৩.১১ গাজওয়াতুল হিন্দ খুবই নিকটে!

 ৩.১১ গাজওয়াতুল হিন্দ খুবই নিকটে!

পৃথিবীর আজ কোথাও বাকি নেই যেখানে ইসলাম ও মুসলিমরা শোষিত, নির্যাতিত-নিপীড়িত হচ্ছে না। যেদিকেই তাকানো হোক না কেন তা আমরা দেখতে পাচ্ছি। আরবের দ্বীনকে হাস্যকর বানিয়েছে তাদের বর্তমান শাসকরা। ইসলামের লেশটুকু সেখানে নেই। সিরিয়ার দিকে তাকালে দেখতে পাই শুধু যুদ্ধ আর তার ফলে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা আর দুর্ভিক্ষ। ইয়েমেনের দিকে তাকালে দেখতে পারি স্বার্থকেন্দ্রিক এক অবরোধ যা পুরো দেশকেই ধ্বংস করে দিয়েছে, দুর্ভিক্ষে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে শতশত শিশু। ফিলিস্তিন-জেরুজালেমের দিকে তাকালে দেখতে পারি সেখানে অভিশপ্ত ইহুদী জাতিরা ঘাটি গেড়ে বসেছে আর চলছে দিন-রাত মুসলিমদের জীবন নিয়ে খেলা ও নারীদের সম্ভ্রম নিয়ে তামাশা। পবিত্র আল-আকসা মসজিদও সেই অভিশপ্ত ইহুদী জাতি ইসরাইলের হাতে। তুর্কি মুসলিমরা আজ হয়েছে মোডারেট, তাল মিলাচ্ছে প্রতিযোগিতায় আমেরিকার সাথে। তাদের দেখে বোকা মুসলিমরা ইসলাম শিখতে আগ্রহী হচ্ছে। চীনে মুসলিমদের উপর চলছে অমানবিক নির্যাতন, উইঘুরের কান্না দেওয়াল টপকে আসতে পারছে না আমাদের কান পর্যন্ত। সর্বশেষ লেবানন-মিশরও সেই একই জঞ্জালে পরিপূর্ণ হচ্ছে। সব স্থানেই আজ ইসলাম ও মুসলিমরা কোণঠাসা। ইরাক-ইরানের কথা আর নাই বললাম। কাশ্মীরের মত স্বাধীন ভূমি হচ্ছে পরাধীন। মিয়ানমার আজ মুসলিম শূন্য। দেশান্তর হয়ে জীবন কাটাচ্ছে রোহিঙ্গা নামের এক যাযাবর জাতি হয়ে। আর অন্যান্য মুসলিম দেশগুলো? কেউ এই ইহুদী-খ্রিষ্টান পরিচালিত বিশ্ব ব্যবস্থাকে মেনে নিয়ে তাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে বা চলার চেষ্টা করছে যেমন ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া। আর যারা বিরোধিতা করছে বা ইসলামকে আঁকড়ে ধরে আছে তারা রয়েছে এক সংকটপূর্ণ অবস্থায়, যেমন আফগানিস্তান। আর মুসলিমদের মধ্যে মতবিরোধ, দাঙ্গা যেন এই অবস্থাকে আরো অনুকূলে এনে দিচ্ছে। যেখানে তাদের জান-মালের কোন নিশ্চয়তাই নেই। সবাই তাকিয়ে আছে কবে আল্লাহর সাহায্য আসবে, কবে আল্লাহ একজন রাহাবার পাঠাবে ও তাদের মুক্ত করবে এই অবস্থা থেকে। এ যেন কুরআনের সেই আয়াতকেই বাস্তবায়িত করতে যাচ্ছে, যাতে তাদের দোয়া বলে দেওয়া হয়েছে। তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর পথে এবং অসহায় নারী-পুরুষ আর শিশুদের (রক্ষার) জন্য লড়াই করবে না, যারা দুআ করছে- হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এ জালিম অধ্যূষিত জনপথ হতে মুক্তি দাও, তোমার পক্ষ হতে কাউকে আমাদের বন্ধু/অভিভাবক বানিয়ে দাও এবং তোমার পক্ষ হতে কাউকে আমাদের সাহায্যকারী করে দাও। (সূরা আন-নিসা, আয়াতঃ ৭৫)

আজ যেন এই দোয়া পৃথিবীর চারিদিকে শোনা যাচ্ছে। কে হবে তাদের সাহায্যকারী? কে আছে যে আল্লাহর পক্ষ হতে সেই সাহায্যকারী দলের অন্তর্ভুক্ত হতে চায়? তারা ধৈর্যধারণ করছে আর না হয় মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে যতক্ষণ না কোন রাহবার বা সাহায্যকারী আসে তাদের সাহায্য করতে! আসুন বাস্তবতায় ফিরে যাই।

হিন্দ ভূমির দেশ ভারতে নতুন করে ইসলাম ও মুসলিমকে সরানোর জন্য, ধ্বংস করার জন্য চলছে নতুন নতুন আইন পাশ। চলছে গরু খাওয়ার অপরাধে জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ও শেষে নৃশংসভাবে ভাবে হত্যা। বাড়ি-ঘর, জান-মাল, নারীসম্ভ্রম আজ সেখানেও অনিরাপদ যেমনটি আর সারা বিশ্বে দেখা যাচ্ছে। এভাবেই কি চলতে থাকবে? আর এরপর এখন সেটি হিন্দ ভূমির দেশ বাংলাদেশেই দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে যে, পৃথিবীর সব জায়গাতে ইসলামের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র চলছে, সিরিয়াল দিয়ে তার শেষ আঘাত, শেষ তীর, শেষ ছোবল যেন বাংলাদেশেই পরছে। কিন্তু এটা কি জানেন? হিন্দ ভূমির এই দেশ থেকেই আবার আস্তে আস্তে ইসলাম বিজয় হওয়া শুরু হবে? যেই বিজয় খোরাসান হয়ে ছড়িয়ে যাবে সারাবিশ্বে, কালো পতাকা বের হবে যা বাইতুল মুকাদ্দাসে উড়ানো হবে! এটা মোটেও কল্পনা নয়! এটিই সেই নববী ভবিষ্যৎবাণী যার নাম হিন্দুস্তানের যুদ্ধ! এই হিন্দ নামক এলাকাই সারাবিশ্বে সর্বপ্রথম ইসলামের বড় বিজিত এলাকা হবে, আর তা হবে এই হিন্দের যুদ্ধ দিয়েই যার নামই হাদিসে এসেছে গাজওয়াতুল হিন্দ। সারা পৃথিবীতে এখন শুধু মাত্র আফগানিস্তানের খোরাসানী দলটি ছাড়া ও খোরাসানীদের সাহায্যকারী দল ছাড়া আর কেউ ইসলামের উপর বাতিলের বিপক্ষে সোচ্চার নেই। তারাও হক জামায়াতের একটি বড় অংশ এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই! হাদিসে এসেছে-

হযরত আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রসূল ﷺ বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের মুসলমানদের উপর ইহুদী-নাসারাগণ অত্যাচার বৃদ্ধি করে দিবে। তখন কেবল খোরাসানীরাই তাদের মোকাবেলায় সুদৃঢ় থাকবে। এরূপ হিন্দুস্তানের মুশরিকরাও মুসলিমদের প্রতি নির্যাতন বৃদ্ধি করে দেবে। সে সময়ে হিন্দুস্তানের পূর্ব ভূখন্ডের দূর্গম নামক একটি অঞ্চল থেকে একজন দুর্বল বালক বা যুবকের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। যার নাম হবে মাহমুদ। তার পিতার নাম আব্দীল (নামে আব্দিল বা আব্দুল থাকবে)। সে মুসলিমদের নেতৃত্ব দিয়ে হিন্দুস্তান বিজয় করবে।
-   (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ২৩২)

আমাদের দেশ ও ভারতীয় উপমহাদেশ যে গতিতে এগোচ্ছে এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র চলছে তার অবসান হবে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমেই। হাদিসে এসেছে এ ব্যাপারে-

হযরত কাতাদাহ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলে পাক বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে মুশরিকদের সাথে মুমিনদের একটি জিহাদ হবে, আর সেই যুদ্ধের শহীদরা কতইনা উত্তম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল ! সেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিবেন কে? তিনি বললেন, উমর (রা:) এর বংশের এক দুর্বল বালক।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৮৭)

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি অবশ্যই অবশ্যই পৃথিবী ততদিন ধ্বংস হবে না যতদিন না মানুষ পাঁচজন শাসকের দেখা পাবে। যারা আল্লাহর দ্বীনকে যুক্তি করে ধ্বংস করতে চাইবে। আর তারা পাঁচ শাসকই এক সাথে পৃথিবীতে উপস্থিত থাকবে। আমি (আবু হুরায়রা) বললামঃ হে আল্লাহর রসূল ! সে পাঁচজনের পরিচয় কী? তিনি বললেনঃ তাদের একজন এই পবিত্র ভূমিতে আসবে। যার নাম হবে আমার নামের মতো (মুহাম্মাদ)। সে আরবের দ্বীনকে হাস্যকর বানাবে। আর অভিশপ্ত (ইহুদী-খ্রিষ্টান) জাতিকে বন্ধু বানাবে। দ্বিতীয় সে বিশ্ব শাসক হবে। আর মুসলমানদের নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকবে। তৃতীয় জন হিন্দুস্তানের বাদশা, সে বন্ধু অঞ্চলের মুসলমানদের নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করবে। চতুর্থ জন, হিন্দুস্তানের দ্বিতীয় বাদশা। যে মুসলমানদের হত্যার শপথ নিয়ে শাসন ক্ষমতায় যাবে। আর মুসলিম হত্যায় সে উন্মাদ হয়ে পড়বে। পঞ্চম হলো একজন নারী শাসক, সে শাসন ক্ষমতা হাতে পেয়ে বা'আল দেবতার ইবাদত (অর্থাৎ পূর্বপুরুষদের পূজা) বৃদ্ধি করবে। আর মুশরিকদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে। আর মুসলমানদের হত্যা করবে। অথচ সে হবে মুসলমান। তখন দেখবে সেখানকার দুর্গম নামক অঞ্চলের এক দুর্বল বালক তাদের ষড়যন্ত্রের সমাপ্তি ঘটাবে এবং মুমিনদের বড় বিজয় আনবে।
-       (কিতাবুল আক্বিব ১৭২; আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ১৭৫)

উপরের বর্ণিত হাদিস থেকে সহজেই বোঝা যায় যে, সেই যুদ্ধটি কোন সময়ে হবে। হাদিসে বর্ণিত পাঁচ শাসকই এখন বর্তমান। তারা ইসলামকে কোণঠাসা করে, ষড়যন্ত্র করে শেষ করতে চাইছে। আজ দেশে যে রাজনৈতিক দলেরা তাদের পূর্বপুরুষ তথা নেতাদেরকে যেমনভাবে ভক্তি-শ্রদ্ধা করছে ও তাদের অনুরূপ আদর্শ লালন করছে যা বা'আল দেবতার পূজার মত। বা'আল দেবতার পূজা মানে পূর্বপুরুষদের পূজা করা। আজ আমরা চারিদিকে দেখতে পাচ্ছি মূর্তি দিয়ে সারা দেশ ভরে গেছে, তাদের গত হওয়া নেতাদের আদর্শ চর্চার জন্য জাতীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত চলছে শ্রদ্ধা করার নামে শিরকি পূজা। এ যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। ইতিহাসে এই একই ভাবে ইলিয়াস (আঃ) নবীর জামানায় মানুষ এরকম পূর্বপুরুষদের পূজায় লিপ্ত হতো। সেই দেবতার নামই ছিল বা'আল দেবতা। আজ যারা এই বা'আল দেবতার পূজার বিরোধিতা করছে, শিরক থেকে বেঁচে থাকছে, ঈমানে অটল থেকে সর্বক্ষণ মুসলিম উম্মাহ এর জন্য চিন্তায় ব্যস্ত, তাগুতকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে মূল ইসলামের ছায়ায় প্রবেশ করতে চাচ্ছে, ঠিক তখনই তাদের উপর নেমে আসছে কঠিন নিপীড়ন-অত্যাচার। হাদিসে এ ব্যাপারে এসেছে-

হযরত আলী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল বলেছেন, অচিরেই হিন্দুস্তানের মুশরিকরা মুসলমিদের প্রতি নির্যাতন বৃদ্ধি করবে। সে সময়ে হিন্দুস্তানের পূর্ব অঞ্চল থেকে একজন নেতার প্রকাশ ঘটবে। যার নাম হবে মাহমুদ। পিতার নাম আব্দুল ক্বদীর। সে দেখতে খুবই দুর্বল হবে। তার মাধ্যমে আল্লাহ হিন্দুস্তানের মুসলিমদের বিজয় দান করবেন।
-       (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ২৩০; ক্বাশ্ফুল কুফা ২৬১)

কিন্তু সবার জানা উচিত রাত যত গভীর হয়, ভোর তত নিকটে আসে। যেই যুদ্ধে আমাদের থেকে অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছে যোগদান করার ব্যাপারে, যেই যুদ্ধে আমাদের বিজয়ের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে, যেই যুদ্ধের শহীদদের উত্তম মর্যাদাপূর্ণ শহীদ বলা হয়েছে, যেই যুদ্ধের গাজীদের জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যাবে, যেই যুদ্ধের ইমাম, নেতা বা আমীর হবেন আল্লাহর মনোনীত একজন ব্যক্তি, যিনি হবেন ইমাম মাহদী এর খিলাফত প্রতিষ্ঠার সহযোগী, সেই যুদ্ধে আমরা অবশ্যই অবশ্যই যোগদান করবো ইংশাআল্লাহ! আর এটি আমাদের খুবই নিকটে! সেই যুদ্ধের নেতা হবে ইমাম মাহমুদ হাবীবুল্লাহ! যার কথা বলা রয়েছে শাহ্‌ নিয়ামাতুল্লাহ (রহঃ) এর কাসিদাতে, আশ-শাহ্‌রান এর আগামী কথনে, যার কথা বলা হয়েছে বিভিন্ন হাদিসে, যার কথা স্বয়ং আমাদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ নিজ মুখে বলে গেছেন! হাদিসে এসেছে-

হযরত আনাস (রা:) বলেন, রসূল বলেছেনঃ হিন্দুস্তান মুশরিকদের থেকে মুমিনরা বিজয় করবে। আর তাদের নেতা হবে মাহমুদ। হিন্দুস্তানে সে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে। আর তার স্বাভাবিক মৃত্যু হবে। (প্রয়োজনীয় অংশ)
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৭০৯; কিতাবুল আক্বিব ১৪০)

আমরা পরিস্থিতি দেখে ও হাদিসের বলা সময়-কাল দেখে এটা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি যে সেই কাঙ্ক্ষিত হিন্দের যুদ্ধ আমাদের সামনেই অপেক্ষা করছে। আমাদেরকে দ্রুতই এই হিন্দের যুদ্ধের কাফেলায় জামায়াত বদ্ধ হতে হবে ও প্রস্তুতি নিতে হবে, যেই জামায়াতের নেতার নাম হবে মাহমুদ, তার পিতার নাম হবে আব্দুল কাদির যিনি হচ্ছেন ইমাম মাহদী এর খিলাফত প্রতিষ্ঠার অন্যতম সহযোগী ইমাম, এই জামানার মুজাদ্দিদ ও আমীরুল মুজাহিদীন। তার সহচরের নাম হবে শামীম বারাহ যিনি হচ্ছেন সাহেবে কিরান বা প্রজন্মের সৌভাগ্যবান ও হিন্দের যুদ্ধের মূল সেনাপতি। আমাদের কাঙ্ক্ষিত সেই দলটি খুব দ্রুতই খুঁজতে হবে ও জামায়াত বদ্ধ হতে হবে। সর্বশেষ আগামী কথনের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্যারা উল্লেখ করতে চাই-

প্যারাঃ (৫)

প্রস্তুত নিবে ক্ষুদ্র সেনারা,
"শীন"-"মীম" এর নীড়ে।
দিয়ে জয় গান আল্লাহ মহান,
আঘাত হানিবে শত্রুর ঘাড়ে।

আর হিন্দুস্তানের ২য় যুদ্ধটি নিয়ে আলোচনা অন্য পরিচ্ছেদে থাকবে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ