৬.৫৬ বিশ্বে বিপর্যয় সৃষ্টি হবে

 আবু খাইসামাহ, যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু মিহরান আর রাযী (রহঃ) ..... নাওয়াস ইবনু সামআন (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সকালে রসূলুল্লাহ দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন। আলোচনার সময় তিনি তার ব্যক্তিত্বকে তুচ্ছ করে তুলে ধরেন। পরে অনেক গুরুত্ব সহকারে উপস্থিত করেন যাতে তাকে আমরা ঐ বৃক্ষরাজির নির্দিষ্ট এলাকায় (আবাসস্থল সম্পর্কে) ধারণা করতে লাগলাম। এরপর আমরা সন্ধ্যায় আবার তার কাছে গেলাম। তিনি আমাদের মধ্যে এর প্রভাব দেখতে পেয়ে বললেন, তোমাদের ব্যাপার কি? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল ! আপনি সকালে দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং এতে আপনি কখনো ব্যক্তিত্বকে তুচ্ছ করে তুলে ধরেছেন, আবার কখনো তার ব্যক্তিত্বকে বড় করে তুলে ধরেছেন। ফলে আমরা মনে করেছি যে, দাজ্জাল বুঝি এ বাগানের মধ্যেই বিদ্যমান। এ কথা শুনে তিনি বললেন, দাজ্জাল নয়, বরং তোমাদের ব্যাপারে অন্য কিছুর আমি অধিক ভয় করছি। তবে শোন, আমি তোমাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকা অবস্থায় যদি দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ হয় তবে আমি নিজেই তাকে প্রতিহত করব। তোমাদের প্রয়োজন হবে না। আর যদি আমি তোমাদের মাঝে না থাকাবস্থায় দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ হয়, তবে প্রত্যেক মুমিন লোক নিজের পক্ষ হতে তাকে প্রতিহত করবে। প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আল্লাহ তাআলাই হলেন আমার পক্ষ হতে তত্ত্বাবধানকারী।

দাজ্জাল যুবক এবং ঘন চুল বিশিষ্ট হবে, চোখ আঙ্গুরের ন্যায় হবে। আমি তাকে কাফির আবদুল উয্যা ইবনু কাতান এর মতো মনে করছি। তোমাদের যে কেউ দাজ্জালের সময়কাল পাবে সে যেন সূরা আল-কাহফ এর প্রথমোক্ত আয়াতসমূহ পাঠ করে। সে ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যপথ হতে আবির্ভূত হবে। সে ডানে-বামে দুর্যোগ সৃষ্টি করবে। হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা অটল থাকবে। আমরা প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রসূল ! সে পৃথিবীতে কয়দিন অবস্থান করবে? উত্তরে রসূলুল্লাহ বললেন, চল্লিশ দিন পর্যন্ত। এর প্রথম দিনটি এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন এক মাসের সমান এবং তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের সমান হবে। অবশিষ্ট দিনগুলো তোমাদের দিনসমূহের মতই হবে।

আমরা প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রসূল ! যেদিন এক বছরের সমান হবে, সেটাতে এক দিনের সালাতই কি আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে? উত্তরে তিনি বললেন, না, বরং তোমরা এদিন হিসাব করে তোমাদের দিনের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে নিবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল ! দুনিয়াতে দাজ্জালের অগ্রসরতা কি রকম বৃদ্ধি পাবে? তিনি বললেন, বাতাসের প্রবাহ মেঘমালাকে যেরকম হাঁকিয়ে নিয়ে যায়। সে এক কাওমের কাছে এসে তাদেরকে কুফুরীর দিকে ডাকবে। তারা তার উপর ঈমান আনবে এবং তার আহ্বানে সাড়া দিবে। অতঃপর সে আকাশমণ্ডলীকে আদেশ করবে। আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে এবং ভূমিকে নির্দেশ দিবে, ফলে ভূমি গাছ-পালা ও শস্য উৎপন্ন করবে। তারপর সন্ধ্যায় তাদের গবাদি পশুগুলো পূর্বের চেয়ে বেশি লম্বা কুজ, প্রশস্ত স্তন এবং পেটভর্তি অবস্থায় তাদের কাছে ফিরে আসবে।

তারপর দাজ্জাল অপর এক কাওমের কাছে আসবে এবং তাদেরকে কুফুরীর প্রতি ডাকবে। তারা তার কথাকে উপেক্ষা করবে। ফলে সে তাদের নিকট হতে প্রত্যাবর্তন করবে। অমনি তাদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ ও পানির অনটন দেখা দিবে এবং তাদের হাতে তাদের ধন-সম্পদ কিছুই থাকবে না। তখন দাজ্জাল এক পতিত স্থান অতিক্রমকালে সেটাকে সম্বোধন করে বলবে, তুমি তোমার গুপ্তধন বের করে দাও। তখন জমিনের ধন-ভাণ্ডার বের হয়ে তার চতুষ্পার্শে একত্রিত হতে থাকবে, যেমন মধু মক্ষিকা তাদের সর্দারের চারপাশে সমবেত হয়।

অতঃপর দাজ্জাল এক যুবক ব্যক্তিকে ডেকে আনবে এবং তাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করে তীরের লক্ষ্যস্থলের ন্যায় দুটুকরো করে ফেলবে। তারপর সে আবার তাকে আহবান করবে। যুবক আলোকময় হাস্যোজ্জল চেহারায় তার সম্মুখে এগিয়ে আসবে। এ সময় আল্লাহ রব্বুল আলামীন ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ) কে প্রেরণ করবেন। তিনি দু ফেরেশতার কাঁধের উপর ভর করে ওয়ারস ও জাফরান রং এর জোড়া কাপড় পরিহিত অবস্থায় দামেশক নগরীর পূর্ব দিকের উজ্জ্বল মিনারে অবতরণ করবেন। যখন তিনি তার মাথা ঝুঁকবেন তখন ফোটা ফোটা ঘাম তার শরীর থেকে গড়িয়ে পড়বে। তিনি যে কোন কাফিরের কাছে যাবেন সে তার শ্বাসের বাতাসে ধ্বংস হয়ে যাবে। তার দৃষ্টি যতদূর পর্যন্ত যাবে তাঁর শ্বাসও ততদূর পর্যন্ত পৌছবে। তিনি দাজ্জালকে সন্ধান করতে থাকবেন। অবশেষে তাকে বাবে লুদ নামক স্থানে গিয়ে পাকড়াও করবেন এবং তাকে হত্যা করবেন।

অতঃপর ঈসা (আঃ) ঐ সম্প্রদায়ের নিকট যাবেন, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা দাজ্জালের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছেন। ঈসা (আঃ) তাদের কাছে গিয়ে তাদের চেহারায় হাত বুলিয়ে জান্নাতে তাদের স্থানসমূহের ব্যাপারে খবর দিবেন। (প্রয়োজনীয় অংশ)
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২৬৩-(১১০/২৯৩৭) [ইঃ ফাঃ ৭১০৬, ইঃ সেঃ ৭১৬০])

হারূন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ..... উম্মু শারীক (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী কে বলতে শুনেছি যে, লোকেরা দাজ্জালের আতঙ্কে পর্বতে পালিয়ে যাবে। এ কথা শুনে উম্মু শারীক বললেন, হে আল্লাহর রসূল ! সেদিন আরবের মানুষেরা কোথায় থাকবে? জবাবে তিনি বললেন, তখন তারা সংখ্যায় নগণ্য হবে।
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২৮৩-(১২৫/২৯৪৫) [ইঃ ফাঃ ৭১২৬, ইঃ সেঃ ৭১৭৯]; সুনান তিরমিযী ৩৯৩০; রিয়াযুস স্বা-লিহীন তাঃ পাঃ ৬/১৮২২ [আন্তঃ ১৮১৩]; মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৭৭; সহীহুল জামি ৫৪৬১; সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৭৯৭; আল মুজামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ২০৭৫৯; মুসনাদে আহমাদ ২৭০৭৩, ২৭৬৬১)

যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ...... আবু দাহমা, আবু কাতাদাহ্ (রা:) ও অনুরূপ আরো কতক ব্যক্তি হতে বর্ণিত। তারা বলেন, হিশাম ইবনু আমির এর সামনে দিয়ে আমরা ইমরান ইবনু হুসায়নের কাছে যেতাম। একদিন হিশাম (রা:) বললেন, তোমরা আমাকে অতিক্রম করে এমন লোকের কাছে যাচ্ছ, যারা আমার চেয়ে রসূলুল্লাহ এর নিকট বেশি উপস্থিত হয়নি এবং যারা রসূলুল্লাহ এর হাদীসের ব্যাপারে আমার চেয়ে বেশি জানে না। আমি রসূলুল্লাহ কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, আদম (আঃ) এর সৃষ্টির পর হতে কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে দাজ্জালের চেয়ে মারাত্মক আর কোন (ফিতনা) সৃষ্টি হবে না।
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২৮৫-(১২৬/২৯৪৬) [ইঃ ফাঃ ৭১২৮, ইঃ সেঃ ৭১৮১]; রিয়াযুস স্বা-লিহীন তাঃ পাঃ ৭/১৮২৩ [আন্তঃ ১৮১৪])

আন-নাওয়াস ইবনু সামআন আল-কিলাবী (রা:) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তিনি বলেনঃ আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান থাকতে যদি সে আবির্ভূত হয় তবে তোমাদের পক্ষ থেকে আমিই তার প্রতিপক্ষ হবো। আর আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান না থাকা অবস্থায় যদি সে আবির্ভূত হয় তবে প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজেই তার প্রতিপক্ষ হতে হবে। আর আল্লাহ হবেন প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আমার পক্ষে দায়িত্বশীল। তোমাদের মাঝে যে কেউ তাকে পাবে, সে যেন সূরা আল-কাহফের প্রথম কয়েকটি আয়াত পাঠ করে; কেননা এটাই হবে ফিতনা থেকে তার নিরাপত্তার প্রধান উপায়। আমরা বললাম, সে পৃথিবীতে কতদিন থাকবে? তিনি বললেনঃ চল্লিশ দিন। একদিন হবে এক বছরের সমান, একদিন হবে এক মাসের সমান ও একদিন হবে এক সপ্তাহের সমান, আর বাকী দিনগুলো হবে তোমাদের সাধারণ দিনগুলোর সমান। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! যে দিনটি এক বছরের সমান হবে, সে দিনে একদিন ও এক রাতের সালাত কি আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে? তিনি বললেনঃ না, তোমরা অনুমান করে দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করে (সালাত পড়বে)। অতঃপর ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ) দামেশকের পূর্ব প্রান্তে একটি সাদা মিনারে অবতরণ করবেন এবং লুদ্দ নামক স্থানের দ্বারপ্রান্তে দাজ্জালকে নাগালে পাবেন এবং হত্যা করবেন।
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (আলবানী একাঃ) ৪৩২১ [ইঃ ফাঃ ৪২৭০]; মুসলিম; তিরমিযী; মুসনাদে আহমাদ)

আবু উমামা বাহেলি (রা:) রসূল থেকে বর্ণনা করেন, দাজ্জালের স্থায়ীত্বের সময় হবে চল্লিশ দিন। সুতরাং, এক দিন হবে এক বছরের সমান এবং আরেক দিন তার চেয়ে কম। এভাবে এক দিন হবে এক মাসের সমান এবং আরেক দিন তার চেয়ে কম। এভাবে এক দিন হবে এক সপ্তাহের সমান এবং আরেক দিন তার চেয়ে কম। এভাবে এক দিন হবে দীর্ঘ সময়ের এবং আরেক দিন তার চেয়ে কম। তার শেষ দিন হবে কাগজে আগুনের স্ফুলিঙ্গের সময়ের মত। এমনকি এক ব্যক্তি সকাল বেলায় মদিনার এক গেট দিয়ে প্রবেশ করবে, আর সে অন্য গেটে পৌঁছার আগেই সূর্যাস্ত হয়ে যাবে। তারা বললেন, হে আল্লাহর রসূল ! আমরা সেই ক্ষুদ্র সময়গুলোতে কিভাবে নামাজ আদায় করবো? উত্তরে তিনি বললেন, তোমরা সে সময়গুলোতে নামাজের সময় নির্ধারণ করবে, যেমনিভাবে বর্তমান দীর্ঘ সময়ে করে থাকো। অতঃপর নামাজ আদায় করবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৫৫১; তাহকীক: মারফু, জাইয়িদ)

আবু ইয়াফুর রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আমি আবু আমর শাইবানি থেকে শুনেছি- তিনি বলেন, আমি হুযাইফা (রা:) কে বলতে শুনেছি, দাজ্জালের ফিতনা হবে চল্লিশ দিন।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৫৫২; তাহকীক: মাওকুফ, সহীহ)

জুনাদা ইবনু আবু উমাইয়া (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিদের মধ্য থেকে একজন সাহাবিকে বলতে শুনেছেন যে, রসূল বলেছেন, দাজ্জাল চল্লিশ দিন অবস্থান করবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৫৫৭; তাহকীক: মারফু, সহীহ; সুনান প্রণেতাগণ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন)

হাসান রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূল বলেছেন, সেদিন মুমিনদের খাদ্য হবে আল্লাহ তায়ালার তাসবিহ, তাহলিল এবং আল্লাহ তায়ালার তাহমিদ বা প্রশংসা।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৫২৬; তাহকীক: মারফু, মুরসাল, যঈফ)

আমর ইবনু আবু সুফিয়ান এক আনসারি ব্যক্তি থেকে, তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতিপয় সাহাবি থেকে বর্ণনা করে বলেন রসূল দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করেন, উক্ত আলোচনায় বলেন, দাজ্জাল মদিনার ছিদ্রের নিকট আসবে, তার উপর মদিনায় ছিদ্রপথ দিয়ে প্রবেশ করা হারাম। অতঃপর মদিনা তার অধিবাসীসহ একবার বা দুইবার কেঁপে উঠবে। ফলে সেখান থেকে প্রত্যেক পুরুষ মুনাফিক ও মহিলা মুনাফিক বের হয়ে যাবে। অতঃপর দাজ্জাল সিরিয়ার দিকে পলায়ন করবে। অতঃপর সে তাদের ঘিরে ফেলবে। আর অবশিষ্ট মুসলমানগণ সিরিয়ার পাহাড়গুলো থেকে একটি পাহাড়ের চূড়া দিয়ে নিজেদের আত্মরক্ষা করবে। অতঃপর দাজ্জাল তাদের ঘিরে ফেলবে এবং উক্ত পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান নিবে। এমনকি তাদের উপর বিপদ দীর্ঘ হবে। মুসলমানদের থেকে এক ব্যক্তি বলবে, হে মুসলমানগণ! কতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা এমনভাবে চলবে। অথচ আল্লাহর শত্রু তোমাদের পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান নিয়েছে। তোমাদের হাতে দুটি বিষয় রয়েছে, একটি হল আল্লাহর রাস্তায় শহিদ হবে। আরেকটি হল, আর নয় তোমরা পলায়ন করবে। অতঃপর সকল মুসলমান মৃত্যুর উপর বাইয়াত গ্রহণ করবে, যা আল্লাহ তায়ালা জানবেন। তারা তাদের মৃত্যুর উপর গৃহীত বাইয়াত তাদের অন্তর থেকে সত্য হবে। অর্থাৎ তারা অন্তর থেকে সত্য বাইয়াত করবে। অতঃপর তাদের এমন অন্ধকার ঘিরে নিবে, যে জন্য কোন লোকের কব্জি পর্যন্ত দেখবে না। অতঃপর ঈসা আলাইহিস সালাম অবতরণ করবেন।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৫৪৮; তাহকীক: মারফু। অর্থগতভাবে মোটামুটি সহীহ)

কাব রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন দাজ্জাল বের হবে, তখন মুসলমানদের দূর্গ (শাসন এলাকা) হবে বাইতুল মুকাদ্দাস।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ পথিক প্রকাঃ ১৫৭৩)

 

৬.৫৬.১ দাজ্জালের ফিতনা হতে বাঁচার উপায়

আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ কে তাঁর নামাযের মধ্যে দাজ্জালের ফিতনা থেকে (আল্লাহ তাআলার) আশ্রয় চাইতে শুনেছি।
-       (সহিহ বুখারী ৭১২৯; মুসনাদে আহমদ ২৫৭৯৫)

আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ এরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যখন (নামাযের মধ্যে) তাশাহুদ পাঠ করবে, তখন সে যেন (আমার প্রতি দরূদ পাঠের পর দোয়ার মধ্যে) অবশ্যই চারটি জিনিস থেকে আল্লাহর আশ্রয় চায়। সে (যেন) বলে:

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ

  অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় কামনা করি জাহান্নামের আযাব থেকে, কবরের আযাব থেকে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং মাসিহ দাজ্জালের ফিতনার অনিষ্টতা থেকে।
-       (সহিহ মুসলীম ৫৮৮; সুনানে তিরমিযী ৩৫২৮; সুনানে নাসায়ী ১২৯৩; সুনানে আবু দাউদ ৩৩; সুনানে ইবনে মাজাহ ৮৯৯; মুসনাদে আহমদ ৮১৯৬; সুনানে দারেমী ১৩১)

আবূ দরদা (রা:) হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম দিক থেকে দশটি আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের (ফিতনা) থেকে পরিত্রাণ পাবে।
-       (সহীহ, রিয়াযুস স্বা-লিহীন তাঃ পাঃ ১৩/১০২৮ [আন্তঃ ১০২১]; সহীহ মুসলিম ৮০৯; সুনানে তিরমিযী ২৮৮৬; আবূ দাউদ ৩৭৬৫, ৪৩২৩; মুসনাদে আহমাদ ২১২০০, ২১২০৫, ২৬৯৭০, ২৬৯৯২)
-       আমি (আলবানী) বলছিঃ দ্বিতীয় বর্ণনাটি শায আর প্রথম বর্ণনাটি নিরাপদ (সহীহ্) যেমনটি আমি সিলসিলাহ্ সহীহাহ্ গ্রন্থে (নং ৫৮২) তাহকীক্ব করেছি। এর সাক্ষ্য দিচ্ছে নাওয়াস ইবনু সামআনের আগত হাদীসটি। যেটিকে (১৮১৭) নম্বরে লেখক উল্লেখ করেছেন। কারণ এতে বলা হয়েছে যে, তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি দাজ্জালকে পেয়ে বসবে সে যেন তার বিপক্ষে সূরা কাহাফের প্রথম অংশ পাঠ করে।

হযরত কাব (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন যে ব্যক্তি দাজ্জালের ফিতনা তে ধৈর্য ধারণ করবে তার ফিতনায় পতিত হবে না। সে আর কখনো জীবিত মৃত অবস্থায় ফিতনার মধ্যে পড়বে না। আর যে ব্যক্তি দাজ্জালকে পাবে অথচ তার অনুসরণ করবে না, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। আর যখন কোন ব্যক্তি খালেছ থাকবে আর দাজ্জালকে একবার মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে, সে বলবে তুমি কে সেটা আমি ভাল করেই জানি। তুমি তো দাজ্জাল। অতঃপর সে সূরা কাহাফের প্রথমাংশ তেলাওয়াত করবে। আর দাজ্জাল তাকে তার ফিতনায় ফেলতে পারবে না। তার জন্য উক্ত আয়াতগুলি দাজ্জাল থেকে তাবীজের মত হবে। সুতরাং সুসংবাদ ঐ ব্যক্তির জন্য যে দাজ্জালের ফিতনা, বিপদ ও হীনতার পূর্বে তার ঈমান নিয়ে নাজাত পেল। আর যে তাকে পাবে সে যেন মুহাম্মাদ এর উত্তম সাথীদের মত দাজ্জালের বিরুদ্ধে দন্ডায়মান থাকে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৫২৪ [পথিক প্রকা: ১৫২২; তাহকীক: যঈফ])

জুনাদা ইবনু আব উমাইয়া (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি রসূল এর এক সাহাবি থেকে শুনেছেন, তিনি বলেন, রসূল আমাদের মাঝে খুতবা দেয়ার জন্য দাঁড়ালেন এবং বললেন, নিশ্চয়ই দাজ্জাল প্রত্যেক ঘাঁটে যাবে, তবে চারটি মসজিদ ব্যতীত। আর উক্ত মসজিদগুলো হল মসজিদুল হারাম, মদিনার মসজিদ, তূরে সাইনামিসর ও ফিলিস্তিন দেশের মধ্যে একটি মরুভূমি-এর মসজিদ এবং মসজিদে আকসা।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ পথিক প্রকাঃ ১৫৭৫)

আবু সাঈদ খুদরি (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সূরা কাহাফ যেভাবে নাযিল হয়েছে সেভাবে তিলাওয়াত করবে, তা তার ও মক্কার মাঝে তা আলোকিত করে দিবে। আর যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের শেষাংশ তিলাওয়াত করবে অতঃপর দাজ্জালকে পাবে, তার উপর দাজ্জাল কোন প্রভাব ফেলতে পারবে না।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ পথিক প্রকাঃ ১৫৭৬)

আবু সাঈদ খুদরি (রা:) বলেন, যে ব্যক্তি সূরা কাহাফ যেভাবে নাযিল হয়েছে সেভাবে তিলাওয়াত করবে, অতঃপর দাজ্জালের জন্য বের হবে, তার উপর দাজ্জাল কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। আর তার উপর দাজ্জালের (প্রভাব ফেলার) কোনো পথও থাকবে না।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ পথিক প্রকাঃ ১৫৭৯)

হিশাম বিন আমের (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ এরশাদ করেন, নিশ্চয়ই দাজ্জালের মাথার পিছনের (চুলগুলো পাকানো পাকানো এবং) খুব বেশি হেলেদুলে ওঠে। (সে যখন নিজকে রব/প্রভু দাবী করবে, তখন) যে (তাকে) বলবে: তুমি আমার রব (প্রভু), সে (তার) ফিতনায় পড়বে। আর যে বলবে: তুই (একটা ফিতনাবাজ ভন্ড/প্রতারক/মিথ্যুক! তুই) মিথ্যা বলেছিস, رَبِّيَ اللَّهُ وَعَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيبُ আমার রব হলেন আল্লাহ, আমি তাঁর উপরই তাওয়াক্কুল (ভরসা) করি এবং তাঁরই দিকে আমি ফিরে যাবো, তখন আর সে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না, অথবা বলেছেন: তার উপরে (দাজ্জালের) কোনো ফিতনা (কার্যকর) হবে না।
-       (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ১১/৩৯৫ হাঃ ২০৮২৮; মুসনাদে আহমদ ১৫৮২৬; মুসতাদরাকে হাকিম ৪/৫০৮)

রসূলুল্লাহ এরশাদ করেন, নিশ্চয়ই তোমাদের পরে একটি পথভ্রষ্ঠ মিথ্যুক (আবির্ভূত) হবে। আর তার মাথার পিছনের (চুলগুলো পাকানো পাকানো এবং) খুব বেশি হেলেদুলে ওঠে। একথা তিনবার বললেন। আর নিশ্চয়ই অতি শিঘ্রই সে বলবে: আমি তোমাদের (মানবকুলের) রব/প্রভু। তখন যে (তাকে) বলবে: তুমি আমাদের রব (প্রভু) নও, তুমি (একটা ফিতনাবাজ ভন্ড/প্রতারক/মিথ্যুক!), বরং আমাদের রব হলেন আল্লাহ, আমরা তাঁর উপরই তাওয়াক্কুল (ভরসা) করি এবং তাঁরই কাছে আমরা ফিরে যাবো, আমরা আল্লাহ কাছে তোমার থেকে পানাহ চাই, তখন আর সে তার উপরে কোনো (ফিতনার) প্রভাব খাটাতে পারবে না।
-       (মুসনাদে আহমদ ১৬/৫৪ হাঃ ২৩০৫২)

আবুদ দাহমাহ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইমরান ইবনুল হুসাইন রাঃ কে বলতে শুনেছি, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ কেউ দাজ্জালের আবির্ভাবের কথা শুনলে সে যেন তার থেকে দূরে চলে যায়। আল্লাহর কসম! যে কোনো ব্যক্তি তার নিকট এলে সে অবশ্যই মনে করবে যে, সে ঈমানদার। অতঃপর সে তার দ্বারা তার মধ্যে জাগরিত সন্দেহপূর্ণ বিষয়ে অনুসরণ করবে। তিনি এরূপই বলেছেন।

ইঃ ফাঃ অনুবাদে রয়েছে- আল্লাহর শপথ! যে ব্যক্তি তার কাছে যাবে, সে তাকে মুমিন মনে করে, তার অনুসারী হয়ে যাবে। কেননা, তার কাছে সন্দেহে নিক্ষেপকারী বস্তু থাকবে।     -       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪৩১৯ [ইঃ ফাঃ ৪২৬৮]; মুসনাদে আহমাদ)

ইমরান ইবনু হুসায়ন (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেন: যে ব্যক্তি দাজ্জালের আগমনের সংবাদ শুনে, সে যেন তার নিকট থেকে দূরে সরে থাকে। আল্লাহর শপথ! কোন ব্যক্তি নিজেকে মুমিন ধারণা করে তার কাছে যাবে, কিন্তু তার তেলেসমাতি কর্মকাণ্ডের ধোঁকায় পড়ে সে তার অনুকরণ করে ফেলবে।
-       (সহীহ, মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৮৮; সহীহুল জামি ১১২৪৭; মুসনাদে আহমাদ ১৯৮৮৮; আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ১৪৯৫৪; আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৮৬১৬)



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ