৬.৬৪ ঈসা (আঃ) শাসনকালে আবারো আল্লাহর রহমত ও বরকত

 ইয়াজুজ-মাজুজ জাতির ধ্বংসের পর পৃথিবী আবার সুস্থ হবে যেমনটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এরপর ঈসা (আঃ) পৃথিবী শাসন করবেন একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসেবে। সেই বরকতময় শাসনকালের ব্যাপারে হাদিসে যা এসেছে তা উল্লেখ করা হল।

তিনিই সেই আল্লাহ যিনি তার রসূলকে সত্য ধর্ম এবং মানুষকে পথ প্রদর্শন করার জন্য প্রেরণ করেছেন যাতে তা সব ধর্মের ওপর জয়যুক্ত ও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে। (সূরা তাওবাহ, আয়াতঃ ৩৩)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আমীরুল মুমিনীন আলী (রা:) বলেছেন, মহান আল্লাহ কি এখন পর্যন্ত এ আয়াতের বাস্তব নমুনা প্রকাশ করেছেন? না, ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, এমন কোন জনপদ পৃথিবীর বুকে থাকবে না যেখানে সকাল-সন্ধায় মহান আল্লাহর একত্ব এবং হযরত মুহাম্মদ -এর রিসালাতের সাক্ষ্য প্রদান করা হবে না।
-       (আল মাহাজ্জাহ: বাহরানী প্রণীত, পৃ. ৮৬)

ইবনে আব্বাস (রা:) বলেছেন, (ঈসা আঃ এর জামানায়) ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা ব্যতীত কোন ইহুদী, নাসারা অথবা অন্য ধর্মের অনুসারী থাকবে না। অবশেষে জিযিয়া কর (যিম্মী বিধর্মী কর্তৃক প্রদত্ত বিশেষ কর যার বিনিময়ে ইসলামী প্রশাসন তাদেরকে মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাস, নাগরিক অধিকার ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের স্বাধীনতা প্রদান করে) উঠিয়ে দেয়া হবে, ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলা হবে এবং শুকর হত্যা করা হবে। এটিই হবে নিম্নোক্ত আয়াতের বাস্তব নমুনা, যাতে তিনি ইসলাম ধর্মকে সব ধর্মের ওপর বিজয়ী এবং শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেন যদিও কাফেররা তা পছন্দ করে না।
-       (আল মাহাজ্জাহ: বাহরানী প্রণীত, পৃ. ৮৭)
-       আর এ ঘটনা হযরত ঈসা (আঃ) এর হাতে বাস্তবায়িত হবে।

হযরত বাকির (রহ:) উপরিউক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, সেদিন মহানবী এর রিসালাত মেনে নেয়া ও তা স্বীকার করা ব্যতীত (ধরণীর বুকে) কোন ব্যক্তিই থাকবে না।
-       (তাফসীরে আইয়াশী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৫৬)

আবূ হুরায়রাহ্ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেন: নিশ্চয় ইবনু মারইয়াম সত্যপরায়ণ শাসকরূপে অবতরণ করবেন। তিনি শূলী তথা ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন, জিযইয়াহ্ প্রথা রহিত করে দেবেন। লোকেরা জোয়ান জোয়ান তাজা-তাগড়া উষ্ট্রীসমূহ ছেড়ে দেবে, অথচ কেউই তার প্রতি গুরুত্ব দিবে না। মানুষের অন্তর হতে কার্পণ্য, হিংসা ও বিদ্বেষ সমূলে দূর হয়ে যাবে এবং ঈসা আলাইহিস সালাম মানুষদেরকে সম্পদ প্রদানের জন্য ডাকবেন, কিন্তু (প্রয়োজন না থাকায়) কেউই তা গ্রহণ করবে না।
-       (সহীহ, মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৫০৬; সহীহুল মুসলিম ২৪৩-(১৫৫); আবূ দাউদ ১০৪০৯; আবূ ইয়া'লা ৬৫৮৪)

আবূ হুরাইরাহ্ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল বলেছেন, শপথ সেই সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, শীঘ্রই তোমাদের মধ্যে মারিয়ামের পুত্র ঈসা (আঃ) শাসক ও ন্যায় বিচারক হিসেবে আগমন করবেন। তিনি ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন এবং তিনি যুদ্ধের সমাপ্তি টানবেন। তখন সম্পদের ঢেউ বয়ে চলবে। এমনকি কেউ তা গ্রহণ করতে চাইবে না। তখন আল্লাহকে একটি সিজদা করা তামাম দুনিয়া এবং তার মধ্যকার সমস্ত সম্পদ হতে অধিক মূল্যবান বলে গণ্য হবে। অতঃপর আবূ হুরাইরাহ্ (রা:) বলেন, তোমরা ইচ্ছা করলে এর সমর্থনে এ আয়াতটি পড়তে পারঃ ‘‘কিতাবীদের মধ্যে প্রত্যেকে তাঁর (ঈসা (আঃ)-এর) মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে বিশ্বাস করবেই এবং কিয়ামতের দিন তিনি তাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবেন। (আন-নিসাঃ ১৫৯)
-       (সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৩৪৪৮, ২২২২ [আঃ প্রঃ ৩১৯৩; ইসঃ ফাঃ ৩২০২])

...এরপর আল্লাহ এমন মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন যার ফলে কাঁচা-পাকা কোন গৃহই আর অবশিষ্ট থাকবে না। এতে জমিন বিধৌত হয়ে উদ্ভিদ শূন্য মৃত্তিকায় পরিণত হবে। অতঃপর পুনরায় জমিনকে এ মর্মে নির্দেশ দেয়া হবে যে, হে জমিন! তুমি আবার শস্য উৎপন্ন করো এবং তোমার বারাকাত ফিরিয়ে দাও। সেদিন একদল মানুষ একটি ডালিম ভক্ষণ করবে এবং এর বাকলের নীচে লোকেরা ছায়া গ্রহণ করবে। দুধের মধ্যে বারাকাত হবে। ফলে দুগ্ধবতী একটি উষ্ট্রীই একদল মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে, দুগ্ধবতী একটি গাভী একগোত্রীয় মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে এবং যথেষ্ট হবে দুগ্ধবতী একটি বকরী এক দাদার সন্তানদের (একটি ছোট গোত্রের) জন্য। (প্রয়োজনীয় অংশ)
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২৬৩-(১১০/২৯৩৭) [ইঃ ফাঃ ৭১০৬, ইঃ সেঃ ৭১৬০])


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ