৬.১৭ কালো ধোঁয়ার আজাব সাথে চরম দুর্ভিক্ষ

 অতঃপর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলো। সারা বিশ্বে যুদ্ধের কারণে সব কিছুই ধ্বংস-বিধ্বস্ত হয়েছে। চারিদিকে হাহাকার ও খাবার সঙ্কট। প্রযুক্তি ধ্বংস হয়ে মাটিতে মিশে গেছে আর নাই কোন ইন্টারনেটও। এর মধ্যেই আবার শুরু হবে ধোঁয়ার আযাব! কেয়ামতের বড় আলামতের একটি আলামত হচ্ছে এই ধোঁয়া। ধোঁয়া প্রকাশের বিষয়ে কুরআন-হাদিসে এসেছে। কুরআনে এসেছে,

فَارۡتَقِبۡ یَوۡمَ تَاۡتِی السَّمَآءُ بِدُخَانٍ مُّبِیۡنٍ

অতএব আপনি অপেক্ষা করুন সে দিনের, যেদিন স্পষ্ট ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হবে আকাশ
-       (সূরা দুখান, আঃ ১০)

এর তাফসীরে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) বলেছেন, এটি হয়ে গেছে মক্কার দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে (তখন ক্ষুধার কারণে আকাশে ধোঁয়ার মতো দেখত লোকজন)। আবার অন্য বর্ণনায় এসেছে এটি কেয়ামতের আলামত যা শেষ জামানায় দেখা যাবে। ইবনে কাছীরে রেওয়ায়েত করেছেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) নিজেই পরে বলেছেন উভয়টির কথাই এই আয়াতে বলা হয়েছে। একটি হয়েছে আরেকটি অর্থাৎ কেয়ামতের আলামত হিসেবে সারা বিশ্বে স্পষ্ট কালো ধোঁয়া দেখতে পাওয়ার বিষয়টি এখনো হয়নি, শেষ জামানায় কেয়ামতের আগে ঘটবে। হাদিসে এসেছে,

হুযায়ফা ইবনে উসাইদ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী তাঁর হুজরা থেকে আমাদের পানে উঁকি দিয়ে তাকালেন। আমরা তখন কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি বলেনঃ দশটি আলামত প্রকাশ না পাওয়া পর্যন্ত কিয়ামত হবে না। তন্মধ্যে দাজ্জালের আবির্ভাব, ধোঁয়া নির্গত হওয়া এবং পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া অন্তর্ভুক্ত।
-       (সহীহ, সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ২/৪০৪১; মুসলিম ২৯০১; তিরমিযী ২১৮৩; আবূ দাউদ ৪৩১১; আহমাদ ১৫৭০৮, ১৫৭১০)

ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব, কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ ও ইবনু হুজর (রহঃ) ..... আবু হুরাইরাহ (রা:) হতে বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ বলেনঃ ছয়টি ঘটনা সংঘটিত হওয়ার আগেই তোমরা নেক আমলে দ্রুততা অবলম্বন করো, তা হলো- (১) পশ্চিমাকাশ হতে সূর্যোদয় হওয়া, (২) ধোঁয়া উত্থিত হওয়া, (৩) দাজ্জাল আবির্ভাব হওয়া, (৪) দাব্বাহ, অদ্ভুত জন্তুর আত্মপ্রকাশ, (৫) খাস বিষয় [কারো ব্যক্তিগত মৃত্যু] ও (৬) আম বিষয়- সার্বজনিক বিপদ [জাতিগত কেয়ামত বা চূড়ান্ত]।
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২৮৭-(১২৮/২৯৪৭) [ইঃ ফাঃ ৭১৩০, ইঃ সেঃ ৭১৮২])

হযরত কাতাদাহ (রা:) বলেন, কিয়ামত কিভাবে হবে? যতক্ষণ না, আকাশ কালো ধোঁয়ায় ঘিরে যাবে।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮১৭)

অন্যত্র এসেছে- মাহদী বের হবে না যতক্ষন না অন্ধকার দেখতে পাও। *
-       (আল কাউলু মুখতাসার ফি আলামাত আল মাহদি আল মুনতাদার ৩-২৭)
-       * জুলমাতুন, অন্ধকার যা ধোঁয়ার কারণে হতে পারে। আর এই ধোঁয়া আকাশ ছেয়ে ফেললে তখন অন্ধকারই দেখা যাবে।

উমাইয়াহ্ ইবনু বিস্তাম (রহঃ) ..... আবু হুরাইরাহ্ (রা:) এর সূত্রে নবী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ছয়টি (আলামত সংঘটিত হওয়ার আগে) দ্রুত তোমরা নেক আমল করতে শুরু করো। তা হলো দাজ্জাল প্রকাশিত হওয়া, ব্যাপক ধোঁয়া দেখা দেয়া, দাব্বাতুল আরয (অদ্ভুত জন্ত) বের হওয়া, পশ্চিমাকাশ হতে সূর্যোদয় হওয়া, কিয়ামত এবং মাওত।
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২৮৮ [ইঃ ফাঃ ৭১৩১, ইঃ সেঃ ৭১৮৩])

আনাস ইবনে মালেক (রা:) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ বলেনঃ ছয়টি বিষয় প্রকাশিত হওয়ার পূর্বেই সৎকাজে অগ্রবর্তী হও। পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়, ধোঁয়া নির্গত হওয়া, দাববাতুল আরদ-এর আত্মপ্রকাশ, দাজ্জালের আবির্ভাব এবং বিশেষ বিপদ ও ব্যাপক বিপদ।
-       (সহীহ, সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ২/৪০৫৬; সহীহাহ ৭৫৯)

আবু হুরায়রাহ্ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেন: ছয়টি লক্ষণ প্রকাশ হওয়ার পূর্বে ভালো আমল অর্জনে তৎপর হও। ১. ধোঁয়া, ২. দাজ্জাল, ৩. দাব্বাতুল আরদ (মৃত্তিকাগর্ভ হতে বহির্ভূত জন্তু), ৪, পশ্চিমাকাশ হতে সূর্য উদিত হওয়া, ৫. সর্বগ্রাসী ফিতনাহ্ ও ৬. তোমাদের ব্যক্তিবিশেষের ওপর আরোপিত ফিতনাহ্।
-       (সহীহ, মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৬৫; সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ৭৫৯; সহীহুল জামি ৫১২৩; সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব ৩৩৫৪; মুসনাদে বাযযার ৬৩৯৪; মুসনাদে আহমাদ ৯২৬৭; আবূ ইয়া'লা ৫৬১৬; আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৪৪৯১; আল মু'জামুল আওসাত্ব ৮৪৯৮; আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৮৫৭৪)

হাদিসগুলো দেখলে দেখা যায় বিভিন্ন হাদিসে এই ধোঁয়ার প্রকাশকে বিভিন্ন সিরিয়ালে দিয়েছে। কোনটায় আগে বা কোনটায় অন্য আলামতের পরে। বিষয় হচ্ছে এখানে সিরিয়ালভাবে এই আলামতগুলো বর্ণনা করা হয়নি। তবে দুয়েকটি হাদিসে যেরকম সিরিয়ালভাবে বর্ণনা এসেছে সেটা সঠিক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বললে বলা যায়, পশ্চিম আকাশে সূর্যদ্বয়য় হচ্ছে কেয়ামতের সর্বশেষ আলামত কিন্তু দেখা যায় অনেক হাদিসে তা একদম প্রথমে বর্ণিত হয়েছে। এটি হওয়ার কারণ হয়তো হবে এই যে আলামতগুলো মনে রেখেছে কিন্তু তা বর্ণনার সময় সিরিয়ালভাবে মনে না থাকায় আগে পিছে বলেছে বা সেভাবেই বর্ণিত হয়েছে।

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে আধুনিক অস্ত্র ব্যবহারের পর যে ধ্বংস-বিধ্বস্ত হবে এর কারণে আকাশে প্রচুর ধোঁয়া জমবে। যার কারণে সূর্য দেখা যাবে না। এটি এত মারাত্মক হবে যে, তা পুরো আকাশকেই ছেয়ে থাকবে। এটি দিয়ে আল্লাহ আরেকটি আযাব দিবেন দুনিয়াবাসীকে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, অতএব তুমি অপেক্ষা করো সেই দিনের যেদিন আকাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হবে এবং তা আচ্ছন্ন করে ফেলবে মানব জাতিকে। এটা হবে এক যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। তখন তারা বলবেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এই শাস্তি হতে মুক্তি দিন আমরা ঈমান আনয়ন করবো। তারা কি করে উপদেশ গ্রহণ করবে? তাদের কাছে তো এসেছে সুস্পষ্ট একজন রসূল। অতঃপর তারা তাঁকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে বলেছেঃ সে তো শেখানো কথা বলছে, সে তো একজন পাগল। আমি আযাব একটুখানি সরিয়ে নিচ্ছি। কিন্তু এরপরও তোমরা পূর্বের ন্যায় আচরণ করবে। (সূরা দুখানঃ ১০-১৫)

আবু মালেক আশআরী (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূল বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে তিনটি বিষয়ে সতর্ক করছেন। (১) ধোঁয়া, যা মুমিনকে কেবল এক প্রকার সর্দিতে আক্রান্ত করে দেবে এবং কাফেরের শরীরের প্রতিটি ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করে প্রতিটি ছিদ্র দিয়ে বের হতে থাকবে (অর্থাৎ যন্ত্রণাদায়ক হবে)। (২) ভূগর্ভ থেকে নির্গত অদ্ভুত এক জানোয়ারের আগমণ। (৩) দাজ্জালের আগমন।
-       (আল-মুজামুল কাবির, ত্বাবরাণী- ৩/২৯২ হাদিস ৩৪৪০; জামেউল বয়ান, ইমাম তাবারী- ২৫/৬৮; তাফসীরে তাবারী; ইবনে কাছীর)

মাছরূক বলেন, আমরা আব্দুল্লাহ বিন মাসউদের কাছে বসা ছিলাম। এক লোক এসে বলতে লাগল, হে আবু আব্দুর রহমান! এক লোক বলে বেড়াচ্ছে যে, অচিরেই ধোঁয়ায় নিদর্শনটি আবর্তিত হবে। যন্ত্রনায় কাফেরদের দম বন্ধ হয়ে যাবে, মুমিনদের সর্দি জাতীয় অনুভব হবে।
-       (সহীহ ইবনে হিব্বান ৪৭৬৪)

অর্থাৎ, ৩য় বিশ্বযুদ্ধের পরে, এর ইফেক্ট হিসেবে ধোঁয়ায় আকাশ ছেয়ে যাবে। আর এর কারণেও দুনিয়াবাসীকে কষ্ট পোহাতে হবে যেমনটি হাদিসে এসেছে, মুমিন আর কাফিরদের জন্য আলাদাভাবে এটি প্রভাব ফেলবে। একারণেই বলা হয়েছে এটি প্রকাশ পাওয়ার আগেই নেক কাজ করতে হবে।

ব্যাপক দুর্ভিক্ষ

হযরত জাফর সাদিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, "ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের পূর্বে অবশ্যই এমন একটি বছর অতিবাহিত হবে, তখন মানবজাতি তীব্র ভাবে খাদ্যের অভাবে কষ্ট পেতে থাকবে, তাদেরকে হত্যা করার দরুন আতংক তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে"।
-   (বিহারুল আনোয়ার, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ২২৯; আসরে জুহুরী, পৃষ্ঠা ১৮৯)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ