৭.২ ঐ সকল দেশের সরকার, সরকারী বাহিনী ও যারা ইসলামী আইনকে প্রত্যাখ্যান করে

 যারা ইসলাম ধর্মের মৌলিক নীতিগুলোকে অস্বীকার করে, ইসলামী আইনকে বাতিল করে, আল্লাহর বিধানকে প্রত্যাখ্যান করে, তারা ইসলামের ও আমাদের শত্রু।

বর্তমানে পৃথিবীর শতকরা ৯০% দেশই চলে গণতন্ত্র দিয়ে। আর বাকি যা আছে তা হলো সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি। খুব কম মুসলিম দেশই আছে যারা ইসলামী আইনের কিছু অংশ ধরে রাখতে পেরেছে আর কিছু দেশ যা যুদ্ধে লিপ্ত আছে যেমন আফগান, আফ্রিকার দেশগুলো, তাদের কথা আর নাই বললাম। ইসলামের সৈন্যরা এই ইসলামী আইনকেই বাস্তবায়নের জন্য যুগ যুগ যুদ্ধরত রয়েছে। এক কথায় বলতে কোথাও পূর্ণ ইসলামী শাসন ও ইসলামী আইনের বাস্তবায়ন নেই। তাই এদিক দিয়ে বলা যায় বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ গণতন্ত্র দিয়ে চলে। তাই গণতান্ত্রিক নিয়ম সম্পর্কে ইসলাম কি বলে সেটা জানা লাগবে। সেটি ইসলামে কতটুকু জায়েজ সেটিও জানা লাগবে। এরপর এই শাসন ব্যবস্থাকে আমরা গ্রহণ করতে পারবো কিনা সেটি জানা যাবে।

শরিয়তের দৃষ্টিতে গণতন্ত্র

গণতন্ত্র বলতে কোন জাতি-রাষ্ট্রের (অথবা কোনও সংগঠনের) এমন একটি শাসনব্যবস্থাকে বোঝায়, যেখানে নীতিনির্ধারণ বা সরকারী প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক বা সদস্যের সমান ভোটাধিকার থাকে, তারা ভোট দিয়ে কোন বিষয়ে সম্মতি বা নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে। অর্থাৎ মানুষ নিজেরাই আইন বানাতে পারবে তাদের মতো করে।

গণতন্ত্রের সংজ্ঞা ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার স্বরূপ থেকে বোঝা যায় যে, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অর্থ, মানবজাতির জন্য আল্লাহর প্রণীত বিধানের পরিবর্তে মানবরচিত সংবিধান দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা। আর এটা সুস্পষ্ট কুফর। শরিয়তের দলিল- কুরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াস সবকিছুর দ্বারা এর কুফরি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত। নিম্নে পর্যায়ক্রমে দলিলসমূহ পেশ করা হলো।

১। কুরআন থেকে দলিল-

আল্লাহ তাআলা বলেন:

إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ

আইন প্রণয়নের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর তাআলার-ই। তিনি আদেশ দিয়েছেন, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না। এটাই সরল পথ, কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।
-       (সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৪০)

وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللهُ فَأُولئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ

আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান অনুযায়ী বিচার করে না, সেসব লোকই কাফির।
-       (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৪৪)

২। হাদিস থেকে দলিল-

আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ইরশাদ করেছেন:

يَكُوْنُ فِي أَخِرِ الزَّمَانِ قَوْمُ يَحْضُرُونَ السُّلْطَانَ فَيَحْكُمُوْنَ بِغَيْرِحُكْمِ اللهِ وَلَا يَنْهَوْنَ فَعَلَيْهِمْ لَعْنَةُ اللهِ.

শেষ যুগে একটি জাতি আসবে, যারা এমন শাসকের কাছে যাতায়াত করবে, যারা আল্লাহর হুকুম বাদ দিয়ে মানবরচিত আইন দ্বারা বিচার ও শাসন করবে। তারা সে শাসককে এ থেকে বাধা দেবে না। তাদের ওপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক।
-       (হাসান, আল-ফিরদাউস বি-মাসুরিল খিতাব (ইমাম দাইলামী): ৫/৪৫৫, হা. ৮৭২৭ (দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত); ইসলামী জীবনব্যবস্থা, মুফতি তারেকুজ্জামান)

মুআজ বিন জাবাল (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ বলেন:

أَلَا إِنَّهُ سَيَكُونُ أُمَرَاءُ يَقْضُونَ لَكُمْ، فَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ أَضَلُّوكُمْ وَإِنْ عَصَيْتُمُوهُمْ قَتَلُوكُمْ.

...সাবধান! অচিরেই এমন কিছু শাসক আসবে, যারা তোমাদের ওপর বিচারকার্য পরিচালনা করবে (তাদের আইন দিয়ে)। তোমরা যদি তাদের আনুগত্য করো, তাহলে তারা তোমাদের পথভ্রষ্ট করে দেবে। আর যদি তাদের বিরোধিতা করো, তাহলে তারা তোমাদের হত্যা করবে।
-       (আল-মুজামুস সগীর, তাবারানি, ৭৪৯ (আল-মাকতাবুল ইসলামি, বৈরুত) হাদিসটি জইফ তবে বর্তমানে এটি সত্যে পরিনত হয়েছে যাতে কোন সন্দেহ নেই)

৩। ইজমা থেকে দলিল-

উম্মতের সকল উলামায়ে কিরাম গণতন্ত্র কুফরি হওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। বিখ্যাত ইমাম ও মুফাসসির আল্লামা জাসসাস এ নিম্নোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন:

আহকামুল হাকিমিন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন:

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لايَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا

কিন্তু না, তোমার রবের কসম! তারা ইমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে (রসূলকে) বিচারক নির্ধারণ করে, অতঃপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজেদের অন্তরে কোনো দ্বিধা-সংকোচ অনুভব না করে এবং পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করে।
-       (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৫)

ইমাম জাসসাস (রহ:) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন:

وَفِي هَذِهِ الْآيَةِ دَلَالَةٌ عَلَى أَنَّ مَنْ رَدَّ شَيْئًا مِنْ أَوَامِرِ اللهِ تَعَالَى أَوْ أَوَامِرِ رَسُولِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَهُوَ خَارِجُ مِنْ الْإِسْلَامِ سَوَاءً رَدَّهُ مِنْ جِهَةِ الشَّكَ فِيهِ أَوْ مِنْ جِهَةِ تَرْكِ الْقَبُولِ وَالاِمْتِنَاعِ مِنْ التَّسْلِيمِ. وَذَلِكَ يُوجِبُ صِحَةَ مَا ذَهَبَ إِلَيْهِ الصَّحَابَةُ فِي حُكْمِهِمْ بِارْتِدَادِ مَنْ امْتَنَعَ مِنْ أَدَاءِ الزَّكَاةِ وَقَتْلِهِمْ وَسَبْيِ ذَرَارِيَّهِمْ لأَنَّ اللهَ تَعَالَى حَكَمَ بِأَنَّ مَنْ لَمْ يُسَلَّمْ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَضَاءَهُ وَحُكْمَهُ فَلَيْسَ مِنْ أَهْلِ الْإِيمَانِ

এ আয়াতই প্রমাণ করে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা অথবা তাঁর রসূল এর আদেশ-নিষেধসমূহ থেকে কোনো একটি বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করবে, সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। চাই সে সন্দেহবশত প্রত্যাখ্যান করুক অথবা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানাক এবং মেনে নেওয়া থেকে বিরত থাকুক। আয়াতটি সাহাবায়ে কিরাম কর্তৃক জাকাত আদায়ে অস্বীকারকারীদের মুরতাদ আখ্যা দিয়ে তাদের হত্যা ও তাদের পরিবার পরিজনদের বন্দী করার সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে সাব্যস্ত করে। কেননা, আল্লাহ তাআলা ফয়সালা দিয়েছেন, যে ব্যক্তি রসূল এর বিচার ও বিধানকে মেনে নেবে না, সে ইমানদার নয়।
-       (আহকামুল কুরআন, জাসসাস: ২/২৬৮, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত)

আল্লাহ তাআলার একটি বিধান মেনে না নেওয়ার কারণে সাহাবায়ে কিরাম (রা:) উক্ত ব্যক্তিদের (যারা যাকাত অস্বীকার করেছিল) মুরতাদ আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। ইমাম জাসসাস (রহ:) এর ভাষ্যমতে যে ব্যক্তি কোনো একটি বিধানকে প্রত্যাখ্যান করবে, সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে

শেষ জামানার শাসকদের ব্যাপারে হাদিসে এসেছে

হাদিসে এসেছে যদি দুইটি জিনিস ঠিক হয়ে যায় তাহলে পুরো সমাজই ঠিক থাকে আর তা হচ্ছে শাসক ও আলেম। তাই শাসক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। কিন্তু শেষ জামানায় যে সকল শাসকদের আগমন হবে বা যারা ক্ষমতায় যাবে তারা কতটুকু আমাদের জন্য ফায়দাজনক হবে, কতটুকু ইসলামের জন্য উপকারী হবে তা জানা আমাদের একান্তই প্রয়োজন। অনেকে মনে করে যে বর্তমানে যে সকল শাসকরা রয়েছে, (বিশেষ করে মুসলিম নামধারী শাসকগণ) তাদেরকে হকই মনে করে। অনেকে তাদের অন্ধ অনুসরণ করে যাচ্ছে। তারা যে এভাবে শাসকদের অনুসরণ করে জাহান্নামের পথে যাচ্ছে এই বিষয়টি তাদের কাছে পৌঁছানোও এখন বিপদজনক। তারপরও শেষ জামানার শাসকদের ব্যাপারে যে সকল বর্ণনা পাওয়া যায় তার কিছু এখানে দেওয়া হলো।

আবু সাল্লাম রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, হুযাইফা (রা:) এরশাদ করেন, আমি (একবার রসূলুল্লাহ কে) জিজ্ঞেস করলাম: ইয়া রসূলাল্লাহ! আমরা (একসময়) মন্দ জামানায় ছিলাম। পরে আল্লাহ (আপনার বরকতে) কল্যাণ নিয়ে এলেন। ফলে (এখন) আমরা তাতে আছি। এই কল্যানের পর কি কোনো মন্দ আছে? তিনি বললেন: হ্যাঁ (আছে)। আমি জিজ্ঞেস করলাম: ওই মন্দের পর কি কোনো কল্যাণ আছে? তিনি বললেন: হ্যাঁ (আছে)। আমি জিজ্ঞেস করলাম: ওই কল্যানের পর কি কোনো মন্দ রয়েছে? তিনি বললেন: হ্যাঁ, (রয়েছে)। আমি  জিজ্ঞেস করলাম: কেমন (সেটি)? তিনি বললেন: আমার পর এমনসব শাসকরা আসবে, যারা না আমার দেখানো পথে চলবে. আর না আমার সুন্নাহ (আদর্শ) বাস্তবায়ন করবে। তাদের মধ্যে এমন কিছু লোক দাঁড়াবে যাদের মনুষ্য দেহের ভিতরে বিদ্যমান অন্তরগুলো হবে একেকটা শয়তানের অন্তর
-       (সহিহ মুসলীম ১৮৪৭)

হারূন ইবন ইসহাক হামদানী (রহঃ) ....... কাব ইবন উজরা (রা:) থেকে বর্ণিত যে, একদিন রসূলুল্লাহ হুজরা থেকে আমাদের কাছে বের হয়ে এলেন। আমরা সেখানে ছিলাম নয় জন। পাঁচজন আরব আর চারজন অনারব (বা এর বিপরীত)। তিনি বললেনঃ তোমরা শোন, তোমরা কি শুনেছ যে আমার মৃত্যুর পরে অচিরেই এমন কিছু শাসক হবে, যারা তাদের কাছে যাবে এবং তাদের মিথ্যাচারকে সমর্থন করবে আর তাদের যুলুমে তাদের সহযোগীতা করবে তারা আমার নয় এবং আমিও তাদের নই। তারা হাওযে কাওছারে আমার কাছে পৌছাতে পারবে না। কিন্তু যারা তাদের কাছে যাবে না, তাদের যুলুমের ক্ষেত্রে তাদের সহযোগীতা করবে না এবং তাদের মিথ্যাচারের সমর্থন করবেনা; তারা আমার আর আমিও তাদের, তারা হাওযে কাওছারে আমার কাছে আসতে পারবে।
-       (সহীহ, সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২৫৯ [ইঃ ফাঃ ২২৬২])

জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রা:) থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ এরশাদ করেছেন, (হে কাব!) তুমি নির্বোধ আমীর (শাসক) থেকে আল্লাহর আশ্রয় চেয়ো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: নির্বোধ আমীর কে? রসূলুল্লাহ বললেন: (ওরা হল) এমন সব আমীর যারা আমার পরে আসবে। তারা না আমার দেখানো পথে চলবে, আর না আমার আদর্শ মাফিক রীতি-নীতি চালু করবে। কাজেই যে ব্যাক্তি তাদের মিথ্যাকে সত্যায়ন করবে এবং তাদের জুলুম-অন্যায়-অবিচার এর সহায়তা করবে, ওরা আমার (কেউ) নয়, আমিও তাদের (কেউ) নই এবং তারা (কেয়ামতের দিন আমার) হাউজ (-ই কাউসার)-এর নিকটে আসতে পারবে না। আর যে ব্যাক্তি তাদের মিথ্যাকে সত্যায়ন করবে না এবং তাদের জুলুম-অন্যায়-অবিচার এর সহায়তা করবে না, ওরা আমার, আমিও তার এবং (কেয়ামতের দিন) তারা আমার হাউজ (-ই কাউসার) এর নিকটে সহজে আসতে পারবে
-       (মুসনাদে আহমদ ৩/৩২১  ; সহিহ ইবনে হিব্বান ৫/৯ হাঃ ১৭২৩; মুসনাদে বাযযার ২/২৪১ হাঃ ১৬০৯; মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ১১/৩৪৫; মুসতাদরাকে হাকিম ৩/৩৭৯; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী ৫/২৪৭)

হযরত আবু হুরায়রাহ ও আবু সাঈদ (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ এরশাদ করেন, অবশ্যই তোমাদের (মুসলমানদের) উপর এমন এমন শাসকের আগমন ঘটবে, যারা নিকৃষ্ট নিকৃষ্ট লোকদেরকে কাছে রাখবে এবং নামাযকে তার ওয়াক্ত থেকে বিলম্বে (কাযা করে) আদায় করবে। তোমাদের মধ্যে যারা এটা দেখতে পাবে, তারা (ওদের) আরেফ, সৈন্য, কর-উসূলকারী এবং কোষাধ্যক্ষ হতে যেও না। *
-       (সহীহ ইবনে হিব্বান ৪৫৮৬; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী ৫/২৪)
-       * এখানে عريف (আরেফ) অর্থ হল যে ব্যাক্তি কোনো কিছু সম্পর্কে জ্ঞান রাখে। ইমাম হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন- وسمي العريف عريفا لأنه يعرّف الإمام أحوال العسكر আরেফ-কে এজন্য আরেফ বলা হয় যেহেতু সে বাদশাহ ও (তার) সৈন্যবাহীনির হাল-হালত সম্পর্কে ভাল জানাশোনা রাখে। [ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার-৬/৬০১] তিনি আরো বলেছেন- وسمي بذلك لكونه يتعرف أمورهم ، حتى يعرف بها من فوقه عند الاحتياج  আরেফ-কে এজন্য আরেফ বলা হয় যেহেতু তাদের বিষয়আসয় সম্পর্কে তার ভাল জানাশোনা থাকে। বরং কোথায় কী প্রয়োজন সে সম্পর্কে তার জানাশোনার স্তর তাদের থেকে উপরেই থাকে। [ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার-১৩/১৬৯] আর এজন্যই রাজা-বাদশাহরা عريف (আরেফ)-দেরকে সাথে রাখে যাতে প্রয়োজনে তাদের থেকে শলাপরামর্শ নেয়া যায়। এই অত্যাধুনিক শেষ জামানায় বিভিন্ন দেশের সরকারগুলির ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (যারা সরকারকে গোপন তথ্য সরবরাহ করে, যেমন আমেরিকার সিআইএ, রাশিয়ার কেজিবি, ভারতের , ইসরাঈলের মোসাদ ইত্যাদি)-এর সদস্যরা হল সবচাইতে শক্তিশালী عريف (আরেফ)। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ/মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা প্রমূখও عريف (আরেফ)-এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত।

হযরত আবু হুরায়রাহ (রা:) এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে,  রসূলুল্লাহ এরশাদ করেন, শেষ জামানায় জালেম ও অন্যায়-অবিচারক শাসকদের আগমন ঘটবে। তাদের মন্ত্রীরা হবে ফাসেক (পাপিষ্ট, পঁচন ধরা), তাদের বিচারকরা হবে খেয়ানতকারী, তাদের (সাথে থাকা) আলেমরা হবে মিথ্যুক। তোমাদের মধ্যে যারা সেই জামানা পাবে, তারা ওদের কর-উসূলকারী, আরেফ এবং সৈন্য হতে যেও না।
-       (মুজামে আ্উসাত, ত্বাবরানী ৪১৯০; মুজামে ছাগীর, ত্বাবরানী ৫৬৪; তারীখে বাগদাদ, খতীব ১১/৫৭৭; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী ৫/২৩৩)

হযরত আবু হুরায়রাহ ও আবু সাঈদ (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ এরশাদ করেন, অবশ্যই মানুষের উপর এমন জামানা আসবে, যখন তোমাদের উপর নির্বোধ-বেউকুফ শাসকদের আগমন ঘটবে, যারা নিকৃষ্ট নিকৃষ্ট লোকদেরকে কাছে রাখবে, যার প্রতি ইচ্ছা মহব্বত প্রকাশ করবে এবং নামাযকে তার ওয়াক্ত থেকে বিলম্বে (কাযা করে) আদায় করবে। তোমাদের মধ্যে যারা এটা দেখতে পাবে, তারা (ওদের) আরেফ, সৈন্য, কর-উসূলকারী এবং কোষাধ্যক্ষ হতে যেও না। *
-       (মুসনাদে আবু ইয়ালা ৫/২৪০, হাঃ ১১১৫; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী ৫/২৪০)
-       * রসূলুল্লাহ শেষ জামানার এসব ফাসেক-ফাজের ও নির্বোধ শাসকদের উল্লেখিত সরকারী পদগুলো গ্রহণ করা থেকে দূরে থাকার নসিহত করেছেন মুমিনদেরকে। কারণ, এই শাসকগুলি ঘন ঘন যত অন্যায়-অবিচার, সম্পদ আত্বসাৎ, খুন-খারাবি ও  শরীয়ত বিরোধী পাপ করতে থাকবে তা-তো এসব পদ গ্রহণকারীদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগীতাতেই তারা বাস্তবায়ন করবে। ফলে শাসকদের পাপের ভাগি তারাও হবে।

আবু উমামাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ এরশাদ করেছেন, শেষ জামানায় এই উম্মতের মধ্যে এমন লোকজন হবে যাদের হাতে (মানুষকে পিটানোর জন্য) গরুর লেজের মতো বেত/চাবুক থাকবে। তারা সকালেও আল্লাহর চরম অসন্তুষ্টির মধ্যে থাকবে, সন্ধ্যাতেও থাকবে আল্লাহর গজব/ক্রধের মধ্যে।
-       (মুসনাদে আহমদ ৫/২৫০; মুসতাদরাকে হাকিম ৪/৪৩৬; মুজামে ইবনুল আরাবী ১/২১৩; আল-মুজামুল কাবীর, ত্বাবরাণী ৮/৩০৮ হাঃ ৮০০০; আস-সুন্নাহ, ইমাম আদ-দানী, হাঃ ৪৩৪)

সাওবান (রা:) থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ এরশাদ করেছেন, আমার উম্মতের উপর আমি সব থেকে বেশি ভয় করি পথভ্রষ্ঠ ইমামদেরকে (নেতা/খলিফা/ আমীর/লিডার/রাষ্ট্রপ্রধানদেরকে)
-       (সুনানে আবু দাউদ- ৪/৯৭ হাঃ ৪২৫২; জামে তিরমিযী- ৪/৫০৪ হাঃ২২২৯; সুনানে দারেমী ১/৮০ হাঃ ২০৯; মুসনাদে আহমদ ১/১৫,  ৪/১২৩, ৫/২৭৮)

আম্মার বিন ইয়াছির রাঃএর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ এরশাদ করেন, আমার পর অতি শীঘ্রই এমনসব শাসকদের (আভির্ভাব) হবে, যারা (দ্বীন ইসলামের মাথা উঁচু করার জন্য নয়, বরং নিছক) দেশের জন্য যুদ্ধ-বিগ্রহ বাঁধাবে; এর জন্যই তারা একে অপরকে হত্যা করবে।
-       (আল-মুসনাদ, ইবনু আবি শাইবা ১/২৯১ হাঃ ৪৩৮; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শাইবা ১৫/৪৫; মুসনাদে আহমাদ ৪/২৬৩; মুসনাদে আবু ইয়ালা ৩/২১২ হাঃ ১৬৫০; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী ৭/২৯৩)

আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি লোকেদেরকে গোত্রবাদের (জাতীয়তাবাদ) দিকে আহবান করে অথবা গোত্রবাদে (দেশ বা জাতির জন্য) উন্মত্ত হয়ে ভ্রষ্টতার পতাকাতলে যুদ্ধ করে নিহত হলে সে জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করলো।
-       (সহীহ, সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ১/৩৯৪৮; সহীহুল মুসলিম ১৮৪৮; সুনান নাসায়ী ৪১১৪; মুসনাদে আহমাদ ৭৮৮৪, ৮০০০, ৯৯৬০; সহীহাহ ৪৩৩)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত,  রসূলুল্লাহ এরশাদ করেন, তোমাদের উপর এমনসব আমীর/প্রশাসকের আগমন ঘটবে যে, তারা মাজুস (অগ্নীপূজক)-এর চেয়েও খারাপ হবে।
-       (আল-মুজামুস সাগীর, ত্বাবরাণী ১০১৫; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী ৫/২৩৫)

হযরত মুয়ায (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আখেরী জামানায় (কুরআনের) পাঠকরা হবে ফাসেক, মন্ত্রীরা হবে ফাযের, আমানত-বাহকরা হবে খেয়ানতকারী, আরেফরা হবে জালেম এবং আমীর-ওমরারা হবে মিথ্যাবাদী।
-       (আল-যুহদ, ইমাম আহমদ ৭৭১; তারিখুল কাবীর, ইমাম বুখারী ৪/৩৩১, হাঃ ৩০১৩)

ইয়াযীদ বিন মাছরাদ রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত, হযরত মুআয বিন জাবাল (রা:) বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ -কে একথা বলতে শুনেছি: (খলিফা/প্রশাসকের) উপহার গ্রহণ করতে পারো যতক্ষন তা উপহার হিসেবে থাকে। তবে সেটা যদি দ্বীনের দৃষ্টিতে ঘুষ হয়ে যায়, তখন তা গ্রহণ করো না। কিন্তু (আক্ষেপ হল) তোমরা (মুসলমানরা ভবিষ্যতে) তা পরিহার করে চলবে না। অভাব ও প্রয়োজন তোমাদের জন্য (আমার এই নির্দেশ পালনে) বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। ভাল করে শুনে রাখো, (কুরআনের মাধ্যমে দ্বীন) ইসলামের পরিধি সচল হয়ে গেছে। সুতরাং তোমরা আল-কিতাব (কুরআন)-এর সাথে থাকবে তা যেখানেই যাক না কোনো, (কোনো অবস্থাতেই কুরআনকে ছাড়বে না)। ভাল করে শুনে রাখো, নিশ্চয় আল-কিতাব ও রাষ্ট্র ক্ষমতা অতিশিঘ্রই (একটি অপরটি থেকে) আলাদা হয়ে যাবে, (আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী রাষ্ট্র-ব্যবস্থা চলবে না; চলবে মানুষের বানানো আইন দিয়ে)। তখনও তোমরা আল-কিতাব থেকে আলাদা হয়ো না। ভাল করে শুনে রাখো, অতি শিঘ্রই তোমাদের উপর এমনসব আমীর-ওমরারা (রাষ্ট্রপ্রধান, মন্ত্রী, প্রশাসকরা) আসবে, যারা তাদের নিজেদের জন্য (সুবিধা মতো) যে বিচার-ফয়সালা করবে, সে বিচার-ফয়সালা তারা তোমাদের জন্য করবে না। তোমরা যদি তাদের অবাধ্যতা প্রদর্শন করো তাহলে তারা তোমাদেরকে (বিভিন্ন অযুহাতে) মেরে ফেলবে। আর তোমরা যদি তাদের অনুগত্য করো, তাহলে তারা তোমাদেরকে (আল্লাহর দ্বীন থেকে) পথভ্রষ্ঠ করে দিবে। লোকেরা বললো: ইয়া রসূলাল্লাহ! (এমতাবস্থায়) আমরা কি করবো? তিনি বললেন: (তোমরাও তা-ই করবে) যেমনটা ঈসা ইবনে মারইয়াম আ.-এর সাহাবীগণ করেছিলেন। তাদেরকে করাত দিয়ে চিড়ে ফেলা হয়েছিল, শুলিতে চড়ানো হয়েছিল (কিন্তু তারা আল্লাহর দ্বীন ছাড়েনি)। আল্লাহর নাফরমানীর জীবনের চাইতে আল্লাহর অনুগত্যের পথে মৃত্যুও শ্রেয়।
-       (আল-মুজামুল কাবীর, ত্বাবরাণী ২০/৯০; আল-মুজামুস সগীর, ত্বাবরাণী ২/৪২;  মুসনাদে শামেয়ীন, ত্বাবরাণী ১/৩৭৯; হিলইয়াতুল আউলিয়াহ, আবু নুআইম ৫/১৬৬; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী ৫/২২৮)

ওমর ফারুক (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ এরশাদ করেন, শেষ জামানায় আমার উম্মত রাষ্ট্রপ্রধানদের পক্ষ থেকে কঠিন (ফিতনা ও) মুসিবতের সম্মুখীন হবে। সেই (মুসিবত) থেকে কেউ-ই বাঁচবে না, (বাঁচবে) শুধু (১) ওই ব্যাক্তি, যে আল্লাহর দ্বীনকে (যথার্থভাবে) জেনে নিয়েছে, তারপর সেই (ইলমকে সহিহ ভাবে কাজে লাগিয়ে আগত ইসলাম বিরোধী ফিতনা ও মুসিবতের) সাথে জিহাদ করেছে জ্বিহবা দিয়ে, হাত দিয়ে এবং অন্তর দিয়ে। বস্তুত: সে এমন ব্যক্তি যে (দ্বীনের তাকাযা ও দাবী অনুপাতে) অগ্রগামীতা দেখিয়ে (আল্লাহর কাছে) অগ্রগামীতার নজির স্থাপন করলো। (২) ওই ব্যাক্তি, যে  আল্লাহর দ্বীনকে (যথার্থ ভাবে) জেনে নিয়েছে, তারপর (হাত ও শক্তি দিয়ে মুসিবতের সাথে জিহাদ করেনি ইমানী দুর্বলতার কারণে, কিন্তু ইসলাম বিরোধী ফিতনা ও মুসিবতের বিপক্ষে জ্বিহবা দ্বারা) দ্বীনের সত্যায়ন করেছে। (৩) ওই ব্যাক্তি, যে  আল্লাহর দ্বীনকে (যথার্থ ভাবে) জেনে নিয়েছে, কিন্তু (ইসলাম বিরোধী ফিতনা ও মুসিবত দেখেও তার বিপক্ষে হাত ও জ্বিহবা দ্বারা জিহাদ করেনি, বরং) চুপ থেকেছে, (তবে) সে কাউকে (আল্লাহর নির্দেশিত) ভাল আমল করতে দেখলে তাকে (দ্বীনের কারণেই) ভালবেসেছে, আর কাউকে (ইসলাম বিরোধী) বাতিল আমল করতে দেখলে তাকে (দ্বীনের কারণেই) ঘৃনা করেছে। এই (শেষোক্ত) ব্যাক্তি (দ্বীনের কারণে কাউকে তার ভালবাসা বা ঘৃনা করার) এসব (কথাকে) তার পেটে (গোপন করে) রাখা সত্ত্বেও (ফিতনা থেকে) বাঁচতে পারবে।
-       (আখবার, আবু নুআইম ১/৮১; শুয়াবুল ইমান, ইমাম বাইহাকী ৬/৯৫)

উবাদাহ বিন সামিত  (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ এরশাদ করেছেন, তোমাদের উপর এমনসব (পথভ্রষ্ঠ) শাসকরা আসবে, তোমরা যদি তাদের অনুগত্য করো, তাহলে তারা তোমাদেরকে দোযখে ঢুকাবে; আর তোমরা যদি তাদেরকে অমান্য করো, তাহলে তারা তোমাদেরকে (বিভিন্ন কৌশলে) হত্যা করে ফেলবে। তখন তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো: ইয়া রসূলাল্লাহ! আমাদেরকে তাদের নামগুলো বলে দিন, যাতে আমরা তাদের মুখে মাটি নিক্ষেপ করতে পারি। তখন রসূলুল্লাহ বললেন: সম্ভাবনা রয়েছে, তারাই তোমার মুখে মাটি নিক্ষেপ করবে এবং তোমার চোখ বের করে ফেলবে।
-       (ত্বাবরাণী: মাজমাউয যাওয়ায়ীদ ৫/৪২৯)

আব্দুর রহমান বিন বাশির আল-আনসারী থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, (একবার) এক ব্যাক্তি এসে (আব্দুল্লাহ) ইবনে মাসউদ রাঃ-কে ডাক দিলো এবং তাঁর দিকে মুখ করে বললো: হে আব্দুর রহমানের পিতা (ইবনে মাসউদ)! (সেটা) কোন সময় (যখন) আমি (পথভ্রষ্ঠতা কী -তা) জেনেও পথভ্রষ্ঠ হয়ে যাবো? তিনি বললেন: যখন তোমার উপর এমন শাসকরা হবে, যখন তুমি তাদের অনুগত্য করলে তারা তোমাকে দোযখে ঢুকাবে, আর তাদেরকে অমান্য করলে তারা তোমাকে (বিভিন্ন কৌশলে) হত্যা করে ফেলবে।
-       (মুসতাদরাকে হাকিম ৪/৬২৯ হাঃ ৮৪৯০)

হুযাইফা (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, (এমন সব) শাসকরা হবে, যারা তোমাদেরকে (দুনিয়াতে বিভিন্ন কায়দায়) কষ্ট-যাতনা দিবে। আল্লাহও তাদেরকে (আখেরাতে দোযখের মর্মন্তুদ শাস্তি চাখিয়ে) কষ্ট-যাতনা দিবেন।
-       (মুসতাদরাকে হাকিম ৪/৬০০ হাঃ ৮৪১০)

হযরত ইবনে ওমর (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ কে বলতে শুনেছি যে, আমার উম্মতের মধ্যে সত্তর জনের বেশি আহবানকারী (লিডার/গুরু) হবে। তাদের প্রত্যেকেই (একেকজন পথভ্রষ্ট এবং তাদের জীবনকালে তারা নিজ নিজ পথভ্রষ্ট মত ও পথকে মুক্তির সঠিক পথ বলে প্রচার করবে, ফলে আদতে তারা মানুষকে) দোযখের দিকে আহবান করবে। (তাদের থেকে সাবধান থেকো)। আমি চাইলে তোমাদেরকে তাদের নাম ও তাদের এলাকার খবর বলে দিতে পারি।
-       (মুসনাদে আবু ইয়ালা ১০/৬৫ হাদিস ৫৭০১; আল-বিদায়াহ ওয়ান্নিহায়াহ, ইবনে কাছির ১৯/১৮৮; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী ৭/৩৩২)

কাব বিন উযরা (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আমার পর অচিরেই তোমাদের উপর এমন শাসকরা আসবে, যারা মঞ্চে দাঁড়িয়ে গুরুগম্ভীর বক্তৃতা দিবে। তারা পরে যখন (মঞ্চ থেকে) নামবে, তখন তাদের থেকে (ধনসম্পদ) আত্মসাৎ করবে। তাদের অন্তরগুলো হবে মরা প্রাণীর চাইতেও দূর্গন্ধময়।
-       (ত্বাবরাণী: মাজমাউয যাওয়ায়ীদ ৫/৪২৯)

আবু সুলালাহ  (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ এরশাদ করেছেন, অচিরেই তোমাদের উপর (এমন সব) ইমামরা (রাষ্ট্রপ্রধানরা) হবে, যারা তোমাদের রিজেকের (উপর) মালিক হয়ে বসবে, তোমাদেরকে সাথে (ইনসাফ ও কল্যাণ নিয়ে) কথা বলবে, কিন্তু (বাস্তব ক্ষেত্রে) তারা মিথ্যা বলবে, কাজ করবে; কাজগুলো হবে মন্দ। তারা তোমাদের উপর সন্তুষ্ট হবে না, যাবত না তোমরা তাদের জঘন্য/মন্দ, অনুচিত কাজগুলোকে ভাল বলো এবং (যাবত না) তাদের মিথ্যাগুলোকে সত্যায়ন করো। সুতরাং, (আমার নির্দেশ হল, তারা তোমাদের কাছে কিছু চাইলে) তোমরা তাদেরকে (শরীয়ত সম্মত ন্যায্য) হক্বটুকু দিয়ে দিবে; তাতেই তারা সন্তুষ্ট (হলে) হোক। (তাদের কথায় শরীয়ত বিরোধী কোনো অন্যায্য ও না-হক্ব  কিছুতে নিজকে জড়াবে না)। এতে তারা যদি (তোমাদের উপর অসন্তুষ্ট বসতঃ) সীমা লঙ্ঘন করে (তোমাদেরকে হত্যা করে ফেলে), তাহলে এতে যাকে হত্যা করা হবে, সে হবে শহিদ।
-       (ত্বাবরাণী: মাজমাউয যাওয়ায়ীদ ৫/২২৮)

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ এরশাদ করেছেন, মানুষের উপরে এমন জামানা আসবে, (যে জামানায় বেশিরভাগ বিষয়ে আমার) সুন্নাহ (ও আদর্শকে বিবেচনা করা হবে) বিদআত (রূপে), আর বিদআতকে (বিবেচনা করা হবে আমার) সুন্নাহ (ও আদর্শ হিসেবে), মারুফ (তথা শরীয়তের দৃষ্টিতে ভাল কাজগুলোকে গণ্য করা হবে) মুনকার (খারাপ কাজ হিসেবে) এবং মুনকারকে (গণ্য করা হবে ভাল ও) মারুফ হিসেবে। আর সেটা হবে তখন, যখন তারা দুনিয়ার ব্যাপারে (দ্বীন ও শরীয়ত বর্জিত সব) শাসক ও বাদশাহদের অনুগত্য অনুসরণ করবে।
-       (আল-বাদউ ওয়ান নাহি, ইবনে অযায়হ ১/২৪৮ হাঃ ২৩২)

হযরত ইবনে ওমর রাঃ এর সূত্রে বণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ এরশাদ করেন, হে মুহাজিরগণ! পাঁচটি (বিষয় আছে), যখন তোমরা (মুসলমানরা) সেসবে লিপ্ত হয়ে যাবে -আর (বস্তুত:) তোমরা সেগুলোর সাক্ষাত পাও তা থেকে আমি আল্লাহর পানাহ চাই। (১) এমন কখনোই হয় না যে, কোনো জাতি/গোষ্ঠির মধ্যে ফাহেশাহ (অশ্লীলতা/মন্দত্ব) এতটা প্রকাশ পায় যে, শেষমেস তারা তা খোলাখুলিভাবে করতে থাকে, আর তাদের মধ্যে প্লেগ (মহামারী) ও কঠিন ব্যাধি সমূহ ছড়িয়ে না পড়ে, যার ভোগান্তিতে তাদের পূর্বসূরীরা যারা গত হয়েছে তারা কখনো ভোগেনি। (২) এমন (কখনো) হয় না যে, তারা ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করতে থাকে, আর তাদের উপরে দুর্ভিক্ষ, চরম মাত্রার দুর্দশা ও জালেম সরকার চেপে না বসে। (৩) এমন (কখনো) হয় না যে, তারা তাদের ধ্বনসম্পদের যাকাত দেয়া বন্ধ করে দেয়, আর আসমানের (রহমতের) বৃষ্টি বন্ধ না হয়ে যায়। (ভূ-পৃষ্ঠে) যদি বাহায়েম (চতুস্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী) না থাকতো, তাহলে (যাকাত দেয়া বন্ধ অবস্থায়) বৃষ্টি হত না। (৪) এমন (কখনো) হয় না যে, তারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা এবং তাঁর রাসুলের সাথে কৃত ওয়াদা নষ্ট করে থাকে, আর আল্লাহ তাদের উপরে তাদের বিজাতীয় দুশমনকে চাপিয়ে না দেন। ফলে তাদের (মতো ওয়াদা ভঙ্গকারী গোষ্ঠির) হাতে যা আছে তারা (তাদের থেকে ক্ষমতা প্রয়োগ করে) তার কিছু (কেড়ে) নিয়ে নেয়। (৫) এমন (কখনো) হয় না যে, তাদের শাসকরা আল্লাহর কিতাব দিয়ে শাসন/বিচার-ফয়সালা করে না এবং আল্লাহ যা নাজিল করেছেন তা তারা অবলম্বন করে নেয় না, আর আল্লাহ তাদের মাঝে বাসা (আন্ত-দ্বন্দ্ব/কলহ/লড়াই) সৃষ্টি করে না দেন।
-       (সুনানে ইবনে মাজাহ ২/১৩৩২ হাঃ ৪০১৯; মুসতাদরাকে হাকিম ৪/৫৪০; মুসনাদে বাযযার ৬১৭৫; আল-মুজামুল আউসাত, ত্বাবরাণী, ৪৬৭১; আস-সুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, ইমাম আদ-দানী, ৩২৭; আল-উকুবাত, ইবনে আবিদ্দুনিয়া, হাঃ ১১)

মুহাম্মদ ইবন মুছান্না (রহঃ) ...... আবু বাকরা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ থেকে এমন একটি বিষয় আমি শুনেছিলাম যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমাকে রক্ষা করেছিলেন। কিসরা নিহত হওয়ার পর রসূলুল্লাহ লোকদের জিজ্ঞাসা করলেন যে, তারা কাকে উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করেছে? লোকেরা বললঃ তার কন্যাকে। নবী বললেনঃ যে সম্প্রদায় নারীকে কর্তৃত্বাধিকারী বানায় সে সম্প্রদায়ের কখনো কল্যাণ হতে পারে না।

এরপর আয়িশা (রা:) যখন (আলী (রা:) এর বিরুদ্ধে সেনাদল নিয়ে) বসরা আগমন করেন তখন রসূলুল্লাহ -এর ঐ বানী স্মরণ করলাম। তারপর এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমাকে (আলী রাঃ-এর বিরুদ্ধ করা থেকে) বাঁচিয়ে নিলেন।
-       (সহীহ, সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২৬২ [ইঃ ফাঃ ২২৬৫]; ইরওয়া ২৪৫)

আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ একবার কিছু সংখ্যক উপবিষ্ট লোকের মাঝে এসে দাঁড়ালেন। বললেনঃ তোমাদের মাঝে সবচেয়ে মন্দ এবং সবচেয়ে ভাল কে সে সম্পর্কে তোমাদে অবহিত করব কি? তিনি এরূপ তিনবার বললেন। শেষে একজন বললেনঃ অবশ্যই ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাদের অবহিত করুন আমাদের সবচেয়ে উত্তম কে এবং সবচেয়ে মন্দ কে? তিনি বললেনঃ তোমাদের মাঝে উত্তম হল সেই ব্যক্তি যার কল্যাণের আশা করা হয় এবং যার অনিষ্ট থেকে সকলেই নিরাপদ থাকে। আর তোমাদের মাঝে মন্দ হল সেই ব্যক্তি যার থেকে কল্যাণের কোন আশা করা যায় না এবং যার অনিষ্ট থেকে কেউ নিরাপদ বোধ করেনা।
`-       (সহীহ, সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২৬৩ [ইঃ ফাঃ ২২৬৬]; মিশকাত ৪৯৯৩)

মুহাম্মদ ইবন বাশশার (রহঃ) ...... উমার ইবন খাত্তাব (রা:) থেকে বর্ণিত, নবী বলেন, তোমাদের সবচেয়ে ভাল শাসক এবং মন্দ শাসক সম্পর্কে তোমাদের অবহিত করব কি? সবচেয়ে ভাল আমীর হলেন তারা যাদের তোমরা ভালবাস এবং যারা তোমাদেরকেও ভালবাসে, যাদের জন্য তোমরা দুআ কর এবং যারা তোমাদের জন্য দুআ করে। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট আমীর হল তারা যাদের তোমরা ঘৃণা কর এবং যারা তোমাদের ঘৃণা করে। যাদের তোমরা লানত কর এবং যারা তোমাদের লানত করে।
-       (সহীহ, সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২৬৪ [ইঃ ফাঃ ২২৬৭]; সহিহাহ ৯০৭; মুসলিম প্রশ্নের উল্লেখ ব্যতীত)

হাসান ইবন আলী খাল্লাল (রহঃ) ... উম্মু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী বলেছেনঃ অচিরেই তোমাদের এমন কিছু শাসক হবে যাদের কাছে কিছু আমল তো হবে ভাল এবং তাদের কিছু আমল হবে মন্দ। যে ব্যক্তি মন্দ কাজের প্রতিবাদ করবে সে মুক্তি পেয়ে যাবে, যে ব্যক্তি তাদের ঘৃণা করবে সেও বেঁচে যাবে কিন্তু যে ব্যক্তি তার উপর সন্তুষ্ট হবে এবং তার অনুসরণ করবে (তারা মুক্তি পাবে না)। বলা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব না তিনি বললেনঃ না, যতদিন তারা সালাত (নামায) আদায় করবে। *
-       (সহীহ, সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২৬৫ [ইঃ ফাঃ ২২৬৮])
-       * যদি বর্তমান শাসকদের-আমলাদের ব্যাপারে দেখা যায় তারা ঠিকভাবে ছলাতও আদায় করে না। আর যারা আল্লাহর আইন দিয়ে ফয়সালা করে সাথে কিছু জুলুমও করে তাদের বিরুদ্ধে যাওয়া যাবে না কিন্তু যারা আল্লাহর আইনকেই ফেলে দিয়েছে, তারা হাজারো ছলাত পড়লেও তা গণ্য হবে না আর এই হাদিসেরও প্রয়োগ হবে না। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে আর না দাঁড়ালে আল্লাহর কাছে পাকড়াও হতে হবে। এই হাদিস দেখিয়ে বিভিন্ন জালিম-তাগুত শাসকের গৃহপালিত আলেমরা শাসকদের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য দলিল হিসেবে পেশ করে থাকে। যারা এটা করে থাকে তারা বর্তমানে দুনিয়ার নিকৃষ্ট প্রাণী হিসেবে জীবিত আছে।

আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ যখন তোমাদের সর্বোত্তম লোকরা হবে তোমাদের আমীর, ধনীরা হবে দানশীল, তোমাদের বিষয়াদি হবে পরামর্শ ভিত্তিক তখন যমীনের ভূ-পৃষ্ঠ তোমাদের জন্য উত্তম হবে তার ভূতল থেকে। আর যখন তোমাদের মন্দ লোকেরা হবে তোমাদের আমীর, ধনীরা হবে কৃপন আর বিষয়াদি হবে মেয়েদের হাতে ন্যাস্ত তখন যমীনের উদর হবে তোমাদের জন্য এর উপরিভাগ থেকে উত্তম।
-       (যঈফ, সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২৬৬ [ইঃ ফাঃ ২২৬৯]; মিশকাত ৫৩৬৮)

আবূ হুরাইরা (রা:) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার নবী [মসজিদে] লোকদের নিয়ে আলোচনা করছিলেন। ইতোমধ্যে এক বেদুঈন এসে প্রশ্ন করল, কিয়ামত কখন হবে? রসূলুল্লাহ কর্ণপাত না করে আলোচনায় রত থাকলেন। এতে কেউ কেউ বলল যে, তার কথা তিনি শুনেছেন এবং তার কথা তিনি অপছন্দ করেছেন। কেউ কেউ বলল, বরং তিনি শুনতে পাননি। অতঃপর তিনি যখন কথা শেষ করলেন, তখন বললেন, কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়? সে বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! এই যে, আমি। তিনি বললেন, যখন আমানত নষ্ট করা হবে, তখন তুমি কিয়ামতের প্রতীক্ষা করো। সে বলল, কিভাবে আমানত বিনষ্ট হবে? তিনি বললেন, অনুপযুক্ত লোকের প্রতি যখন নেতৃত্ব সমর্পণ করা হবে, তখন তুমি কিয়ামতের প্রতীক্ষা করো।
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী ৫৯, ৬৪৯৬; মুসনাদে আহমাদ ৮৫১২; রিয়াযুস স্বা-লিহীন তাঃ পাঃ ৩০/১৮৪৬ [আন্তঃ ১৮৩৭])

ফাসীলা নাম্নী এক সিরীয় মহিলা বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, আমি রসূলুল্লাহ -এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রসূল! নিজ গোত্রের প্রতি ভালোবাসা কি গোত্রেবাদের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বলেনঃ না। তবে নিজ গোত্রকে অন্যের উপর অত্যাচারে সহায়তা করা গোত্রবাদের অন্তর্ভুক্ত।
-       (যঈফ, সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ২/৩৯৪৯; আবূ দাউদ ৫১১৯; গায়াতুল মারাম ৩০৫)
-       তাহকীক আলবানীঃ যইফ। উক্ত হাদিসের রাবী আব্বাদ বিন কাসীর আশ-শামী সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তার হাদিস বর্ণনায় আমার নিকট কোন সমস্যা নেই। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। ইবনু হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি দুর্বল। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৩০৯১, ১৪/১৫০ নং পৃষ্ঠা)

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি অবশ্যই অবশ্যই পৃথিবী ততদিন ধ্বংস হবে না যতদিন না মানুষ পাঁচজন শাসকের দেখা পাবে। যারা আল্লাহর দ্বীনকে যুক্তি করে ধ্বংস করতে চাইবে। আর তারা পাঁচ শাসকই এক সাথে পৃথিবীতে উপস্থিত থাকবে। আমি (আবু হুরায়রা) বললামঃ হে আল্লাহর রসূল ! সে পাঁচজনের পরিচয় কী? তিনি বললেনঃ তাদের একজন এই পবিত্র ভূমিতে আসবে। যার নাম হবে আমার নামের মতো (মুহাম্মাদ)। সে আরবের দ্বীনকে হাস্যকর বানাবে। আর অভিশপ্ত (ইহুদী-খ্রিষ্টান) জাতিকে বন্ধু বানাবে। দ্বিতীয় সে বিশ্ব শাসক হবে। আর মুসলমানদের নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকবে। তৃতীয় জন হিন্দুস্তানের বাদশা, সে বন্ধু অঞ্চলের মুসলমানদের নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করবে। চতুর্থ জন, হিন্দুস্তানের দ্বিতীয় বাদশা। যে মুসলমানদের হত্যার শপথ নিয়ে শাসন ক্ষমতায় যাবে। আর মুসলিম হত্যায় সে উন্মাদ হয়ে পড়বে। পঞ্চম হলো একজন নারী শাসক, সে শাসন ক্ষমতা হাতে পেয়ে বা'আল দেবতার ইবাদত (অর্থাৎ পূর্বপুরুষদের পূজা) বৃদ্ধি করবে। আর মুশরিকদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে। আর মুসলমানদের হত্যা করবে। অথচ সে হবে মুসলমান। তখন দেখবে সেখানকার দুর্গম নামক অঞ্চলের এক দুর্বল বালক তাদের ষড়যন্ত্রের সমাপ্তি ঘটাবে এবং মুমিনদের বড় বিজয় আনবে।
-       (কিতাবুল আক্বিব ১৭২; আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ১৭৫)

হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (রা:) বলেন, একদা এক মজলিসে আল্লাহর রসূল এর নিকট সাহাবাদের একজন জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল ! আপনার বংশের মাহদীর আগমন কখন হবে? তিনি বললেন, ততদিন মাহদীর আগমন ঘটবে না, যতদিন না পাঁচ শাসকের ধ্বংস হবে। আর তারা একই সময়ের শাসক হবে। জিজ্ঞেস করা হলো, তারা কোন দেশের শাসক হবে? তিনি বললেন তাদের একজন আরব ভূমি শাসন করবে। আর একজন নাসারা বিশ্ব শাসন করবে। আর তিনজন হিন্দুস্তান ভূখন্ডের হবে। তাদের একজন হবে নারী। বলা হলো, হে আল্লাহর রসূল , হিন্দুস্তানের শাসকরা কী মুসলমান হবে? তিনি বললেন, না বরং একজন মুসলিম নারী শাসক হবে। কিন্তু তার সকল কর্ম হবে মুশরিকদের নিয়ে।
-       (কিতাবুল আক্বিব ২৯৮)

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহ তা'আলা তোমাদের আদেশ দিয়েছেন মুশরিকদের তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না অথচ এমন একটি সময় আসবে যখন মুসলমান অঞ্চলের দুইটি শাসক মুশরিকদের প্রকৃত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল তাদের চেনার উপায় কী? তিনি বললেন, তাদের একজন তোমাদের ভূমির হবে, আর তার নাম হবে আমার নামের নেয় (মুহাম্মাদ) আর একজন হলো নারী, হিন্দুস্তানের ক্ষুদ্র অঞ্চলের শাসক হবে। আর তারা দুজন একই সময়কালের শাসক হবে।
-       (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ২৯৬)

হযরত আবু হুরাইরা (রা:) বলেন, রসূল বলেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না পাঁচ নেতার আত্মপ্রকাশ ঘটবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল , তাদের চেনার উপায় কী? তিনি বললেন, তাদের একজন তোমাদের এ ভূমিতে জন্ম নিবে। যার নাম আমার নামের অনুরূপ। সে ক্ষমতায় থেকে ইসলামকে গলা চেপে হত্যা করবে তথা ইসলাম ধ্বংসের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করবে। আর একজন অভিশপ্ত জাতির সন্তান। সে বিশ্ব শাসন করবে। আর তিনজন হবে হিন্দুস্তানের নেতা। যাদের একজন ক্ষমতায় থেকে ইসলাম ধ্বংসের সূচনা করবে। আর একজন ইসলাম ধ্বংসের প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষমতায় আসবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল তারা তিনজন কী মুশরিক হবে? তিনি বললেন, বরং তাদের একজন হবে নামে মুসলিম নারী শাসক। সে ক্ষমতায় এসে তার পূর্ব পুরুষের মূর্তি পূজা বৃদ্ধি করবে। অবশ্যই সেখানকার দূর্গম নামক অঞ্চল থেকে একজন দুর্বল বালকের প্রকাশ হবে। যার নেতৃত্বে হিন্দুস্তানের যুদ্ধে মুসলিমদের বিজয় আসবে।
-       (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ; কিতাবুল আকিব)

হযরত আবু হুরাইরা (রা:) বলেন, রসূল বলেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না পাঁচটি নেতার আত্মপ্রকাশ ঘটবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল , তাদের চিনার উপায় কী? তিনি বললেন, তাদের একজন তোমাদের এ ভূমিতেই জন্ম নিবে। যার নাম আমার নামের অনুরূপ। সে ক্ষমতায় থেকে ইসলামকে গলা চেপে হত্যা করবে। আর তাদের একজন হবে অভিশপ্ত জাতির সন্তান। সে বিশ্ব শাসন করবে। আর তাদের তিনজন হবে হিন্দুস্তানের নেতা। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল তারা তিনজন কি মুশরিক হবে? তিনি () বললেন, না, বরং তাদের একজন হবে নামে মুসলিম নারী শাসক। সে ক্ষমতায় এসে বাআল মূর্তির পূজা বৃদ্ধি করবে। আর তাদের একজন ক্ষমতায় থেকে ইসলাম ধ্বংসের সূচনা করবে। আর একজন ইসলাম ধ্বংসের প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষমতায় আসবে।
-       (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ; কিতাবুল আকিব)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ