৬.৪১ ইমাম মাহদীর সাত থেকে নয় বছরের মধ্যে খিলাফত হস্তান্তর

 পৃথিবী একটি শান্তিপূর্ণ ও সুশাসনে ভরা, মুসলিমদের গৌরবান্বিত একটি খিলাফতের সাক্ষী হওয়ার পর ইমাম মুহাম্মাদ তথা মাহদী তার শাসনভার ছেড়ে দিবেন এবং এর পরপরই তিনি মৃত্যুবরণ করবেন। তার মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে আবার পৃথিবীতে বিভিন্ন ফিতনা-বিদ্রোহ, যুদ্ধ-বিগ্রহ ছড়িয়ে পড়বে। আর এভাবে একটি কাল চলতে থাকবে।

বিভিন্ন বর্ণনা থেকে ইমাম মাহদী কত বছর শাসন করবেন তার উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি ৪০ বছরে আত্মপ্রকাশ করবেন এবং তারপর খলীফা হিসেবে পৃথিবীতে শাসন করবেন। বিভিন্ন হাদিস থেকে পাওয়া যায় তিনি ৭ বছর, ৮ বছর, ৯ বছর শাসন করবেন। এছাড়া অন্যান্য যেসকল বর্ণনা রয়েছে তা একক এবং দুর্বল সনদ বা মতনে ভুল। কিছু হাদিসে ৭ থেকে ৯ বছর এসেছে। বিভিন্ন হাদিস দেখে এটির সঠিকটা নির্ণয় করা যায় না আর এটি আল্লাহ তায়ালা কম-বেশিও করতে পারেন। তবে আরো কিছু সূত্র থেকে ৮ (আট) বছর শাসন করবেন বলে মতটিকেই বেশি সঠিক মনে হয়। এ ব্যাপারে সরাসরি হাদিসও রয়েছে।

আবু সাঈদ খুদরী (রা:) নবী হতে বর্ণনা করেন, আখেরী যামানায় আমার উম্মাতের ভিতরে মাহদীর আগমণ ঘটবে। তাঁর শাসনকালে আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে, যমিন প্রচুর ফসল উৎপন্ন করবে, তিনি মানুষের মাঝে সমানভাবে প্রচুর সম্পদ বিতরণ করবেন, গৃহপালিত পশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং উম্মাতে মুহাম্মাদীর সম্মান বৃদ্ধি (হারানো গৌরব ফিরে) পাবে। (এরপর) তিনি সাত বছর কিংবা আট বছর জীবিত থাকবেন (খিলাফত পরিচালনা করে মৃত্যুবরণ করবেন)।
-       (মুস্তাদরাকে হাকিম ৪/৬০১; সিলসিলায়ে সহীহা ৭১১; আলবানী সহীহ বলেছেন)

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা:) রসূল হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, মাহদী এর মধ্যে তথা শাসন ক্ষমতা লাভ করার পর সাত বছর অথবা আট বছর অথবা নয় বছর জীবিত থাকবেন।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১১২১, ১১২২ [পথিক প্রকা: ১১১৮, ১১১৯; তাহকীক: যঈফ])

আবু সাঈদ খুদরী (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি রসূল থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, মাহদী শাসন ক্ষমতা পাওয়ার পর সাত বছর অথবা নয় বছর জীবিত থাকবেন।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১১২৪  [পথিক প্রকা: ১১২১; তাহকীক: যঈফ])

আবু সাঈদ (রা:) রসূল হতে বর্ণনা করেন মাহদী (খিলাফতের পর) সাত, আট অথবা নয় বছর বেঁচে থাকবেন।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১১২৭  [পথিক প্রকা: ১১২৪; তাহকীক: যঈফ])

মুহাম্মদ ইবন বাশশার (রহঃ) ...... আবূ সাঈদ খুদরী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের আশংকা হয় যে, নবী এর ইন্তিকালের পর নতুন কিছু ঘটবে। তাই আল্লাহর নবী -কে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করি। তিনি বললেনঃ আমার উম্মতে মাহাদীর আগমন ঘটবে। তিনি পাঁচ বা সাত বা নয় (বর্ণনাকারী যায়দের সন্দেহ যে মূলত সংখ্যা কত) বাস করবেন। রাবী বলেন, আমরা বললাম যে সংখ্যা দ্বারা কি অর্থ নিয়েছেন? তিনি বললেন, বছর। তিনি আরো বলেনঃ তাঁর কাছে জনৈক ব্যক্তি এসে বলবেঃ হে মাহদী, আপনি আমাকে দান করুন, আপনি আমাকে দান করুন। নবী বলেনঃ তারপর তিনি, ঐ ব্যক্তি যতটুকু বোঝা বহন করতে পারবে তার কাপড়ে সে পরিমাণ সম্পদ প্রদান করবেন।
-       (হাসান, সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২৩২ [ইঃ ফাঃ ২২৩৫]; মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৫৫; সুনান ইবনু মাজাহ ৪০৮৩; মুসনাদে আহমাদ ১১১৭৯)
-       আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ হাদীসটি আবূ সাঈদ (রাঃ)-এর বরাতে অন্যান্য সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। আবূস সিদ্দীক আন-নাজীর নাম বাকর ইবনু আমর, মতান্তরে বাকর ইবনু কাইস।

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রা:) থেকে বর্ণিত। নবী বলেনঃ মাহ্দী আমার উম্মাত থেকেই আবির্ভূত হবে। তিনি কমপক্ষে সাত বছর অন্যথা নয় বছর দুনিয়াতে অবস্থান করবেন। তার যুগে আমার উম্মাত অযাচিত প্রাচুর্যের অধিকারী হবে, ইতোপূর্বে কখনো তদ্রূপ হয়নি। পৃথিবী তার সর্বপ্রকার খাদ্যসম্ভার পর্যাপ্ত উৎপন্ন করবে এবং কিছুই প্রতিরোধ করে রাখবে না। সম্পদের স্তূপ গড়ে উঠবে। লোকে দাঁড়িয়ে বলবে, হে মাহ্দী! আমাকে দান করুন। তিনি বলবেন, তোমার যতো প্রয়োজন নিয়ে যাও।
-       (হাসান, সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ৪০৮৩; সুনান আবূ দাউদ ৪২৮৫; রাওদুন নাদীর ৬৪৭)

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা:) রসূল হতে বর্ণনা করেন যে, রসূল বলেন সে (মাহদী) পৃথিবীকে ন্যায় বিচার দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিবে। যেমনিভাবে এর পূর্বে পৃথিবীতে জুলুম অত্যাচারে ভরে গিয়েছিল। আর সে রাজত্ব করবে সাত বছর।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১০৪১ [পথিক প্রকা: ১১৩৯; তাহকীক: যঈফ])

হযরত দীনার ইবনে দীনার হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন মাহদী প্রকাশ পাবে আর যুদ্ধ লব্ধ মাল বন্টন করা হবে। আর তখন তার নিকট যা পৌঁছবে তা মানুষ একে অপরের মাঝে সহযোগীতা করবে। (বন্টনের ক্ষেত্রে)। সেখানে কাউকে কোন একজনের উপর প্রাধান্য দেওয়া হবে না। আর সে হক অনুযায়ী কাজ করবে। এমনকি সে মৃত্যু বরণ করবে। (মৃত্যু পর্যন্ত সে হক অনুযায়ী কাজ করবে।) আর উহার পর দুনিয়া উত্তেজিত হয়ে যাবে (বিশৃংখল হয়ে যাবে)।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১০৫২ [পথিক প্রকা: ১০৪৯; তাহকীক: যঈফ])

হযরত দীনার ইবনে দীনার (রহ:) থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে, নিঃসন্দেহে মাহদি মৃত্যুবরণ করলে মানুষের মাঝে ব্যাপক গনহত্যা দেখা দিবে এবং একে অন্যকে হত্যা করবে। অনারবদের জয়জয়কার হবে এবং ভয়াবহ যুদ্ধ-বিগ্রহ প্রকাশ পাবে। মানুষের মধ্যে কোনো শৃঙ্খলা এবং একতাবদ্ধতা থাকবেনা, এক পর্যায়ে দাজ্জালের আবির্ভাব হবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১১৩৪ [পথিক প্রকা: ১১৩১; তাহকীক: যঈফ])

উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালামা (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি, রসূলুল্লাহ বলেছেন, মাহদী সাত বছর রাজত্ব করে মারা যাবে, মুসলমানরা তার জানাজার নামাজ আদায় করবে। (শুধুমাত্র প্রাসঙ্গিক অংশটুকু উল্লেখ করা হয়েছে) (আবু দাউদ)

অপর এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, "মাহদীর মৃত্যুর পর কোন কল্যাণ থাকবে না (শুধুমাত্র প্রাসঙ্গিক অংশটুকু উল্লেখ করা হয়েছে)
-       (মুসনাদে আহমাদ; হাদিসটি ড. আরেফী রচিত "মহাপ্রলয়" বইতেও রয়েছে)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ