৬.১৯ চিরতরে আধুনিকতার ধ্বংস

 বর্তমান যুগ হচ্ছে আধুনিকতার চূড়ান্ত রূপ। এই আধুনিকতাই ধ্বংস হয়ে যাবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে এবং পৃথিবী সেই আগের ঘোড়া-তরবারীর যুগে ফিরে যাবে। এ ব্যাপারে অসংখ্য হাদিস এসেছে। বিভিন্ন আলেমগণও তাদের বইতে এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেছেন। মাহদীর যুগ ও তার পরবর্তী সময়ের হাদিসগুলো দেখলেই বুঝা যায় তখন যুদ্ধগুলো ঘোড়া-তরবারী দিয়ে হবে। এমন কি হাদিসে এসেছে জয়তুন গাছের সাথে ঘোড়া বাঁধার ব্যাপারেও। ইমাম মাহদীর পূর্বেই আধুনিক বিশ্বের অস্তিত্ব শেষ হয়ে যাবে। আমরা ভাবি যে, যখন ইমাম মাহদী আসবেন, তখন আমরা তো তাকে ঘরে বসে থেকেই টেলিভিশন-ফোন ইত্যাদি মিডিয়া-মাধ্যমে দেখে নিবো। শুধু তাই নয়, আধুনিক বিশ্বের অগ্রগতি/আবিষ্কারকে অনেকেই "দাজ্জালের সহিত" তুলনা করি আর বলি যে এগুলো দাজ্জালের কাজ। সেই সূত্র থেকে এটাও ভাবি, ঈসা (আঃ) যখন আসমান থেকে অবতরণ করবেন তখনও আধুনিক বিশ্বের সুবাদে তা আমরা মিডিয়ায় দেখতে পাবো। সর্বপরি, পৃথিবী তার নিজ অগ্রগতিতে দিন দিন অগ্রসর হতে থাকবে। এইগুলো কখনোই শেষ হবে না কেয়ামত পর্যন্ত। কিন্তু এটা একেবারেই ভুল ধারণা। এটাই এখানে দলিল সহ উল্লেখ করা হল যে, 'কেয়ামাত পর্যন্ত নয় বরং ইমাম মাহদীর পূর্বেই আধুনিক বিশ্ব ধ্বংস হবে এবং তিনি আসবেন প্রাচীন যুগের ন্যায় একটি পৃথিবীতে'। হাদিসে এসেছে-

হযরত ফিরোজ দায়লামী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আখেরী জামানায় ইমাম মাহদীর পূর্বে ইমাম মাহমুদ এর প্রকাশ ঘটবে। সে বড় যুদ্ধের শক্তির যোগান দিবে। তার জামানায় মহাযুদ্ধের (৩য় বিশ্বযুদ্ধে) বজ্রাঘাতে (আনবিক অস্ত্রে) বিশ্বের অধ্বঃপতন হবে এবং বিশ্ব এই সময়ে ফিরে আসবে (অর্থাৎ আধুনিকতা ধ্বংস হয়ে প্রাচীন যুগে ফিরবে)। (প্রয়োজনীয় অংশ)
-       (আসরে যুহরি ১৮৭ পৃঃ; তারিখে দিমাশাক; ইলমে তাছাউফ; ইলমে রাজে; বিহারুল আনোয়ার)

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, রসূলে পাক বলেছেন, আমার বংশের ইমাম মাহদী ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে বিশ্ব শাসন ক্ষমতায় আসবেন।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮১৫)

হযরত মুহাম্মাদ ইবনে আলী হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন অচিরেই মক্কার আশ্রয়প্রার্থীর দিকে সত্তর হাজার সৈন্য প্রেরণ করা হবে। তাদের সম্মুখে কইসের এক ব্যক্তি থাকবে। এমনকি যখন তারা ছানিয়া পৌঁছাবে তখন তাদের শেষ ব্যক্তি প্রবেশ করবে। আর সেখান থেকে তাদের প্রথম জন বের হবে না। হযরত জিবরাঈল (আঃ) খোলা প্রান্তরকে ডেকে বলবেন- 'হে খোলা প্রান্তর! হে খোলা প্রান্তর! তার আওয়াজ পূর্বে পশ্চিমে সকলেই শুনবে'। তাদেরকে গ্রাস কর। ফলে তাদের কোন মঙ্গল থাকবে না (অর্থাৎ সুফিয়ানীর সৈন্যগণ ধ্বসে যাবে)। পাহাড়ে অবস্থানরত একমাত্র ছাগলের রাখাল ব্যতীত তাদের ধ্বংসের কোন প্রকাশ্য আলামত থাকবে না। কেননা যখন তারা মাটিতে দেবে যাবে তখন সে তাদেরকে দেখবে। অতঃপর সে তাদের ব্যাপারে সকলকে সংবাদ দিবে। যখন আশ্রয়প্রার্থী (মাহদী) তাদের ব্যাপারে শুনতে পাবে তখন সে বের হয়ে যাবে। *
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৩৭)
-       * উক্ত হাদিস বলছে একজন রাখাল যে কিনা ছাগল চড়াতে পাহাড়ে যাবে, তখন সে দেখতে পাবে যে, জমিন ধ্বসে গেলো। মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তি এলাকায়, আধুনিক বিশ্বে এভাবে ছাগল চড়াতে যাওয়া একটু অন্যরকম দেখায় তাই না?

হযরত আলী (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, যখন ঐ সমস্ত লোককে (মাহদী ও তার সাথীদের) অনুসন্ধানের জন্য সৈন্য অবতরণ করবে (সুফিয়ানীর পক্ষ থেকে) যারা (মদিনা থেকে) মক্কার উদ্দেশ্যে বের হয়েছে। তখন তারা (সৈন্যদল) একটি খোলা প্রান্তরে অবতরণ করবে যার নাম বায়দাহ। আর তখনই উক্ত খোলা প্রান্তর তাদের নিয়ে ধ্বসে যাবে। এবং তাদের শেষ করে দিবে। আর আল্লাহ তায়ালার কথা (এই দিকে ইঙ্গিত করে) "যদি তুমি দেখতে যখন তারা ভীত বিহ্বল হয়ে পড়বে। তখন কোন অব্যহতি থাকবে না। আর তাদেরকে নিকটবর্তী স্থান হতে পাকড়াও করা হবে (সূরা সাবা, আঃ ৫১)।"

আর সৈন্যদল থেকে এক ব্যক্তি উটের সন্ধানে বের হবে। অতঃপর ফিরে আসবে। কিন্তু তাদের একজন কেও পাবে না। তাদের অনুভূতিও পাবে না (তাদের ঘ্রাণও পাবে না)। আর এই ব্যক্তি যে মানুষের নিকট তাদের ব্যাপারে সংবাদ দিবে। *
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ)
-       * উক্ত হাদিস বলছে, যে সৈন্যদল বায়দাহ প্রান্তের ধ্বসে যাবে তাদের একজন তখন সেখান থেকে একটি উট খুঁজতে গিয়ে বাইরে থাকবে। পরে ফিরে এসে দেখবে বায়দাহ প্রান্তর ধ্বসে গেছে। আধুনিক যুগ থাকলে কেন উট ব্যবহার করবে? যদি কেউ ব্যাখ্যা করে যে এটা অন্য বাহন বা মোটরসাইকেল, তাহলে প্রশ্ন আবার, সেই মোটরসাইকেল হারিয়ে যাবে নিজে থেকেই, কিভাবে? আবার লোক খুঁজতে যেয়ে পিছে পড়বে, তাকে খুঁজাও লাগবে?

হযরত যামরা ইবনে হাবীব (র) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন সুফিয়ানী তার অশ্বারোহী বাহিনী ও সৈন্যদল প্রেরণ করবে (অর্থাৎ সুফিয়ানির সৈন্যরা ঘোড়ার পিঠে চড়ে বের হবে)। তারা খোরাসানের আম্মাতুশ শিরকে ও পারস্য ভুমিতে পৌছবে। অতঃপর পূর্বাঞ্চলের অধিবাসীরা তাদের সাথে বিদ্রোহ করবে। ফলে তারা তাদের সাথে যুদ্ধ করবে। আর তাদের সাথে বিভিন্ন জায়গায় অনেক যুদ্ধ হবে। যখন তাদের মাঝে যুদ্ধ বিগ্রহ দীর্ঘস্থায়ী হবে তখন বনু হাশেমের এক ব্যক্তির নিকট বাইয়াত গ্রহণ করবে। আর সে সেদিন পূর্বাঞ্চলের একেবারে শেষে থাকবে। অতঃপর সে খোরাসানবাসীদের নিয়ে বের হবে। উক্ত দলের সম্মুখে থাকবে বনু তামিমের আযাদকৃত গোলাম। সে হবে হলুদ বর্ণের, পাতলা দাড়ি ওয়ালা। পাঁচ হাজারের মধ্যে (বাহিনী নেতৃত্ব দিয়ে) তার দিকে বের হবে। যখন তার নিকট তার বের হওয়ার খবর পৌঁছবে তখন সে তার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করবে এবং তাকে সম্মুখে দিবে। সেদিন যদি তাদের সামনে রাওয়াসীর পাহাড়ও আসে তাহলে সেটিকেও মিটিয়ে দিবে। অতঃপর তার সাথে সুফিয়ানীর সৈন্যদের সাথে দেখা হবে। অতঃপর সে তাদের পরজিত করবে। আর তাদের থেকে বিশাল এক অংশকে সেদিন হত্যা করবে। এমনিভাবে তাদেরকে এক এলাকা হতে আরেক এলাকায় পরাজিত করতে থাকবে। এমনকি তাদের ইরাকের দিকে পরাজিত করে দিবে।

অতঃপর, তাদের মাঝে ও সুফিয়ানীর অশ্বারোহী (ঘোড়ার পিঠে বসে থাকা) সৈন্যদের মাঝে যুদ্ধ হবে। আর সে যুদ্ধে সুফিয়ানীর বিজয় হবে। আর হাশেমী (মানসূর) পালায়ন করবে। আর শুয়াইব ইবনে সালেহ গোপনে বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে বের হয়ে যাবে। সে মাহদীর আবাসস্থল গোছাতে থাকবে, যখন তার নিকট সিরিয়ায় মাহদীর অভির্বাবের খবর আসবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯১৫)

আরতাত (রহ:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সুফিয়ানী হচ্ছে, প্রাথমিক অবস্থায় কালো এবং হলুদ ঝান্ডার অধিকারীদের মধ্যে যে যুদ্ধ হবে সেখানে সে মৃত্যুবরণ করবে। পশ্চিম বাইছানের মুনুদিরুন নামক স্থানে লাল উটের উপর আরোহন করা অবস্থায় আত্নপ্রকাশ করবে। তার মাথায় একটি মুকুট থাকবে। বড় বড় দলকে একাধিকবার পরাজিত করবে। অতঃপর নিজেও মারা যাবে।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮১০)

হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন মাহদীর দিকে তার পরিবার হতে পূর্বাঞ্চলে এক ব্যক্তি বের হবে। তার কাঁধে আঠারো মাস "তরবারী" থাকবে। সে যুদ্ধ করবে এবং অনুসরণ করবে অর্থাৎ যুদ্ধ করতে থাকবে। এবং বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে অগ্রসর হতে থাকবে। সেখানে পৌছানোর পূর্বেই সে মারা যাবে। সে বাইতুল মুকাদ্দাসে পৌছতে পারবে না। *
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯২০)
-       * মাহদীর পূর্বেই তার এক আত্মীয় যুবক ১৮ মাস তরবারী নিয়ে যুদ্ধ করবে, বিভিন্ন জায়গায়। আধুনিকতায় তরবারী যুদ্ধটা কখনো হতে পারে না।

হযরত আবু উমাইয়া কালবী (রহ:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কালো ঝান্ডা বাহীরা যুদ্ধে লিপ্ত হবেন, তাদের ভিতর থেকে সাত জনের একটা কাফেলার আত্মপ্রকাশ হবে। এবং গ্রাম বাসিদের কাছে তার সাহায্যের আবেদন করে লোক প্রেরণ করবে। তারা সরাসরি অস্বীকার করবে। এদিকে বনুল আব্বাছের অভিভাবকত্ব গ্রহণ কারীর কাছে তাবরিয়া নামক স্থানে তার আগমনের সংবাদ পৌছে যায়। তখন তার উদ্দেশ্যে বিশাল বাহিনী প্রেরণ করে। তারা পরস্পরের মুখোমুখি হলে প্রত্যেক সৈন্য তার প্রতিপক্ষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে দুই দলের প্রধানদ্বয়ও একে অপরের উপর আক্রমন করবে। এবং তাকে সবকিছু জানাবে। তখন খারেজী এবং তার সাথের লোকজন টীলার দিকে অবস্থিত বড়ই গাছের দিকে ধাবিত হবে এবং তার ছায়ায় আশ্রয় নিবে। এসময় গ্রাম বাসিরা এসে তার হাতে হাত রেখে বাইয়াত গ্রহণ করবে এবং তার সাথে ভ্রমন করতে থাকবে। আফহাওয়ানা নামক স্থানে পৌছলে বুহাইরায়ে তাবরিয়্যাহ কাছাকাছি স্থানে তাদের মধ্যে তীব্র লড়াই হবে। তাদের রক্তে সমুদ্রের পানি পর্যন্ত লাল হয়ে যাবে। অতঃপর তারা পরাজিত হবে। জাবিয়া নামক স্থানে আবারো যুদ্ধ সংঘটিত হবে, যার কারনে জাবিয়া নামক স্থানের আশেপাশের প্রায় পাঁচ মাইল পর্যন্ত এলাকা ধ্বংসস্তুপে পরিনত হবে। ঐ সময় দূরবর্তী এলাকার লোকজনের জন্য যেন আশীর্বাদ হবে। সেখানেও তারা পরাজিত হবে আবারো তারা দিমাশকে এসে মিলিত হবে। সেখানে উভয় দলের মাঝে ভয়াবহ লড়াই হবে। এক পর্যায়ে ঘোড়ার পায়ের গিট পর্যন্ত রক্তের মধ্যে ডুবে যাবে এবং তারা পরাজিত হবে। *
-       (যঈফ জিদ্দান, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৭০)
-       * দেখা যাচ্ছে সুফিয়ানীর সৈন্যরা ঘোড়ার পিঠে চড়ে বের হবে এবং যুদ্ধ করবে।

এছাড়া, হযরত মাহদী ও দাজ্জাল (৩য় বিশ্বযুদ্ধ, মাহদি ও দাজ্জাল, আসেম ওমর) নামক গ্রন্থের ১৪৯-১৫৪ নং পৃষ্ঠাতে হযরত হুজায়ফা রাঃ- এর একটি বড় হাদিস এসেছে। যেটি মূলগ্রন্থ (আস সুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান ৫ম খণ্ড, ১১১০ পৃঃ) থেকে এসেছে। সেখানে মাহদির শাসন কালে তরবারী, ঘোড়া, উট-খচ্চর, প্রাচীন নৌকা ব্যবহারের কথা এসেছে।

বিভিন্ন হাদিসে তা উল্লেখ এসেছে যা বর্ণনা করা শুরু করলে বই বড় হয়ে যাবে। তরবারী সাথে রাখা টা আধুনিকতার ধ্বংসের পরের পৃথিবীকে ইঙ্গিত করে। এর মানে হলো সুফিয়ানীর সময়েও আধুনিকতা থাকবে না। আর সুফিয়ানীর প্রকাশের ২-৩ বছর পর ইমাম মাহদীর প্রকাশ হবে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ