৩.৮ ইমাম মাহদীর আগমনের পূর্বে কি কি সংঘটিত হবে

 ব্যাপক অন্যায়-জুলুম দিয়ে পৃথিবী পরিপূর্ণ থাকবে

দুনিয়া ধ্বংস হতে মাত্র একদিনও যদি অবশিষ্ট থাকে তাহলে মহান আল্লাহ (ঐ একদিনের মধ্যেই) আমাদের (আহলে বাইতের) মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে অবশ্যই প্রেরণ করবেন যে, এ পৃথিবী যেভাবে অন্যায়-অবিচারে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে ঠিক সেভাবে ন্যায় ও সুবিচার দিয়ে তা পূর্ণ করে দেবে।

-        (মুসনাদে আহমদ ১ম খণ্ড, পৃ.৯৯; দারুল ফিকর, বৈরুত কর্তৃক প্রকাশিত)

ফিতনা, ভয়ভীতি, ভূমিকম্প ও মৃত্যু কামনা

হযরত মুহাম্মদ বাকির (রহঃ) থেকে বর্ণিত, "ভয়-ভীতি, ভূমিকম্প, ফিতনা এবং যেসকল বিপদ আপদে (সমগ্র) মানবজাতি জড়িয়ে যাবে, তার পরপরই কেবল ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে। এর আগে তারা (মানবজাতি) প্লেগ বা (দুর্ভিক্ষের কারণে), মহামারীতে আক্রান্ত হবে। এর পরে আরবদের মধ্যে যুদ্ধ ও রক্তপাত হবে। এমনকি বিশ্ববাসীর মধ্যেও মতবিরোধ দেখা দিবে। ধর্মে দ্বিধা বিভক্তি দেখা দিবে এবং অবস্থা এতটাই শোচনীয় হবে যে, একে অপরকে হত্যা করতে দেখে, সবাই সকাল সন্ধ্যা নিজের মৃত্যু কামনা করবে"।

-        (কামালুদ্দিন, শেখ সাদুক প্রণীত, পৃষ্ঠা ৪৩৪; আসরে জুহুরী, পৃষ্ঠা ১৮৮)

মহামারী ও যুদ্ধ-বিগ্রহ

হযরত আবু বাসির (রহি.) বলেন, আমি আবু আব্দুল্লাহ আস সাদিক (রহিমাহুল্লাহ) কে জিজ্ঞেস করলাম, কখন ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে? তিনি বললেন, রসূলে পাক এর বংশধর এর জন্য কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। তবে ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের পূর্বে দুই ধরনের মৃত্যু দেখা যাবে। এক- শ্বেত মৃত্যু। দুই- লাল মৃত্যু। শ্বেত মৃত্যু অর্থাৎ দুর্ভিক্ষের কারণে মৃত্যু। আর লাল মৃত্যু হল যুদ্ধের কারণে মৃত্যু।

-        (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৫২)

হযরত আলী (রা:) থেকে বর্ণিত, ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের নিকটবর্তী সময়ে দুই ধরনের মৃত্যু দেখা দিবে। লাল মৃত্যু ও শ্বেত মৃত্যু। হঠাৎ হঠাৎ লাল ও রক্তবর্ণ বিশিষ্ট পঙ্গপালের প্রাদুর্ভাব দেখা দিবে। আর লাল মৃত্যু হল তরবারি (যুদ্ধের) দ্বারা মৃত্যু ও শ্বেত মৃত্যু হল প্লেগ, মহামারী দ্বারা মৃত্যু।

-        (কিতাবুল ইরশাদ, শেখ মুফীদ প্রণীত, পৃ. ৪০৫; গাইবাত, শেখ তূসী প্রণীত, পৃ. ২৭৭; আসরে জুহুরী, পৃষ্ঠা ১৮৮)

জুলফি তারকার উদয়ন

হযরত আবু বাসির (রহি.) বলেন, জাফর সাদিক বলেছেন- মাহদীর আগমনের কিছু পূর্বে, অবশ্যই মানুষ আসমানের তারকা জমিনে দেখতে পাবে।

-        (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৭৫)

হযরত ওলীদ (রহঃ) কা’ব (রহঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত মাহদী এর আগমনের পূর্বে পূর্বাকাশে জুলফি বিশিষ্ট একটি তাঁরকা উদিত হবে।

-        (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৪২)

ব্যাপক দুর্ভিক্ষ

হযরত জাফর সাদিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, "ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের পূর্বে অবশ্যই এমন একটি বছর অতিবাহিত হবে, তখন মানবজাতি তীব্র ভাবে খাদ্যের অভাবে কষ্ট পেতে থাকবে, তাদেরকে হত্যা করার দরুন আতংক তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে"।

-        (বিহারুল আনোয়ার, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ২২৯; আসরে জুহুরী, পৃষ্ঠা ১৮৯)

হযরত কা’ব (রা:) থেকে বর্ণিত যে, এমন একটি তারকা উদিত হবে, যার আলো হবে চন্দ্রের আলোর ন্যায়। এরপর উক্ত তারকা সাপের ন্যায় কুন্ডলি পাকাতে থাকবে। যার কারণে তার উভয় মাথা একটা আরেকটার সাথে মিলিত হওয়ার উপক্রম হবে। দীর্ঘাকার রাত্রে দুইবার ভূমিকম্প হওয়া এবং আসমান থেকে জমিনের দিকে যে তারকাটি নিক্ষিপ্ত হবে, তার সাথে থাকবে বিকট আওয়াজ। এক পর্যায়ে সেটা পূর্বাকাশে গিয়ে পতিত হবে। যা দ্বারা মানুষ বিভিন্ন ধরনের বালা-মুসিবতের সম্মুখিন হবে। (হাদিস বড় হওয়ায় কেবল শেষ অংশ উল্লেখ করা হল)

-        (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৪৩)

ফুরাত নদীতে স্বর্ণের পাহাড় উন্মোচন ও তা নিয়ে যুদ্ধ

আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, অচিরেই ফুরাত নদী স্বর্ণের খনি উন্মোচন করবে। অতএব যারা তখন সেখানে থাকবে তারা যেন তা থেকে কিছুই গ্রহণ না করে।

-        (সহীহ, সুনান আবু দাউদ ১৩/৪৩১৩)

হযরত ইবেন সিরীন হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন ততক্ষণ পর্যন্ত মাহদী বের হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রত্যেক নয় জনের সাত জনকে হত্যা করা হয়।

-        (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৫৮)

মুজাদ্দিদ এর আত্মপ্রকাশ

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেছেন, রসূল ﷺ বলেছেন, প্রতি শতকের অবসান কালে, আল্লাহ তাআলা একজন করে মুজাদ্দিদ প্রেরণ করবে, যারা আল্লাহর দ্বীনকে পুনঃসংস্কার করবেন।

-        (সহীহ, সূনান আবূ দাউদ (ইঃ ফাঃ) ৪২৪১; মুসতাদরাকে হাকেম ৮৫৯২; মিশকাতুল মাসাবিহ ২৪৭; আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস, আব্দুল্লাহ ইবনে দাইলামী ১১৭০)

১৯২৪ সালের পর ২০২১ (চন্দ্রসাল) বা ২০২৪ সাল একশত বছর পূর্ণ হয় এবং মুজাদ্দিদের আগমনের সময়। আর কিতাবুল ফিতানের হাদিসসহ আরো কিছু হাদিস অনুযায়ী মাহদী আসবেন খিলাফত ধ্বংসের ১০৪ বছর পর যা সরাসরি উল্লেখ রয়েছে। তাই ১৯২৪ এরপর ২০২৮ সালে তা পূর্ণ হবে আর সেটাই সঠিক সময় খলীফা মাহদী এর আগমনের। আর তার আগমনের আগেই একজন মুজাদ্দিদ এর আত্মপ্রকাশ হবে যা খুবই নিকটে।

গাজওয়াতুল হিন্দ সংঘটিত হবে

সাহল ইবনু সা'দ (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল বলেছেন, অচিরেই পূর্ব দিকে এক ফিতনার (দ্বিতীয় কারবালা) সৃষ্টি হবে। আর তা হবে মুশরিকদের দ্বারা। তখন মুমিনদের একটি দল তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয় আনবে। আর তাদের সেনাপতি হবে ঐ সময়ের সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি সাহেবে কিরান! আর তাদের পরিচালনা করবে একজন ইমাম। যার নাম হবে মাহমুদ। অবশ্যই তারা মাহদীর আগমন বার্তা নিয়ে আসবে।

-        (তারিখুল বাগদাদ ১২২৯)

হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা:) বলেছেন, শেষ জামানায় ইমাম মাহমুদ ও তাঁর বন্ধু সাহেবে কিরানের প্রকাশ ঘটবে। আর তাদের মাধ্যমে মুশরিকদের উপর মুসলমানদের বড় বিজয় আসবে। আর তা হবে মাহদীর আগমনের পূর্বে।

-        (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮৭২; আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ, অধ্যায়ঃ শেষ জামানায় আত্মপ্রকাশকারী নেতা)

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ তথা পারমাণবিক যুদ্ধ ও আধুনিকতার ধ্বংস

হযরত ফিরোজ দায়লামী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আখেরী জামানায় ইমাম মাহদীর পূর্বে ইমাম মাহমুদ এর প্রকাশ ঘটবে। সে বড় যুদ্ধের শক্তির যোগান দিবে। তার জামানায় মহাযুদ্ধের (৩য় বিশ্বযুদ্ধে) বজ্রাঘাতে (পারমাণবিক অস্ত্রে) বিশ্বের অধ্বঃপতন হবে এবং বিশ্ব এই সময়ে ফিরে আসবে (অর্থাৎ আধুনিকতা ধ্বংস হয়ে প্রাচীন যুগে ফিরবে)। সে তার সহচর বন্ধু সাহেবে কিরান শামীম বারাহকে সাথে নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করবে, যে বেলাল ইবনে বারাহ-এর বংশোদ্ভুত হবে। তোমরা তাদের পেলে জানবে ইমাম মাহদীর প্রকাশের সময় হয়েছে।

-        (আসরে যুহরি ১৮৭ পৃঃ; তারিখে দিমাশাক ২৩৩ পৃঃ; ইলমে তাছাউফ ১৩০ পৃঃ; ইলমে রাজেন ৩১৩ পৃঃ; বিহারুল আনোয়ার ১১৭ পৃঃ)

-        উক্ত হাদিসটি এই পাঁচটি গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। অধিকাংশ মুহাদ্দিছগণ ব্যক্ত করেছেন উক্ত হাদিসটি সহীহ, কেউ কেউ বলেছেন হাসান।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, সাবধান! মুশরিকরা নিজেদের অবাধ্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পৃথিবীতে কেয়ামত আনয়ন করবে। আর তখন পৃথিবীতে অগ্নি প্রকাশ (পারমাণবিক যুদ্ধ) পাবে, যা পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ মানুষকে ধ্বংস করবে। তাঁর পরেই আল্লাহ তায়ালা একটি শান্তিময় পৃথিবী দেখাবেন, যেখানে কোনো বিশৃঙ্খলা থাকবে না। এ কথা বলে তিনি সূরা ইবরাহীমের ৪৮ নম্বর আয়াত পাঠ করলেন।

-        (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৭৮)

হযরত হুযাইফা (রা:) বলেন, রসূলে পাক ﷺ বলেছেন, বিশ্বব্যাপী অধঃপতন শুরু হবে। এমনকি মিশরও অধঃপতনের সম্মুখীন হবে। তুরস্কের অধঃপতন হবে দায়লামীর পক্ষ থেকে বিস্ফোরণের মাধ্যমে। দায়লামীর অধঃপতন হবে, আর্মেনিয়ার পক্ষ থেকে। আর্মেনিয়ার অধঃপতন হবে, খাজার পক্ষ থেকে, খাজার অধঃপতন হবে, তুরস্কের পক্ষ থেকে। সিন্দ এর অধঃপতন হবে, হিন্দুস্তানের পক্ষ থেকে। হিন্দুস্তানের অধঃপতন হবে, তিব্বতের পক্ষ থেকে। তিব্বতের অধঃপতন হবে নাসারার পক্ষ থেকে।

-        (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৬৮; তাজকিরাহ, ইমাম কুরতুবী; আন নিহায়া ফিল ফিতান ওয়াল মালাহিম, ইবনে কাসীর; আস সুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, আবু আমর আদ-দানী)

বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যাবে

হযরত জাফর সাদিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ মানুষ ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত ইমাম মাহদীর আবির্ভাব ঘটবে না। তখন আমি আবু বাসির জিজ্ঞাসা করলাম, তখন কোন ব্যক্তি অক্ষত থাকবে? এ উত্তরে জাফর সাদিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, তোমরা কি এক তৃতীয়াংশ এর মধ্যে অবশিষ্ট থাকতে চাও না?

-        (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৬০)

ধোঁয়ার আজাব

হযরত কাতাদাহ (রা:) বলেন, কিয়ামত কিভাবে হবে? যতক্ষণ না, আকাশ কালো ধোঁয়ায় ঘিরে যাবে।

-        (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮১৭)

মাহদী বের হবে না যতক্ষন না অন্ধকার দেখতে পাও।

-        (আল কাউলু মুখতাসার ফি আলামাত আল মাহদি আল মুনতাদার ৩-২৭)

খলীফা মাহদীর সাহায্যকারী ইমাম ও তাদের সহচরদের আত্মপ্রকাশ

ইমাম মাহমুদ ও সহচর শামীম বারাহ এবং ইমাম মানসূর ও তার সহচর হারিস ইবনু হাররাস এবং শুয়াইব ইবনে সালেহ, যাদের আলাদা আলাদা দল থাকবে।

আবু সাঈদ খুদরী (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, মাহদীর পূর্বে একজন ইমামের আর্বিভাব হবে আর তার নাম হবে মাহমুদ। তার পিতার নাম হবে আব্দুল (নামে থাকবে)। সে দেখতে হবে দুর্বল, আর তার চেহারায় আল্লাহ মায়া দান করবেন। আর তাকে সে সময়ের খুব কম লোকই চিনবে। অবশ্যই আল্লাহ সেই ইমাম ও তার বন্ধু যার উপাধি হবে সাহেবে কিরাণ তাদের মাধ্যমে মুমিনদের একটি বিজয় আনবেন।

-        (ইলমে রাজেন ৩৪৭; আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৫৪; ইলমে তাসাউফ ১২৫৩)

হযরত আবু যার (রা:) বলেন, আমি রসূল ﷺ কে বলতে শুনেছি ইহুদী খ্রিষ্টানদের সাথে মুসলমানদের দুটি বড় যুদ্ধ হবে। প্রথম যুদ্ধে পূর্ব ও পশ্চিম থেকে দুটি বালক নেতৃত্ব দিবে, যাদের নাম হবে শুয়াইব আর শামীম বারাহ। (প্রয়োজনীয় অংশ)

-        (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ১৪১)

হযরত জাফর সাদিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, "সুফিয়ানী এবং (মানসূর) ইয়ামানীর উত্থান হবে প্রতিযোগিতার দুটি ঘোড়ার মত"।

-        (কিতাবুল গাইবাহ, ১৮ নং অধ্যায়, পৃষ্ঠা নং ৪৪৫, মুজ'য়াম আল হাদীস ইমাম আল মাহদী, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪৭৮, বিহারুল আনোয়ার, খণ্ড ৫২, পৃষ্ঠা ২৭৫, ২৫৩)

শাম থেকে তিনটি পতাকাবাহী দলের আত্মপ্রকাশ

হযরত মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন তাদের মাঝে মতানৈক্য দেখা দিবে তখন শাম দেশে তিন ধরনের ঝান্ডা প্রকাশ পাবে। তা হচ্ছে আবকা জাতির ঝান্ডা, আসহাব ও সুফিয়ানীর ঝাণ্ডা।

-        (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৩৫)

তিনটি ঝাণ্ডার নাম হচ্ছে- আবকা, আসহাব ও সুফিয়ানী। (সহীহ, আল ফিতান ৮৩৩)

সুফিয়ানীর আত্মপ্রকাশ ও সকল দলের উপর বিজয় লাভ

হযরত জাফর সাদিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, "সুফিয়ানীর উত্থান অবশ্যই হবে, তিনি রজব মাসে আত্নপ্রকাশ করবেন"।

-        (কিতাবুল গাইবাহ, অধ্যায় নং ১৮, পৃষ্ঠা ৪৪০; বিহারুল আনোয়ার, খণ্ড ৫২, পৃষ্ঠা ২৫; মুজ'আম আল হাদিস ইমাম আল মাহদী, খণ্ড ৩, ৪৬৩)

হযরত আরতাত (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সুফিয়ানীর যুগে যুদ্ধ-বিগ্রহ এত ব্যাপক আকার ধারন করবে, যা দ্বারা প্রত্যেক জাতি মনে করবে তার পার্শ্ববর্তী এলাকা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।

-        (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৩২)

হযরত আলী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন কালো ঝান্ডা বাহীরা পরস্পর মতানৈক্যে লিপ্ত হবে, তখন আরম জনপদের একাংশ ধ্বসে পড়বে এবং তার পশ্চিম পার্শ্বের মসজিদের এক পাশ ধ্বংস হয়ে যাবে। অতঃপর শাম দেশ থেকে তিন প্রকারের ঝান্ডা আত্নপ্রকাশ করবে। আসহাব, আবকা এবং সুফিয়ানীর ঝান্ডা। সুফিয়ানী বের হবে শাম দেশ থেকে, এক পর্যায়ে সুফিয়ানী সব দলের উপর জয়লাভ করবে।

-        (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৪১)

সুফিয়ানী কর্তৃক ব্যাপক হত্যাকান্ড

ইবনুল হানাফিয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সুফিয়ানী আবকাদের উপর জয়লাভ করে মিশরে প্রবেশ করলে মিশর বিরান ভূমিতে পরিনত হয়ে যাবে।

-        (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৫২)

হযরত হোজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন সুফিয়ানী মিশরে প্রবেশ করে সেখানে দীর্ঘ চারমাস পর্যন্ত অবস্থান করে লোকজনকে হত্যা করবে এবং সেখানের বাসিন্দাদেরকে বন্দী করবে, সেদিন অনেক ক্রদন্দনকারী মহিলারা তাদের সম্ভ্রমহানী হওয়ার কারণে কান্নাকাটি করবে, অনেকে তাদের সন্তান হারানোর বেদনায় রোনাজারী করতে থাকবে, অনেকে সম্মানিত হওয়ার পর সম্মানহানী হওয়ার কারণে ক্রন্দন করবে। আবার কেউ কেউ বিলাপ করতে থাকবে কবরে চলে যাওয়ার আগ্রহ নিয়ে।

-        (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৪৭)

ব্যাপক মতবিরোধ ও দ্বন্দ্ব

হযরত বাকির (রহ:) বলেছেন, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাসী পরস্পর মতভেদ করবে। কিবলাপন্থীরা (মুসলমানরা) এবং বিশ্ববাসীও অসহনীয় ভয়-ভীতি ও আতংকের সম্মুখীন হবে। আর আকাশ থেকে আহবানকারীর আহবান করা পর্যন্ত তারা এ অবস্থার মধ্যেই থাকবে। যখন আকাশ থেকে গায়েবী আহবান ধ্বনি শোনা যাবে তখন তোমরা হিজরত করবে।

-        (আসরে জুহুরি)

কালো পতাকাবাহী সাহায্যকারী দল ও সুফিয়ানীর পরাজয়

আবূ হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেন: খুরাসানের দিক হতে কালো পতাকাবাহীগণ আবির্ভূত হবে (মাহ্দীর সর্মথনে)। অবশেষে সেগুলো ইলিয়া (বায়তুল মাকদিস)-এ স্থাপিত হবে এবং কোন কিছুই তা ফিরাতে পারবে না।

-        (যঈফ, সুনানে তিরমিজি ২২৬৯; মুসনাদে আহমাদ ৮৭৬০)

(কিছু অংশ বাদে)...তাদের সাক্ষাত ঘটবে বাবে ইস্তাখাররাতে (ইরানের ফার্স প্রদেশের একটি ঐতিহাসিক স্থানে)। তখন তাদের মাঝে বড় একটি যুদ্ধ হবে, সে যুদ্ধে কালো ঝান্ডাবাহী দল জয়ী হবে। এবং সুফিয়ানীর সৈন্য পলায়ন করবে। আর সে সময়ই মানুষ মাহদীর আকাঙ্ক্ষা করবে এবং তাকে খুঁজতে থাকবে।

-        (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯১৪)

বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয়

হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রা:) বলেন, রসূল বলেছেন, অবশ্যই আমার বংশের মাহদীর আগমনের পূর্বে কিয়ামত সংঘটিত হবে না। আর সে নিরাপদে জেরুজালেম ভ্রমণ করবে। আর ততক্ষন মাহদী বাইতুল মুকাদ্দাস ভ্রমন করবে না, যতক্ষন না অভিশপ্ত জাতি থেকে তা শামীম বারাহর দখলে না আসে। আর অবশ্যই তা দিনের আলোর মত সত্য।

-        (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ৯৬)

হযরত কাতাদাহ (রা:) বলেন, রসূল বলেছেন, মাহদীর আগমনের পূর্বে অভিশপ্ত জাতির সাথে শামীম বারাহর নেতৃত্বে মুমিনদের যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে জেরুজালেম মুমিনদের দখলে আসবে।

-        (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ৯৭)

বায়দাহ প্রান্তরে ধ্বস

আমর আন্‌ নাকিদ ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ..... হাফসাহ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী কে এ কথা বলতে শুনেছেন যে, একটি বাহিনী এ কাবা গৃহের বিপক্ষে যুদ্ধ করার ইচ্ছা করবে। তারপর তারা যখন বাইদা নামক এক ময়দানে পদার্পণ করবে তখন তাদের মাঝের অংশটি ভূমিতে ধ্বসে যাবে। এ সময় অগ্রভাগের সৈন্যরা পশ্চাতের সৈন্যদেরকে উচ্চঃস্বরে ডাকতে থাকবে। অতঃপর প্রত্যেকেই ভূমিতে ধ্বসে যাবে। বেঁচে যাওয়া একটি ব্যক্তি ছাড়া তাদের কেউ আর বাকী থাকবে না। সে-ই তাদের সম্বন্ধে অন্যদেরকে খবর দিবে। এ কথা শুনে এক লোক বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমি হাফসাহ (রা:) এর উপর মিথ্যারোপ করনি এবং হাফসাহ (রা:) এর সম্বন্ধে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনিও নবী এর উপর মিথ্যারোপ করেননি।

-        (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭১৩৪-(৬/২৮৮৩) [ইঃ ফাঃ ৬৯৭৮, ইঃ সেঃ ৭০৩৫]; সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ১/৪০৬৩; সুনান নাসায়ী ২৮৭৯, ২৮৮০; আহমাদ ২৫৯০৫; সহীহাহ ২৪৩২)

-        বায়দা প্রান্তরে সুফিয়ানীর বাহিনী ধ্বসে যাওয়া মাহদী প্রকাশের সংবাদ পাওয়ার কিছু পরই হবে।

 

বিঃ দ্রঃ এখানে সকল হাদিস আনা হয়নি। এইসকল ঘটনাগুলি ৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদে (আগামীর ফিতনাগুলো) বিস্তারিতভাবে দেওয়া হয়েছে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ