৪.১১ হিন্দের যুদ্ধের আমীর ও সেনাপতি

 গাজওয়াতুল হিন্দ বা হিন্দের যুদ্ধ কখন হবে এটা আমরা জানতে পারলেও সেই যুদ্ধের নেতা বা আমীর বা সেনাপতি কে বা কারা হবেন সেটাই শেষ প্রশ্ন থেকে যায়। আমরা এই বিষয়ে গত সব পরিচ্ছেদে হিন্দের যুদ্ধ নিয়ে যত হাদিস বর্ণনা করেছি, তাতেই এ বিষয়ের উত্তর মোটামুটি পাওয়া যায় কোন সময়ের যুদ্ধে কে বা কারা নেতৃত্ব দিবে। একটি সাধারণ বিষয় ভাবুন। যেই যুদ্ধের ভবিষ্যৎবাণী ১৪০০ বছর আগেই করা হয়েছে, যার মর্যাদার কারণে রসূল অনুপস্থিত থেকেও নামকরণে গাজওয়া বলা হয়েছে এবং তাতে আগাম বিজয়ের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। যেই যুদ্ধের মর্যাদার কারণে রসূল এর সাহাবারাও অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিল, আর আফসোস করেছিল। যেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য আবু হুরাইরাহ (রা:) তার সকল সম্পদ ব্যয় করে করতে হলেও রাজি ছিল। যেই যুদ্ধের শহীদরা হবে উত্তম শহীদ, যেই যুদ্ধের গাজী তথা বিজয়ীরা হবে জাহান্নাম থেকে মুক্ত, সেই যুদ্ধের আমীর বা নেতা কি সাধারণ কেউ হবেন? আর তার পরিচয়ও কি অজ্ঞাত থাকতে পারে? এমনকি সেই যুদ্ধে মুসলিমদের দলে যারা থাকবে তারাও যেখানে সৌভাগ্যবান কারণ তারা এই মর্যাদার অধিকারী হচ্ছেন, সেখানে আমীর বা নেতা কি সাধারণ কেউ হতে পারে? অবশ্যই না। আল্লাহ তাআলা সেই যুদ্ধের আমীরকে মনোনীত করে, নির্দেশনা দিয়েই এই যুদ্ধ পরিচালনা করবেন, যার মাধ্যমে এই যুদ্ধে বিজয় আসবে। তাই এটা সাধারণভাবেই বোঝা যায় যে, সেই যুদ্ধের আমীর বা নেতা বা ইমাম আল্লাহ তায়ালা হতে মনোনীত হবেন। হাদিসেই স্পষ্টভাবে উল্লেখ এসেছে-

হযরত বুরায়দা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি, খুব শীঘ্রই মুশরিকরা তাদের বন্ধু অঞ্চলের মুসলমানদের উপর অত্যাচার বৃদ্ধি করে দেবে আর নির্বিচারে হত্যা করবে। তখন সেখানকার দূর্গম নামক অঞ্চল তথা বালাদি লিল উছরো থেকে একজন দুর্বল বালক তাদের মুকাবিলা করবে। আর তার নেতৃত্বেই মুমিনদের বিজয় আসবে। (গাজওয়াতুল হিন্দ বিজয়)। রাবি বলেন, তিনি আরো বলেছেন, তার একজন বন্ধু থাকবে যার উপাধী হবে সৌভাগ্যবান।
-       (আস সুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান ১৭৯১; আসারুস সুনান ৮০৩; আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮৮১)

হযরত আলী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল বলেছেন, অচিরেই হিন্দুস্তানের মুশরিকরা মুসলমিদের প্রতি নির্যাতন বৃদ্ধি করবে। সে সময়ে হিন্দুস্তানের পূর্ব অঞ্চল থেকে একজন নেতার প্রকাশ ঘটবে। যার নাম হবে মাহমুদ। পিতার নাম আব্দুল ক্বদির। সে দেখতে খুবই দুর্বল হবে। তার মাধ্যমে আল্লাহ হিন্দুস্তানের মুসলিমদের বিজয় দান করবেন।
-       (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ, অধ্যায়ঃ গাজওয়াতুল হিন্দ, ২৩০; ক্বাশ্ফুল কুফা ২৬১)

হযরত কাতাদাহ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলে পাক বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে মুশরিকদের সাথে মুমিনদের একটি জিহাদ হবে, আর সেই যুদ্ধের শহীদরা কতইনা উত্তম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল ! সেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিবেন কে? তিনি বললেন, উমর (রা:) এর বংশের এক দুর্বল বালক (মাহমুদ)।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৮৭)

হযরত হুযাইফা (রা:) বলেন, আমি আল্লাহর রসূল কে বলতে শুনেছি, মানুষের জীবনে এমন একটি সময় আসবে, যখন তারা বছরে দু এক বার বিপর্যস্ত হবে! যার একটি শুরু হবে বায়ু দ্বারা যা মুশরিকদের দূর্গ ক্ষতিগ্রস্তের মাধ্যমে! আর শেষ হবে দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে। আর এই দুর্ভিক্ষ শেষ হতেই মুশরিকরা একটি ফিতনা সৃষ্টি করবে! যার মুকাবিলা করার জন্য হিন্দুস্তানের পূর্ব অঞ্চল থেকে একদল মুসলিম ধাবিত হবে। কিন্তু মুশরিকরা তাদের এমন ভাবে হত্যা করবে যেমন ভাবে তোমরা এক নির্দিষ্ট দিনে (কুরবানীর দিন) পশুগুলোর উপর আল্লাহর নাম স্মরণ করো! ফলে তারা পরাজিত হবে। অনুরূপ আরেকটি মুসলিম দল মুশরিকদের দিকে ধাবিত হবে (মুকাবিলা করতে)। তাদের সাথে আল্লাহর সাহায্য থাকবে। তারাই বিজয়ী। একথা তিনি (রসূল ) তিন বার বললেন। অতঃপর বললেন, তাদের নেতা হবে দুর্বল! আহ্ প্রথম দলটির জন্য কতইনা উত্তম হতো যদি তারা তাদের নেতাকে গ্রহণ করতো! আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল ! তারা তাদের নেতাকে গ্রহণ করবে না কেন? তিনি বললেন, কেননা তারা সে সময় নিজেরাই নিজেদের যোগ্য মনে করবে!
-       (আখীরুজ্জামানা আল মাহাদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ১১৯)

হযরত বিলাল ইবনে রাবাহ (রা:) বলেন, রসূল বলেছেনঃ হিন্দুস্তান মুসলমানরা শাসন করবে। আবার তা মুশরিকরা দখল করবে এবং তারাই সেখানে তাদের সকল হুকুম প্রতিষ্ঠা করবে। আবার তা মুসলমানরা বিজয় করবে যাদের নেতা হবে মাহমুদ এবং সেখানে আল্লাহর হুকুম প্রতিষ্ঠিত হবে। আর তা ঈসা ইবনে মারিয়াম (আ.) পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত থাকবে। (প্রয়োজনীয় অংশ)
-       (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৭০৮; কিতাবুল আক্বিব ১৩৮)

হযরত আনাস (রা:) বলেন, রসূল বলেছেনঃ হিন্দুস্তান মুশরিকদের থেকে মুমিনরা বিজয় করবে। আর তাদের নেতা হবে মাহমুদ। হিন্দুস্তানে সে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে। (প্রয়োজনীয় অংশ)
-       (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৭০৯; কিতাবুল আক্বিব ১৪০)

এই হাদিসগুলো থেকে সহজেই বুঝা যায় যে, হিন্দুস্তানের কাঙ্ক্ষিত সেই মর্যাদাপূর্ণ যুদ্ধে আমীর বা নেতা থাকবেন, সেনাপতি থাকবেন যারা হবেন আল্লাহ তায়ালার মনোনীত বান্দা। যাদের পরিচয়ও আল্লাহ তায়ালা রসূলের এর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন যাতে আমরা তাদের সঠিক সময়ে খুঁজে বের করে তাদের মাধ্যমে হিন্দুস্তানের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারি। হিন্দুস্তানের যুদ্ধের আমীর ও সেনাপতির বিস্তারিত পরিচয় পরবর্তী অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ