৬.১ ভয়াবহ ফিতনার সূচনা

 রসূল থেকে শুরু করে তার পরের সাহাবীগণ, তাদের পরের যুগের তাবীঈগণ, তাদের পরের যুগের তাবে তাবীঈগণ, তাদের পরের সব যুগের ফকীহগণ, মুহাদ্দিসগণ ইসলামের যত বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে ফিতনা। এই ফিতনা শব্দের অসংখ্য ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তারা। সব যদি একত্র করা হয় তাহলে ফিতনা শব্দের অর্থ দাঁড়ায়- পরীক্ষা, প্রলোভন, বিচার, শাস্তি, বিদ্রোহ, গৃহযুদ্ধ, সংঘাত, মালহামা বা যুদ্ধ-বিগ্রহ, ফিরকা ও দলাদলি, মতানৈক্য, বিশ্বাসঘাতকতা, এমন বিষয় যা ঈমানকে ধ্বংস করে কুফুরিতে-শিরকে নিয়ে যায়, দুঃখ-কষ্ট, দুর্দশা, এমন বিষয় যা পথভ্রষ্ট করে দেয়, সর্বশেষ বিষয় হচ্ছে এমন জিনিস যা জাহান্নামে নিয়ে যায়।

তাহলে ফিতনা বিষয়টি আমাদের জন্য কতটা ভয়াবহ বিষয় তা সহজেই আন্দাজ করা যায়। রসূল এ কারণে কেয়ামত পর্যন্ত সংঘটিত হবে সকল ফিতনার ব্যাপারেই বলে গিয়েছেন এবং তা থেকে বাঁচার উপায়ও বলে গিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-

আবূ যায়েদ আমর ইবনে আখত্বাব আনসারী (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ আমাদেরকে নিয়ে ফজরের নামায পড়লেন, অতঃপর মিম্বরে চড়ে ভাষণ দিলেন। শেষ পর্যন্ত যোহরের সময় হয়ে গেল। সুতরাং তিনি নীচে নামলেন ও নামায পড়লেন। তারপর আবার মিম্বরে চাপলেন [ও ভাষণ দানে প্রবৃত্ত হলেন] শেষ পর্যন্ত আসরের সময় হয়ে গেল। তিনি পুনরায় নীচে অবতরণ করলেন ও নামায পড়লেন। অতঃপর তিনি আবার মিম্বরে উঠলেন এবং খুতবা পরিবেশনে ব্রতী হলেন, শেষ পর্যন্ত সূর্য অস্ত গেল। সুতরাং অতীতে যা ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে যা ঘটবে সে সমস্ত বিষয়গুলি তিনি আমাদেরকে জানালেন। অতএব আমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বাধিক বড় জ্ঞানী, যিনি এসব কথাগুলি সবার চাইতে বেশি মনে রেখেছেন।
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম ২৮৯২; মুসনাদে আহমাদ ২২৩৮১; রিয়াযুস স্বা-লিহীন তাঃ পাঃ ৫৪/১৮৭০ [আন্তঃ ১৮৬১])

আর এই যুগটি হচ্ছে ফিতনার চূড়ান্ত রূপ। হাদিসে এসেছে এটি কালো গরুর ফিতনার ন্যায়। এটি দিয়ে বুঝিয়েছে, যা দেখতে সব একই রকম লাগবে, হক-বাতিল আলাদা করা কষ্টকর হবে। আর এর পরের ফিতনার ব্যাপারেই বলা হয়েছে দাজ্জালের ফিতনা। যেহেতু দাজ্জালের ফিতনা এখনো দূরে তাই এই সময়ের ফিতনার ব্যাপারে কি বলা হয়েছে হাদিসে তা জানা উচিৎ আমাদের।

কুতায়বা (রহঃ) ..... আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ অন্ধকার রাতের মত ফিতনা আসার আগেই তোমরা আমলের প্রতি অগ্রসর হও। একজন সকালে মুমিন বিকালে কাফির, কিংবা বিকালে মুমিন সকালে কাফির। একজন দুনিয়ার সামানের বিনিময়ে তার দ্বীন বিক্রি করবে।
-       (সহীহ, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত/আল মাদানী প্রকাঃ) ২১৯৫ [ইঃ ফাঃ ২১৯৮]; সহিহাহ ৭৫৮; মুসলিম)

কুতায়বা (রহঃ) ..... আনাস ইবন মালিক (রা:) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে অন্ধকার রাতের খন্ডের মত অনেক ফিতনা হবে। তখন সকালে একজন মুমিন বিকালে সে কাফির, আর বিকালে একজন মুমিন সকালে সে কাফির। বহু সম্প্রদায় দুনিয়ার সামানের বিনিময়ে তাদের দ্বীন বিক্রি করবে।
-       (সহীহ, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত/আল মাদানী প্রকাঃ) ২১৯৭ [ইঃ ফাঃ ২২০০]; সহিহাহ ৭৫৮, ৮১০)

মাশরুক রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) এরশাদ করেন, (আগত জামানা গুলোতে) এমন কোনো বছর (অতিক্রান্ত) হবে না, যার পরের (বছর)টি তার (পূর্বের বছরটি) থেকে আরো বেশি মন্দ না হবে। আমি বলছি না (পূর্বের) বছর(টি তার পরের) বছর থেকে বেশি বৃষ্টিপাত দিবে, (পূর্বের) বছর(টি তার পরের) বছর থেকে বেশি ফলন দিবে, (পূর্বের) বছর(টিতে বিদ্যমান) শাসক (তার পরেরর বছরে বিদ্যমান) শাসক থেকে বেশি উত্তম হবে। বরং (আমি বলতে চাচ্ছি, সেই জামানা গুলোতে) তোমাদের ওলামা(-ই-কেরাম) এবং তোমাদের ভালো লোকগুলি (একে একে দুনিয়া থেকে) বিদায় নিবেন। এরপর এমন সব গোষ্ঠির আবির্ভাব হবে, যারা (কুরআন ও সুন্নাহর শরয়ী বিধিবিধান গুলোকে পিঠের পিছনে ফেলে দিয়ে) তাদের (ব্যাক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রিয়) বিষয়গুলোকে নিজেদের (নিছক বিবেকপ্রসূত যুক্তি-নির্ভর) মতামত সমূহের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত দিবে। ফলে ইসলাম (দুনিয়া থেকে) বিলুপ্ত (প্রায়) ও অথর্ব (প্রায়) হয়ে যাবে।
-       (আল-বাদউ, ইমাম ইবনে ওযায়হ ১/৭০ হাঃ ৭৮; সুনানে দারেমী ১/৭৬ হাঃ ১৯৪; আস-সুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, ইমাম আদ-দানী ১/৫১৭ হাঃ ২১০, ২১১; আল-মুজামুল কাবীর, ইমাম ত্বাবরাণী ৯/১০৯ হাঃ ৮৫৫১; সুনানুল কুবরা, ইমাম বাইহাকী ৩/৩৬৩; জামেউ বায়ানিল ইলম, ইমাম ইবনু আব্দিল বার ২/১০৪৩ হাঃ ২০০৯)

হান্নাদ (রহঃ) ..... আবূ মূসা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ তোমাদের পরে এমন এক যামানা আসছে যখন ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে এবং ব্যাপক ভাবে হারাজ হবে। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ,হারাজ কি? তিনি বললেনঃ হত্যাযজ্ঞ (ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ)।
-       (সহীহ, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত/আল মাদানী প্রকাঃ) ২২০০ [ইঃ ফাঃ ২২০৩]; সহিহুল জামি' ২২২৯)

মাহমূদ ইবন গায়লান (রহঃ) ...... আনাস ইবন মালিক (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তোমাদের এমন একটি হাদীস শুনাচ্ছি যা আমি রসূলুল্লাহ এর কাছ থেকে শুনেছি এবং আমার পরেও এমন কেউ তোমাদেরকে এই হাদীসটি রিওয়ায়াত করতে পারবে না যে সরাসরি তা রসূলুল্লাহ থেকে শুনেছেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ কিয়ামতের আলামত হল, ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, অজ্ঞতার প্রকাশ ঘটবে, যিনা বিস্তার লাভ করবে, মদ্যপান করা হবে, নারীদের আধিক্য ঘটবে, পুরুষের সংখ্যা হ্রাস পাবে। এমনকি পঞ্চাশজন মহিলার মাত্র একজন তত্বাবধায়ক থাকবে।
-       (সহীহ, সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২০৫ [ইঃ ফাঃ ২২০৮]; বুখারী; মুসলিম)

সালিহ ইবন আবদুল্লাহ (রহঃ) ...... আলী ইবন আবূ তালিব (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ আমার উম্মত যখন এ পনেরটি বিষয়ে লিপ্ত হবে তখন তাদের উপর মুসিবত নিপতিত হবে। জিজ্ঞাসা করা হল, সেগুলো কি ইয়া রাসূলাল্লাহ? তিনি বললেন, যখন গনীমত পরিণত হবে ব্যক্তিগত সম্পদে, আমানত পরিণত হবে লুটের মালরূপে, যাকাত গণ্য হবে জরিমানারূপে, পুরুষরা তাদের স্ত্রীদের অনুগত হবে আর মাদের হবে অবাধ্য, বন্ধুদের সাথে তো সদাচারণ করবে অথচ পিতার সঙ্গে করবে দুর্ব্যবহার, মসজিদে শোরগোল করা হবে, নিকৃষ্টতম চরিত্রের লোকটি হবে তার সম্প্রদায়ের নেতা, কেবল অনিষ্টের ভয়ে কোন ব্যক্তিকে সম্মান করা হবে, মদপান করা হবে, রেশম বস্ত্র পরিধান করা হবে, গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের রেওয়াজ চলবে, উম্মতের শেষ যুগের লোকেরা প্রথম যুগের লোকদের অভিসম্পাত করবে, তখন তোমরা অপেক্ষা করবে অগ্নিবায়ু বা ভূমিধ্বস বা চেহারা বিকৃতির আযাবের। *
-       (যঈফ, সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২১০ [ইঃ ফাঃ ২২১৩]; মিশকাত ৫৪৫১)
-       * বর্তমান বাস্তবতা এবং এ বিষয়ে অন্য সহীহ রেওয়ায়েত থাকায় যঈফ হওয়া সত্যেও গ্রহণযোগ্য। আর এই আজাবও আমাদের থেকে খুবই নিকটে এখন।

আলী ইবন হুজর (রহঃ) ..... আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেন, গনীমত সম্পদ যখন ব্যক্তিগত সম্পদ বলে গণ্য করা হবে, যাকাত হবে জরিমানা বলে, দ্বীনী উদ্দেশ্য ছাড়া ইলম অর্জন করা হবে, পুরুষরা স্ত্রীদের আনুগত্য করবে, এবং মাদের অবাধ্য হবে, বন্ধূদের নিকট করবে আর পিতাকে করবে দূর, মসজিদে শোরগোল করবে, পাপাচারীরা গোত্রের নেতা হয়ে বসবে, নিকৃষ্ট লোকেরা সমাজ নেতা হবে, অনিষ্টের আশংকায় একজনকে সম্মান করা হবে, গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের বিস্তার ঘটবে, মদ্যপান দেখা দিবে, উম্মতের শেষ যুগের লোকেরা প্রথম যুগের লোকদেরকে অভিসম্পাত করবে তখন তোমরা অপেক্ষা করবে অগ্নিবায়ু, ভূমিকম্প, চেহারা বিকৃতি, পাথর বর্ষণের আযাবের এবং আরো আলামতের যা পরপর নিপতিত হতে থাকবে, যেমন একটি পুরানো হারের সূতা ছিড়ে গেলে একটার পর একটা দানা পড়তে থাকে।
-       (যঈফ, সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২১১ [ইঃ ফাঃ ২২১৪]; মিশকাত ৫৪৫০)

আব্বাদ ইবন ইয়াকূব কূফী (রহঃ) .... ইমরান ইবন হুসায়ন (রা:) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ এই উম্মতের জন্য ভূমিধ্বস, চেহারা বিকৃতি এবং পাথর বর্ষণের আযাব রয়েছে। জনৈক মুসলিম ব্যক্তি তখন বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, কখন হবে তা? তিনি বললেন, যখন গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের বিস্তার ঘটবে এবং মদ্যপান দেখা দিবে।
-       (হাসান, সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২১২ [ইঃ ফাঃ ২২১৫]; সহিহাহ ১৬০৪)

ইসমাঈল ইবন মূসা ফাযারী ইবন বিনত কুফী (রহঃ) ..... আনাস ইবন মালিক (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেন মানুষের এমন এক যামানা আসবে যে যামানায় দ্বীনের উপর সুদৃঢ় ব্যক্তির অবস্থা হবে জ্বলন্ত অংগার মুষ্টিতে ধারণকারী ব্যক্তির মত।
-       (সহীহ, সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২৬০ [ইঃ ফাঃ ২২৬৩]; সহিহাহ ৯৫৭)

ইবরাহীম ইবন ইয়াকুব জুযাজানী (রহঃ) ...... আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত যে, নবী বলেছেনঃ তোমরা এমন এক যুগে আছ যে, তোমাদের কেউ যদি নির্দেশিত বিষয়ের এক দশমাংশও ছেড়ে দেয় তবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। এরপর এমন এক যুগ আসছে যে, কেউ যদি নির্দেশিত বিষয়ের এক দশমাংশ আমল করে তবুও সে নাজাত পেয়ে যাবে।
-       (সহীহ, সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২৬৭ [ইঃ ফাঃ ২২৭০]; সহিহাহ ২৫১০)
-       এ হাদীসটি গারীব। নুআঈম ইবন হাম্মাদ-সুফইয়ান ইবন উয়ায়না (রহঃ)-এর সূত্র ছাড়া এটি সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না। এ বিষয়ে আবূ যার ও আবূ সাঈদ (রা:) থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে।

আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ তোমরা (পথভ্রষ্ট হয়ে) তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি অনুসরণ করবে বাহুতে বাহুতে, হাতে হাতে, বিঘতে বিঘতে। এমনকি তারা যদি দব্বের গর্তেও ঢোকে, তবে তোমরাও অবশ্যই তাতে ঢোকবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রসূল! (পূর্ববর্তীগণ কি) ইহুদী-খ্রিষ্টান জাতি? তিনি বলেনঃ তবে আর কারা!
-       (হাসান, সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ৪/৩৯৯৪; সহীহুল বুখারী ৭৩১৯; মুসনাদে আহমাদ ৮১০৯, ৮১৪০, ৮২২৮, ৮৫৮৭, ২৭২২৭, ১০২৬৩, ১০৪৪৬; আয-যিলাল ৭২, ৭৪, ৭৫; তাখরীজুল ইসলাহিল মাসাজিদ ৩৮)

জারীর (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে পাপাচার হতে থাকে এবং তাদের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ক্ষমতা থাকা সত্বেও তাদের পাপাচারীদের বাঁধা দেয় না, তখন আল্লাহ তাআলা তাদের উপর ব্যাপকভাবে শাস্তি পাঠান।
-       (হাসান, সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ৭/৪০০৯; আবূ দাউদ ৪৩৩৯; আহমাদ ১৮৭৩১, ১৮৭৬৮; আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৭০)

আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেনঃ হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও। যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকেদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। যখন কোন জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, শাসকের তরফ থেকে অত্যাচার কঠিন বিপদ-মুসীবত এবং যখন যাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভূ-পৃষ্ঠে চতুস্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো, তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ কেড়ে নেয়। যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না এবং আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেন।
-       (হাসান, সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ২/৪০১৯; সহীহাহ ১০৬)

আবদুল্লাহ (রা:) থেকে বর্ণিত। নবী বলেনঃ কিয়ামতের পূর্বে চেহারা বিকৃতি, ভূমিধ্বস ও প্রস্তরবৃষ্টি হবে।
-       (সহীহ, সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ১/৪০৫৯, ৪/৪০৬২; রাওদুন নাদীর ১০০৪; সহীহাহ ১৭৮৭; আহমাদ ৬৪৮৫; সহীহাহ ৪/৩৯৪)

সাহল ইবনে সাদ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী কে বলতে শুনেছেনঃ আমার উম্মাতের শেষ যামানায় ভূমিধ্বস, চেহারা বিকৃতি ও প্রস্তরবৃষ্টি হবে।
-       (সহীহ, সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ২/৪০৬০; সহীহাহ ৪/৩৯৪)
-       উক্ত হাদিসটি সহীহ কিন্তু আবদুর রহমান বিন যায়দ এর কারণে সানাদটি দুর্বল। হাদিসটির ২৪৪ টি শাহিদ হাদিস রয়েছে, ২ টি জাল, ২৫ টি খুবই দুর্বল, ২৮ টি দুর্বল, ৮৭ টি হাসান, ১০২ টি সহীহ হাদিস পাওয়া যায়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ সুনান তিরমিজী ২১৫২, ২১৫৩, ২১৮৫, ২২১২; মুয়াত্তা মালিক ১৮৬৪; মুসনাদে আহমাদ ৫৮৩৩, ৬১৭৩, ২৭৭৫৯; মু'জামুল আওসাত ১৮৪১, ৩৬৪৭, ৫০৬১, ৬৯০৫, ৭০৫০।

এসকল হাদিসে যে সকল ফিতনার বিষয়ে উল্লেখ এসেছে তা আজ এখন পুরো বিশ্বে বিরাজমান। যদি রসূল এর বাণীগুলো সত্য হয় তাহলে অবশ্যই এগুলো সংঘটিত হবে। আজ বিশ্বে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়েছে। মুসলিমরাও এই ফিতনায় হাবুডুবু খাচ্ছে। এ কারণে যে মহামারী আসার কথা বলা হয়েছে তা কি আসবে না? আজ সব জায়গায় প্রতারকরা ওজনে কম বেশি করছে, ভেজাল মিশ্রিত করছে, এ কারণে কি দুর্ভিক্ষের আজাব আসবে না? শাসকদের তরফ থেকে কি জুলুম-অত্যাচার আসছে না? মুসলিমরা যাকাত আদায় না করার ফলে যে অনাবৃষ্টির আজাব আসার কথা তাও কি আসছে না? আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য মানুষের বানানো আইন দিয়ে বিচার ফয়সালা হচ্ছে। এতে সারা বিশ্বেই মতবিরোধ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নামে দলে দলে বিরোধ ও তাদের মধ্যে পরস্পর হানাহানি চলছে, কে কি ধর্মের তা দেখা হচ্ছে না, কোন জাতি আর কোন দল সেটাই তাদের ভ্রাতৃত্বের প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সময়ের চেয়ে আর কোন সময় দুনিয়ায় এত খারাপ অবস্থা সৃষ্টি হয়নি। আর তাই এ কারণেই সামনে রয়েছে মানব জাতির জন্য আজাব স্বরূপ আরো বড় বড় ফিতনা। ইতিমধ্যেই তার লক্ষণগুলো প্রকাশিত হওয়া শুরু করেছে। ইসলাম ঠিকই আবার ঘুরে দাঁড়াবে, বিজয়ী হবে কিন্তু তার আগে রয়েছে অনেক কুরবানি এবং যারা দ্বীনকে ছেড়ে দুনিয়ার প্রতি আসক্তিতে রয়েছে তাদের জন্য ধ্বংস। অতএব এই অধ্যায়ে আগামীতে ঘটতে যাওয়া বড় বড় ফিতনাকে সিরিয়ালভাবে সাজানো হয়েছে এবং আগামীতে আমাদের জন্য কি কি আসতে যাচ্ছে তা যতদূর সম্ভব বিস্তারিত আকারে সাজানো হয়েছে। কারণ ফিতনা সম্পর্কে জানা থাকলেই আমরা তা থেকে বাঁচতে পারবো আর নাহয় অচিরেই আমরা ধ্বংস হবো।

আবু ইদ্রিস রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা:) এরশাদ করেন, নিশ্চই (আখেরী জামানায় ঘন কালো অন্ধকারময়) ফিতনা সমূহ হবে, যা (মুসলমানদের ভালো মন্দ চেনার দৃষ্টিশক্তিকে) অন্ধকারচ্ছন্ন করে ফেলবে -(যেমনটা ঘটে থাকে কোনো ঘন অন্ধকারময় রাতে গরুর পালের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট কোনো) গরুর মুখ (খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে) -সেরকম (সুকঠিন)। ও(ফিতনা)র মধ্যে বেশির ভাগ মানুষই ধ্বংস-বরবাদ হয়ে যাবে; কেবল সেই ব্যাক্তি ছাড়া যে -ও(ই ফিতনা)টি ঘটার আগেই সেটাকে চিনে নিয়েছে।
-       (আল-মুসান্নাফ, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ ২২/৬৫ হাঃ ৩৮৩৫০; আল-ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ ১/১৯ হাদিস ৫; কানজুল উম্মাল, মুত্তাকী ১১/২১৫ হাঃ ৩১২৭৯)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ