৪.৫ গাজওয়াতুল হিন্দ এর সকল হাদিস

 হিন্দুস্তানের যুদ্ধ নিয়ে অসংখ্য কিতাবে অসংখ্য হাদিস এসেছে। হাদিসের কিতাব ঘাটলে দেখা যায় গাজওয়াতুল হিন্দের নববী ভবিষ্যৎবাণী এবং তার মর্যাদা ও ফজিলত দুটি (০২) সময়ের জন্য বেশি প্রযোজ্য বা এই দুটি চূড়ান্তভাবে মুশরিকদের বড় বড় পতন ঘটাবে (কারণ এর আগের যুদ্ধগুলো ছোট ছোট ছিল)। প্রথম সময়টি হচ্ছে ইমাম মাহদী এর আগমনের আগে হিন্দুস্তানের মুশরিকদের সাথে ইমাম মাহমুদ এর নেতৃত্বে আর পরেরটি ঈসা (আঃ) এর আগমনের কিছু আগে, হিন্দুস্তানে চুক্তির মাধ্যমে বসবাসকারী ইহুদীদের চুক্তি ভঙ্গ করে হিন্দুস্তান জবরদস্তি দখলে নেওয়ায় ইমাম জাহজাহ এর নেতৃত্বে আবারো যুদ্ধ। কিন্তু আমাদের পরিচিত কিতাব থেকে যে হাদিসগুলি পাই হিন্দের যুদ্ধের ব্যাপারে যেটি রয়েছে সুনানে নাসাঈ তে, সেটিকেই আমরা সব সময় বলে থাকি। সেটা হয়েছে কি হয়নি সেটা নিয়ে তর্কে থাকি। কিন্তু তার সময়কালের আগেও হিন্দুস্তানে যুদ্ধ হবে সেই হাদিসও রয়েছে যা আমাদের একদমই অজানা। আমরা এখন বর্তমান পরিস্থিতি দেখতেই পারছি যে, হিন্দু মুশরিকরাও যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যা শেষ পর্যন্ত নববী ভবিষ্যৎবাণী করা যুদ্ধকেই বাস্তবায়িত করবে। সেই হাদিসগুলো কি আমাদের জানা আছে? তাই সকল হাদিসগুলি এখানে এনে ব্যাখ্যা করার আগে দুইটি সময়ের যুদ্ধের বর্ণনা নিয়ে হাদিসগুলো পেশ করছি।

হযরত সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ (রহ.) বলেন, আমি আমার পিতা থেকে শুনেছি, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, খুব শীঘ্রই হিন্দুস্তানের মুশরিকদের পতন হবে। আর তা হবে এক দুর্বল বালকের নেতৃত্বে। আর তার নাম হবে মাহমুদ। আল্লাহ তার মাধ্যমে হিন্দুস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। অতঃপর তার মৃত্যুর পর তার এক প্রতিনিধির সাথে ইহুদীদের শান্তি চুক্তি হবে এবং ইহুদিরা হিন্দুস্তানের একটি অঞ্চল দখলে নেবে। সাহাবীগণ বলল, হে আল্লহর রসূল ﷺ তারা কী শান্তি চুক্তি রক্ষা করে সেখানে বসবাস করবে? তিনি (রসূল ) বললেন, না। বরং তারা চুক্তি ভঙ্গ করে প্রতারণা করে হিন্দুস্তান দখলে আনবে এবং সেখানে বসবাস করবে। আবার জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! মুসলমানগণ কি তাদের মোকাবেলা করবে না? তিনি বললেন, করবে। সে সময় মাহমুদের প্রতিনিধি বিশ্ব শাসকের নিকট সে ব্যপারে অনুমতি চেয়ে একটি পত্র পাঠাবে। তখন শাসক বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে সেখানে একদল সেনা পাঠাবে এবং আবার ইহুদীদের পরাজিত করবে।
-       (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৫৩৮, ১৭০৩; কিতাবুল আক্বিব ১৩৭)

হযরত বিলাল ইবনে রাবাহ (রা:) বলেন, রসূল বলেছেনঃ হিন্দুস্তান মুসলমানরা শাসন করবে। আবার তা মুশরিকরা দখল করবে এবং তারাই সেখানে তাদের সকল হুকুম প্রতিষ্ঠা করবে। আবার তা মুসলমানরা বিজয় করবে যাদের নেতা হবে মাহমুদ এবং সেখানে আল্লাহর হুকুম প্রতিষ্ঠিত হবে। আর তা ঈসা ইবনে মারিয়াম (আ.) পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত থাকবে। কিন্তু লা'নত ইহুদিদের প্রতি। একথা বলে তিনি (রসূল ) রাগন্নিত হয়ে গেলেন। তার চেহারায় রক্তিম চিহ্ন প্রকাশ পেল। সাহাবীগণ তাদের কন্ঠ নিচু করে বললেন, হে আল্লাহর রসূল সেখানে ইহুদিদের কর্ম কী? তিনি বললেন, অভিশাপ্ত জাতিরা মাহমুদের এক জন প্রতিনিধির সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করবে এবং সেখানকার একটি অঞ্চল তাদের দখলে নেবে। সাহাবীগণ বললেন, তখন কী তারা (মুসলমানরা) অভিশপ্ত জাতিদের মোকাবেলা করবে না? তিনি বললেন, হ্যাঁ করবে। আর তাদের সাহায্য করবে বায়তুল মুকাদ্দাসের একজন বাদশা (জাহজাহ)।
-       (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৭০৮; কিতাবুল আক্বিব ১৩৮)

হযরত কা'ব (রা:) বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি অচিরেই মুসলমানরা এক দুর্বল বালকের নেতৃত্বে হিন্দুস্তান দখল করবে। আর এ যুদ্ধের ব্যপারেই তোমাদের প্রতিশ্রুতি নেয়া হয়েছে। আর আল্লাহও এই যুদ্ধে বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর সেখান থেকেই আল্লাহ মুশরিকদের পতন করে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। একথা বলে তিনি সুরা ইব্রাহিম এর ৪৭ নং আয়াত পাঠ করলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলঃ হে আল্লহর রসূল ! তাহলে মানুষ দাজ্জালকে দেখবে কখন? তিনি বললেন, যখন জাহজাহ পৃথিবী শাসন করবে তখন হিন্দুস্তান আবারও ইহুদীদের দখলে যাবে। আর তখন বায়তুল মুকাদ্দিস মুসলমানরা শাসন করবে। আর সেখান থেকে জাহজাহ কালোপতাকা নিয়ে এক দল সৈন্য হিন্দুস্তানে পাঠাবেন এবং হিন্দুস্তান দখল করবে। তারা সেখানে ঈসা ইবনে মারিয়াম (আ.) এর আগমন পর্যন্ত অবস্থান করবে। আর আল্লাহর নবী ঈসা (আ.) ৩৩ বছর পৃথিবী শাসন করবে।
-       (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৫০৭; কিতাবুল আক্বিব ১০০; আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ২৩৫)

হযরত আনাস (রা:) বলেন, রসূল বলেছেনঃ হিন্দুস্তান মুশরিকদের থেকে মুমিনরা বিজয় করবে। আর তাদের নেতা হবে মাহমুদ। হিন্দুস্তানে সে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে। আর তার স্বাভাবিক মৃত্যু হবে। তখন শামীম বারাহ আল্লাহর হুকুমত অটল রাখবে এবং তার মৃত্যুর পর সুশৃঙ্খল ভাবে চলতে থাকবে। এমন সময় এক প্রতিনিধির সাথে ইহুদীদের চুক্তি হবে এবং একটি অঞ্চলে তারা বসবাস করবে। অতঃপর, ইহুদীরা চুক্তি ভঙ্গ করে হিন্দুস্তান দখলে নেবে। তখন বায়তুল মুকাদ্দাসের (জেরুজালেমের) বাদশা ইহুদীদের পরাজিত করবে।
-       (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৭০৯; কিতাবুল আক্বিব ১৪০)

প্রথম গাজওয়াতুল হিন্দের সময়ের হাদিসগুলোঃ

মুহাম্মাদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন আব্দুর রহীম (রহঃ) ... রসূলুল্লাহ এর গোলাম ছাওবান (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ আমার উম্মতের দুটি দল আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে জাহান্নাম হতে পরিত্রাণ দান করবেন, একদল যারা হিন্দুস্তানে জিহাদ করবে, আর একদল যারা ঈসা ইবনে মারিয়াম (আঃ) এর সঙ্গে থাকবে (সঙ্গী হবে)।
-       (সহীহ, সূনান আন-নাসাঈ ৩১৭৫ (ইঃ ফাঃ ৩১৭৮); সহীহাহ ১৯৩৪; সহীহ জামে' আস-সগীর ৪০১২; আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮৬৫)
-       ইমাম আহমাদ রহ. তার মুসনাদে। [মুসনাদে আহমাদ : ৫/৮৭২, হাদিসে সাওবান নং ২৬৩১৬]
-       ইমাম নাসাঈ রহ. তার আস-সুনানুল মুজতবাতে। শাইখ নাসিরুদ্দিন আলবানী রহ. এই হাদিসকে সহীহ বলেছেন। [আস-সুনানুল মুজতবা লিন-নাসাঈ; ৬/৩৪ কিতাবুল জিহাদ, গাজওয়াতুল হিন্দ অধ্যায়, পৃষ্ঠা ৫৭১৩; সহীহ সুনানে নাসাঈ; ২/৭৬৬ হাদিস নং ৫৭৫২]
-       (আস-সুনানুল কুবরা লিন-নাসায়ী : ৩/৭২ গাজওয়াতুল হিন্দ অধ্যায়, হাদিস নং ৪৭৭৩)
-       ইমাম ইবনে আবি আসেম রহ. তার কিতাবুল জিহাদে হাসান সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন। [আল-জিহাদ: গাজওয়াতুল বাহার অধ্যায় : ২/৫৬৬ হাদিস নং ৭২২]
-       ইবনে আদি রহ. আল-কামিলু ফিদ-দুআফাউররিজালে। [আল-কামিলু ফিদ দুআফাউররিজাল : ২/১৬১]
-       ইমাম তাবরানী রহ. তার আল-মুজামুল আওসাতে। [আল-মুজামুল আওসাত : ৭/৩২-৪২, হাদিস নং ১৪৭২]
-       ইমাম বাইহাকী রহ. তার আস-সুনানুল কুবরতে। [আস-সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকী : ৯/৬৭, কিতাবুস-সিয়ার, হিন্দুস্তানের কিতাল অধ্যায়]
-       ইমাম ইবনে কাসীর রহ. তার আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়াতে। [আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া ৬/৩২২]
-       ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে দায়লামী রহ. তার মুসনাদুল ফিরদাউসে। [মুসনাদুল ফিরদাউস : ৩/৭৪, হাদিস নং ৪২১৪]
-       ইমাম সুয়ুতী রহ. তার আল জামিউল কাবীরে এবং ইমাম মানাবী রহ. আল জামিউল কাবীরের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাইযুল কাদীরে। [আল জামিউল কাবীর মাআ শরহি ফাইযুল কাদীর : ৪/৭১৩]
-       ইমাম বুখারী রহ. তার আত-তারিখুল কুবরাতে। [আত-তারিখুল কুবরা : ৬/২৭]
-       ইমাম মযী রহ. তার তাহযিবুল কামালে। [তাহযিবুল কামাল : ৩৩/১৫১]
-       ইবনে আসাকির রহ. তার তারিখে দামেশকে। [তারিখে দামেশক : ২৫/৭৪২]

নোটঃ এই হাদিসটি দ্বারা দুটি সময়ের হিন্দের যুদ্ধের দলকেই নির্দেশ করে। কোন কোন আলিমগণ হিন্দে যত যুদ্ধ হয়েছে এবং হবে সকলের জন্যই প্রযোজ্য বলেছেন। এছাড়াও ইমাম মাহদীর আত্মপ্রকাশের আগে হিন্দুস্তানে ইমাম মাহমুদ এর নেতৃত্বে যে যুদ্ধটি হবে সেটিও এই মর্যাদার অধিকারী হবে এবং ঈসা (আঃ) এর আগমনের আগে ইমাম জাহজাহ এর নেতৃত্বে যে যুদ্ধটি হবে সেটিও এই মর্যাদার অধিকারী হবে এবং আরো আশাবাদী এই যে গত হওয়া মুসলিমদের এই হিন্দুস্তানের সকল অভিযান ও যুদ্ধও এই মর্যাদায় ভূষিত হবে ইংশাআল্লাহ।

রসূল একদিন পূর্ব দিকে তাকিয়ে বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছিলেন এমন সময় এক সাহাবি রসূল কে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনি এমন করছেন কেন? রসূল বললেন আমি পূর্ব দিকে বিজয়ের গন্ধ পাচ্ছি। সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন ইয়া রসূলুল্লাহ আপনি কিসের বিজয়ের গন্ধ পাচ্ছেন? রসূল বললেন পূর্ব দিকে মুসলিম ও মুশরিকদের (যারা মুর্তিপুজা করে) সাথে যুদ্ধ শুরু হবে। যুদ্ধটা হবে অসম। মুসলিম সেনাবাহিনী থাকবে সংখ্যায় সীমিত কিন্তু মুশরিক সেনাবিহিনী থাকবে সংখ্যায় অধিক। ঐ যুদ্ধে মুসলিমরা এত বেশি মারা যাবে যে রক্তে মুসলিমদের পায়ের টাকুনি পর্যন্ত ডুবে যাবে। ঐ যুদ্ধে মুসলিমরা তিন ভাগে বিভক্ত থাকবে। এক ভাগ বিশাল মুশরিক বাহিনি দেখে ভয়ে পালিয়ে যাবে তারাই হলো জাহান্নামী। আর এক ভাগ সবাই যুদ্ধে শহিদ হবেন। শেষ ভাগ আল্লাহর ওপর ভরসা করে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে এবং শেষ পর্যন্ত জয় লাভ করবেন। নবীজি মুহাম্মদ বলেন, এই যুদ্ধ বদর সমতুল্য (সুবহানাল্লাহ) তিনি আরো বলেছেন, ঐ সময় মুসলিমরা যে যেখানেই থাকুক না কেন তারা যেন সেই যুদ্ধে শরিক হন।
-       (সুনান ইবনে নাসায়ী খণ্ড ০১, পৃষ্টা ১৫২; তাবরানী)

হযরত কাতাদাহ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলে পাক বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে মুশরিকদের সাথে মুমিনদের একটি জিহাদ হবে, আর সেই যুদ্ধের শহীদরা কতইনা উত্তম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল ! সেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিবেন কে? তিনি বললেন, উমর (রা:) এর বংশের এক দুর্বল বালক।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৮৭)

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি অবশ্যই অবশ্যই পৃথিবী ততদিন ধ্বংস হবে না যতদিন না মানুষ পাঁচজন শাসকের দেখা পাবে। যারা আল্লাহর দ্বীনকে যুক্তি করে ধ্বংস করতে চাইবে। আর তারা পাঁচ শাসকই এক সাথে পৃথিবীতে উপস্থিত থাকবে। আমি (আবু হুরায়রা) বললামঃ হে আল্লাহর রসূল ! সে পাঁচজনের পরিচয় কী? তিনি বললেনঃ তাদের একজন এই পবিত্র ভূমিতে আসবে। যার নাম হবে আমার নামের মতো (মুহাম্মাদ)। সে আরবের দ্বীনকে হাস্যকর বানাবে। আর অভিশপ্ত (ইহুদী-খ্রিষ্টান) জাতিকে বন্ধু বানাবে। দ্বিতীয় সে বিশ্ব শাসক হবে। আর মুসলমানদের নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকবে। তৃতীয় জন হিন্দুস্তানের বাদশা, সে বন্ধু অঞ্চলের মুসলমানদের নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করবে। চতুর্থ জন, হিন্দুস্তানের দ্বিতীয় বাদশা। যে মুসলমানদের হত্যার শপথ নিয়ে শাসন ক্ষমতায় যাবে। আর মুসলিম হত্যায় সে উন্মাদ হয়ে পড়বে। পঞ্চম হলো একজন নারী শাসক, সে শাসন ক্ষমতা হাতে পেয়ে বা'আল দেবতার ইবাদত (অর্থাৎ পূর্বপুরুষদের পূজা) বৃদ্ধি করবে। আর মুশরিকদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে। আর মুসলমানদের হত্যা করবে। অথচ সে হবে মুসলমান। তখন দেখবে সেখানকার দুর্গম নামক অঞ্চলের এক দুর্বল বালক তাদের ষড়যন্ত্রের সমাপ্তি ঘটাবে এবং মুমিনদের বড় বিজয় আনবে।
-       (কিতাবুল আক্বিব ১৭২; আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ১৭৫)

হযরত আলী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল বলেছেন, অচিরেই হিন্দুস্তানের মুশরিকরা মুসলিমদের প্রতি নির্যাতন বৃদ্ধি করবে। সে সময়ে হিন্দুস্তানের পূর্ব অঞ্চল থেকে একজন নেতার প্রকাশ ঘটবে। যার নাম হবে মাহমুদ। পিতার নাম আব্দুল ক্বদির। সে দেখতে খুবই দুর্বল হবে। তার মাধ্যমে আল্লাহ হিন্দুস্তানের মুসলিমদের বিজয় দান করবেন।
-       (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ, অধ্যায়ঃ গাজওয়াতুল হিন্দ, ২৩০; ক্বাশ্ফুল কুফা ২৬১)

আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি, অদূর ভবিষ্যতে হিন্দুস্তানের মুশরিকরা মুসলিমদের উপরে খুবই অত্যাচার করবে। সে সময়ে হিন্দুস্তানের পূর্ব অঞ্চল হতে একটি মুসলিম জামাতের প্রকাশ ঘটবে। যাদের পরিচালনা করবে একজন দুর্বল বালক। যার নাম হবে মাহমুদ, উপাধি নাম হবে হাবীবুল্লাহ। তিনি হিন্দুস্তান বিজয়ের পর কাবার দিকে ধাবিত হবে। আমি (আবু হুরায়রা) জিজ্ঞেস করলাম, "হে আল্লাহর রসূল, সে কাবার দিকে ধাবিত হবে কেন? সেই সময় কি বাইতুল্লাহ ইহুদী-খ্রিষ্টানদের দখলে থাকবে?" তিনি বলেন, না। বরং সে আল্লাহর খলীফা মাহদীর হাতে বাইয়াত নিতে আসবে।
-   (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ, অধ্যায়ঃ গাজওয়াতুল হিন্দ, ২৩১; কিতাবুল আক্বিব ১২৫৬; ক্বাশ্ফুল কুফা ৭৩২; আল আরিফুল ফিল ফিতান ১৭০৩)

হযরত আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের মুসলমানদের উপর ইহুদী-নাসারাগণ অত্যাচার বৃদ্ধি করে দিবে। তখন কেবল খোরাসানীরাই তাদের মোকাবেলায় সুদৃঢ় থাকবে। এরূপ হিন্দুস্তানের মুশরিকরাও মুসলিমদের প্রতি নির্যাতন বৃদ্ধি করে দেবে। সে সময়ে হিন্দুস্তানের পূর্ব ভূখন্ডের দূর্গম নামক একটি অঞ্চল থেকে একজন দুর্বল বালকের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। যার নাম হবে মাহমুদ। তার পিতার নাম আব্দীল। সে মুসলিমদের নেতৃত্ব দিয়ে হিন্দুস্তান বিজয় করবে।
-   (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ, অধ্যায়ঃ গাজওয়াতুল হিন্দ, ২৩২)

হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা:) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রসূল - বলেছেন, শেষ জামানায় ইমাম মাহমুদ ও তার বন্ধু (সাহেবে কিরান) শামীম বারাহর প্রকাশ ঘটবে। আর তাদের মাধ্যমে মুসলমানদের বড় বিজয় আসবে। আর তা যেন মাহদীর আগমনের সময়।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮৭২; আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ, অধ্যায়ঃ শেষ জামানায় আত্মপ্রকাশকারী নেতা)

আবু সাঈদ খুদরী (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, মাহদীর পূর্বে এক জন ইমামের আর্বিভাব হবে আর তার নাম হবে মাহমুদ। তার পিতার নাম হবে আব্দুল। সে দেখতে হবে দুর্বল, আর তার চেহারায় আল্লাহ মায়া দান করবেন। আর তাকে সে সময়ের খুব কম লোকই চিনবে। অবশ্যেই আল্লাহ সেই ইমাম ও তার বন্ধু -যার উপাধি হবে সাহেবে কিরাণ, তাদের মাধ্যমে মুমিনদের একটি বিজয় আনবেন।
-   (ইলমে রাজেন ৩৪৭; আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৫৪; ইলমে তাসাউফ ১২৫৩; আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ)

হজরত হুযাইফা বিন ইয়ামান রা: থেকে বর্ণিত, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি, শেষ জামানায় মাহদির পূর্বে হিন্দের পূর্ব অঞ্চল থেকে একজন আমীর বের হবে এবং সে দুর্গম এলাকার, পাকা নামের জনপদের অধিবাসী হবে। তার নাম মাহমুদ, তার পিতার নাম কদির ও তার মাতার নাম সাহারা হবে এবং তার হাতে হিন্দুস্তানের বিজয় হবে।
-       (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ)

সাহল ইবনু সা'দ (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল বলেছেন, অচিরেই পূর্ব দিকে এক ফিতনার সৃষ্টি হবে (দ্বিতীয় কারবালা)। আর তা হবে মুশরিকদের দ্বারা। তখন মুমিনদের একটি দল তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয় আনবে। আর তাদের সেনাপতি হবে ঐ সময়ের সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি সাহেবে কিরান! আর তাদের পরিচালনা করবে একজন ইমাম। যার নাম হবে মাহমুদ। অবশ্যই তারা মাহদীর আগমন বার্তা নিয়ে আসবে।
-       (তারিখুল বাগদাদ ১২২৯)

হযরত হুযাইফা (রা:) বলেন, রসূলে পাক ﷺ বলেছেন, অবশ্যই হিন্দুস্তানের মুশরিকদের সাথে ঈমানদারদের একটা যুদ্ধ হবে এ যুদ্ধে আল্লাহ তাআলা ঈমানদারদের সফলতা দান করবেন।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮৭৫)

হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, দুর্বল ব্যক্তিরাই জান্নাতের অধিকারী। আর শেষ জামানায় একজন দুর্বল বালকের প্রকাশ ঘটবে। সে দাম্ভিক ও অত্যাচারী মুশরিকদের মুকাবিলা করবে।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮৮০)

বুরায়দা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি, খুব শীঘ্রই মুশরিকরা তাদের বন্ধু অঞ্চলের মুসলমানদের উপর অত্যাচার বৃদ্ধি করে দেবে আর নির্বিচারে হত্যা করবে। তখন সেখানকার দূর্গম নামক অঞ্চল তথা বালাদি লিল উছরো থেকে একজন দুর্বল বালক তাদের মুকাবিলা করবে। আর তার নেতৃত্বেই মুমিনদের বিজয় আসবে। (গাজওয়াতুল হিন্দ বিজয়)। রাবি বলেন, তিনি আরো বলেছেন, তার একজন বন্ধু থাকবে যার উপাধী হবে সৌভাগ্যবান।
-   (আস সুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান ১৭৯১; আসারুস সুনান ৮০৩; আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮৮১)

হযরত হুযাইফা (রা:) বলেন, আমি আল্লাহর রসূল কে বলতে শুনেছি, মানুষের জীবনে এমন একটি সময় আসবে, যখন তারা বছরে দু এক বার বিপর্যস্ত হবে! যার একটি শুরু হবে বায়ু দ্বারা যা মুশরিকদের দূর্গ ক্ষতিগ্রস্তের মাধ্যমে! আর শেষ হবে দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে। আর এই দুর্ভিক্ষ শেষ হতেই মুশরিকরা একটি ফিতনা সৃষ্টি করবে! যার মুকাবিলা করার জন্য হিন্দুস্তানের পূর্ব অঞ্চল থেকে একদল মুসলিম ধাবিত হবে। কিন্তু মুশরিকরা তাদের এমন ভাবে হত্যা করবে যেমন ভাবে তোমরা এক নির্দিষ্ট দিনে (কুরবানীর দিন) পশুগুলোর উপর আল্লাহর নাম স্মরণ করো! ফলে তারা পরাজিত হবে। অনুরূপ আরেকটি মুসলিম দল মুশরিকদের দিকে ধাবিত হবে (মুকাবিলা করতে)। তাদের সাথে আল্লাহর সাহায্য থাকবে। তারাই বিজয়ী। একথা তিনি (রসূল ) তিন বার বললেন। অতঃপর বললেন, তাদের নেতা হবে দুর্বল! আহ্ প্রথম দলটির জন্য কতইনা উত্তম হতো যদি তারা তাদের নেতাকে গ্রহণ করতো! আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল ! তারা তাদের নেতাকে গ্রহণ করবে না কেন? তিনি বললেন, কেননা তারা সে সময় নিজেরাই নিজেদের যোগ্য মনে করবে!
-       (আখীরুজ্জামানা আল মাহাদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ১১৯)

দ্বিতীয় গাজওয়াতুল হিন্দের সময়ের হাদিসগুলোঃ

দ্বিতীয় হিন্দের যুদ্ধের হাদিসগুলো আমরা একসাথে করতে পেরেছি যেই গবেষকের কাছ থেকে তার উক্তিটি আমরা এখানে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

গাজওয়াতুল হিন্দ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভবিষ্যৎবাণীসমূহের মধ্যে ঐ সকল ভবিষ্যৎবাণীকৃত গাজওয়াসমূহের অন্তর্ভূক্ত যেগুলোর ফজিলত সম্পর্কে নবীজী থেকে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত রয়েছে। আহলে ইলমগণ এ হাদিস সমূহের আলোচনা তাদের বিভিন্ন রচনা ও বয়ান-বক্তৃতায় অবশ্যই করে থাকেন। কিন্তু তা সাধারণত কোন রেফারেন্স বা উদ্ধৃতি ছাড়াই। তবে আমরা হাদিসের অসংখ্য মূল কিতাব ঘাঁটাঘাঁটি করে এ সংক্রান্ত প্রায় সকল হাদিস একত্রিত ও বিন্যস্ত করে হাদিসসমূহের সহীহ ও যঈফের মান নির্ণয় করতে আমাদের সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করেছি। অতঃপর এই নববী বাণীসমূহের অর্থ ও মর্মের উপর অনেক চিন্তা-ভাবনা করেছি এবং এগুলো থেকে অর্জিত ফলাফল ও ইশারা এবং ভবিষ্যৎবাণীসমূহকে কাগজের পৃষ্ঠায় স্থানান্তর করেছি। এখন আমরা আমাদের পরিশ্রমের ফসল সকল মুসলমানের খিদমতে উপস্থাপন করতে পেরে অত্যন্ত আনন্দ ও প্রশান্তি অনুভব করছি।

আমাদের জানামতে, এমন হাদিসের সংখ্যা পাঁচটি। যেগুলোর বর্ণনাকারী বিখ্যাত সাহাবায়ে কেরাম হযরত আবু হুরাইরা (রা:) [যার থেকে দুটি হাদিস বর্ণিত], হজরত সাওবান এবং হযরত উবাই ইবনে কাব রাদিআল্লাহু আনহু আজমাঈন এবং তাবে-তাবেঈনদের মধ্যে হজরত সাফওয়ান ইবনে আমর রহ. প্রমূখ। নিম্নে আমরা এই হাদিসসমূহ উল্লেখ করব, অতঃপর এগুলো থেকে নির্ণয়কৃত শরয়ী বিধান, ফায়দা এবং শিক্ষা বর্ণনা করবো ইনশাআল্লাহ।

§  প্রফেসর ড. ইসমাতুল্লাহ, লাহোর ইউনিভার্সিটি, পাকিস্তান

কিতাবুস সিত্তাহ এর সুনানে নাসাঈতে সবচেয়ে সুপরিচিত হাদিসটি পাওয়া যায়। যা দুইজন রাবি থেকে একই বর্ণনায় পাওয়া যায়।

আহমদ ইবন উছমান ইবন হাকিম (রহঃ) ... আবু হুরায়রা (রা:) বলেনঃ রসূলুল্লাহ আমাদেরকে হিন্দুস্তানের জিহাদের ওয়াদা দিয়েছিলেন। যদি আমি ঐ যুদ্ধের সুযোগ পাই, তা হলে আমি তাতে আমার জান-মাল ব্যয় করব। আর যদি আমি তাতে নিহত হই, তা হলে আমি শহীদের মধ্যে উত্তম সাব্যস্ত হব। আর যদি আমি ফিরে আসি, তা হলে আমি আবু হুরায়রা হবো আযাদ বা জাহান্নাম হতে মুক্ত।
-       (যঈফ, সূনান নাসাঈ ৩১৭৩ [ইঃ ফাঃ ৩১৭৬]; আল ফিতান ১২৩৭; মুসনাদে আহমদ ২/২২৯; আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ, ইবনে কাসির ১০/১৯)

মুহাম্মদ ইবন ইসমাঈল ইবন ইবরাহীম (রহঃ) ...আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ আমাদেরকে হিন্দুস্তানের জিহাদের আশ্বাস দিয়েছেন। আমি তা পেলে তাতে আমার জান মাল উৎসর্গ করব। আর যদি আমি নিহত হই, তবে মর্যাদাবান শহীদ বলে গণ্য হব, আর যদি ফিরে আসি, তা হলে আমি আবু হুরায়রা হব আযাদ বা জাহান্নাম হতে মুক্ত।
-       (যঈফ, সূনান নাসাঈ ৩১৭৪ [ইঃ ফাঃ ৩১৭৭])

সর্বপ্রথম হাদিস আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত,

তিনি বলেন, আমার প্রাণপ্রিয় বন্ধু নবীজী আমাকে বলেছেন, এই উম্মতের মাঝে সিন্দ এবং হিন্দের দিকে বাহিনী রওয়ানা হবে। আমার যদি এমন কোন বাহিনীতে অংশগ্রহণের সুযোগ হয় এবং আমি তাতে অংশগ্রহণ করে শহীদ হয়ে যাই তাহলে ঠিক আছে। আর যদি ফেরত আসি তাহলে আমি একজন মুক্ত আবু হুরাইরা হবো। যাকে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দিয়েছেন।
-       (মুসনাদে আহমাদ ৮৮২৩)
-       এই বাক্যের সাথে এই হাদিসটি শুধুমাত্র ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. তার মুসনাদে বর্ণনা করেছেন এবং ইবনে কাসীর রহ. তাঁর উদ্ধৃতিতেই আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া তে বর্ণনা করেছেন। [আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া: গাজওয়াতুল হিন্দ অধ্যায়: ৬/৩২২]
-       কাজী আহমাদ শাকের মুসনাদে আহমাদের ব্যাখ্যাগ্রন্থে এই হাদিসকে হাসান আখ্যা দিয়েছে। [মুসনাদে আহমাদ: ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ, কাজী আহমাদ শাকের: ১৭/১৭ হাদিস নং ৯০৮৮]
-       নবীজী আমাদের সাথে গাজওয়াতুল হিন্দের ওয়াদা করেছেন। হজরত আবু হুরাইরা (রা:) বলেন, আমি যদি তাতে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে যাই, তাহলে আমি আমার জীবন ও সম্পদ তাতে খরচ করবো। আর যদি নিহত হয়ে যাই তাহলে আমি সর্বোত্তম শহীদদের অন্তর্ভূক্ত হবো। আর যদি ফেরত আসি তাহলে এক মুক্ত আবু হুরাইরা হবো। [আস-সুনানুল মুজতবা : ৬/২৪ কিতাবুল জিহাদ, গাজওয়াতুল হিন্দ অধ্যায়; আস-সুনানুল কুবরা লিন-নাসাঈ: ৩/২৮ গাজওয়াতুল হিন্দ অধ্যায়]
-       ইমাম বাইহাকী রহ.ও আস-সুনানুল কুবরা তে এই বাক্যের সাথেই বর্ণনা করেছেন। তাঁর অন্য একটি বর্ণনায় আরেকটু অতিরিক্ত বাক্যও রয়েছে। মুসাদ্দান ইবনে দাউদের উদ্ধৃতিতে ইমাম আবু ইসহাক ফাজারী ইবরাহীম ইবনে মুহাম্মদ রহ. মুহাদ্দিসে শাম এবং মুজাহিদ আলেম, মৃত্যু ১৮৮ হি.- এর সম্পর্কে বলেছেন, তিনি বলতেন, আমার ইচ্ছা হলো, হায়! আমি যদি ঐ সকল গাজওয়াসমূহের পরিবর্তে যা আমি রোম দেশে লড়েছি, মারেবদ অর্থাৎ আরব থেকে হিন্দুস্তান পর্যন্ত পূর্ব দিকের কোন অঞ্চলে সংঘটিত গাজওয়াসমূহে অংশগ্রহণ করতে পারতাম। [আস-সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকী : ৯/১৭৬]
-       ইমাম আবু ইসহাক ফাজারী রহ.- এর এই আগ্রহের কারণ ও তার গুরুত্বের পরিমানের প্রশংসা- হজরত ফুযাইল ইবনে আয়ায রহ.- এর ঐ স্বপ্নের দ্বারা করা যায়, যা ইমাম যাহাবী রহ. সিয়ারু আলামিন নুবালাতে বর্ণনা করেছেন। তিনি স্বপ্নে দেখেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মজলিস চলছে এবং নবীজী পাশে বসা একটি স্থান খালি। আমি তখন এমন সুযোগকে দুর্লভ ও গনিমত মনে করে সেখানে বসার চেষ্টা করলাম। তখন নবীজী এই বলে নিষেধ করলেন, যে এই বসার স্থানটি খালি নয়, বরং আবু ইসহাক ফাজারীর জন্য নির্ধারিত। [সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৮/৫৭২-৫৭৩]
-       ইমাম বাইহাকী রহ. এই বর্ণনা দালায়েলুন নবুওয়াত-এর মধ্যেও উল্লেখ করেছেন এবং তাঁর উদ্ধৃতিতে ইমাম সুয়ুতী রহ. আল-খাসায়িসুল কুবরাতে বর্ণনা করেছেন। [আল-খাসায়িসুল কুবরা লিস-সুয়ুতী : ২/১৯০]
-       এই হাদিসটি নিন্মের মুহাদ্দিসীনগণও সামান্য বাক্যগত পার্থক্যের সাথে বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমাদ রহ. মুসনাদে যদি আমি তাতে শহীদ হই তাহলে আমি হবো উত্তম শহীদ বাক্যের সাথে এনেছেন। শাইখ আহমাদ শাকের রহ. এই হাদিসের সনদকে সহীহ আখ্যা দিয়েছেন। [মুসনাদে আহমাদ, ব্যাখা ও বিশ্লেষণ : আহমাদ শাকের রহ. : ১২/৯৭ হাদিস নং ৭১২৮]
-       ইমাম আহমাদ রহ.- এর সনদে ইবনে কাসীর রহ. তা আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া তে উল্লেখ করেছেন। [মুসনাদে আহমাদ : ২/২২৯, মুসনাদে আবু হুরাইরা রাঃ, হাদিস নং ১৩৭৬; আল-বেদায়া ওয়ান-নেহায়া, গাজওয়াতুল হিন্দ অধ্যায়: ৬/২২৩]
-       আবু নাঈম ইস্পাহানী রহ. হিলইয়াতুল আওলিয়াতে এনেছেন। [হিলইয়াতুল আওলিয়া : ৭/৩১৬-৩১৭]
-       ইমাম হাকেম রহ. আল-মুসতাদরিক আলাস সহিহাইন এ বর্ণনা করে হাদিসের মানের ব্যাপারে চুপ রয়েছেন। যেখানে ইমাম যাহাবী রহ. তাঁর তালখিসে মুসতাদরিক থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছেন। [আল-মুসতাদরিক আলাস সহিহাইন : ৩/৪১৫, হাদিস নং ৭৭১৬]
-       সাঈদ ইবনে মানসুর রহ. তার কিতাব আস-সূনান এর মধ্যে এনেছেন। [আস-সুনানু লি সাঈদ ইবনে মানসুর : ২/৮৭১; হাদিস নং ৪৭৩২]
-       খতীবে বাগদাদী রহ. তারীখে বাগদাদ গ্রন্থে আমি তাতে নিজেকে নিজে বিলিয়ে দেবো। বাক্যের সাথে এনেছেন। [তারীখে বাগদাদ : ১০/৫৪১]
-       ইমাম বুখারী রহ.-এর উস্তাদ নুয়াঈম ইবনে হাম্মাদ রহ. তার আল-ফিতান গ্রন্থে এনেছেন। [আল-ফিতান : গাজওয়াতুল হিন্দ অধ্যায়, ১/৯০৪ হাদিস নং ৭৩২১] [আল ফিতান: নুয়াঈম বিন হাম্মাদ ১২৩৭]
-       ইবনে আবি আসেম রহ. তার আল-জিহাদ গ্রন্থে নবীজী আমাদের সাথে গাজওয়াতুল হিন্দের ওয়াদা করেছেন। হজরত আবু হুরাইরা (রা:) বলেন, আমি যদি তাতে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে যাই, তাহলে আমি আমার জীবন ও সম্পদ তাতে খরচ করবো। আর যদি নিহত হয়ে যাই তাহলে আমি সর্বোত্তম শহীদদের অন্তর্ভূক্ত হবো। বাক্যের সাথে এনেছেন। তার সনদ হাসান বলেছেন। [আল-জিহাদ : গাজওয়াতুল বাহার অধ্যায় : ২/ ৮৬৬ হাদিস নং ১৯২]
-       ইবনে আবি হাতেম রহ. তার আল-ইলাল গ্রন্থে আমি যদি তাতে নিহত হই তাহলে রিজিকপ্রাপ্ত জীবিত হবো, অর্থাৎ শহীদ হবো। আর ফিরে আসি তাহলে মুক্ত। বাক্যসহ এনেছেন। [আল-ইলাল : ১/৪৩৩]
-       এ ছাড়াও হাদিসের সনদ বিশেষজ্ঞগণ থেকে ইমাম বুখারী রহ. আত-তারিখুল কুবরা গ্রন্থে এনেছেন। [আত-তারিখুল কুবরা : ২/৩৪২]
-       ইমাম মযী তাহযিবুল কামাল গ্রন্থে এনেছেন। [তাহযিবুল কামাল : ৪/৪৯৪]
-       ইমাম হাজার আসকালানী রহ. তাহযিবুত তাহযিব গ্রন্থে এই হাদিস বর্ণনা করেছেন। [তাহযিবুত তাহযব : ২/২৫]
আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত দ্বিতীয় হাদিস-

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ একদা হিন্দের আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, তোমাদের পক্ষ থেকে একদল সৈন্য হিন্দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলে আল্লাহ তাআলা হিন্দের বিপক্ষে তোমাদেরকে জয়লাভ করাবেন। তাদের নেতা-রাজাদের শিকল দ্বারা বেঁধে বায়তুল মোকাদ্দাসে নিয়ে আসা হবে। আল্লাহ তাআলা তাদের (যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের) যাবতীয় গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। অতঃপর যখন সেই বিজয়ী মুসলিমরা (শামে) ফিরে আসবে তখন ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালামকে (শামে) সিরিয়াতে পাবে। হযরত আবু হুরায়রা (রা:) উল্লিখিত হাদীস বর্ণনার পর বলেন, আমি যদি হিন্দের সেই যুদ্ধ পাই তাহলে আমি আমার নতুন ও পুরাতন সকল সম্পদ বিক্রি করে দেবো এবং তাতে অংশগ্রহণ করবো। যখন আল্লাহ তাআলা আমাকে বিজয় দান করবেন এবং আমি ফিরে আসবো, তখন আমি এক (জাহান্নাম হতে) মুক্ত আবু হুরায়রা হয়ে ফিরে আসবো। যে সিরিয়াতে এমন মর্যাদা নিয়ে ফিরে আসবে, সে সেখানে ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালামকে পাবে। হে আল্লাহর রসূল ঐ সময় আমার একান্ত ইচ্ছে হলো, যে আমি তাঁর নিকট পৌঁছে তাঁকে বলবো যে, আমি আপনার সাহাবী। (বর্ণনাকারী বলেন) নবীজী আবু হুরাইরার (রা:) একথা শুনে মুচকি হাসলেন এবং হাসি দিয়ে বললেন, অনেক কঠিন (অনেক দূর) বা ভালো ভালো।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২৩৬ [পথিক প্রকা: ১২৩২; তাহকীক: যঈফ])

ইসহাক ইবনে রাহুবিয়া রহ. ও তার মুসনাদে উল্লেখ করেছেন। তার বর্ণনায় কিছুটা সংযোজন রয়েছে। তাই তার বর্ণনাটিও আমরা নিন্মে হুবহু উল্লেখ করে দিচ্ছি-

হজরত আবু হুরাইরা (রা:) বলেন, একদিন রসূল হিন্দুস্তানের আলোচনা করতে গিয়ে বললেন, নিশ্চয়ই তোমাদের একটি দল হিন্দুস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং আল্লাহ তাআলা ঐ মুজাহিদদেরকে বিজয় দান করবেন। এমনকি ঐ মুজাহিদরা মুশরিকদের শাসকদেরকে ডান্ডাবেড়ি পড়িয়ে বন্দি করে নিয়ে আসবে। আল্লাহ তাআলা ঐ সকল মুজাহিদকে ক্ষমা করে দেবেন। অতঃপর যখন তারা ফিরে আসবে, তখন ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালামকে সিরিয়াতে পাবে। হজরত আবু হুরাইরা (রা:) বলেন আমি যদি সেই গাজওয়া পেয়ে যাই, তাহলে আমি আমার নতুন ও পুরাতন সকল সম্পদ বিক্রি করে দেবো এবং তাতে অংশগ্রহণ করবো। যখন আল্লাহ তাআলা আমাকে বিজয় দান করবেন এবং আমি ফিরে আসবো তখন আমি এক মুক্ত আবু হুরাইরা হয়ে ফিরে আসবো। সিরিয়াতে যখন আসবো সেখানে ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালামের সাথে সাক্ষাত করবো। হে আল্লাহর রসূল ঐ সময় আমার একান্ত ইচ্ছে হলো, আমি তাঁর নিকট পৌঁছে তাঁকে বলবো, আমার আপনার পবিত্র সংস্রবের সৌভাগ্য নসিব হয়েছে। (বর্ণনাকারী বলেন) যে নবীজী আবু হুরাইরা (রা:) এর একথা শুনে মুচকি হাসলেন।
-       (মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহুবিয়া; ১/২৬৪, হাদিস নং ৭৩৫)

হজরত কাব (রা:) এর হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, বাইতুল মুকাদ্দাসের এক বাদশাহ হিন্দের দিকে একটি বাহিনী পাঠাবে। মুজাহিদগণ হিন্দুস্তানে যুদ্ধ করে তাদের যাবতীয় সম্পদ উপর দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করবে। অতঃপর ঐ বাদশাহ সেই ধনভান্ডারকে বাইতুল মুকাদ্দাসের সংস্কার ও সৌন্দর্যের কাজে ব্যয় করবে। সেই বাহিনী হিন্দুস্তানের নেতাদেরকে ডান্ডাবেড়ি পড়িয়ে ঐ বাদশাহর সামনে উপস্থিত করবে। তখন প্রায় গোটা পৃথিবী তার শাসনের অধীনে থাকবে (অর্থাৎ তিনিই মুসলিমদের আমীর থাকবেন)। ভারতে তাদের অবস্থান দাজ্জালের আবির্ভাব হওয়া পর্যন্ত থাকবে।
-       এই বর্ণনাটি ইমাম বুখারী রহ.- এর উস্তাদ নুয়াঈম ইবনে হাম্মাদ রহ. তার কিতাবুল ফিতানে বর্ণনা করেছেন। তবে তাতে হজরত কাব (রা:) থেকে বর্ণনা করার বর্ণনাকারীর নাম নাই। এজন্য এই হাদিসটি বিচ্ছিন্ন হাদিসের অন্তর্ভূক্ত। [আল-ফিতান; গাজওয়াতুল হিন্দ অধ্যায়, ১/৯০৪, হাদিস নং ৩৫২১]
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২৩৫ [পথিক প্রকা: ১২৩১; তাহকীক: যঈফ])

হজরত সাফওয়ান ইবনে আমর (রা:) থেকে বর্ণিত এবং হুকুমের দিক থেকে মারফু দরজার অন্তর্ভূক্ত। তিনি বলেন, তাকে কিছু লোকে বলেছেন, নবীজী বলেছেন, আমার উম্মতের একদল লোক ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বিজয়ী করবেন। এক পর্যায়ে তারা ভারতের রাজা-নেতাদের শিকল দিয়ে বেঁধে নিয়ে আসবে। আল্লাহ তাআলা তাদের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দিবেন এবং তারা শামের দিকে ফিরে যাবে। অতঃপর শাম দেশে হযরত ঈসা (আঃ) কে পেয়ে যাবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২৩৯ [পথিক প্রকা: ১২৩৫; তাহকীক: যঈফ])

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ