৬.১৪ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা

 রসূল এর করা বিভিন্ন ভবিষ্যৎবাণী এর মধ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ অন্যতম। ইমাম মাহদীর আগমনের আগে এই বিশ্বযুদ্ধটি সংঘটিত হবে। এর আগেও দুইটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ১৯১৪-১৯১৮ সাল পর্যন্ত চলে এবং তাতে প্রায় ৩০ টির মতো দেশ যুদ্ধে জড়ায়। প্রায় ২ কোটি মানুষ নিহত হয় এবং ২ কোটি ১০ লাখ মানুষ আহত হয়। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ১৯৩৯-১৯৪৫ সাল পর্যন্ত চলে এবং প্রায় ৫০ টিরও বেশি দেশ যুদ্ধে অংশ নেয়। তাতে ৪ থেকে ৫ কোটি মানুষ মারা যায়। এরপর বিশ্ব এখন ৩য় বিশ্বযুদ্ধের মুখোমুখি হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। এই যুদ্ধ যে হবে তার ব্যাপারে হাদিসে এসেছে। মূলত এই যুদ্ধের সূচনা হবে হিন্দের যুদ্ধের মাধ্যমেই। হিন্দে যখন মুসলিমদের সাথে মুশরিকদের যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে তখন সেটিকে কেন্দ্র করে বিশ্ব রাজনীতিও গরম হবে এবং বিভিন্ন দেশ ভাগ হয়ে দুপক্ষের সাপোর্ট দিবে আর তখনই তা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নিবে। যেমন হিন্দের যুদ্ধে আফগান ও ইরান জড়িয়ে পড়বে আর তখন তার সাথে অন্যান্য দেশও বাতিলকে সাপোর্ট দিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পরে বিশ্বব্যাপী সেই যুদ্ধ ছড়িয়ে দিবে।

হযরত ফিরোজ দায়লামী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আখেরী জামানায় ইমাম মাহদীর পূর্বে ইমাম মাহমুদ এর প্রকাশ ঘটবে। সে বড় যুদ্ধের শক্তির যোগান দিবে। তার জামানায় মহাযুদ্ধের (৩য় বিশ্বযুদ্ধের) বজ্রাঘাতে (পারমাণবিক অস্ত্রে) বিশ্বের অধ্বঃপতন হবে এবং বিশ্ব এই সময়ে ফিরে আসবে (অর্থাৎ আধুনিকতা ধ্বংস হয়ে প্রাচীন যুগে ফিরবে)। সে তার সহচর বন্ধু সাহেবে কিরান শামীম বারাহকে সাথে নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করবে, যে বেলাল ইবনে বারাহ-এর বংশোদ্ভুত হবে। তোমরা তাদের পেলে জানবে ইমাম মাহদীর প্রকাশের সময় হয়েছে।
-       (আসরে জুহুরী ১৮৭ পৃঃ; তারিখে দিমাশাক ২৩৩ পৃঃ; ইলমে তাছাউফ ১৩০ পৃঃ; ইলমে রাজেন ৩১৩ পৃঃ; বিহারুল আনোয়ার ১১৭ পৃঃ)
-      উক্ত হাদিসটি এই পাঁচটি গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। অধিকাংশ মুহাদ্দিছগণ ব্যক্ত করেছেন উক্ত হাদিসটি সহীহ, কেউ কেউ বলেছেন হাসান।

“ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের সময় পৃথিবীতে অনেক যুদ্ধ সংঘঠিত হবে, যার দ্বারা পাশ্চাত্য জগৎ (ইউরোপ ও আমেরিকা) ক্ষতিগ্রস্ত হবে”।

"জ্বালানি কাঠে যে রকম আগুন ধরে, ঠিক তেমনি পাশ্চাত্যে (ইউরোপ ও আমেরিকা) যুদ্ধের আগুন প্রজ্বলিত হবে। প্রাচ্য (চীন, জাপান, কোরিয়া, হিন্দ) ও পাশ্চাত্যের (ইউরোপ, আমেরিকা) মধ্যে। এমনকি মুসলমানদের নিজেদের মধ্যেও মতবিরোধ দেখা দিবে। আর সমগ্র মানব জাতি নিরাপত্তা হীনতার ভয়ের কারনে কঠিন দুঃখ, কষ্ট ও বিপদের মুখোমুখি হবে"।
-   (আসরে জুহুরী: আল্লাম আলী কুরানী, পৃষ্ঠা: ৩২)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, সাবধান! মুশরিকরা নিজেদের অবাধ্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পৃথিবীতে কেয়ামত আনয়ন করবে। আর তখন পৃথিবীতে অগ্নি প্রকাশ (পারমাণবিক বোমার আঘাত) পাবে, যা পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ মানুষকে ধ্বংস করবে। তাঁর পরেই আল্লাহ তায়ালা একটি শান্তিময় পৃথিবী দেখাবেন, যেখানে কোনো বিশৃঙ্খলা থাকবে না। এ কথা বলে তিনি সূরা ইবরাহীমের ৪৮ নম্বর আয়াত পাঠ করলেন।
-      (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৭৮)

হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা:) বলেন, রসূলে পাক ﷺ বলেছেন, কিয়ামতের পূর্বে মানুষগণ অগ্নি নিক্ষেপ করবে, আর সে অগ্নি দ্বারা তারা নিজেরাই ধ্বংস হবে। অবশ্যই তারা আল্লাহর অবাধ্য জাতি। এই অবাধ্য জাতি ধ্বংসের পর আল্লাহ তাআলা পৃথিবীকে শান্তিময় করবেন।
-      (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৭৯)


হযরত হুযাইফা (রা:) বলেন, রসূলে পাক ﷺ বলেছেন, বিশ্বব্যাপী অধঃপতন শুরু হবে। এমনকি মিশরও অধঃপতনের সম্মুখীন হবে। তুরস্কের অধঃপতন হবে দায়লামীর পক্ষ থেকে বিস্ফোরণের মাধ্যমে। দায়লামীর অধঃপতন হবে, আর্মেনিয়ার পক্ষ থেকে। আর্মেনিয়ার অধঃপতন হবে, খাজার পক্ষ থেকে, খাজার অধঃপতন হবে, তুরস্কের পক্ষ থেকে। সিন্দ এর অধঃপতন হবে, হিন্দুস্তানের পক্ষ থেকে। হিন্দুস্তানের অধঃপতন হবে, তিব্বতের পক্ষ থেকে। তিব্বতের অধঃপতন হবে নাসারার পক্ষ থেকে।
-   (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৬৮; তাজকিরাহ, ইমাম কুরতুবী; আন নিহায়া ফিল ফিতান ওয়াল মালাহিম, ইবনে কাসীর; আস সুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, আবু আমর আদ-দানী)

হযরত মুস্তাওয়ীদ আল কুরাইশী (রা:) বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি। কিয়ামতের পূর্বে ইহুদী-খৃষ্টান বৃদ্ধি পাবে। আর বজ্রাঘাতের (যুদ্ধের প্রচণ্ডতায় অর্থাৎ পারমাণবিক সহ আরো অত্যাধুনিক অস্ত্রের ব্যবহার) মৃত্যুতে তাদের সংখ্যা কমে যাবে।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮০৭)

৬.১৪.১ কবে হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যুদ্ধ?

আমরা হাদিস থেকে জানতে পারি এই যুদ্ধ ইমাম মাহদীর আগমনের আগে সংঘটিত হবে। কিন্তু ইমাম মাহদীর আগমনের সময় হাদিস থেকে পাওয়া যায় ১৪৫০ হিজরী অর্থাৎ ২০২৮ সাল। তাহলে তার আবির্ভাবের আগেই এই যুদ্ধ হতে হবে। কবে কোন বছর হবে সরাসরি হাদিসে উল্লেখ পাওয়া যায়নি। শাহ্‌ নিয়ামাতুল্লাহ (রহ:) এর কাসিদাতে ১ম ও ২য় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপারে ভবিষ্যৎবাণী করা থাকলেও ৩য় বিশ্ব যুদ্ধ ঘটার সময় উল্লেখ করেনি। তবে তা যে হবে সেটি উল্লেখ করেছে এবং আলিফ দিয়ে নাম অ্যামেরিকা নামক দেশটি পুরো ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছে। যেমন-

(৫১) ভারতের মত পশ্চিমাদেরও ঘটিবে বিপর্যয়
তৃতীয় বিশ্ব সমর সেখানে ঘটাইবে মহালয়।

(৫২) এ রণে হবে আলিফ এরূপ পয়মাল মিসমার
মুছে যাবে দেশ, ইতিহাসে শুধু নামটি থাকিবে তার।

(৫৩) যত অপরাধ তিল তিল করে জমেছে খাতায় তার
শাস্তি উহার ভুগতেই হবে নাই নাই নিস্তার
কুদরতী হাতে কঠিন দণ্ড দেয়া হবে তাহাদের
ধরা বুকে শির তুলিয়া নাসারা দাড়াবে না কভু ফের।

(৫৪) যেই বেঈমান দুনিয়া ধ্বংস করিল আপন কামে
নিপাতিত শেষ কালে সে নিজেই জাহান্নামে।

শাহ্‌ নিয়ামতুল্লাহ (রহ:) এর কাসিদাতে এই যুদ্ধের বিষয়েই উল্লেখ রয়েছে তবে তা হওয়ার কোন সময় উল্লেখ করেনি। তবে এর আগে ও পরের ঘটনা উল্লেখ করেছে তা হচ্ছে এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে হিন্দে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে, হাবীবুল্লাহ নামক ব্যক্তি মুসলিমদের জামাতের আমীর হয়ে যুদ্ধ করে যাবে ইত্যাদি। আর এই ৩য় বিশ্বযুদ্ধের পরের অবস্থাতে উল্লেখ করেছেন যে এই সকল ঘটনার পরই প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদীর আগমন ঘটিবে।

তবে আশ-শাহরান এর আগামী কথনে এটি শুরু হওয়ার সময় উল্লেখ রয়েছে! আগামী কথনে বলা হয়েছে-

প্যারাঃ (২৬)

অন্যত্র পশ্চিমা বিশ্ব তখন, সৃষ্টি করিবে বিপর্যয়।
তৃতীয় বিশ্ব সমর সেখানে, ঘটাইবে বড় মহালয়।

ব্যাখ্যাঃ যখন গাজওয়াতুল হিন্দ চলতে থাকবে ঠিক ঐ সময়ই পশ্চিমা বিশ্বে বিরাটাকার বিপর্যয় নেমে আসবে। এর ফলশ্রুতিতে ৩য় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হবে।

প্যারাঃ (২৭)

দ্বিতীয় বিশ্ব সমর শেষে, আষি বর্ষ পর।
শুরু হবে ফের অতি ভয়াবহ, তৃতীয় বিশ্ব সমর।

ব্যাখ্যাঃ লেখক আশ-শাহরান প্রকাশ করেছেন যে, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শেষ হবার ৮০ বছর পর আরো ভয়াবহ আকারে ৩য় বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হবে। আমরা সবাই জানি যে, ২য় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে ১৯৪৫ সালে। অতএব, ১৯৪৫+৮০=২০২৫ সাল। অর্থাৎ, ২০২৫ সালেই গাজওয়াতুল হিন্দ চলাকালীন সময়ই ৩য় বিশ্বযুদ্ধের সুচনা হবে।

আগামী কথনের ভাষ্য মতে, ২০২৫ সালে এই যুদ্ধ শুরু হবে! অর্থাৎ ইমাম মাহদীর আগমনের পূর্বে। আগামী কথনের কথা মতো ঘটার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি এবং এর বিপরীতে কোন হাদিসও দাঁড় করানো যায় না যে এই সময়ে ঘটবে না। বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতি দেখেও এটিই সঠিক মনে হয়। যেহেতু আগামী কথন একটি ইলহামী ভবিষ্যৎবাণী তাই এটি ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনাকে ছোট করে দেখা উচিৎ হবে না। সামনের পরিস্থিতিই আমাদের তা বলে দিবে। বিবিসিতে ভারত-পাকিস্তান পারমাণবিক যুদ্ধ কবে হতে পারে সেটি বিশ্লেষণ করতে যেয়ে তারাও বলেছে ২০২৫ সাল। এই বিষয়ে অনলাইনে সার্চ দিলেই বিবিসি নিউজটি খুঁজে পাওয়া যাবে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ