দলটি দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
-       (সহীহুল মুসলিম ২৯২, ৪৭১৭; সুনান আবু দাউদ ২৪৮৪; আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৫১, ১১৬৭; মুসনাদে আহমদ ১৯৮৯৫; মুসতাদরাকে হাকিম ৩/৪৫০)


হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা:) বলেছেন, আমি রসূল ﷺ কে বলতে শুনেছি। ইসলাম ছিল একটি অপরিচিত ধর্ম। তারপর তা থেকে হেদায়েতের আলো ছুটে সকলেই আলোকিত হয়েছে। আবার তা পূর্বের ন্যায় অপরিচিত হয়ে যাবে। তারপর আল্লাহ তা'আলা তাঁর কোন এক বান্দার মাধ্যমে আবার আলোকিত করবেন।
-       (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৬২)

হযরত আনাস (রা:) বলেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা) বলেছেন, যুগে যুগেই ইসলামের আলো নিভে যায়, আবার তা আল্লাহ তাআলার কোন এক বান্দার মাধ্যমে আলোকিত করেন। এ কথা বলে তিনি কুরআনের আয়াত পাঠ করলেন, “তারা চায় তাদের মুখের ফুৎকারে আমার দিনের আলো নিভে যাক”, কিন্তু আমি তা পূর্ণ বিকশিত করি। যদিও তা কাফেরদের কাছে অপছন্দ।
-       (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৬৩)


হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা:) বলেন, রসূলে পাক ﷺ বলেছেন, আল্লাহর একদল বান্দাগণ কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত থাকবে। আর আল্লাহর নিভে যাওয়া আলোকে আবার পূর্ণবিকশিত করবেন।
-       (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৬৮)


হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, হে জাবির! তুমি কি জানো? আল্লাহ তাঁর দ্বীনকে কিভাবে প্রতিষ্ঠা করেন? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রসূল ﷺ অধিক জানেন। তিনি বললেন, যখন তা নিভে যায় তখন একটি দল তৈরি করে দেন। যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে এবং আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করেন।
-       (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৬৯)

মুআবিয়া ইবনু কুররা (রাহঃ) হতে তার বাবার সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ যখন সিরিয়াবাসীরা খারাপ হয়ে যাবে তখন তোমাদের আর কোন কল্যাণ থাকবে না। তবে আমার উম্মাতের মধ্যে একটি দল সকল সময়েই সাহায্যপ্রাপ্ত (বিজয়ী) থাকবে। যেসব লোকেরা তাদেরকে অপমানিত করতে চায় তারা কিয়ামত পর্যন্ত তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।
-       (সহীহ, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত/আল মাদানী প্রকাঃ) ২১৯২ [ইঃ ফাঃ ২১৯৫]; সুনান ইবনু মাজাহ ৬)  

বিজয়ের সূচনার সেই সময়টি কখন?

অচিরেই ইসলাম বিজয়ী হবে সকল মতাদর্শ, সকল মতবাদের উপর। কিন্তু কখন থেকে সেই বিজয় শুরু হবে? মুসলিমরা আর কত সময় সেই অপেক্ষার প্রহর গুনবে? আর কত সময় ধরে নির্যাতন-জুলুম সহ্য করে যাবে? আর কত রক্ত বইতে বাকি আছে? এই প্রশ্ন আসা অস্বাভাবিক নয়। হাদিস ও বিভিন্ন সূত্র থেকে আমরা সেটির একটা ধারণা বের করবো ইনশাআল্লাহ। হাদিসে এসেছে-

হযরত মাস্তুরিদ ইবনে শাদ্দাদ (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন প্রত্যেক উম্মতেরই নির্দিষ্ট একটি সময় রয়েছে। আর আমার উম্মতের সময় হল একশত বছর। সুতরাং যখন আমার উম্মতের উপর একশত বছর অতিবাহিত হয়ে যাবে তখন তাদের উপর আল্লাহ যা অঙ্গীকার করেছেন তা আসবে (ঘটতে শুরু করে)।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৯৩৭ [পথিক প্রকা: ১৯৪২; তাহকীক: যঈফ])

আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার জানামতে রসূলুল্লাহ্‌ বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ্‌ এ উম্মতের জন্য প্রতি শতাব্দীতে এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন, যিনি দ্বীনের তাজ্‌দীদ বা সংস্কার সাধন করবেন।
-       (সহীহ, সূনান আবূ দাউদ (ইঃ ফাঃ) ৪২৪১ [আলবানী একাঃ ৪২৯১]; হাকেম ৮৫৯২; মিশকাতুল মাসাবিহ ২৪৭; আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৭০, ইবনে দাইলামী)

আল্লাহ তার রসূলকে ও সকল মুমিনদেরকে যে অঙ্গীকার দিয়েছেন তা হচ্ছে পৃথিবীতে ইসলামকে বিজয়ী রাখবেন, এই দ্বীনকে কেয়ামত পর্যন্ত সকল বাতিল দ্বীনের উপর সমুন্নত রাখবেন। আর তার একটি সময় আছে। আবুল হাসান আলী নদভী এর লেখা তারিখে দাওয়াত ওয়া আজিমাত গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ গ্রন্থে সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস বইটি সবার পড়া উচিৎ যে ইসলামের উথান-পতন টি কিভাবে কাজ করে আর কিভাবে এর মাধ্যমে আল্লাহ মুমিন নারী-পুরুষদের পরীক্ষা নেন। যদি শুধু বিজয়ই দিতো তাহলে তো এটাই হক সহজেই স্পষ্ট হয়ে যেত। কঠিন কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে এই দুনিয়ার জিন্দেগী পার করাচ্ছেন। আর সাথে দেখেন কে কতটুকু ধৈর্য ধরতে পারে আর সাথে জালেমদেরও কঠিন পরীক্ষা করে যে, সে কতটুকু তার সীমা লঙ্ঘন করতে পারে। ইসলাম রসূলের যুগ থেকে পরবর্তী যুগে যখনই পা রেখেছে তখনই তার মধ্যে বিভিন্ন ফিতনা, বিদআত, অপব্যাখ্যা ও বিভিন্ন ফিরকার তৈরি হয়েছে। সেই সব অবস্থা থেকে সঠিক ইসলামকে তুলে ধরার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তিদের আগমন হয়েছে এবং তারা সেই ফিতনা রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছেন। যখন ইলমের দরকার তখন ইলম দিয়ে, যখন শাসন দিয়ে দরকার তখন শাসক দিয়ে, যখন যুদ্ধের দরকার তখন যুদ্ধ করে, যখন ইলম-জিহাদ দুটোই দরকার তখন ইলম-জিহাদ দুটি দিয়েই ইসলামকে সমুন্নত করা হয়েছে। প্রথমটির উদাহরণ হচ্ছে ইমাম আবু হানিফা, আহমাদ ইবনে হাম্বল, ইমাম শাফেয়ী, উমার ইবনে আব্দুল আযীয, আবুল হাসান আশআরী, ইমাম গাজ্জালী, মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী, আব্দুল কাদির জিলানী, মুজাদ্দিদে আলফে সানী। পরেরটির উদাহরণ হচ্ছে সালাহউদ্দিন আইয়ুবী, সুলতান মাহমুদ গাজনাবী, তারেক বিন জিয়াদ। আর তার পরেরটির উদাহরণ হচ্ছে ইমাম ইবনে তাইমিয়া, আহমেদ শরহিন্দী ইত্যাদি যারা ইলমের দিক দিয়ে মুকাবিলা করার পাশাপাশি জিহাদের দিক দিয়েও মুকাবিলা করেছেন। ইসলামও অন্যান্য ধর্মের মতো পৃথিবী থেকে মিটে যেত, মিটে না গেলেও অন্যান্য ধর্মের মতো বিকৃতি হয়ে যেত, যদি না আল্লাহ এরকম বিশেষ ব্যক্তিদের না পাঠাতেন ও এরকম হক জামাত তৈরি না করে দিতেন। যাদের নাম এসেছে তাদের প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা অবদান রয়েছে ইসলামের যা ঐ বইতে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলামকে সংস্কার করার পর অনেকদিন তা সেই অবস্থায় থাকার পর আবার তাতে বিভিন্ন ক্ষতিসাধন হয়, যেমন বিভিন্ন ফিরকা তৈরি, ফিতনা তৈরি, বিধর্মীদের দ্বারা আঘাত, বিদআত তৈরি, মানুষ গোমরাহ হওয়া শুরু করা ইত্যাদি ভাবে। তখনই আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়িত হয় যে, এই ধর্ম সমুন্নত থাকবে, বিজয়ী থাকবে। যেমন সালাহউদ্দীন আইয়ুবী বাইতুল মুকাদ্দাসকে পুনরুদ্ধার করেন সেটি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার প্রায় ৯০-১০০ বছর পর। অর্থাৎ মুসলিমদের একটি বিজয় অর্জিত হয়। আর তা অর্জনে ভুমিকা থাকে বিশেষ ব্যক্তিদের মাধ্যমেই যেমন সালাহউদ্দিন। বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, মুসলিমরা আজ পৃথিবীর কোথাও নিরাপদ নয়, স্বাধীন নয়। সর্বশেষ মুসলিমদের শাসনব্যবস্থা ধ্বংস হয় ১৯২৪ সালে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত আর মুসলিমরা কোন বড় বিজয় পায়নি বা শাসনব্যবস্থা দাঁড় করাতে পারে নি। মুসলিম মনিষীদের মতে যখন ইসলামের বড় কোন ক্ষতি হয় তার একশত বছরের মাথায় একজন মুজাদ্দিদের আগমন ঘটে। তিনি দ্বীন ইসলামকে আবার সংস্কার করবেন। আর আল্লাহ সেরকম ব্যক্তি পাঠানোর ব্যাপারে বলেই দিয়েছেন এবং সেই হাদিসেরও বাস্তবায়নের কথা বলে দিয়েছেন যাতে বলা হয়েছে- সুতরাং যখন আমার উম্মতের উপর একশত বছর অতিবাহিত হয়ে যাবে তখন তাদের উপর আল্লাহ যা অঙ্গীকার করেছেন তা আসবে। অর্থাৎ বিজয় শুরু হবে!

১৯২৪ সালের পর ১০০ বছর তথা (২০২১ চন্দ্র হিসেবে) ২০২৪ সাল পূর্ণ হতে আর বেশি দেরি নেই। এরকম সময়েই এমন একজন ব্যক্তি আত্মপ্রকাশ করবেন যিনি দ্বীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করবেন এই দুনিয়াতে। এটিই আল্লাহর নিয়ম। এভাবেই তিনি করে এসেছেন যার ইতিহাস আমরা দেখে এসেছি। এভাবেই তিনি তার অঙ্গীকার পূর্ণ করবেন তথা ইসলামকে বিজয় করবেন। আল্লাহ তার দ্বীনকে মানুষের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠা করবেন। এজন্য তিনি বিশেষ ব্যক্তি ও দল তৈরি করে দিবেন যারা তার দ্বীন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাবে। আমরা বিশ্বব্যাপী সেই পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। আগামীতে ইসলামই হবে সকল মতের উপর সমুন্নত আর তার সময় খুব কাছেই। সেই হিসেব মতে, ২০২৪ সাল থেকেই মুসলিম বিজয়গাঁথা আবার শুরু হবে। আর এরকম সময়ে কোন ব্যক্তির আবির্ভাব হবে তা আমরা আগেই জেনে এসেছি।

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি অবশ্যই অবশ্যই পৃথিবী ততদিন ধ্বংস হবে না যতদিন না মানুষ পাঁচজন শাসকের দেখা পাবে। যারা আল্লাহর দ্বীনকে যুক্তি করে ধ্বংস করতে চাইবে। আর তারা পাঁচ শাসকই এক সাথে পৃথিবীতে উপস্থিত থাকবে। আমি (আবু হুরায়রা) বললামঃ হে আল্লাহর রসূল ! সে পাঁচজনের পরিচয় কী? তিনি বললেনঃ তাদের একজন এই পবিত্র ভূমিতে আসবে। যার নাম হবে আমার নামের মতো (মুহাম্মাদ)। সে আরবের দ্বীনকে হাস্যকর বানাবে। আর অভিশপ্ত (ইহুদী-খ্রিষ্টান) জাতিকে বন্ধু বানাবে। দ্বিতীয় সে বিশ্ব শাসক হবে। আর মুসলমানদের নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকবে। তৃতীয় জন হিন্দুস্তানের বাদশা, সে বন্ধু অঞ্চলের মুসলমানদের নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করবে। চতুর্থ জন, হিন্দুস্তানের দ্বিতীয় বাদশা। যে মুসলমানদের হত্যার শপথ নিয়ে শাসন ক্ষমতায় যাবে। আর মুসলিম হত্যায় সে উন্মাদ হয়ে পড়বে। পঞ্চম হলো একজন নারী শাসক, সে শাসন ক্ষমতা হাতে পেয়ে বা'আল দেবতার ইবাদত (অর্থাৎ পূর্বপুরুষদের পূজা) বৃদ্ধি করবে। আর মুশরিকদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে। আর মুসলমানদের হত্যা করবে। অথচ সে হবে মুসলমান। তখন দেখবে সেখানকার দুর্গম নামক অঞ্চলের এক দুর্বল বালক তাদের ষড়যন্ত্রের সমাপ্তি ঘটাবে এবং মুমিনদের বড় বিজয় আনবে।
-       (কিতাবুল আক্বিব ১৭২; আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ১৭৫)

এরপর লোকেরা এমন এক ব্যক্তির নেতৃত্বের উপর একমত হবে, যে দুর্বল চিত্ত ও লেংড়া হবে। (তার শাসনকাল দীর্ঘ হবে না।)
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪২৪৩ [ইঃ ফাঃ ৪১৯৫]; মিশকাত হাঃ একাঃ ৫২৯৩; সিলসিলাতুস সহীহাহ ৯৭২; মুসনাদে আহমাদ ৬১৬৮)

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, রসূল বলেছেন, শেষ জামানায় পথভ্রষ্ট আলেম বৃদ্ধি পাবে। আর তাঁরা দ্বীনকে মৃত্যুর অবস্থায় নিয়ে যাবে। ঠিক তখন আল্লাহ তা'আলা হযরত উমর (রা:) এর বংশ থেকে একজন বালককে পাঠাবেন। যার মাধ্যমে দ্বীন জীবিত (সংস্কারসাধন) হবে।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮০৬)

আল আদাবুল মুফরাদ গ্রন্থের বাংলা অনুবাদক সেই অনুবাদিত বইয়ের নিবেদক অধ্যায়ে লিখেছেন কিছুটা এরকম যে- বর্তমানে কোথাও ইসলাম কায়েম নেই। কুরআনের বিধান চলমান নেই। এভাবে দীর্ঘদিন চলতে পারে না। অচিরেই আবার কুরআনের বিধান প্রতিষ্ঠিত হবে

তিনিও ঠিকই বুঝেছিলেন যে, অচিরেই তা প্রতিষ্ঠিত হবে। এটা আল্লাহর ওয়াদা। তাই আমাদের সামনে সময় খুবই কম। আমরাও যেন হক জামাতের সাথে থেকে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে নিজেকে অংশীদার করতে পারি সেটারই চেষ্টা করতে হবে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ